-নিরু কাজ টা কি ঠিক হচ্ছে
– মাহির প্লিজ তুই আমাকে এখন ঠিক ভুলের কথা বলিস না।
– কাজ টা কিন্তু পাপ,,, তাছাড়া সমাজ তো মেনে নেবে না।
– সমাজ মানলে মানবে না মানলে না মানবে
– এটা হয় না
– আমি এতো কিছু বুঝি না, আমি তোকে আপন করে পেতে চেয়েছিলাম, সারাজিবন তো আর সম্ভব না এখন এক রাতে যতটুকু পাই তোকে
– কিন্তু
– কোনো কিন্তু না প্লিজ, আমাকে তুই আমার কাজ টা করতে দে প্লিজ।
নিরুর আলিঙ্গন কে আর মানা করতে পারে নি। পাপের স্পর্শে তাই পাপি হলাম। তবে নিরু এমন একটা কাজ করবে সেটা ভাবতে পারি নি আমি। একটা মেয়ে নিজে তার ভবিষ্যত নিয়ে ছিনি মিনি খেলতে পারে এটা ভাবতেই যেন কেমন লাগে।
বাধা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারি নি।
বিশেষ করে যখন একটা মানুষ শেষ কোনো ইচ্ছার কথা বলে তখন তা না রেখে পারা যায় না।
কি ভাবছেন শেষ ইচ্ছা কেন,
.
শেষ ইচ্ছা কি করে তাহলে সেটাই শুনুন।
নিরু আর আমি একই ভার্সিটি তে পরতাম । ভার্সিটি লাইফের প্রথম থেকেই বন্ধুত্ত্ব আমাদের। পিছুটান কখনো আমাদের স্পর্শ করতে পারে নি। শুরুটা ছিল ভিন্ন রকমের।
আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম, কোথা থেকে যেনো একটা রিক্সা এসে ঢাক্কা মারলো,, কিছু বুঝে উঠার আগেই পরে গেলাম আমি। রাস্তায় পড়ে হাতটা কেটে গেল। ঘুড়ে উঠে রিক্সা ওয়ালাকে কিছু বলবো তার আগেই নিরু রিক্সা থেকে নেমে সরি বলা শুরু করলো।
সরি শোনার পর আর কি করার, রিক্সাওলাকে মাফ করে দিলাম।
মেয়েটাও চলে গেল। কাটা হাতে বেন্ডিজ লাগালাম।
পরের দিন ক্লাসে বসে, হটাৎ দেখি মেয়েটা ক্লাসে প্রবেশ করছে, অবাক হয়েছিলাম তাকে দেখে, এই মেয়ে এখানে কি করে।
ক্লাস শেষে করে বের হচ্ছি ক্লাস থেকে, তখন দেখা মেয়েটার সাথে,
– একি আপনি
– হুমম আমি
– কালকের জন্য সরি
– আপনি কেন সরি বলছেন দোষ তো রিক্সাওয়ালার
– তা ঠিক তারপর ও
– তেমন কিছু হয়নি টেনশন নিয়েন না।
– এমন করে কথা কেন বলছেন
– কেমন করে বললাম
– আচ্ছা বাদ দিন ফেন্ড হতে পারি কি আমরা
– অবশ্যই কিন্তু শর্ত একটা তুই বলতে হবে
– ওকে
তারপর থেকেই শুরু বন্ধুত্তের। সময় যেমন পার হয়েছে তেমন বেড়েছে আমাদের বন্ধুত্ত।
আমি নিরুকে একজন ভাল ফেন্ড হিসেবেই মনে করতাম।
তবে ভার্সিটি লাইফের শেষে এসে
– ভার্সিটি লাইফ তো শেষ মাহির
– হুমম, তো কি করবি এখন
– কি আর করবো,, বাবার অফিসে কোনো পোষ্টে বসে যাবো,, তুই
– দেখি জব এ ঢুকতে হবে, তোর মতো আর আমাদের সুবিধা নেই
– হুমম,,তো চল আমার বাবাকে বলি একটা জব দিয়ে দিবো নি
– না থাক,, আগে দেখি কি যোগ্যতা অর্জন করলাম এত দিন পড়াশোনা করে
– দেখ তাহলে
– ঠিক আছে
– আমি যদি তোকে একটা কথা বলি রাখবি
– কি
– আমাকে ভালবাসবি প্লিজ
– নিরু তুই এগুলা কি বলিস,,,,তুই আমার একজন ভালো বন্ধু,, এর থেকে বেশি কিছুই না।
– কিন্তু আমি তোকে অনেক ভালবাসি
– না নিরু এটা হয়না,, আমাদের বন্ধুত্ত্ব টা ভালবাসার কাছে হারাতে চায় না
– প্লিজ মাহির, এতদিন বন্ধুত্তের ভয়ে বলতে পারি না,কিন্তু এখন বলছি, আমি তোকে ভালবাসি, অনেক দিন হলো বলবো বলবো করে বলা হয়নি, তুই প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না।
– না নিরু,, আমার পক্ষে সম্ভব না
– তাহলে আর কি দুরুত্ব যখন বাড়াতে চাচ্ছিস তখন বাড়ুক
– দুরুত্ব বাড়বে কেন
– বাড়বে রে সেটা এখন না বুঝলে পরে বুঝবি
– ঠিক আছে সেটা না হয় পরেই দেখা যাবে।
– বাসায় চলে যাবি
– হুমম
– ওকে চল
.
নিরু ঠিক ই বলেছিল,, দুরুত্ব টা বাড়বেই,, কারন আমি যখন চাকরি করবো তখন সারাদিন বিজি থাকবো হয়তো তখন নিরুর খোজ নেওয়ার সময় পাবো না, তাছাড়া যদি নিরুর বিয়ে যায় তাহলে তো নিরুর সাথে যোগাযোগ করার তেমন কোনো স্কোপ ই থাকবে না।
বিষয় টা নিরু আগে ভেবে রাখলেও আমি বুঝতে পেরেছি লেটে।
পরবর্তি কিছুদিন নিরুর সাথে যোগাযোগ হয়নি,, আমি ভেবে ছিলাম নিরু হয়তো আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু না
এক সপ্তাহ পর, নিরু ফোন দিয়ে বললো তার সাথে দেখা করতে,
দেখা করার জন্য বসে আছি, নিরু আসতে দেরি করছে,
আধ ঘন্টা পর নিরু আসলো,
– কেমন আছোস
– ভালো তুই
– ভালো
– তো কি মনে করে এত দিন পর,
– এমনি
– এমনি নিশ্চয় না
– মাহির তুই আমাকে ২৪ ঘন্টা সময় দিতে পারবি
– মানে
– মানে খুব সহজ, তুই তোর লাইফের একটা দিন আমাকে দিয়ে দিবি, আমি যা বলবো তাই করবি, যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে যাবি, যাস্ট ২৪ ঘন্টা
– এটা কি করে হয়
– প্লিজ মাহির, এতদিনে তো আর আমার কোনো কথা রাখলি না আজ এ শেষ ইচ্ছা টা রাখ।
– শেষ ইচ্ছা কেন
– কারন এটাই তোর কাছে আমার শেষ ইচ্ছা। এর পর তোর কাছে কোনো দিন কিছু চাইবো না
– মানে আমাদের আর কোনো যোগাযোগ হবে না
– হয়তো
– ওকে যা তোর কথাটা রাখবো
– ধন্যবাদ।
নিরুর এই আবদার টা রাখতে গিয়েই নিজের অনিচ্ছায় স্বর্তেও একটা পাপ করতে হলো। ভাবতে পারিনি এমন টা হবে।
তবুও তো সুখে থাক মেয়ে টা।
.
নিরু তার নিজের কথাটা রাখলো । সত্যি সত্যিই আমার সাথে কথা বলা,, দেখা করা বাদ দিয়ে দিয়েছিল।
মাঝে আমি কিছুদিন ফোন দিয়েছিলাম নিরু কে কিন্তু ফোন ধরে নি। তার পর থেকে আর তেমন কোনো যোগাযোগ নেই।
– নিরু কেমন আছিস তুই
– মাহির তুই আমায় এভাবে দুরে কেন ঠেলে দিলি
– আমি তো দেই নি, তুই তো চলে গেলি
– তোকে আমি অনেক মিস করি করি রে,,, তুই কি প্লিজ আমার হাত টা ধরবি
– ঠিক আছে
নিরুর হাত টা ধরার জন্য এক পা এগিয়ে গেলাম, অমনি বেড থেকে ঢপাস করে পরে গেলাম, মাগো বলে ছোট একটা চিৎকার দিলাম, মেয়েটা দেখি এখন আমাকে স্বপ্নেও ছাড় দেবে না।
সামান্য ব্যাথা পেলাম।
নিরুর থেকে দুরুত্ব বেড়ে গেছে, তাই ওর সাথে যোগাযোগ টা এখন আর হয় না। নিজেরা দুরুত্ব বাড়িয়ে নিলেও স্বপ্ন আমাদের আলাদা হতে দেবে না, এমন টাই হয়তো জানান দিলো।
নিরু কে নিয়ে ভাবার সময় তেমন পায় না। নতুন জব, নতুন দায়িত্ব, সব কিছু কেমন যেনো লাইফ টাকে চেন্জ করে দিয়েছে, তাছাড়া নিরু যেহেতু বলেছে আর কথা হবে না, সেখানে আগ বারিয়ে আর লাভ কি। নিরুকে নিয়ে চিন্তা বাদ দিলাম।
তিন মাস পর, এক আননোন নাম্বার থেকে ফোন, ফোনটা ধরার সাথে সাথে,
– বাবা মাহির কেমন আছো
– জ্বি আন্টি ভালো কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না
– আমি নিরুর আম্মা
– নিরুর কি কিছু হয়েছে নাকি
– বাদ ই আর কি আছে
– কেন আন্টি কি হয়েছে
তুমি প্রিজ আমাদের বাসায় এসো কাল বা আজই যদি সম্ভব হয়।
আন্টি ফোন টা রেখো দিল। মাথায় চিন্তা ডুকে গেলো, কিন্তু ভুল ভাল করে ফেললো না তো নিরু, ওকে তো বিশ্বাস নেই।
.
বিকাল বেলা অফিস বাদ দিয়ে চলে গেলাম নিরুর বাসায়,
নিরু দড়জা খুলে,
– কেন এসেছিস
– আন্টি আসতে বলেছে
– আই ভিতরে আই
ভিতরে গিয়ে বসলাম, নিরু আর কোনো কথা বললো না আমার সাথে, সোজা ওর নিজের রুমে চলে গেল
নিরুর মা : বাবা তুমি কি জানো নিরুর কোনো বয়ফেন্ড ছিলো কি না
– না তো ছিলো না
– তাহলে এমন সর্বনাস টা কেন হলো,
– কি আন্টি
– কি করে বলি
– বলেন সমস্যা নেই
– নিরু প্রেগন্যন্ট
সামান্য ঢাক্কা খেলাম, সাথে সাথে মাথার ভিতর টিউবলাইট টা জ্বলে উঠলো,
জানি না আন্টি কে এখন কি বলবো, শুধু এত টুকু মনে আসতেছে নিরু কাছে যেতে হবে,
– আন্টি নিরু কই
– রুমে
সোজা নিরুর রুমে
– কিরে রুমে প্রবেশ করলি যে অনুমতি নিছোস
– অনুমতির কি খুব দরকার
– হুমম…
– নেক্সট টাইম নিবো
– নেক্সট টাইম কেন
– এখন তো প্রতিদিন আসতে হবে
– কেন
– তুই আমার থেকে এত বড় খুশির সংবাদ লুকালি কেন
– কি
– তুই যে প্রেগন্যন্ট
– আমার প্রেগন্যান্ট দিয়ে তোর কাজ কি
– আমার যে কি মজা লাগতাছে আমি বাবা হতে চলেছি
– মোটেও না, এই সন্তানে তোর কোনো হক নাই
– কেন
– কারন এটা আমার সন্তান তোর না
– কিন্তু
– কিন্তু কি
– কিছু না
হটাৎ নিরুর মা রুমে প্রবেশ করলো,
– নিরু মা তুই এই কাজ টা কেন করলি
– মা তুমি প্লিজ আমার সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলো না
মাহির তুমি আমার সাথে এসো তো
আমি আন্টির সাথে আসলাম
– আমার মেয়ের সর্বনাস যা করার তা তো করেছো, এখন তোমার ওকে বিয়ে করতে হবে
– আমি রাজি,
মাথায় চেপে আছে প্রথম বাবা হওয়ার ভুত। কিভাবে সেটাকে তাড়াই।
– বাচালে বাবা, আমি নিরুর বাবাকে ম্যানেজ করবো, তুমি প্লিজ নিরুকে ম্যানেজ করো
– ওকে আন্টি
বাসায় চল আসলাম, মা কে নির্বোধের মত নিজের অপরাধের কথা বললাম, মা কি মনে করলো জানি না, শুধু একবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,
পরের দিন নিরুর বাসায়,
– মাহির তুই এগুলা কেন এনেছিস
– এগুলা আনবো না, তোর তো এখন এগুলা খাওয়া দরকার
– আমি একাই সব সামলাতে পারবো, তোর কোনো দরকার নেই
– বললেই হলো
– হুমম যা তুই এখান থেকে….
– যাবো না,, তা ছাড়া এখন থেকে প্রতিদিন এখানেই থাকবো
– মানে
– হুমম আন্টি ব্যবস্থা করে দিয়েছে
– থাকলে থাক কিন্তু আমার রুমের দিকে পা বাড়াবি না বুঝলি
– তোর জন্য তোর বাসায় এসেছি আর তোর রুমে আসবো না কি বলিস
– যা এখান থেকে
রুম থেকে চলে আসলাম,
অফিস টা প্রায় বাদ দিয়ে দিয়েছে, সার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছা মত বকা দেয়, দিলে দিবে, বাবা হওয়ার আনন্দে সব কিছু পায়ের কাছে পরে থাকে।
নিরুর জন্য ডাক্টারের কাছ থেকে শুনে সব রকমের ফাসিলিটিস কিনে আনলাম, কি কি দরকার, কখন কি দরকার তার একটা বই কিনলাম। মুখুস্থ করার মত পরে ফেল্লাম।
নিরু আমাকে যতই বকা দিক সবই এখন আমার কাছে মধুর লাগে, এত টা আনন্দ আমার মধ্যে, যেন মনে হয় আমি উড়ছি।
– মাহির তুই কেনো এগুলা করিস
– তুই আমাকে বিয়ে করবি প্লিজ
– না
– কেন
– আমি একাই বেটার
– কিন্তু আমার তো তোকেই চাই, আমাদের সন্তান কে চাই
– এটা তোর সন্তান না
– তো কার
– কার আবার আমার
– শুধু মা দিয়ে সন্তানের পরিচয় হয় না
– আমি সেটাই করতে চাই
– আমি থাকতে কখনোই না
– তুই প্লিজ যা তো এখান থেকে, এত বেশি কথা বলিস কেন?
– ঠিক আছে যাচ্ছি
নিরুর প্রতি কেয়ারিং এর খাতিরে আমার চাকরি টা চলে গেল কিন্তু নিরুর একটু দয়া হলো না আমার জন্য।
সব সময় শুধু দুরে ঠেলে দিতে যাই।
ভুল তো মানুষ ই করে আমি ও না হয় একবার করলাম। কিন্তু সেটা মাফ করা বাদ দিয়ে আরো আমার উপর রেগে আছে নিরু। ভালো করে কথা বলতে দেয় না, কেয়ার করতে দেয় না,
ওর কিছু হলে যে আমার সন্তান টারও কিছু হবে এটা কখনো চিন্তা করে না।
তবে আমি যখন ওর আশে পাশে থাকি তখন ও যতই রাগ দেখাই তার সবই মিথ্যা।
কারন আমাকে দুরে সরে দিয়ে নিরু একা একা কান্না করে, হয়তো শাস্তি দিচ্ছে। আমি বাধা দেয় না। দিক,,, তবুও মনে শান্তি পাক।
রাতে,
– এক রাত পর্যন্ত যেগে আছোস কেন নিরু
– ঘুম ধরছে না
– চল আমি ঘুম পারিয়ে দেয়
– না দরকার নাই
– তোর দরকার না থাকলেও বেবি টা দরকার আছে
– আমার বেবি আমি জানি কি ভালো কি খারাপ
– তাহলে চল ঘুমাবি
– না
– ঠিক আছে থাক আসি,,,
একটু পর,
– যেকোনো একটা আঙ্গুল ধর তো নিরু
– পারবো না
– ধরনা প্লিজ
– কাপা হাতে একটা আঙ্গুল ধরলো
আঙ্গুল খুলে দেখি..
আঙ্গুল খুলে দেখি…..
– ছেলে
– এটা কি ছিলো
– ধারনা নিলাম কি হতে পারে
– কি হবে
– ছেলে
– না আমার ছেলে চাই না
– আমার তো ছেলে চাই
– হবে না মেয়ে হবে
– আমি বলছি ছেলে হবে
– আমি বলছি মেয়ে হবে
– ঠিক আছে চ্যালেন্জ
– ওকে
নিরুর সাথে চ্যালেন্জ শেষে রুমে চলে আসলাম।
পরের দিন সকালে নিরুর রুমে,
– কি হয়েছে রে তুই এমন করছিস কেন
– মনে হচ্ছে জ্বর আসছে
– কি বলস তাহলে ডাক্টার ডাকি
– না না ডাক্টার ডাকতে হবে না, তুই মাকে একটু ডাক দে
আমি নিরুর মাকে ডাক দিলাম,
– একি এত জ্বর আসলো কেমনে ( নিরুর মা)
– হঠাৎ করে জ্বর টা আসলো বুঝতেই পারি নি কেমনে কি
– এখন কি ডাক্টার ডাকবো
– না থাক, তুমি একটু মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা কর
আমি দৌড়ে গিয়ে এক বালতি পানি আনলাম, আর নিরুর মা অন্য সব ব্যবস্থা করলো।
নিরুর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে আমি পাশে দাড়িয়ে, বুঝতে পারছি না কি করবো, মনের মধ্যে অস্থির লাগছে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর, নিরুর জ্বর টা তেমন ই আছে
– আন্টি আমি নিরুর জন্য ঔষধ নিয়ে আসি
– না বাবা ঔষুধ খেলে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে, তুমি একটু জল পট্রি করে দাও আমি একটু আসছি
আমি নিরুর মাথায় জল পট্রি করে দিচ্ছি।
মেয়েটা অসুখের যন্তনায় সামান্য কাতরাচ্ছে। আমি মাঝে মাঝে নিরুর মুখের দিকে তাকিয়ে এটাই ভাবছি কেন ওকে কষ্ট দিয়েছিলাম। কত টা মায়া মাখা মুখ।
– কি দেখিস
– না কিছু না, তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে
– নারে
– ঠিক আছে তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর
বিকালের দিকে জ্বর টা একটু কমলো । কিন্তু রাত্রি বেলা আবার জ্বর আসলো নিরুর। আমি নিরুর পাশে বসে ওর মাথায় জল পট্রি করে দিচ্ছি।
নিরুর মা নিরুর পাশে বসে আছে, নিরুর বাবা অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে গেল নিজের রুমে।
নিরুর মুখে দিকে তাকিয়ে নিজের মনের মধ্যে একটা ভয় উদয় হলো।
কতটা শুকিয়ে গেছে মেয়েটার মুখটা।
মাঝরাতে মাথার উপর কার হাত যেনো হাত পড়লো, ঘুম টা ভেঙ্গে গেল।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই নিরু তার হাত টা তরিঘরি করে সরিয়ে নিল। আমি সামান্য অবাক হলাম।
জলপট্রি করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না।
– যা তোর রুমে গিয়ে শুয়ে পর
– তোর জ্বর কমছে কি
– হুম
আমি নিরুর কপালে হাত দিলাম, না এখন আর কোনো জ্বর নেই।
নিরুর কথায় চলে আসলাম। রাতে আর ঘুমায় নি। সকালে নামাজ পরে একটা ঘুম দিলাম।
অনেক দিন পর নামাজ পরে শুধু একটা জিনিস ই পার্থনা করলাম নিরুর সুস্থতা।
পরবর্তিতে নিরুর আর কোন অসুখ হয় নি।
নিরুর ব্যবহার টা কিছুটা হলেও আমার প্রতি সহজ হয়ে গেল অসুখের পর থেকে।
নিরু হয়তো আমাকে ক্ষমা করতে শুরু করছে। জানি না তবে করলে ভালো না করলে আর ভালো।
কারন নিরুর ভালবাসা আমি অর্জন করেই ছাড়বো।
নিরুকে বলেছিলাম আল্টাস্নো করবো কিন্তু না করে দিয়েছে সে। ওর যা ইচ্ছা।
শেষ কিছুদিন নিরুর সুরক্ষার খাতিরে ওকে হাসপাতারে ভর্তি করলাম। আমি আর আন্টি সারাক্ষন হাসপাতালে থাকি।
অপারেশনের দিন,
– মাহির তোকে একটা কথা বলবো
-বল
– তুই প্লিজ আমার হাতটা ধরে রাখবি
– ওকে রাখবো
নিরুর চোখের কোনে পানি। আমি ওর হাতটা ধরে রেখেছি।
ডাক্টার রা অনেক মানা করার পর ও নিরুর আমার হাত টা ছারে নি।
অপারেশন থিয়াটারে সর্বক্ষন চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম আমি। মেয়ে টা পারে ও এতটা সময়ে একবার ও আমার হাত টা ছাড়ে নি।
অপারেশন শেষে যখন ডাক্টার বললো আপনার ছেলে হয়েছে, আমি তখন ডাক্টার কে বলি
-নিরু সুস্থ হয়ে যাবে তো।
– হুমম টেনশন করেন না সুস্থ হয়ে যাবে
ডাক্টারের হাত টা ধরে কেদে দিলাম।
কিছুক্ষন পর নিরুকে বেডে দেওয়া হলো, সেখানে প্রথম কোলে নিলাম আমার ছেলেটাকে
৪ ঘন্টা পর নিরু চোখ খুললো,
– দেখি আমার সন্তান কে আমার কাছে দাও
নিরুর কোলে বাচ্চা দিলাম, নিরু বাচ্চা টা কোলে নিয়ে মনে হয়তো কষ্ট পেল, কারন ছেলে হয়েছে
– মাহির তুই তো বাজি জিতে গেলি
– হুমম
– বল কি চাস
– তোকে বিয়ে করতে চাই
শুধু চাইলেই হবে না করতেই হবে, নিরুর মা বাবা কাজি সাথে করে নিয়ে আসলো
– ঠিক আছে তুই যখন চাস তখন তাই হবে ( নিরু)
আনন্দে এবার আমার মাথার টিউবলাইট টা আবার জ্বলে উঠলো। সত্যি ই আজ অনেক খুশি। একদিকে নিরুকে পাওয়া অন্য দিকে আমার প্রথম সন্তানকে।
– মাহির সন্তান কে পেয়ে তো আমাকে ভুলে যাবি না
– কি বলোস, তোকে ভুলবো কেন
– দেখা যাবে
– তুই যেহেতু আমাকে বিয়ে করলি তোকে তো একটা গিফ্ট দিতে হয়
– কি দিবি
– ভাবতাছি একটা মেয়ে গিফ্ট দেব
নিরু মুখ টা লজ্জায় লাল হয়ে গেল..