শীতের সকাল।।
ছাদে বসে রোদ এর আলোর সন্ধান করছি।।
গায়ে চাদর জড়ানো থাকার কারণে খুব একটা
শীত লাগছে না।
আজ শুক্রবার হওয়ার কারণে কলেজ যাওয়ার ঝামেলা ও নেই।
আজ তাহলে মনের আনন্দে ছাদে বসে
ফোনের প্লেলিস্ট এর
ফেভারিট
গান গুলো
এক এক করে শোনা যাবে।
গান শুনছিলাম, আর
সেই সাথে গুনগুন করে গাইছিলাম,
এমন সময় নারী কণ্ঠ শুনে ভড়কে গেলাম।
-একটু জোরে গাইলে কি হয়?
(এই অসময়ে ছাদে নারী কণ্ঠ মোটেও প্রত্যাশিত নয়।
পেছন ফিরে দেখলাম ‘মনা আপু’।
আপনাদের বলে রাখি,
তিনি হলেন আমার লাইফ এর প্রথম ক্রাশ!)
সামান্য কাশি দিয়ে গলা টা ঠিক করে জিজ্ঞেস করলাম
-আপনি এই অসময়ে ছাদে কেন?
-কেনো? আসতে মানা??
-নাহ! কি যে বলেন? আপনাদের বাসা, আপনাদের ছাদ, আপনি না আসলে কে আসবে??
(ও হ্যাঁ, বলা হয় নি, তিনি আমাদের বাড়িওয়ালার ছোটো মেয়ে,
কিন্তু আমার থেকে দু বছরের বড়)
-হুম! তো গান যখন গাইছো,
ভালো করেই গাও, আমি ও একটু শুনি!
-আপনি শুনবেন আমার গান??
সে তো আমার সৌভাগ্য!!
(ইম্প্রেস করার প্রচেষ্টা আর কি!)
-হাহা! তাহলে শোনাও দেখি।
-ইয়ে মানে, আমি কিন্তু খুব একটা ভালো গাইতে পারি না,
তাই খ্রাপ হলেও দয়া করে হাসবেন না,, ঠিকাছে??
-আরে পাগল! হাসবো কেন?
তুমি গাও তো! আমরা আমরাই তো!
-আচ্ছা তবে একটা শর্ত আছে,
-কি শর্ত?
-আমার সাথে আপনার ও গাইতে হবে কিন্তু!
-আচ্ছা ঠিকাছে, তুমি শুরু করো!
~~
(অত:পর দুজনে মিলে তাহসান এর ‘আলো’ গান টা গাইলাম)
-তুমি তো অনেক ভালো গাইতে পারো অভিক!
আমাকে শেখাবে?
-কি যে বলেন আপু??
লজ্জা দিয়েন না!
আপনার কণ্ঠের সামনে
আমার কণ্ঠ কিছুই না।
-আরে নাহ! সত্যি বলছি।
তুমি অনেক ভালো গাও!
তোমার কণ্ঠ যথেষ্ট সুন্দর!
-হাহা! আপনি যখন বলছেন,
তখন মেনে নিতে বাধ্য হলাম!
-গুড বয়! তো মিস্টার, আপনার জিএফ কয়টা?
(প্রশ্ন শুনে রীতিমতো ভড়কে গেলাম)
-কেনো আপু? আমাকে দেখে কি আপনার সে রকম ছেলে মনে হয়,
যে পাঁচ-দশ টা প্রেম করবো?
-আরে নাহ! বোকা ছেলে!
তোমার যে সুদর্শন চেহারা
আর সুন্দর কণ্ঠ, মেয়েরা তো
এমনি তেই ফিদা হয়ে যাবে!
(কথা টা বলেই তিনি
দুষ্টু-মাখা হাসি দিলেন।
সেই হাসি দেখিয়া আবারো
ক্রাশিত হইতে বাধ্য হইলাম।
একদৃষ্টিতে তার হাসি দেখছিলাম)
-এই অভিক! বোকার মতো তাকিয়ে আছো কেন?
(তার কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে বলেই ফেললাম)
-আপু, আপনি এতো সুন্দর কেন?
যে কোনো ছেলের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য
আপনার সামান্য মুচকি হাসি ই যথেষ্ট।
-ও তাই বুঝি? বড় আপুর সাথে ফ্লার্ট করা হচ্ছে তাইনা?
-আমি তো শুধু সত্য টা বললাম।
আপনি কিছু মনে করে থাকলে দু:খিত।
-আরে না পাগল! আমি ও একটু মজা করছিলাম।
কিছু মনে করি নি।
আর হ্যা, প্রশংসা করার জন্য ধন্যবাদ।
-আচ্ছা, আজ তাহলে আসি।
আম্মু বোধ হয় খাওয়ার জন্য ডাকছে।
-আচ্ছা, বায়। পরে কথা হবে।
-আচ্ছা।
সেদিন এর মতো আর কথা বলতে পারিনি।
তবে তার সাথে যে কিছু টা বন্ধুত্ব করতে পেরেছি,
সেজন্য কিছু টা খুশি ছিলাম।
তার পর থেকে প্রায় রোজ বিকেলে ছাদে যেতাম,
তিনিও আসতেন। অনেক কথা হতো।
আমরা একে অপরকে খুব ভালো ভাবে বুঝে ফেললাম।
নিজেদের মাঝে ফোন নাম্বার আদান প্রদান ও হয়েছিলো।
প্রায় রাতেই তার সাথে কথা না বললে ঘুম আসতে চাইতো না।
আমি ও তুমি করে বলা শুরু করে দিলাম।
খুব ভালোই চলছিলো দিনগুলো।
এর মাঝে আমার এইচএসসি পরীক্ষা চলে আসলো,
যার কারণে কথা বার্তা একটু কম হতো।
অত:পর আমি এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে ফেললাম,
আর তিনি তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ।
এতো দিনে তার প্রতি দুর্বলতা আরো বেড়ে গিয়েছিলো।
হয়তো ভালোবাসার অর্থ টা বুঝতে শিখেছিলাম।
তাই সেদিন তাকে কল দিয়ে ছাদে দেখা করতে বললাম।
সেদিন ই তাকে মনের কথা টা বলবো বলে ঠিক করলাম।
অত:পর বিকালে ছাদে গেলাম, কিছুক্ষণ পর তিনি ও ছাদে আসলেন।
সাথে সেই ভুবন ভোলানো হাসি।
যত বার ই দেখি তারে, পড়ে যাই প্রেম এ)
-হায় অভিক! কেমন আছো?
-হায়, ভালো আছি। তুমি?
-এইতো, আগের মতোই। তো মিস্টার, তোমার পরীক্ষা কেমন হলো?
-এইতো ভালোই।
এখন শুধু ভালো একটা সরকারী ভার্সিটি তে চান্স পেলেই খুশি!
-হুম, তো দিনকাল কেমন চলে? কয়টা জিএফ জুটলো? হিহি!
(প্রশ্ন টা শুনেই মনে মনে খুব খুশি হলাম। এই সুযোগের অপেক্ষা তেই ছিলাম)
-আরে ধুর! আমার মতো হাবা গোবা
ছেলের সাথে কে প্রেম করবে? বলো?
-ক্যান? করবে না ক্যান? তোমার মাঝে কোনো কমতি আছে?
-আছে তো!
-কি?
-আমি অপরিচিত মেয়ে দের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে পারি না।
কথা সাজিয়ে বলতে পারি না।
-তো যার সাথে পারো, তার সাথেই না হয় প্রেম করো! হিহি!
-তাহলে তো তোমার…
(কথা টা শেষ করতে গিয়ে আটকে গেলাম। তিনি আমার অবস্থা দেখে উৎসুক দৃষ্টি তে জিজ্ঞেস করলেন)
-কি হলো? আমার কি? বলো??
-না কিছু না!
-ওই! বলতে বলসি! বলো!
-আমি বলতে পারবো না! আমি এখন আসি। বায়।
(দৌড় দিতে যাবো, এমন সময় তিনি শার্ট এর কলার ধরে,
রাগী দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকালেন আর বললেন)
-কথা শেষ না করে তো যেতে দিবো না!
-আচ্ছা আচ্ছা বলতিসি।
(মনে মনে সাহস যোগালাম আর ভাবলাম,
যা হওয়ার হবে, আজ কে আমি বলবোই)
-ওই! একটা কথা বলতে আর কতো টাইম নিবা?
-না মানে, বলছিলাম যে
তাহলে তো তোমার সাথেই প্রেম করা লাগবে!
-কি বললা??
-আসলে, মনা, তোমাকে যে দিন প্রথম দেখেছিলাম,
সেদিন ই তোমার হাসির প্রেম এ পড়ে গিয়েছিলাম,
তোমার কাজল কালো চোখ,
বাতাসে উড়ন্ত চুল যতো দেখতাম,
ততোই আরো বেশি তোমার প্রেম এ পড়তাম!
(তিনি কিছু বলতে গেলেন।
আমি হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে বললাম)
-আমাকে শেষ করতে দাও প্লিজ! আমি জানি তুমি কি বলবে।
তুমি আমার দু বছরের বড়।
আমার থেকে অনেক স্মার্ট ছেলে তোমার পিছে
ঘুরঘুর করে বাট তুমি পাত্তা দাও না।
এগুলা আমি জানি।
কিন্তু, বিশ্বাস করো, আমি শুধু আমার ভালোবাসা টা কে প্রাধান্য দিয়েছি।
আমার বন্ধু-বান্ধব বা
পরিচিত রা কি ভাববে, সেটা কে প্রাধান্য দেই নি।
আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি ভালোবাসার আগে বয়স কে বিবেচনা করিনি।
যদি তোমার দৃষ্টি তে আমি ভুল করেছি বলে মনে হয়,
তবে আমাকে আর কখনো তোমার সামনে পাবে না।
অনেক দিন ধরে কথা গুলো বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু
বলবো বলবো করে বলা হতো না।
আজ বলার পর কিছু টা হাল্কা লাগছে।
আর হ্যা, আপনাকে নাম ধরে ডাকার জন্য স্যরি।
যদি পারেন, তবে ক্ষমা করে দিয়েন।
আসি।।
(সেদিন ভয়ে তার দিকে না তাকিয়েই বাসায় চলে এসেছিলাম। পরদিন সকালে ফোন এ তার মেসেজ এসেছে দেখলাম।
লিখা : আমার মতামত টা জানার প্রয়োজন বোধ ও করলে না?
সাথে সাথে ছাদে গেলাম। জানতাম, সে এখানেই থাকবে)
-এই যে ম্যাডাম? আপনার মতামত জানার জন্য এসেছি।
(সে আমার দিকে ঘুরেই আমার বুকে একনাগাড়ে কিল, ঘুশি মারতে লাগলো আর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো)
-ফাজিল! বদমাশ! বান্দর!
‘ভালোবাসি’ কথা টা বলতে এতো দিন লাগলো?
ভালোবাসার মানুষ কে এইভাবে কেউ কাঁদায়?
(বুঝলাম, গ্রিন সিগ্ন্যাল।
তাকে থামিয়ে
আমিও পালটা প্রশ্ন করলাম)
-একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ?
-বুঝোনা,, না? হাদারাম!!
-কিছু না বললে বুঝবো কেম্নে?
-বোঝা লাগবে না! হুহ!
-আচ্ছা, তাহলে বাসায় যাই,
আপনি থাকেন।
(সে তখনি বলে উঠলো)
-পাগল ছেলে! তুমি কি বুঝো না আমি তোমার প্রেম এ পাগলী হয়ে আছি?
প্রথম যে দিন তোমার কণ্ঠ শুনলাম, সে দিন ই তোমার প্রেম এ পড়েছিলাম!
তারপর তোমার সাথে কাটানো প্রতি টা মুহূর্ত আমি খুব এঞ্জয় করতাম।
তোমার সাথে কথা না হলে একদম ভালো লাগতো না।
তোমার খাওয়া দাওয়ার খোঁজ না নিলে
আমি নিজে খেতে বসতাম না।
ভালো লাগে তোমার প্রতি টা কথা।
যদি এগুলা ভালোবাসার অন্তর্ভুক্ত হয়,
তবে আমিও তোমাকে ভালোবাসি!
(কথা গুলো শুনে এক
পলকের জন্য থমকে গেলাম,
ভাবলাম,
হয়তো এটা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে কোনো উপহারস্বরুপ ছিলো। কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসলাম)
-সত্যি ভালোবাসো??
-এক সত্যি! দুই সত্যি! তিন সত্যি!
হিহিহ!
-আচ্ছা, আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
একটা চিমটি দিবে প্লিজ!?
-এই নাও! দিলাম চিমটি! হিহি!
-ইশ! কেন যে আরো আগে প্রোপজ করি নাই!?
-হেহ! প্রোপজ করলেই মনে হয় এক্সেপ্ট করতাম? হিহি!
-তুমি না করলে অন্য কাউ কে প্রোপজ করতাম! হেহ!
-খবরদার!
একদম খুন করে ফেলবো!
ভুলেও যদি অন্য মেয়ের প্রেম এ পড়সো তো তুমি শেষ!
তুমি শুধু আমার প্রেম এ পড়বা, বুঝছো?
-আরি বাপ রে!! ভয় পাইসি ম্যাডাম!
ঠিকাছে, এখন শুধু আপনার ই প্রেম এ পড়বো!
-এই তো গুড বয়!
-জি ম্যাডাম! শুধুমাত্র আপনার জন্য!
(সেদিন থেকেই চলছে দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসা)
~~
চলছে যখন ভাগ্য সাথে
চলি না একটু বাঁকা পথে!
চললে তবে দোষ কি তাতে?
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা