আমি পলাশ।
আমি একটা বড় লোকের মেয়েকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম ও আমাকে অনেক ভালোবাসত আমি জানতাম। মেয়েটার নাম ছিল তাসফিয়া।
একদিন ও আমাকে ফোন দিয়ে বললো তুমি আজকে আমাকে বিয়ে করতে পারবা?
যদি পার তাহলে তুমি একা আসবা।
আমি তখন ওর দেয়া ঠিকানায় গেলাম।গিয়ে দেখলাম ওর সাথে আরেকটা ছেলে।
আমি ওকে বললাম কে এটা?
ওর উওর শুনে আমি পুরা বাকপ্রতিবন্দি হয়ে যায়।কোনমতে নিজেকে সামলে নিলাম।
ও 80হাজার টাকা দিয়ে বলল তুমি যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাস তাহলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দাউ। ওদের বিয়ে দিয়ে দিয় তার পর বাকি টাকা ওর হাতে দিই।
ও তখন বলে তোমার কাছে রেখে দাউ।
তখন আর আমি নিজেকে কন্টোল করতে পারি নি।
টাকা ওর মুখের উপর ফেলে দিয়ে বলি এই মেয়ে নামের নর্দাদামার কিট আমি তোকে টাকার জন্য ভালোবাসিনায়।
তার পর বাড়িতে এসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি।
অনেকদিন মানসিক হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হই।
তার পর থেকে মা বোন ছারা অন্য কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারি না।
আমার জীবনের গল্পটা বলতে গিয়ে নিজের অজান্তে চোখ থেকে দুই ফোটা লোনা পানি মোবাইল ভিজিয়ে দিল।
এখন আমি ঘরেই থাকি।
প্রায় বছর খানেক হলো বাইরে যায় না ঘরে বসে সুধু মোবাইল টিপি আর মনের কথাগুলো লিখি আমার ডাইরিতে।
আমার এই অবস্থা দেখে তারাও ভাল নেই।
তারা কয়েকদিন ধরে আমাকে বিয়ে করার জন্য বলছে কিন্তু আমি কোন মেয়ের জীবন নস্ট করতে পারবো না।
কারণ মেয়ে দেখলে আমার চোখে ভেসে ওঠে প্রতারণা।
আমাকে নিয়ে চিন্তাই আছে আমার ছোট বোনটাও।
সে কান্না করছিল আমার জন্য। আমি ওকে থামাতে গিয়ে মহা বিপদে পড়লাম।
ও বললো ওর একটা কথা রাখতে হবে।
আমি বললাম রাখবো।
ও তখন বললো আমার মাথায় হাত দিয়ে বলো রাখবে।
আমি কিছু না ভেবেই ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম ঠিক আছে।
কিন্তু যেটা বললো সেটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
ও বাবা মায়ের মতই বিয়ের কথা বললো। শেষমেস রাজি হলাম।
বাবা মা মেয়ে দেখলো পাশের জেলাই বাবার বন্ধুর মেয়ে।নাম প্রেমা।
আমাকে মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য বলা হলো কিন্তু আমি জায় নি।
বিয়ে ৩দিন পর দিন দিন আমার চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে আমি একটা মেয়ের জীবন কেন নস্ট করছি??
তবুও বাবা মা বোনের দিকে তাকিয়ে বিয়েটা করলাম।
এখন আমার বাসর ঘরে যাওয়ার সময় কিন্তু ছাদে দাড়িয়ে তারা দেখছি।
বোন এসে টেনে নিয়ে ঘরে দিয়ে গেল। আমি দরজাটা আটকে ভিতরে গেলাম।
মেয়েটা মানে আমার বউ আমার দিকে এগিয়ে আসছিল কিন্তু আমি তাকে বললাম–
দাড়ান আমার কাছে আসবেন না।আমি আপনাকে কোন দিন স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো না। আমি সুধু বাব মা বোনের জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছি।আমি নারি জাতিকে ঘৃনা করি।আপনি খাটেই ঘুমিয়ে পড়ুন।
প্রেমা খাটে যেয়ে সুয়ে পড়লো।মেয়েটা কি বুঝলাম না। এযুগের মেয়ে হলেতো এতক্ষন প্রতিবাদ করেই বসতো।
আমি ছোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।
কিন্তু ঘুম আসছে না একটা চিন্তাই। আমার জন্যই মেয়েটার জীবন ধ্বংসের পথে।
কখন ঘুমিয়েছিলাম জানি না।
সকালে কিসের একটা গোতা খেয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল। উঠে দেখি দূরে প্রেমা একটা লাটি হাতে দাড়িয়ে আছে।
আমি:আপনি আমাকে ওটা দিয়ে গোতা দিছেন কেন??
প্রেমা: মাফ করবেন এটা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই।সবাই বাইরে ডাকছে কিন্তু আপনাকে ডাকতে যাবো তখনই মনে পড়লো আপনার কাছে যাওয়া নিষেধ।তাই বাধ্য হয়ে এই বুদ্ধি।
আমি: ও আচ্ছা।আর হ্যা কেউ যেন আমাদের এই বিষয়টা না জানে। সবার সামনে আপনি আপনি করবেন না।আর হ্যা আমার জিনিস পত্রে হাত দিবেন না প্লীজ।
তারপর আমি ফ্রেশ হওয়ার পর দুজনে বাইরে গেলাম।আমাদের খেতে দিল।ও আমার পাশেই বসলো।
খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা ঘরে ফিরে জাচ্ছিলাম তখন সিড়িতে ও চিৎকার দিয়ে বসে পড়লো।
আমি সবার সামনে বলে ওকে টেনে উঠালাম।কিন্তু হাটতে পারছে না।
তখনই ভাবীরা ধরলো বউকে কোলে নিয়ে উপরে উঠতে হবে।
বাড়ি ভর্তি মেহমানের সামনে না নিয়েও পারলাম না।
ও আমার গলা দুই হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরেছে আবার মুচকি হাসছে।
হঠাৎ আমার চোখ ওর চোখে পড়ে আমি কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যায়। তারপর আবার পুরোনো সৃতি ভেষে ওঠে।
ওকে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিয়ে পেইন কিলার টা ওকে দিয়ে বললাম লাগিয়ে নিতে।
আমি ছাদে গেলাম গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো সাইদ ভাইয়ের কথা।উনি হলো আমি আগে যেখানে চাকরি করতাম সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার উনি আমাকে আগের মতই অফিসে যেতে বলে গেছেন।
ভাল লাগছিল না বলে অফিসে গেলাম ঘুরতে।প্রায় ২ বছর আজ গেলাম ওখানে।
তার কয়দিন পর থেকে নিয়মিত অফিসে যাওয়া শুরু করলাম।
একদিন অফিস থেকে ফিরে ডাইরিটা পাচ্ছিলাম না।
একটু পর প্রেমা ঘরে এলো ওর কাছে সুনলাম ডাইরিটা ওর কাছে।
আমি রাগের বসে ওকে একটা চড় মেরে বসলাম।
আমি:তোমাকে না বলেছিলাম ওটাতে হাত না দিতে।
প্রেমা: দিয়েছি তো হয়েছেটা কি? আর আপনার ডাইরিটা আমি সব পড়েছি আপনি একটা মেয়ের জন্য সব মেয়েকে সমান ভাবতে পারেন না।আর হ্যা আমি আপনাার বিয়ে করা স্ত্রী। আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে বিয়ের দিনই মেনে নিয়েছি।এখন আপনি যদি আমাকে না মেনেনেন আমি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো।আপনি আমাকে যতক্ষন স্ত্রীর মর্যাদা না দিচ্ছেন ততক্ষণ আমি কোন দানা পানি গ্রহণ করছি না।আরে মানুষ অতিত ভুলে বর্তমান নিয়ে বাচে আর আপনি পড়ে আছেন অতীত নিয়ে।
কথা গুলো বলে ও চলে গেলো।আমি এই আশঙ্কাটাই করেছিলাম।
একদিন চলে গেল ও এখনও কিছু খাইনি আমাদের বিষয়টা এবার জানাজানি হয়ে গেল। বাবা মা আমাকে অনেক বকেছে।
আমি অফিসে ছিলাম কিন্তু কাজে মন বসছিল শুধু প্রেমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
সাইদ ভাই আমার চিন্তার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ওনার সাথে সব সেয়ার করলাম।
উনি বললেন– পৃথিবীতে সবাই এক না অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমানকে নিয়ে বাচতে শেখো।
আমি আরও কিছুক্ষণ ভেবে ওকে সব অধিকার দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
এমন সময় বোনের ফোন–ভাইয়া তোর জন্য ভাবি হাসপাতালে তুই তাড়াতাড়ি চলে আই।
আমার কথাটা সুনে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো না।
আমি খুব দ্রুত সেখানে চলে গেলাম।
সবাই এখানে এসেছে।আমি মাথা উচু করতে পারছি না।নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
আমি সোজা প্রেমার ওখানে চলে গেলাম। ওর জ্ঞান নেই স্যালাইন চলছে।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম।কিছুক্ষণ পর মাথাই কারো স্পর্শ পেলাম।
ওটা প্রেমার হাত ছিল আমি ওকে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম আমাকে মাফ করে দাও।
ও বললো দিয়েছি অনেক আগেই। এবার ছাড়ো সবাই দেখছে।
তারপর ওকে নিয়ে বাড়ুতে ফিরে এলাম বহুদিন পর মনে শান্তি ফিরে এল। নিজেকে আজ খুব হালকা লাগছে।।
আমি যে ভালবাসা চেয়েছিলাম তা পায়নি কিন্তু যেটা চায়নি আজ সেটায় পেলাম।