নিশ্চুপ বিকেলে তিন বন্ধু মাঠের মাঝে বসে তাদের প্রিয় বান্ধবী স্নেহার অপেক্ষায় আছে।
অপেক্ষার প্রহর ভেঙে কিছুক্ষণ বাদে স্নেহাও উপস্থিত হলো।
– দোস্ত কি হইছে তাড়াতাড়ি বল।(স্নেহা)
– আগে বস।(অর্ক)
– হুম,বল এখন।[বসতে বসতে](স্নেহা)
– তোর তো আবার পেট পাতলা,কাউকে বলে দিবি না তো!(অর্ক)
– আগে বলবি তো।(স্নেহা)
– ওকে শোন,প্রথম থেকে বলি।(রনি)
– হুম বল।(স্নেহা)
– সোহান প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়েকে পছন্দ করে সেটা তো জানিস।(রনি)
– হুম।(স্নেহা)
– তোহ্,বেচারা অনেক সাধনার পর আজ প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়েকে প্রপোজ করছে।আফসোস কপালে চর ছাড়া আর কিছু জুটেনি।(রনি)
– হিহিহি,তারপর।(স্নেহা)
– চর খেয়ে শালা মেয়ের ওপর রাগ দেখাতে না পেরে স্যারের গাড়ির ওপর রাগ দেখাইছে।(রনি)
– আহারে,শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তির ওপর রাগ দেখিয়ে লাভ আছে।(স্নেহা)
– হইছে এখন আমি বলবো,তোরা সবাই চুপ।(সোহান)
– বল ভাই,অধীর আগ্রহের সাথে আমরা তো তোর কথা শুনতে বসে আছি।(অর্ক)
[কথাটা বলা মাত্র চারজন “হাহাহা” করে হেসে উঠলো।]
– শোন,স্যারের মেয়ে আমায় ভালবাসুক বা না বাসুক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।কিন্তু চরের প্রতিশোধ আমি নিবোই।(সোহান)
– কিভাবে?(রনি)
– সেটা তোরা ভেবে বলবি।[দাত সবগুলো বেড় করে দিয়ে](সোহান)
– হুম..আমার দোস্তরে চর মারা,এতো সহজে ছাড়বো না।(অর্ক)
– ওয়েট ওয়েট ওয়েট,আমার মাথায় দারুণ একটা আইডিয়া এসেছে।(স্নেহা)
– কি আইডিয়া।(সোহান)
– স্যারের মেয়ে প্রেগন্যান্ট,এটা কোনোভাবে ভাইরাল করে দে।(স্নেহা)
– তোর মুখে ফুল চন্দন পড়ুক বোন,চল সেই খুশিতে আজ তোকে ফুচকা খাওয়াবো।[মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে](সোহান)
– ওই শালা আমরা?(অর্ক এবং রণি এক সাথে চেঁচিয়ে)
– তুরা তো চটপটি খাবি।(সোহান)
বলে সবাই একসাথে হাসতে হাসতে উঠে ফুচকার দোকানে গেলো।সেখান থেকে খেয়ে আর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চারজন চার দিকে হাঁটা দিলো।
পরেরদিন সকাল হতে কলেজ জুড়ে ছড়িয়ে পরলো স্যারের মেয়ে প্রেগনেন্টের মিথ্যা খবর।যেটা শুনে স্যারের সাথে সাথে স্যারের মেয়েও আতংকিত।(বাপ কেডা!)
অভূত সেই মিথ্যাচারের পেছনে হাত ছিলো কলেজের সেরা চার বন্ধুর এবং সেটা তাদের অন্তহীন ভাবে আনন্দ দিচ্ছিলো।
তবে সেই আনন্দের অন্তঃ ঘটিয়ে দুঃখের স্রত বয়িয়ে নিয়ে এলো স্নেহার বাবার হার্ট এ্যাটাক।
ছোট্ট পরিবারে বাবা ছাড়া আর কেউ না থাকায় মেয়েটা তখন পাগলের মতন হয়ে তাঁর বন্ধুদের ফোন দিলো।
বন্ধুরাও কম নয়,তাদের প্রাণের বান্ধবীর এমন অবস্থা শুনে ততক্ষণা ছুটে গেলো।
তারপর তাড়াতাড়ি করে স্নেহার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো এবং ডাক্তারকে বলে ইমার্জেনসি ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা করতে।
অন্যদিকে স্নেহা কান্নায় পুরো ভেঙে পরে।
– দোস্ত কান্না করিস না,আংকেলের কিছু হবে না।(রনি)
– বাবা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার কেউ নাইরে।[কান্নার বেগ দ্বিগুণ করে দিয়ে](স্নেহা)
– ধুর,উল্টাপাল্টা চিন্তা করিস না।(রনি)
– কি থেকে কি হয়ে গেলো,কিছু বুঝছি না।[কান্না জড়িত কণ্ঠে](স্নেহা)
– কিছু হয়নি,একদম চুপ হ।খেয়েছিস দুপুরে?[ধোমক দিয়ে](অর্ক)
– না।[মাথা নিচু করে](স্নেহা)
– সোহান নিচ থেকে কিছু খাবার নিয়ে আয় তো।(অর্ক)
– আমি কিছু খা…..
অর্কর চোখ গরম দেখে স্নেহা ভদ্র মেয়ের মতন চুপ হয়ে গেলো এবং সোহান দোকানে খাবার আনতে চলে গেলো।
তার কিছুক্ষণ বাদে ডাক্তার বেড়িয়ে এসে বললো “Everything is alright,আপনারা এখন রুগির সাথে কথা বলতে পারেন।”
যেটা শুনা মাত্র সবার মুখে এক হাসির ছাপ ভেসে উঠে।
তারপর কেবিনে প্রবেশ করে স্নেহা তার বাবার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
– আংকেল এখন ভালো লাগছে তো?(অর্ক)
– হ্যা বাবা,আগের চেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে।তোমরা না থাকলে আজ কি যে হতো।(স্নেহার বাবা)
– আপনি আমাদের বাবার বয়সী,আর স্নেহা আমাদের বোনের মতন।so,এটা কোনো ব্যাপার না আংকেল।(অর্ক)
– জানিনা,তবে আজ আমার কিছু হয়ে গেলে মেয়েটার কি হতো।(স্নেহার বাবা)
– বাজে কথা বলবানা বাবা।(স্নেহা)
– বাজে কথা না মা।জন্ম মৃত্যু আল্লাহ্র হাতে,তিনি কখন ডেকে নেন।তার আগে তোর একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারলে মনে হয় একটু শান্তি পেতাম।(স্নেহার বাবা)
– আমি তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা।[কান্না জড়িত কণ্ঠে](স্নেহা)
– জানি,কিন্তু এটাই নিয়ম মা।(স্নেহার বাবা)
তখনি খাবার হাতে সোহানের প্রবেশ……
– এখন ভালো লাগছে তো আংকেল?(সোহান)
– হ্যা বাবা,তোমাদের খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম।(স্নেহার বাবা)
– এভাবে বলবেন না আংকেল।আপনি ঠিক আছেন এটাই আমাদের জন্য বড় কিছু।(রনি)
– সত্যি তোমাদের মতন ছেলে হয় না।(স্নেহার বাবা)
এভাবে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।তখন তিন বন্ধু ডাক্তারের সাথে কথা বলে স্নেহার বাবাকে বাসায় দিয়ে গেলো।
কিছুদিন বাদে আবার স্নেহার জরুরি তলব,যেটার জন্য চারজন মাঠে একজায়গা হলো।
– দোস্ত বাবা বাড়ি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে।(স্নেহা)
– কিইইই,কেনো?(সোহান,অর্ক,রনি একসাথে)
– আমার বিয়ে দিতে বাবা উঠেপড়ে লেগেছে।(স্নেহা)
– হুম,সেটা স্বাভাবিক।তোরও বুঝা উচিৎ তোর বাবার টেনশন।লোকটা জিবনের মায়া ছেড়ে এখন আশায় আছে কিভাবে তোর জিবনটা গড়ে দিবে।তাই না করিস না দোস্ত।কিন্তু বাড়ি বিক্রি করবে কেনো?(অর্ক)
– আমার বিয়ে দিতে বাবা আলাদা ব্যাংকে টাকা রেখে দিয়েছিলো।কিন্তু চাচ্চুর কথায় সেই টাকা তুলে বিজনেসে লাগায়।ব্যস,সব টাকা পানিতে।এখন নাকি বাড়ি বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।(স্নেহা)
– বাড়ি বিক্রি করলে তোর বাবা থাকবে কোথায়?(অর্ক)
– সেজন্য তো।বাবাকে কিছু বোঝাতে পারছি না।(স্নেহা)
– তোর বাবাকে বল তাঁর কিছু করতে হবে না।রাজপুত্র আর বিবাহ দুটোর দায়িত্ব এখন আমাদের,তুরা কি বলিস দোস্ত!(অর্ক)
– ডান।(রনি)
– ডান।(সোহান)
তারপর তিন বন্ধু সবার পছন্দ মতন অনেক খুঁজে স্নেহার জন্য পাত্র বেড় করলো।
ছেলে ইঞ্জিনিয়ার,মাসে এক লক্ষ টাকা স্যালারি এবং ভদ্র ঘরে সন্তান।সব মিলিয়ে যেনো সোনায় সোহাগা।
ভাগ্যক্রমে ঝামেলাটা হলো বিয়ের খরচ নিয়ে।
তবে,তীরে এসে তরী ডুবানোর পাত্র তারা নয়।তাই অর্ক ডিসিশন নিলো সে বাইকটা বিক্রি করে দিবে।অর্কর কর্মকাণ্ড দেখে রনিও তাঁর দামি মোবাইল দুইটা বিক্রি কড়ার সিদ্ধান্ত নিলো।সবশেষে সোহান জমানো ল্যাপটপ কেনার টাকা দিতে রাজি হলো।
এবং সবমিলিয়ে হিসাব করে এক বড় অংকের টাকার রূপ ধারণ করলো।
যা দিয়ে খুব ভালোভাবে স্নেহার বিয়ে দেওয়া সম্ভব।
ব্যস,সেটা পূর্ণতা দিতে তিন বন্ধু তাদের প্রিয় জিনিশের টাকা একত্রিত করে স্নেহার বাবার হাতে তুলে দিলো।
মেয়ের কথা চিন্তা করে স্নেহার বাবাও না করতে পারেনি।
.
তারপর ধুমধাম করে স্নেহার বিয়ে হয়ে যায়।
বাবার বুক থেকে মেয়ে আর কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী অন্যের ঘরে পারি জমায়।
কলেজটা আগের মতো থাকে,থেকে যায় মাঠটাও শুধু হারিয়ে যায় শুধু চারজন বন্ধুর খুনশুটি পাগলামো গুলো।
……………………………………………..<সমাপ্ত>………………………………………