অফিসের কাজ করছিল তাসফি । হঠাৎ-ই মিহিনের ফোন।তাসফি কিছুটা বিভ্রান্ত হল।ফোন কি ধরবে নাকি ধরবে না।তারপর কি মনে করে ফোনটা ধরে ফেলল।
ফোন ধরার সাথে সাথেই মিহিনের কর্কশ কন্ঠ শুনতে পেল তাসফি। বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল। তিব্র ব্যাথা করছে বুকের বাঁপাশটা। মিহিন বলল-
:খুব ভালো লাগছে তাই না?
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।কিছু বলতে পারছি না।কথা বের হয় না মুখ দিয়ে।চোখ গুলো কেমন জানি ঝাপসা হয়ে আসে ওর।
:কি হল? কথা বলছেন না যে?
:কি বলব?
:এখন তো আপনার কিছুই বলার থাকবে না।বিকেলে দেখা করবেন।এটাই হবে শেষ দেখা।
এই বলে ফোনটা কেটে দিল মিহিন। তাসফির খারাপ লাগতে শুরু করল। চোখ বাঁকা করে তাকাতেই দেখল মোরশেদ ওর ডেক্স থেকে দিকে তাকিয়ে আছে।যেন মনে হচ্ছে ওর আর মোরশেদ এর মাঝে খুব শত্রুতা।পুরোন শত্রুতা।কিন্তু ওরা আগে শত্রু ছিল না।খুব ভালো বন্ধু ছিল ওরা।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যা ঘটল তারপর থেকে মোরশেদ ওর দিকে শত্রুতার দৃষ্টিতে তাকায়।তাসফি এটা মানতে পারে না।নিজের একটা ভুলের জন্যে তিন তিন টা মানুষ কষ্ট পাবে এটা ভাবতে পারে না ও।ডেক্সের উপর হাত ভাঁজ করে তার ভেতর মাথা গিয়ে কান্না শুরু করে দেয় তাসফি। আর ভাবে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনটা।
তাসফি আর মোরশেদ অফিসে এসে নিজেদের ডেক্সে বসতেই ডাক পড়ল। ওদের বস ডেকেছে ওদের।এ আর নতুন কি।
ওদের বস মহি উদ্দিন। দুই মেয়ে উনার।তবে কোন ছেলে নেই।এক মেয়ে নাম মিহিন এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। আর অন্য জন রুপা সবে মাধ্যমিকে।
চশমাটা ঠিক করে উনি তাসফি আর মোরশেদের দিকে তাকালেন।পুরো অফিসে শুধু এই দুই জনকেই ভালো লাগে মহি উদ্দিনের।অন্যদের কেও ভালো লাগে।তবে ওদের একটু বিশেষ চোখে দেখেন তিনি।চশমাটা ঠিক করে তিনি সিরিয়াস ভঙ্গিতে ওদের বললেন-
:তোমরা তো জানই আমার মাত্র দুইটা মেয়ে।সম্প্রতিতে আমি আমার বড় মেয়ে মিহিনকে নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।
আমি বললাম,
:কেন স্যার? কি হয়েছে?
:পাড়ার ছেলে গুলো ওকে খুব ডিস্টার্ব করছে।যা দিন কাল পড়ছে। কখন কি হয়ে যায়।তাই ভাবছি ওকে বিয়ে দিয়ে নিজেকে একটু টেনশন মুক্ত রাখি।কি বল?
আমার বুকটা ধক করে উঠল।কি বলি এখন? আমি মোরশেদের দিকে তাকাতেই দেখলাম সেও আমার দিকে মন মরা হয়ে তাকিয়ে আছে।আমারও খুব খারাপ লাগতে শুরু করল।কিন্তু আশ্চর্য বেপার হল মিহিনের সাথে আমার কোন ভালোবাসার বন্ধনও নেই।এই তো,গেল কিছুদিন আগে স্যার আমাকে পাঠাল মিহিনের ভার্সিটি। ওকে ভর্তি করাতে হবে।আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলেও কিছু বললাম না স্যারকে।স্যার বলেছেন। তাই অমান্য করি নি। সকাল সকাল রেডি হয়ে স্যারের বাসায় গেলাম। কত বড় বাড়ি।দেয়ালে বেশ কয়েকটা পেইন্টিং দেখলাম। খুব সুন্দর। একে বারে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত। আমি তাকিয়ে আছি,এমন সময় স্যার ভিতর থেকে এলেন।এসেই আমাকে বসতে বললেন।আমি বসলাম। সোফা গুলোও সেই।বসলেই আর উঠতে মন চায় না।ঘুম যেন অটোমেটিক চলে আসে।স্যার বললেন-
:কি নিবে?
:না স্যার কিছু লাগবে না।আমি বাড়ি থেকে নাস্তা করে এসেছি।
:তা তো বুঝলাম।কিন্তু আমার বাড়িতে আসছ কিছু না নিলে কেমন দেখায়।
এই বলে তিনি নিপা বলে ডাক দিলেন। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে বের হয়ে আসল।ও হয়ত ওদের বাড়িতে কাজ করে।আমার তাইই মনে হল।স্যার ওকে বললেন,
:যা তো, আমাদের জন্যে কড়া করে দু কাপ কফি নিয়ে আয় । আর শুন তোর মিহিন আফাকে বলবি তাড়াতাড়ি রেডি হতে।
ও বলল,
:আইচ্ছা।
এই বলে ও চলে গেল।
নিচের দিকে তাকিয়ে আমি কফি খাচ্ছিলাম।এমন সময় একটা নারি কন্ঠ শুনতে পেলাম।বাবা আমাকে কেমন লাগছে? কন্ঠটা একে বারে আমার হৃদয়ে গিয়ে গাঁথল। আমি তাড়া হুড়া করে মাথা তুলে সেদিকে তাকালাম।আমি তাকিয়েই রইলাম।মনে হয় এত সুন্দর মেয়ে আমি আর জিবনে দেখি নি।ছোট ছোট চোখ দুটোতে গাঢ় কাজল,চিকুন চিকুন ঠোট গুলোয় গোলাপি কালারের লিপষ্টিক,মুখে সামান্য আটা ময়দার প্রলেপে মেয়েটাকে দারুন লাগছিল।এ যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন হুর পরি।আমি কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম তা আমার জানা নেই।হঠাৎ স্যারের কন্ঠ পেয়ে আমার হুস ফিরল।
:এ হচ্ছে আমার বড় মেয়ে মিহিন।মিহিন এ হচ্ছে আমার খুব আস্তাভাজন একজন স্টাফ।
আমি বললাম,
:হাই, আমি তাসফি।
:হ্যালো, আমি মিহিন।
সেদিনই ওর সাথে পরিচয় হয়।এবং এর পর থেকে যত কাজ পড়ত মিহিনের সব আমার উপরই পড়ত।শপিং, বন্ধুর জন্মদিনে,বন্ধুর বিয়েতে,মোট কথা সে প্রথম দিন থেকেই আমাকে নিজের কর্মচারী বানিয়ে রাখছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ওর বাবার না ওর আন্ডারে চাকরি করি।আবার কিছু বলতেও পারি না।এজ ওয়েল এজ সে আমার বসের মেয়ে।কিন্তু একটা বেপার আমাকে ভাবাত।মিহিন মনে হয় আমার প্রতি খুব দুর্বল। ওর আচরণেও কেমন জানি পরিবর্তন লক্ষ্য করছি আমি। আর আমি তাকালেই দেখব সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর জন্যে ওকে আমি ভালো করে দেখতেও পারি না।আমার কেন জানি মিহিনের সঙ্গ খুব ভালো লাগত।
:কি হল, কিছু বলছ না কেন তোমরা?
আমি অবচেতন অবস্থায় বললাম,
:কি বলব স্যার?
:মানে? আমি তোমাদের কি বলেছি?
মোরশেদ আমাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে
বলল,
:জি স্যার।আপনার চিন্তা ধারা উত্তম। ওকে একটা ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দেন।
:কিন্তু ভালো পাত্রটা পাই কই?
উনাকে একটু চিন্তিত দেখাল।আমি তখন বোকার মত বলে উঠলাম,
:মোরশেদ আছে তো।ওর ও তো বিয়ের বয়স হয়েছে।আপনি চাইলে ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন। আঙ্কের আন্টিও মেয়ে খুঁজছে।কি রে তাই না মোরশেদ।
মোরশেদ হুট করেই আমার দিকে তাকাল। দেখলাম ও কেমন অসহায় ছেলের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল,
:না মানে স্যার আসলে…
স্যার ওকে বলতে না দিয়ে বললেন
:সাব্বাস তাসফি। তোমাকে আমার এই জন্যেই বেশি ভালো লাগে।
তারপর মোরশেদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
:তুমি চিন্তা করিও না।আমি দেখছি।
আমি আর ও রুম থেকে বের হতেই মোরশেদ বলে উঠল-
:তুই জানিস না নিরার সাথে আমার রিলেশন আছে?
:হুম।জানি।
:তাহলে তুই এমনটা কি ভাবে করতে পারলি।
:আমি জানি না আমি কি করেছি।আমার সব আউলিয়ে গিয়েছে।আমি কি বলতে কি বলে ফেললাম।এই বলে নিজের ডেক্সে এসে বসলাম।
হঠাৎই আমার কাঁদে কারো স্পর্শ অনুভব করলাম।পিছন ফিরে দেখি মোরশেদ দাড়িয়ে আছে।ওর চেহারায় এখন আর শত্রুতার ভাব নেই।কেমন জানি পাল্টে গেল।সেখানে বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ও বলল,
:যা হয়েছে হয়ে গিয়েছে।কিছু করার নেই। আমরা কখনও স্যারের কথা অমান্য করতে পারব না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।
আমি অস্রু ভেজা কন্ঠে ওকে বললাম,
:কি?
:মিহিনকেই বিয়ে করব।
:তাহলে নিরা…
:ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ছেড়ে দিব।
:আমার জন্যে এমন করছিস তাই না?
ও কান্না করতে করতে বলল,
:হ্যাঁ রে হ্যাঁ।তোকে বড্ড ভালোবাসি যে।
আমি আর কিছু না বলে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।বন্ধু হয়ত একেই বলে। আমি যেতেই দেখলাম মিহিন এসে গিয়েছে। আমাকে দেখেই বলল-
: কি বেপার এত দেরি হল যে।
আমি আস্তে করে বললাম,
:কাজ ছিল।তাই।
:তা মুক্তারি করছেন কবে থেকে?
:কই? আমি আবার…
:থাক বলতে হবে না।আচ্ছা আপনি কি ভাবে পারলেন এটা? আপনার কি কখনও মনে হয় নি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি।
:আমি আসলে ইচ্ছে করে বলি নি।মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছে।
:আমার এখন কি করতে মনে চাচ্ছে জানেন?
:কি?
:আপনাকে খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমি কিছু বললাম না।নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।মেয়েটা রাগে ফুঁসছে। আমাকে যেন খেয়ে ফেলবে।আশ্চর্যের বেপার হল আমি কখনই ওর এত রাগি মুখ দেখি নি। এত উত্তেজিত হতে দেখি নি। কিছুক্ষণ পরেই ও আমার টাই টা টেনে আমার মুখটা ওর দিকে ফিরালো। বলল-
:বউ হয়ে আমি মোরশেদ ভাইয়ের বাসায় যাবই।তবে বাসর রাত হবে না।সেখানে আমার মৃত্যুর রাত হবে।কথা টা মাথায় রাইখেন।
এই বলে সে চলে গেল।আমি ওর গমন পথের দিকে চেয়ে আছি।কিছুদুর গিয়ে ও থামল। আমার দিকে তাকিয়ে অস্রু ভেজা কন্ঠে বলল-
:আমার বিয়েতে না আসলেই আমি খুশি হব।
আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে।খুব খারাপ।
আমার চোখ বেয়ে জল পড়ছে।গৌধুলির রক্তিম আভা আমার মুখে পড়ছে। চোখের জল টা জানি চিক চিক করে উঠছে বলে আমার মনে হয়। যা সবার অন্তরালেই। সবার অগোচরে।কেউ দেখি দুটি ভালোবাসার মানুষের কষ্ট।
মোরশেদ কে দেখলাম মন খারাপ করে বসে আছে।আমি বললাম,
:কিরে মন খারাপ?
:মন খারাপের বেপার হলে মন খারাপ হবে না?
:নিরার সাথে কথা হয়েছে?
:হুম।খুব কান্না করছিল।
:আমায় ক্ষমা করে দে প্লিজ।
:আরে ধুরর। এ কিছু না।সব ঠিক হয়ে যাবে।
:না কিচ্ছু ঠিক হবে না।
:আরে সব ঠিক হয়ে যাবে।আয় বুকে আয়।
এই বলে ও জড়িয়ে ধরল।আমি ঠিক বুঝতে পারছি যে কেন ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।ওর কান্না আসছিল।বুক ফাটা কান্না।তাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কষ্ট গুলো কে হালকা লাগছিল ওর।তাই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।অদ্ভুত! আমি কখনও একটা ছেলেকে এতটা কান্না করতে দেখি নি।এ আমার প্রথম অবিজ্ঞাত। আমার খুব খারাপ লাগল।খুব কান্না এল আমার।ওকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দিলাম।
সবাই রেডি হচ্ছে।সবাই যাবে বউ আনতে।মোরশেদের বউ।মোরশেদ মন মরা হয়ে গাড়িতে বসল। পাশে আমি বসলাম।আর তেমন কেউ নেই উঠার।তাউ বরের গাড়িতে আমরা দুজনেই চললাম বউ আনতে।মোরশেদের বউ।আমার ভালোবাসা। হঠাৎ আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে।মিহিনের মুখটা কেমন জানি ভেসে উঠছে।আহহ! কি নিষ্পাপ ওর চেহারাটা। এমন সময় মোরশেদের ফোন বেজে উঠল। নাম্বারটা’ মাই জানু’ দিয়ে সেভ করা। আমার বুঝতে কষ্ট হল না এটা কার ফোন।মোরশেদ ধরল না।আবার দিল। ও এখনও ধরল না।কয়েকবার দেওয়ার পর মোরশেদ ধরছে না দেখে আমি বললাম,
:কি বেপার ফোন ধরছিস না কেন?
:ভালো লাগছে না।
:আরে তাই বলে তুই ওর ফোন ধরবি না? ওর হয়ত কোন বিপদও হতে পারে নাকি?
এ কথা বলার পরেই ও নিজেই ফোন দিল। ও পাশ থেকে নিরার চাপা কান্নার আওয়াজ এল।বলল,
:খুব ব্যস্ত তাই না? ব্যস্ততো থাকবাই।নিজের বিয়ে বলে কথা? চলে যাচ্ছি এই কুৎসিত শহর ছেড়ে। এই শহরের মানুষ গুলো খুব স্বার্থপর। খুব স্বার্থপর। ভালো থেক।
শেষের কথাটা আমার কানে খুব বাদল।লাউড স্পিকার অন করেই ওর সাথে কথা বলেছে মোরশেদ। তাই আমি শুনলাম। তাহলে আমি স্বার্থপর। আমার শহর স্বার্থপর। নাহ।কথাটা আমার গায়ে লেগেছে।ওর কাছে প্রমান
করতে হবে যে এই শহরের মানুষ স্বার্থপর না।সবাই এক না।
আমি ড্রাইভার কে বললাম,
:চাচা থামেন তো।
ড্রাইভার কিছুটা বিচলিত হল।গাড়ি থামিয়ে রাস্তার এক পাশ করল।মোরশেদ তাকিয়ে আছে অবাক দৃষ্টিতে। আমি বের হলাম।মোরশেদ গাড়ির ভেতরে থাকল।আমি এক এক করে আমাদের পিছনে যে গাড়ি গুলো ছিল সেগুলোকে আগে পাঠিয়ে দিলাম।তারপর ভেতরে গিয়ে বসলাম।মোরশেদ বলল,
:কিরে কি হয়েছে।
:অনেক কিছু হয়েছে।হবে।চাচা চলেন।ডানে মোড় নিয়ে বায়ে যাবেন।
চাচা বলল,
:সেদিকে তো রেলস্টেশন।
:জি আমরা সেখানেই যাচ্ছি।
:কিন্তু…
:নো কিন্তু।আমি যান।বাকিটা আমি দেখব।
আমি আর মোরশেদ ধির পাঁয়ে সামনে এগুলাম।নিরার রাগ সম্পর্কে আমার ধারনা অনেক।তাই আমি মোরশেদের পিছন পিছন আসছিলাম। বসে বসে কাঁদছে মেয়েটা। আমার কেন জানি খারাপ লাগল।সব তো আমারি দোষ।আমাদের দেখেই নিরা দাড়িয়ে গেল।চোখের জল গুলো মুছল।কয়েক দিনে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার।
আমি আড়ালে চলে গেলাম।
মোরশেদ বলল,
:আমাকে ছেড়ে তুমি থাকতে পারবে নিরা।
:ঠাশশ।
অতঃপর সব শান্ত।নিরা মোরশেদ কে জড়িয়ে ধরে বলল,
:এমন কথা আমি কখন ভাবতেও পারি না।
নিরা এমন ভাবে জড়িয়ে ধরল যেন আর ছাড়বে না।একে বারে আজিবন এভাবে ধরে রাখবে।হুম।নিরা তা পারবে।জনবহুল এই স্টেশনের লোক গুলো খেয়াল নেই যে দুটি কষ্ট পাওয়া হৃদয় আজ এক হয়েছে।এ যে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ সেটা কেউই বুঝবে না।কিন্তু প্রকৃতি তা ঠিকই উপলব্ধি করে।তাই তো তারা গুলো মিট মিট করে হাসে।সাথে চাঁদ টাও।
মিহিনের বাবা খুব রেগে আছেন।যেন তাসফি আসলে ওকে খেয়ে ফেলবেন।
।তাসফি আসল।দেখেই তিনি এগিয়ে গেলেন।এবং ঠাশঠাশ করে দুইটা চড় দিয়ে বললেন,
:আমার মেয়ে যে তোমাকে ভালোবাসে সেটা তুমি আমাকে আগে বল নি কেন? আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।কি বলছে কি উনি।কিছুই বুঝতে পারলাম না।উনি পকেট থেকে পটাশিয়াম সায়ানাইড এর বতলটা বের করে বললেন-
:দেখ! দেখ! স্টুপিড একটা।যদি ওর কিছু হয়ে যেত? আর মোরশেদ কই।ওকে যে দেখছিনা।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
:ও বউ নিয়ে নিজের বাড়ি গিয়েছে।
সব শান্ত হয়ে গেল।আমি খানিকটা মাথা উঁচু করে দেখলাম সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এর কিছুক্ষণ পরেই একটা হাসির রোল পড়ল বিয়ে বাড়িতে।
আমি দরজা আটকিয়ে যেই সেদিকে ফিরলাম অম্নি মিহিন বলে উঠল,
:এই একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না । কি পেয়েছ টা কি?তুমি যা বলবে তাই হবে নাকি?
:মানে কি মিহিন? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
:বুঝতে হবে না।আমার এই বিয়েতে মত ছিল না।
আমি ওর কন্ঠে খানিকটা অভিমান অনুভুব করলাম।
:তাহলে বিয়ে করলে কেন?
:বাবার কথা তে।
:আর ওই বতলটা…?
:সেটা এমনিই এনেছি।বাবাকে ভয় দেখানোর জন্যে?
:সত্যি তো?
ও ঠোট বাঁকা করে বলল,
:সত্যি।
:ওকে তাহলে আমি বাইরে গিয়ে সবাইকে বলে দেই..
:এই ঘর থেকে এক পাঁ দাও তো একে বারে খুন করে ফেলব।
:কেন?
:জানি না।
আমি ওর দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলাম।ও নড়ল না।আমি বললাম,
:তাহলে কি জানো।
:জানি শুধু একজন কে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসি।
আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম,
:কাকে?
ও অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
:বলব না?
:আমি জানি কে সে।
:কে?
:আমি।
:তোমার মত আস্ত একটা বলদ কে আমি ভালোবাসাতে যাব?
:কিহ? আমি বলদ।
:তা নয়ত কি?
:ওকে ফাইন।তোমাকে এমন বলদের সাথে থাকতে হবে না।আমি ডিবোর্সের…
আর কিছু বলতে পারলাম না।খানিকটা কেঁপে উঠলাম আমি। শিতল হাওয়া বয়ে গেল হৃদয় মাঝে।শান্তির হাওয়া।আমি কেঁপে উঠছি দেখেই মিহিন আমাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।গলা টা আরেকটু চেপে ধরল। আজানা শিহরণ বয়ে গেল সারা শরিরে।ও আমাকে কিস করছে।আমি তার স্বাদ গ্রহণ করছি।কিছুক্ষণ পর ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
:আমার এই বলদটাকেই চাই।আর ডিবোর্সের কথা যেন মুখে না শুনি।শুনলে একে বারে মেরেই ফেলব।
এই কথা কানে গিয়েছে?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিছু বলতে পারছি না।চুমু র স্বাদটা এখনো ঠোটে লেগেই আছে।আমি বললাম,
:উফফ! কি মিষ্টি ছিল কিচ টা।আরেকটা হবে?
:আমি তোমাকে যে কিছু বলেছি সেটা তুমি শুনিতে পেয়েছ।
:ধুরর! ওসব বাদ দাও।আমাকে আরেকটা মিষ্টি দেওয়া যাবে?
:না।একদম না।
:না দিতেই হবে।
আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।ও পিছিয়ে যাচ্ছে।এক সময় দেওয়ালের সাথে ঠেক খেয়ে যায়।আমি ওকে কোলে তুলে নেই সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে।তার ওকে কোলে রেখেই খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম।…