একবার পিছন ফিরে রাতের সুন্দর শহরটাকে দেখেনিলাম।বাহ কি সুন্দর ।ভাললাগছে …অনেকটাই সুন্দর।এই
শহরের ভেতরেই খুদ্র এক পোকা ছিলাম ।বাঁচার প্রচেষ্টা আমিও চালিয়েছি প্রচন্ড পিপাসায়।খুদে সেই পোকাটারো যে
একটা মন ছিল কে জানত?জানার কথাও না অবহেলায় খুদে পোকাটাকে মায়ার মধ্যে কেউই জরাতে চায়না।পারলে
পিশে ফেলতে চায় পা দিয়ে নির্দয়ের মত…শহরটাকে আজো আগের মতই লাগছে..পরিবর্তন নেই ।আছে শুধু কিছু
একটার ।কিছুটা সময় তারপর ?তারপর সব শেষ।মনে হচ্ছে কেও আছে পিছনে ।হাহা পাগল হয়ে গেছি মনে হচ্ছে ।
কেইবা থাকবে।চোখটা হঠাৎ ঝাপসা ।এটা কোন কথা কার জন্য? জানিনা তার জন্য? ঘারটা ঘুরিয়ে সামনে তাকালাম
যতটা দুরে চোখ যায় ।
.
চুপচাপ বসে আছি অফিসে।জানালার পাশেই আমার রুম।মন খারাপ হলে দাঁড়িয়ে বাইরের পুরু শহরটাকে দেখা যায়
।এখনো দাঁড়িয়ে বাইরের শহরটাকে দেখছি।বাইরে রৌদ্রচ্ছল একটা দিন।কাচের দেয়াল সে আলো রোধ করার
অধিকার রাখেনা যেমনটি আমি।অফিসে সারাটা দিন কাটালাম একটি বদ্ধ পরিবেশে ।কলিগ তন্ময় একবার এসে
একটু সময় কাটানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।অফিস শেষে অফিসের বাইরে এসে একটা রিক্সা নিলাম।কিছুটা
পথ তার পরে একটা লম্বা ছায়াঘেরা পথ পরে।ভাবলাম হেঁটেই যাই।রিকশা ছেড়ে দিলাম।হেঁটে যাচ্ছি..প্রায় আধ ঘন্টা
পর বাসায় এসে পৌছলাম।বাসাটা তিনতলা কিন্তু দুতালায় উঠেই একজনকে দেখলাম।একটি মেয়ে ।।এই বাসার
বাড়িওয়ালার মেয়ে ।কিন্তু কোনদিন কথা হয়নি।ইচ্ছে করেই কথা বলিনি।হয়ত বাড়িওয়ালার মেয়ে বলে একটু ভাব
থাকতেই পারে ।দরকার কি গায়ে পরে কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলার?কিসে পরে তাও জানিনা।রুমে এসে ফ্রেশ
হয়ে জানালাটা খুললাম।বাইরে ডানদিকে একটা বড় রাস্তা তার পাশেই কিছু চায়ের দোকান ।দুরে একটা বিশাল মাঠ
আর রয়েছে শহরের গড়ে ওঠা সেই বিল্ডিং গুলু।মুহুর্তে মধ্যে মন ভাল করার একটি ছবি।অবশ্য এরকম একটা বাসা
পেতে কম পরিশ্রম করতে হয়নি।সব বাড়িওয়ালার মত আমিও যদি সত্যিটা ওনাকে বলতাম উনি হয়ত আগেই
আমাকে বাসা দিয়ে দিতেন।বলতে পারিনি সত্যটা।তাই সব ব্যাচেলরদের মত আমিও কষ্ট করেই বাসাটা ভারা নিয়েছি।
ভাবছি বিকেলটাকি এভাবেই চলে যাবে ??তাতো দেওয়াই যায়না।একটা বই নিয়ে চলে গেলাম ছাদে।ছাদটা ঠিক
এরকম যে ছাদটা দুভাগে ভাগ করা।একপাশ থেকে ।অন্য পাশে যেতে একটি দরজা দিয়ে যেতে হয়।আমিও তাই বই
হাতে একপাশে দরজা খোলা পেয়ে গেলাম।বসলাম একপাশে ।বইটা পরা শুরু করলাম ।কিছুক্ষন পর আমার চোখ
পরল পাশের এক কোনায় যেখানে একটি মেয়ে মনোযোগ দিয়ে বই পরছে।তার চোখে ছিল চশমা আর তার চুলগুল
একপাশ ডেকে রেখেছিল অবশ্য সুন্দর দেখাচ্ছিল কিন্তু মেয়েটি কে সেটা বুঝতে পারছিনা।আমি শুরু তাকিয়ে
ছিলাম।
বিকেল গরিয়ে একটু সন্ধ্যে ।এতক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আসলে মেয়েটি ছিল বাড়িওয়ালার মেয়ে।হয়ত বই টই পরে
সবসময় ঠিক জানিনা।মেয়েটি আমাকে দেখেনি হয়তবা।আমি চুপচাপ বইটি বন্ধ করে উঠে পরলাম।কয়েক পৃষ্ঠা
পরেছি তবে সেই কয়েক পৃষ্ঠা লেখার মর্ম বুঝে উঠে পারলামনা।রুমে এসে খাটে বসলাম।ফোনটা আমার পাশেই
পরে রয়েছে।নিরজিব একটা বস্তু।উঠে পরলাম।বাইরে এখন রাত ।সুয্যি মামা ঠিক যেন ক্লান্তি কাটাতে শুয়ে পরল।
বাইরে বুঝি একটু দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।ঝড় টড় আসবে নাকি ?কিজানি আজকাল আবহাওয়ার খবরটাও তেমন
রাখা হয়ে উঠেনা।আগে রাখতাম কারন ঝড় বৃষ্টি কোন কিছুই আমাকে আটকাতে পারতনা সেই গলিটার বাসার
সামনে যেতে।দমকা হাওয়াটাও যেন বেড়েছে।টেবিলের ভেতর থেকে ডাইরিটা বের করলাম।ডাইরিটা আজকাল
ওভাবেই পরে থাকে ওটা ।লেখা হয়ে উঠেনা।ডাইরিটা প্রায় শেষের পথে।লেখতে শুরু করলাম একটি গল্প।এক ভেজা
বাতাশ যেন পৃষ্ঠাগুলো উলট পালট করে দিল ।হয়ত কিছু বলতে চায় সে…
.
রিয়ার ফোনটা বেজেই চলেছে কিন্তু ইচ্ছে করেই ধরছিনা।বারবার ফোনটা বাজছে আর আমি বারবার টেবিলের ওপরে
থাকা ক্যালেন্ডারটি দেখে চলেছি।কিন্তু তবুও ধরছিনা।জানি মেয়েটা আমাকে না পেয়ে হয়ত বাসাতেই চলে আসবে।
ঠিক কলিংবেলটার আওআজ শুনলাম।হুম জানি কে এসেছে..রিয়াই।দরজাটা খুলে এমন একটা ভাব নিলাম যে আমি
রিয়ার এই আসাটাতে আমি অবাক যদিও আমি জানতাম ও আসবে।দরজাটা খুলে সাইড হয়ে দাড়ালাম ঘরে ঢুকবার
জন্য ।কিন্তু মেয়েটি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।হুম চোখজুড়া দিয়ে অবশ্য আগুনের ফুলকি ঝরছিল।
-ফোন ধরছিলিনা কেন?(রিয়া)
-কারন টা হয়ত ঠিক জানিনা(আমি)
-সাইড দে ঘরে ডুকব।
-আচ্ছা
রিয়া ঘরে ডুকেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখল ।হয়ত কিছু খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছেনা।তারপর পিছন ফিরে
-আন্টি কোথায়রে ?
-সকাল থেকে পাচ্ছিনা।হয়ত খালার বাসায় গেছে।এসে পরবে।
-বাহ।ভালই হইছে।হেহে
-হাসছিস কেন?
-কারন তোকে ইচ্ছেমত পেটাব যে তাই সাহেব
-কিন্তু আমার অপরাধ?
-অপরাধ কিছুইনা বেস আপনি তিনদিন ধরে গায়েব…কেও আপনার সম্পর্কে কিছুই জানেনা উপরন্তু আপনি আমাকে একটি বারো বলে যাননি ফোনতো অনেক দুরে।
-জানিনা কোথায় ছিলাম তবে
-তবেরে…..
জানিনা কতক্ষণ আমাকে মারল তবে বুঝলাম বালিকা অনেকটা হাফিয়ে গেছে আর আমার পাশে সোফায় বসে পরল।
-শান্তি হয়েছে ।?
-নাহ ।আরো পিটাতে হচ্ছে তোকে।
-থাক জমিয়ে রেখে দিন কিছুদিন পর শোধ পুরন করিয়েন মেডাম।
-তুই এমন কেন করিস বলত ?
-কেমন কি করি ??
-এইযে কারো কথা শুনিসনা নিজের খেয়াল নিসনা আর একজন যে সবথেকে বেশি চায় তোকে তার জন্য তো তোর চিন্তা নাইই ।
-এই আবার আরেকজনটা কে?
-কেওনা ।
-আহা বলনা
-বললামতো পরেই জানতে পারবি।চুপ থাক মাথাটা এখনো রাগে ভর্তি।
-তা তোর রাগ কমাতে কি করতে হবে ?
-বাইরে চল।তিন মিনিটে রেডি হয়ে বাইরে যাবি আমার সাথে।
-আচ্ছা।
খুব দ্রুত রেডি হয়ে বাইরে বের হলাম রিয়ার সাথে।ভিষন রাগিএকটা মেয়ে তবে মন থেকে ভীষন ভাল।চুপচাপ হাঁটছি
ফুটপাত দিয়ে রিয়ার পাশে।বিকেলটা একটু বাকাভাবে ঝোক বেধে আছে।কোন বালিকার পাশেই আমার হাঁটার
অভিজ্ঞতা নেই আমার আগের।আর ভবিষ্যতেও হবে কিনা যানিনা।
.
পরের দিন বিকেল বেলা হেঁটে যাচ্ছি।গতদিনের তুলনায় আজকে আকাশটা অনেক ভাল। ।গন্তব্যটা যে কোথায় আমি
ঠিক নিজেও জানিনা।তবে এটা জানি বিকেলটা উপভোগ করব।ব্যস্ত শহরটাতে বিকেলবেলা দেখা যায় ক্লান্ত
মানুষদের।যারা সারাদিনের রোজগার শেষে বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম নেবার উদ্দেশ্য ।ভাবছি কয়েকদিনের জন্য
হারিয়ে যাব।ছোটবেলার অভ্যাসটা হুট করে তো বদলে দেওয়া যায়না।তবুও বদলে ছিলাম ।ছিলামনা চেষ্টা
করেছিলাম।অফিসের সবাই জানে আমার এই পাগলামিটার কথা কিন্তু তারা কিছুই বলেনা কারন অবশ্য একটা
আছে।হেঁটে চলেছি ।হুট করেই একটা রিক্সা এসে থামল আমার পাশে।সভাবতই তাকালাম রিক্সাতে কে আছে দেখার
জন্য ।রিক্সা থেকে দেখলাম একটি মেয়ে নামল।হুম বাড়িওয়ালার সেই মেয়ে ।কিজানি হয়ত ঘুরতে এসেছে সে
এখানে।আমি আবার হাঁটা দিলাম….
পেছন থেকে কে যেন ডাকল
– এইযে শুনছেন??
পিছন ফিরলাম কিন্তু এগিয়ে যাইনি।সেই বালিকাই আমাকে ডাক দিয়েছিল।আবারো ডেকে বলল
-একটু এদিকটায় আসবেন প্লিজ?
কিছুটা সংকোচ আর এক একটু বিব্রতটা নিয়ে এগিয়ে বালিকার সামনে এসে দাড়ালাম।রিক্সার ভারাটা মিটিয়ে আমার
দিকে তাকালো
-আমরা কি হাঁটতে পারি ?
বালিকার দিকে কিছুটা সময় আমি নিরবতার সহিত তাকালাম।আজ প্রথম এই মেয়েটির সাথে আমি কথা বলছি।কি
যেন একটা অবস্থা ঠিক বলে বোঝানো যাবেনা এই মুহূর্তে আমার।তাও উত্তর দিলাম।
-জি
হাঁটতে শুরু করলাম আমরা।কিছুটা সময় নিরবতার তারপর হঠাৎ তার ভেঙে যাওয়া
-এদিকে কি রোজ আসেন আপনি ?
-নাহ সবসময় আসা হয়না কিন্তু মাঝে মাঝে আসি
-কেন আসেন?
-ঘুরতে কিংবা
-হারিয়ে যেতে তাইনা?
আমি একটু করে বালিকার দিকে তাকালাম।কিছুটা জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে ।কিন্তু অনেকটা কথাই আমি বলতে পারছিলামনা।
-কি হল।অবাক হলেন নিশ্চয়ই যে আপনার এই অভ্যাসটার ব্যাপারে আমি কিভাবে যানলাম?
-অবাক হবারি কথা আমার।
-জানতে নিশ্চয়ই চাইবেন যে আমি কিভাবে যানলাম?
-না থাক ।হয়ত কোনওভাবে যেনেছেন।
আমরা হাটছি।একটা পার্কের কাছে এসে বসতে অনুরুধ করল।কিছুটা জায়গা ফাকা রেখেই আমি সিটে বসলাম।
-আপনি গতকাল ছাদে এসে বই পারছিলেন তাইনা?
-জি।কিন্তু আপনি দেখেছেন কিভাবে?
-আপনি যে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন আমি সেটাও দেখেছি
-অদ্ভুত ক্ষমতা
-হিহিহি।হয়তোবা ।
কিছু টুকটাক কথাই হয়েছিল সেদিন।যানতে পারলাম মেয়েটির নাম তন্নি।ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে কেবল।বই পরতে
খুব ভালবাসে আর কথা বলতে।সেদিন উখান থেকে আমি চলে আসি।
.
হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে আসলাম শহরের এক খোলা মাঠে যেখানে পৌষ মেলা হচ্ছিল।এক প্রকার টানতে টানতেই
আমাকে রিয়া মেলার ভিতরে নিয়ে গেল।এই মেয়েটা যে কি ।এত্ত রাগ একটা মেয়ের মধ্যে কোথ্থেকে আসে কে
জানে ।অবশ্য মনটা অনেক ভাল।মাঝে মাঝে আমিই এই মেয়েটাকে চিনতে পারিনা।কেমন অচেনা মনে হয়।
আজকের রাগের কারনটা অবশ্য আমিই।আজকে ওর জন্মদিন কিন্তু কিচ্ছু বলিনি।রিয়া আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল।
আমরা কিছুক্ষণ ঘুরলাম।তারপর বের হবার ঠিক আগ মুহুর্তে একটা দেখলাম মহিলা কিছু চুড়ি নিয়ে বসে আছে ।
রিয়াকে বললাম আয়ত আমার সাথে।মহিলার কাছে দেখলাম অনেক সুন্দর সুন্দর চুড়ি।লাল নীল বেগুনি।আমি
রিয়াকে বললাম
– হাতটা এগিয়ে দেত
-কেন?
-দিতে বলছি চুপচাপ দে।
আমি ওর ডান হাতে কিছু হলুদ চুড়ি পরিয়ে দিয়েছি।খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ।রিয় কিছুটা সময় চুড়িগুলু দেখল কিন্তু রিয়া
যেন আরো বেশ করে রেগে গেল।আমি কিছু বললামনা।মহিলাকে টাকা মিটিয়ে আমি আর রিয়া মেলা থেকে বের
হয়ে আসি।আবারো হাটছি।হাঁটতে হাঁটতে একটা ফুসকার দোকানে এসে দাঁড়ালাম।
-ফুসকা খাব
-সেতো বুঝতেই পারছি।আচ্ছা
রিয়া ফুসকা খেল।খেয়ে আমরা বাসার দিকে হাটছি।বাসাটা ঠিক হয়ত বেশি দুরে নয় তখন কিছুটা অন্ধকার এলাকা।
হঠাৎ রিয়া আমার সামনে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি একটু যেন ধাক্কা খেলাম।রিয়া জারিয়ে ধরেই আমাকে
বলছে
-চুড়িগুলু হচ্ছে আমার জীবনের দ্বিতীয় বেস্ট গিফ্ট
-আগে বলিসনি কেন ?আর তখন রেগেই বা ছিলি কেন
আমার মুখটা চেপে ধরলহাত দিয়ে ।তারপর কানে কানে বলল
-আজীবন আমার পাসে থাকিস প্লিজ
.
সেদিন একটু মেঘলা করে ছিল।তার আগের দিন প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হয়েছে।আজকেও হয়ত আসবে।বিকেলটা যেন
একরাশ মৃত মেঘের আড়ালে ভয়ঙ্কর রুপ।কিছুটা ঠাণ্ডা বাতাস যেন রক্তকনিকা ঠান্ডা করে দিচ্ছে।একবুক খোলা
আকাশের দমকা হাওয়া যখন আমার রুমের ডাইরিটার পৃষ্ঠাগুলি এলোমেলো করে দিচ্ছিল তখন আমি ছাদে বই হাতে
প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত।হঠাৎ করেই আমার সামনে একজন একটি কফির মগ এগিয়ে দিয়েছে।তন্নি
-নিন ।এরকম একটা দিনে কফি না খেলে জমে নাকি
-হুম ঠিক কিন্তু আমার জন্য? আর আপনি জানলেন কিভাবে আমি ছাদে?
-কিজানি হয়ত আপনিও আমার মতই তাই হয়ত প্রকৃতির এমন দৃশ্য দেখাটা মিস করবেন না বলেই ছাদে এসেছেন।আর যেহেতু আমি কফি বানিয়েছি তাই আপনার জন্যেও নিয়ে এসেছি।নিন ধরুন।
-ওহ।ধন্যবাদ
আর কিছু বলিনি চুপচাপ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আমরা দুজন দূরের প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত।কথাহিন কিছুটা সময় তারপর
-আপনি সবসময় চুপচাপ থাকেন কেন? (তন্নি)
-এমনিই ।হয়ত অভ্যাস
-নাহ কিছুত আছে বা হয়েছে আপনার জীবনে বলেন না কি হয়েছে
-কিছু হয়নি।আর হবেই বা কি
-কোন দিনো কাওকে ভালবেসেছেন?
তন্নির এই কথাটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা
তার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম অনেক দিনের জমে থাকা কথা এটি।
-জানাকি এতটাই দরকার আপনার?আর কিছু বলে উঠতে পারলমনা আকাশের একঝাঁক বৃষ্টির আমাদের ভিজিয়ে
দিয়ে গেল।দুজনেই দৌড়ে শিয়িঘরে গিয়ে পৌছলাম কিন্তু ততক্ষনে ভিজে একাকার।শিড়িগরে গিয়ে দেখলাম তন্নি
ভিজে একাকার ।তন্নি এমনিতেই সুন্দর কিন্তু ভেজা বালিকা যে আমার চোখে এভাবে আরো সুন্দর হয়ে উঠবে বুঝে
উঠতে পারিনি।এলোমেলো চুলগুলো একটু ঠিক করে যখন দেখল আমি একনাগারে তাকিয়ে আছি তখন ঠিক
লজ্জায় দৌড়ে পালাল।আমিও একটু মুচকি হেসে বাসায় চলে আসলাম।খুব একটা ঝড় যাচ্ছে তা নয়।কিন্তু আমার
মনের ভেতর যে ঝড় বইছে তাকি কাওকে বোঝাতে পারব?আচ্ছা তন্নিকে আমি? নাহ।এটা হতে দেওয়া যায়না।আচ্ছা
তন্নির মনেওকি এটাই হচ্ছে?
.
প্রায় তিনদিন রিয়ার সাথে আমার যোগাযোগ নেই।অনেক ফোন অনেক মেসেজ আর অনেক ঘুরেছি রিয়ার বাসার
সামনে গিয়ে কিন্তু কিছুতেই রিয়া আমার ডাকে সারা দেয়নি।কিন্তু হুট করেই একদিন সকালে মেসেজ আসল
-আজকে দুপুরে দেখা করতে পারবেন স্যার?
আমি রেডি হয়ে চলে গেলাম যেহেতু আমি জানি রিয়া কোথায় থাকবে।গিয়ে দেখি বালিকা আগেই এসে বসে আছে।
আমি গিয়ে পাশে বসলাম।দেখলাম একটি হলুদ জামা পরে বালিকা বসে আছে।আমার উপস্থিতি বুঝেও কেমন একটা
লজ্জামাখা মুখ দিয়ে সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেকটা লজ্জা।এ লজ্জা যেন আমাকে ক্রমশ ভাবিয়ে
তুলছে।
-এইভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকার মানে কি
-কিছুনা।এমনিই
-তুই বলবি ?এদিকে তাকা
-হুম
-কি হুম ।এদিকে তাকাতে বলছি।।তাকাচ্ছিসনা কেন?
-লজ্জায়
-কিহ?তুই আর লজ্জা?
আমার কি হয়েছিল জানিনা তবে অনেক্ষন ধরে আমি হেসেছি।তারপর বললাম
-লজ্জ্টা কিসের ?
-বলতে পারবেনা
-আচ্ছা না বললে আমি চলে যাই?
-নাহ।
-তাহলে বল
-আচ্ছা পরেই বলব।
এটি বলেই রিয়া উঠে চলে যাচ্ছিল ।আমি হাতটি ধরলাম।আমি দাঁড়িয়ে
-তুইকি বলবি নাকি আমি চলে যাব?
মাথাটা নিচু করে একরাশ লজ্জা নিয়ে
-লেখক কে কি সব বলে বোঝাতে হয়?
-আপাদত লেখক অবুঝ ।আমাকে বলেই বোঝাতে হবে
আমি জানি রিয়া কি বলতে চায়।তবুউ আমি ওর হাতটি ধরে ওর কাছথেকে শুনতে চেয়ে ছিলাম
-আমি তোকে ভালবাসি গাধা
-ও তাই।আচ্ছা ভাল।আমি জানি
-তুই জানতি মানে ?তাহলে আগে কেন বলিসনি?
-হারিয়ে ফেলার ভয়ে।
-তুই আজীবন গাধাই থেকে যাবি।কবে থেকি জানতি ?
-যেদিন থেকে তোর সাথে আমার পরিচয় ।কিন্তু তুই কেন এই কয়দিন আমার মেসেজের উত্তর দেসনি।??
-ঐযে ভয়ে।ভেবেছি সেদিনের পর থেকেতুই আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছিস তাই।আরকিইই
-হায়রৃ।
-উফ কেনযে আমি এই গাধার প্রেমে পরতে গেলাম।মনটাকে ধরে গাছের সাথে বেধে পেটানো উচিত।
-হাহাহা।ভালইতো
-কিহহ ভাল মানে ??আমার উত্তর কই?
-আগে প্রপোস কর আমাকে
-কিহ কোন দিন দেখছিস একটা ছেলেকে একটা মেয়ে প্রপোস করতে?
-রেয়ার কেস
-হেতো ??
-প্রপোস কর।
-ওফফফফফ
রিয়া হাঁটু গেড়ে বসে বল
-আই লাভ ইউ খালিদ।উইল ইউ বি মায় হাসবেন্ড?
-মেয়েগুলা প্রপোস করতে বরাবরই অজ্ঞ।দাঁড়া
রিয়াকে দাঁড় করিয়ে আমি হাঁটু বসে বললাম
রিয়া,
তুমি কি আমার প্রতিটা গল্পের নায়িকা হবে ?
হবে আমার সকাল বেলার ভেজা চুলে জাগিয়ে দেওয়া রমনী?
হবে কি আমার কল্পনার রাজ্যের এক রানী?
হবে কি আমার গভির রাতের হাঁটার সঙ্গি?
হবে কি আমার পাশে থেকে আজীবন আমার অনুপ্রেরনা
হবে কি আমার হাতে হাতে রেখে বৃষ্টিবিলাসী এক মেয়ে?
হবে কি আমার সারাজীবনের সঙ্গি
হবে কি তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী?
আর কিছু বলার প্রয়োজন ছিলনা।আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুর করেদিল।আমিও জড়িয়ে ধরলাম।
.
কিছুদিন তন্নির সাথে দেখা করিনি।হয়তো কিছুটা ইচ্ছে করেই।কয়েকদিন ছাদেও যাইনি।বেশিরভাগ সময় আমি ঐ জানালা দিয়ে শহরের বাস্তব রুপটা অনুভব করতাম।একদিন হুট করেই রাস্তায় দেখা হয়ে গেল তন্নির সাথে।
– মিঃ খালিদ আপনি কোথায় ছিলেন এতদিন?
-ছিলাম বাসাতেই
-আমার সাথে দেখা করেননি ছাদে আসেন নি।কেন বলুনতো ?
-এমনিইতেই।কেন
-আপনার সাথে কথা আছে চলুন।
-কোথায়?
-আসুন
তন্নি আমাকে টানতে টানতে একটা রিক্সাতে বসিয়ে একটা পার্কে নিয়ে এল।
-বসুন এখানে
-আচ্ছা
-গল্প লিখেননা কতবছর ধরে?
-আসলে মানে আপনি কি করে জানলেন এটা?
-আমি অনেকটা কিছুই জানি।বলুন গল্প লিখা ছেড়েছেন কতবছর?
-আজ থেকে পাঁচ বছর
-এত বছর লিখেননি কেন?
-ইচ্ছে হয়নি তাই।
-দেখুন আমি অনেকটাই জানি।কিন্তু সম্পুর্নটা আমার জানার আড়ালে।আমি জানতে চাই।
-কিন্তু আমিতো মনে করতে চাইছিনা
-আপনাকে বলতেই হবে কি হয়েছিল রিয়া অপুর সাথে।
রিয়ার নামটা শুনেই আমার বুকটা কেঁপে উঠল।চোখদিয়ে পানি টা গরিয়ে গালে পরতেই খেয়াল করলাম আমি কাদছি….আজ এতবছর পর রিয়ার নামটা কেও আমার সামনে উচ্চারন করল।
-কাঁদছেন কেন ?প্লিজ বলবেন কি হয়েছিল?
-রিয়া আমার ক্লাসমেট।অনেকদিন বেস্টফ্রেন্ড থাকার পর আমাদের মধ্যে ভালবাসা শুরু হয়।তারপর পুরুটা গল্প তন্নিকে বললাম।
-কিন্তু এত ভালবাসার পরেও আপনাদের বিয়ে হয়নি কেন?
-সেম এজ রিলেশন।বয়সটা তখন কম ছিল।তাই বরাবরই বেকার।ভার্সিটির ছাত্র।কে যেন রিয়ার বাবা মাকে আমাদের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়।তাই অনেক কষ্ট করেও বিয়েটা আটকাতে পারিনি।হুমমম (দির্ঘশ্বাষ)
-হুমম বুঝলাম।কিন্তু রিয়া আপুতো আপনাকে ভালবাসতো তাহলে উনি তো চলে আসতে পারত।
-আমি না করে দিয়েছিলাম।এখন সে অন্যের স্ত্রী।আর রিয়া একবার আত্মহত্যাও করেছিল একবার।পরে সুস্থ হয়।আমি অপরাধী আমি রায়ার অপরাধী।মেয়েটা আমরা এতটা ভালবাসে অথচ আমি ওকে দেওয়া সামান্য কথা রাখতে পারলামনা ।
কিছুক্ষণ নিরবতা।এই নিরবতার যেন অনেকদিন ধরে চলে আসা এক বাতাসের মুরমুহু গন্ধ।
-আজকে থেকে আবার গল্প লিখবেন।
-গল্পের নাইকাইতো নাই গল্পে লিখে কি লাভ?
-লিখবেন ।নাইকাইতো আছে।
-ঠিক বুজলামনা
-আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলছি
-এটা হয়না।
-হয়।সবকিছুই হয়।রিয়া আপুকে যে ভাবে ভালবাসতেন আমাকেও সেভাবেই ভালবাসবেন।
-কিন্তু আমিতো রিয়াকে কথা দিয়ে দিয়েছি ওর জ্য়গায় আর কাওকে আসতে দিবনা।
-কিন্তু রিয়া আপুতো এটা বলেনি যে ওনার পরে আরকাওকে আপনার মনে জায়গা দিতে পারবেন না।
আই লাভ ইউ
আমি উত্তর কি দিব জানিনা।তবে হয়ত আমার জীবনটা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।আর হয়ত আমাকে হারাতে হবেনা ।
হয়ত দুজনে বসে সেই জানালা দিয়ে একসাথে শহরটা দেখতে পারব কিংবা ছাদে বসে একটা কাপে কফি নয়ত একটা
বই দুজনে পরা।
.
…………………………………………. সমাপ্ত …………………………………….