এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই

এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই

উফফফফ, এখনো আসছে না মেয়েটা। সব সময় দেরী করবেই। ধুর, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ধরে গেলো। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো আলেখ্য । দিন দিন অমৃতাটা টিপিক্যাল মেয়ে হয়ে যাচ্ছে। কি যে এতো সাজে কে জানে। আলেখ্যর তো ওকে জিন্স টি শার্ট এই বেশি ভালো লাগে। উফফফ, কতক্ষণ যে এই মশার কামড় খাবে। আজ আসুক , ক্ষতিপূরণ নেবো। আপাততঃ এক কাপ গরম চা খাওয়া যাক। মাথা টা ঠান্ডা হবে তাহলে। সবে চা টা নিয়ে দু চুমুক দিয়েছে কি দেয়নি, সামনে মূর্তিমান বিপদ, অমৃতা। ঠোঁটে সিগারেট হাতে চায়ের ভাঁড়……. কোনটা ফেলে যে কোনটা রাখবে নাকি দুটোই ফেলবে…… না না দুটোই রাখবে….. ওরে বাবা, আজ ওকে এই দেবীর রোষানল থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
— “কিরে, এরকম ভয় পেয়ে আছিস কেন?” চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো অমৃতা।
কোনোরকমে হে হে করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে গেলাম।
— ওরে বাবা রেএএএএ…….
গরম চা হাত ফসকে পায়ের ওপর গিয়ে পড়লো আর আমার সাধের অফ্ হোয়াইট কালার এর চিনোজ এর বারোটা বাজিয়ে দিলো…… আআআউউউচচচচ….. সিগারেট টা মুখ ফসকে হাত এর উপর বাউন্স খেয়ে সামনের ড্রেনে সলিল সমাধি। তা যাক, কিন্তু একইসাথে অমৃতার দুই শত্রুর সাথে আমায় বন্ধুত্ব করতে দেখেছে। আজ আমার কপালে শনি নাচছে।
—খুব যে সিগারেট খাচ্ছিস? তুই না প্রমিস করেছিলি?
— শোন না, রাগ করিস না। আমি ঠিক খাব বলে খাইনি।
— না না, তুই তো শুধু ফুঁকতে আর গিলতে দাঁড়িয়েছিলি।
ইশশশশ হেব্বি খেপে আছে মেয়েটা।

— রাগ করিস না প্লিজ সোনা….
—এই এই এই এইসব সোনা টোনা আবার কি রে? বলেছি না ওসব বলে একদম ডাকবি না আমায়।
—আচ্ছা আচ্ছা, আর বলবো না। তুই এত দেরী করলি কেনো? তোর দেরি হওয়া দেখেই তো আমি একটু চা….
মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো আলেখ্যর অমৃতার দিকে তাকিয়ে। থাক বাবা কি দরকার রাস্তা ঘাটে মারধর খেয়ে।
—কিরে বললি না তো যে আমায় কেমন লাগছে? মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলো অমৃতা।
উফফফ, এই হাসিটার জন্য সব কিছু করতে পারে আলেখ্য। সব কি? এই চা আর সিগারেট টা……..
—কিরে বল…..
—কি বলব সেটাই ভাবছিলাম। এই অরেন্জ্ কালার এর সালোয়ার টায় তোকে পুরো সেই লাগছে….
মনে মনে ভীষণ চমকে গেলো মেয়েটা। বাব্বাহ্, এ কি শুনছে সে। এ তো মেঘ না চাইতেই জল।
— তোকে কিন্তু পুরো পাতি লেবু লাগছে এই গ্রিন শার্ট টায়…… বলেই হি হি করে হাসতে লাগলো অমৃতা।

— কিইইইইই??? একে তো দেরি করে এসেছিস….. আবার আমায় এইসব বলছিস……
—- আচ্ছা আচ্ছা, আর বলবো না…… চল খিদে পেয়েছে….. বিরিয়ানি খাই।
—ইইইইই….. বিরিয়ানি…… এটা একটা খাবার হলো….. তার থেকে চল আগে একটু চা খাই…….
— মানে টা কি? বিরিয়ানির বদলে চা???
— আজ্ঞে না…… তুই দেরি করে এসেছিস….. তোর ক্ষতিপূরণ এটা….. চল চল
— আমি কিন্তু খাব না…..
— সে দেখা যাবে……
বলে আলেখ্য দুটো চা আর একটা সিগারেট কিনল।
চা খেতে খেতে আলেখ্য মনে জোর এনে বলেই দিলো সিগারেটে লম্বা একটা টান মেরে…..
— একটা কথা বলবো ভাবছিলাম……
— পরে ভাববি…… এরপর আর বিরিয়ানি পাবো না…
—শোন না প্লিজ…. এরপর আর যদি বলতে না পারি…
— আচ্ছা বল….
— মানে ভালবাসি তোকে…… তুই বললে চা ও ছেড়ে দিতে পারি…… সিগারেট ও
— তো ছেড়ে দে…..
— তুই রাজী??? খুশি তে ঝলমল করে ওঠে আলেখ্য।
— এখনও পর্যন্ত…..যাই ই হোক না কেনো কোনোদিন আর খাবি না বল….
— প্রমিস, যাই হোক না কেন, খাবোনা…..
– — গুড বয় …. চল না…. বিরিয়ানি…..

রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে বসে দুটো মাটন বিরিয়ানি অর্ডার দিতেই জানানো হল যে বিরিয়ানি শেষ……
রাগ এ আগুন হয়ে উঠলো অমৃতা…..
— বলছিলাম কি যদি অন্য কিছু……. নিচু স্বরে কিছু বলার চেষ্টা করে……
— – বিরিয়ানির জায়গায় অন্য কিছু???? তোর ওই ভুলভাল কথার জন্য আজ বিরিয়ানি টা পেলাম না….. তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই আর…একদম ভালোবাসার কথা বলতে আসবি না আমায় … বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো…..
হা করে কিছুক্ষণ বসে থাকলো আলেখ্য। তারপর চুপচাপ বেরিয়ে আসে। খুব কষ্ট হচ্ছে, অমৃতা এভাবে বললো! আবার ফিরে যায় চায়ের দোকানে। সিগারেট টা কিনেও ধরাতে পারে না, কথা দিয়েছে যে।
নাহ্, ভুল টা আমারই। আজকের বিরিয়ানির প্ল্যান টা সেই কত দিন আগের। সব নষ্ট হয়ে গেলো আমার জন্য। টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়ে চোখ দিয়ে। ইশশশ, আশে পাশের লোকজন দেখছে….. সাধে কি অমৃতা আমায় ক্যাবলা বলে…. আমার কাজেই বলে। একটা ph করে দেখি।
“ছন্ সে যো টুটে কোঈ সপ্না…… যগ্ শুনা শুনা লগে…. যগ্ শুনা শুনা লগে রেএএএ….. “ কলার টিউন টাও পাল্টে দিয়েছে এর মধ্যে। আমার কথা একটুও ভাবলো না? এরকম একটা টিউন রাখলো? আমি এখনই যাবো ওর কাছে। বলতে বলতেই চোখ বেয়ে আবার নামতে শুরু করলো জল। তাড়াতাড়ি রুমাল বের করে চোখ নাক মুছে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু কি অদ্ভুত ভাবে যতবারই মোছে, ততবারই নতুন জল এসে জায়গা নিয়ে নেয়। একটু দূরেই আর একটা দোকান আছে। ওখান থেকে দু প্যাকেট বিরিয়ানি প্যাক করে তাড়াতাড়ি একটা অটো ধরে। কিছুটা যাওয়ার পর একজন নতুন প্যাসেঞ্জার ওঠে। তখনও আলেখ্য ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে আর রুমালে চোখ নাক মুঁছছে।
—ইশশশশস, আপনি নাক চোখ সব একটা রুমালেই মুছছেন?
চুপ করে থাকে আলেখ্য।
— কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না যে। আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে কিছু বলে না? এরকম নাক চোখ মুখ একটা রুমালেই মুছছেন?
—আমার কোনো গার্ল ফ্রেন্ড নেই।
—ওরে ক্যাবলা…… গার্ল ফ্রেন্ড নেই? তো আমি কি রে? এই তো আধ ঘণ্টাও হয়নি আমায় প্রপোজ করলি।
—তো কি বলবো? তুই তো বললি যে কোনও সম্পর্ক নেই আর।
—তাতে কি? তাই বলে তুই………. আমি বলে দাঁড়িয়ে আছি ওর জন্য যে স্টেশন এর কাছে একটা দারুণ চায়ের দোকান আছে, সেখান থেকে চা খাব….. আর ও কিনা…….
— আমিও তো যাচ্ছিলাম তোকে সরি বলে বিরিয়ানি খাওয়াতে। এই দেখ কিনে নিয়েছিলাম।
— হ্যাঁ! সে কি রে? তুই এতো বড়ো কবে হয়ে গেলি? চল তোকে আমি আজ আমার হাতের স্পেশাল মশালা চা খাওয়াবো। আর তোর চা খাওয়ার ওপর সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলাম। চল্।
—কোথায়? তোর বাড়ি তে তো কেউ নেই। না না ওখানে যাবো না।
এটা শুনে হেসে ফেললো অমৃতা।
—হাসছিস কেনো?
— পাগল, এই ভরসা টা আমার এই ক্যাবলার কাছে আছে। তাই আমি নিয়ে যাচ্ছি।
আলেখ্যর হাত টা জড়িয়ে ধরলো অমৃতা। মনে মনে বলে উঠলো “এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই…….. “

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত