সেই তুমি

সেই তুমি

রাত ২টার একটু বেশি বাজে।
রেললাইন ধরে আনমনে হাঁটছি।আমার গন্তব্য কোথায় সেটা জানিনা।রাতের বেলায় হাঁটতে ভালোই লাগে আমার।তবে আজ খারাপ লাগছে।বিকেল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি।খাওয়া হবে কী করে, আমাকে যে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আপনারা ভাবছেন কেনো বের করে দিলো?বলছি তাহলে।
বিকেলবেলা নিজের রুমে বসে নেশা করছি।নেশা করাটা আমার অভ্যস।একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম।নিজের জীবনের থেকেও বেশি।মেয়েটা আমাকে একদিন ভুল বুঝে চলে যায় এরপর থেকে এই নেশাই আমার একমাএ সঙ্গী।আব্বু, আম্মু অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে এপথ থেকে ফেরানোর কিন্তু পারেনি।আমি দিনে দিনে একদম রোগা হয়ে যাচ্ছি।আব্বু আম্মু এসব আর দেখতে পারেনা।তাই আমাকে আজ বাসা থেকে বের করে দিলো।বাসা থেকে বেরিয়ে আসার আগে আব্বু বলেছিলো
:-মরবি যখন দুরে গিয়ে মর।আমাদের সামনে আর এমন পড়ে থাকিস না।আর পারিনা এসব সহ্য করতে।
আমিও কোনকিছু না বলে বের হয়ে এসেছি।এতক্ষণ রেলাইনে বসে ছিলাম।

আমি যাকে ভালোবাসতাম তার নাম নীলা।ঢাকা ভার্সিটির ছাএী।আমার নাম হুসাইন।নীলা আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলো আমার জন্যই।আমি অনেক বড় একটা অপরাধ করেছিলাম।

সেদিন ছিলো বুধবার।মাএ কলেজ থেকে মেসে এসেছি।এমন সময় নীলার নম্বর থেকে ফোন আসলো।
:-হ্যালো।(আমি)
:-(ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেষে আসছে।)
:-কী হয়েছে?তুমি কাঁদছো কেনো?
:-কেঁদেই যাচ্ছে।
:-ওই কথা বলোনা কেনো?কী হয়েছে বলো আমাকে। প্লিজ বলো।
:-অতীতের কথাগুলো মনে পড়ছে তাই।
:-একটা থাপ্পর দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।তোমাকে কতবার বলেছি অতীত মনে করে কাঁদবেনা তার পরেও কাঁদো কেনো?
:-অতীত আমার পিছু ছাড়েনা।অতীতটা আমাকে ভালোভাবে বাঁচতে দিবেনা।
:-চুপ করো বলছি। আর একটুও কাঁদবেনা বলে দিলাম।তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
:-তুমি বিরক্ত হচ্ছো তাইনা।আচ্ছা ফোন রেখে দিচ্ছি।
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।আমি জানি এখন আর ফোন দিলেও ধরবেনা।এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কী করি।আমি এত বলি অতীত মনে করোনা তবুও এই অতীত মনে করেই কান্না করবে।আমি অনেক বুঝিয়েছি যে অতীত ভুলে যাও কিন্তু আমার কথা শুনেনা।আপনারাই বলুন প্রতিদিন ভালোবাসার মানুষকে এভাবে কাঁদতে দেখলে কেউ নিজেকে ঠিক রাখতে পারে।

আজ এর একটা সমাধান করতে হবে।আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে আর কোনদিন ও অতীত মনে করে না কাঁদে।ওর অতীতটা হলো, “” আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো নীলার””। পারিবারিক সমস্যার কারণে সেটা ভেঙ্গে যায় আর এসব নিয়েই সবসময় মন খারাপ করে থাকে।আমি অনেক ভেবে চিন্তে একটা নতুন ফেসবুক আইডি খুললাম।নীলার যার সাথে বিয়ে হয়েছিলো তার নাম দিয়ে একটা ফেক আইডি খুললাম।তারপর ওকে রিকোয়েস্ট পাঠালাম।আমি নীলার আইডির পাস জানতাম তাই ওর আইডিতে ঢুকে ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট এপছেট করে দিলাম ।এরপর নীলা ফেসবুকে আসলে ওই আইডি দিয়ে ওর সাথে চ্যাট করলাম।আর বললাম আমি ওর আগের স্বামী।অনেক বাজে বাজে কথা বললাম যাতে লোকটার প্রতি ওর ঘৃনা জন্নে যায়।নীলাও অনেক কথা শুনালো।

সেদিন রাতে নীলা আমাকে ফোন করে সবকিছু বললো। ওর আগের স্বামী কীসব কথা শুনিয়েছে সেসব বললো।আমি ওকে তখন অনেক বুঝালাম।বললাম দেখো লোকটা কতটা খারাপ।তোমাকে ব্লাকমেল করছে।এত খারাপ একটা লোকের কথা মনে করে কষ্ট পাওয়ার কোন মানে হয়?জানিনা ও কী বুঝলো তবে আমাকে বললো ও আর অতীত নিয়ে ভাববেনা।

পরেরদিন ওই আইডি দিয়ে আরো বাজে বাজে কথা বললাম।এভাবে দুইদিন অনেক বাজে কথা বললাম ওকে।লোকটার প্রতি ওর মনে পুরোপুরিভাবে ঘৃনার জন্ন দিলাম।কিন্তু আমার ভাগ্যটা হয়তো খুব খারাপ ছিলো।নীলা কেমন করে যেনো বুঝে যায় ওই আইডিটা আমার আর আমি এসব করেছি।তখন নীলা ফোন করে আমাকে অনেক কথা শুনায়।আমার সাথে রিলেশন ব্রেকআপ করে দেয়।
আমি তখন পাগলপ্রায় হয়ে যায়।ওকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করি কিন্তু ও বুঝেনা।আমার নম্বরগুলো ব্লকলিষ্টে দিয়ে দেয়।ওর পরিবারের সকলেই জানতো আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে।ওর আম্মুর নম্বরে ফোন দিই কিন্তু সেটাও বন্ধ পাই।
সেদিন ও আমাকে ছেড়ে চলে যায় তারপর আর ফিরে আসেনি।তারপর থেকে আমি জরিয়ে যায় নেশার মাঝে।এই নেশার জন্যই আজ ঘরছাড়া হলাম।নীলা চলে যাওয়ার পর ফেসবুকে গল্প লেখা শুরু করি।নিজের মনের অনুভুতিগুলো ফেসবুকে সবার সাথে শেয়ার করি।আস্তে আস্তে গল্পের ফ্যান বাড়তে থাকে।অনেক আড্ডা দিই সবার সাথে।মাঝে মাঝে নতুন সিম কিনে নীলার কাছে ফোন দিতাম কিন্তু ও ফোন রিচিভ করার পর আমার কন্ঠ শুনেই ফোনকল কেটে দিতো।তারপর নম্বরটা সোজা ব্লক।এভাবে এক এক করে কেটে গেছে ১০ মাসেরও বেশি।এই ১০ মাসে আমি হয়ে ওঠেছি নেশাখোর।মাঝে মাঝেই চেষ্টা করতাম নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কিন্তু পারিনি।আমার মন বলে নীলা ঠিকই একদিন ফিরে আসবে সেই আশায় বেঁচে আছি।

:-শুনুন
পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম।পিছন ফিরে তাঁকাবো নাকি সামনে দৌঁড় দিবো বুঝে ওঠতে পারছিনা।আমি এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।বোরকা পড়ে থাকায় মেয়েটির চেহারা দেখতে পাচ্ছিনা।
:-প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন।(মেয়েটি)
:-কী সাহায্য?(আমি)
:-আমি খুব বিপদে পড়েছি।
:-কিসের বিপদ? তাছাড়া আপনি এতরাতে এখানে কী করছেন?
:-আমার বাসা ঝিনাইদহ।কয়েকটা ছেলে মিলে আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে।আমি সন্ধায় প্রাইভেট থেকে ফিরছিলাম তখন একটা মাইক্রো আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে তুলে নেয়।প্লিজ আমাকে বাঁচান।
দুর থেকে কয়েকটা ছেলে দৌঁড়ে আসছে চাঁদের আলোয় স্পট দেখা যাচ্ছে ছেলেগুলোকে।
:-প্লিজ ওদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান।(মেয়েটি)
আমি কোনো উওর না দিয়ে মেয়েটির হাত ধরে সামনের দিকে দৌড় দিলাম।এই শহরের সব অলিগলি আমার চেনা।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমার ফ্রেন্ড শিপনকে ফোন দিলাম।শিপন ফোন ধরলো না।এরপর শান্তকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হবার রিচিভ হলো।আমি শান্তকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম
:-মামা আমি খুব বিপদে পড়েছি তাড়াতাড়ি কলেজের দিকে আয়।সাথে কয়েকজনকে ডেকে আনিস।
ফোন রেখে দৌঁড়াতে থাকলাম।মেয়েটির দৌঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারলাম।কষ্ট হলেও আমার সাথে দৌঁড়াচ্ছে।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কলেজের দিকে চলে আসলাম।কলেজের প্রাচীর টপকে ভিতরে ঢুকে একপাশে লুকিয়ে থাকলাম।মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে।আমার হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছি মেয়েটি।আমাদের খুজে পেতে ছেলেগুলোর সময় লাগলোনা।৮ জন ছেলে ছিলো। ওদের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।ছেলেগুলো মুখ বেঁধে রেখেছে তাই চিনতে পারছিনা।আমি মনে মনে শুধু আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া করছি, যেভাবেই হোক ৫ মিনিট যেনো কেটে যায়।শান্তদের আসতে ৫ থেকে ৬ মিনিট সময় লাগবে।
:-এই ছেলেটাকে কী করা যায়রে?(একটা ছেলে বললো)
:-জামাকাপড় খুলে মাঠের মাঝে বেঁধে রাখ।(আরেকটা ছেলে)
:-তার আগে মেয়েটার ব্যবস্থা করে নিই।(আরেকটা ছেলে)
আমি মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছি।আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন তাইতো ছেলেগুলো বললো আমাকে আমার জামাকাপড় খুলে তারপর মেয়েটিকে রেপ করবে।আমার যা খুশি করুক তাতে আমার কোনো আফসোস নাই।মেয়েটির কোনো ক্ষতি হতে দিবোনা।ছেলেগুলো আমাকে মাঠের মাঝখানে এনে হাত পা শক্ত করে বেঁধে মাঠের মাঝখানে ফেলে দিলো।মেয়েটিকে আর দুইটা ছেলে আমার থেকে দুরে ধরে রেখেছে।ছেলেগুলো আমাকে মাঠের মাঝখানে ফেলে চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি লাইট হাতে কয়েকজন মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখলাম।আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কার আসছে।ছেলেগুলো মেয়েটিকে নিয়ে প্রাচীর সহজে টপকাতে পারবেনা তাই মেয়েটিকে ফেলে পালিয়ে গেলো। শান্তরা আসতে আসতে ছেলেগুলো অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো।কয়েকজন ওদের পিছু করলো।শান্তু এসে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো।আমি দাঁড়িয়ে মেয়েটির কাছে গেলাম।
:-আপনার কোনো ক্ষতি হয়নিতো?(আমি)
:-আমি ঠিক আছি।আপনার কিছু হয়নিতো?(মেয়েটি)
:-আপনি এখানে আসলেন কিভাবে?(শান্ত)
:-আগে সবাই বাসায় চলো তারপর সবকিছু শোনা যাবে।(শান্তর বাবা)

সবাই শান্তদের বাসায় আসলাম।
আন্টি মানে শান্তর আম্মু মেয়েটিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।আমরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসলাম।যারা ছেলেগুলো পিছু করেছিলো তারা ফিরে এসেছে।ছেলেগুলোকে ধরতে পারেনি।আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে।কিভাবে কী হয়ে গেলো।
:-এবার বল কিভাবে এসব হলো?(শান্ত)
:-বাসা থেকে আব্বু আম্মুর সাথে রাগারাগি করে চলে এসেছি।রেললাইন ধরে হাঁটছিলাম তখন মেয়েটি কোথা থেকে যেনো আসলো।এরপর ছেলেগুলোকে আসতে দেখে মেয়েটিকে নিয়ে কলেজের দিকে দৌঁড়ে গেলাম।শিপনকে ফোন দিলাম ও ধরলোনা।এরপর তোকে ফোন দিলাম।(আমি)
:-ভালো করেছো বাবা।তোমার সাহস দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।(আঙ্কেল)
গ্রামের আরো অনেকেই ছিলো সবাই আমার সাহসের প্রশংসা করলো।নিজের কাছে নিজেকে আজ খুব বড় মানুষ মনে হচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যে সারাগ্রাম জেনে গেলো আমি একটা মেয়েকে কয়েকটা ছেলের হাত থেকে বাঁচিয়েছি।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আর আন্টি ড্রয়িংরুমে আসলো।আমিতো মেয়েটিকে দেখে থ হয়ে তাকিয়ে আছি।বোরকা খুলে ফেলেছে মেয়েটি।আমার মত শান্তও তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে পরীর দেশ থেকে সবচেয়ে সুন্দরী পরী এখানে নেমে এসেছে।
:-আপনার ফোনটা একটু দেন বাসায় ফোন দিবো।(আমাকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি বললো)
আমি ফোনটা পকেট থেকে বের করে মেয়েটির হাতে দিলাম।মেয়েটি আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে বাসায় ফোন দিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো।মেয়েটার চোখে পানি মানাচ্ছেনা।পরীদের কাঁদলে ভালো দেখায়না।পরীদের হাসিখুশি থাকলেই সবথেকে ভালো লাগে।আন্টি আঙ্কেল দুজনেই মেয়েটির বাসায় কথা বললো।কুষ্টিয়া আর ঝিনাইদহ পাশাপাশি জেলা।ঝিনাইদহ থেকে আমরা যেখানে আছি সেখানে আসতে বেশি হলেও দের ঘন্টা লাগবে।

মেয়েটির বাসায় কথা বলা শেষ হলে ওর বাসার লোকজন,কী করে,নাম কী সবকিছু সবাই জানলাম।মেয়েটির নাম নীলা।ইন্টার ১ম বর্ষের ছাএী।বাবা পেশায় স্কুলশিক্ষক আর মা গৃহিনী।যারা মেয়েটিকে তুলে আনছিলো মেয়েটি তাদের চেনেনা।কী কারণে নীলার সাথে ছেলেগুলো এমন করলো তাও সে জানেনা।

নীলার পরিবার থেকে অনেক লোকজন এসেছে।নীলার বাবা আমাদের অনেক ধন্যবাদ জানালেন।রাতেই নীলাকে নিয়ে তারা চলে গেলেন।সবথেকে অবাক হয়েছি মেয়েটির নাম নীলা।আমি আগে যাকে ভালোবাসতাম তার নামও নীলা ছিলো।
:-কিরে বাসায় যাবি না আমাদের এখানে থাকবি?(শান্ত)
:-তোদের কোনো প্রবলেম না হলে থেকে যায়।(আমি)
:-তোকে বলেছি আমাদের বাসায় তোকে থাকতে দিবোনা?
:-বলিস তবুও—
:-তবুও টবুও বাদ দে চল খেয়ে ঘুমাবি।
:-চল।
খাওয়া দাওয়া করে শান্তর সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।

:-হুসাইন এই হুসাইন।
শান্তর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
:-কিরে এভাবে চিল্লাসছিস কেনো?(আমি)
:-তোর আব্বু আসছে।তোকে ডাকছে।(শান্ত)
আমি আর কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে ওঠে বসলাম।আব্বু আসার কথা শুনে খুব বেশি অবাক হয়েছি। কারন আমি কাল বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর একটা ফোনও করেনি।চোখ ডলতে ডলতে বাইরে আসলাম।আব্বু আর আঙ্কেল(শান্তর বাবা)গল্প করছে।আমি আসাতে তাদের কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটলো।
:-বাসায় চল।(আব্বু)
আমি মাথা নাড়ালাম।যেই মানুষটা কাল বাসা থেকে বের হবার পরে আমাকে একটা ফোনও করেনি সেই আজ এত সকাল সকাল আমাকে নিতে আসছে।মাথায় ঢুকছেনা কিছু।
:-কিরে বাসায় যাবি না এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি?(আব্বু)
:-চলো।(আমি)
আব্বুর পিছু পিছু বাসায় চলে আসলাম।সারাপথ কেউ একটা কথাও বলিনি।বাসায় আসতেই আম্মুর কান্না শুরু হয়ে গেলো।
:-তোকে কে বলেছিলো মানবতা দেখতে?যদি কোনো বিপদ হতো?(আম্মু)
:-কিছু হয়নিতো।(আমি)
:-বাদ দাও এসব।রাতে মনেহয় কিছু খায়নি খেতে দাও ওকে।(আব্বু)
:-খেয়েছিলাম শান্তদের বাসায়।(আমি)
:-যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।(আম্মু)
আমি ফ্রেশ হতে চলে এলাম।ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসলাম।আব্বু আম্মু দুজনেই বসে আছে।আব্বু আম্মু দুজনেই আমাকে অনেক বুঝালেন।আমি তাদের সব কথাতে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।নিজেও জানিনা আমি তাদের কথা মানতে পারবো কিনা।
খাওয়া শেষ হলে নিজের রুমে আসলাম।গতকাল বাসা থেকে যাওয়ার রুম এলোমেলো করে রেখে গিয়েছিলাম।এখন এসে দেখছি সব সাঁজানো শুছানো।মনে হয় আম্মু গুছিয়েছে।ফোনটা বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়লাম।ঘুম ধরেছে।কিন্তু ফোনটা ঘুমাতে দিলোনা।ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম অপরিচিত নম্বর।রিচিভ করলাম।
:-আসসালামুআলাইকুম।(আমি)
:-ওলাইকুমআসসালাম।কেমন আছেন?(মেয়েলী কণ্ঠ)
:-জ্বি ভালো।আপনি?
:-ভালো।কী করেন?
:-আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
:-আমি নীলা।গতকাল রাতে যাকে আপনি সাহায্য করেছিলেন।
:-ও আপনি।
:-হ্যা।কী করছেন এখন?
:-শুয়ে আছি।আপনি?
:-সেম।
নীলার সাথে অনেক হলো। মেয়েটা বাঁচাল স্বভাবের।একের পর এক কথা বলতেই থাকে বলতেই থাকে।নীলার সাথে কথা বলার পরিমান বাড়তে থাকে।আমি নিজের থেকে ফোন দিতাম না কখনো।নীলা নিজেই ফোন দিত।ভালোই লাগতো নীলার সাথে কথা বলতে।নীলার সাথে কথা বলার মাধ্যমে অতীতটাকে ভুলে থাকতাম তাই বেশি কথা বলতাম।আমাদের মাঝে ভালো ফ্রেন্ডশিপ গড়ে ওঠতে সময় লাগেনি।আমরা দুজন দুজনাকে তুই করে বলতাম ফ্রেন্ডশিপের পর থেকে।মাঝে মাঝে অনেক নেশা করতাম তবে আগের থেকে কম।আস্তে আস্তে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠি আমি।নীলা জানতো না আমি নেশা করি।ওকে কখনো বলিনি।

মাস তিনেক পরের কথা।
ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে নীলা বললো
:-তোকে কিছু কথা বলতে চাই?(নীলা)
:-বল।(আমি)
:-কিছু মনে করবি নাতো?
:-না।
:-আমি মনে হয় তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।
:-হা হা হা।আমিওতো তোকে ভালোবাসি পাগলী।
:-সত্যি?
:-হ্যা সত্যি।ফ্রেন্ড হিসেবে তোকে অনেক ভালোবাসি।
:-ওই আমি এটা বলিনি।
:-তাহলে?
:-অন্যভাবে ভালোবাসার কথা বলেছি।
:-দেখ নীলা আমি তোকে জাষ্ট ফ্রেন্ড ভাবি এর বেশি কিছু না।
:-আমি তোকে সত্যি খুব ভালোবাসি।
:-এটা সম্ভব না।
:-কেনো সম্ভব না?
:-আমি তোকে আমার অতীত বলেছি।আমি পারবোনা দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসতে।
:-প্লিজ।আমি তোকে না পেলে মরে যাবো।
:-এসব বললে আমার সাথে আর কথা বলবিনা।
:-বিরক্ত হচ্ছিস খুব তাইনা?ঠিক আছে আর কোনদিন বিরক্ত করবোনা।
নীলা ফোন রেখে দিলো।আমি আর ফোন ব্যাক করলাম না।আমি দ্বিতীয়বার আর কাউকে ভালোবাসতে চাইনা।একা আছি ভালো আছি।ফোনের ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখি নীলাও একটিভ আছে।
:-কিরে কী করিস?(আমি)
:-সিন বাট কোনো উওর নেই।
:-ওই গাধী কথা বলিস না কেনো?
:-ইমোতে আয় একটু।
:-ওকে আসছি।
আমি ইমোতে ঢুকলাম।ইমোতে ঢুকতেই ভিডিও কল দিলো নীলা। রিচিভ করলাম আমি।নীলা হাতে একটা ব্লেড নিয়ে বসে আছে।
:-তোর হাতে ব্লেড কেনো?কাউকে খুন করবি নাকি?(আমি)
:-তোকে খুন করবো কুওা। (নীলা)
:-আমাকে খুন করলে জেলে যেতে হবে তোকে।
:-যেতে হলে যাবো তবুও তোকে খুন করবো।
:-হি হি হি হি
:-ওই একদম হাসবিনা।তোর মুখে টিকটিকি ছেড়ে দিবো আরেকবার হাসলে।
:-আমাকেতো হাতের কাছে পাবিনা।
:-আচ্ছা তুই কী আমাকে একটুও ভালোবাসিস না?
:-দেখ এসব আর বলবিনা।আমি তোকে ফ্রেন্ডের থেকে বেশি কিছু ভাবতে পারবোনা।
:-ঠিক আছে ভাববোনা।তোকে ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব না তাই নিজে শেষ করে দিবো।
:-পাগলামি করিস না প্লিজ।
নীলা ফোনটা টেবিলের উপর রাখলো।এরপর নিচের হাতে ব্লেড চালিয়ে দিলো।আমি সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
:-এটা তুই কী করলি?হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে তাড়াতাড়ি স্যাভলন লাগা।(আমি)
:-লাগাবোনা।আমি আজ নিজেকে শেষ করে দিবো।
আমি কী করবো মাথায় ঢুকছেনা।একন যদি না বলি তাহলে মেয়েটা কী করবে নিজেও জানেনা।এমন পাগল মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।এখন হ্যা বলে দিই পরে সবকিছু বুঝিয়ে বললেই হবে।
:-আচ্ছা আমি রাজি।(আমি)
:-সত্যিতো?(নীলা)
:-হ্যা সত্যি।
:-তাহলে আই লাভ ইউ বল?
:-আই লাভ ইউ।
:-আই লাভ ইউ টু।তুই একটু লাইনে থাক আমি আসছি।
:-ওকে।
আচ্ছা পরে নীলাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললে ও কী বুঝবে?নাকি আবার পাগলামি করবে?আমার ভালোবাসার অনুভুতি শেষ হয়ে গেছে।নীলাকে দেবার মত কিছু নেই আমার কাছে।
:-এই দেখ ব্যান্ডেজ করে ফেলেছি।(নীলা)
:-এসব কোথায় পেলি এত তাড়াতাড়ি?(আমি)
:-রুমেই ছিলো।
:-ও।
:-আজ থেকে আমাকে তুমি করে বলতে হবে।
:-কেনো?
:-ভালোবাসার মানুষকে কেউ তুই করে বলে?
:-আমি তুমি করে বলতে পারবোনা।
:-আবার কিন্তু পাগলামি করবো!
:-ওই একদম না।আচ্ছা বলবো।
:-এইতো গুড বয়।আজ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।মিথ্যা বলা যাবেনা।আমাকে ছেড়ে যেতে পারবেনা।যদি আমাকে কখনো ছেড়ে যাও তাহলে আমাকে আর খুজে পাবেনা কখনো।
:-আমার মধ্যে কী এমন দেখলি যে আমাকেই ভালোবাসতে হলো?
:-আবার তুই???
:-ও সরি।তুমি
:-তুমি অনেক ভালো একটা মনের মানুষ।এটা দেখেই ভালোবেসেছি।
:-তোমার ধারণাতো ভুলও হতে পারে?
:-না হবেনা।আমি জানি তুমি অনেক ভালো।
:-তাই?
:-হ্যা।একটু পরে যোহরের আযান দিবে।গোসল করে নামাজে যাও।
:-কাল থেকে পড়বো।
:-না এখন থেকেই।আমি যা বলেছি শুনতে হবে নয়তো আমি কী করবো সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
:-ঠিক আছে যাচ্ছি।
:-গুড বয়।নামাজ থেকে এসে লান্স করে আমাকে ফোন দিবে।
:-আচ্ছা।
:-আমাকে কথা দাও কখনো নামাজ বাদ দিবেনা?
:-পারবোনা কথা দিতে।তবে বাদ না দেওয়ার চেষ্টা করবো।
:-না কথা দিতে হবে।
:-দেখো সবকিছুতে জোর করবেনা।
:-আচ্ছা ঠিক আছে।এখন যাও।
ফোন রেখে দিলাম।আযান দিতে এখনো ৪ মিনিট বাকি আছে।বিছানা থেকে ওঠে গোসল করে রেডি হলাম নামাজের জন্য।রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম মসজিদের উদ্দেশ্য।

এভাবে নীলা আমাকে জোর করে অনেক কিছুই করাতো।একটা সময় আমারো ভালো লাগতে শুরু করে নীলাকে।আস্তে আস্তে আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি হয়ে যায়।আব্বু আম্মুও অনেক খুশি আমার এই পরিবর্তনে।আমার মনে আল্লাহর প্রতি ভয়ের সৃষ্টি হয়।নীলা অনেক কেয়ার করতো আমার।আমাদের ভালোবাসা পবিএ ছিলো।কেউ কখনো নোংরামি কথা বলিনি।আবার বলার চেষ্টাও করিনি।নীলা চাই পৃথিবীতে ভালো কাজ করে পরোকালেও দুজন একসাথে থাকতে।আমি রাজি নীলার কথা মানতে।

২ বছর পর
কিছুক্ষণ আগে নীলাকে আমার বউ করে নিয়ে এসেছি।দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়েটা হয়েছে।এই ২ বছরে আমাদের সামনাসামনি একবারো দেখা হয়নি।আমি দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু নীলা দেখা করেনি।ওর একটাই কথা বাসর রাতে দেখো যত খুশি।হ্যাঁ আজ আমাদের বাসর রাত।আজ নীলাকে মন ভরে দেখবো আমি।বন্ধুরা বাসর ঘরে ঢুকার আগে অনেক পরামর্শ দিয়েছে।
আমি রুমে ঢুকে দেখলাম নীলা খাটের উপর লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে।দরজা লাগিয়ে নীলার দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।নীলা খাট থেকে নেমে এসে সালাম করলো আমাকে।আমি নীলাকে ওঠিয়ে খাটে বসিয়ে দিলাম আবার।ঘোমটা ওঠাতেই চমকে ওঠলাম আমি।এতো সাক্ষাৎ পরী।বিয়ের সাঁজে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে নীলাকে।
:-ওই এভাবে কী দেখো?(নীলা)
:-একটা পরীকে দেখি।(আমি)
:-তাই বুঝি?
:-হ্যাঁ।
:-দেখেছো সৎ মনে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তিনি ফিরিয়ে দেননা।
:-হুম দেখলাম। তিনি পরম দয়ালু।
:-আমরা দুজনেই সবসময় আল্লাহর পথে থাকতে চাই।
:-হুম থাকবো।একটা কথা বলি?
:-বলো।
:-রাগ করবে নাতো?
:-না। বলো।
:-তোমার কোলে মাথা রাখবো?
:-অব্যশই রাখবে।আমার প্রতি তোমার পুর্ণ অধিকার আছে।
আমি আর কিছু না বলে নীলার কোলে মাথা রাখলাম।নীলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর একের ওর এক কথা বলে যাচ্ছে। ও ছোটবেলায় কী করেছিলো সব বলছে আমাকে।আমি শুধু শুনছি আর নীলাকে দেখছি একদৃষ্টিতে।জানি সারাজীবন দেখলেও তৃপ্তি মিটবে না।

……………………………………………….সমাপ্ত……………………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত