– এই রোদের ভেতর দাড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না।
– ট্যাক্সি ছাড়া কোথাও যাবো না।
– রিক্সাতে কি প্রবলেম?
– তোর স্বভাব বুঝি না আমি!!!
– আমি আবার কি করলাম রে?
– এএএহহ দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। কিছুই জানেন না।
– তাহমিনা প্লিজ আর দাড়াতে পারছি না।
– আচ্ছা যা রিক্সা ডাক। আর শোন এডভান্টেজ নেয়ার চেষ্টাও করবি না! বলে দিলাম।
– হুহ….
– আরও চেপে বস ওই দিকে।
– আর জাইগা কই এপাশে? তুই ওদিকে যা…
– আদি ভাল হবে না কিন্তু।
– কোন পাপ করছিলাম কে জানে, যার জন্য এই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে!
– ওই কি বললি তুই?
– কই না তো কিছু না।
– তোকে বিয়ে করতে আমারও বয়ে যায়নি….
আমার তোর থেকে সুন্দর একটা বয় ফ্রেন্ড আছে। তোর মত হাবড়া না।
– আস্তে….. এবার থামেন! আমারও জি এফ আছে আর সে তোর থেকে অনেক সুন্দরী। তোর মত পেঁচা না।
– কি আমি পেঁচা???? শয়তান, কুত্তা,ছোটলোক, ইতর……(সাথে কিল ফ্রি )
– মুখ দিয়ে বলছিস বল। হাত দিয়ে বলার কি দরকার?? লাগছে….
– মা না বললে জীবনেও আসতাম না তোর সাথে।
– ইশশ্ আমি যেন নিজের ইচ্ছায় আসছি!
মা জোর করে পাঠাইছেন। বিয়ের আগে একটু চেঞ্জ হওয়া দরকার আমাদের তাই।
কথা হচ্ছিল তাহমিনা আর ওর ছোট বেলার বন্ধু আদির সাথে। ওদের বাবারা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। প্রতিবেশীও ছিল একে অপরের। সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে খেলা ধুলা, বেড়ে ওঠা। কিন্তু হঠাৎ করে ওদের বাবা মা এমন সিদ্ধান্ত নেবে কেউ বুঝতে পারেনি।রঝগড়া না করে কেউ একটা দিন পার করতে পারেনি। আর সেই মানুষের সাথে সারা জীবন কাটানোর
প্লান করেছে বাবা মা। সহজ হওয়ার জন্য একসাথে মার্কেটে পাঠিয়েছে বাসা থেকে। এখানে এসেও ঝগড়া….
যা হোক ওদের কাছে ফিরে যাই…..
– তুই কি সারা মার্কেট কিনবি আজ?
– মানে?
– একটা দোকান দেখা বাকি আছে আর?
– তোর সমস্যা কি হা? তোকে থাকতে বলছি আমি? না ধরে রেখেছি? কি বলব কিছুই আসছে না মাথায়। না পারছি ফেলতে না পারছি সহ্য করতে।
একার জন্য শপিং শেষ করল তাহমিনা। বিল আমার দেয়া লাগবে। এবার আমার জন্য করব বিল ওর। সব কিছু ব্রান্ডের জিনিস
কিনলাম। তাও ওর সমান তো দুরে থাক ধারে কাছেও যেতে পারলাম না। বিশ্ব বিজয়ের হাসি দিয়ে চলে গেল। রাগে পিত্তি জ্বলতেছে আমার। প্লানিং করে বাসায় ফিরছি দুজন। সবাইকে জানাতে হবে আমরা কেউ কাউকে পছন্দ করি না।
নিজের মায়ের কাছে বলতেই সেই মাপের বকুনি খেলাম। রুমের সামনে বেলকুনি তে দাড়িয়ে ভাবছি কি করব। ঠিক তখনি তাহমিনার ঘরের থেকে হইচই শুনতে পেলাম।
– তুমি আমার সাথে বকাবকি করছ কেন মা? আদি তো অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে।
– তোমাকে বলেছে ও অন্য মেয়েকে পছন্দ করে?
– বিশ্বাস না হয় ওদের বাসায় যাও।
কিছুক্ষনের ভেতর আন্টি হাজির। সাথে ডাইনীটা।
– প্রহর তোমার নাকি এই বিয়ে তে মত নেই? বাবা মায়ের সামনে সোজা প্রশ্ন।
– কে বলল এই কথা।
– তুমি তাহমিনাকে বলেছ!
– না তো কবে বললাম! তাহমিনা আমাকে আরও বলল যে ও এই বিয়ে করবে না। কোন ছেলেকে নাকি……
> মিথ্যে কথা মা। আমি একদম এমন কিছু বলিনি।
– তাহলে আর কি।কথা ফাইনাল…….
– সব তোর জন্য……
– কি আমার জন্য?
– তুই কেন অস্বীকার করলি সব।
– তুই ও তো করছিস….
দুজনে আবার শুরু করে দিল। বাবা মায়ের সামনে দুজনেই ভদ্র,শান্তশিষ্ট……
একটা মেয়ের সাথে কিছুদিন হল খুব ভাব জমেছে। দেখতেও খারাপ না। তবে তাহমিনার ধারে কাছেও না। তার সাথে হবে হবে…..
এর ভেতর ডাইনীটা……
ছোট বেলা থেকে ওর অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে আদি কে। কিছু হলেই মার লাগাইতো মেয়েটা। আর আদি ছিলো
একটু হাবা টাইপ। আর তাই এখন ওর থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাই।
আর তাহমিনা……?
তিন চার মাস ধরে বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার সাথে নতুন নতুন প্রেম তাহমিনার। মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া।
এর মধ্যে হাবলা ছেলেটার সাথে………..
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে হঠাৎ করে বয় ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেল তাহমিনার।রিক্সায় করে যাচ্ছিল ছেলেটা, পাশে বসা মেয়েটার হাতে হাত দিয়ে। চোখ চড়ক গাছে উঠল তাহমিনার।
এত বড় ধোকা বাজ……… রাগে গা ঘিন ঘিন করতে লাগল তাহমিনার। তাহমিনাকে দেখে নেমে এল রিক্সা থেকে।
– কেমন আছ তাহমিনা???
– ভাল। তুমিও তো খুব ভাল আছ দেখছি।
– না ওইটা আমার কাজিন….
– কাজিনের হাত ধরে ঘুরতে হয়? ভাল……
– সরি বাবু…….
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই চলে আসছে তাহমিনা। উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।
ঠিক কাকতালীয় ভাবে আদির সাথেও একই ঘটনা ঘটে গেল।
বেচারা প্রেমের আগে ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে।
ঘরের ভেতর শোক পালনে ব্যস্ত বেচারা।
দরজা খোলাই ছিল। হুট করে ঢুকে পড়ল তাহমিনা।
– এই তোর আবার কি হল রে?
– ছ্যাঁকা খাইছি…..
– তুই??? কবে……..
– বাদ দে কেন আসছিস বল?
– একটা উপকার করতে হবে!
– আমি? তোর উপকার করব?
– হ্যা তুই আমার উপকার করবি।
– যদি না করি?
– আন্টিকে ডাকব……
– ভয় পাইনা….
– তাই? আন্টি……
– কানের কাছে না চিল্লায়ে দুরে গিয়ে মর……
– কি বললি আমি মরব????? আন্টি……
– আরে ধুর মা বাড়ি নেই….
– ওওও এই জন্য সাহস বেড়েছে!
– জিইইই…. এখন বিদায় হ….
– শোন না… আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে!
– কিসের?
– ওই যে… যে মেয়েটা তোকে ছ্যাকা দিয়েছে, তুই চাস না ওকে শিক্ষা দিতে?
ভাবনায় পড়ে গেল আদি। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
– আচ্ছা কি করতে হবে বল।
– তাহলে শোন….
মেয়েটাকে ফোন দিয়ে ডাকবি। তারপর দুইজন মিলে চরম অপমান করব।
– আমি এটা বুঝলাম না আমার জন্য এত কিছু করতে চাচ্ছিস কেন তুই?
– কি যে বলিস আমরা তো সেই ছোট বেলার ফ্রেন্ড। তোর কিছু হলে তো আমার খারাপ লাগবে বল….
– জানি না কি মতলব তোর…
– ধুর! তাহলে আজ আসি আগামি পরশু ডাক, ওকে…..
– ঠিক আছে…..
তাহমিনা চলে যাওয়ার পরও কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।গায়ে পড়ে উপকার করা মেয়ে তো না ও। তাহলে????
যাই হোক সময় হলে বোঝা যাবে।
জায়গাটা অনেক নিরিবিলি। সুন্দর একটা বিকেলে তাহমিনার কথা মত চলে এসেছি।
তাহমিনা ও আছে সাথে।
– কি ব্যাপার এক ঘন্টা আগে ডাকলি কেন।
– আরে প্লান শুনবি না?
– আচ্ছা বল…..
– ও যখন আসবে,আমরা এমন ভাব করব যেনো দুজন দুজনকে হেব্বি ভালবাসি।
– এই হেব্বি প্লান ফোনে বলা যাইত না?
হঠাৎ করে তাহমিনা আদির হাত খুব ভাল করে জড়িয়ে ধরল। গায়ের সাথে সেটে গেল যে কেউ দেখলে নিঃসন্দেহে বলবে এরা
কাপল……
– এখন হাত ধরলি কেন? ওর আসার সময় হয়নি এখনো!
– আরে চুপ।হাটতে থাক……
হঠাৎ কোথা থেকে সামনে একটা ছেলে আসল……
– এটা কি হচ্ছে তাহমিনা?
– আরে ফাহিম ভাইয়া যে??? কেমন আছেন?
– আমি তোমার ভাই???
– কেন ভাইয়া। আপনি তো আমার ভাইয়ের মতোই, তাই না???
– আমাকে অপমান করছ তাহমিনা।
– ও মা……. আপনার আবার মানও আছে। জানতাম না তো!
– এসবের মানে কি তাহমিনা? আর ইনি কে?
– ওহ সরি আপনাকে তো ওর সাথে পরিচয়
করিয়ে দেয়া হয়নি। ও আদি, আমার হবু বর!
– মানে?
– আপনি বাংলা বোঝেন না ভাইয়া?
খাম্বার মত দাড়িয়ে থেকে দেখলাম ওদের। কিছু বলার নাই। যে নাটক সাজিয়েছে মেয়েটা। ছেলেটা আর এক মিনিটও দাড়ালো না।
– থ্যাংকইউ…..
– আমাকে বালছিস?
– জি…আমাকে উপকার করার জন্য।আসি পরে কথা হবে!
– আসি মানে?
– আমার কাজ শেষ তো!
– কত্তো বড় বেঈমান রে তুই! নিজের কাজটা ঠিকই হাসিল করে নিছস!
– কি করব বল তুই তো রাজি হচ্ছিলি না।
– তা এবার আমার কাজটা করে দে……..
– সময় নাই টাটা…..
ঘুরে হাটা শুরু করে দিল তাহমিনা। আর ঠিক তখনি পেছন থেকে দৌড়ে এসে জাপটে ধরল আদি।
– রাগ করো না সোনা,সরি বলছি তো কত্ত ভালবাসি তোমাকে। তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো বলো!?
ঘুরে আদির দিকে ফিরল তাহমিনা…..
– এইতো বাবুটার রাগ ভেঙেছে! তাহমিনা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদির চোখের দিকে। তখনি হাত ধরল আদি তাহমিনার…..
– এই তোমাকে ছুয়ে বলছি অনেক ভালবাসি সোনা…..
– তুই কি সত্যি বলছিস?
– আমার পেছনে তাকা….
মেয়েটা ঠিক আদির পেছনে দাড়িয়ে দেখছিল সব। তাহমিনা বুঝতে পেরে নিজেকে বোকা বলে গাল দিল…..
একাই বাড়ি ফিরে এল ও।
তাহমিনার কথা গুলো এখনো কানে প্রতিধ্বনি করে চলেছে। কথা গুলো ফাহিম ও বলেছিল। কিন্তু তখন এতটা মধুর লাগেনি যতটা আদির থেকে শুনে লেগেছে।
তাহলে কি…… ধুর!
(Asadur Rahman Hadi)
ঘুম থেকে উঠেই গোসলে গেলাম। ফ্রেন্ডের বোনের বিয়েতে যেতে হবে। অনেক লেট হয়ে গেছে। সকাল দশটা। পৌঁছাতে প্রায় দু তিন ঘন্টা লেগে যাবে।
টাইম নিয়ে টিকিট না কাটলে আবার সিট পাওয়া যায়না। সব মিলিয়ে খুব তড়িঘড়ি করে গোসল করলাম। বের হয়ে দেখি মায়ের সাথে বসে গল্প করছে তাহমিনা……
– সকাল সকাল কি মনে করে ডাইনীটা?
– দেখছ আন্টি তোমার সামনে আমাকে ডাইনি বলে।
> তুইও তো দেখছি আচ্ছা পাগল! ও বললেই কি তুই ডাইনি হয়ে যাবি নাকি?
– কিন্তু….
> চুপ… তোদের নিয়ে তো ভয় হচ্ছে! সেই ছোট বেলা থেকে দুজন সাপ আর বেজির মত ঝগড়া করিস তোরা। সংসার কদিন টিকবে কে জানে!
– আন্টি তুমি চিন্তা করোনা। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। থমকে পরলাম ওর কথাটা শুনে। তারমানে ও কি বিয়েতে রাজি? এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আগে এদিক টা সামলাই…..
– মা আমি বের হলাম!
> মানে কি? কই যাবি?
– তোমাকে না বললাম একটা বিয়ে আছে। ফিরতে রাত হবে বা কালও ফিরতে পারি।
> সাবধানে যাস…..
– ওই শোন (তাহমিনা)
– কি বল?
– সত্যি করে বলত বিয়েতে যাচ্ছিস না কারো সাথে ডেটিং এ?
– আস্তে বল মা শুনবে।
– শুনবে শুনুক।
– বিয়েতে যাচ্ছি! বিশ্বাস না হলে চল।
– চল আমিও যাব!
– মানে???
> যেতে চাইলে নিয়ে যা। ঘুরে আসুক…..
– মা…… কত্ত দুর। ওকে নিয়ে……
> ও তো তোর মাথায় চড়ে যাবে না।
আগত্যা মায়ের কথা মত তাহমিনাকে নিয়েই গাড়িতে উঠতে হলো। পেছনের সারির দুটো সিটে বসেছি।
– আদি…
– বল…
– আমার মনে হয় কি জানিস?
– কি?
– বিয়েটা হলে মন্দ হয়না।
– মানে?
– মানে বাবা মাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না।
– সত্যি করে বলত এবার কি মতলব?
– বিশ্বাস কর এবার কোন মতলব নেই….একদম সত্যি!
– কি জানি। আর বিশ্বাস করছি না।
হয়ে গেল তাহমিনার মুখটা। বাসের পথ শেষ। এখন আবার রিক্সা নিতে হবে। পথে তোফায়েল এসে আমাদের রিসিভ করল।
বরযাত্রী চলে এসেছে। ভাগ্যিস তাহমিনা সাথে এসেছে। না হলে মার খেতে হত আজ দেরি করে আসার জন্য।
কনে উঠিয়ে দিতে দিতে সন্ধ্যা। অনেকের সাথে পরিচিত হলাম। আড্ডা, গল্পতে দশটা বেজে গেল।
তাহমিনাকে কোথাও দেখছিনা।খুজতে খুজতে পুকুর পাড়ে এসে দেখি একা একা বসে আছে।
– কি হল তুই এখানে কেন?
-…………..!
– আমি তোকে বলছি। কথা বলছিস না কেন??(কাধে হাত রেখে বললাম) এক ঝাটকা দিয়ে হাত সরিয়ে দিল তাহমিনা।
– সর…… ধরবি না আমাকে।(কান্না শুরু করে দিছে)
– তাহমিনা??! কি হইছে তোর???
– কিছু হয়নি যা তুই…………..
– কাঁদছিস কেন?
– বললাম না কিছু না,যা এখান থেকে……..
– আহা…. বলবি তো কেউ কিছু বলেছে তোকে?
– ওইখানে সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখে আমাকে একদম ভুলে গেছিস! যা ওদের কাছে যা…..
এই ব্যাপার তাহলে! তারমানে বাসে যা বলেছে সব সত্যি! গুটিগুটি পায়ে তাহমিনার পাশে গিয়ে বসলাম।
– দুরে গিয়ে বস যা….( বলেই কিছুটা দুরে সরে বসল )
আমিও আর একটু সরে গেলাম ওর দিকে। ও একটু, আবার আমি। এ ভাবে ওপাশের জায়গা শেষ হয়ে গেলে বললাম…..
– কেউ যদি আমার হাত না ধরে তাহলে আমি কিন্তু চলে যাব সুন্দরীদের দেখতে…..
কোন রিএক্ট না দেখে উঠতে যাব তখনি হাতটা ধরল……….
আজ অমাবস্যা! আকাশে চাঁদটা নেই। মিস করছে চাদকে ওরা। বাড়ির ভেতর থেকে আসা একটুখানি আলোয় নিজেদের নতুন করে দেখছে দুজন। ছাগল ছানার মতো কাছে ঘেষে বসল তাহমিনা। চোখ দুটো মুছে নিল আদির বাহুতে……….