এক সদ্য বিধবা নারীর প্রেমের গল্পঃ

এক সদ্য বিধবা নারীর প্রেমের গল্পঃ

                      অবৈধ প্রেম? 

লেখক-:

 

ডাক্তার (প্রফেসর) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য 

এম.ডি (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ;এফ আই সি প্যাথলজি, ডব্লু.বি.এম.ইএস (অবসরপ্রাপ্ত)

 

প্রাক্তন অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি বিভাগ, কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, কলকাতা -700073, পশ্চিমবঙ্গ,  এবং জে.এম. এন মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জেএমএন এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন, চাকদহ, জেলা- রানাঘাট, পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমানে অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি, জে আই এস মেডিক্যাল স্কুল এবং রিসার্চ, সাঁতরাগাছি, হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ

ই মেইল করুন -: profpkb@yahoo.co.in  (বেশিরভাগ ব্যবহৃত)

prof.pranab@Gmail.com ( কম ব্যবহৃত)

 

হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইল -: 9231510435

বাসস্থান এর ঠিকানা-:

মহামায়া অ্যাপার্টমেন্ট, ব্লক-বি, ফ্ল্যাট -৩, ২য় তলা, মহামায়াতলা, ৫৪ এন এস সি বোস রোড, পোস্ট অফিস- গড়িয়া, কলকাতা ৭০০০৮৪, পশ্চিমবঙ্গ 

 

কপি রাইট -: 

Belongs primarily to Prof. Dr. Pranab Kumar Bhattacharya under strict Copyright acts and laws of Intellectual Property Rights of World Intellectual Property Rights organisations ( WIPO) , RDF copyright rights acts and laws and PIP copyright acts of USA 2012 where Prof Dr Pranab Kumar Bhattacharya is a registered member . Please Don’t try ever  to infringe the copyright  of the manuscript  to protect yourself from criminal offences suit file in court of law in any places of india and by civil law for compensation in few  millions US dollar or in pounds or in Euro in any court of laws in India 

 

                      অধ্যায় এক

             

            আমি   রাকেশ, একজন ডাক্তার ।

 

আমি তখন সদ্য  ডাক্তারী পরীক্ষা পাশ করে , মেডিসিনের হাউস স্টাফশিপ শেষ করে আর ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে ডি টি এম  পাস করে নিজেদের সোদপুরের বাড়িতে এসেছি ১৯৮২ সালে। আমাদের পাড়াতেই আমাদের বাড়ির সামান্য পায়ে হেঁটে কিছুটা দূরেই ছোট্ট দুই ঘরের একটা ক্লিনিকও চালু করেছিলাম । একটাতে আমার রোগীদেখবার ও বসবার ঘর । সেখানে ছিলো একটা ছোট টেবিল, বসবার একটা চেয়ার, রোগীর বসবার টুল, আমার ডাক্তারির ব্যাগ এবং  দরকারে রোগীকে শুইয়ে পরীক্ষার জন্য একটা রোগী পরিক্ষার টেবিলে বিছানা, বালিশ , ওয়েইলক্লোথ, রোগী পরীক্ষার পর হাত ধোবার জন্য একটা বেসিন, কল, দুটো সিলিং ফ্যান আর এর মাঝখানে  একটা ভারী পর্দা ঝোলে আমার বসবার ঘর এবং অ্যান্টি চেম্বারের  মাঝখানে। অন্যটাতে রোগীদের ডাক্তারের জন্য অপেক্ষার আর বসার জন্য পরপর কয়েকটা বেঞ্চ রাখা আছে। কোনো রিসেপশনিস্ট ,কম্পাউন্ডার বা নার্স নেই তখনও আমার। আমিই ডাক্তার আবার আমিই কম্পাউন্ডার। সময়টা  তখন ১৯৮২-৮৩ সাল হবে । ছোট দুই ঘরের ক্লিনিকটা হলেও মোটামুটি আঠেরো থেকে কুড়িজন রোগী হতো তখন প্রায় প্রতিদিনই। প্রথম বছরেই পাড়ায় ডাক্তারিতে  আমার এতটা পসার হবে,সত্যিই সেটা  আমি আশা করিনি। আমার রোগী দেখার ফি তখন মাত্র তিন টাকা, চেম্বারে এলে । কাছের কোনো বাড়ীতে  রাতবিরেতে কলেগেলে ফি পাঁচ টাকা। দূরের বাড়িতে কলে গেলে এবং সেই পরিবার সচ্ছল পরিবার হলে ফি দশ টাকা। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যে ফ্রীতে চিকিৎসাও করতাম যাদের পয়সা দিয়ে দেখানোর ক্ষমতা ছিলোনা আমাকে।  আমার আকাশ নীল রঙের সেকেন্ড হ্যান্ড অ্যাম্বাসাডর গাড়িটা কিনিনি তখনও। মাস গেলে ১,৫০০ থেকে-১,৮০০  টাকার  মত হতোই প্র্যাক্টিস থেকে। সেটাই তো তখন অ ওহনেক আমার কাছে।  সদ্য একজন এম.বি.বি.এস, পাশ করে প্র্যাক্টিসে বসা ২৩ বছরের অবিবাহিত ডাক্তার এর জন্য। পাড়ার লোকেদের জ্বর , জ্বালা, পেট ব্যাথা, মাল্যারিয়া, স্বর্দি , কাশি ,পেটখারাপ, আমাসা , গেটে ব্যাথা, আর্থিটিস, টিবি, COPD , রক্তের উচ্চ চাপ, হাপানি ,ডায়াবেটিস এগুলোর তখন  চিকিৎসা করতাম মেডিসিনের হাউসস্টাফশিপের  সময় শেখা অল্প জ্ঞান নিয়েই। কোনোকোনো হবু মায়ের অন্টিনেটাল কেয়ার আমার কাছে আসতো। বাচ্চাদের ভ্যাকসিনও দিতাম দু একটা, যেমন পোলিও DPT।  তখনও আমাদের পাড়াতে কিন্তু একান্নবর্তী পরিবারগুলোরই বসবাস। ফ্ল্যাটের বা মলের কোনো নাম গন্ধও ছিলো না সেখানে। ফ্ল্যাটের খোপগুলোতে যে বসবাস করা যেতে পারে এমনটা কল্পনাও কেউ করতে পারেনি তখনো। প্রায় সকলেরই তখন একতলা বাড়ি।খুব বেশি হলে দোতলা বাড়ি। এসি মেশিন তো কারুরই বাড়িতেই ছিলো না। সিলিং ফ্যান অনেকের বাড়িতেই ছিল হয়তো। সাদা কালো টিভি আছে বেশ কয়েকটা লোকের বাড়ি। রঙিন টিভি আসেনি তখনও। তেমনি ফ্রিজ বা ওভেন গ্যাস।  টিভি, গ্যাস, ফ্রিজ, টেলিফোন, গাড়ি এগুলো তখন বৈভব এর নিদর্শন। সমাজের উচু মধ্যবিত্ত স্তরের লোকেদের জন্য। বেশির ভাগ বাড়িতেই কয়লার উনানে রান্না হত। মহিলারাও তখন রান্নার ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। এছাডাও বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে (১৯৭২ সালে ইন্ডিয়ার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে শরণার্থী হওয়া) আসা অনেকগুলো পরিবার আমাদের পাড়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতেও শুরু করেছিল। একতলা কাচাপাকা বা টালির বা টিনের ছাদের বাড়ি তৈরি করে। নতুন এক প্রজন্মের শুরু কিন্তু তখন থেকেই। 

