“আমি জেরিন আমার পরিবারের সবাই আমাকে আদর করে জিরোমণী ডাকে।
অবশ্যই অামি এ নামটা শুনে রাগ করি না, রাগ করলেও লাভ হবে না..,
কারণ পরিবার থেকে একবার যদি কাউকে নিক নাম উপাধি দেওয়া হয় সবাই আদর করে সে নামে ডাকে।
আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী, আমি জন্মের পর থেকে আমার পরিবার কোনো অভাব দেখি নাই।বাবা আমার সব আবদার পূরণ করে।
আমি বাবার কাছে যা চাই আমার বাবা আমাকে তা এনে দেয়।আমার বাবার অনেক স্বপ্ন যে আমাকে উচ্চশিক্ষা শিক্ষিত করে তুলবে।
এবারে আমি ইন্টারে ভালো পয়েন্ট নিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
.
“আজ আমার ভার্সিটির প্রথমদিন প্রথম ক্লাস। আমার বান্ধবী নুসরাতের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটিতে গেলাম।
জিবনে প্রথম ভার্সিটিতে প্রথম ক্লাস করবো ভাবতেও অবাক লাগতেছে।প্রথমদিন ক্লাস, ক্লাসমেট সবার সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগছে।
ক্লাসমেট সবার সাথে পরিচিত হতে গেয়ে রিহান নামের একটা ছেলের উপর আমি জিবনে প্রথম ক্রাশ খাইয়।
সত্যি ছেলেটা খুব স্মার্ট একদম অানকমন সবার সাথে অল্পতে মিশতে পারে ও বন্ধুত্ব্ব করতে পারে।
রিহানের সাথে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে কখন যে তাকে ভালোবেসে ফেলছি আমি নিজেও জানি না।
এখন রিহানের সাথে কোনো মেয়ে কথা বললে আমার অসহ্য লাগে।কিন্তু আমি যে রিহানকে ভালোবাসি রিহান সেটা বুঝতেও চাই না।
মনে মনে চিন্তা করছি রিহানকে আমি নিজেই প্রপোজ করবো।
একদিন ক্লাস শেষ করার পর শুরু হলো বৃষ্টি আজকে ছাতা ও নিয়ে আসি নাই ভাগ্যিস রিহান ছাতা নিয়ে আসছে।
রিহানের সাথে বাড়িত চলে যেতে পারবো এ সুযোগে আমার মনের কথাটুকু তাকে বলতেও পারবো।
রিহান আমাকে দেখে ডাক দিলো তার সাথে করে চলতে।রিহান আর আমি একসাথে বৃষ্টি মধ্যে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছি আমি রিহানকে বলি-
__রিহান তোমাকে একটা কথা বলি-
__হ্যাঁ অবশ্যই কি বলবা বলো?
__আচ্ছা তোমার সাথে কোনো মেয়ে কথা বললে আমার অসহ্য লাগে কেনো?
__হাহাহা আমি কি করে বলবো।
__তাহলে আমি বলি?
__হ্যাঁ বলতে পারো?
__মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি তুমি কি আমাকে ভালোবাসতে পারবে।
যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমার বার্থডেতে কালকে আসবা আমি আমার আরো কিছু বন্ধু বান্ধবীদের বলছি।
>>আমি এ কথা বুকে অনেক সাহস নিয়ে বলছি। যেখানে ছেলে মেয়েকে প্রপোজ করে আর আমি মেয়ে হয়ে প্রপোজ করছি রিহান কে।
সত্যি বলতে কি রিহান এমনে সবার সাথে মিশে তবে এসব প্রেম ভালোবাসা কখনো জড়িত হয় নাই।
সে স্মার্ট তা ঠিক আছে তবে এ প্রেম ভালোবাসা তার তেমন ইচ্ছা নাই। আচ্ছা যাই হোক প্রপোজ করে চলে আসছি বাড়িত
.
“পরেদিন বিকেলে আমার বাসায় আমার বন্ধুরা সবাই আসে, রিহান ও আসে।
আমি রিহানকে দেখে বুঝতে পারছি সে আমার দেওয়া প্রপোজ কুবুল করছে সত্যি আমি রিহানকে দেখে অনেক হ্যাপি।
অামার বার্থডে সবাই অনেক মজা করে সবাই আমার জন্য বার্থডে গিপ্ট দেয়।
রিহান ও আমাকে গিপ্ট দেয় আর সেটা হলো রিহানের দেওয়া আমার জন্য সেরা সারপ্রাইজ ।
সবাই যখন চলে যায় আমি রাতে বসে বসে সবার গিপ্ট গুলো দেখতেছি।
আমার রিহানের উপহারটা আমার জন্য জিবনের সেরা সারপ্রাইজ চোখ বন্ধ করে খুলছি সে গিপ্ট বক্স টা।
আজ দেখবো আমার রিহান আমার জন্য কি উপহার দিলো।বক্সটা যখন খুলে দেখি একটা কালো বোরখা আমি, তো অবাক।
এ কি আজব সারপ্রাইজরে বাবা দেরি না করে দিলাম ফোন রিহানের কাছে-
__হ্যালো রিহান-
__হ্যাঁ বলো?
__তুমি কি গিপ্ট দিলা এটা।
তুমি গিপ্ট দিছো ভালো কথা আবার ছোট কাগজে লিখে দিছো এ বোরখাটা যেনো কালকে ভার্সিটিতে পরে আসতে মানে কি?
__হ্যাঁ আমার সাথে সম্পর্ক করতে হলে এমন করে চলতে হবে। আমার জীবনসঙ্গী হতে হলে নেকপথ এ চলতে হবে।
তুমি যদি আমার কথা রাজি থাকো তাহলে তোমার প্রপোজ আমি গ্রহণ করবো।
__তাই বলে এ গরমে হিজাব পরতে হবে আমাকে। তুমি জানো না এখন কি গরম পড়তেছে কি করে সম্ভব এ গরমে হিজাব পরা।
__জেরিন জাহান্নামের আগুন কিন্তু আরো ভয়াবহ এটা মনে রাখবা।
__হোক তারপরেও আমি হিজাব পরে আসতে পারবো না।
>>এ বলে ফোনটা রেখে দিলাম সারারাত চিন্তা করলাম কি করবো কি করবো।অনেক ভাবছি শেষে নিজে নিজের উওরটা পেয়ে গেছি।
আসলে রিহান যখন জাহান্নমের আগুনের কথা বলে তখন আমি আমার সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করছি।
আমি যখন রিহানকে ভালোবাসি তারজন্য এতটুকু আমি করতে পারবো না, হ্যাঁ অবশ্যই করতে পারবো।
.
“সকালে যখন হিজাব পরে ভার্সিটিতে যাইতেছি আমার বাবা আমাকে দেখে এমন করে কখনো আদর করে নাই, যা আজকে করছে।
অবশ্যই বাবা আমাকে আরো আগে হিজাব পরতে বলছে আমি তার কথা শুনি নাই।
আমাকে তেমন শাসন করতো না কারণ আমি পরিবারে এক মাত্র মেয়ে ছিলাম।
ভার্সিটিতে যাওয়ার পরে সত্যি আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।
মনে মনে চিন্তা করলাম রিহান আমাকে এ কি সারপ্রাইজ দিলো যার কারণে আজকে সকাল থেকে একটা বাজে কথাও শুনতে হয় নাই…
….সত্যি অসাধারণ সারপ্রাইজ।
দূর থেকে দেখলাম রিহান গাছের ছায়া বসে আছে। আমি রিহানের কাছে গিয়ে বলি-
__রিহান এবার হ্যাপি তো তুমি।
__রিহান এক দৃষ্টি থাকিয়ে থেকে কান্না মুখে বলে? হ্যাঁ আমি অনেক হ্যাপি জেরিন হ্যাপি।
__রিহান তুমি কান্না কেনো করতেছো?
__খুশিতে আমার চোখে পানি আসছে, আমি যার সাথে সম্পর্ক করতে যাইতেছি সে মেয়ে আমার কথা মতো আজকে হিজাব পরছে।
তার চেয়ে আনন্দ কি হতে পারে।
__তাহলে তুমি আমাকে ভালোবাসবা?
__হ্যাঁ অবশ্যই ভালোবাসবো। তোমাকে ভালোবাসি যে সেজন্য আমি তোমাকে হিজাব পরতে বলছি।
কারণ কেউ তোমার সুন্দর মুখ দেখে বাজে কথা বলবে তা আমার সহ্য হবে না।
__আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যেমন চাইবে আমি তেমন করে চলবো, চলো ক্লাসে যাবো।
__হ্যাঁ চলো।
.
“সত্যি আমার রিহান আমাকে অনেক ভালোবাসে।
আমাদের এ সম্পর্ক প্রায় ৪ বছর ধরে চলতেছে।রিহানের সাথে আমি প্রতিদিন রাতে কথা বলতাম।
রিহান কখনো বাজে কথা বলতো না,করতো না কোনো অন্যায় আবদার।রিহানকে ভালোবাসে সত্যি আমি ধন্য,
পৃথিবীতে যদি ঘূর্ণিঝড় ও আসে তারপরেও আমি রিহানের উপর ভরসা রাখতে পারি।
সে ঘূর্ণিতে হয় দুইজন একসাথে চলে যাবো তারপরেও রিহান আমাকে একা যেতে দিবে না, শক্ত করে আমার হাত ধরে রাখবে আমার রিহান।
.
“আমি রিহানকে ভালোবেসে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছি।
আজ আমি বাহিরে গেলে হিজাব পরে যাই না হলে রিহান আমার উপর রাগ করবে।
আমি চাই না আমার প্রিয় মানুষটা আমার উপর রাগ করোক। রিহান আমাকে ফোন করলে বলে জেরিন নামাজ পড়ছো…,
যদি বলি না তাহলে রিহান রাগ করবে।আমি চাই না আমার প্রিয় মানুষ আমার উপর রাগ করোক।
তার সব কথায় আমি রাজি, আমি চাই আমার রিহান সবসময় আমাকে নিয়ে যেনো খুশি থাকে।
আমাদের পড়াশুনা প্রায় শেষ দিকে রিহান এখন ভালো কোম্পানিতে জব করতছে।
আমার বাবা হয়তো এবার আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।
আমার বাবা হয়তো আমি যাকে ভালোবাসি এমন একটা ছেলের হাতে হয়তো আমাকে তুলে দিবে।
যার হাতে থাকবে আমার জন্য নিরাপদ স্থান। যার বুকে আমি মাথায় রেখে সুখ দুঃখ এর কষ্ট এর কথা বলতে পারবো।
হুম সে ছেলেটার হাতে আমার বাবা আমাকে তুলে দিবে যার জন্য আমি নেকপথ এ চলতে পারতেছি।
আর সে কেউ না সে হলো, আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার সে প্রিয় মানুষটা রিহান, তার সাথে আমার বিয়ে হবে কিছুদিন পরে।
.
“কাল্পনিক গল্প এটা, জেরিন এর হয়ে আমি লেখছি।তবে আমি এতটুকু বলতে চাই…,
এখনকার যুগে মোটামুটি সবার কাছে টাকা আছে।কিন্তু মানসম্মান সবার কাছে নাই।
এখন একজন বাবা তার মেয়েকে টাকাওয়ালা দেখে বিয়ে দেয় না।
বরং ছেলেটা কতটুকু ভদ্র ও গুণের অধিকারী দেখে তার মেয়েকে সে ছেলের হাতে তুলে দেয়।
আর রিহানের মতো ছেলেদের হাতে সব বাবা তার মেয়েকে তুলে দিতে চাইবে।
আর জেরিন এর মতো মেয়েগুলোর জীবনে সেরা সারপ্রাইজ হলো রিহানের মতো ছেলেরা।