মধ্যরাতে ঘরের ভেতর থেকেই শোনা যাচ্ছে বাহিরের প্রচন্ড বৃষ্টির শব্দ। নীল যেই জানালা বন্ধ করতে যাবো ঠিক তখনি হঠাৎ করেই খুব জোরে মেঘ ডেকে উঠে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ার সাথে সাথেই তন্দ্রা নীলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নীলও আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো এমনটাই হবে কারণ তন্দ্রা অন্ধকারে অনেক ভয় পায়।
.
নীলের সাথে তন্দ্রার বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে। যেহেতু বিয়ের আগে দুজনার কেউই প্রেম ভালোবাসায় জড়ায়নি তাই বিয়ের পর দুজন দুজনকে মন উজার করে ভালোবাসে। তন্দ্রা অনেকটাই ছোট বাচ্ছাদের মতো। অল্প কিছুতেই ভয় পায়। সারাদিন দুষ্টামি মজা নিয়েই থাকে এবং নীলকে সময়ে- অসময়ে জ্বালাতন করে। নীলও তন্দ্রার এইসব পাগলামী মুখ বুঝে সহ্য করে। আসলে সহ্য করাটা বললে ভুল হবে নীলও মনে মনে চায় তন্দ্রা সবসময় এমন পাগলামীগুলা করুক। নীল বিয়ের পরে বুঝতে পারে তন্দ্রা অন্যসব মেয়ের মতো না,সে একটু অন্যরকম। তাই নীল যখনি সময় পায় তন্দ্রার সর্বোচ্চ যত্ন নেয়ার চেষ্টা করে। তবে নীলও যে সবস্ময় ছাড় দেয় তা না,মাঝে মাঝে সেও কিছু অদ্ভুত আবদার করে বসে তন্দ্রার কাছে। যত্নশীল, দায়িত্ববান স্বামী আর দুষ্টু, মিষ্টি পাগলী বউয়ের সংসারটা খারাপ চলছে না বরোং প্রত্যাশার চেয়েও ভালো চলছে।
.
নীল তন্দ্রাকে ভালোবাসার একটু পরশ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে মোমবাতি জ্বালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু তন্দ্রা নীলকে কিছুতেই ছাড়তে রাজী নয় তাই নীল বাধ্য হয়েই তন্দ্রাকে বুকে জড়িয়ে রেখেই মোমবাতি খোঁজার কাজে লেগে গেলো। তন্দ্রার পড়নে ছিলো নীল রঙ্গের শাড়ি যেটা গত বিবাহবার্ষিকীতে নীলই তন্দ্রাকে কিনে দিয়েছিলো। মোমবাতির আলোয় তন্দ্রাকে যেন পুরাই নীল পরীর মত লাগছিল। ভয়ার্ত চোঁখ,কাঁপা কাঁপা ঠোঁট এবং ইনোসেন্ট চেহারায় তন্দ্রার সৌন্দর্য যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছে। নীল নতুন করে আবার তন্দ্রার প্রেমে পড়লো। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। এ পর্যন্ত প্রায় হাজার বারের মতো নীল তন্দ্রার প্রেমে পড়েছে। নীল তন্দ্রার কাছে তৎক্ষণাৎ খিঁচুড়ী রান্না করার জন্য আবদার জানালো। যখনি নীল তন্দ্রার প্রেমে পড়ে তখনি এইসব অদ্ভুত আবদার করে বসে।
.
তন্দ্রারও কিছু করার ছিলো না কারণ যতোই মানা করুক না কেনো নীল কোনো কথাই শুনবে না। একবার নীল বলেছিলো আজকে সারারাত ছাদে বসে চাঁদের আলোতে তার মুখ দেখবে তন্দ্রা রাজী না হওয়ায় নীল তন্দ্রাকে কোলে করে ছাদে নিয়ে গেছিলো এবং সারারাত চাঁদের আলোয় তার মুখের দিকে তাকে ছিলো। তাই বাধ্য হয়েই তন্দ্রা মাঝরাতে নীলের জন্য খিঁচুড়ী রান্না করতে গেলো। তবে শর্ত দিলো যতক্ষণ সে রান্না করবে ততক্ষণ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে থাকতে হবে। নীলও বাধ্য ছেলের মত তাতে রাজী হয়ে গেলো কারণ নীল ভালো করেই জানে তন্দ্রার হাতের খিঁচুড়ীর স্বাদ পুরাই অমৃত। আর এই বৃষ্টির দিনে অমৃত ছাড়া কি চলে।
.
তন্দ্রা ভুনা খিঁচুড়ী রান্না করছে আর নীল পিছন থেকে তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরে আছে। নীল মাঝে মাঝে তন্দ্রার মাথার চুল নাড়ালে,ঘাড়ে সুড়সুড়ি এবং কানে হালকা কামড় দিলে তন্দ্রা নীলকে একগাদা ঝাড়ি মেরে কাজের সময় দুষ্টামি করতে মানা করে দেয়। যদিও এই ঝাড়ির মাধ্যমেই তন্দ্রা বুঝাতে চাচ্ছে যে আরো বেশী করে দুষ্টামি করো। নীলও যেন তন্দ্রার মনে কথা বুঝতে পেরে যায় তাই পুরাটা সময়ই সে তন্দ্রাকে জ্বালাতন করে।
.
অবশেষে তন্দ্রার রান্না শেষ হয়। রান্না অবশ্য আরো আগেই শেষ হতো কিন্তু তন্দ্রা ইচ্ছা করেই দেরী করেছে যাতে নীল তাকে আরো কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে তাকে। নীল যদি একবার শুনে রান্না হয়ে গেছে তাহলে তন্দ্রাকে ছেড়ে সাথে সাথেই খিঁচুড়ীর উপর ঝাপিয়ে পড়বে। তন্দ্রা এই বিষয়ে এখনো কনফিউজড যে নীল কাকে বেশী ভালোবাসে তাকে নাকি তার রান্না করা খিঁচুড়ীকে?
.
নীল তন্দ্রার রান্না করা খিঁচুড়ীটা মুখের ভেতর দিলো। এতখনে তার মুখে প্রায় পানি এসে গেছে। নীল খেয়ে বুঝতে পারলো তার বউয়ের রান্নার ৯৯% ই ঠিক আছে শুধুমাত্র লবণটা দেয়া হয়নি। এটা অবশ্য নীলেরই দোষ,যে জ্বালাতনটাই না সে করছে এর ভেতর তন্দ্রা যে ঠিকমতো রান্নাটা করতে পারছে এটাই অনেক। নীল খেতে খেতে ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখে তন্দ্রার চোঁখে পানি। তবে এই পানি ভালবাসা , সুখ বা দুঃখের পানি নয় । তন্দ্রা পিঁয়াজ কাটছে আর তার চোখ থেকে পানি পরছে । তন্দ্রা যখন জিজ্ঞাস করলো কেমন হয়েছে খিঁচুড়ীটা তখন নীল এক গাস খিঁচুড়ী মুখে দিয়ে বললো সবকিছুই ঠিক আছে তবে একটা সমস্যা হইছে। তবে সমস্যাটার সমাধানও রয়েছে। তন্দ্রা যখন বললো কি সমাধান তখন নীল তন্দ্রার চোঁখ থেকে পানি নিয়ে খিঁচুড়ীর সাথে মিশিয়ে খেয়ে বললো এটাই সমাধান। কারণ খিঁচুড়ীতে লবণ ছিলো না তাই তোমার লবণাক্ত চোখের পানি মিশালাম। আহহহহহহহ,এখন হয়েছে পুরাই পারফেক্ট, এ যেন খিঁচুড়ী নয়, যেন লবণহীন ভালোবাসা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা