এই বাড়িতে প্রেম নিষিদ্ধ

এই বাড়িতে প্রেম নিষিদ্ধ

ছোট চাচ্চুর সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম দিলখোলা টাইপ, যখনি মন খারাপ হয় তখনি ছোট চাচ্চুর সাথে বসে আড্ডা দেই। দেখা যায় অধিকাংশ সময় আড্ডার মাঝ পথেই আমার মন ভাল হয়ে যায়। এখন যেমন মন খারাপ করে বসে আছি, ছোট চাচ্চু বাসায় নেই কোথায় যেন গিয়েছেন? মন খারাপের কারণ বলি, কিছুক্ষণ আগে রূপা ফোন দিয়েছিল। রূপা ফোন দিয়েছে এতে মন খারাপের কিছু নেই কিন্তু যেসব কথা বলেছে সেসব অবশ্যই মন খারাপের জন্য যথেষ্ট। রূপার ফোন ধরতেই বলল,
-তোমার কাছে ৩দিন সময় রয়েছে, হয় বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য কাছে নিবা নয়ত শুভ কামনা তোমার আগামীর পথ চলার জন্য বলে ব্রেকআপ করবা।
-বিয়ে না করে পৃথিবীর কত বালক বালিকা বছরের পর বছর কাটিয়ে ফেলল আর তুমি সামান্য কয়েকটা দিন রিলেশন করেই বিয়ের নাম নিচ্ছো।
-৫ বছর ৭মাস তোমার কাছে সামান্য মনে হচ্ছে। বিয়ে যদি না করবা তাহলে প্রেম করেছিলা কেন?
-তুমি হয়ত ভুলে গেছো রূপা তোমাকে যে বছর প্রপোজ করি সেই বছর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল এমন কি বন্যাও হয়েছিল।
-হ্যাঁ হয়েছিল তাতে প্রেমের সম্পর্ক কি?
-কবি তো বলেছেন, “প্রেমের মরা জলে ডুবেনা।” তুমি তো জানো আমি সাঁতার জানি না তাই ডুবে মরার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রেম করছিলাম।
-এসব কথা বললে লাভ হবে না। তুমি আমাকে বিয়ে করতেই হবে নইলে আমি কেইস করব, ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখো নি?
-এ কেমন বিচার? বিয়ে করব না সেটা তো বলিনি, বলেছি আমার সময় দরকার বাসায় জানাতে হবে সেটার জন্য প্রয়োজনীয় সাহসের জোগাড় দিচ্ছি।
-৩দিনের ভিতর সাহস সঞ্চয় না হলে আমি সাহস নিয়ে তোমার বাসায় হাজির হব।
.
কথার এই পর্যায়ে রূপা ফোন কেটে দিল। কিছুক্ষণ পর ছোট চাচ্চু আসলেন এসে বললেন,
-কি রে তুই নাকি আমার খোঁজ করছিলি?
-ছোট চাচ্চু সর্বনাশ হয়ে গেছে, বাঁশ আমার পিছন দৌড়ে দৌড়ে আসছে। এই বলে চাচ্চুকে সব খুলে বললাম। তারপর বললাম, এখন কি হবে?
-তুই হয়ত জানছ এই বাসায় প্রেম নিষিদ্ধ কিন্তু কেন নিষিদ্ধ সেটা জানছ না। আজ তরে বলি কেন প্রেম নিষিদ্ধ হয়েছিল? তখন তর দাদা মানে আমার বাবার বয়স নাকি ২২/২৩ বছর ছিল। তিনি প্রেমের সাগরে পরলেন ছোট খাট নয় প্রশান্ত মহাসাগরে, যে মেয়ের প্রেমে পরলেন সেই মেয়েরে একদিন সাহস করে গিয়ে বলে ফেললেন, তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। এরপর চলল প্রেম কাহিনী চলতে চলতে একদিন আমার দাদা মানে তর দাদার বাপ সেটা টের পেয়ে গেলেন এরপর শুরু হল পিডানি এমন পিডানি যে প্রেম হাওয়া হয়ে গেল। নিজে প্রেম করতে পারেন নি বলে তিনি আইন জারী করে প্রেম নিষিদ্ধ করে দিলেন সেই অনুসারে আমরাও কেউ প্রেম করতে পারব না।
.
কিন্তু প্রেম মানেনা বাঁধা তর বাপ পরল প্রেমে, আমি তখন ছোট তবে সব কিছু বুঝতাম। শীতকালের সকালে তর বাপ গেছে মেয়ের সাথে দেখা করতে কিন্তু ভাগ্য খারাপ হঠাৎ করে মেয়ের বাপ সেটা ধরে ফেলে তারপর কি দৌড়ানি, সারাদিন দৌড়ানি দিছে এই দৌড়ানির ফলে তর বাপের ভিতরের প্রেম দৌড়ে পালিয়ে গেল, এক সপ্তার পরে সেই মেয়েরও বিয়ে হয়ে যায়। সেই থেকে তর বাপও প্রেমের বিরুদ্ধে।
.
এর পরে তর মেজো চাচ্চু যেদিন প্রেম করতে গিয়ে ধরা পরে মেয়ের বড় ভাইয়ের কাছে সেইদিন লুঙ্গি নিয়া ফিরে আসতে পারেনি, লুঙ্গির সাথে ইজ্জতও ছিঁড়ে গেছিল। তবে তর মেজো চাচ্চু কিন্তু বীর সাহসী এসবের পরও সে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিল তবে যেইদিন সে বাসায় বলেছিল, আমি প্রিয়াকে বিয়ে করতে চাই? সেই দিন তর বাপ আর দাদা যে প্যাঁদানি দিয়েছিলেন ওইটার ফলে প্রেমের যে বাকবাকুম ছিল তা চিরতরে হাড়িয়ে যায়। এরপর আসল আমার পালা, আমি পরেছিলাম কলেজে সদ্য উঠে চিপচিপে গড়নের এক মেয়ের প্রেমে। কয়েক মাস প্রেম করার পর বুঝলাম মেয়ের প্রেমিকের সংখ্যা অগণিত সেই যে ব্যাথা পাইলাম তাই প্রেমের নাম আর মুখে আনিনি সেটার প্রভাব পরল আমার বিয়েতে ফলে বার বার মেয়ে দেখতে গেলেই ভাবি এই মেয়ে সেই মেয়ের মতই হবে তাই আর বিয়ে না করে চিরকুমার রয়ে গেলাম।
.
এতসব কাহিনী শুনার পর সাহস সঞ্চয় হওয়ার বদলে আমার গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে লাগল। যদি সত্যি রূপা বাসায় এসে হাজির হয় তাহলে আমার যে শুধু প্রেম যাবে তা নয় সাথে জান টাও চলে যাবে। রূপাকে ফোন দিয়ে বললাম,
-রূপা শুনেছো আমাদের বাসায় প্রেম নিষিদ্ধ।
-তাতে কি হয়েছে? আমরা না হয় সেটাকে শুদ্ধ করে ফেলব।
-অবশ্যই আমরা সেটাকে শুদ্ধ করব তবে আমরা দুজন খাটে শুয়ে থাকব বরই পাতা, গরম পানি, গোলাপ জল এসব চিটিয়ে আমাদের শুদ্ধ করা হবে।
-আরে দেখিও কিছু হবেনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
৪দিন পর কিন্তু আমাকে বিস্মিত করে রূপা এসে বাসায় হাজির হয়েছে, রূপা এসে আব্বুকে বলল,
-আনকেল আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি কে?
-আমি রূপা, তবে আপনার কাছে এসেছি আপনার ছেলের নামে কেইস করব সেটা অগ্রিম জানাতে।
-বল কি? কেন?
-তার বিরুদ্ধে থাকবে ধোঁকা, প্রতারণা, নির্যাতন, বিশ্বাসভঙ্গ এসব চার্জশীট।
-সে কি করছে?
-সে আমার সাথে রিলেশন করেছে কিন্তু বিয়ে করতে রাজী না তাহলে কি সেটা প্রতারণা নয়, আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে। একদিন আমারে একটা চড় ও মেরেছিল তাই নির্যাতন কেইস ও হবে।
-হারামজাদা করছে কি? সে কি জানেনা এই বাড়িতে প্রেম নিষিদ্ধ।
-এখন আর নিষিদ্ধ বলে লাভ নেই, আপনারা নাকি আমার সাথে তার বিয়ে মানবেন না, সেজন্য কেইস টা আপনাদের উপর দিয়েও চলে যেতে পারে যদি সে বলে সব আপনাদের ভয়ে করছে।
-এসব কি বলছো! ওরে পুলিশে দাও জঘন্য অপরাধ করছে কিন্তু আমাদের উপর অভিযোগ আসবে কেন?
-আপনার ভয়ে করছে কারণ আপনি নাকি বিয়ে মানবেন না।
-কে বলেছে মানব না, আমি ওলরেডি মেনে নিয়েছি, তুমিই হবে এ বাড়ির বউ।
.
রূপার সাথে অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল, বাসর রাতে রূপারে বললাম,
-কি মেয়েরে তুমি একদম হিটলারের হুবুহুব কপি শুধু সে ছিল ছেলে আর তুমি মেয়ে।
-কি আমি হিটলাম, আমি এখনি বাসা থেকে বের হয়ে যাব তোমার সংসার আমি করব না।
-সংসার এখনো শুরু হয়নি, শুরু হলে চলে যেও কথা দিচ্ছি আটকে রাখব না।
-মেরে ফেলব আটকে রাখতে হবে।
-অবশ্যই আটকে রাখব প্রয়োজন হলে বেধে রাখব, এরপরেও না থাকতে চাইলে মুগর দিয়ে মেরে অজ্ঞান করে রাখব। কথায় আছে, “যেমন কুকুর তেমন মুগুর।”
-ফাজলামি পাইছো আমি কুকুর।
-কুকুর হতে যাবা কেন? কথার কথা বলাম রাগ কর কেন?
.
বালিকার রাগ ভেঙ্গেছে বালকের সাথে এখন রাজ্যের গল্পে মগ্ন রয়েছে। সেসব রাজ্যের কাহিনী না হয় অন্যদিন শোনা যাবে। তবে এটা জেনে রাখা ভাল এই বাড়িতে প্রেম নিষিদ্ধ এটা এখনো রয়ে গেছে শুধু আমাকে বিশেষ আইনে প্রেম করে বিয়েটা করতে দেয়া হয়েছিল।.

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত