সিলেট জায়গাটা অাসলেই সুন্দর।
চা-বাগান,ছোট ছোট টিলা,জলপ্রপাত,সুন্দর সুন্দর গাছ।সৃষ্টিকর্তা যেন নিজ হাতে তৈরি করেছে জায়গাটা।
এখানে না এলে সত্যি অনেক কিছুই দেখা বাকি থাকত।
মনে মনে এমনই ভাবছে বিজয়।
এইবার প্রথম সিলেটে বেড়াতে অাসলো।
বন্ধুর অনেক জোরাজোরিতে এখানে এসেছে।
অাফিফের সাথে বন্ধুত্ব সেই ছোটবেলা থেকে।তবে কখনো তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটে যাওয়া হয় নি বিজয়ের।অাফিফ অনেকবারই বলেছে।তবুও ঢাকার বাইরে খুব একটা যেতো না বিজয়।এবার যেতে রাজি হয়েছে।সিলেটে এসে রীতিমতো মুগ্ধ বিজয়।
সারাদিন ঘুরাঘুরি অার বিকালবেলা ক্রিকেট খেলে সময় পার করছিলো বিজয়।
একদিন অাফিফদের বাড়ির কাছে একটি মাঠে বিকেলবেলা ক্রিকেট খেলছিলো বিজয়।
হঠাৎ করে বিজয়ের মারা একটা বল গিয়ে পড়লো একটা বাড়ির ভেতর।
সবার চোখে মুখে কেমন একটা অাতংকের ছাপ।
সবাই এই বলের অাশা বাদ দিয়ে নতুন বল কেনার কথা ভাবছে…..
>>কিরে বলটা নিয়ে অায় যা।(বিজয়)
>>পাগল নাকি।ঐ বাড়ির মহিলা যেরকম দজ্জাল টাইপের।বল তো ফেরত দিবেই না উল্টো অারও কথা শুনিয়ে দিবে।লাঠি দিয়ে মারতেও পারে।এমনিতে অামাদের এখানে খেলা নিয়ে ওনার অনেক সমস্যা।
দরকার নাই এই বলের।নতুন বল কিনে অানছি এখনই দাঁড়া।(অাফিফ)
>>এটা কোন কথা হলো।দাঁড়া অামি গিয়ে দেখছি কী করা যায়।(বিজয়)
>>যা তোর মন চাইলে।কিছু বললে পরে অামাকে দোষ দিবি না।(অাফিফ)
….
বাড়ির গেটটা চাপানো।গেটটা খুলে বিজয় ভেতরে ঢুকলো।কাউকে দেখা যাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর একটা মেয়েকে দেখতে পেলো বিজয়।কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থাকলো।মেয়েটা অনেক সুন্দর।অনেকটা ডানাকাটা পরী টাইপের।তবে এইরকম ডানাকাটা পরীদের থেকে দূরে থাকতেই বিজয়ের ভালো লাগে।
তাই অার তাকিয়ে না থেকে বিজয় কথা বলা শুরু করলো….
>>অাপু কিছুক্ষণ অাগে একটা ক্রিকেট বল এসে পড়েছিলো অাপনাদের বাসায়।(বিজয়)
মেয়েটা কোন কথা বললো না।শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতিসূচক জবাব দিলো
>>বলটা দিয়ে দিলে অামাদের উপকার হতো।(বিজয়)
তারপর মেয়েটা হাতে করে বলটা নিয়ে এসে বিজয়কে দিলো।
>>ধন্যবাদ অাপনাকে।(বিজয়)
মেয়েটা এবারও কোন কথা বললো না।শুধু বিজয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।যাই হোক বিজয় বলটা পেয়ে গেছে এতেই খুশি।ভীতুর ডিমগুলা কেনো যে এতো ভয় পেলো। অার দজ্জাল মহিলা টাইপ কাউকে তো দেখলো না।হয়তো বাড়িতে ছিলো না।
বিজয় যখন বলটা হাতে নিয়ে বের হলো তখন সবাই এমন ভাব করলো যেনো এভারেস্ট জয় করে ফিরেছে।
পরেরদিন অাবারও বল মারলো কেউ একজন।এবার অাবার সবাই মিলে বিজয়কে পাঠালো।
এইবার বিজয় বুঝেছে কেনো এখানে যেতে মানা করেছে সবাই।দজ্জাল মহিলাটা যেনো পারলে তাকে মারতে অাসে।যাই হোক কিছুক্ষণ পর অাবার সেই মেয়েটি এসে তার মাকে ইশারা-ইঙ্গিতে কি যেনো বুঝালো।তারপর মহিলাটা বল ফেরতে দিতে রাজি হলো।তবে অাল্টিমেটাম দিয়ে দিলো পরেরবার অাসলে কেউ নিস্তার পাবে না।
২ দিন পর মেয়েটির সাথে দেখা হলো রাস্তায়।বিজয় অারেকবার ধন্যবাদ জানালো।কিন্তু মেয়েটি এবারও কোনো কথা বললো না।শুধু বিজয়ের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলো।
চলে যাওয়ার অাগের দিন মেয়েটার সাথে অাবার দেখা হয় বিজয়ের।
>>অামরা কি বন্ধু হতে পারি?(বিজয়)
মেয়ের সেই দজ্জাল টাইপ মা চলে অাসায় মেয়েটি অার কিছু বললো না।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটি তার ছোট বোন কে দিয়ে একটা চিরকুট পাঠালো।চিরকুটে শুধু একটা ফেসবুক একাউন্টের নাম লিখা “Cindrella Ahmed”
বড় অদ্ভুত নাম।এই নাম অাগে কখনো শুনেছে বলে বিজয়ের মনে পড়ছে না।
এই কয়দিন সিলেটে খুব ভালোই কাটলো।চলে যাবার সময় সত্যি কিছুটা খারাপ লাগছে।যাবার সময় সেই মেয়েটা বারান্দা থেকে হাত নেড়ে বিজয়কে বিদায় জানালো।
মেয়েটার মিষ্টি হাসিটার কথা বার বার মনে পড়ছে বিজয়ের।হঠাৎ বিজয়ের চিরকুটটার কথা মনে পড়লো।
তারপর ফেসবুক থেক মেয়েটার অাইডি খুঁজে বের করলো।
মেয়েটার সাথে প্রতিদিনই ফেসবুকে কথা হতে থাকে বিজয়ের। মেয়েটার নাম মালিহা অাহমেদ।
এই বছর এসএসসি পাশ করেছে।
বিজয়ের থেকে এক ব্যাচ জুনিয়র।
কিছুদিন পর মেয়েটা ঢাকায় চলে অাসে।ঢাকার একটা কলেজে ভর্তি হয়।খালার বাসায় থেকে পড়াশুনা করে।
একদিন মালিহা বিজয়কে মেসেজ দেয়।
>>তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।(মালিহা)
>>চলো একদিন দেখা করি।(বিজয়)
>>অামি কথা বলতে পারি না।(মালিহা)
>>মজা করো না।(বিজয়)
>>তুমি অামাকে ফেসবুক বাদে তোমার সাথে কথা বলতে দেখেছো কি না মনে করে দেখো।(মালিহা)
>>না তো।
>>অামি জন্মের পর থেকেই কথা বলতে পারি না।
তোমাকে এতদিন বলতে পারি নাই।এজন্য অামাকে ক্ষমা করে দিও।
বিজয় মনে মনে ভাবছে এত সুন্দর একটা মেয়ে কিনা কথা বলতে পারে না।সত্যি সৃষ্টিকর্তা সবাইকে হয়তো সব কিছু দেয় না।যেমন এই মেয়েটিকে কথা বলার শক্তি দেয় নি।
এটা জানার পরও বিজয় তাকে ছেড়ে যায় নি।তারা এখন মাঝে মাঝে দেখা করে।চিরকুটের মাধ্যমে কথা বলে দুজনে।ব্যাপারটা বিজয়ের কাছে ভালোই লাগে।
মালিহা এবং বিজয় একে অপরকে পাঠানো সব চিরকুটগুলো নিজেদের কাছে যত্ন করে রেখে দেয়।
এরকম কত হাজার ছোট ছোট চিরকুট যে জমা হয়েছে দুজনের কাছে তার কোন হিসাব নেই।
এদিকে দেখতে সুন্দর হওয়ায় কিছুদিন পর পরই মালিহার জন্য বিয়ের প্রস্তাব অাসে।একদিন মালিহার খালা মালিহার জমানো চিরকুটগুলো দেখে ফেলে।তিনি মালিহার মাকে সব কিছু জানিয়ে দেন।মালিহার মা মালিহার বিয়ে ঠিক করে ফেলে।মালিহাকে সিলেটে নিয়ে অাসার সিদ্ধান্ত নেয়।
মালিহার মোবাইল নিয়ে যাওয়ায় বিজয়ের সাথে কোন যোগাযোগও করতে পারে না।এইদিকে বিজয় পাগলের মতো হয়ে যায়।
কিছুদিন পর বিজয়ের মোবাইলে একটা কল অাসে।
মালিহার ছোট বোন কলটা করে।
“ভাইয়া কালকে অাপুর বিয়ে,অাপনি তাড়াতাড়ি সিলেট অাসুন।”
বিজয় অাফিফকে সাথে নিয়ে দ্রুত সিলেট রওনা দেয়।
মালিহাদের বাড়িতে অাসে বিজয়।কিন্তু বিয়েবাড়িটা ফাঁকা অার শুনশান।
কেউ নেই।
তাহলে কী মালিহার বিয়ে হয়ে গেলো??
অামি কি দেরী করে ফেললাম??
এসব ভাবতে শুরু করলো বিজয়।
কিছুক্ষণ পর বড় একটা এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে মালিহাদের বাড়ির সামনে এসে থামলো।
বিজয় ভাবছে বিয়ে বাড়িতে হয়তো কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তাই এ্যাম্বুলেন্স এসেছে।
কিন্তু এ্যাম্বুলেন্স থেকে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা দেহ বের করা হচ্ছে।
সেই দজ্জাল মহিলা(মালিহার মা) যেন পাথর হয়ে বসে অাছে লাশের পাশে।বিজয় সামনে গিয়ে দেখলো লাশের মুখটা।
মালিহা!!
হতেই পারে না।
বিজয় পাগলের মতো শুরু করলো।
অাপনারা ওকে সাদা কাপড় পড়িয়েছেন কেনো??
ওকে উঠতে বলুন।
ওর কপাল থেকে এখনও রক্ত ঝড়ছে।
প্লিজ ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান না।
মরে যাবে তো এতো রক্ত পড়লে।
কেউ কথা শুনছেন না কেনো।
যত রক্ত লাগে অামি দেবো।
অাফিফ বিজয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মালিহা অার উঠবে না।
নাহ্ মালিহা অাত্মহত্যা করে নি।
বিয়ের অাগের দিন রাতে বাসা থেকে পালাতে চেয়েছিলো বোবা মেয়েটা।তিনতলার বারান্দা দিয়ে কাপড় বেঁধে পালানোর চেষ্টা করেছিলো সে।
কিন্তু সৃষ্টিকর্তা অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিলেন।
পালাতে গিয়ে তিনতলা থেকে পড়ে যায় মালিহা।
মাথায় প্রচন্ড অাঘাত পায়।
মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় মালিহার।
বিজয় অাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ব্যাগ থেকে চিরকুটগুলো বের করে।অসংখ্য চিরকুট তবে সংখ্যাটা অার বাড়বে না।অার কেউ চিরকুট দিবে না বিজয়কে।
হঠাৎ কোথা থেকে যেনো একটা ঝড়ো হাওয়া অাসে।
চিরকুটগুলো বিজয়ের হাত থেকে উড়ে যায়।বিজয় পাগলের মতো সেগুলোর পিছনে ছোটে।চতর্দিকে চিরকুটগুলো ছড়িয়ে পড়েছে।বিজয় সেগুলো কুড়ায়।
কয়েকটা চিরকুট বাতাসের ধাক্কায় কোথায় যেন চলে যায়,বিজয় সেগুলো খুঁজে পায় না।
এই হারিয়ে যাওয়া চিরকুটগুলোর মতো মালিহাকেও অার খুঁজে পাবে না সে।
……………………………সমাপ্ত……………………………..
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা