স্বপ্ন পুরনের পথে

স্বপ্ন পুরনের পথে

ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিলো তারপর বন্ধু তারপর ভাববেন না প্রেম।শুধুই বন্ধু অনেকদিন পর ওর আইডিতে মেসেজ দিলাম। আসলে পরিক্ষার জন্য ফেসবুকেও যাইনি আর কথাও বলা হয়নি।
তো পরিক্ষা শেষে একদিন মেসেজ দিলাম,
আমিঃ হাই
পরিঃ নো রিপ্লাই……
আমিঃ কিরে কেমন আছিস?
পরিঃ ভালো আপনি?
আমিঃ কিরে তোর কি বিয়ে হইছে নাকি আপনি করে বলছিস কেনো?
পরিঃ এমনি?
আমিঃ কি করিস?
পরিঃ বসে আছি আপনি?
আমিঃ তুই আবারও আপনি বলছিস।আরে দাড়া তুই কি সত্তি রিনি(আসল নাম দিলে প্রবলেম হতে পারে তাই কাল্পনিক নাম দিলাম)
পরিঃ সরি আমি আসলে রিনি না আমি নিলিমা।
আমিঃ মানে আপনি এই আইডি কোথা থেকে পেলেন?
পরিঃ না মানে?
আমিঃ বলুন?
মনের ভিতর উত্তেজনা বিরাজমান এমন একটা পরিস্থিতি কখনো উপভোগ করিনিতো।
পরিঃ আসলে আমি বাড়িতে সবসময় বসেই থাকি তাই ও নিজেই আমাকে আইডি টা দিয়ে বললো সময় কাটা।
আমিঃ তার মানে আপনি ফেক?
পরিঃ ফেক কেন হতে যাবো?
আমিঃ তো রিনিকে যারা মেসেজ করতো তাদের সবাইকে কি এই কথা বলছেন?
পরিঃ সবাইকে ব্লক করে দিসি হিহিহি।
আমিঃ আমাকেও কি ব্লক করবেন?(একটু ভয়ে)
পরিঃ মনে হয় না?
আমিঃ মনে হয় কেনো?
পরিঃ আপনার সাথে কথা বলে মনে হলো আপনি ভালো মানুষ তাই।
আমিঃ আচ্ছা আপনার পরিচয়টা দিন?
পরিঃ আমি নিলিমা বাসা কুমিল্লা আপনি?
আমিঃ আমি সানভি বাসা টাঙ্গাইল।
আমিঃ আপনি কোন ক্লাস এ পড়েন?
পরিঃ ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার আপনি?
আমিঃ সেম।
আমিঃ তো বয়ফ্রেন্ড আছে আপনার।
পরিঃ হুমম।আপনার।
আমিঃ নাহ।(উদাসি ভাবে)
পরিঃ আমরা কি বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হতে পারি?
আমিঃ মানে কি প্রথম দিনেই এই কথা আর আপনার না বয়ফ্রেন্ড আছে?
পরিঃ আচ্ছা বলুনতো বয় অর্থ কি?
আমিঃ ছেলে।
পরিঃ আর ফ্রেন্ড মানে?
আমিঃ ওহ আপনি তো দারুন চতুর।
পরিঃ মোটেও না আমি সহজটাকে সহজভাবে নেই।
আমিঃ হুমম বুঝলাম তো আমার গার্লফ্রেন্ড হতে তো কোনো আপত্তিি নাই তাইনা?
পরিঃ হুমম।
এভাবেই শুরু হলো আমাদের বন্ধুত্বের। একটা বন্ধুর খোজ নিতে গিয়ে আরেকটা খুজে পেলাম। মেয়েটার মধ্যে একটা মোহ আছে যেটা আমাকে মোহিত করছে প্রতিনিয়ত।
ওর সাথে যতই কথা বলি ততটাই অবাক হই । কারন আর দশটা মেয়ের মতো না ও খুবই সহজ সরল আর একটু রাগি।
প্রতিদিন কথা হতো আমাদের।
প্রায় একমাস পর হঠাৎ ও আজকে ফেসবুকে আসছে না।
এর মধ্যে আমরা অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেছি।কারন ওর পছন্দের সবকিছুতেই আমার সাথে মিলে যায়।
কেমন যেন লাগতাছে একটু পর পর ফেসবুকে যাই আর আসি।যদি ও আশে বাট নাই একটা দিনন ওর কোনো খবর নাই।
পরের দিন রাত এ ওকে ফেসবুকে দেখতে পেয়ে মেসেজ দিলাম।
আমিঃ কেমন আছো?
নিলিমাঃ ভালো তুমি?
আমিঃ ভালো? কোথায় ছিলা এতোদিন?
নিলিমাঃ বাড়িতেই ছিলাম কাজিনরা আসছিলো তাই এফবিতে আসতে পারি নাই। আর মাত্র একদিন আসি নাই এতোদিন হলো কিভাবে?
আমিঃ প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা টা একটু বেশিই লাগে?সত্তি অনেক মিস করছিলাম তোমাকে?
নিলিমাঃ আমিও।
তারপর আরো অনেক কথা বললাম।
আসলে আমি বুঝে গেছিলাম আমার জিবনে প্রেম এসে গেছে আমি নিলিমাকে ভালোবেসে ফেলছি। তাই রিনির নতুন আইডি তে মেসেজ দিলাম,
আমিঃ কিরে কেমন আছোস?
রিনিঃ ভালো তুই?
আমিঃ ভালো।শোন একটা দরকারে তোকে ফোন দিসি?
রিনিঃ কি দরকার।
আমিঃ তুই যে আইডি টা নিলিমাকে দিছোস তার ব্যাপার এ বল?
রিনিঃ কেন?ওকে আবার কি দরকার?
আমিঃ আসলে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
রিনিঃ কি বলসিস?
আমিঃ যা বলছি তাই তুই বল এখন?
তারপর রিনির কাছ থেকে ওর সব কিছু জেনে নিলাম।
তারপর আবার নিলিমার সাথে কথা বলতে লাগলাম।
বেশ কিছুদিন পর একদিন আমি ওকে বলে দিলাম,
আমিঃ কি করতাছো?
নিলিমাঃ এইতো বসে আছি তুমি?
আমিঃ সুয়ে আছি।
আমিঃ নিলিমা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?
নিলিমাঃ বলো কি বলবা?
আমিঃ আসলে আমার মনে হয় আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছি?
নিলিমাঃ হুমম।
আমিঃ শুধুই হুমম।
নিলিমাঃ দেখো তুমি হয়তো যানোনা যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? আমার ই ভুল তোমাকে বলি নাই।
আমিঃ মানে কি ফাইজলামি কইরো নাতো?
নিলিমাঃ ফাইজলামি না সত্তি বলতাছি?
আমিঃ মানে?
নিলিমাঃ আমার পরিবার আগে থেকেই একজনের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে?তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাবা।আমি চাইনা তুমি কষ্ট পাও।
আমিঃ কষ্ট সেটা পরের বিষয়। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
নিলিমাঃ দেখো তুমি শুধু শুধু জেদ করতাছো একদিন তুমি সত্তি কষ্ট পাবা।
আমিঃ কষ্ট তো এমনিতেও পাবো। তার চাইতে ভালো সুখটাকে একটু উপভোগ করে নেই?
নিলিমাঃ তোমার ইচ্ছা।
আমিঃ তুমি আমাকে ভালোবাসে কি না?
নিলিমাঃ বাসি?
আমিঃ তাহলে যা হবার হবে তুমি শুধু আমাকেই ভালোবেসো।
নিলিমাঃ আই লাভ ইউ।
আমিঃ আই লাভ ইউ টু….
তারপর থেকে শুরু হলো আরো একটি প্রেম কাহিনি।
হাসি ঠাট্টা কখনো খুব ইমোশনাল হয়ে যাওয়া কখনো বা অনেকটা ভালোবাসা নিয়ে কথা হতো আমাদের খুনশুটি তে মেতে গেল দুটি মন।
তেমনি একদিন,
আমিঃ কেমন আছো জানু?
নিলিমাঃ এইতো ভালো বাবু তুমি কেমন আছো?

আমিঃ ভালো?
নিলিমাঃ কি করতাছো?
আমিঃ বসে আছি তুমি?
নিলিমাঃ আম খাইতাছি?
আমিিঃ কাচা আম খাচ্ছো?
নিলিমাঃ হুমম জান।
আমিঃ আমাকে তো একবারো খেতে বললা না?
নিলিমাঃ সরি জান খাবা তুমি দাড়াও খাইয়ে দিতাছি?
আমিঃ হুমম দাও?
নিলিমাঃ নাও হা করো?
নিলিমাঃ উহহহ এটা কি করলা তুমি?
আমিঃ কি করলাম আমি?
নিলিমাঃ কামর দিলা কেনো?
আমিঃ অনেক মজা হইছে তো তাই? ব্যাথা পাইছো তুমি?
নিলিমাঃ হুমম।
আমিঃ দাড়াও ব্যাথা কমিয়ে দিতাছি?
নিলিমাঃ কিভাবে?
আমিঃ তোমার আঙ্গুলে একটা কিস করলেই ব্যাথা কমে যাবে?
নিলিমাঃ সেটা তো হচ্ছে না?
আমিঃ কেনো?
নিলিমাঃ এইগুলা বলতে নাই বাবু আল্লাহ পাপ দিবে?
আমিঃ তবুও দিবো।
নিলিমাঃ আমি কি বলছি?
আমিঃ আচ্ছা দিবোনা?
আমিঃ তোমার husband কেমন আছে?
নিলিমাঃ মানে?
আমিঃ যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে?
নিলিমাঃ তুমিও মজা করলা করো আমি গেলাম?
আমিঃ সরি বাবু সরি আর হবে না এবারের মতো মাফ করে দাও।
এভাবে প্রায় বিশটা মেসেজ তবুও কোনো রিপ্লাই নাই এবার রেগে গেলাম আমি?
আমিঃ আচ্ছা যাও কথা বলতে হবে না আমি নিজেই চলে যাইতাছি?
নিলিমাঃ বাবু রাগ করছো?
আমিঃ নো রিপ্লাই।
নিলিমাঃ সরি বাবু?
আমিঃ নো রিপ্লাই।
এভাবেই চলছিলো একজনের রাগ ভাঙাতে গিয়ে আরেকজন রেগে যায়।
এভাবে কেটে গেল দুবছর। এর মধ্যে অনেকটা ভালোবেসে ফেলছি দুজন দুজনকে। কেউ কাউকে ছাড়া একটা মুহুর্ত কল্পনাও করতে পারি না।
আজকে হঠাৎ মেসেজ করে বললো,
নিলিমাঃ দুদিন পর আমার বিয়ে তুমি কিছু একটা করো?
আমিঃ দুদিন পর বিয়ে আগে বলোনি কেন?
নিলিমাঃ আমি তো জানতাম না আজকেই জানলাম?
আমিঃ আমাদের ব্যাপার এ কিছু জানে তোমার বাড়িতে?
নিলিমাঃ না। আর আমি কিছু জানাতেও পারবো না?
আমিঃ তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
নিলিমাঃ হুমম।
আমিঃ পালিয়ে যেতে পারবে আমার সাথে?
নিলিমাঃ হুমম পারবো?
আমিঃ তাহলে আজকে বিকেল এ তুমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়বা কুমিল্লা রেলওয়েতে আমি আসতাছি?
নিলিমাঃ আমাকে চিনতে পারবা তো?
আমিঃ তোমার পিক তো আছেই কেন পারবো না।
নিলিমাঃ আচ্ছা তুমি আসো?
তারপর মেসেজ দিলাম আমার বন্ধুকে ওর সাথেও এফবিতে পরিচয়।
ও একদিন বলছিলো কোনো কিছুর দরকার হলে বলতে তাই ওকে সবকিছু খুলে বললাম। তারপর ওকে নিয়ে সকালের ট্রেনেই চলে আসলাম কুমিল্লা অনেক টেনশন আর উত্তেজনা কাজ করতাছে মনের ভিতর।
শেষমেষ চলেই আসলাম কুমিল্লা রেলওয়েতে ।কিন্তু নিলিমাকে কোথায় খুজবো। ফোন দিলাম ওকে ,
আমিঃ কোথায় তুমি?
নিলিমাঃ তিন নম্বর প্লাটফর্ম এ ।
আমিঃ ওখানেই দাড়াও আমি আসতাছি?
ওইতো নিলিমাকে দেখা যাচ্ছে দুই বন্ধু মিলে খুজে বের করলাম ওকে।
নিলিমা আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো?
আমিঃ কি করছো সবাই দেখছে তো।
নিলিমাঃ দেখুক।
আমিঃ যাবেনা তুমি? নাকি এখানেই থাকবে?
নিলিমাঃ যাবো তো ?
আমিঃ তাহলে চলো?
নিলিমাঃ হুমম চলো।
আমি ওর চোখে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আমার জন্য ভালোবাসা নইলে এভাবে কেউ কারো জন্য বিয়ে ছেড়ে আসতে পারে না মনের টান আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
ট্রেনে উঠে পড়লাম দুজনে।
আমিঃ কিরে বাদশা তুই যাবিনা?
বাদশাঃ তোরা যা আমি পরের ট্রেন এ যাবো?
ওকে একবার বুকে আলিঙ্গন করলাম।
বাদশাঃ যা শালা এবার বউকে নিয়ে যা।
আমিঃ আমি তোর কাছে সারাজিবন ….
বাদশাঃ একটা থাপ্পর দিবো শালা তুই যা।
আসলে বন্ধুরাই পারে যে কোনো পরিস্থিতিতে সঙ্গে থাকতে।
ট্রেন ছুটে চলেছে।
নিলিমা আর আমি বসে আছি পাশাপাশি।
নিলিমাঃ তোমার বুকে মাথা রাখি?
আমিঃ তখন জড়িয়ে ধরার সময় জিজ্ঞেস করছিলা?
নিলিমাঃ না মানে এখন লজ্জা লাগছে?
আমিঃ ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
থাকুক এভাবে সারাজিবন।
অবশেষে আমি তাকে পেলাম।
ছুটে চলেছি ট্রেনের সাথে স্বপ্ন পুরনের পথে।

………………………………………..সমাপ্ত……………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত