অসময়ে পিছন থেকে সাদিয়া মাহাদীকে ডেকে বললো কি অবস্থ তোর,,? কল দিলে রিসিভ করিস না কেন??কি হইছে তোর,??আমাকে বল..!
মাহাদীর প্রাণ প্রিয়া প্রেয়সীর সাথে ব্রেক আপ হওয়ায় মন খারাপ ৩ দিন ধরে।বেঁচারা তাই সকল বন্ধু বান্ধুবীদের সঙ্গ ত্যাগ করে একাকী ছাদে বসে থাকে আর প্রেয়সীকে নিয়ে কাটানো দিন গুলি নিয়ে ভাবে।এমনকি মাহাদী তার ঘনিষ্ঠ বান্ধুবী সাদিয়াকেও বলছে না যে তার কি হয়েছে।
আজ থেকে দু বছর আগে অর্থাৎ কলেজ লাইফে প্রেয়সীর সাথে মাহাদীর প্রথম দেখা হয়।মাহাদী শ্রেণি কক্ষে নিজেকে খুব সুন্দরভাবে বন্ধু বান্ধুবীদের কাছে উপস্থাপন করেন,খুব স্মার্ট হলে যা হয় আর কি.।ক্লাসের ভিতর মাহাদীই একমাত্র ছেলে যে অল্প সময়ের মধ্যে সকলের সাথে মিশে যেতে পারে।পুরো কলেজ মিলে শুধু মাহীদীর প্রশংসা।
কলেজের মাঠকে,বাগানকে,প্রত্যেকটা শ্রেণিকক্ষকে,শিক্ষকে,দারোয়ান থেকে শুরু করে কলেজের সাথে জড়িতদের যদি বলা হয় এই কলেজে সর্ব বিষয়ে পারফেক্ট কে,,?? সবাই এক সাথে উত্তর দেয় মাহাদী ইজ দ্যা বেষ্ট।
প্রেয়সী কলেজে এসে মাহদীর প্রশংসা শুনে মুগ্ধ,প্রেমে পড়ে যায় তার।কিন্তু সে মেয়ে হওয়ায় প্রস্তাব দিতে পারছে না।তাহলে প্রেয়সী কি করবে,।
প্রেয়সী ভাবলো মাহাদী যেন নিজেই প্রেয়সীকে প্রপোজ করে এমন খেলা খেলতে হবে।
কলেজের বাগানে প্রেয়সী ইচ্ছা করেই মাহাদীকে ধাক্কা দিয়ে ইতর,বদমায়েশ, মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায় এইসব বলে চলে গেলো।এতে মাহাদী তার প্রতি ক্ষিপ্ত হলো।
কিন্তু কথায় আছে না,যার প্রতি ক্ষিপ্ত বেশি তার প্রতি ভালবাসাও বেশি,যদি সে হয় বিপরীত লিঙ্গি।
মাহাদীর ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে গেলো।
মাহাদীও এক ধাক্কায় প্রেয়সীর প্রেমে পড়ে গেলো।
প্রেয়সী সাদিয়ার(মাহাদীর বান্ধুবী) সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলো।সব কিছু খুলে বললো সাদিয়াকে।সাদিয়া প্রেয়সীকে সাপোর্ট দিলো,,।তারা দু’জন মিলে পরিকল্পনা করলো কীভাবে মাহাদী নিজে থেকেই প্রপোজ করে প্রেয়সীকে।
কলেজে আড্ডাতে সাদিয়া ইচ্ছা করেই মাহাদীকে ক্ষ্যাপায়,, আর বলে “”প্রেয়সীর কাছে বন্ধু চান্স পাইবিনা দেখে ধাক্কা দিলি””(এই বলে সাদিয়া, আমি,তামান্না,স্
বর্ণা সহ সকলেই অট্রহাসি)
বেঁচারা মাহাদী ভ্যাবাচেকা,, হয়ে উঠে চলে গেলো।
বন্ধুদের এমন মজা নেওয়াতে সে,,, প্রত্যেক মুহুর্তে প্রেয়সীকে ভাবতে লাগলো,আর তাদের সেই ধাক্কার সৃতি কল্পনা করতে লাগলো,,ও নিজ য়হেকেই বলে উঠলো লাভ ইউ প্রেয়সী।
দুই দিন পর,
সাদিয়া এসে বললো,,দোস্ত মাহাদী ব্রেকিং নিউজ,
মাহাদীঃ কি??
সাদিয়াঃ সাগর ভাই(সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া) কাল প্রেয়সীকে নাকি প্রপোজ করবে..!
মাহাদীঃ (একটু চোখ লাল করে) কি..! এটা হতে পারে না।
সাদীয়াঃ কেনো হইতে পারে না দোস্ত.!!??
মাহাদীঃনা মানে,, ইয়ে মানে,,,
সাদিয়াঃ কিসের মানে,,ইয়ে করছিস???
মাহদিঃ (অল্প সময়ে, তাড়াহুড়ো করে) আমি প্রেয়সীকে ভালবাসি।
সাদিয়াঃ তুই তো আগে কখনো বলিস নাই।
মাহাদীঃ আগে যে আমি প্রেয়সীকে ভালোবাসিও নাই। এখন বাসি,,খুব ভালোবাসি।।
সাদিয়াঃ ওও,, এই ব্যাপার,,আচ্ছা দোস্ত,,তুই আজকেই প্রপোজ কর।
মাহাদীঃ কীভাবে?? সম্ভব নয়।
সাদিয়াঃ তাহলে প্রেয়সীকে কাল সাগর ভাই প্রপোজ দিবে,তোর আর হলো না।
মাহাদীঃ না, তা হতে পারে না,
আমার প্রেয়সীকে চাই ই চাই।
সাদীয়া ঃতাহলে আজই প্রপোজ কর।
মাহাদীব পারুম নারে।
সাদিয়াঃ ভয় করিস না,,আমি গেটের পিছনে লুকিয়ে থাকবো,ওর ক্লাস শেষ হলেই,,, যাওয়ার সময় প্রপোজ করবি।
মাহাদিঃ হুম।
প্রেয়সীর ক্লাস শেষে গেটের কাছে আসতেই,,মাহাদী বললো,,,প্রেয়সী তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,,,।
প্রেয়সীঃ বলো।
মাহাদীঃ আমি, মানে,বলতে চাচ্ছি যে,,
প্রেয়সীঃ কি বলতে চাচ্ছো??!
মাহাদীঃ বলতে চাচ্ছি আমি তোমাকে, আমি তোমাকে,আমি তোমাকে বলতে চাচ্ছি,,,যে
প্রেয়সীঃ আরে বলো কি বলতে চাচ্ছো??
মাহাদীঃআমার খুব ভয় হচ্ছে(,,নাহ!!আম
ি পাবো না। এই বলে চলে যেতে ধরলো মাহাদী।)
সাথে সাথে প্রেয়সী মাহাদীর হাত ধরে বললো,, যাকে ভালোবাসো তাকে বলতে পারোনা,আমি তোমাকে ভালবাসি।
মাহাদী অবাক,
মাহাদী তোমার কিচ্ছু হবে না।সামান্য আইলাভ ইউ বলতে পারলা না।
এই কথা বলতেই আড়াল থেকে ছাদিয়া বের হয়ে এসে সব খুলে বললো,,
মাহাদী সাথে সাথে একটু লজ্জা পেয়ে,, একসাথে সবাই হেসে উঠলো,,।
মাহাদী তখন সাহস করে প্রেয়সীর হাতটা নিজের বুকে এনে গান গাইতে শুরু করলো,,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দিবো না।
এভাবেই শুরু হয় মাহাদী ও প্রেয়সীর ভালোবাসা। একদিন মাহাদী ও প্রেয়সী তাদের বিয়ে নিয়ে ভাবছে,,,।তারা বিয়ে করবে,সংসার হবে বাচ্চা হবে(হি হি হি) ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু হঠাৎ একদিন প্রেয়সী মাহাদীর সাথে খারাপ বিহ্যাভ করে বসলো,,,।অবশেষে দুজন দুজনের উপর খুব বিরক্ত হলো,,।
ভালোবাসায় দুজনার উপর বিরক্ত নেমে এলে বাংলায় বলে ছাকা,তথা ভদ্র ভাষায় ব্রেকআআপ। তেমনি মাহাদী ও প্রেয়সী ব্রেকাপ নিয়ে নিলো।
প্রেয়সীর এমন বিহ্যাভ করার কারণ,,, কিছুদিন আগে তার ব্লাডে মারাত্বক ক্যান্সার ধরা পড়ে।এতে ডাক্তার প্রেয়সীকে বলে সে আর শুধু মাত্র,কেবল মাত্র ১ মাস বাঁচবে। প্রেয়সী মাহাদীকে খুব ভালোবাসে।মাহাদীকে কষ্ট দিতে চায় না সে।তাই,,,মাহাদীর সাথে এমনটা করলো প্রেয়সী।
ব্রেক আপের ৩ দিন পর,,,
অসময়ে পিছন থেকে সাদিয়া মাহাদীকে ডেকে বললো কি অবস্থ তোর,,? কল দিলে রিসিভ করিস না কেন??কি হইছে তোর,??আমাকে বল..!
তখন মাহাদী সাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়লো।
ব্রেকয়াপের ব্যাপারটি জানতে পারলো।
সাদিয়া প্রেয়সীর সাথে দেখা করলো,,সব শুনে চুপ থাকলো।
৩০ দিনের দিন সকাল বেলা প্রেয়সীর মৃত্যুর খবর পেলো মাহাদী,, কিন্তু সে তার লেশ দেখার ইচ্চাও পোষন করলো না।
করবেই বা কেনো??প্রেয়সী তার সাথে বেইমানী করেছে…!
সাদিয়া এসে মাহাদীর হাতে একখানি চিঠি (প্রেয়সীর লেখা) দিলো।
সে দেখতে পেলো প্রেয়সীর সাতে লেখা..!
পড়তে শুরু করলো..!
আমার জান,কলিজা,সোনা……..
আমি জানি তুমি আমার উপরখুব অভিমান করেছো।করবেইতো,,!কিন্তু তুমি জানোনা,ডাক্তার আমায় সেদিন বলেছিলো আমার ক্যান্সার হয়েছে,আর মাত্র ৩০ দিন বাঁচবো। কিন্তু আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তোমাকে খিব ভালবাসি।আমার এমন কথা শুনলে তুমি আর কাউকে ভালোবাসতে না।তাই আমি তোমার ঘৃনাটাই পাওয়ার জন্য তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম।মাফ করে দিও।
আর অবশ্যই তুমি ভালোভাবে থেকো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বা।আব্বা-আম্মার কথা মতো কোন মিষ্টি সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করবে।একদম রাত জাগবা না।আর আমাকে নিয়ে কাদবা না। এই আমি বলে গেলুম।এতেই আমার শান্তি।
ইতি তোমার ভালবাসা প্রেয়সী।
চিঠিটা পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো মাহাদী,,কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো তোমার সব কথা আমি রাখবো প্রেয়সী।আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।