-দেখ দেখ ক্ষ্যাত মার্কা ছেলেটা।
কথাটা বলেই মেয়েগুলো হাসতে শুরু করে।এমনভাবে হাসছে মনে হচ্ছে লাইফে এত কোনদিন হাসেনি।আমি শুনেও না শুনার ভান করে চলে আসলাম।কে কি বললো সেসব নিয়ে আমি মাথা ঘামায় না।অবশ্য আমার মাথা ঘামানো সাঁজেও না।ভার্সিটিতে আমার মত এমন একটা ছেলে খুজে পাওয়া যাবেনা যে আমার মত ঢিলেঢালা পোশাক পড়ে আসে।মাথা ভর্তি তেল দিয়ে আসে।এরকম পোশাক পড়ার জন্য ভার্সিটিতে ক্ষেত উপাধিটা পেয়েছি।ভার্সিটিতে আমার তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই।শুধু একজন আছে।অবনী।হ্যাঁ মেয়েটার নাম অবনী।অবনী আমার ক্লাসমেট +বেষ্ট ফ্রেন্ড।তবে আমি মনে মনে ফ্রেন্ডের থেকেও বেশি কিছু ভাবি।অবনী ভাবেনা হয়তো।কারণ আমার মত ক্ষেত মার্কা ছেলেকে আর যাইহোক ভালোবাসা যায়না।আমি হুসাইন।অনার্স শেষ বর্ষের ছাএ।অবনীও সেম ইয়ার।
অবনী:-এতক্ষণে মহারাজার আসার সময় হলো।
অবনীর পাশে বসতে বসতে আমি বললাম
:-আর বলিস না।রাস্তায় যে জ্যাম তাতে আসতে পারতাম কিনা তাতেই সন্দেহ।
:-তা পারবি কেনো। তোকে বলি ৩০মিনিট আগে বের হবি তাহলে ঠিক টাইমে চলে আসতে পারবি কিন্তু তা না করে তুই দেরী করে বের হবি।
:-কই দেরী করে আসলাম?ক্লাস শুরু হতে এখনো ১০মিনিট বাকি।
:-তাহলে আর ১০মিনিট পরেই আসতি।
:-তাইতো দেখছি।আগে এসেই ভুল হয়েছে।
আমার কথা শুনে অবনী কপালে ভাজ ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে চোখ গরম করে।এতক্ষণে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম আজ অবনী অনেক সেঁজেছে।অবনী বলেছিলো ওর যখন মনটা খুব ভালো থাকে তখনি ও সাঁজে।তার মানে আজ অবনীর মন ভালো।আজই যা করার করতে হবে।আমার মনের কথা আজই বলে দিবো অবনীকে।প্রায় ৪টি বছর ধরে বলার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।
আমি:-অবনী তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
অবনী:-বলে ফেল।
:-অবনী আমি তোকে—–
পরের কথাগুলো বলার সুযোগ পেলাম না।তার আগেই অবনী ওঠে চলে গেলো।একটু দুরে একটা কার এসে দাঁড়িয়েছে।অবনী সেখানেই ছুটে গেলো।আমি বসে থেকেই দেখছি সবকিছু।কারের ভেতর থেকে একটা ছেলে বের হলো।দেখে মনে হয় আমার সমবয়সী।তবে দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম।মনে হচ্ছে রুপকথার রাজ্য থেকে রাজকুমার নেমে এসেছে।ছেলেটি আর অবনী মোলকাত করলো।আমি এর আগে কখনো এই ছেলেটিকে দেখিনি কিংবা অবনী বলেও নি।অবনী আর ছেলেটিটি আমার কাছে আসলো। আমি ওদের আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।
:-হুসাইন এ হলো রুমান।আর রুমান এ হলো হুসাইন।
আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললো অবনী।আমি ভদ্রতার খাতিরে হাত বাড়িয়ে দিলাম।রুমানও বাড়িয়ে দিলো ওর হাত।
রুমান:-আপনার কথা অবনীর মুখে অনেক শুনেছি।অবনী আপনার কথা এত বলতো যে শুনতে শুনতে আমার কানই ব্যথা হয়ে যেতো।
এই কথাগুলোর কী উওর দেওয়া উচিত আমি জানিনা শুধু প্রতিউওরে হাসলাম।
রুমান:-আমাদের বিয়েতে আপনাকে কিন্তু থাকতেই হবে।
আমি:-আপনাদের বিয়ে মানে?
:-অবনী তুমি বলোনি কিছু?
অবনী:-না।যেদিন তুমি আসবে সেদিন সারপ্রাইজ দেবো বলে রেখে দিয়েছি।
:-ভালোই করেছো।আপনাকে সব দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের বিয়ের।কি নিবেনতো?
কি উওর দিবো আমি?কি বলা উচিত আমার?অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়েছি আমি।ভদ্রতার খাতিয়ে বললাম।
:-অব্যশই নিবো।
কোনরকমে চোখের জল আটকে রাখলাম।
রুমান:-চলুন আজ অনেক ঘুরবো আমরা।
অবনী:-চল অনেক মজা করবো সবাই মিলে।
রুমান:-ও আমার পরিচয়ইতো দেওয়া হলোনা।আমি রুমান রহমান।এমেরিকা থেকে ইন্জিয়ারিং শেষ করে আজই দেশে ফিরলাম।
:-আমি হুসাইন।আর বাকিটা নিশ্চয় আপনার জানা।
:-তা জানি।
:-অবনী একটু এদিকে আয়।
আমি অবনীকে ডেকে নিয়ে একটু দুরে আসলাম
আমি:-আমাকেতো কখনো বলিস না রুমানের কথা?
অবনী:-সময় পায়নি।মাএ ৪মাসের রিলেশন।ভেবেছিলাম তোকে পরে জানালেই চলবে।আব্বু আম্মুকে বলার পরে তারা রুমানের ব্যাপারে খোজখবর নিয়ে আমাদের বিয়েটা ঠিক করেছে।
:-এতকিছু হয়ে গেলো আর আমাকে জানালিনা।
:-সরিরে।
:-রিলেশনশিপ কিভাবে?
:-ফেসবুক থেকে।
:-ভালো।
:-চলে রুমান অপেক্ষা করছে।
:-তোরা যা।আমার কাজ আছে।
:-তোকে যেতে হবে আমাদের সাথে।আজই প্রথম ওর সাথে দেখা।অনেক আনইজি লাগছে।তুই থাকলে ভালো হবে।
:-নারে।আমার এক আত্নীয় খুব অসুস্থ।তাকে দেখতে যাবো।
:-কোন আত্নীয়?
:-তুই চিনবি না।
:-তাহলে আর কি।
অবনী আর রুমানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।আসার আগে একবার অবনীর দিকে তাকালাম।অবনী আর রুমানকে খুব মানিয়েছে।আমার মত ক্ষেতমার্কা ছেলেকে অবনীর পাশে মানায় না।অনেক কষ্ট হচ্ছে।চারপাশ কেমন জানি অন্ধকার হয়ে আসছে।এই শীতের দিনেও আমি ঘামছি।প্রচন্ড পরিমানে ঘামছি।চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।আমার দিকে বাসের লোকজন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অবশ্য তাকিয়ে থাকার কথাই।একটা মানুষ চলন্ত বাসে কাঁদছে অব্যশই কিছু একটা ঘটেছে।দু একজন জিঙ্গেসও করেছে কি হয়েছে বাট আমি কোনো উওর দিইনি।
রুমে এসে টেবিলের উপর ব্যাগটা রেখে শুয়ে পড়লাম।খুব কান্না পাচ্ছে।মনের ভিতরে বড় একটা শুন্যতা তৈরী হয়েছে। সেই শুন্যতা মনের মধ্যে চাপা কষ্ট তৈরী করছে।বালিশে মুখ চেপে কান্না করছি আমি।আমার রুমমেট মেসে নেই।সে ভার্সিটিতে গিয়েছে।প্রিয় মানুষগুলো হারিয়ে গেলে কতটা কষ্ট হয় আজ বুঝছি।আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো ফোন কল।ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু ফোন করেছে।চোখের পানি মুছে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে ফোন ধরলাম।
আমি:-আম্মু কেমন আছো?
:-আমি নিরব।তোর বাবা খুব অসুস্থ তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।
:-কী হয়েছে আব্বুর?
:-বাসায় আসলেই দেখতে পাবি।
ওপাশ থেকে ফোন কল কেটে গেলো।নিরব আমার চাচাতো ভাই।আমি তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নিলাম।আব্বুর কী হয়েছে সেটা আমি জানিনা।গতরাতে যখন আব্বুর সাথে কথা বললাম তখন ঠিকই ছিলো।হঠাৎ কী হলো সেটা আমার মাথায় ঢুকছেনা।অনেক টেনশন মাথায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
বাসায় আসতে আসতে ৩ঘন্টা লেগে গেলো।বাসায় এসে দেখি আব্বু বিছানায় শুয়ে আছে।হাতে স্যালাইন দিয়ে রেখেছে।আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন।আমি আব্বুর কাছে গিয়ে বসলাম
আব্বু:-শরীলের এ কী অবস্থা করেছিস?ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস না?
আমি:-কই আমিতো ঠিকই আছি।তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো।স্যালাইন নেওয়ার সময় এত কথা বলতে হয়না।
কিছুক্ষণ আব্বুর পাশে বসে রইলাম।আমি যতটা ভেবেছিলাম ততটা অসুস্থ না আব্বু।সকালে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলো।
রাতে শুয়ে শুয়ে অবনীর কথা ভাবছিলাম এমন সময় অবনীর নম্বর থেকে ফোন আসলো
অবনী:-কইরে তুই?সারাদিন কোনো খোজখবর নাই।
আমি:-বাসায় আসছি।
:-হঠাৎ বাসায় কেনো?
:-আব্বু অসুস্থ তাই।
:-আমাকে আগে বলবিনা।এখনতো রাত নাহলে এখনি যেতাম।সকালে যাবো।রুমানকে বললো নিয়ে যেতে।
:-তোর আসা লাগবেনা।আব্বু ভালো আছে।
:-তুই না বললেও যাবো।
:-বলছিনা তোকে আসতে হবেনা।আমাদের এখানে এসে সময় নষ্ট না করে তোর হবু বরকে সময় না।
:-এভাবে কথা বলছিস কেনো?
:-কিভাবে কথা বললাম?
:-না কিছুনা।
:-কিছু বলার থাকলে বল নাহলে ফোন রাখ।
:-বিরক্ত হচ্ছিস?ঠিক আছে আর বিরক্ত করবোনা কখনো।
আমি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম।কন্ঠটা ভারি হয়ে আসছিলো।আমি চাইনা অবনী বুঝোক আমি ওর প্রতি দুর্বল।আমার মত গরীব ঘরের ছেলের জন্য ও না।অবনী পাশে একজন রাজকুমারকে মানায়,আমার মত ক্ষ্যাতমার্কা ছেলেকে না।ফোনটা আবার বেজে ওঠলো।ফোন স্কিনে তাকিয়ে দেখি আবার অবনী ফোন দিয়েছে।
আমি:-আবার ফোন দিলি কেনো?
অবনী:-আমি কি ফোন দিতে পারিনা?
:-না পারিস না।খুব দরকার ছাড়া আমাকে ফোন দিবিনা।
:-তুই অনেক পাল্টে গেছিস।
:-মানুষ সবসময় একরকম থাকেনা।
:-তোর কী হয়েছে বলবি আমাকে?
:-কিছু হয়নি।ফোন রাখ আমি ঘুমাবো।
:-আগে আমার প্রশ্নের উওর দে তারপর রাখবো।
:-বললামতো কিছু হয়নি।ফোন রাখ
:-রাখবোনা।আগে বল কী হয়েছে তোর।
:-আমার ঘুম ধরেছে। রাখছি।বাই
অবনীকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। প্রচন্ড পরিমানে রাগ হচ্ছে।একটা মানুষের সাথে ৪টি বছর ধরে আছে আর তার মনের কথা বুঝতে পারেনা।সারারাত অনেক কান্না করলাম।
সকালে আম্মু ঘুম থেকে ডেকে বললো একটা কাজে ছোট মামার বাসায় যেতে হবে।আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রওনা দিলাম।
বিকেলবেলা বাসায় ফিরলাম।বাসায় আসতেই ছোট ভাই বললো
:-ভাইয়া তোমার বান্ধবী এসেছিলো।
:-কেনো?
:-আম্মু জানে আমি জানিনা।
আমি আম্মুর কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলাম অবনী এসেছিলো।অবনী এর আগেও একবার আমাদের বাসায় এসেছিলো তাই সবাই চেনে ওকে।
আম্মু:-অবনী আর একটা পোলা আসছিলো।
:-কেনো?
:-বিয়ের কার্ড দিতে।
:-ও।
আম্মু কাছ থেকে কার্ড নিয়ে তারিখটা দেখে নিলাম।বিয়ের এখনো ৪দিন বাকি আছে।আম্মুর কাছ থেকে শুনলাম আমাকে আজই নাকি যেতে বলেছে।আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম অবনীর বিয়ের পর একবারে ঢাকা যাবো। আমি অবনীর বিয়ে নিজের চোখে দেখতে পারবো না।
রাতে বসে বসে ফোনে গেমস খেলছিলাম এমন সময় অবনীর ফোন।আমি জানতাম ও ফোন দিবে।ভেবেছিলাম আরো আগে ফোন দিবে।
আমি:-হ্যা বল।
অবনী:-কইরে তুই?তোর আজ আসার কথা ছিলো আসলিনা কেনো?
:-সময় পাইনি তাই।
:-তোর এত কিসের কাজ?
:-আছে।
:-আমি কিছু জানিনা,সকালে ১০মধ্যে আমাদের বাসায় চলে আসবি নয়তো তোর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ শেষ।আর আঙ্কেল আন্টিকে বিয়ের আগের দিন আসতে বলবি।
:-আমি যেতে পারবোনা।আমার কাজ আছে।আব্বু আম্মুরা সবাই যাবে।
:-তোর কাজে গুষ্টি কিলাই।তুই কালকেই আসবি নয়তো তোর সাথে আর কোনদিন কথা বলবোনা আমি।
:-সকাল হোক তারপর দেখা যাবে।
:-তুই এমন করছিস কেনো আমার সাথে?
:-আমি আবার কি করলাম?
:-কী করলি বুঝিস নাই তুই?আজ দুইটা দিন আমাকে ইগনোর করছিস।সারাদিনে কম করে হলেও আমাকে ১০বার ফোন করতি অথচ এই ২দিনে একবারো ফোন করিস নি।কী হয়েছে তোর?
আমি চুপ করে রইলাম।অবনীর কথাগুলো সত্যি।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে অবনী আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবলোলো নারে।খুব ভালোবাসি তোকে।কিন্তু চাইলেই আমরা সব সময় সব কথা বলতে পারিনা।
:-চুপ করে আছিস কেনো?
:-আম্মু ডাকছে পরে কথা বলবো।
অবনীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।আজ দুদিন কী হয়েছে বুঝতে পারছিনা,অবনীর সাথে কথা বলতে গেলেই গলাটা ভারি হয়ে আসছে।নিজেকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছি অবনী আমার জন্য না তবুও এই মনটা কিছুতেই মানছেনা।অবনী হলো রাজকন্যা, ওকে একজন রাজকুমারের সাথেই মানায়।আমিতো মি.ক্ষ্যাত।আমার মত ক্ষ্যাতমার্কা ছেলেকে অবনীর সাথে মানায় না।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার অবনীর নম্বর থেকে ফোন আসলো।রিচিভ করার সাহস হচ্ছেনা। আমি জানি ফোন রিচিভ করলে অবনী অনেক প্রশ্ন করবে যার উওর দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।আজ নিজেকে বড্ড অযোগ্য মানুষ। মনে হচ্ছে।কেনো যে আমি বড়লোক ঘরে জন্ন নিলাম না।আজ যদি ভালো ঘরের সন্তান হতান তাহলে অবনীকে হারাতে হতোনা।
একের পর এক ফোন কল এসেই যাচ্ছে।যত সময় ফোন না ধরবো তত সময় ফোন দিতেই থাকবে তাই ফেনটা অফ করে রাখলাম।আমি চাইনা অবনী বুঝোক ওর প্রতি আমি দুর্বল।রাতে অনেক কান্না করলাম।কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই।
সকালে দরজায় ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮টার একটু বেশি বাজে।বিছানা ছেড়ে ওঠে দরজা খুললাম।দরজা খুলতেই আমার গালে ঠাস করে কেউ ১টা থাপ্পর মারলো।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরেকটা থাপ্পর পড়লো আমার গালে।অবনীকে এত সকালে আমার সামনে দেখবো ভাবিনি।
অবনী:-এই কুওা তোকে আমি কতবার ফোন দিয়েছি?ফোন ধরিসনি ভালো কথা কিন্তু ফোন অফ করেছিস কেনো?
আমি:-আমার ফোন আমি অফ করবো তাতে কার কি।
:-আরেকটা কথা বললে থাপ্পর দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো।এখনি রেডি হ।আমার সাথে করে তোকে নিয়ে যাবো।
:-আমার কাজ আছে,আমি যেতে পারবোনা।
:-তোর কোনো কাজ করতে হবেনা।তুই এখনি আমার সাথে যাবি।
:-বললাম না আমার কাজ আছে।
:-ঠিক আছে কর তুই তোর কাজ।মনে রাখিস তুই না গেলে আমার মরা মুখ দেখবি।
:-এখানে মরার কথা আসছে কেনো?
:-আমি কী করতে পারি সেটা তুই ভালো করেই জানিস।বাকিটা তোর ইচ্ছে।
:-ঠিক আছে তুই বস আমি রেডি হচ্ছি।
নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে যেতে হচ্ছে।আমি না গেলে অবনী নিজের ক্ষতি করতে এটা আমি শিউর।ও যা বলে তাই করে।
আমি রেডি হয়ে নিলাম।আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অবনীর সাথে রওনা হলাম।অবনী ওদের কার নিয়ে এসেছে।ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আমি আর অবনী পিছনের সিটে বসে আছি।অবনী কিছু বলছেনা আমিও বলছিনা।দুজনেই চুপ করে আছি।অবনীদের বাসা আসা পর্যন্ত কেউ কথা বলিনি।
অবনীদের বাসাটা খুব সুন্দর করে সাঁজানো হয়েছে।এই বাড়ির একমাএ মেয়ের বিয়ে বলে কথা।বিয়ের এখনো ৩দিন বাকি।এরই মধ্যে অনেকেই চলে এসেছে।যারা এসেছে তারা সম্ভবত অবনীদের কাছের আত্মীয়স্বজন।আমার সাথে ঘোরার মত এই বাসাতে কেউ নেই সম্ভবত। একা একা রুমে বসে ফেবু চালাচ্ছি।এখানে আসার পর অবনীর দেখা পাচ্ছিনা।সম্ভবত বিজি আছে।
২দিন পর
আজকের রাতটা পার হলেই অবনী অন্যকারো ঘরের বউ হয়ে যাবে।এই কয়দিন অবনীর সাথে অনেক কেনাকাটা করেছি।অবনীর সব দায়িত্ব আমার উপর দিয়ে দিয়েছে ওর বাসার লোকজন।বুকে কষ্ট চেপে সব কাজ করছি আমি।ঘড়ির কাটায় ১টা বেজে ৪৫ মিনিট।বিয়ে বাড়ি হলেও এতক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে।শুধুমাএ আমার চোখে ঘুম নেই।ঘুম থাকবেই কী করে ঘুমটাতো অবনী কেড়ে নিয়েছে।অবনী আমার সামনে অন্যকারো হয়ে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারছিনা।
সারারাত ঘুম হলোনা।খুব ভোরে একটা কাগজে চিঠি লিখলাম।আমি এখান থেকে চলে যাবো।অবনীর বিয়ে চোখের সামনে দেখতে পারবোনা।
প্রিয় অবনী
প্রথমেই নতুন জীবনের শুভেচ্ছা জানাই।দোয়া করি তোদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক।তোকে আজ কিছু কথা না বলে পারছিনা। ৪টি বছর ধরে এই কথাটা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।তোকে আকার ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছি অনেক কিন্তু তুই বুঝিস নি।জানিস ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা যখন আমাকে ক্ষেত বলতো তখন খুব খারাপ লাগতো কিন্তু পরোক্ষণেই তোর কথা মনে পড়লে মনটা ভালো হয়ে যেতো।আমি জানিনা তুই কখনো আমাকে ফ্রেন্ডের থেকে বেশি কিছু ভেবেছিস কিনা কিন্তু আমি ভেবেছি।তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম।মাঝখানে রুমান এসে সব এলোমেলো করে দিলো।হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।জানি আমার ভালোবাসা আজ মূল্যহীন।অবশ্য আমার মত ক্ষ্যাতমার্কা ছেলের জন্য ভালোবাসা না।আর যেখানে তোর মত পরী আছে সেখানেতো আমার চান্সই নেই।রুমান আর তোকে খুব ভালো মানাবে।আর মাএ কয়েক ঘন্টা পরেই তুই অন্যকারো জীবন সঙ্গী হয়ে যাবি।দোয়া করি সুখি হ।আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি চলে যাচ্ছি।জানিনা তোর সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা।ভালো থাকিস।অনেককিছু বলার কিন্তু বলা হলোনা।আর কিছুক্ষণ পরে ভোর হয়ে যাবে।সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠলে আমি যেতে পারবোনা।তাই সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই চলে যাচ্ছি।
ইতি
মি.ক্ষ্যাত
চিঠিটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম।তারপর আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসলাম।রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।এখনো ভোরের আলো ভালোভাবে ফোটেনি।লোকজনের চলাচল খুব কম।মাঝে মধ্যে দুএকজনকে দেখা যাচ্ছে।সম্ভবত তারা নামাজে যাচ্ছে।আমি হাঁটছি।গন্তব্য কোথায় জানিনা।বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা।হাঁটতে হাঁটতে ট্রেন স্টেশনে চলে আসলাম।সকালের ট্রেন এখনো অনেক দেরী।ভাবছি বাসায় যাবোনা।কয়েকদিনের জন্য দুরে লুকিয়ে থাকবো।নানুদের বাসায় যাওয়া যায়।ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন যাওয়া হয়না।আজ না জানিয়ে গিয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো।ট্রেন স্টেশন থেকে আবার হাঁটা শুরু করলাম।এবার উদ্দেশ্য বাস স্টপ।আমার নানুদের বাসায় যেতে হলে বাসে করেই যেতে হতে।
বাস স্টপে আসতে আসতে অনেকটা সকাল হয়ে গেলো।অনেকটা পথে হেঁটেছি।তা ৩থেকে ৪ কিলোমিটারতো হবেই।অনেক ক্লান্ত লাগছে। একটা বেন্চের উপর বসে পড়লাম।
৮টার সময় বাস আসলো।বাসে ওঠে পড়লাম।এখন গন্তব্য নানু বাড়ি।বাসে ওঠেই সিট পেয়েছি।সকাল সকাল বাসগুলোতে একটু ভিড় কম থাকে।সবথেকে ভালো লাগছে জানালার কাছে সিট পাওয়াতে।
বাসের জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছি।মাঝে মাঝে খোলা মাঠ মাঝে মাঝে বাড়ি আবার কোথাও কোথাও ছোট বিল,সেই বিলে ফুটে আছে সাদা শাপলা।অবনীর শাপলা ফুল খুব প্রিয়ে ছিলো।অবনী বলতো শাপলা ফুলেন ঘ্রেন নিলে নাকি মনটা ফ্রেশ হয়ে যায়।খুব ইচ্ছে আছে একদিন অবনীর কথা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখবো।
“”অবনী বাসের জানালার পাশে বসে আছে।আমি ওর পাশে বসে আছি। বাইরে থেকে বাতাস এসে অবনীর চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে।অবনী ওর অবাধ্য চুলগুলোকে বারবার কানে গুজে দিচ্ছে কিন্তু থাকছেনা।আমি এসব থেকে মিটমিট করে হাসছি।অবনী আমাকে হাসতে দেখে রাগী লুক নিয়ে বললো
:-চুপ করো নয়তো মুখে জ্যান্ত টিকটিকি ছেড়ে দিবো।
আমি অবনীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।আমাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে অবনী ফিক করে হেসে ওঠলো।মাতাল করা সেই হাসি।আমি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অবনীর দিকে””””
ভাইয়া টিকিট দেন।
কারো ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।হুস ফিরতেই আমার পাশে অবনীকে খুজতে লাগলাম।কিন্তু পেলাম না।পকেট থেকে টিকিট বের করে হেলপারের হাতে ধরিয়ে দিলাম।এখন ইচ্ছে করছে বাস হেল্পারের নাক ফাটিয়ে দিতে।আমার এত সুন্দর স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো।
বাসের হেলপারের মত আমার পকেটে থাকা ফোনটাও চিল্লানি শুরু করেছে।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি অবনী ফোন দিয়েছে।আমি ফোন কেটে অফ করে রাখলাম।অবনীর সাথে আমি আর কোনদিন কথা বলতে চাইনা।যত বেশি কথা বলবো ততবেশি কষ্ট বাড়তে থাকবে।
জ্যামের কারণে নানু বাড়িতে আসতে আসতে ১ঘন্টার জায়গায় দের ঘন্টা লেগে গেলো।আমার সবথেকে বিরক্তিকর লাগে জ্যামে বসে থাকা।
নানি, নানি,মামা,মামি সবাই আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।অনেকদিন পর আসলাম নানু বাড়িতে।তাও প্রায় ৮থেকে ৯মাসতো হবেই।আগে কয়েকদিন পর পরই আসতাম।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাই আসা হয়না।
বাসে ওঠেই সিট পেয়েছি।সকাল সকাল বাসগুলোতে একটু ভিড় কম থাকে।সবথেকে ভালো লাগছে জানালার কাছে সিট পাওয়াতে।
বাসের জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখছি।মাঝে মাঝে খোলা মাঠ মাঝে মাঝে বাড়ি আবার কোথাও কোথাও ছোট বিল,সেই বিলে ফুটে আছে সাদা শাপলা।অবনীর শাপলা ফুল খুব প্রিয়ে ছিলো।অবনী বলতো শাপলা ফুলেন ঘ্রেন নিলে নাকি মনটা ফ্রেশ হয়ে যায়।খুব ইচ্ছে আছে একদিন অবনীর কথা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখবো।
“”অবনী বাসের জানালার পাশে বসে আছে।আমি ওর পাশে বসে আছি। বাইরে থেকে বাতাস এসে অবনীর চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে।অবনী ওর অবাধ্য চুলগুলোকে বারবার কানে গুজে দিচ্ছে কিন্তু থাকছেনা।আমি এসব থেকে মিটমিট করে হাসছি।অবনী আমাকে হাসতে দেখে রাগী লুক নিয়ে বললো
:-চুপ করো নয়তো মুখে জ্যান্ত টিকটিকি ছেড়ে দিবো।
আমি অবনীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।আমাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে অবনী ফিক করে হেসে ওঠলো।মাতাল করা সেই হাসি।আমি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি অবনীর দিকে””””
ভাইয়া টিকিট দেন।
কারো ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।হুস ফিরতেই আমার পাশে অবনীকে খুজতে লাগলাম।কিন্তু পেলাম না।পকেট থেকে টিকিট বের করে হেলপারের হাতে ধরিয়ে দিলাম।এখন ইচ্ছে করছে বাস হেল্পারের নাক ফাটিয়ে দিতে।আমার এত সুন্দর স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো।
বাসের হেলপারের মত আমার পকেটে থাকা ফোনটাও চিল্লানি শুরু করেছে।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি অবনী ফোন দিয়েছে।আমি ফোন কেটে অফ করে রাখলাম।অবনীর সাথে আমি আর কোনদিন কথা বলতে চাইনা।যত বেশি কথা বলবো ততবেশি কষ্ট বাড়তে থাকবে।
জ্যামের কারণে নানু বাড়িতে আসতে আসতে ১ঘন্টার জায়গায় দের ঘন্টা লেগে গেলো।আমার সবথেকে বিরক্তিকর লাগে জ্যামে বসে থাকা।
নানি, নানি,মামা,মামি সবাই আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।অনেকদিন পর আসলাম নানু বাড়িতে।তাও প্রায় ৮থেকে ৯মাসতো হবেই।আগে কয়েকদিন পর পরই আসতাম।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাই আসা হয়না।
নানু:-আসার আগে একবার ফোন করতি!
আমি:-ফোন না করে এসেছি বলে কী থাকতে দিবেনা?
:-আমি কী সেটা বলেছি নাকি।এই বাড়িতে তোর সম্পুর্ণ অধিকার আছে থাকার।ফোন করে আসলে বাজার করে আনতে পারতাম।
:-লাগবেনা বাজার করা।তোমরা যা খাও আমি তাই খাবো।খুব ক্ষুদা লাগছে নানিকে বলো খেতে দিতে।
:-কইগো হুসাইনকে ক্ষেতে দাও।নাতি আমার না খেতে খেতে একদম শুকিয়ে গেছে।যা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।
:-আচ্ছা।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলাম।খুব ক্ষুদা লেগেছে।
খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিলাম।খুব ক্লান্ত লাগছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বাজে।এতক্ষণে নিশ্চয় আমার চিঠিটা অবনী পড়ে ফেলেছে।চিঠিটা পড়ার পর আমার উপর ওর মনপ ঘৃনা জন্নাবে এটা ঠিক কারণ ওর বিয়ের দিন আমি এমন একটা কান্ড করলাম।ভালোই হয়েছে,অনন্ত অবনী আমার সাথে আর কথা বলবেনা।এতক্ষণে বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ।কিছুক্ষণ পরেই বরের গাড়ি এসে অবনীকে নিয়ে যাবে তার নতুন জীবনে।আমি আসলেই একটা ক্ষ্যাত।নিজের ভালোবাসার মানুষকে আটকে রাখতে পারলাম না।
বাসায় একবার ফোন দেওয়া উচিত।পকেট থেকে ফোন বের করে অন করলাম।ফোন অন করে বাসায় ফোন দিলাম।
আমি:-হ্যালো আম্মু কেমন আছো?
আম্মু:-তুই কোথারে?
:-কেনো?
:-অবনী তোকে খুজছে।সকাল থেকে নাকি তোকে দেখছেনা।
ও শিট!আম্মুরা অবনীদের বাসায় সেটাতো খেয়ালই ছিলোনা।
:-আমি পরে ফোন দিচ্ছি।
:-শোন শোন
আম্মুর কথা না শুনে ফোন কেটে দিলাম।আবার ফোন অফ করো রাখলাম।
ফোন রাখার পর মামাতো ভাই রুমে আসলো।মামাতো ভাই আমার থেকে একটু ছোট।
আমি:-কিরে কেমন আছিস?
নিরব:-ভালো তুমি?
:-ভালো।ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস না নাকি?
:-করিতো।
:-তাহলে দিনে দিনে এমন টেলিছামাদ হয়ে যাচ্ছিস কেনো?
:-আমি কেমনে বলবো।আমিতো ঠিকই খাওয়া দাওয়া করি।
:-ভালো।তা দিনকাল কেমন কাটছে?
:-ভালো।চলো ক্রিকেট খেলতে যায়।
রুমে একা একা বসে থাকলে মন খারাপ হবে তাই যায় খেলতে তাই ভালো হবে।
:-চল।
খেলাধুলা শেষে ২টার সময় বাসায় ফিরলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম।খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।খুব ক্লান্ত লাগছে।নিজেকে সবসময় যেকোন কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে তাহলে অবনীকে কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে থাকা যাবে।সবথেকে কষ্ট তখনি হয় যখন হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কথা মন পড়ে।অবনীর সাথে কাটনো প্রতিটা মুহুর্ত আমার অন্তরে গাঁথা।জীবনের প্রথম ভালোবাসা নাকি কখনো ভুলে থাকা যায়না। যদি এমনটা হয় তাহলে সারাজীবন অবনীর স্মৃতিগুলো আমাকে কাঁদাবে।নিজেকে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে।বাস্তবতা আমাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে যেখানে আছে শুধু কষ্ট।প্রিয় মানুষের শুন্যতা খুব খারাপ জিনিস।একজনের শুন্যতা আরেকজন কখনো পুরণ করতে পারেনা।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছি।
কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।চোখ মেলে তাকাতেই ভুত দেখার মত চমকে ওঠলাম।বিয়ের সাঁজে বসে আছে একটি পরী।মনে হয় ভুল করে মাটিতে নেমে এসেছে।আচ্ছা তবে কী পরীদেরও মানুষের মত বিয়ে হয়?হয়তো হয় নাহলে এই পরী আসলো কোথা থেকে।আমার মনে হচ্ছে আমি এি মুহুর্তে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছি ঘুম ভাঙ্গলেই সব শেষ।নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটলাম।না আমি বাস্তবেই আছি।আমি ভালো করে খেয়াল করলাম আসলে এটা পরী নাকি মানুষ।
অবনী!!!
অবনীকে বিয়ের সাঁজে আমি প্রথমে চিনতেই পারিনি।কিন্তু অবনী এখানে কিভাবে?না না আমি স্বপ্নের জগতে আছি।অবনী জানলো কিভাবে আমি এখানে?আর যদি জেনেও থাকে তাহলে এই বাসা চিনলো কিভাবে?সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত লাগছে।আমি বিছানা ওঠে বসলাম।
আমি কিছু বলার আগেই অবনী আমার হাত ধরে খাট থেকে নামিয়ে আনলো।এরপর আমার কলার ধরে ওর খুব কাছে টেনে নিয়ে বললো
:-তোকে আমি খুন করে ফেলবো আজ।(অবনী)
:-আপনি এখানে কেনো এসেছেন?(আমি)
:-কি বললি তুই?আমি আপনি?অবনী আমার কলার ছেড়ে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর মারলো।এ মেয়ে নাকি অন্যকিছু?মেয়েদের হাত এত শক্ত হয় কিভাবে। মনে হচ্ছে সবগুলো দাঁত পড়ে গেছে।
:-তোকে আমি যে কী করবো ভেবে পাচ্ছিনা।
অবনী কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে মাথা রাখলো।
:-কী করছেন এসব।কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।(আমি)
:-ভাবলে ভাবুক তাতে আমার কী?(অবনী)
:-এবার বলুন আপনি এখানে কেনো এসেছেন?
:-আমার বর যেখানে থাকবে আমিওতো সেখানে থাকবো তাইনা।
:-বুঝলাম না।
:-গাধা একটা তুমি।ভালোবাসো এতদিন বলোনি কেনো?
:-আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।আপনি ফিরে যান।আজ আপনার বিয়ে।
:-ওই একদম চুপ থাক।আর একটা কথা বলবিনা।তুই নিজেকে কী ভাবিস হু?তোকে আমি খুন করে ফেলবো তারপর নিজেকে শেষ করবো।যেদিন থেকে তুই আমাকে অবহেলা শুরু করেছিস সেদিন থেকে আমি একটু একটু করে বুঝতে পেরেছি তুই আমার মনে কতটা জায়গা জুরে আছিস।রুমানের ৪মাসের ভালোবাসার আমাদের ৪ বছরের ফ্রেন্ডশিপের কাছে কিছুই না।তোকে আমার সবথেকে বেশি দরকার।সকালে তোর চিঠিটা আম্মু প্রথমে দেখে।তারপর সেটা আব্বুকে দেয়।আব্বু আমাকে ডেকে তার রুমে নিয়ে যায়।আমাকে বুঝিয়ে বলে সবকিছু।আমাকে তোর চিঠিটা দিয়ে বলে যা করবি ভেবে করিস।এখনো সময় আছে।আমি আমার আব্বুকে খুব কঠিন মনের মানুষ বলে জানতাম।কিন্তু তোর চিঠিটা দেখার পর আমাকে এমন কিছু বলবে আমি কল্পনাতেও ভাবিনি।আমি চিঠিটা নিয়ে নিজের রুমে এসে অনেক ভাবি কী করবো।নিজের মনকে প্রশ্ন করি।মনের মধ্যে থেকে একটাই উওর আসে তোকে ছাড়া আমার চলবেনা।একমাএ তুই আমার মনের কথা বুঝতে পারিস।আমার কখন কী দরকার আমি বলার আগেই তুই বুঝে যাস।সবকিছু বুঝার পর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি।তোর আম্মুকে জিঙ্গেস করি তুই কোথায়।তোর আম্মু বলতে পারেনা।তোর মেসে যায়।সেখানেও পাইনা তোকে।তোর সব ফ্রেন্ডের কাছে জিঙ্গেস করি।কেউ তোর খোজখবর দিতে পারেনা।এরপর তোর আব্বু তোর নানুর নম্বরে ফোন দেয়।তোর নানু বলে তুই এখানে।আমি শুনার পর একটুও দেরী করিনি।ছুটে এসেছি তোর কাছে।
:-আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
:-কী?
:-যা বলেছি তাই।বিয়ের আগেই এত থাপ্পর যেই মেয়ে মারতে পারে নাজানি বিয়ের পর কী করবে।
:-হি হি হি হি।মারবো তারপর আদর করবো।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি অবনীর দিকে।চোখে পানি আর মুখে হাসি।অদ্ভুদ মেয়ে।একটু আগে যেই মেয়ে কাঁদছিলো সেই এখন হাসছে।
:-অবনী?(আমি)
:-হু।(অবনী)
:-একটা কথা বলবো?
:-হু
:-আজ থেকে সবাই তোকে মি.ক্ষ্যাতর বউ বলে ডাকবে। হি হি হি
:-যে ডাকবে তাকে খুন করে ফেলবো।
:-মি.ক্ষ্যাতর বউ তুই।হি হি হি
অবনী আমার কথা শুনে গলা চেপে ধরলো।আবার ছেড়েও দিলো।
:-তোকে মারা যাবেনা। তোকে মারলে আমারি কষ্টট হবে। (অবনী)
:-তাই বুঝি?(আমি)
:-আর আজ থেকে তুমি করে বলবে।
:-না বলবোনা।
:-কী বললি তুই?(চোক রাঙিয়ে)
:-কিছুনা কিছুনা।তুমি করে বলবো।
:-গুড বয়।এখন চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
:-না যাবোনা।
:-কেনো?
:-আমাকে মারলে সেটার শোধ তুলবো তারপর যাবো।
:-কিভাবে শোধ নিবে?
আমি অবনীর কোমড় ধরে কাছে টেনে নিলাম।অবনীর ঠোট কাঁপছে।
:-এইভাবে।
:-ওই একদম দুষ্টুমি করবেনা।
:-১০০বার করবো।
:-না।তোমার পিছনে নানি।
আমি নানির কথা শুনে অবনীকে ছেড়ে দিলাম।আমি ছেড়ে দিতেই অবনী বাইরে দৌঁড় দিলো।আমিও ছুটলাম ওর পিছু।বাইরে আসতেই দেখি নানা,নানি,মামা, মামি সবাই দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।অবনী নানির পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
:-কিরে বিয়ে কী একা একা করতে চেয়েছিলি?(নানু)
:-হ্যাঁ নানু।তোমাদের না বলেই বিয়ে করতে চেয়েছিলে।(অবনী)
:-তাইতো দেখছি।আমাকে না জানানোর জন্য শাস্তি পেতে হবে।(মামি)
:-ঠিকই বলেছেন মামি।বেশি করে শাস্তি দেন।(অবনী)
:-তোমরা সবাই ঝগড়া করবে নাকি রওনা হবে।(নানি)
:-ও তাইতো।সবাই রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি।(নানু)
আমি মনে মনে বললাম অবনী আমাকে সবার সামনে পচালে রাতে সব শোধ তুলবো।
যে যার রুমে চলে গেলো রেডি হতে।আমিও রুমে চলে আসলাম।সবকিছু গুছিয়ে নিলাম।
নতুন কিছু শুরুর অপেক্ষায় মনটা নাচছে।অবশেষে মি.ক্ষ্যাতর একজন মিসেস.ক্ষ্যাত হতে যাচ্ছে।
আপনারা চাইলে বিয়েতে চলে আসতে পারেন।
………………………………………………সনাপ্ত………………………………………