_এইযে শুনছেন..? (উর্মিলা)
_হ্যা, বলো শুনছি। (অর্ণব)
_অফিস থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবেন। একা একা আমার ভালো লাগেনা।
_আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরবো। উর্মিলা অভিমানী স্বরে বললোঃ-
_প্রতিদিন’ই তো তাড়াতাড়ি ফিরবো ফিরবো বলেন। কিন্তু ফিরেন অনেক রাতে। অফিসে এত কি কাজ যে ফিরতে ফিরতে এতরাত হয়ে যায়..?
_এখন অফিসে প্রচুর কাজের চাপ তাই ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। আচ্ছা আমার লাঞ্চের খাবার কই..?
_একমিনিট দাঁড়ান আমি যাবো আর নিয়ে আসবো। বলেই উর্মিলা অর্ণবের লাঞ্চের খাবার আনতে গেলো। দুমিনিট পর অর্ণবের লাঞ্চের বাটি নিয়ে আসলো উর্মিলা। তারপর বললোঃ-
_এইযে ধরুন আর শুনুন লাঞ্চের সময় হলে অফিসের কাজ রেখে খাওয়ার কাজ সেরে নিবেন। আগে খাওয়া তারপর কাজ, মনে থাকবে তো..?
_হ্যা, একশবার মনে থাকবে। আচ্ছা আমি গেলাম।
_সাবধানে যাইয়েন। আর…।
_আর কি..?
_না কিছু না।
_বুঝে গেছি আমি
_কি বুঝে গেছেন..?
_সেটা তো বলবো না।
.
অর্ণব ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে অফিসে চলে গেলো। উর্মিলা হা করে অর্ণবের চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখতেছে আর হাসির মানে খুঁজতেছে। অর্ণব হয়তো উর্মিলার না বলা কথাটার মানে বুঝে গেছে তাই যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে গেলো। উর্মিলা অর্ণবকে কিছু একটা বলতে চেয়েও বললো না। মেয়েরা অর্ধেক কথা বলে আর অর্ধেক ছেলেদের বুঝে নিতে হয়। তবে বাকি অর্ধেক কথা বুঝতে বেশি সময় লাগে না। যাইহোক পারিবারিক ভাবেই অর্ণব আর উর্মিলার বিয়ে হয়। মা-বাবা এখানে কেউ থাকে না। তার মানে বুঝাই যাচ্ছে সংসারটা খুব ছোট। এই ছোট্ট একটা সংসার হলো অর্ণব আর উর্মিলার। ছোটখাটো একটা চাকরী দিয়ে আর তার পাশাপাশি টিউশনি দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করে অর্ণব চাকরীর পাশাপাশি একটা টিউশনিও করে। কিন্তু সেটা উর্মিলা জানে না। তাই অর্ণবকে প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফিরতে হয়।
.
লাঞ্চের সময় প্রতিদিনের মত সেদিনও উর্মিলা অর্নবকে ফোন দিলো।
_লাঞ্চ খাইছেন..?
_না খাবো, তুমি খাইছো..?
_আপনার আগে কখনো খাইছি..?
_তা ঠিক, আচ্ছা খেয়ে নাও।
_একটা বিষয় নিয়ে সেই সকাল থেকে ভাবছি কিন্তু কিছুই বুঝতেছি না।
_কোন বিষয়.?
_অফিসে যাওয়ার আগে আপনি মেয়েদের মত মুচকি হাসি দিয়ে চলে যাওয়ার কারণ কি..?
_তুমিও তো অর্ধেক বলে আর অর্ধেক বলোনি সেটার কারণ কি..?
_আমারটা এমনিই,
_আমারটাও এমনি।
_আপনার হাসির মাঝে কিন্তু রহস্য আছে।
_তা আছে কি না জানি না।
_আচ্ছা, ফোন রেখে ঝটপট খেয়ে ফেলুন।
_খাইলাম তারপর..?
_তারপর অফিস শেষে সোজা বাসায় আসবেন।
_আচ্ছা।
.
প্রতিদিনের মত সেদিনও অর্ণব রাত করে বাসায় ফিরে। বাসার দরজা আগে থেকেই খোলা ছিলো ঢুকার জন্য কলিং বেল চাপ দিতে হলো না। ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলো উর্মিলা গাল ফুলিয়ে জানালার পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে। আজ অভিমানটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে অর্ণবের কাছে। কথা দিয়েছিলো তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু কথা রাখতে পারেনি কারণ ঐযে অফিস শেষে টিউশনি করে। ভবিষ্যৎ এর জন্য অনেকেই অনেককিছু করে। অর্ণবও তাই করতেছে। কিন্তু উর্মিলা সেটা আজো জানে না। জানলে হয়তো আর অভিমান করবে না। আর কোনোদিন বলবে না আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবেন। কিন্তু কেন জানি অর্ণব উর্মিলার কাছে এই বিষয়টা লুকিয়ে রাখে। উর্মিলা জানলে হয়তো অর্ণবকে আর টিউশনি করতে দিবে না। এমনিতে অফিস শেষে কাহিল অবস্থা তার উপর টিউশনি করাটা অনেক কষ্টকর সেটা কে না বুঝে। তবে কষ্ট করলে যে কেষ্ট মিলে সেটা অর্ণব ভালো করেই জানে। অর্ণব উর্মিলাকে সারপ্রাইজ দিবে এই ভেবে চুপিচাপি রুমের ভিতর ঢুকলো যাতে উর্মিলা না টের পায়। শরীর থেকে শার্ট খুলে, প্যান্ট-জুতা খুলে ফ্রেশ হতে গেলো। এসে দেখে উর্মিলা চেয়ার থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। রাতের বেলা জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য অন্যরকম সৌন্দর্য লাগে। কিছুক্ষণ পর অর্ণব ফ্রেশ হয়ে উর্মিলার জন্য আনা আচারের বয়াম ব্যাগ থেকে বের করে বিছানার উপর রাখলো। তারপর পিছনদিক দিয়ে উর্মিলাকে আস্তে করে স্পর্শ করলো অর্ণব। হঠাৎ করে অর্ণবের ছোঁয়া পেয়ে উর্মিলা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো । বুকে দুতিনবার থুথু দিয়ে বললোঃ-
_এইভাবে কেউ কাউকে স্পর্শ করে..? হার্টবিট বেরে গেছে আমার। আর কখন আসছেন আপনি..? আমি কই ছিলাম..?
_প্রায় আধা ঘন্টা হবে আসছি। তুমি ভাবনার জগতে ছিলে তাই আমি কখন আসছি বুঝতে পারোনি। যাকগে সে কথা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। সারপ্রাইজের কথা শুনে উর্মিলা আগ্রহ নিয়ে বললোঃ-
_কি সারপ্রাইজ..?
_আগে চোখ বন্ধ করো। খবরদার চোখ খুলতে পারবে না।
_আচ্ছা, ঠিক আছে খুলবো না।
তারপর অর্ণব উর্মিলা হাতে ধরে বিছানার কাছে আনলো। অর্ণব বললোঃ-
_এইবার চোখ খুলো।
চোখ খুলে উর্মিলা আচারের বয়াম দেখে খুশির চেয়ে বেজার। অর্ণব ভাবছে তাহলে কি উর্মিলার আচার পছন্দ না..? উর্মিলা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু ভেবে বললোঃ-
_শুধুশুধু টাকা খরচ করে কেন এসব আনতে গেলেন..? উর্মিলার এই কথায় অর্ণব কিছুটা স্বস্তি ফিরে পায়। অর্ণব ভাবছিলো উর্মিলার আচার একদম’ই পছন্দ না। বিয়ের পরের মেয়েদের ফেভারিট খাবার যে আচার সেটা অর্ণব ভালো করেই জানতো। অর্ণব আচারের বয়ামটা খুলতে খুলতে বললোঃ-
_তোমার চাওয়া পাওয়াকে কিছুটা হলেও প্রাধান্য দিতে হবে তাতে টাকা খরচ হলে হোক। অর্ণবের কথায় উর্মিলা খুশিতে আত্মহারা। এমন স্বামী পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। কোনোকিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যায়। উর্মিলা হাসিমাখা মুখে বললোঃ-
_আমি কিছু চাওয়ার আগেই আপনি বুঝে ফেলেন কিভাবে..?
_আমি তোমার চোখ দেখলেই বুঝতে পারি তুমি কি চাও। কারণ আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আর স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাই প্রকৃত ভালোবাসা।
_আমিও।
_আমিও কি..?
_এতকিছু বুঝেন এইটা বুঝেন না..?
_না।
_ভালোবাসি।
_কাকে.?
_বোকা আপনাকে ছাড়া আর কাকে ভালোবাসবো..?
_তোমার মুখ থেকে শুনবো বলে জেনেও না জানার ভান করছি।
_কিহ…!!! শয়তান কোথাকার।
_আচ্ছা চলো খেয়ে আসি।
.
তারপর দুজনেই খেতে চললো। খাওয়া শেষে দুজনেই হাটতে হাটতে ছাদে গেলো। ছাদের এক কোণায় অর্ণব উর্মিলার হাত ধরে বসে আছে। চাঁদের আলোতে পুরো শহরকে অন্যরকম লাগছে। আকাশের তারাগুলো মিটমিট করছে। দুজনেরই ইচ্ছে করছে আজ রাত এখানে কাটিয়ে দিতে। কিন্তু এর মাঝেখানে উর্মিলা বললোঃ-
_এইযে এইভাবে হাত ধরে বসে না থেকে ঘুমোতে চলেন। রাত কয়টা বাজে সেদিকে কি খেয়াল আছে..?
_আরেকটু থাকলে কি হয়.?
_এমনিতেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারেন না তার উপর বেশি রাত করে ঘুমাইলে উঠতেই পারবেন না।
_কাল তো শুক্রবার অফিস বন্ধ।
_অহ, আচ্ছা তাইতো বলি আজ এখনো ঘুমোতে যাচ্ছেন না কেন।
_জ্বী, ম্যাডাম তাই।
_আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে।
_আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও।
_কিন্তু যদি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পরি তখন কি হবে..?
_কি আর হবে আমি তোমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে যাবো।
_আপনিও না।
_লজ্জা পাচ্ছো। আচ্ছা ঠিক আছে চলো ঘুমোতে যাই।
.
তারপর ছাদ থেকে দুজনেই নেমে সোজা রুমে আসলো। উর্মিলা ঘুমিয়ে পরছে অথচ অর্ণবের চোখে কোনো ঘুম নেই। উর্মিলাকে বিয়ের পর কিছুই দিতে পারেনি। না একটা ভালো শাড়ী না কোনোদিন বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। কেমনেই বা এসব কিনে দিবে ছোটখাটো একটা চাকরী আর টিউশনি দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তবে এতে উর্মিলার কোনো আক্ষেপ নেই। বিয়ের গিফট দিয়েই চলে যাচ্ছে উর্মিলার আর অর্ণবের ছোট্ট সংসার। উর্মিলাকে পেয়ে সত্যিই অর্ণব অনেক সুখী। সুখ জিনিসটা আসলে টাকা দিয়ে হয় না সেটা উর্মিলা আর অর্ণবকে দেখলেই বুঝা যায়। এসব ভাবতে ভাবতে অর্ণবও ঘুমিয়ে পরে।
.
সকালবেলা উর্মিলার আগে অর্ণব ঘুম থেকে উঠে পরলো। এতে আশ্চর্য হবার কিচ্ছু নাই। প্রতি শুক্রবার দিনে অর্ণব উর্মিলার আগে ঘুম থেকে উঠে। এই ছুটির দিনে অর্ণব উর্মিলার যাবতীয় কাজ সে করে। ছেলে হয়ে বাসনকোসন মাজা লজ্জার কিছু না। রান্নাবান্না করা লজ্জার কিছু না এতে দুজনের মিল-মহব্বত বাড়ে। যাইহোক তারপর এক পর্যায়ে উর্মিলা ঘুম থেকে উঠে দেখলো অর্ণব তার পাশে নাই। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে অর্ণব রান্নাঘরে রান্নাবান্না করছে। তারপর উর্মিলা উঠে রান্নাঘরে গেলো। বললোঃ-
_এইযে শুনছেন বলছি আজ কি রান্না হচ্ছে..?
_অহ তুমি, কখন ঘুম থেকে উঠছো..?
_মাত্র উঠলাম। আচ্ছা আজ কি রান্না হচ্ছে..?
_আজ রান্না হচ্ছে তোমার ফেভারিট ভুনাখিচুড়ি।
_ঘ্রাণ বলে দিতেছে অনেক মজা হবে যাই আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
_আচ্ছা যাও।
.
তারপর অর্ণব খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে উর্মিলার জন্য বসে আছে। উর্মিলা সেই কখন ফ্রেশ হতে গেলো এখনো আসছে না। অর্ণব বললোঃ-
_কি হলো ফ্রেশ হতে আর কতক্ষণ লাগবে..? বাথরুম থেকে উর্মিলা একটু জোরে বললোঃ-
_এইতো আসছি আর একমিনিট।
খাওয়ার মাঝে অর্ণব বললোঃ-
_আজ সারাদিন আমরা ঘুরবো, খাবো তারপর বাড়ি ফিরবো।
_সত্যি..?
_হ্যা, সত্যি।
খাওয়া শেষে দুজনেই বাইরে ঘুরতে গেলো। উর্মিলাকে দেখে মনে হচ্ছে আজ অনেক খুশি। একটা মেয়ে যা চায় উর্মিলা ঠিক তাই তাই পেয়ে যাচ্ছে। এই খুশিতে উর্মিলার চোখের কোণায় জল আসলো।
.
সন্ধে বেলা অর্ণব আর উর্মিলা দুজনেই বাড়ি ফিরলো। এইভাবেই কেটে যায় তাদের ছুটির দিন। কিন্তু প্রতিদিনের মত অর্ণব রাত করে বাড়ি ফেরাটা উর্মিলার কেমন জানি লাগে। আস্তে আস্তে উর্মিলা অর্ণবকে সন্দেহ করতে থাকে। তার আরেকটা কারণ হলো অর্ণবের কলিগ সে এত তাড়াতাড়ি আসতে পারে তাহলে অর্ণব কেন এত দেরিতে আসে। এই জন্য সন্দেহের তীরটা আরো জোরালো হলো। উর্মিলা ভাবছে অর্ণব অফিস ছুটির পর অন্য কোনো মেয়ের সাথে সময় অতিক্রম করে। একদিন রাত করে বাসায় আসার পর উর্মিলা বলেই বসলোঃ-
_আমাকে ভালো লাগে না বললেই হয় আমি চলে যাই। উর্মিলার এমন কথায় অর্ণবের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
_কি বললে তুমি..?
_কানে কি কম শুনেন..?
_তোমাকে ভালো লাগে না এইটা তুমি বলতে পারলে..?
_না পারার কি আছে। আপনি তো এখন অন্যান্য মেয়েদেরকে সময় দেন আমাকে রাখছেন শুধু রান্নাবান্না করে দেওয়ার জন্য।
উর্মিলার এমন ভিত্তিহীন কথায় অর্ণবের খুব রাগ হয়। তাই অর্ণব উর্মিলাকে জোরে একটা থাপ্পড় মারে। সেদিনের পর থেকে অর্ণব কিছুটা ভেঙে যায়। তার ছোট্ট সংসারে আস্তে আস্তে ফাটল ধরতে লাগলো। এই সংসারের জন্য দিনরাত কেটে যদি এসব কথা শুনতে হয় তাহলে সেই আশা কি আর থাকে। দুজনের কেউ কোনো কথা বলে। সেদিনের পর থেকে অর্ণব খাইছে কি না সেটা উর্মিলা জানতে চায় না। উর্মিলা খাইছে কি না অর্ণব জানতে চায় না।
.
সেদিনের পর থেকে অর্ণব ঠিক করলো টিউশনি ছেড়ে দিবে শুধু চাকরীটা করবে। যথারীতি অফিস শেষ করে টিউশনি করতে গেলো। গিয়ে আজ থেকে আর টিউশনি পড়াতে পারবে বলে সোজা বাড়ি আসলো। অর্ণবকে এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে দেখে উর্মিলা কিছুটা চমকে যায়। উর্মিলা ভাবছে আজ থেকে অর্ণব আর মেয়েদেরকে সময় দিবে না। এদিকে আজ থেকে যে আর টিউশনি করা হবে না সেটা জানে না। চাকরীর পাশাপাশি টিউশনি করা সংসারে উন্নতির জন্য আর ভবিষ্যৎ এর জন্য কিছু জমানো। কিন্তু উর্মিলা সেটাকে অন্যকিছু ভেবে বসলো। পরেরদিন অফিসে যাওয়ার আগে অর্ণব মোবাইল ফোন রেখে বাথরুমে গেলো আর এই ফাঁকে একটা ফোন আসলো। প্রথমবার রিসিভ করেনি। দ্বিতীয়বার ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
_স্যার প্লিজ প্লিজ আপনি আমাকে পড়ানো ছেড়ে দিয়েন না। স্যার সামনে আমার পরিক্ষা আপনি না পড়াইলে আমি পাশ করতে পারবো না। স্যার আজ সন্ধে বেলায় আসবেন প্লিজ। একটা ছেলে এই কথা গুলো বললো। তখন উর্মিলার মুখ দিয়ে শুধু এই কথাটাই বের হলো।
_আমি স্যার না। বলেই হাত থেকে ফোনটা ধপাস করে বিছানায় পরে গেলো। উর্মিলা বোবাদের মত তাকিয়ে আছে। অর্ণবকে শুধুশুধু ভুল বুঝলো। প্রতিদিন কেন রাত করে বাড়ি ফিরতো সেটা আজ উর্মিলা জেনে গেলো। অর্ণব বাথরুম থেকে বের হয়ে ফোনটা হাতে নিতেই উর্মিলা অর্ণবের আরেক হাত ধরে বললোঃ-
_আমাকে মাফ করে দিন।
_কিসের জন্য..?
_অযথা ভুল বুঝার জন্য।
_মানুষ মাত্রই ভুল।
_জানি কিন্তু আপনি তো জানেন আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি বলেই সন্দেহ করি।
_জানি মেয়েরা তার প্রিয় মানুষকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে মিশতে দিতে চায় না। তবে ছেলেরা যে তার প্রিয় মানুষ রেখে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে মেলামেশা করে সেই সন্দেহটা একদম ভুল।
_ভুল হইছে এইবার মাফ করে দিন।
_দিলাম।
_এইবার একটু হাসুন।
_হাসলাম।
_এইবার লক্ষী ছেলের মত অফিসে যান।
_গেলাম।
_এইবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
_আচ্ছা যাচ্ছি।
_এই এই লাঞ্চের খাবার নিবেন না..?
_একদম ভুলে গেছি।
_এই ধরেন। আর।
_বলতে হবে না। লাঞ্চের সময় হলে অফিসের কাজ রেখে খাওয়ার কাজ শেষ করবো এইতো..?
_হুম……
.
এইভাবেই কেটে যাচ্ছে অর্ণব আর উর্মিলার ছোট্ট সংসার। মাঝেমধ্যে রাগ, অভিমান দিনশেষে ভালোবাসা দিয়ে সুখে, স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যাচ্ছে তাদের দাম্পত্য জীবন। সুখ এমন একটা জিনিস বিশাল বাড়ি-গাড়ি অট্টালিকায় থাকলে যে সুখ পাওয়া যায় না সেই সুখ ছোট্ট কুড়েঘরে থেকেও পাওয়া যায়। সুতরাং টাকাপয়সা-বাড়িগাড়ি কাউকে সুখ দিতে পারে না। একটা সম্পর্কের মাঝে ভুল বুঝা বুঝি হতেই পারে তাই বলে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করার আগে ভেবে দেখা উচিত। মানুষ মাত্রই ভুল কথাটা মানতে হবে। আমরা সবাই ভুল করি কেউ আজ ন কেউবা কাল। আর সন্দেহ। মানুষ সন্দেহ করে তার প্রিয় মানুষটিকে। মেয়ে ভাবে না জানি আমার উনি কোন মেয়ের সাথে ইটিসপিটিস করতেছে। ছেলে ভাবে না জানি আমার ইয়েটা কোনো ছেলের সাথে ফস্টি নস্টি করতেছে। এসব সন্দেহ মনেমনে করাই শ্রেয়। ভালোভাবে না জেনে সন্দেহ করা আর আন্দাজি ঢিল মেরে গাছ থেকে আম পারা একই কথা।
.
……………………………………………. সমাপ্ত …………………………………………….