দোস্ত আজ বিকেলে দেখা করতে পারবি।
>> কেন দোস্ত?
> পারবি কিনা সেইটা বল।
>> হুম পারব , কিন্তু কি দরকার সেইটা বলবি তো।
> তুই বিকেল ৫ টায় রহিম চাচার চায়ের দোকানে চলে আসিস। সেখানেই বলবো কথাটা।
>> রাখি বাই।
> বাই।
এতক্ষণ ফোনে কথা হচ্ছিল লিমন আর তামিমের মাঝে। তারা দুই জন জানের জিগার দোস্ত। সেই স্কুল লাইফ থেকেই বন্ধুত্ব।
বর্তমানে দুইজনেই একটা ভার্সিটিতে পড়ছে।
তামিম বসে আছে রহিম চাচার চায়ের দোকানে। চা খাচ্ছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ৫.০০ টা বাজে শালার লিমনটা এখনও কেন যে আসছে না। ঠিক তখনই রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে লিমন আসতেছে।
> ঐ শালা তোর আসতে এতক্ষণ লাগে, যানিস কতক্ষণ ধরে বসে আছি।
>> আসার সময় একটু সমস্যা হইছিল। তাছাড়া আমিতো ঠিক সময়েই আসছি
। (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
> বস চা খা, চাচা ওরে এককাপ কড়া লিকারে চা দেন।
>> এখন বল কিসের জন্য এখানে ডাকলি।
>> আগে চা খা, তারপর বলতেছি।
> আমি খাইতেছি তুই বল।
>> মামা আমি তো ক্রাস খাইছি ।
> কস কি মামা? কেডা সেই ভাগ্যবতী।
>> নাম জানি না ।
> নাম জানস না তো ক্রাস খাইলি কেমনে।
>> ক্রাস খাইতে কি নাম জানোন লাগে
> তা অবশ্য ঠিক বলছত ,এখনকার যুগে ওইডা ব্যাপার না। এখন বল কই দেখা হইছিল।
> ভিকারুননিসা নূন কলেজের সামনে কলেজ ড্রেস পড়া অবস্থায় ছিল। আর এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে পাচটার সময় প্রাইভেটে যায় ।
>> কই মামা এখনতো ৫.৪৫ বাজে, তোর প্রেয়সি কই।
> এত দেরি করার কথা না তো।
>> মনে আজকে আর আসবো না
> আমারো তাই তাই মনে হইতেছে ।
> আজকে ত তাহলে আর খামখা বসে থেকে লাভ নাই । এবার তাহলে ওঠি।
>> আমিও তাই ভাবতেছি।
> চল তাহলে।
>> চল।
রাতে লিমন শুয়ে আছে এমন সময় তামিমের ফোন –
> হ্যালো লিমন ।
>> হুম বল।
> কাল দুপুরে ভিকারুননিসা নূন কলেজের সামনে আসতে পারবি।
>> কেন সেখানে কি দরকার ।
> আসলে আমি ঐ মেয়েটির সাথে দেখা করব।
>> তো আমি কি করব ?
> তুই তো জানিস আমি একটু ভিতু প্রকৃতির ,মেয়েদের দেখলেই আমার হাটু কাপে।
>> বাব্বাহ ! ক্রাস খাইবার সময় তো হাটু কাপে নাই, এখন দেখা করতে গেলে এত ভয় পাস ক্যান।
> দুস্ত প্লিজ না করিস না।
>> ঠিক আছে, এখন ঘুমা।
পরের দিন দুপুরে কলেজের সামনের দাড়িয়ে আছে লিমন আর তামিম।
> দুস্ত তোর প্রেয়সী কখন বের হবে রে ।
>> আগে তো কলেজ ছুটি হতে দে ।
লিমন সময় কলেজের ছুটির বেল পড়ল। সব ছাত্রীরা বের হচ্ছে –
> কই মামা তোরটা কই।
>> এত ব্যাস্ত হচ্ছিছ ক্যান আগে বের হতে দে তো ?
> দোস্ত সাদা হিজাব পড়া মাঝখানের মেয়েটাই সেই মেয়ে।
>> …..(তাকিয়ে দেখছে মেয়েটিকে)
>> এখন বল দেখতে কেমন?
> হুম দোস্ত খুবই সুন্দর ,তোর পছন্দ আছে। তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।
>> কিন্তু মেয়েটা কই ?
