দীর্ঘ কয়েক বছর পর আজ হঠাৎ করেই বাস স্টান্ডে আরোহির সাথে দেখা,,
বয়সের কেমন যেনো ছাপ পরেছে,,চেহারার লাবন্যতাও যেনো আগের মত নেই তার,,
ছুটি শেষ করে আবার গন্তব্যস্থানে যথা যথ ভাবে যাওয়ার জন্য বাস স্টান্ডে মূলত আসা,,নিজের গাড়ি থাকা সত্বেও কেনো যেনো বাসে চরতে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে,,,
আরোহির সাথে সত্যি ব্রেক আপ হয়েছিলো নাকি বলতে পারবো না তবে হঠাৎ করেই কিভাবে যেনো সব কিছু উলট পালট হয়ে গেলো,,,
আমার অজান্তে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করে পালিয়ে যায় আরোহি,,,
তবে হ্যা আমার দিক থেকে এখনো আরোহি কে ভালোবাসি আমি,আর সে জন্য হয়তো এখনো বিয়ে করা হয়ে ওঠে নি,,
কখনো ভাবিওনাই যে আরোহির সাথে আবার দেখা হবে,,
হঠাৎ করে এভাবে দেখা হওয়ায় নতুন করে মনের ভিতর আবার আবেগ দেখা দিলো,,দুচোখ জলে ছল ছল করছিলো,,যে কোনো মুহূর্তে আবেগ এর বাধ ভেঙে বৃষ্টি নামতে পারে,,পুরোনো কথা গুলো আবার মাথা চারা দিয়ে উঠলো,,
নিজেকে সংযত করলাম,,
মনে মনে ভাবছি কথা বলবো কি না,,,
আমি এগিয়ে যেতেই আরোহি ও এগিয়ে আসলো,,অতঃপর বলতে লাগলো,,
কখনো ভাবিও নাই যে তোমার সাথে দেখা হবে,,
আমি ও ভেবেছিলাম না যে এমন ভাবে আবার আমাদের দেখা হবে,,
বাই দ্যা বাই কেমন আছো?
ভালো আছি,, তুমি ভালো আছো?
হুমমম,, অনেক ভালো আছি,,(মনের ভিতরের আক্ষেপটা নিরবে লুকিয়ে রেখে উত্তরটা দিলাম,,ভালোবেসে ঠকে যাওয়া মানুষ গুলা যে কখনো ভালো থাকে না সেটা হয়তো আরোহি জানে না তাছারা এমন প্রশ্ন করতো না,,বা আমাকে ঠকাতো না)
হঠাৎ বাস স্টান্ডে কি মনে করে কোথাও যাবা?
হুমমম,ঢাকা যাবো যেখানে থাকি সেখানে,তুমি কোথায় যাবা?
আমি ও ঢাকা যাবো,,
ওহহহ,,সাথে কাউকে দেখছি না যে,,,তুমি একা কেনো??
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরোহি উওর দিলো,,
একা মানুষ, একাই তো থাকি,,
কেনো?তোমার স্বামী,?
আর স্বামী,, বাদ দাও না ওসব কথা,,উনি ব্যস্ত মানুষ,,তুমি বিয়ে করেছো?
না এখনো বিয়ে করা হয় নি,,
কেনো,?কেনো বিয়ে করো নি?
সময় হয়নি বললে ভুল হবে,,তবে বিয়ে করার ইচ্ছা টা নাই বললে ঠিক হবে,,
ওহহহ,,ভালো,,চিরো কুমার হয়ে থাকো,
হুমম,দোয়া কইরো,,
চাকরি বাকরি কিছু হয়েছে?নাকি বেকারই আছো,,?
আমার স্বামী কিন্তু খুব ভালো চাকরি করে,,,
আরোহির এই কথাটা যেনো বুকের ভিতর শেল হয়ে প্রবেশ করলো,,বুকের পাজর ভেঙে কান্না আসতে লাগলো,,না আমি পারলাম না কান্না করতে,,,বুকের কষ্ট বুকে জমা রেখে হাসতে হাসতে উওর দিলাম,,
চাকরি বাকরি দিয়ে কি করবো,,এভাবেই তো খুব ভালো আছি,,
হুমমম,ভালো এভাবেই থাকো,,
হহুমমম,,এই বাসের টাইম হয়ে এসেছে,চলো ভিতরে চলো,,
হুমম চলো,,
দুজন শেষ মেষ একই সিটে পাশা পাশি বসেছি,,
কিছুক্ষন বাদে বাস ছারবে,,,
আরোহি তুমি একটু বসো আমি আসতেছি,,দু মিনিট,,
কেনো,কোথায় যাবা?
কোথাও না,,এই যাবো আর আসবো,,
ঠিক আছে তারা তারি এসো,,
হুমমম,,
দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্কে আরোহির পছন্দ অপছন্দ ভালোলাগা খারাপ লাগা সব বিষয়েই মোটা মুটি ভালোই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম,,
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কয়েক প্যাকেট চিপস ও ঝাল চানাচুর নিলাম,,সাথে কিছু ঝাল চকলেট ও,,
যে গরম পরছে,,গরমের কথা চিন্তা করেই ফ্রিজের সেভেন আপ নিলাম,,,
আমার সিগারেট ও শেষ হয়ে গেছে,,,এক প্যাকেট সিগারেট ও নিলাম,,
তারা তারি বাসের এসে ভিতরে বসতেই বাস চলতে শুরু করেছে,,
আরে এই গুলা কিসের জন্য?
না মানে,,তুমি তো এই গুলা খুব পছন্দ করতে,আর এখনো হয়তো করো সে কথা ভেবেই নিয়ে আসলাম,,সারা রাস্তা আড্ডা দিতে দিতে যাবো,,
হুমমম,,এখনো খুব পছন্দ করি কিন্তু তুমি বেকার মানুষ শুধু শুধু টাকা নষ্ট করতে গেলা কেনো?
ঠিক আছে কোনো সমস্যা না তোমার বাস ভারাটা না হয় আজ আমি দিয়ে দিবো,,,
(আরোহির কথা গুলা কাটার মত হৃদয়ে প্রবেশ করছে,,আমাকে অপমান করছে নাকি করুনা করছে বুঝতেছি না,,ইচ্ছা করলে আমি দাতঁ ভাঙা জবাব দিতে পারি কিন্তু ভালোবাসার ক্ষাতিরে চুপ চাপ আছি,,)
হুমমম,দিও তাতে আমার ই ভালো হবে,,টাকা বেচে যাবে,,,
বাস গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে,,চারিদিকের পরিবেশ কে রিতিমত পাশ কাটিয়ে বাস এগিয়ে চলছে,,,,পথের দুরুত্ব টাও কমতে শুরু করেছে,,মনে মনে ভাবছি ইহা যদি শত বছরের পথ হয়তো তাহলে তার পাশে বসেই সারা জীবন কাটিয়ে দিতাম,,
জানালার পাশ দিয়ে হালকা বাতাসে আরোহির চুল গুলা দুলছে,,হঠাৎ করেই ফিরে পেলাম সেই কয়েক বছর আগের সৃত্মি,, দুচোখ বন্ধ করে ফিরে গেলাম সৃত্মির জগতে,,,,
হ্যা মনে পরে আমারা যেদিন দুজন ঘুরতো রাজশাহী গিয়েছিলাম সেদিন ও এভাবেই পাশা পাশি বসেছিলাম,ঠিক চুল গুলিও বার বার এমন ভাবে উরছিলো,,আমি মাঝে মাঝে উরানো চুল গুলো আলতো ভাবে মুখ থেকে সরিয়ে দিচ্ছালাম,, আজ ও খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো চুল গুলো সরিয়ে দেওয়ার কিন্তু সে আজ অন্যের বউ,,,,,নিজেকে সংযত করলাম,
ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি ঠিক পাইনি,,,
হঠাৎ আরোহির ডাকে চোখ মেলে দেখি গাড়ি যায়গা মত চলে এসেছে,,,
এই যে জীবন এখন উঠো,,,গন্তব্যে চলে এসেছি,,
ওহ সরি সরি,,হঠাৎ করে কখন ঘুমিয়ে পরেছি ঠিক পাই নি,,
আরে ঠিক আছে,,সরি বলার কিছু নাই,,এখন গাড়ি থেকে নামো,,
হুমমম,সিউর,,,
বাহিরে এসে দেখি গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার দাড়িয়ে আছে,,,,আমাকে দেখা মাত্রই সালাম দিয়ে বক্স থেকে লাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো,,,
চলে যাবো,বিদায়ের শেষ প্রান্তে হয়তো কখনো আবার হঠাৎ করেই দেখা হতে পারে না ও পারে,,,
মানিব্যাগ থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে আরোহির হাতে দিলাম,,
তাতে সুন্দর করে আমার নামের পাশে লেখা আছে
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট,,
যদি কখনো দরকার হয় যোগাযোগ কইরো,,হয়তো আবারও হঠাৎ করেই দেখা হতে পারে তোমার সাথে ফিরে পাওয়ার মেলায়,,
ভালো থেকো,,,,আসি,,
আরোহি কার্ডটা হাতে নিয়ে বোবার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,আমি কিছু না বলে আমার ফিরে পাওয়া গল্পটা নিয়ে ছুটে চলেছি,,হ্যা ছুটে চলেছি ফিরে পাওয়ার মেলায়।