বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে আমি একটি টং দোকানে বসে আছি। সাথে এক কাপ চা। এই নিয়ে ৫ কাপ চা শেষ করে ফেললাম! আরো খাবার ইচ্ছে আছে। তবে সেটা আর হচ্ছে না! ৫ কাপ চায়ের দাম ২৫ টাকা হয়ে গেছে। এ টাকা দিতেই খবর হয়ে যাবে। টাকা টা দিয়ে সোজা হাটতে লাগলাম। একটু পরেই একটা টিউশনি আছে। ভাবছিলাম রিক্সা দিয়ে যাবো। কিন্তু চা খেয়ে ফেলায় টাকা নাই। তাই কি আর করার বাধ্য হয়ে হাটতেছি। মাসের প্রায় ২০ দিন ই হেটে গিয়ে পড়িয়ে আসি। আজ নতুন মাসের ৩ তারিখ বেতন পাওয়ার কথা, দেখি কি হয়।
ভাবতে ভাবতে গেলাম পড়াতে। ছাত্রীকে পড়াচ্ছি আর পাশেই ছাত্রীর মা, খালা সহ আরো অনেক লোকজন কথা বলতেছে। চিৎকারের কারনে ঠিক ভাবে পড়াতেও পারছি না। ছাত্রী কে বললাম,
আমি: ভেতরে চিৎকার করে কারা?
ছাত্রী: কাল আমরা বান্দরবান ঘুরতে যাবো তাই সবাই কথা বলছে।
আমি: ওহ।
কিছুক্ষন বাদেই ছাত্রীর মা আসলো,
আমি: আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন?
আন্টি: এইতো ভালো। জয় তুমি কেমন আছো?
আমি :জ্বী ভালো।
আন্টি: আসলে হয়েছে কি এ মাসে তোমার টাকাটা দিতে পারবো না। কাল সবাই বান্দরবান যাবো তো তাই অনেক টাকা লাগবে। তুমি কিছু মনে করো না।
আমি: আচ্ছা আন্টি।(কথাটা বলার সময় আমার মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে). কিছুক্ষন পড়িয়ে চলে আসলাম। আবার সোডিয়াম লাইটের নিচ দিয়ে হেটে মেসে ফিরছি। আর ভাবতেছি কত আজব এই দুনিয়া! এক মাসের বেতন ৩০০০ টাকা তা তারা দিবে না অথচ হাজার হাজার টাকা খরচ করে পিকনিকে যাবে। খুব প্রয়োজন ছিলো টাকাটার কিন্তু কিছুই পেলাম না। এভাবেই কাটছে জীবন। সোডিয়াম লাইটের নিচে হাটছি বেশ ভালোই লাগছে। এই সময়ে ফোন আসলো। স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখি রেশুর ফোন,
রেশু: কি জয় সাহেব কেমন আছেন?
আমি: ভালো। তুমি কেমন আছো?
রেশু : ভালো। কি করো।
আমি: মেসে যাচ্ছি।
রেশু : আচ্ছা গিয়ে ফোন দিও।
আমি: ওকে।
রেশুর সাথে আমার কিসের সম্পর্ক সেটা আমিও জানি না। একই সাথে পড়ি। তবে বন্ধুত্বের থেকেও অনেক গভীর সম্পর্ক। মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে রেশুকে কল দিতে গিয়ে দেখি ব্যালেন্স নাই! কি আর করার এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘুম দিলাম।
কেউ মনে হচ্ছে আমার গায়ে পানি দিচ্ছে। উঠে দেখি রেশু !!!
আমি: আরে রেশু তুমি আমার মেসে???
রেশু : হুম। তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আসো। এক জায়গায় যেতে হবে।
ফ্রেশ হতে বাইরে আসলাম।
পকেটে টাকা নাই কি করবো ভাবছি। রেশুকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার টাকাটা কোথায় পাবো। সামনেই দেখি ফয়সাল ভাই। তার কাছ থেকে কিছু টাকা নিলাম। রেশুকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। একটি রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
রেশু : (একটি কার্ড এগিয়ে দিয়ে) এই নেও।
আমি: কি?
: আমার বিয়ের কার্ড।
: ওহ!
রেশুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছু বলছে তার চোখ। তবে সেই ভাষা বুঝার সময়, যোগ্যতা কোনটা ই আমার নেই।
রেশু : আমার বিয়েতে অবশ্যই আসবে কিন্তু।
আমি: আচ্ছা।
কিছু না বলেই বেরিয়ে আসলাম। আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো আমার চোখ ও কথা বলা শুরু করে দিতো।
.
রেশু অনেক বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন সাইলেন্ট করে বসে আছি। আজ রেশুর গায়ে হলুদ। হয়তো যাওয়ার জন্য ই ফোন দিচ্ছে। কি আর করার নির্জন রাস্তায় একা একা হাটছি আর ভাবছি কি দরকার ওর গায়ে হলুদে গিয়ে মিথ্যে মায়া বাড়ানোর। খুব ভালো থাকবে রেশু এই দোয়াই করি। এই মাস কিভাবে চলবো সেই চিন্তাই করছি। টিউশনির টাকা মানে আমার কাছে সোনার হরিন! আপাততো সেই সোনার হরিনের পিছেই লেগে আছি। কোনো মিথ্যে মায়ায় জড়ানোর সময় নেই।
.
.
………………………………….. সমাপ্ত …………………………………