নারিকেল পাতার নাকফুল

নারিকেল পাতার নাকফুল

অনন্যা ভালবাসে বাপ্পিকে। আর শাওন ভালবাসে অনন্যাকে। কিন্তু বাপ্পি কি ভালবাসে অনন্যাকে….???
শাওন আর অনন্যা একই কলেজের একই বর্ষের ছাত্র-ছাত্রী। শাওন অনেক মেধাবী আর অনন্যা অনেক উচ্চ পর্যায়ের অভিনেত্রী। এই দুই জনকে এক সাথে দেখলে সবাই বলে মানিকজোড়। শাওন আর অনন্যা কখনই পড়া-শোনাই করে না। কিন্তু তাদের পরিক্ষার ফলাফল অভাবনীয় হলেও ভালো। ওরা দুজন ৫ম শ্রেণী থেকেই এক সাথে আছে।
ssc পরীক্ষার হলে শাওন দেখিয়ে ছিল তার মেধার নজির। ১ম পরীক্ষার সময় দুই জন আলাদা রুমে বসলেও পরের দিন থেকে এক সাথেই বসেছিল। কারন শাওন দ্বিতীয় পরীক্ষার আগের রাতে পরিক্ষার হলে চোরের মত ঢুকে সব ছিট নম্বর গুলো উল্টো পাল্টা করে দেয়। আর কোন প্রশ্ন কমন না পড়ার পরেও দুজনই ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করে যায়। কারণ শাওনের বুদ্ধিতে অনন্যা হলের সব গুলো ছেলেকে তার রূপের জালে ফাঁশিয়ে নেয়। পরীক্ষা চলাকালীন সব গুলো ছেলেকে অনন্যা নিজের ফোন নাম্বার দেয়। আর বলে দেয় ssc পরীক্ষা শেষ হলে ফোন করে যোগাযোগ রাখতে। যথারীতি পরীক্ষা শেষ করে সবাই অনন্যাকে কল করে। আর শাওন ফোনের মধ্যে সবার গুশটি উদ্ধার করে কারণ নাম্বারটা যে শাওনের.. ভালবাসাটাও তো শাওনেরই।
আর বাপ্পিতো এক অচেন পাখি। তাকে তো কখনই অনন্যা দেখেই নি। বাপ্পির একটা কবিতা পরেছিলো অনন্যা। আর তাও ফেসবুকের একট বিখ্যাত গ্রুপে…………
কবিতাঃ নারিকেল পাতার নাকফুল……
জানো তুমি কত বেশি করে খুঁজেছি তোমায়..
জানি তুমি লুকিয়ে আছো পাইনা তাই আজো..
আমি জানি তুমি আমায় দেখতে পাওনা…
কিন্তু তাও মন দিয়ে তুমি আমাকে খোঁজো..
আমি থাকি তোমার মনের অনেক বেশি কাছে….
আমি কিন্তু আওয়াজ পাই তোমার প্রতিটি নিশ্বাসের….
তুমি ভালবাস না আমার মনের অফুরন্ত ভালবাসাকে…
তবে আশা করি তুমি মর্যাদা দিবে আমার বিশ্বাসের……
জানো কত ভালো লাগে আমার নারিকেল পাতা…..
অনেক ইচ্ছে হয় আমার একসাথে ভিজবো দুজন….
তুমি দুহাতে তুলে নিবে নারিকেল পাতার ছোয়া পানি…..
আমায় ভালবেসে হবে তুমি সখি আর আমি সুজন…..
তুমি ভালবাসো আমার অবাস্তব অদৃশ্য অন্তর সত্যাকে……
আর আমি ভালবাসি তোমার খোলা লম্বা কালো চুল….
আমি কিন্তু অতি গরীব নারিকেল পাতার কারিগর….
তাই তোমার জন্য তৈরি করছি নারিকেল পাতার নাকফুল…
আমি বহু চেষ্টা করেও পারছিনা বানাতে তোমার মনের মত….
নাকফুল বানাতে গিয়ে ভেঙেছি নারিকেল পাতা কত কত……
মনে অনেক বেশি আশা এবার একচুল হবেনা কোন ভুল….
তোমার জন্য বানিয়ে দেখাবো নারিকেল পাতার নাকফুল….
দেখোনি তুমি একবারও আমায়, তাই দেখার ইচ্ছা অনেক বেশি
অপেক্ষা করোগো, যতদিন না সফতা পেয়ে ফিরে আসি…..
স্বপ্নে দেখেছি তোমার খোলা চুল আর নাকে সবুজ নাকফুল…
তাই খুব জলদি সামনে এসে দাঁড়াবো তোমার, হাতে নিয়ে নারিকেল পাতার নাকফুল…..
কবিতাটি অনন্যার মনে আঘাত করে। অনন্যা কবিতার নায়কের হাতের নাকফুলটি পড়ার জন্যে ব্যাকুল হতে সুরু করে। নারিকেল পাতা অনন্যার অন্তরে গেথে গেছে। অনন্যা তাই Bappy Tro নামের আইডিতে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েই দিলো…… অনন্যা কিছুটা অবাক হলো… রিকুয়েস্ট পাঠানোর সাথে সাথেই একছেপ্ট করে নিলো……
অনন্যাঃ Hi…..
বাপ্পিঃ hi Madam….
অনন্যাঃ হাহাহা….
বাপ্পিঃ অকি কান্দো কে…….
অনন্যাঃ অই আপনার কি মাথায় সমস্যা নাকি…??
বাপ্পিঃ কেন কেন…??
অনন্যাঃ না এমনি…. আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করলে রাগ করবেন আপনি…..??
বাপ্পিঃ করতেও পারি… কিন্তু মনে হয় করবো না।
অনন্যাঃ হুহ আপনি আসলেই পাগল.. আচ্ছা আপনি কি সত্যি নারিকেল পাতার নাকফুল বানাচ্ছেন….??
বাপ্পিঃ হুম বানাচ্ছি…. কিন্তু কেন..??
অনন্যাঃ না এমনি….আচ্ছা কার জন্য বানাচ্ছেন…??
বাপ্পিঃ হুমম… আসলে অনেক গুলো মেয়েকে পটানোর চেষ্টা করতেছি… যেটাকে পটাতে পারবো তাকেই পড়িয়ে দিবো…..
অনন্যাঃ ইসসস……বললেই হলো।
বাপ্পিঃ মামম….মানে মানে…..??
অনন্যাঃ bye, bye……
বলেই অনন্যা ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলো। অনন্যার একটু খারাপ লাগলো। সে ভাবলো নাকফুল শুধু আমার।
তখনই শাওন দৌড়ে এসে অনন্যাকে বললো।
শাওনঃ অনু আমার জানু, তোর জন্য একটা দুই নাম্বার খবর আছে…….
শাওন আর অনন্যার জন্য দুই নাম্বার খবর মানে অনেক বেশি খুশির খবর। কিন্তু অনন্যা চুপ হয়ে আছে। ওর ভাবনায় এখন শুধু নারিকেল পাতার নাকফুল আর বাপ্পি। শাওন কিছুটা অবাক অনন্যা কিছু বলছে না। শাওন একটু উদ্বিগ্ন চেহারাহ…….
শাওনঃ অনু তোর কি মন খারাপ। কি হয়েছে অনু। তোর শরীর খারাপ হয়েছে নাকি……??
অনন্যাঃ (মাথা নিচু করে) নারে এমনি কিছু হয়নি।
শাওনঃ তাহলে কি হয়েছে বলনা অনু।
অনন্যাঃ উফফফ… বিরক্ত করিস না। ভাল লাগছে না।
বলেই অনন্যা চলে গেলো। শাওন একটু কষ্ট পেল আর অবাকও হলো….
দুই নাম্বার খবরের কথা শুনলেতো তার অনু খুশিতে পাগল হয়ে যেতো। শাওন মনে মনে বলতে লাগলো…. অনু তুই যদি শুনতি আজকের খবরটা তুই সত্যিই আজ পাগল হয়ে যেতি। অনু আমার জানু মাযে তোকে আমার বউ করতে চায়। যাক যখন তোর মন ভাল হবে তখনই বলবো তোকে।
অনন্যা রাতে আবার ফেসবুকে বসে বাপ্পির প্রোফাইলে ঢুকে দেখে নতুন একটি কবিতা।
কবিতাঃ চেহারা ভালো না……
মেয়ে তোরে ভালবাসতে চাই, চাই গো অনেক বেশি…
তাইতো তোরে পটাতে চাই সকাল সন্ধ্যা রাতে…
মেয়ে বলনা তুই কোন দোষেতে আমায় মন দিলি না…
মেয়ে আমার চেহারা ভাল না, তাই বলে মনতো কালো না….
চেহারা ভাল না, চেহারা ভালো না, এই কথা শুনবো আর কত…
মেয়ে তুই কি চাস ভালবেসেই তোর কাছে মাথা রাখতে হবে নত…
আচ্ছা বলোনা কেন আজো তোমায় পাওয়া হলো না…
দোষ যে শুধু একটাই, দেখতে আমার চেহারা ভালো না…
মেয়ে কলিজাতে ব্যেথা করছে যে অনেক খানি বেশি….
কসম তোরে একই রকম ভালবাসবো বয়স হলেও আশি….
মেয়ে আমায় এই একই দোষে তুই আর দূর করিস না….
মেয়ে আমার চেহারা ভাল না বলে আর কষ্ট দিস না….
আমি যে মেয়ে তোর ভালবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল…..
তাই তোর নাকে তুলে দিতে চাই খুব মিষ্ট একটা নাকফুল….
কসম মেয়ে আমি তোরে কম ভালবাসবো না একচুল…..
তাই তো খুব যতনে তোর জন্য বানাচ্ছি নারিকেল পাতার নাকফুল…..
অনন্যা কবিতাটা পড়ে অনেক হাসলো। আর বাপ্পিকে মেসেজ কললো………
অনন্যাঃ অই পাগল…….
বাপ্পিঃ হাহাহা….. এসে গেছে পাগলের ডাক্তার…..
অনন্যা হাসছে আর লিখছে…..
অনন্যাঃ আচ্ছা দেখি তো তোমার চেহারা কেমন খারাপ……
বাপ্পিঃ আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ কি কয়……… কত কষ্ট করে লাইনে আনছি। এই হিরো আলমের মত চেহারা দেখাইয়া কি হারাবো নাকি…..
অনন্যা মুচকি মুচকি হাসছে…..
অনন্যাঃ অই অই লাইনে আনছি মানে কি…??
বাপ্পিঃ না না না কিছু না কিছু না…. আসলে বলতে চাইছিলাম যে আমার মুখ দেখলে তো বিপদ তখন অন্য মেয়ে পটাইতে দিবা না….
অনন্যাঃ উফফ বদের হাড্ডি আর জীবনেও কথা বলবো না……. bye.
বলেই ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলো অনন্যা।
অনন্যা বাপ্পির মুখ থেকে অন্য মেয়ের কথা শুনলেই রেগে যায়। অনন্যা রেগে লাল আর মনে মনে বলে…. শালা আমার সাথে লাইন মারো আবার অন্য মেয়ের কথা বলো.. তোরে পাইলে হাড্ডি ভাইঙ্গা গুড্ডি উড়াইতাম। অনন্যার মাথা দিয়ে অদৃশ্য লাল লাল ধুয়া উঠতে ছিলো। তখনই অনন্যার মা অনন্যাকে বললো মা আমার জন্য এক কাপ চা দিয়ে যা। অনন্যা পুরো গরম, চিৎকার করে বলতে লাগলো যদি কেউ আর একবার আমাকে ডাক দেয় তাহলে জানে মেরে ফেলবো। আসলে চা টা শাওনের জন্য আনতে বলে ছিলো। শাওন একটু চিনতিতো অনুর কি হলো। শাওন হাটতে হাটতে অনন্যার রুমে গেলো…..
শাওনঃ অনু আমার জানু, কি হয়েছে রে তোর। তুই এমন করছিস কেনো…..??
অনন্যাঃ তুই এই খান থেকে যাবি না আমি মেরে তাড়াবো তোকে…..??
শাওন নির্বাক তার অনুকে দেখে। যে অনু শাওনকে না দেখে এক মুহুর্ত থাকতে পারতো না, সে আজ এতটাই খারাপ ব্যবহার কি করে করছে। শাওন অশ্রুসিক্ত চোখ মুছতে মুছতে চলে যাচ্ছিলো আর মনে মনে বলছিলো আজ যে আমি তোর মাকে বলতে এসেছিলাম তোকে বিয়ে করবো। কিন্তু আমার জন্য অনু তোর সময় হলো না…..
অনন্যা রাগে কিটমিট করতে করতে রাগে পাগল হতে লাগলো…… অনন্যা সারা রাত আর ঘুমালো না। শাওন বেলা ১১:৩০ মিনিটে অনন্যার বাসায় এলো তার অনুকে কলেজে নিয়ে যেতে…. শাওন সরাসরি অনুর রুমে ঢুকে গেল। যেয়েই শাওন তার ঘুমন্ত অনুকে দেখে তার প্রেমে বিভোর হয়ে গেলো। অনন্যার ঘুমন্ত মুখটা দেখে শাওনের ইচ্ছে করতে লাগলো এই মায়াবি মুখটাকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে, যেন এই ঘুম আর না ভাঙে আর শাওন তার অনুর এই মায়াবি মুখটা সারা জীবন অপলোক দৃষ্টিতে দেখতে পারে।
অনন্যার মা পিছন থেকে শাওনের কাধে হাত রেখে বললো বাবা চারটা বেজে গেছে। আর কতখন এভাবে বসে বসে দেখবে ওকে।
মা আস্তে আস্তে বলেন। মা আমিতো আমার অনুকে সারা জীবন এভাবেই চোখে চোখে রাখতে চাই। একথা বলেই হাতের ইশারা দিয়ে অনন্যার মাকে বেড় করে দিল। আর শাওন গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে তার অনুকে অপলোক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো।
অনন্যা ঘুম থেকে উঠে গেল…..
অনন্যাঃ ওই তুই এই খানে কি করিস…??
শাওনঃ তোকে ডাকতে এসেছিলাম, কলেজ যাবি না।
অনন্যাঃ ওই তুই কি কিছু খাইছোস রে….??
শাওনঃ ওই মানে কি…???
অনন্যাঃ হারামজাদা রাত আট টায় কিসের কলেজ।
শাওনঃ নানন…না মানে আমি কলেজ থেকে এলাম তাই তোকে জিজ্ঞেস কছিলাম কলেজ গেলি না কেন…??
অনন্যাঃ ওহ না এমনি যাই নি…. আচ্ছা এখন যা আমি কাজ করবো….
শাওনঃ আচ্ছা তুই কাজ করলে আমাকে যেতে হবে নাকি…??
অনন্যাঃ দেখ আমার মেজাজ খারাপ করিস না, তোর সাথে বক বক করার মত আমার কাছে ফালতু সময় নেই….
কথাটা কেমন শাওনের বুকে জোরেশোরে আঘাত করলো…… শাওন পাথরের মত শক্ত হয়ে গেলো….. অনন্যা উঠে চলে গেলো। আর শাওনের দুচোখ বেয়ে আশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো। শাওন মনে মনে বলতে লাগলো অনু আজ আমি তোর কাছে ফালতু সময়। অনু এইতো সেদিন বলেছিলি আমাকে ছাড়া তোর সময় কাটে না। অনু আজ তোকে বলতে চেয়েছিলাম আমি তোকে ভালবাসি। অনু আমি কি অপরাধ করলাম যে তুই আমাকে এখন সহ্য করতে পারিস না।
শাওন একটা নিল কাগজে লিখে দিয়ে গেল “অনু আমি যে তোকে ভীষণ ভালবাসি।”
অনন্যা রুমে এসে দেখে একটা নিল কাগজ। অনন্যা কাগজটা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
এর পর ফেসবুক চালু করতেই দেখে বাপ্পি অনেক গুলো মেসেজ দিয়েছে…. আর সব গুলো মেসেজে লিখা “Sry অনন্যা আমি আর কখনো অন্য মেয়ের সাথে লাইন মারবো না। এই যে মুরগী হয়ে বসে আছি।”
অনন্যা মেসেজ গুলো দেখে অনেক অনেক হাসলো। আর বাপ্পির সাথে কথা বলা শুরু করলো….. তারা দুজোন রাত ২ টা পর্যন্ত কথা বললো।
অনন্যাঃ আচ্ছা বাপ্পি তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাও না…??
বাপ্পিঃ হুম অবশ্যই…… হ্যা তবে সময় হলেই আমি তোমার সাথে দেখা করবো আর তোমাকে আমার বুকে করে নিয়ে আসবো।
অনন্যাঃ আচ্ছা তোমার একটা ছবিতো অন্তত আমাকে দেখাবে।
বাপ্পিঃ না গো তুমি এখন আমাকে মনের গহিনে খুঁজতে থাকো, আমি খুব শিগরই তোমার হাতে ধরা দিবো।
অনন্যাঃ বাপ্পি আমি তোমার অপেক্ষায় রইলাম, কখনই আমার বিশ্বাস নষ্ট করো না। Love u a lot……
বাপ্পিঃ আমার ভালবাসা সময়ই বলে দিবে…
এর পর অনন্যা ঘুমিয়ে পরে।
পরের দিন তাড়াহুড়ো করে দুই ক্লাস পরে অনন্যা কলেজ ঢুকে দেখে শাওন বাইরে বসে আছে। অনন্যা দূর থেকে বলে অই শাওন জলদি ক্লাশে চল আর ক্লাসে ঢুকে যায়। শাওন ভেবেই পাচ্ছে না যে তার অনু তাকে ছাড়াই ক্লাসে চলে গেল..?? অনন্যার মধ্যে এতসব পরিবর্তনের মাঝে শাওন নামের ব্যাক্তিটা হারিয়ে যেতে বসেছে…….
শাওন আর ক্লাসে গেলো না। এক ক্লাস পর অনন্যা কলেজ থেকে বেড়িয়ে খুব জলদি হেটে চলে গেল। শাওন সেখানেই বসে লক্ষ করলো বিষয়টা। শাওনের বুকটায় কেমন যেন চিন চিন ব্যথা করতে লাগলো। অনন্যা কলেজের লাইব্রেরিতে বসে পরলো। শাওন বসে পরলো অনন্যার পাশের সিটটাতে। অনন্যা একটু চমকে গিয়ে বললো…..
অনন্যাঃ অই তুই এখানে কি চাস……??
শাওনঃ অনন্যা আজ অন্তত আমাকে একটা মিনিট সময় দে আমি আমার মনের কিছু কথা বলেই চলে যাবো…..
অনন্যাঃ শাওন দেখ তুই আমাকে আর বিরোক্ত করিস না। আমি খুব জরুরি একটা কাজে এসেছি এখানে, আমাকে আমার কাজ করতে দে প্লিজ…..
শাওন আর কিছু না বলেই চোখের পানি আটকে রেখে পাগলের মত চিৎকার করে হাসতে হাসতে বলতে লাগলো….
আজ আমার অনুর কাছে আমি বিরক্তিকর…. আজ যে শাওনকে আর কারো প্রয়োজন নেই। শাওন তো এখন ফালতু আর বিরক্তিকর একটা পদার্থ মাত্র।
কথাগুলো অনন্যার মনে কিছুটা আঘাত হানলো। অনন্যা ভাবতে লাগলো কি হল আবার পাগলটার। অনন্যার কাছে ব্যাপারটা একটু বেদনাদায়ক হয়ে দাঁড়ালো। অনন্যা পিছু নিতে শুরু করলো শাওনের। শাওন হাটতে হাটতে নদীর পাড়ে এসে বসলো আর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো….
শাওন তার কাধে আলতো ছোয়া পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে তার অনু দাঁড়িয়ে….
অনন্যাঃ শাওন দেখ আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমার অজান্তেই আমি দিন দিন তোর থেকে দূর হয়ে গেছি।
শাওন ছলছল চোখে অনন্যার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…..
অনন্যাঃ শাওন আসলে নিজের জন্য একটু আনন্দ খুঁজতে গিয়ে আমাদের বন্ধুত্বে একটু দূরত্ব বেড়ে গেছে, হয়তো তোর প্রতি অনেক অনন্যায় করেছি। শাওন তুই আমাকে একটু সময় দে, দেখিস তুই তোর আগের অনুকে ফিরে পাবি।
শাওনের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতেই রইলো……
অনন্যাঃ শাওন প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর। আর দেখ এমনিতেও আমার একদিন বিয়ে হয়ে যাবে আর আমাদের মধ্যকার দূরত্বটা তখন আবার কিন্তু বেড়ে যাবে….. এই বলেই অনন্যা উঠে যেতে লাগলে শাওন অনন্যার হাত ধরে বলে…..
শাওনঃ (কাঁদতে কাঁদতে) আচ্ছা অনু তুই আমাকে বিয়ে করে নে না। আমি যে তোকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসি।
অনন্যাঃ ধুর তোর কি মাথা খারাপ নাকি… এটা হয় নাকি…??
শাওনঃ কেন হয় না….. আচ্ছা অনু আমি কি তোকে কম ভালবাসবো নাকি…. অনু প্লিজ অনু, অনু, অনু তুই না করিস না অনু। আমি যে তোকে ছাড়া মরেই যাবো।
অনন্যাঃ শাওন পাগলামি করিস না। দেখ আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না।
শাওনঃ থাক অনু আমার জন্য আর তোকে ভাবতে হবে না। তুই যা তোর মত করে বাঁচ, আমি আর তোকে জালাবো না…..
শাওন উঠে হাটা শুরু করলো…… অনন্যা শাওনের এই অবস্থা দেখে নিজের অজান্তেই কাঁদতে শুরু করলো…… মনে মনে বলতে লাগলো শাওন তুই আমাকে মাফ করে দিস। আমি যে অন্য কাউকে ভালবাসি। অনু তোর ভালবাসার যোগ্য না।
অনন্যা বাসায় চলে আসে। রুমে ঢোকার সময় মা ডেকে বসে….. অনু মায়ের পাশে যেয়ে সোফায় বসে…….
মাঃ অনু মা তুই কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিতো…??
অনন্যা চুপ করে বসেই আছে……….
মাঃ মা আমার একটা কথা রাখনা না মা। আমি মা হয়ে তোকে অনুরোধ করছি, তুই শাওন কে আর কষ্ট দিস না…….
অনন্যা মাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে
কেঁদে বলতে লাগলো……
অনন্যাঃ মা শাওন যে অনেক বড় মনের মানুষ, মাগো তোমার মেয়ে শাওনের যোগ্য না…… তোমরা আমাকে মাফ করে দিও মা।
অনন্যা দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। আর ফেসবুকে ঢুকেই বাপ্পিকে মেসেজ করলো…
অনন্যাঃ বাপ্পি, প্লিজ বাপ্পি, তুমি আমার কাছে এসে আমাকে সবার কাছ থেকে মুক্তি দাও নাগো…….
অনেকখন পর রিপ্লাই এলো…..
বাপ্পিঃ অনন্যা একটু ধৈর্য ধর না গো…. আমায় একটু সময় দাওনা গো…. আমি খুব শিগরই আসছি তোমার কাছে।
অনন্যাঃ বেশি দেড়ি করো নাগো… অপেক্ষা করতে করতে তোমার অনন্যা মরেই না যেন যায়…….
বাপ্পিঃ অনন্যা আমার উপর একটু বিশ্বাস রাখো প্লিজ…..
অনন্যাঃ তোমায় কিভাবে বোঝাই বলো, আমি যে নিজের চেয়েও বেশি তোমাকে বিশ্বাস করি…. আমার যে আর দেড়ি সয় না।
বাপ্পিঃ অনন্যা কথা দিলাম আমি তোমায়, আমি যেদিন নারিকেল পাতার নাকফুল বানিয়ে ফেলবো, সেদিনই তোমার কাছে ফিরে আসবো……
অনন্যাঃ তুমি কবে পারবে বানাতে…
বাপ্পিঃ যেদিন তোমার ভালবাসার যোগ্য হতে পারবো……..
অনন্যাঃ তোমার অপেক্ষায় রইলাম বাপ্পি…
বাপ্পিঃ আমি আসছি অনন্যা খুব জলদি….
অনন্যা নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে……. সকালে ঘুম থেকে উঠে অনন্যা কলেজ যায়… আজ এক মিনিটও দেড়ি করেনি অনন্যা। সারা কলেজ তন্নতন্ন করে খুজেও কোথাও পায়নি শাওনকে…. সাথে সাথেই চলে গেল শাওনের বাসায়… সেখানেও নেই শাওন। অনন্যা নদীর ঘাটে এসে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। এখানেও নেই শাওন….. অনন্যা মন খারাপ করে বসে রইলো নদীর পারে। অনন্যার মনে মনে ভাবছে “খুব বেশি কষ্ট দিলাম কি শাওনকে?”
এমন সময় অনন্যা বুঝতে পারলো তার পাশে কেউ বসেছে……..
অনন্যাঃ কিরে হারামি কই ছিলি তুই….??
শাওনঃ জেনে কি হবে…??
অনন্যাঃ রাগ করেছিস আমার সাথে তাই না…..??
শাওনঃ না করিনি……
অনন্যাঃ কেন করিস না তুই রাগ…..??
শাওনঃ (কেঁদে কেঁদে) অনু আমি যে তোর মুখটা না দেখে থাকতে পারি না। তোর কাছে না এলে আমার যে ভীষণ কষ্ট হয়।
তুই তো আমার সব আনন্দ…. তোর মাঝেই আমার সব সুখ। কি করে রাগ করবো তোর সাথে……
অনন্যাঃ আচ্ছা শাওন তোর কি মনে হয় আমি তোর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য…??
শাওনঃ অনু প্লিজ সব কথা বাদ দে অনু। আমার কিছু শোনার ইচ্ছে নেই, তুই শুধু বল তুই আমার হবি…..
অনন্যাঃ দেখ শাওন এটা হয় না…….
শাওনঃ কেন হবে না, আমি কি অপরাধ করেছি বল….??
অনন্যাঃ চোপ মাথা মোটা….. আচ্ছা তুই কখনো আমাকে তুমি করে বলতে পারবি…?? আমাকে কখনো শাসন করতে পারবি…..??
শাওনঃ না পারবো না, কিন্তু মন ভরে ভালবাসতে তো পারবো…..
অনন্যাঃ শাওন মুখের কথায় জীবন চলে না……. দেখ তুই আমার জীবনের সব থেকে ভাল বন্ধু আর আমি চাই না আমাদের সুন্দর এই সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাক……
শাওন উঠে হাটতে হাটতে সেখান থেকে চলে গেল…. অনন্যা শাওনের চলে যাওয়ার ধরন দেখে নিজের চোখের পানি আর আটকাতে পারলো না। যে মানুষ টাকে ঘিরে জীবনের সব আনন্দ, উল্লাস ছিলো তাকে এতটা কষ্ট পেতে দেখে খুব বেশি অপরাধবোধ হচ্ছে অনন্যার। অনন্যার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো… শাওন তোর অনু জানে তোর মত এত ভালো এই পৃথিবীর কেউই তোর অনুকে বাসতে পারবে না। আমি জানিরে শাওন তোর ভালবাসার কাছে বাপ্পির ভালোবাসা তুচ্ছ….. আমি যে তোকে খুশি করতে পারলে জীবনে সবচেয়ে বেশি খুশি হতে পারতাম। আমি যে অন্য কাউকে কথা দিয়েছি জীবন সংগী করবো বলে।”
রাতে অনন্যা বাপ্পিকে অনেক বার মেসেজ করে, কিন্তু বাপ্পি কোন জবাব দেয় না। অনন্যার খুব খারাপ লাগছিলো বাপ্পিকে অনেক বেশি দেখতে ইচ্ছে করছিলো। সারা রাত কেঁদেই পার করে দিলো অনন্যা। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অনন্যা দেখলো অনন্যার সারা ঘর ফুলে ফুলে ভরা, আর তার বিছানার পাশে একটা রঙিন খাম। খামটা খুলে অনন্যা দেখে একটা চিঠি……
অনু আমার জানু,
তোর জীবন এই তুচ্ছ ফুল দিয়ে সামান্য রঙিন করার চেষ্টা টুকু করলাম মাত্র। আমি হয়তো তোর মনের মত হতে পারিনি বা তোর যোগ্যই ছিলাম না। জীবনে তুই আমাকে অনেক বেশি আনন্দ, অনেক বেশি খুশি দিয়েছিস। এই সুখকর স্মৃতি মরে গেলেও ভুলতে পারবো না। যানিস অনু আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহানায় তোকে কোলে তুলে নিতাম। আসলে আমি তোর শরীরের গন্ধটা তোর অনুমতি ছাড়াই নিয়ে নিতাম। তাই আজ তোকে ছেড়ে চলে যেতে সময়ও প্রাণ ভরে তোর শরীরের গন্ধটা শুকে নিয়েছি। আমি একটা অন্যায় করেছি রে অনু…. তোকে না বলেই তোর সখের টেডিবিয়ার টা নিয়ে গেলাম, মরার আগ পর্যন্ত যেন তোর শরীরের গন্ধটা নিতে পারি। অনু জানি না তোকে ছাড়া কত দিন বাচবো কিন্তু অনু তোকে প্রতিটা সেকেন্ড আমার মনের মত করে ভালবাসবো। অনু জানিস আমি কেন সব মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম….. কারণ শাওন যে শুধু অনুকেই মন ভরে দেখতে চাইতো। আর এখন শাওন তার অনুকে দেখতে পারবে না অনু। অনু আমি জীবনে কখনওই কাদিনি…. অনু দেখ আজ তোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি তাই কাঁদতে কাঁদতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
অনু যদি আমাকে আর কখনো ফিরে না পাশ তাহলে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাস, আমার মত কপাল পোড়াকে……….. অনু আমার জানু তুই অনেক বেশি সুখে থাকিস, তুই সুখি হলে তোর শাওন মরেও শান্তি পাবে। অহ অনু তোকে একটা কথা কখনো বলিনি, আসলে বলার সাহস পাই নি। অনু তোর গোলাপি লেহেঙ্গাতে তোকে একদম একটা মায়াবি পরীর মত লাগে, ওই লেহেঙ্গায় তোকে যত দেখেছি ইচ্ছে করতো এই সুন্দর পরীটাকে বুকের ভিতর খুব যতনে আগলে রাখি। অনু তোকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছি, মাফ করে দিস। ওই ছেলে পৃথিবী সব চেয়ে ভাগ্যবান যে তোর ভালবাসা পাবে। আর সেই সব থেকে অভাগা যে তোর কলিজার কাছে থেকেও পেল না তোর ভালবাসা।
শুভ বিদ্যায়,
অনু আমার জানু …….. Love You Jan
চিঠিটা পড়েই অনন্যা পাগলের মত চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো…. আর চিৎকার করে বলতে লাগলো…..
শাওন তুই যে আমার কি, তুই বুঝলি না। তোর ভালবাসা পাওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তুই যে হাজারও মেয়ের স্বপ্ন। তোকে পাওয়ার ভাগ্য কি আমার মত অভাগীর আছে…… ফিরে আয় শাওন প্লিজ ফিরে আয়। শাওন বাপ্পি আমার জীবনে না এলে যে তোর অনু শুধু তোরই থাকতো………
অনন্যা ছুটে চলে গেল কলেজে কিন্তু শাওনটা যে চলে গেছে। অনন্যা নদীর পাড়ে যেয়ে দেখে সেখানেও নেই শাওন। সারা দিন অপেক্ষা করলো শাওনের জন্য কিন্তু শাওনতো আর আসবে না। অনন্যা রাতে আর বাসায় গেল না গেল শাওনের বাসায়। দেখে তালা ঝুলছে শাওনের বাসার গেটে। অনু চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো শাওন তোর অনুর যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, ফিরে আয় না রে শাওন প্লিজ ফিরে আয়।
তখনই একটা ফোন আসে অনন্যার ফোনে….
অনন্যা নিজের চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো…..
অনন্যাঃ হ্যালো…..
কাঁদোকাঁদো গলায় অপর দিক থেকে কেউ বললো…….কাঁদিস নারে অনু……
অনন্যাঃ শাওন, শাওন লক্ষ্মীটি রাগ করিস না প্লিজ ফিরে আয়…. দেখ শাওন তোর অনুর খুব কষ্ট হচ্ছে…..
টুট….টুট…..টুট করে লাইনটা কেটে গেলো….
অনন্যা পাগলের মত কাঁদছে আর বার বার ওই নাম্বারে কল করেই যাচ্ছে। কিন্তু লাভ কি তাতে নাম্বারটা যে বন্ধ হয়ে গেছে……
অনন্যা চিৎকার করে বলছিলো শাওন তুই কিভাবে পাড়িস তোর অনুর সাথে রাগ করতে……
শাওন মনে মনে বলতে লাগলো অনু তোর গলাটা শুনতে ইচ্ছে করছিলো, তাই আরেক বার বিরক্ত করলাম…. Sry Janu…
তার পর থেকে প্রায় একমাস হয়ে গেলো অনন্যা শাওনকে পথে পথে পাগলের মত খুজতে শুরু করে কিন্তু শাওনকে তো আর পাওয়া যায় না। অনন্যা তাদের একসাথে চলা সকল পথে খুজেছে শাওনকে………
বাপ্পির সাথে এখন সকাল সন্ধে রাত সব সময় ফেসবুকে কথা হয় অনন্যার। বাপ্পিকে দেখা করার কথা বললেই বাপ্পি বলে একটু অপেক্ষা কর নারিকেল পাতার নাকফুলটা বানানো হলেই চলে আসবো তোমার কাছে।
অনন্যাঃ বাপ্পি সত্যি করে বলনা তুমি আমার কাছে কেন আসো না…?? আমি কি খুব খারাপ…?? তুমিও কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বাপ্পি…..??
বাপ্পিঃ ধুর পাগলি কি যে বলো….. তুমি যে আমার স্বপ্ন, আমার একমাত্র ভালবাসা। তোমার কাছে আসতে আমার ভয় হয় যদি আমাকে দেখে তোমার পছন্দ না হয়…….
অনন্যাঃ তুমি কি বুঝবে নাকি তুমি কি… আমি যে তোমার জন্য কি হারিয়েছি সেটা শুধু আমি আর আমার উপরওয়ালাই জানি। প্লিজ বাপ্পি আর কষ্ট দিয়ো না আমাকে। এবার ধরা দাও আমাকে।……
বাপ্পিঃ কথা দিয়েছি না তোমাকে নারিকেল পাতার নাকফুল বানানো হলেই চলে আসবো তোমার সামনে…… bye অনন্যা।
আজ অনন্যার জন্মদিন অনন্যা শাওনের অপেক্ষায় বসে আছে….. কখন শাওন আসবে আর প্রতিবারের মত সব কিছু নষ্ট করে দিয়ে অনন্যাকে রাগাবে আর বলবে..
প্রতিদিন আশুক এমন দিন যেন দেখতে পাই আমার পরীকে…. অনু তুই যে একটা মায়াবী পরী। তোর জন্য সব দিন এক একটা বিশেষ দিন… আলাদা করে কোন দিন পালন করতে হবে না……..
নাহ আজ আর কেউ এই কথা বলবে না কারণ বলার মানুষটা অভিমান করে পালিয়ে গেছে….. অনু শাওনের কথা ভেবে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো তখনি একটা গাড়ী অনন্যাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছিলো এমন সময় কেউ একজন লাফ দিয়ে এসে অনন্যাকে জরিয়ে ধরে রাস্তার পাশে পড়ে গেলো……
অনন্যা খুব শক্ত করে সেই কেউ একজনকে ধরে রেখেছে তাকে যে ছাড়ছে না….. হঠাৎ করে উড়ে আশা লোকটার গায়ের গন্ধ যে অনন্যার চীর চেনা…….. সেই কেউ একজনটা যে আর অন্য কেউ নয় পাগল শাওনটা
শাওনঃ অনু চোখ খোল…. রাস্তার সবাই দেখছে ছাড় আমায়……
অনন্যাঃ পাগল নাকি….. কি ভাবিস তুই কত কষ্টে পেয়েছি তোকে, আর পালাতে তো দেব না তোকে…..
শাওনঃ আচ্ছা ছাড় যাবো না……
অনন্যাঃ সত্যি বলছিস তো…..
শাওনঃ হুম…..
অনন্যা আর শাওন উঠে দাঁড়ালো……
শাওনঃ অনু চোখ বন্ধ কর একটা খুব ভাল জিনিস দেবো তোকে…..
অনন্যা চোখ বন্ধ করে রাখলো কিছু খন পর শাওন অনুর হাতে একটা কাগজ দিয়ে বললো চোখ খুলবি না দাড়া একটু…… অনন্যা চোখ বন্ধ করে দাড়িয়েই রইলো, অনেকখন পরে কোন শব্দ না পেয়ে অনন্যা চোখ খুলে দেখে শাওন আবার তাকে রেখে চলে গেছে অনন্যা শাওনের দেওয়া কাগজটা চোখ মুছতে মুছতে পড়া শুরু করলো…..
অনু আমার জানু,
খুব ইচ্ছে করছিলো তোকে দেখতে তাই এসেছিলাম তোকে দূর থেকে দেখবো বলে কিন্তু আল্লাহ্‌ আবার আমাকে তোর কাছে নিয়ে এলো। তবে হয়তো উপরওয়ালা যা করেন ভালোর জন্যেই করেন, আজ আবার মন ভরে তোর শরীরের গন্ধ নিয়ে গেলাম….
লিখাটা পড়ে অনন্যা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো……. শাওন তুই আমাকে কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছিস……..
রাতে অনন্যা বাপ্পিকে মেসেজ করলো…..
অনন্যাঃ তুমি কি আমায় চাও না বাপ্পি..??
আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছিনা…..
বাপ্পিঃ অনন্যা আর একটু এইতো সময় হয়ে এসেছে আমি চলে আসছি তোমার কাছে… অনন্যা তুমি তো অপরূপ সুন্দরি… আর আমার চেহারাতো ভালো না… আমকে কি তোমার পাশে মেনে নিবে তোমার পরিবার……..
অনন্যাঃ যদি আমার ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকে তাহলে এসে নিয়ে যাও আমাকে…..
বাপ্পিঃ আমি আসছি অনন্যা……..
অনন্যা ঘুমিয়ে পরলো…… এর কিছু খন পরই চুপি চুপি শাওন অনন্যার রুমে ঢুকে… আজ শাওনের অনেক ইচ্ছে করছিলো অনন্যার ঘুমন্ত মায়াবি মুখটা মন ভরে আবার দেখবে। রাত ৩ টা বাজে শাওন এক দৃষ্টিতে তার অনুকে দেখছিলো এমন সময় অনন্যা আচমকা শাওনের হাত ধরে ফেলে……..
অনন্যাঃ প্লিজ শাওন পালিয়ে যাসনে আবার প্লিজ……..
শাওনঃ হুহ আমি কে যে তুই আমাকে আটকে রাখবি…….??
অনন্যাঃ তুই আমার কেউ না, তবুও তোকে ছাড়া থাকা অসম্ভব…..
শাওনঃ আচ্ছা যদি তোর কাছে একটা জিনিস চাই তুই দিবি আমায়…..
অনন্যাঃ বল তোর কি চাই তাই দিবো তোকে। তুই প্রয়োজন হলে আমাকে নিয়ে নে তবুও কষ্ট নিস না শাওন…..
শাওনঃ আচ্ছা যা চাইবো দিবিতো…….??
অনন্যাঃ তোর কছম যা চাইবি তাই দিবো….
শাওনঃ আচ্ছা তাহলে আজকের মত ছেড়ে দে। আমার একটু কাজ আছে এর পরের বার এলে আমাকে আটকে রাখিস।
অনন্যাঃ শাওন তোর অনুর সাথে কি করে এতো রাগ করতে পারিস তুই……??
শাওনঃ এই চিঠিটা রাখ আমি যাওয়ার পরে পড়ে নিস………
বলেই শাওন জানালা দিয়ে এক লাফে বেরিয়ে গেলো……
অনন্যা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করলো…….
অনু আমার জানু,
অনু কি করবো বল, আমার মন যে মানে না আমি তো তোকে খুব বেশি ভালোবাসি, তাই বার বার ছুটে আসি তোর কাছে। অনু কি করে বোঝাবো আমি যে খুব বেশি দিন বাচবো না তোকে ছাড়া। অনু তুই তো বলতি যে আমার চোখে যাদু আছে, আমি যে কোন মেয়েকে বশ করে নিতে পারি। তাহলে কেনো তোকে বশ করতে পারলাম না। আসলে তুই মিথ্যে বলেছিলি…… তোর ভালবাসা পাওয়ার জন্য কত কষ্ট পেলাম কিন্তু দিলি না তোর ভালবাসা। তাই এখন করি না আর কোনো সুখের আশা। অনু তোর বালিশের নিচে আমি একটা দুই নাম্বার জিনিস রেখে আসছি, দেখে নিশ……..
অনন্যা দুই নাম্বার কথাটা শুনে পাগলের মত তার বালিশের নিচে হুমড়ি খেয়ে পরে….. দেখে ময়লা একটা ঠোঙ্গা মোরানো, খুলে যা দেখলো তার জন্য অনন্যা একদমই প্রস্তুত ছিল না…… এর ভিতর একটা চিঠি আর একটা নারিকেল পাতার তৈরি নাকফুল…
আর চিঠিটাতে লিখা……
কবিতাঃ তোমাতে আমি……
তোমার জন্য সকল ভালোবাসা, আর আনন্দের আশা….
তোমার কাছে ছুটে আশা এখন হয়ে গেছে আমার নেশা….
আমি পারি না তোকে ছেড়ে এখন থাকতে এক প্রহর…..
ইচ্ছে হয় তোর শরীরের মাতাল গন্ধে সারা বেলা হই বিভোর….
তোমাতে আমি কত হারিয়ে গেছি সকাল সন্ধ্যা ভোর..
তবুও তুমি হলে না গো আপন, করলে মোরে শুধু পর…
আমি তোমায় ভাবি আমার দেহের বিশাল একটা অঙ্গ
বল কি এমন দোষে দিলেনা তুমি আমার ভালোবাসার সঙ্গ…..
জানি তুমি খুঁজে ছিলে আমার অদৃশ্য অস্তিত্বকে …..
আর মন ভরে ভালোবেসেছো আমার দেওয়া ছলনাকে….
তুমি চাও নি কখনই আমার ভালবাসার রঙিন গোলাপ ফুল….
চেয়ে ছিলে শুধু অগাদ ছলনার নারিকেল পাতার নাকফুল…..
এ গ্রাম হতে ও গ্রাম , ঘুরে ঘুরে পুরোপুরি নষ্ট করলাম মাথা…..
অবশেষে পেলাম খুজে কোমল সুন্দর সতেজ নারিকেল পাতা….
খুঁজে পেয়ে নারিকেল পাতা করি নি ভুল এবার একচুল….
তাই বানিয়ে দিলাম তোমার সখের নারিকেল পাতার নাক ফুল…
কবিতাটা পরেই অনন্যা পাগলের মত দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো…. শাওনকে পাগলের মত খুঁজতে লাগলো অনন্যা…….. এদিক সেদিক, এখানে ওইখানে…. পুরো এলাকা খুঁজেও পাওয়া গেলোনা শাওনকে….
অনন্যা এই রাত তিনটার সময় রাস্তায় কেঁদে কেঁদে চিৎকার করে শাওনকে ডাকছে…… এলাকার প্রায় অর্ধেক লোকের ঘুম নষ্ট করে দেয়। অবশ্য অনন্যার করুণ মুখের অবস্থা দেখে কেঁদেছিল অনেকেই…… অনন্যা ডাকতে ডাকতে এক সময় অজ্ঞান হয়ে যায়…
অনন্যা মাটিতে পড়ার আগেই ধরে ফেলে শাওন…… এরপর তার মায়াবি পরীকে কোলে তুলে নিয়ে আলতো করে ঠোটে চুমু খেয়ে হাটা শুরু করে শাওন। হাটতে হাটতে নদীর পাড়ে চলে আসে শাওন……
শাওন তার প্রাণের ময়না অনুকে ছুড়ে ফেলে দেয় পানিতে…… পানির স্পর্শে এসে অনন্যার জ্ঞান ফিরে আসে……. অনন্যা চোখ খুলেই জিজ্ঞেস করে…..
অনন্যাঃ অই শাওন আমি পানিতে কেন…??
শাওনঃ তোর বাপ্পি তোরে ফেলে রেখে গেছে..
অনন্যাঃ উফফফ আল্লাহ্‌, অনেক ঠান্ডা লাগছে….. শাওন পানি থেকে তোল না আমায়…
শাওনঃ (অন্য দিকে তাকিয়ে) তোর বাপ্পিকে ডাক….
অনন্যাঃ তুই নামবি কিনা বল…..??
শাওনঃ sry….
অনন্যাঃ আবার কিন্তু চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যাব….
শাওনঃ পানিতেই আছিস, যত খুশি চিল্লা আর অজ্ঞান হয়ে যা…. No সমস্যা..
অনন্যাঃ দেখ শাওন আর রাগ করিস না প্লিজ…. সত্যি অনেক শীত করতেছে……….
শাওনঃ তো উঠে আয়……
অনন্যাঃ শেষ বার বলতেছি, আসবি কিনা বল…..??
শাওনঃ অই আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি যে খালি অর্ডার করিস…
অনন্যাঃ অই হারামজাদা তুই আমার বয়ফ্রেন্ড না হইলে আমার ঠোটে চুমু খাইছিস কেন….??
শাওনঃ মানে তুতত…তুই অজ্ঞান হোসনি….
অনন্যাঃ হিহিহি…. ফ্রিতে কোলে উঠতে গেলেতো একটু আকটু ভান করতেই হয়…..
শাওনঃ দাড়া শালী দেখাইতেছি তোরে মজা…
শাওন লাফ দিয়ে পানিতে নেমে গেলো….. অনন্যাও শাওনকে শক্ত করে জরিয়ে ধরললো আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বললো
অনন্যাঃ শাওন আমার মাথায় হাত দিয়ে বল, তুই আর কখনই আমাকে ছেড়ে যাবি না।
শাওনঃ অনু এই ভালবাসাতো আমার না বাপ্পির জন্য…..
অনন্যা অনেক জোরে শাওনের ঘাড়ে কামর দিয়ে ধরলো…….
অনন্যাঃ শালা সাতটা মাস অনেক জালাইছিস…. তোরে কে বলছে বাপ্পি নাম দিয়ে ফেসবুক চালাইতে….
শাওনঃ আর তোরে কে বলছে আমার ফেক আইডির সাথে প্রেম করতে?

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত