ক্রাশ

ক্রাশ

আহা! প্রেম দুটি অক্ষরের একটা শব্দ মনের মধ্যে কেবল ঢেউ তুলে।আর সেই প্রেমের উৎপত্তি ক্রাশ নামক অনুভূতি থেকে। তখন নিজেরে কেমন জানি রোমান্টিক রোমান্টিক লাগে !
কিন্তু কথায় আছে,
গরীবের কপালে কি আর প্রেম জোটে !
কিন্তু হাল নামক অদৃশ্য ভাষাটি এখনো ছাড়িনি।অনবরত চেষ্টা চলছে প্রেমে পড়ার।এতো কইরা চেষ্টা করতাছি কিন্তু প্রেম কি আমার উপরে পড়বো আমি নিজেই ওর উপরে হামড়ি খাইয়া পড়ছি।
আপনারা এখনো বুঝতে পারেন নি আমি কি বলতে চাইতেছি?
আরে হুনেন প্রেমের মিশনে নামছি।প্রেম না হইয়া যাইবো কই?
আর তাই আমার প্রেমের মিশন শুরু হলো ২০..সালের এই দিন থেকে।
প্রথমত বলে নেই, নোয়াখালীর মানুষতো তাই আবেগে নোয়াখালীর ভাষা টা ব্যবহার করতে পারি।তাই আগে থেকেই বলে রাখি সবাই নিজ দায়িত্বে বুঝতে চেষ্টা করবেন।

বিষয়বস্তু “ক্রাশ”
#প্রথমত,
যখন ক্লাস ওয়ান এ পড়ি তখন উত্তর বাড়ির মিনুর ভাই রাকিব হইছিলো।মা সহ সবাই বাচ্চাটারে দেখতে গেলাম।বিশ্বাস করেন এত্তো সুন্দর বাচ্চা আমি জীবনেও দেখি নাই।আমি বাচ্চাটারে দেইখা কাঁন্নাকাটি শুরু করলাম।মা সহ সবাই অবাক!কারণ তারা কেউ আমার কাঁন্নার রহস্য বুঝতে পারলো না।সবাই জানার আগ্রহ নিয়ে বারবার প্রশ্ন করছে আমি কাঁদছি কেন?
উত্তরে আমি বললাম মিনুর ভাই টা এত্ত সুন্দর কেন?
সুন্দর যেহেতু হইছে সেহেতু আমার আগে দুনিয়াতে আসে নাই কেন?
মা বললো,কেন রে মা?মিনুর ভাই মানে তো তোর ও ভাই।
-মা চুপ করো(ধমকের স্বরে)।নিজের মেয়ের জামাই কে এভাবে বলতে নেই।(নরম স্বরে)
-মা সহ সবাই অট্টহাসি তে আমার নিষ্পাপ মনের প্রেম নিয়ে খেলা করলো।অবশ্য তখন বুঝতাম না এটা তো প্রেম ছিলো না।এটা ছিলো ক্রাশ।
এভাবে সমাপ্তি ঘটলো মিনুর ভাই এর সাথে প্রেম করার ইচ্ছার।শিশু বয়সে ছ্যাঁকা খেয়ে নিলাম আলুর সাথে মেখে মেখে।

#দ্বিতীয়ত,

যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন টিফিন টাইমে বান্ধুবীরা মিলে লেগে পড়তাম কঠিন অধ্যাবসায় এর কাজে।অবশ্য এটাকে অনেকে চুরি বলে।কিন্তু অনেক কষ্ট করে করতে হয়তো তাই অধ্যবসায় নামে চালিয়ে দিলাম। তবে আমাদের চুরির একটা নির্দিষ্ট টাইম ছিল।কারণ আমরা ঋতুভেদ এ চুরি করতাম।অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে আমাদের চুরি করার ধুম পড়তো।স্কুলের পিছনে একটা বাড়ি ছিলো।আহা ! সেই বাড়িতে আমের খেলা নিতান্তই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো।সবাই চুরি তে মোটামোটি পাক্কা ছিলাম।(বিশ্বাস করেন এখন সাধু হয়ে গেছি।চুরি কি জিনিস সেটাই বুঝিনা)
ঐ বাড়িতে রীতিমত চুরিটা দিব্যি হতো।বাড়িটার নাম ছিলো “কুত্তা ছেইল্লা গো বাড়ি”(নাম নিয়া কেউ হাসবেন না।কারণ কারো নাম নিয়া ঠাট্টা মসকরা করা কবিরা গুণাহ্।আর ওটা তো আস্ত একটা বাড়ির নাম।সেক্ষেত্রে হাসি আসলেও হেতেরে চাবি ধরি রাইবেন আশা করি।)
তো একদিন” কুত্তা ছেইল্লা “গো বাড়িত চুরি করতে গিয়েছিলাম।আহা! কি বড় বড় আম ! আমরা নিষ্পাপ শিশু ৬টা গিয়েছিলাম।সবগুলা মেয়ে।এদের মধ্যে আমি আর নাহিদা গাছে উঠতে পারি।আর বাকিগুলা অষ্টরম্ভা। (অনুগ্রহ করিয়া কেউ কথা টারে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুচিয়ে বড় করবেন না।তাহলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে অজগর বের হবে।)
সেদিনের কথা আজও আমার মনের গহীনে আস্ত একখানা জায়গা দখল করে বসে আছে।ঘটনা তে ফিরে যাই।আমি আর নাহিদা দুজনে চুপেচুপে গাছে উঠলাম আম পাড়ার উদ্দেশ্যে।নিচে ওরা বাকি চারজন অপেক্ষা করছিলো আমের জন্য।মানে আমরা আম নিচে ফেলতেছি আর ওরা খুঁজে নিচ্ছে। হঠাৎ একটা পুরুষ কন্ঠ শুনা গেলো,
-কে রে গাছের তুন আম হাড়ে?কোন চোরে রে?খাড়া আঁই লাডি লই আই।
-ঐ দিন ওরা সবাই আমাকে ছেড়ে এক দৌঁড়ে স্কুলের মাঠে চলে গেলো।কিন্তু আমি একটু স্লো ছিলাম বলে ঐ ব্যাটার হাতে ধরা খেয়ে গেলাম।ঐ দিন ঐ ব্যাটা আমার প্রেস্টিজ এর তেরো টা বাজাই দিছিলো।জানেন আমার মতো নিষ্পাপ একটা মাসুম বাচ্চাকে ৫০ বার কানে ধরে উঠবস করিয়েছে।অবশ্য কানে ধরা তে আমি অভ্যস্ত ছিলাম।কারণ প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে তিনদিন নিয়ম করে আমাকে কানে ধরতে হতো ।কারণ আমি মাশাল্লাহ্ একটু বেশি লেখাপড়া পারতাম তো তাই।
চুরির প্রসঙ্গে ফিরে যাই।ঐ ব্যাটা আমারে কানে ধরাইছিলো ঠিকই আর আমিও কানে ধরেছিলাম কিন্তু ৫০ বার উঠবস করতে করতে আমি ঐ ইয়াং ছেলের উপ্রে আবারো ক্রাশ খাইলাম।কানে ধরা শেষ করে লজ্জায় লাল হয়ে স্কুলের মাঠে ওদের সাথে যোগ দিলাম।ওরা বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো,
-লোকটা তোরে কি করছে রে? কোনো শাস্তিটাস্তি নিশ্চয় দিছে বল?
-আরে নাহ্।কি যে বলিস তোরা?লোকটা আমাকে ঘরে নিয়ে নাস্তা খাইয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো চুরি করা ভালো না।আমরা যেনো চুরি ছেড়ে দেই(বান্ধুবীদের সেদিন মিথ্যা কথা বলে নিজের প্রেস্টিজ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলাম।)
পরের দিন স্কুলে গিয়া শুনলাম,
কুত্তা ছেইল্লা গো বাড়ির শুভ(আমাদের সাথেই পড়তো)স্কুলে গিয়ে সবাইকে আসল রহস্য বলে দিয়েছে।অর্থাৎ গতকাল আমি যে ৫০ বার কানে ধরে উঠবস করেছি সেই ব্যাপারটা ফাঁশ করে দিয়েছে।কি আর করার, বান্ধুবীদের সামনে নিজের মাথা হেট হয়ে গেলো ঐ কুত্তা শুভর জন্য।ওরে সেদিন মনে মনে অনেক অভিশাপ দিয়েছিলাম।সেই থেকেই ছেলেটা আর বড় হয় নি।অর্থাৎ লম্বা হয় নি।খাটো হয়েই রইলো।
এবার আসি আমার ক্রাশের প্রসঙ্গে,তো ঐ লোকটা কে মাঝেমাঝে স্কুলের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে দেখতাম।আড়চোখে তাকিয়ে থাকতাম।আহা! কি ভালোবাসা টাই না ছিলো।

একদিন লোকটা আমাদের বাড়িতে আসলো বাবার কাছে কি একটা কাজের উদ্দেশ্যে তখন সেটা বুঝিনি।লোকটা কে দেখে আমি অবাক! মেঘ না চাইতেই জল?
হঠাৎ মায়ের একটা কথা শুনে কলিজা টা ফাইট্টা খান খান হইয়া গেলো।মা যখন লোকটাকে বলল,
-ভাই বাড়ির সবাই ভালো আছে?

(কি দরকার ছিলো লোকটাকে ভাই বলার?আঙ্কেল বললে কি হইতো মায়ের?মাঝে মাঝে মা টার উপ্রে এত্তো রাগ আসে কারণ আমার বেশ অর্ধেক ক্রাশ নামক শব্দটা মায়ের এই “ভাই”নামক ডাকটা শুইন্না অকালে মারা গেলো।অর্থাৎ মায়ের ভাই মানে আমার মামা।আর মামার উপ্রে ক্রাশ খাওয়া হারাম।যতই ক্রাশ খাই মুসলিম তো তাই হারাম হালাল মেনে চলি।)
সেদিনও মৃত্যু হলো আরো একটি জীবন্ত প্রাণের থুক্কু ক্রাশের।

তারপর ফাইভে ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম।সেদিন ফাইনাল পরীক্ষা শেষ কইরা নিজেরে কেমন বড় বড় লাগছিলো।মনে হলো এই বুঝি ম্যাচিওরিটি আমারে জব্দ করলো।কিন্তু এই ভেবে শান্তি পাইলাম এবার হাইস্কুলে পড়ুম।আহা! আবার নতুন নতুন ক্রাশ !

রেজাল্ট আসলো ফাইভের পরীক্ষার।মাশাল্লাহ এত্ত ভালো রেজাল্ট করুম আশা করি নাই।আমার রেজাল্টের একমাত্র ক্রেডিট পায়েলে’র।মাইয়াটা অনেক হেল্প করেছিলো পরীক্ষার সময়।

প্রাথমিক শেষ করে হাই স্কুলে পা রাখলাম।আহা কত্ত রং বেরঙ্গের পোলামাইয়া ! কিন্তু কেন জানি ক্রাশ খাওয়ার পরেও একটারেও ধরে রাখতে পারতেছি না।কারণ আমার তুলনায় অন্যেরা ৫গুণ এগিয়ে।মানে আমি যখন ক্রাশ খাই কোনো ছেলের উপরে ওমা পরের দিন শুনি ঐ ছেলের সাথে আমাদের ক্লাসের বা অন্য কোনো ক্লাসের মেয়ের সাথে ৫মাসের রিলেশন।কেমন হিছামারা কপাল চিন্তা করেন?ওরা আমার থেকে এভাবে এগিয়ে রইলো প্রতিনিয়ত। আর আমারও মাধ্যমিক শেষ হলো।কিন্তু হাই স্কুল জীবনে শক্ত কইরা কোনো ক্রাশেরে ধরতে পারিনি সেই বেদনা আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।তাই উচ্চ মাধ্যমিক এ গিয়া ফাইনালি ডিসাইড করলাম এবার কেবল ক্রাশ না।যেমনেই হোক প্রেম করতে হইবো।

মাধ্যমিক রেজাল্ট পাইয়া উচ্চ মাধ্যমিকের দিকে এগিয়ে গেলাম।সাথে জটিল একটা মিশন ! যেমনেই হোক সাকসেস হতেই হবে।

কিন্তু কলেজে উঠে মাথা গেলো বিগড়ে।ওমা সবগুলা ছ্যাঁচড়া টাইপের পোলাপাইন।প্রেম নিয়া কোনোটার কোনো মাথাব্যথা নেই। সবগুলা কেবল অন্যের প্রেম কেমনে ভাঙ্গবো সেই তাড়নায় ছুটে।আমিও প্রেম আর কি করুম?ওদের সাথে থাকতে থাকতে আমিও ওদের মতো হয়ে গেলাম।কথায় আছে তো সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
এবার মিশন হলো, প্রেম নামক ন্যাকামি থেকে নিজে দূরে থাকুম এবং অপরকেও দূরে রাখুম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত