(রাত ১১.০৫)
সাদিয়া- হ্যালো,এখন কোথায় তুমি?
আমি- এই তো এসে পড়েছি,আর বেশিক্ষণ লাগবে না। এক ঘন্টার ভিতরই এসো পড়বো।
সাদিয়া- কী দরকার ছিলো এতো তাড়াহুড়া করো আসার?
আমি- আরে তাড়াহুড়া কই? তুমি সকালে বললে ইকরার বার্থ ডে কাল। আমি দুপুরে গ্রীন লাইনের টিকিট কেটে বিকেলের বাসে রওনা দিলাম।
সাদিয়া- তাই বলে বার্থ ডে উইশ করার জন্য ঢাকা থেকে সিটিজি আসতে হবে আর তাড়াহুড়া করে এসে রাতেই চলে যেতে হবে? পরে সময় নিয়ে আসলেও তো পারতে।
আমি- কবে না কবে মরে যাই বলা তো যায় না। তখন তো আর আসা হবে না। তাই বার্থ ডে উপলক্ষে এসে পড়লাম।
সাদিয়া- মরার কথা ছাড়া কি আর কোন কথা নেই? মরণ যেদিন হওয়ার হবে। এতো মরার কথা বলতে নেই। আর তুমি আজ এসে আবার চলে যাবে এটা কেমন কথা?
আমি- কাল সকালেই একটা মিটিংয়ে যেতে হবে। তাই রাতেই ফিরতে হবে।
সাদিয়া- না করে দাও তাহলেই তো হয়।
আমি- নাহ,কথা দিয়েছি। কথা তো রাখতেই হবে।
সাদিয়া- আচ্ছা শুনো,বাসে তোমার কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি না। আর আমাকেও যেতে হবে। ইকরার জন্য সবাই মিলে একটা সারপ্রাইজ পার্টি ঠিক করেছি। ওটার দেখাশোনা করতে হবে। তুমি বাস থেকে নেমেই ফোন দিবা। ঠিক আছে?
আমি- আচ্ছা,ঠিক আছে। এখন তাহলে রাখছি।
(রাত ১১. ৪০)
আধা ঘন্টার ভিতর সব রেডি করে ফেলছে সাদিয়া। ইকরার সারপ্রাইজ বার্থ ডে পার্টির প্ল্যান আগে থেকেই করে রেখেছিল। প্ল্যান অনুযায়ী সব ঠিকঠাক অনুযায়ী চলছে। তবে প্ল্যানের বাহিরে যেটা হচ্ছে সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তিত সে। কী দরকার ছিলো মাহদীর ঢাকা থেকে জার্নি করে এসে বার্থ ডে উইশ করে আবার এক রাতেই চলে যাওয়ার। ছেলেটার মাথায় সত্যই পাগলামী আছে।
(রাত ১২:০০)
“হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার ইকরা। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।”
(রাত ১২:১৫)
যেভাবে চেয়েছিল সাদিয়া ঠিক সেভাবেই সবকিছু হয়েছে। ইকরা অনেক খুশি আজ। এভাবে ওর জন্মদিন সেলিব্রেট করা হবে সে কল্পনাও করে নি। বড়ো বোন সাদিয়াকে ধন্যবাদ জানালো আজকের জন্মদিনটাকে স্মরণীয় করে দেওয়ার জন্য। শুধু সাদিয়াই জানে,এখনো একটা অপ্রত্যাশিত কিছু অপেক্ষা করছে।
(রাত ১২:৫৫)
আমি- হ্যালো সাদিয়া!
সাদিয়া- হ্যাঁ বলো, কোথায় তুমি?
আমি- এই তো তোমাদের বাসার নিচে।
সাদিয়া- আচ্ছা দাড়াও, আসছি আমি।
সাদিয়া- আসতে কষ্ট হয় নি তো?
আমি- আরে নাহ, আরামেই এসেছি।
সাদিয়া- অন্ধকারে দাড়িয়ে আছো কেন? আসো, বাসায় আসো।
আমি- আরেকদিন আসবো নে। আচ্ছা,আমার পক্ষ থেকে ইকরাকে উইশ করেছো?
সাদিয়া- যার যার উইশ সে নিজে করবে। আমি করতে যাবো কেন? আসো, বাসায় এসে ইকরাকে উইশ করে যাও।
আমি- নাহ,আমার হাতে সময় নেই একদম। বড়ো কষ্ট করে সময়টুকু পেয়েছি। এই নাও, এই গিফট বক্সটা ইকরাকে দিয়ো। আর আমার পক্ষ থেকে উইশ করে দিও। চলে যেতে হবে এখনই।
সাদিয়া- তুমি না আসলেই একটা পাগল। তাড়াহুড়া করে ঢাকা থেকে আসলে আবার তাড়াহুড়া করেই চলে যাচ্ছো। ইকরাকেও নিজে গিয়ে উইশ করলে না।
আমি- হয়তো পাগল আমি তাই এমন কাজ করি।
সাদিয়া- হয়তো না আসলেই।
আমি- একটা কথা বলার ছিলো।
সাদিয়া- বলো।
আমি- না থাক, পরে বলবো নে। আসি এখন।
সাদিয়া- ভালোমতে যেয়ো।
আমি- ভেবো না, ভালোভাবেই পৌঁছে যাবো।
সাদিয়া- বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ো।
আমি- আচ্ছা,যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো।
সাদিয়া- আল্লাহ হাফেজ।
আমি- আল্লাহ হাফেজ।
(রাত: ১:০০)
বাসায় এসে সাদিয়া মাহদীর দেওয়া গিফট প্যাকটা টেবিলের উপর রাখলো। ইকরা অন্যরুমে। ওকে ডেকে গিফটটা বুঝিয়ে দিবে। আর বলতে হবে….
ভাবনায় ছেদ পড়লো। বাবা ডেকেছে। বাবার ডাকে সাড়া দিতে টিভির রুমে দিকে গেলো সাদিয়া। টিভিতে দেখানো সংবাদটা চোখে পড়লো।
“আজ রাত ১২টায় ঢাকা থেকে সিটিজিগামী গ্রীন লাইনের একটি বাস এবং মালবাহী এক ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘাতে নিহত হয়েছে বিশ জনেরও বেশি মানুষ, আহত চৌদ্দ জন।”
মাটিতে রাখা লাশগুলোর মাঝে একজনের লাল পাঞ্জাবীর বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে লাল রক্তে ছেয়ে আছে। সাদিয়ার চিনতে অসুবিধা হলো না,কিছুক্ষন আগে মাহদীকে এই পাঞ্জাবীতে দেখেছে।
গিফট বক্সের দিকে দৌড়ে গেলো সে। বক্সটাকে ভালো করে দেখতে লাগল। অন্ধকারের কারনে আগে খেয়াল করে নি, র্্যাপিং পেপারে মোড়ানো লাল গিফট বক্সের এক পাশে রক্তের কিছু ছিটা জমে শুকিয়ে আছে।