> ধুততুরি কার আজকেও মনের কথাটা বলতে পারলাম।
>> চিন্তা করিস না দোস্ত, আমি কালকেই তোর সাথে মেয়েটিকে মিট করিয়ে দিব। এখন চল
> চল ।
রাতে লিমন শুয়ে সুয়ে ইভার কথা ভাবছে। ইভাকে ভালোবাসে সে। কিন্তু কখনো বলার সাহস পায় নি। ইভার নাথে তার পরিচয়টা হয়েছিল হটাৎ করেই। একদিন ভার্সিটি যাওয়ার সময় একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়। এরপ সরি বলতে যাবে তখনই মেয়েটা ওকে কয়েকটা কটু কথা শুনিয়ে দেয়। লিমন কিছুই বলতে পারে না। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে যেন চোখ ফেরাতে পারছে না । মেয়েটি ওর তাকিয়ে থাকা দেখে আরও রেগে গিয়ে বকবক করতে করতে চলে যায়। ও মেয়েটির চলে যাওয়া দেখে।
আহা কি রুপ , হরিনির মতো টানা টানা দুটি চোখ। প্রথম দেখাতে মেয়েটির প্রেমে পরে সে। মেয়েটা আর কেও নয়। সেই ইভা। এরপর ইভার সাথে আরও অনেকবার দেখা হয় লিমনের প্রথম প্রথম ইভা বিরক্ত হলেও ধীরে ধীরে ইভার কাছে ওদের সম্পর্টা অনেক ইজি হয়ে যায়। তারপর থেকেই বন্ধুত্ব দুজনের । লিমন ১ম থেকেই ইভাকে ভালোবাসলেও বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে বলে নি। ইভার কথা আর সে ভাবতে পারছে না। কারণ দুপুরে তামিম যে মেয়েটিকে দেখিয়েছিল সেটি ছিল ইভা। সে জানে তামিমও এর ইভাকে প্রচন্ড ভাবে ভালো বেসে ফেলেছে । এই কথা ভাবতেই যেন তার বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে সে। আবার তার বন্ধুর কথাও মনে পরে যায় তার । এই রকম উভয় সংকটে সে কখনো পড়েনি । একদিকে ইভার প্রতি নিজের তিলতিল করে জমানো ভালোবাসা অন্য দিকে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির স্বপ্ন । লিমন যেন কিছুই ভাবতে পারছে না । তাকে এই দুইটির মধ্যে থেকে যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। হয় নিজের ভালোবাসাকে কুরবানি দিতে হবে নয়তো তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর স্বপ্ন আর বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দিয়ে চিরদিন বন্ধুর সামনে বিশ্বাসঘাতক হয়ে বেচে থাকতে হবে। তার মাথা কাজ করছে না। তবুও তাকে যে কোন একটা বেছে নিতেই হবে। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নেয় তার মাত্র কয়েকদিনের ভালোবাসার জন্য সে তার বন্ধুত্বকে ভাঙ্গতে পারবে না । তার সাথে তামিমের বন্ধুত্বটা ছোট বেলা থেকেই। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে এসে দাড়িয়েছে । এই কয়েকদিনের ভালোবাসার জন্য কিভাবে তার বন্ধুকে ভুলে যাবে। দরকার হলে সে নিজেই তামিমের সাথে ইভার মিট করিয়ে দেবে। কিন্তু কেউ জানবে না যে সে ইভা নামে কাউকে ভালোবেসেছিল।
পরের দিন দুপুরবেলা লিমন আর তামিম কলেজের দাড়িয়ে আছে । কলেজ ছুটি হয়েছে সবে মাত্রই। সবাই বের হচ্ছে, ইভাও বের হল । ইভা লিমনকে দেখেই ডাক দিল-
> এই যে এখানে কি মনে করে। (ইভা)
>> আসলে তুমার সাথেই দেখা করতে আসছিলাম।(লিমন)
> কেন? (উৎফুল্ল ভাবে)
>> কি করে যে বলবো কথাটা
> বলে ফেল কথা মনের ভিতরে লুকিয়ে রাখতে নেই।>
>> .এই হচ্ছে আমার জিগার দোস্ত তামিম। আর ও তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে।
> কি (দমে গিয়ে)
>> হুম ও প্রচন্ড লাজুকতো তাই তোমাকে ওর মনের কথা বলতে ভয় পাচ্ছে । তাই ওর হয়ে আমাকেই বলতে হলো কথাটা।
> হুম
>> ও খুব ভালো ছেলে । বর্তমানে ওর মতো ছেলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।তুমি সত্যি অনেক লাকি ।
> সত্যি।
>> হুম, তুমরা সুখি হও এই দোয়াই করি।আর যাইরে দোস্ত ।
এই বলে লিমন চলে আসল। আসার সময় সে খ্যায়াল করল ইভার চোখে পানি , ইভা হয়তো কিছু কলতে চেয়েছিল তাকে। কিন্তু সে শোনে নি । কি হবে সেখানে থেকে, থাকলে শুধু কষ্টটাই বাড়বে। আসার সময় তার মনে হল সে যেন তার কলিজাটা ছিড়ে সেখানে ফেলে আসছে । মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বেখেয়াল ভাবে সে পা ফেলছে ।
৫ বছর পর,
আজ তামিম আর ইভা স্বামী স্ত্রী মিলে গাড়ীতে কোথায় যেন যাচ্ছে । গাড়িটা হটাৎ একটা কবরস্থানের কাছে এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমেই তারা একটা কবরের কাছে ছুটে গেল। কবরের সামনে গিয়ে তারা দুইজনেই কাদতে লাগল। এই কবরটি আর কারোরই নয় বরং লিমনের। তামিম আর ইভার মিট করানোর পর বাড়ী ফিরার পথে এক্সিডেন্ট হয় তার এবং ঘটনা স্থলেই তার মৃত্যু হয় । এর ৩ বছর পরে লিমনের বোন তামিকে লিমনের একটা ডাইরি দেয়। এইটাই সেই ডাইরি যাতে লিমন তার সব আবেগ, আর ভালোবাসার কথা এবং বন্ধুর জন্য তার আত্নত্যাগ কথা লিখে রেখে ছিল। ডাইরিটা পরে সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ।
আজ লিমনের ৫ মৃত্যু বার্ষিকি ।তাই তামিম আর ইভা তার কাছে ফিরে এসেছে হয়তো ভবিষতেও আসবে। কারণ লিমনের সাথে তার বন্ধুত্বটা কোনদিন ছিন্ন হওয়ার নয়। কারণ সে কি করে ভুলবে তার এই অকৃত্তিম বন্ধুটিকে ।
(সমাপ্ত)…….