আজ ৬মাস রিলেশনশিপ এর পর আমি ইরার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। এর আগে আমি কখনোই ওকে সামনাসামনি দেখিনি।ফেবুতেই আলাপ,তারপর দিন বাড়ছিলো আর সাথে বেড়েছে মেসেজিং। এক সময় বাকিদের মেসেজ টার্ন অফ করে আমার শুধু ইরার সাথেই মেসেজিং করতে ভালো লাগতো।কেন যেন আমার প্রশ্নের উত্তর গুলি ও আমার মনের মতন দিতো। মেয়েটাকে খুশি করতে পারলেই আমার কেন যেন ভালো লাগতো।সাদাফুল পছন্দ করতো তাই আমি আশেপাশের যত ফুল ছিল সবগুলির পিক তুলে দিতাম।দিন-রাত মেসেজিং এ যখন ক্লান্তি আসতো না তখন বুঝে গিয়েছিলাম,মেয়েটির প্রেমে পরে গেছি।ওর মেসেজ এর অপেক্ষা আমায় কষ্ট দিতো।অনলাইনে থাকলে আমায় মেসেজ না দিলে বার বার ওর ইনবক্স এ গিয়ে দেখতাম ও আমায় টাইপিং করছে কিনা।
যখন দেখতাম মেয়েটা টাইপিং করছেনা তখন আমার বেশ হিংসা হতো।মেসেজ ই দিয়ে ফেলতাম,কি প্রেম করো চুটিয়ে কার সাথে?কে সেই ভাগ্যবান?
ইরা মেসেজ দিয়ে বলে,ভাগ্যবান এর দেখা পাইনি এখনো।তখন এক শান্তির নিঃশ্বাস নিতাম।একদিন সাহস করে ফোন নম্বর চেয়েই ফেললাম।সেদিন ছিল ইরার জন্মদিন। ইরাকে উইশ করার বাহানায় কথা বলার সুযোগ পেলাম।কথা বলা শুরু থেকে আমার মেসেজিং করার চেয়ে কথা বলতে বেশ ভালো লাগতো।ইরার ভয়েস আমায় আরো পাগল করে ফেলে।তাই বেশিদিন আর চেপে রাখতে পারিনা ভালোবাসার কথা।আগে কখনোই আমি ওকে দেখিনি।দেখা বলতে ফেবুতে ওর পিক ছিলনা।মাঝে মাঝে ইনবক্স এ আমায় চোখের ছবি দিতো। আজ প্রথম এই মানুষটাকে আমি দেখবো।
পার্ক এর একপাশে দাড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ বাদেই এক বোরকা পরা মেয়ে এসে দাড়ালো
আমি হেসে বলি,কে ইরা?
ও মাথা নাড়ালো।
আমি: শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। আমি কি কখনো তোমার মুখ দেখবোনা?
ইরা কথা বলছেনা।
আমি ওকে বললাম চলো ওই বেঞ্চে বসি।
বসার পর আমার কি হলো কিছু মনে নেই।অনেকক্ষণ পর উঠে দেখি পাশে অনেক লোকের ভিড়।ইরা নেই।সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।আশেপাশে ইরাকে খুঁজছি পাচ্ছিনা।
এর মাঝেই একলোক উঠে বলে ভাই ছিনতাইকারীর খপ্পরে পরছিলেন।দেখেন তো কিছু নিছে নাকি?
আমি পকেট এ হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগ, মোবাইল নেই।হাতের ঘড়িটাও নেই।রুমে গিয়ে বন্ধুর ফোন থেকে বার বার ইরাকে কল দিলাম।কল হচ্ছে তবুও রিসিভ করছেনা।৭দিন পাড় হয়ে গেল ইরা একবার ও কল দিচ্ছেনা।নতুন নম্বর নিয়ে ইরাকে মেসেজ করে জানিয়েছি এটা আমার নম্বর।ফেবুতেও আসেনা ও।হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে ইরার মেসেজ পেয়ে আমি চমকে যাই।মেসেজটি ছিল, ভুলে গেছো আমায়?
আমি আবার ও কল দিতে লাগলাম।ওপাশ থেকে ইরা কিছুই বলছেনা।
আমি ইরাকে বললাম ভাগ্য ভালো নম্বর টা আমি মুখস্ত করে রেখেছিলাম।আমি এক বোরকাওলির খপ্পরে পরেছিলাম।আমার ফোন নিয়ে গেছে।
ইরা উঠে বলে আজ একবার দেখা করতে পারবে?
আমি: হুম কেন না?বোরকা পরে এসোনা প্লিস।আমি ছিনতাইকারীর সাথে গুলিয়ে ফেলি।
ইরা: আচ্ছা।সবুজ থ্রি পিচ পড়া থাকবো।
আমি: আর আমি কালো টি শার্ট।
ইরা: চিনতে পারবো আমি।
আমি: হু কারন আমার পিক তুমি দেখেছো।
বিকালে বের হলাম। আমি যাবার আগেই দেখি সবুজ থ্রি পিচ পরা এক মেয়ে দাড়িয়ে কারো অপেক্ষা করছে।
কেমন সংকোচে ভুগছি।ও কি ইরা!পাশে গিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।মেয়েটা উজ্জ্বল শ্যামলা তবে আমি যেমন কল্পনা করেছি ও তার চেয়েও সুন্দর।
আমি :কে ইরা?
মেয়েটি উঠে বলে না।
আমি কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললাম স্যরি
মেয়েটি আসলেই মায়াবী। তবে আমার ইরাও কি এমন হবে?
এই ভেবে একটু সাইডে গিয়ে দাড়িয়ে ইরার অপেক্ষা করছি।
পাশ থেকে ইকবাল বলে ডাক দিল।ফিরে দেখি সেই মেয়েটি।
আমি: কি বেপার নাম জানলেন কি করে?
মেয়েটি হেসে বলে কেন এই নাম কি ইরা জানে শুধু?এতোক্ষন যার জন্য অপেক্ষা করছো সেই আমি।
আমি হেসে বলি ফান কেন করলে ইরা?
ইরা: আমার নাম আসলেই ইরা না।
আমি:মানে?
ইরা: আমি লুবনা।এতোদিন মিথ্যে বলেছি তোমায়।
আমি: সিম্পেল নাম ও মিথ্যে কেন বললে?
লুবনা: আসলে আমি অনেক কিছুই মিথ্যে বলছি তা বলতেই আজ এসেছি।জানি এর পর তুমি আমায় ঘৃনা করবে এই বলে ব্যাগ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ, ঘড়ি বের করে আমার হাতে দিয়ে বলে নেও এগুলা।
আমি হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।আমার বুঝতে বাকি নেই ছিনতাইকারী কেউ না আমার লুবনা।
লুবনা কেঁদে আমার সামনে হাত জোর করে বলে ক্ষমা করে দিও পারলে।
এই বলে চলে যেতে নিল আমি পিছন থেকে বললাম নিয়ে আবার দিয়ে দিলে কেন?
লুবনা আমার দিকে তাকিয়ে বলে,ফোনটা নিয়ে বাসায় গিয়ে যখন দেখি ফোনের ডিস্পেতে আমার চোখের পিক দেয়া।মানুষ না জেনে না বুঝে এতো ভালোবাসতে পারে!
আমি: তো তাই মায়া করে ফিরিয়ে দিলে?
লুবনা: মায়া করে ফিরিয়ে দিতাম তাহলে সত্য বলতাম না।৭দিন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বুঝেছি কতটা দূর্বল হয়ে গেছি।অভিনয় করতে করতে আজ আমি নিজেই ভালোবাসার ফাঁদ এ পরে গেছি।আচ্ছা ভালো থেকো আসি আমি।
লুবনা যেতে নিলেই পিছন থেকে বললাম দাড়াও লুবনা শেখ।
লুবনা চমকে উঠে বলে,আমি শেখ কি করে জানলে?
আমি হেসে বলি আমি আগে থেকেই জানতাম।তুমি এই লাইনে ৫বছর।এই নিয়ে ১২জন কে ধোঁকা দিয়ে ফোন নিয়েছো।কিন্তু একমাত্র আমার সাথেই তুমি নিজে দেখা করতে এসেছো তাইনা?
লুবনা: এতোকিছু কি করে জানলে?
আমি: ডিবি তে থাকলে সব ই জানতে হয়।
লুবনা: মানে?
আমি: ডিবি থেকেই আমায় তোমার কেইস টা দিয়েছিলো।সমাধান করতে পারলে প্রমোশন নিশ্চিত।
লুবনা হেসে বলে তারমানে আমি না জেনে ছলনা করেছি আর তমি জেনে?তাহলে আমি ই ঠকে গেলাম এই বলে দুহাত আমার সামনে তুলে বলে নিয়ে যাও আমায়।
আমি পকেট এ হাত দিলাম।লুবনা মলীন মুখে তাকিয়ে আছে।পকেট থেকে আংটিটা বের করে লুবনার আঙুলে পরিয়ে দিলাম।
লুবনা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মেয়েটার কান্নারো প্রেমে পরা যায়।এতো নিষ্পাপ মুখের মানুষ এমন কাজ করতে পারে!
আমি হেসে বললাম ছলনায় তুমি একা ধরা পরোনি লুবনা।আমিও পরেছি।যদি না পরতাম তাহলে সেদিন আমায় অজ্ঞান করে রেখে যেতে পারতেনা।আমি ভেবেছিলাম তুমি বাকিদের মতন আমার সাথে করবেনা তবুও করেছো।লুবনা অনবরত কেঁদে যাচ্ছে আর বলছে ইকবাল আমি কি স্বপ্ন দেখছি?শেষ পর্যন্ত তুমি একটা চোর মেয়েকে ভালোবাসলে।
আমি ওর হাত ধরে বললাম কি করবো বলো।চোর মেয়েটা যে চুরিতে খুব পটু। এতোকিছু রেখে মনটাই চুরি করে নিলো।