তন্নীঃ আজ দেখা করতে পারবা?
আমিঃ কেন?
তন্নীঃ একটু দরকার আছে।
আমিঃ আচ্ছা। তা কখন কোথায় দেখা করতে হবে?
তন্নীঃ যেখানে তোমার আর আমার প্রথম দেখা হয়েছিল সেখানে। আর হ্যা বিকাল ৪ টার সময় চলে আসবে।
আমিঃ ঠিক আছে।
তন্নীঃ আচ্ছা এখন রাখি। বাই
আমিঃ ওকে বাই।
.
এতক্ষণ ফোনে তন্নীর সাথে কথা হচ্ছিল। পুরো নাম ” তারিমা তন্নী”। এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। দেখতে মাশাল্লাহ যেন কোনো পরী। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। খুবই আদরের। আর আমি জুবায়ের। ডাক্তারি পাশ করে বের হয়েছি কিছুদিন হলো। সরকারি হাসপাতালে চাকরি হয়েছিল কিন্তু করিনি। কারণ আমার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হয়ে গরীব অসহায় দের ফ্রিতে চিকিৎসা করব তাই নিজেই একটা ক্লিনিক খুলে নিলাম। ওখানেই রোগী দেখি। আর তেমন কিছু করিনা। তবে মাঝে মাঝে তন্নীর সাথে দেখা করি। কিন্তু আজকে হঠাত যেন একটু জরুরী ডাকলো।
তন্নী আর আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বললাম। এবার আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার ঘটনাটা বলা দরকার। এটা বলতে চাচ্ছি কারণ তন্নীর সাথে আমার প্রথম কোথায় দেখা হয়েছিল তা না জানলে কি করে বুঝবেন আমরা কোথায় দেখা করতে যাচ্ছি?
আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগের কথা। সময়টা ছিল গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে। মানে বর্ষাকাল আসতে আর বেশি দেরি নেই। কি কারণে ঠিক মনে নেই কিন্তু সেদিন মনটা তেমন ভালো ছিল না। তাই পার্কের একটা বেঞ্চে বসে ছিলাম। আনমনা হয়ে কিছু একটা ভাবছিলাম। হঠাতই চোখ গেল পার্কের এক কোণায় এক্টা মেয়ে বাচ্চাদের সাথে কি যেন করছে। আমি স্বভাবতই বাচ্চা দের খুব পছন্দ করি। কারণ আসে পাশে কোনো বাচ্চা থাকলে মন খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না। তাই মেয়েটা বাচ্চা গুলোর সাথে কি করছে দেখতে ইচ্ছে করল। একবার ভাবলাম বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে দেখি। তারপর ভাবলাম না থাক। এখান থেকেই দেখি। ওখানে গেলে যদি মেয়েটা খারাপ কিছু মনে করে তাই আর উঠলাম না। ওখানে বসেই যতটুকু দেখা যায় ততটুকু দেখার চেষ্টা করছিলাম। মনে হচ্ছিল মেয়েটি বাচ্চা গুলোকে কিছু দিচ্ছে। যা তারা নিয়ে ওকে একটা করে পাপ্পু দিচ্ছে।
মেয়েটা আমার দিকে পিছন দিক হয়ে ঘুরেছিল তাই দেখতে পাইনি। হঠাত মেয়েটা আমার দিকে ঘুরতেই আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকলাম তার দিকে। মানুষ এত সুন্দর হয় তা এতক্ষণ মনেই ছিল না। আর আমি জানতামও না। কিছুতেই তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মেয়েটা প্রথমে লক্ষ্য না করলেও কিছুক্ষণ পরে ঠিকি লক্ষ্য করল আমি তার দিকে চেয়ে আছি। অনেক্ষণ ধরে তার দিকে চেয়ে আছি। মেয়েটি কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার তার কাজে মনোযোগ দিল। কিন্তু মাঝেমাঝেই সে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আমার তাতে ভ্রুক্ষেপও নেই। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি তো আছিই।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটা উঠে দাড়ালো। ভাবলাম হয়তো চলে যাবে। কিন্তু না। মেয়েটা মনে হচ্ছে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি যে এতক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম এর জন্য কিছু বলবে নাকি? কে জানে? দেখাই যাক কি হয়। মেয়েটা এসে ঠিক আমার সামনে দাড়ালো।
.
মেয়েটিঃ এই যে মিস্টার, এতক্ষণ আমার দিকে অভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
মেয়েটি কথা বলছে আর আমু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর করে কথা বলে। মেয়েটি আবার প্রশ্ন করল
মেয়েটিঃ কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
(এবার আমার হুশ ফিরল)
আমিঃ জ্বী কি বলছেন?
মেয়েটিঃ আপনি কি কানে শুনেন না? বলছিলাম এতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
আমিঃ আসলে… (কি বলব খুজে পাচ্ছিলাম না )
মেয়েটিঃ আসলে কি?
আমিঃ আসলে আপনি খুব সুন্দরী তো তাই।
(আমার মুখে এই কথাটা শুনে মনে হলো মেয়েটি কিছুটা লজ্জা পেল)
মেয়েটিঃ এরকম আরো কত মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন?
আমিঃ এই প্রথম আপনার দিকে। আপনার নামটা কি জানতে পারি?
মেয়েটি কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল তারপর জিজ্ঞেস করল
মেয়েটিঃ আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন?
আমিঃ আপনার সাথে প্রেম করব (আস্তে করে বললাম)
মেয়েটিঃ কি বললেন শুনতে পাইনি।
আমিঃ নাহ তেমন কিছু না। একটু পরিচিত হতাম আর কি।
মেয়েটিঃ আমি তারিমা তন্নী। আপনি? (নামটাও অর মতই সুন্দর)
আমিঃ আমি জুবায়ের হাসান। কোন ক্লাসে পড়েন?
তন্নীঃ অনার্স ফার্স্ট ইয়ার এ। আপনি?
আমিঃ এইতো পড়ালেখা শেষের দিকে প্রায়।এম.বি.বি.এস করেছি এখন বি.সি. এস করতেছি।
তন্নীঃ ওহ ভালো।
আমিঃ হুমম… আপনি কোন এলাকাই থাকেন?
তন্নীঃ পাশের এলাকাই থাকি।
আমিঃ ওহ
তন্নীঃ আচ্ছা থাকেন। আমাকে যেতে হবে।
আমিঃ আশা করি আবার দেখা হবে। বাই
,.
.
.
তন্নী আর কিছু না বলেই চলে গেলো। আমিও আর বেশি সময় বসলাম না। মনটা ভালো হয়ে গেছে তাই বাসাই চলে আসলাম। এর পর মাঝে মাঝেই পার্কে যেতাম। ওর সাথে প্রায়ই দেখা হতো। কথাও হতো। ধীরে ধীরে আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরতে লাগলাম। আর এক সময় ওকে আমার মনের কথাটা বলে দিলাম। সেদিন ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিনের মত সেদিনও পার্কে দেখা হলো। ওকে বললাম
আমিঃ তন্নী আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। ( এত দিনে আমাদের মাঝে আপনি থেকে তুমি তে চলে আসছি)
তন্নীঃ কি বলতে চাও?
আমিঃ জানিনা কিভাবে কথাটা নিবে কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই ভালো লেগে যায়। এরপর ধীরে ধীরে আমার ভালোলাগাটা ভালোবাসাতে রুপ নেয়। এতদিন তোমাকে বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। কিন্তু আজ না বলে পারলাম না।
ও কিছুটা সময় চুপচাপ থাকল। এরপর বলল
তন্নীঃ সত্যি কথা বলতে আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমিও বলতে চাইতাম কিন্তু পারতাম না। সব সময় ভয় করত।
.
.
কথাটা শুনে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এত তাড়াতাড়িই রাজি হয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। যা হোক এভাবেই শুরু হয় আমাদের পথ চলা।
.
প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। বিকালে তন্নীর সাথে দেখা করতে যেতে হবে। তাই এখন গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম।
এখন প্রায় ৩ টা বাজে। যদিও তন্নীর সাথে দেখা করতে হবে ৪টাই কিন্তু আমি ৩ টাই যাব। ভাবছেন এত আগে কেন যাব? আসলে মেয়েটাকে দেখেছি আমাকে যখন আসতে বলে তার থেকে আধা ঘন্টা আগেই চলে আসে। জানিনা আমার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে কিনা? হয়ত লাগে। তাইতো সব সময় আগেই আসে। এই জন্যেই আজ কে আমি আগে যাব।
বাসা থেকে বের হয়ে দেখি আকাশের অবস্থা ভালো না। মনে হচ্ছে যে কোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে। অন্য কোনোদিন হলে বৃষ্টি আরও আগে চাইতাম। কিন্তু আজকে চাই না। কারণ আজ কে তন্নীর সাথে দেখা করতে হবে । তাই মনে মনে আল্লাহ্কে বলছি বৃষ্টি যেন না হয়। পার্কের দিকে হাটা দিলাম। বাসা থেকে পার্কে পৌঁছাতে ২০ – ২৫ মিনিট সময় লাগবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা বাজতে এখনো ১০ মিনিট বাকি আছে। তার মানে ৩:১০ ৩:১৫ এর মধ্যে পার্কে পৌঁছে যাব। রিকশা নিলাম না। কারণ এখনো অনেক দেরি আছে ৪ টা বাজতে। তাই হেটেই যাব।
যথারীতি ৪:১৫ তে পার্কে পৌঁছে গেলাম। সেই বেঞ্চ টাতে বসলাম। কিছুক্ষণ পর হঠতই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। সবাই বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু আমি ওখানেই বসে আছি। বৃষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই বৃষ্টি তে মাঝে মাঝেই ভিজি। বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। থামার কোনো নাম নিশানাই নেই। কিন্তু আমার সে দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাত ফোনের রিংটন এর শব্দে বাস্তবে ফিরলাম। ফোন হাতে নিয়ে দেখি তন্নী কল দিয়েছে। রিছিভ করতেই জিজ্ঞেস করল
তন্নীঃ কোথায় তুমি?
আমিঃ পার্কের ভিতরে।
তন্নীঃ আচ্ছা আমি আসতেছি।
বলেই কেটে দিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৩:৫০ বাজে। তন্নীর আসতে এত দেরি হলো কেন বুঝলাম না। আর দেরি হইতেই পারে। আমিও তো কত দেরি করে আসি। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম তন্নী আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আগের থেকে একটু কম। তন্নীও জানে আমার বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস এবং নেশা দুটোই আছে। এর অনেক বকাবকিও করে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। আমাকে এসেই জিজ্ঞেস করল
তন্নীঃ কখন এসেছো?
আমিঃ ৩:১৫ তে।
তন্নীঃ তখন থেকে বৃষ্টিতে ভিজছো?
আমিঃ হুমম……
তন্নীঃ তুমি কি পাগল? এত সময় কেউ বৃষ্টিতে ভেজে?
আমিঃ কেউ ভেজে কিনা জানিনা। তবে আমি ভিজি।
তন্নীঃ ভালো… তা হঠাত আজ এত আগে?
আমিঃ সব সময় তো তুমিই আগে আসো। আমার জন্য অপেক্ষা কর। তাই ভাবলাম আজকে না হয় আমিই আগে এসে একটু অপেক্ষা করে দেখি কেমন লাগে।
তন্নীঃ তা কি দেখলে কেমন লাগে?
আমিঃ দেখলাম প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে ভালোই লাগে। আচ্ছা তুমি কি যেন বলতে চাচ্ছিলা?
তন্নীঃ বলব কিন্তু এখানে না। আর তাছাড়া দেখ সবাই আমাদের দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ থাকবেই তো। সবাই বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করতেছে। আর আমরা দুজন বৃষ্টিতে ভিজতেছি। তাও আবার এত সময় ধরে।
তন্নীঃ হুমম..
আমিঃ কি বলবে বলো। তুমিতো অনেক সময় ধরেই বৃষ্টিতে ভিজছো। এত সময় ধরে বৃষ্টিতে ভেজা শরীরের জন্য ভালো না।
তন্নীঃ ও আমি মনে হচ্ছে একাই বৃষ্টিতে ভিজতেছি আর কেউ ভিজছে না। আর তুমিতো আমার থেকেও বেষি সময় ধরে বৃষ্টিতে ভিজতেছো। শুধু আমার কথা চিন্তা করলেই হবে নিজের কথা চিন্তা করতে হবে না?
আমিঃ তুমিইতো আমার সব। তাই তোমার কথা চিন্তা করা মানেই আমার কথা চিন্তা করা। আচ্ছা যা হোক এসব বাদ দাও। কি যেন বলতে চাইছিলা সেটা বলো।
তন্নীঃ ওটা এখানে বলব না। এমনিতেই অনেক ভিজেছ। আর ভেজাতে চাই না।
আমিঃ তাহলে কোথায় গিয়ে বলবে?
তন্নীঃ তোমার বাসায়।
আমিঃ কিহ! আমার বাসাই?
তন্নীঃ হ্যাঁ তোমার বাসায়।
আমিঃকিন্তু……
তন্নীঃ কোনো কিন্তু না। তুমি চলো।
বলেই আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। এরপর একটা রিকশা নিলাম। দুজনে পাশাপাশি বসে আছি। নানা ধরণের চিন্তা মাথাই আসতেছে। বাসাই গিয়ে কি বলব। বাবা মা কি বলবে কে জানে। তারাতো আরা তন্নীকে চিনে না। কখনো তন্নীর কথা উনাদের বলি নি। ১০ মিনিটের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গেলাম। কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিল। তন্নী আম্মুকে সালাম দিল
তন্নীঃ আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ আন্টি।
আম্মুঃ অয়ালাইকুমুসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
তন্নীঃ কেমন আছেন?
আম্মুঃ ভালো। তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।
আমিঃ যা চেনার পরে চিনো। আগে আমাদের ভিতরে ঢুকতে দাও। দেখছতো বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা।
আম্মুঃ ভিতরে আসো।
বলেই দরজা থেকে সরে দাড়ালো। আমি সোজা বাথ রুমে চলে গেলাম। গোসল করে শুকনো জামা কাপড় পরে বের হলাম। বের হয়ে দেখি তন্নী নীল রংয়ের শাড়ি পরে আছে। শাড়িটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। আরে এটাতো আমার প্রথম মাসের রোজগারের টাকা থেকে কেনা শাড়ী। ভেবেছিলাম বাসর রাতে তন্নীকে উপহার দিব। কিন্তু এটা কি হলো? আবার ভাবলাম এখন এটা ছাড়া আম্মু ওকে কিই বা পরতে দিতো? দেখলাম আম্মু আর ও গল্প করছে। আম্মু আমাকে দেখেই ডাকলো। আমি কাছে যেতেই
আম্মুঃ কিরে তুই দেড় বছর ধরে প্রেম করতেছিস অথচ আমাকে বলিস নি!!! ( আমি সব কথাই আম্মুকে বলি। কিন্তু এই বিষয়ে আম্মুকে কখনো কিছু বলিনি )
আমিঃ আসলে আম্মু ভেবেছিলাম একেবারে সব বলব তোমাকে। তাই আগে কিছু বলিনি। আচ্ছা তন্নী কি যেন বলতে চাচ্ছিলা
তন্নীঃ আমি বাসাই আব্বুকে তোমার কথা বলেছি।
আমিঃ তা তোমার আব্বু কি বললেন?
তন্নীঃ বললেন তোমাকে তোমার বাবা মায়ের সাথে আমার বাসাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে।
আমিঃ তোমার আব্বু এত অল্পতেই রাজি হয়ে গেলেন?
তন্নীঃ কেন রাজি হবে না? আমার সুখের জন্য আব্বু সব করতে পারে।
আমিঃ ভালো…
বলেই আবার আমার রুমে চলে আসলাম। আর আম্মুর সাথে তন্নী গল্প করতে লাগলো। সন্ধ্যায় তন্নীকে ওর বাসায় দিয়ে এলাম। রাতে আব্বু আসলে আম্মু আব্বুকে তন্নীর কথা বলল। আব্বু বলল
আব্বুঃ তোমাদের যখন পছন্দ হয়েছে তাহলে চলো কালকেই গিয়ে কথা বলে আসি। আর বিয়েটাও ঠিক করে আসি।
আম্মুঃ হুমম… আমি যত দ্রুত সম্ভব ওকে আমার ঘড়ে আনতে চাই।
আব্বুঃ আচ্ছা কাল সকালেই তাহলে আমরা যাচ্ছি। যাও জুবায়েরকে গিয়ে বলে আসো কালকে সকালে আমরা তন্নীদের বাসাই যাব।
আম্মু আমকে এসে এই খবর দিতেই আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করল। কিন্তু না নেচে ঘুমালাম। কারণ কাল তন্নীদের বাসাই যাব। সকালে ঘুম থেকে উঠতে যাব এমন সময় মনে হলো জ্বর এসেছে। শরীরটা ভালো লাগছে না। মাথাটা ব্যথা করতেছে। সত্যি জ্বর এসেছে কিনা বুঝতে পারতেছি না। ছোটবেলা থেকেই আমার জ্বর আসলে আমি কখন বুঝতে পারতাম না। এখনো ঠিক সেরকমই। তাই থার্মোমিটার টা নিলাম জ্বর এসেছে কিনা চেক করার জন্য। দেখি ১০৩ ডিগ্রী জ্বর। কালকে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। এখন কি করা যায়?
আম্মুকে ডেকে জ্বরের কথা বললাম। আম্মু বলল ডাক্তার ডাকতে। আরে আজবতো আমিতো নিজেই ডাক্তার। তাহলে আবার ডাক্তার ডাকতে যাব কেন? কোনো রকমে উঠে দাড়ালাম। বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু জ্বর কিছুতেই কমছে না। উল্টা মনে হচ্ছে আরও বাড়ছে। হাই আল্লাহ্ এখন আমি কি করি? আজকে তন্নীদের বাসাই যেতে হবে আর আজকেই জ্বর আসলো???
জ্বরের কারণে আমি জেতে পারলাম না। কিন্তু আম্মু আব্বু ঠিকি গেলো। ওরা গিয়ে বিয়ে পাকা করে এল। বিকালের দিকে তন্নী আমাদের বাসাই এলো। তখন আমি বিছানাই শুয়ে আছি আর জ্বরে কাপছি। তন্নী আমার রুমে ঢুকে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু বলল না। এসে আমার পাশে বসে পরল।
তন্নীঃ জ্বর কি করে আসল?
আমিঃ কালকে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তাই জ্বর এসেছে।
তন্নীঃ ঔ ঔষধ খেয়েছো?
আমিঃ হ্যা খেয়েছি…
তন্নীঃ আচ্ছা তুমি কি পাগল? ( কাদো কাদো কন্ঠে)
আমিঃ হা হা হা আমি পাগল হতে যাব কেন?
তন্নীঃ তাহলে তুমি কাল ওত সময় বৃষ্টিতে ভিজেছো কেন? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত…
আমিঃ ( ভাবলাম একটু শয়তানি করা যাক) কি আর হতো বেশি হলেও মারা যেতাম।
তন্নীঃ চুপ… তুমি মারা গেলে আমার কি হবে???
আমি অন্য ছেলের সাথে বিয়ে হবে।
তন্নীঃ ( এবার কেদেই দিল) তুমি সব সময় আমার সাথে এমন কর কেন? ( কাদতে কাদতে)
আমিঃ কেমন করি?
তন্নীঃ তুমি জানো তমার কিছু হলে আমার কত টেনশন হয়। আমি কোনো কিছুই ঠিক মত করতে পারিনা। তুমি যখন বলো তুমি মরে যাবা তখন আমার সব চেয়ে বেশি কষ্ট হয়। তোমার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব না। তোমাকে আমি আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।
আমিঃ আরে পাগলি… আমি তো একটু শয়তানি করতেছিলাম তোমার সাথে।
তন্নীঃ তাই এসব নিয়ে শয়তানি করতে হবে?
আমিঃ আচ্ছা সরি… আর এসব নিয়ে শয়তানি করব না। এখন আর কেদ না।
তন্নীঃ ( আমাকে জড়িয়ে ধরল) বিশ্বাস করো আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। (জড়িয়ে ধরে)
আমি আর কিছু বললাম না। এখনো কাদছে। সত্যিই আমকে খুব ভালোবাসে। আমার থেকেও বেশি।
এর পর আরও ৮ দিন জ্বর ছিল। প্রতিদিনই তন্নী আসত। যতটুকু সময় থাকত সবটুকু সময় শুধু আমার সেবাতেই ব্যয় করত। যখন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠলাম তার ৫ দিন পরেই আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
.
আজ ৪ টা বছর পার হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এখনো মনে হয় আমাদের দিন গুলো সেই প্রথম দিনের মতই আছে। শুধু মাত্র একজন নতুন সদস্যের আগমন ঘটেছে আমাদের মাঝে। আমাদের ছেলে জুনায়েদ। বাবা মা তন্নী জুনায়েদ আর আমি।
আমাদের এই ৫ জনের ছোট সংসার টা অনেক সুখের। খুব ভালোভাবেই কাটছে আমাদের দিনগুলো।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা