ভোর পাঁচ টা..
মেহেদি কে ফোন দিলাম…!!
–মেহেদি আজ কিন্তু কোথাও যাবা না ..!! আমার সাথে আজ ওয়াণ্ডার ল্যান্ডে যেতে হবে..! আজ সারাদিন আমরা এক সাথে হাতে হাত রেখে ঘুরবো।না সে রকম
ভাবে বেহায়া পনা ভাবে নয়।ভালবাসি তো তাই এই টুকু তো আবদার করতেই পারি তাই না..??
–বলা শুরু করেছো..?? কোন থামা থামি নেই।তুমি পারো ও।
এত আবদার এই মেয়ের।পূরণ করতে করতে জীবন কেরোসিন।
–শোন আজ আমি কোথাও যেতে পারবো না।ঘুমাবো সারা সকাল।আর তারপর অফিসের একটা মিটিং আছেআমি পারবো না।
–একদম ই না ‘ঘুম বাবু’ ।আমি কিন্তু গিয়ে মাথায় পানি ঢেলে দেবো।তাই লক্ষী ছেলের মত একটা নীল পাঞ্জাবী পরে হাতে একটা হলুদ ঘড়ি পরে চলে আসবা।
ওয়াণ্ডার ল্যান্ডের সামনে।
–দেখা যাক।
— বললা..??আমি তোমাকে দেখা করতে বললেই
তোমার প্রবলেম হয় তাই না..??কোন দিন ইচ্ছে করে
আমাকে একটু সময় দিলে না।আচ্ছা আসতে হবে না।
বলেই ফোন কেটে দিলাম…
আসলে কোন দিন ইচ্ছে করে মেহেদি আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেল না।
আমার তো ভীষণ ইচ্ছে হয় আমার প্রিয় মানুষ টা আমাকে প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একবার কোন এক গোধুলি বিকেলে পিচ ঢালা রাস্তায় হাত ধরে হাটুক।পাশে বসে
পরম নির্ভরশীলতার সহিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতে হাত রেখে বলুক
‘আছি তো আমি …সুখে দুখে পাশে’… বা কোন এক বর্ষস্নাত সন্ধ্যায় এক গুচ্ছ কদম ফুল আমারহাতে দিয়ে বলুক ‘প্রিয়তমা শুধু তোর জন্য আমার এই সামান্য উপহার..’
আসলে ভালবাসতে কি লাগে বলুন..??বিশেষ কিছুর প্রয়োজন পরে না…শুধু একটা পবিত্র ‘মন আর একটা বিবেক সম্পর্ন মানুষ চাই…’
লাগে না প্রচুর টাকা পয়সা,বাড়ি,গাড়ি।কারণ ভালবাসা তো আসে অন্তর থেকে।আর সেটা জন্ম দিতে না লাগে কোন টাকা পয়সা।বা অন্য কিছু।
মন খারাপ হলেও একটা লাল শাড়ি পরে চলে গেলাম ওর অফিসের সামনে ..গিয়ে বসে আছি…
প্রায় দুই টা বেজে চলেছে..
আমি পিছন থেকে..
–এই..!
–রিতা তুমি এখানে চলে এসেছো..??
–কেন ভালবাসি না তোমাকে ..!!তুমি না বাসলে আমি বাসি।চল..!! আজ তুমি খাওয়াবে..!!
–মাসের শেষ বোঝোনা..??
–কেন আমি কি শুধু তোমার টাকাই খাই..??তোমাকে খাওয়াই না..??
–না সেটা না..!
–তো আমিও তো খাওয়াতে পারি..??? দুজনে গিয়ে ওয়াণ্ডার ল্যান্ডে বসে গেলাম…
–আজ কত তারিখ বলতো..??
–মাথা চুলকিয়ে..!!জানি না ঠিক মনে নেই তো..!!
–আমার কোন কিছুই তোমার মনে থাকে না..!!আমি জানি.!!ভালবাসো কি আমাকে..!!না শুধুই মায়া আমার প্রতি..???
–কি যে বল না।কিছুই বুঝিনা।(রেগে)..ওহ মনে হইছে আজ
বাইশ তারিখ ‘আমার জন্মদিন’…
— হুঁ…
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডিয়ার…’
–ওয়েল কাম।
–শুধু এইটুকুই..??আরেক টা কি বলতো..??
–আরেক টা কি হবে আমি জানি না তো..!!
খুব ই রাগ হচ্ছিল ছেলেটার উপর এত আনমনা। এইরকম একটা ছেলেকে ভালবেসেছিলাম…
–হুঁহ..!
–কি আশ্চর্য তুমি রেগে যাচ্ছো কেন..??আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে…
–রাগ করছি না।আজকের দিন টা তাও ভুলে গেছো।মনে রাখো নি..!!
–দেখ রাগ কিন্তু এখন আমি করবো।এত আবোল তাবোল
কিছু মনে রাখা যায় নাকি…
ওর কন্ঠ কেমন যেন গম্ভীর শোনাচ্ছিল। আমি নিজেই শান্ত হয়ে…
আজ এইদিনে তোমার আমার পথচলা শুরু হয়েছিল…
পাশে তাকিয়ে দেখি মেহেদি নেই…
উঠে এতক্ষণে বাইরে চলে এসেছে…ছেলেটার এত রাগ…রাগ তো আমার করার কথা..আসলে আমাদের মত মেয়েদের রাগতে নেই।কারণ রাগলে ভালবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার মানুষ থাকেনা। আমাদের মেয়েদের একটু বেশি ই আশা,চাওয়া পাওয়া থাকে।আমার মত কিছু মানুষ আছে যাদের ভাল লাগা,মন্দ লাগা,ইচ্ছা,আশা থাকলেও
বলার মানুষ থাকা স্বত্তেও বলতে পারা যায় না।খুব ই অসহায় হয় এইরকম মানুষ ।অসহায়ের চেয়েও বেশি অসহায়।।
ঢং কত্ত..ছেলেটার..??নিজের জন্মদিন এটাও ভুলে গেছে…!!
আবার ভাব কি..??
–এই শোন..!!
কোন জবাব নেই।মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে গাড়িতে চেপে বসেছে…
যাক বাবা এ কি ছেলে…!!একটা গিফট এনে ছিলাম তাও দেওয়া হল না…
কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না..
যেখানে ছিলাম ওখান থেকে মেহেদির বাসা প্রায় বিশ মিনিটের রাস্তা।কি আর করা।
হেঁটে রওনা দিলাম…যতক্ষণ ওর বাসার সামনে গিয়ে আবিষ্কার হলাম ততক্ষণে প্রচণ্ড গরমে শরীর দিয়ে পানি বের হচ্ছে…
ভাবছি ইশ মহারাজা কত্ত ভাগ্যবান যে আমার মত মেয়ে ওকে এত্ত ভালবাসি।যেদিন থাকবো না বুঝবি কি ছিলাম…
–কথায় আছে নাঃ বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে জানে না.
বাড়ির সামনে গিয়ে কল দেই কিন্তু বার বার ই কেটে দেয় লাইন…
দশ ওয়ার্ডের একটা মেসেজ লিখলাম…
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ডিয়ার মেহেদি’ ‘শুভ হোক আমাদের পথচলা’….
মেসেজ দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ও কোন রেসপন্স নেই।খুব খারাপ লাগছে। করার কিছুই নেই।চলে যাচ্ছি…
ততক্ষণে রাগ কুমার এসে আমার হাত চেপে ধরলো…
আমি ব্যাগ থেকে এক গুচ্ছ গোলাপ আর আমার প্রিয় নীল কালারের একটা পাঞ্জাবী বের করে গিফট দিলাম……
… আজ আবার ও তোমার জম্মদিন। হয়ত পথচলা আর হয়ে উঠবেনা।একি সাথে চলা হবে না…তবুও ভালবাসি।
ভালবাসবো..বেসেই যাবো যতদিন বাঁচি…
.তুমি হয়ত আমার চেয়ে কোন ভাল রিতা কে নিয়ে বাঁচবে আর আমি একাই ভালবেসে বাঁচবো।
যদিও আমার উইশ করা না করা দিয়ে তোমার কিছুই না।
তোমার তো অনেকেই আছে উইশ করার…তবুও ভালবাসি রে পাগলাটা তোকে…তুই না বুঝলি..!!
থাক না মেহেদি …
কিছু কথা অজানা..কিছু কথা না বলা।না জানো তুমি না জানুক পৃথিবী। একদিন তো এই দুনিয়া নামক ক্ষনস্থায়ী
তাসের ঘর ভেঙে যাবে।মুছে যাবে আমার অধ্যায়।মুছে যাবেনা আমার ভালবাসা।সবাই জানবে তোমাকে আমি
কতটা ভালবাসি।জানবে আমার ভালবাসার গল্প।
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মেহেদি..হ্যাপি বার্থডে ..”
এই তো আমার ভালবাসার গল্প।এই তো আমার ভাল থাকার গল্প।
“আমার আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকো অনেক দিন..””
ভাল থাকুক পৃথিবীর সব মেহেদি।ভালবাসা নিয়ে।আর মুছে যাক আমাদের মত রিতারা যারা ভালবাসার মানুষ
কে ছাড়া বেঁচে আছে।কারণ সত্যিকারে ভালবাসা শুধু তৃপ্তি সহকারে কষ্টই দিয়ে যায় বিনিময়ে আর কিছুই
পাওয়া না। আর নয়তবা তারাও বেঁচে থাকুক জীবন ধারণের তাগিদে বা বাবা-মায়ের কান্না,ভালবাসা কিংবা স্নেহের তাগিদে।