পাড়াতে আমি ছাড়াও আর দুইজন অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারও ছিলো। সুধীর ডাক্তার এবং অমিয় ( বাবলা সেনগুপ্ত) ডাক্তার।সুধীর ডাক্তারের বিলেতের পাস করা MRCP ডিগ্রি  ছিলো । তবে ওনার বাড়ি ছিল আমাদের পাড়ার থেকে বেশ অনেকটাই দূরে। স্টেশনের যাবার রাস্তায়, স্টেশনের লাগোয়া রাস্তার ওপর। ওনার বড় দোতালায় বাড়িতেই নিচের তলায় চেম্বার  ছিলো ওনার। তাই রাত বা বিরেতে পাড়াতে কোনো  বাড়ীতে ইমারজেন্সি কল হলে আমাকেই যেতে হতো  সেই ইমারজেন্সিটা সামাল দিতে। কেস খারাপ মনে হলে আমি নিকটবর্তি স্টেট জেনেরাল হাসপতালেই রেফার করে দিতাম। যেমন একবার  রাতে এক প্রাইমি গ্গ্রাভিদার মহিলার ডেলিভারী করাতে গিয়ে একরকম প্রায় ফেঁসেই গেছিলাম। বাচ্চাটার ব্রিচ প্রেজেন্টেশন ছিলো। তরীঘড়ি হাসপতালেই রেফার করেছিলাম। সেখানেই ডেলিভারি হয়েছিলো সেই মহিলার।

শংকরকাকু আমাদের পাড়াতেই থাকতেন। আমাদের বাড়ির থেকে মিনিট দশেক হবে হয়তো পায়ে হেঁটে। ছোটবেলা থেকেইতো দেখে এসেছিলাম ওনাকে। বছর ৫২ বয়েস।  বেশ মোটাসোটা ধরনের, শরীর থলথলে চর্বিতে ভর্তি,  বড় রকমের একটা ভুঁড়ি  নিয়ে,  টাইপ টু ডায়াবেটিস এর রোগী ছিলেন, উনি অনেক বছর ধরেই । আমার কাছেই এসে চিকিৎসা করাতেন বছরখানেক ধরে চেম্বার খোলার পর থেকেই । আমার আগে , উনি সুধীর ডাক্তারকেই দেখাতেন প্রতিবারেই ২৫  টাকা ভিজিট দিয়ে।  বছর খানেক ধরে আমারই করে দেওয়াই প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খেতেন তিনি । মনে আছে ওনাকে তখন, সদ্য নতুন বাজারে আসা অ্যান্টি ডায়াবেটিক সালফোনুরিয়া ওষুধ tolbutamide ( ওষুধের দোকানে সেটা রস্টিনোন হিসাবে পাওয়া যেত) দিয়েই চিকিৎসা করতাম। ইনসুলিন নিতে অপারগই ছিলেন উনি। ( তখন অবশ্য পরক ইনসুলিন ছিলো) কিছুতেই নেবেন না উনি ইনসুলিন।  কিছুটা উচ্চ রক্তচাপও ছিলো ওনার। Clonidine আর রমিপ্রিল ট্যাবলেট দিতাম ওনার উচ্চ রক্তচাপের  জন্য। স্টাটিন তখন পাওয়া যেতো না সোদপুরের মেডিসিন দোকান গুলোতে। খেতেও নাকি খুবই ভালোবাসতেন উনি। অনেকবারই না করছিলাম আলু, লুচি, পরোটা, কেনো তেলেভাজা, ঘি, মাখন নুন মিষ্টি এসব খাবেন না । শোনেননি । হাঁটা চলাও  যে তেমন বেশী  একটা করতেন না। বাড়িতে সামনের বারান্দায় বসে থাকতেন বেশীর ভাগ সময়ই  কাপড়ের  একটা ইজি চেয়ারে। মাঝেমধ্যে কাছেই সমবয়সীদের বাড়িতে যেতেন গল্পঃ গুজব করতে। কখনো বা পাড়ার খেলার মাঠের সামনে বসে ছোটদের ফুটবল বা ছেলে ছোকরাদের ক্রিকেট খেলাও দেখতেন। ওনার ECG, TMT ,echocardiography কিন্তু একদমই নরমাল ছিলো ছয় সাতমাস আগে । পিয়ারির নার্সিংহোম থেকে করানো হয়েছিল। ডায়াবেটিক retinopathy বা ডায়াবেটিক কিডনী ও ছিলো না। 

সেদিন দুপুরের পরে নিজের ক্লিনিকের দরজা বন্ধ করছিলাম তখন। গোটা দশ বারো রোগীও হয়েছিলো সেদিন সকাল থেকে । বেলাও তখন দুটো বেজে গেছে। বাড়িতে মা অপেক্ষা করে আছেন আমার যাবার জন্য । হঠাৎ করেই পাড়ার চেনা তিনজন উঠতি বয়েসের ছেলে এসে বললো ” তোমাকে এখনই যেতে হবে ডাক্তার , শঙ্কর মেসোর বাড়ি। শিগগিরই চলো” “ওনার শরীরটা ভালো নেই। শুয়ে আছেন। ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না। ” তখনও ভাবিনি দুদিন তিনদিন আগে যে লোকটা নিজের ব্লাড প্রেশার মাপতে এসেছিল আমার কাছে, যাকে ডায়াবেটিস নিয়ে এতো উপদেশ দিয়েছি , সে ততক্ষণে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে অজানা কোনো না ফেরার দেশে। ভেবেছিলাম ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে হয়ত বা। ক্লিনিকের শাটারটা  বন্ধ করার আর সুযোগই পেলাম না। তখন বেলা দুটো বেজে গেছে। একরকম প্রায় বগলদাবা করেই ছেলেগুলো আমাকে নিয়ে গেলো শঙ্করকাকাদের বাড়ি। আমাদের বাড়ি থেকে আমার ক্লিনিকে যেতে হলে ওনাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটা দিয়েই যেতে হতো আমাকে। উঠোনে পা দিতেই দেখলাম ওনাদের  একতলা বাড়ির একটা ঘর পাড়ারই  চেনা বিবাহিতা মহিলাতে প্রায় ভর্তি । শঙ্করকাকাদেরও যৌথ পরিবার ছিল। শঙ্করকাকা নিজের ছোট দুই নাবালক ছেলে  (আট বছর আর ছয় বছর হবে তখন) আর স্ত্রীকে নিয়ে একটা বড় ঘরে থাকতেন। একটা লাগোয়া যৌথ রান্নাঘরও ছিল ওনাদের ভাগে যত টুকু মনে পড়ে। শঙ্করকাকার বাবাও তখনো বেঁচে ছিলেন। শঙ্করকাকার ছোট ভাই রঞ্জিতকাকার সাথেই বোধ হয় ওনার বাবাও থাকতেন। শঙ্করকাকার ভাই রঞ্জিতের একটা বড় ধরনের কাপড়ের দোকান ছিল স্টেশনের ওপারে। শঙ্করকাকাও LIC র ডেভলপমেন্ট অফিসার না কি একটা যেনো করতেন। মোটামুটি ভাবে  পাড়াতে সচ্ছল পরিবারই ছিল ওনাদের।শঙ্করকাকার মা বেশ কয়েক বছর আগেই গত হয়েছিলেন। আমি বোধহয় তখন কলকাতায় হোস্টেলে থেকে পড়াশুনো করি। মায়ের মুখেই শুনেছিলাম  সেই খবরটা।

 

যাই হোক, পৌঁছে যা দেখেছিলাম একটা বিছানা গোটানো বড় চৌকির ওপরে শঙ্করকাকা চোখ বুজে যেনো ঘুমিয়ে রয়েছেন। ওনার চৌকির চারপাশে সব পাড়ার মহিলারা ওনাকে ঘিরে রয়েছেন। চৌকীর পাশের জানালাটা খোলা হাট করে। চোখে একঝলক দেখেই বুঝলাম উনি বোধয় বেঁচে নেই আর। শ্বাসও পড়ছিলো না ওনার। বুকে স্টেথোস্কোপ বসিয়ে  কোনো হৃদস্পন্দনের আভাসও পেলাম না। কার্ডিয়াক ম্যাসেজ তো দিতেই হয়। না হলে ডাক্তারের কপালে মারধর থাকে। তাই কিছুক্ষন ধরেই কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দিয়েছিলাম দুই হাতে । মাঝে মধ্যে বুকেও কিল মেরেছিলাম  । শঙ্করকাকার থলথলে মোটা শরীরটা নড়ছিলো বুকে  কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দিতে। আমিও বেশ ঘেমেই গেছিলাম। সবাই আমার দিকেই কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে ছিলো।  এতোগুলো পাড়ার মহিলা। যেনো আমি কোনো দেবদূত নেমে এসেছি। ওনার বেঁচে ফেরাটা যেনো আমার হাতেই রয়েছে। আমি কার্ডিয়াক মেসেজ দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করলাম” কি হয়েছিল?” শঙ্করকাকার স্ত্রী বললেন – “উনি দুপুরের খাবার খেয়েদেয় বারান্দায় রোদে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। হঠাৎই বলেছিলেন” একটু শোবো। শরীরটা ভালো লাগছে না।” ঘরে এসে সিলিং ফ্যান চালিয়ে চৌকিতেই শুয়ে পড়ছিলেন। বুকে কিন্তু কোনোরকম ব্যথা বা কষ্ট  বা চাপধরা এসব কিছুই বলেননি উনি। শুধু ঘাম হয়েছিলো একটু। ফ্যান চালিয়ে শুয়ে আছেন দেখে কেউ ওনাকে ডিসটার্বও করেনি কেউ। ঘণ্টাখানেক পরে ওনার স্ত্রী ঘরের কাজকর্ম সেরে ,বাথরুমে স্নান সেরে, শাড়ি কাপড় চেঞ্জ করতে ঘরে ঢুকে দেখেন কেমন ভাবে যেনো ঘুমিয়ে আছেন উনি । কোনো সাড়াশব্দ দেননি ডাকতেও। বারে বারে ঠেলা দিতেও সাড়া শব্দ না দিতে  শঙ্করকাকার স্ত্রী নিজেই বাড়ির সবাইকে ডাকেন চিৎকার করে।

বেশ কিছুক্ষন ধরে শঙ্কর কাকার বুকে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ দিয়েও যখন কিছুই হলো না তখন আবারও  স্টেথোস্কোপ দিয়ে ওনার হার্টবিটটা দেখলাম। না কোনো হার্টবিট শব্দ ছিলো না আমার কানে। ক্যারতিড ধমনীরও  পালস নেই। নিশ্বাস প্রশ্বাস ও  সম্পূর্ন বন্ধ। চোখের কর্নিয়াল রিফ্লাক্স দেখলাম তুলো চেয়ে নিয়ে । নেই। চোখের মণি দিয়ালাতেড। টর্চের আলো ফেলে দেখলাম কোনো রিয়াকশনই নেই সেখানে। এরপরে তো আমার , ওনার মৃত্যুকে ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না । সেই প্রথম  আমারই পাড়ার ছোটবেলাথেকে চেনা  কাউকে মৃত ঘোষণা করা।  ওনার বাড়িতে কান্নার আওয়াজ শুরু হলো। শঙ্করককার স্ত্রী আমার সামনেই ওনার বুকের ওপরে ধপাশ করে পড়ে গিয়ে  জোরে চিৎকার করেই কেঁদে উঠলেন। ওনার নাবালক আট আর ছয় বছরের ছেলে দুটোও হতভম্ব হয়ে দূরে দাড়িয়ে ছিলো। ওরা তো বুঝতেই পারছিল না কী সর্বনাশ হয়েছে তাদের।

আমি চলে এলাম । চারঘণ্টা পরেই ডেথ সারটিফিকেট নিয়ে আসতে বললাম আমার চেম্বার থেকে , সন্ধ্যার পরে। 

যখন ওনাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসছি তখন সুধীর ডাক্তারবাবু একটা রিকশা থেকে শংকরকাকার বাড়ির গেটের কাছে নামলেন। কেউ বোধহয়  ওনাকে ডেকে এনেছেন। আমার ওপরে পুরো ভরসা করতে পারেনি ওরা বুঝলাম। আমাকে দেখে বললেন ” কি হোল?” বেঁচে আছেন তো?

আমি মাথা নেড়ে বললাম “নেই! ” সুধীর ডাক্তারও ঘরের মধ্যে চলে গেলেন। শঙ্করকাকার বাড়ির সামনের রাস্তায় তখন পাড়ার অনেক মহিলা আর ছেলেছোকরাদের জটলা।  আমিও ক্লিনিক এর দিকে হাটা লাগলাম। শাটার ফেলা হয়নি ক্লিনিকের। পেটে ও ছুঁচো ডাকছিলো তখন। ঘড়িতে সাড়েতিনটে বাজে প্রায়। 

 বাড়িতে এসে মাকে সবই বললাম। মা বললেন কোনো নিয়মই তো মানতেন না উনি । আমার থেকে ভালো আর সেটা কে জানতো? সন্ধ্যে সাতটানাগাদ চেম্বারে ওনার ভাই  রঞ্জিত কাকা আর ভাইয়ের বউ এলো ডেথ সার্টিফিকেটটা নিতে। লিখে ও দিলাম। ওনারা আমাকে ফি দিলো না। আমিও চাইলাম না। মনটা আমার  সেদিন কেমন যেন উদাস হয়ে গেছিলো। তিন দিন আগেও শঙ্করকাকা নিজে এসে আমাকে ওনার প্রেশার দেখিয়ে গেছিলো যে। 

 

এরপরে ওনাদের বাড়ির সামনে দিয়ে রোজই চেম্বারে যাবার বা চেম্বার থেকে ফিরবার সময় আপনা আপনিই  কেনো যেনো আমার চোখদুটি চলে যেত শঙ্করকাকার সেই ঘরের দিকে। সেখানে জানালার লোহার শিক দিয়ে ওনার সদ্য হওয়া বিধবা স্ত্রী আর ওনার নাবালক দুই ছেলেদের দেখতাম বসে থাকতে ধড়াচূড়া পরে চৌকির ওপরে । ওনার সদ্য বিধবা স্ত্রী আমার দিকে কেমনভাবে যেনো তাকাতেন আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে।  যেনো ইচ্ছে করলেই আমি ওনার স্বামীকে বাঁচাতেই পারতাম ওনার অকাল মৃত্যুর থেকে। ইচ্ছে করেই বাঁচাইনি আমি এমনই একটা ভাব ছিল ওনার চোখে। কি রকম ডাক্তার আমি যে তার রোগীকে বাঁচাতে পারে না? শঙ্করকাকার বাবা ( দাদু ) বারান্দায় শঙ্করকাকার বসবার কাপড়ের ইজিচেয়ারে একাএকা বসে থাকতেন।  এই বয়েসে সদ্য পাওয়া পুত্র শোকে শূন্য চোখে তাকিয়ে। আমার সাথে ওনারা কথা বলতেন না কেউই। ডাকতেনও না কথা বলতে। পরদিন থেকেই ওনাদের বাড়িতে, ওনাদের সব আত্মীয় স্বজনের সমাবেশ হতে দেখেছিলাম। ওনার পরলৌকিক কাজের জন্য।  মাঝেমধ্যে শঙ্করকাকার স্ত্রী “নমিতা কাকীকে ” সাদা থানে দেখতাম। এর মধ্যেই এগারো দিনের দিন ওনার পরলৌকিক কাজও হলো। আমাকে আমাদের বাড়িতে এসে নিমন্ত্রণ করেছিল ওনারা। শঙ্করকাকার নাবালক দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে এসে ওনারই ছোটভাই রঞ্জিত কাকা। আমি যেতে পারিনি। নাকি ইচ্ছে করেই যাই নি সেটা আজকে  আর মনে নেই। 

 

এর পরেতো দিনও কেটে যায়। মাসও কেটে যায়। বছরও  প্রায় ঘুরে আসে। শঙ্করকাকার মৃত্যুর পরে কেনো জানিনা আমার চেম্বারের রোগীর সংখ্যাও কেনো যেনো  আস্তে আস্তে কমে আসছিল। দিনের বেলায় কোনোদিন বা চারটে পাঁচটা রোগী। সন্ধ্যার সময় মাঝেমধ্যে দুটো তিনটে রোগী পেতাম তখন। ব্লাড প্রেসার দেখাতেও আসা বয়স্ক লোকজনও কমে গেলো। আমার সিগারেট খাওয়ার নেশাটাও বাড়তে থাকলো চেম্বারে একা বসেবসে। মনে হতে শুরু করেছিল যে চাকরিতে যোগ দিলেই ভালো হয়। কিন্ত নিজের তৈরিকরা প্রাকটিসও ছাড়তে ইচ্ছে যে করতো না। অন্যকোনো জায়গায় বা ওষুধের দোকানে বসতেও ইচ্ছে করত না। কোনো যে অ্যাটাচমেন্ট নেবো সেটারও উপায় নেই। শুধু মাত্র এমবিবিএস ডি টি এম ডাক্তারকে কে আর অ্যাটাচমেন্ট দেবে নার্সিংহোম গুলোতে? এদিক ওদিক অ্যাপ্লাই করতে ও শুরু করেছিলাম যদি নার্সিং হোম গুলোতে RMO হিসাবে কেউ  আমাকে অ্যাটাচমেন্ট দেয়। নাইট ডিউটি করে দেবো সেই হিসাবে। 

রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করার সময় শংকরকাকাদের বাড়ীটার দিকে আমার চোখ কিন্ত আপনাআপনি চলেই যেত।  আমার  যেনো অভ্যেস হয়ে গেছিলো এটা । শংকরকাকাদের বাড়ীটা নিস্তব্ধ থাকতো প্রায়ই। বাড়ীটার ও কিছু রদবদল হয়েছিলো ভেতরের দিকে মনে হয়। মাঝেমধ্যে নমিতাকাকীকে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতে বা ওনাদের রান্না ঘরের দরজায়  বা উঠোনে কাজ করতে দেখা হয়ে যেত । উনি তখন আর সাদাথান বা সাদা ব্লাউজ  তেমন খুব একটা পড়তেন না। আমার দিকে কেমন যেনো উনি অদ্ভুত চোখেই তাকাতেন।  কি যে ছিলো সেই দৃষ্টিতে! তবে যে স্বাভাবিক ছিল না সেটা বুঝতে পারতাম। অথচ উনি কোনো কথাও বলতেন না। চুপচাপ দাড়িয়ে আমাকে দেখতেন যতক্ষণ দেখা যায় রাস্তায় আমাকে। আমিও দ্রুত চলে যেতাম ওনাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে। কে যেনো তাড়া করতো আমাকে। একটা গিলটি ভাবও অনুভব করতাম কেনো কে জানে? পাড়াতে আমার হাতে প্রথম মৃত্যুকে ঘোষণা ছিলো শঙ্করকাকাকেই দিয়ে। শঙ্কর কাকার ছেলেদুটো আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। স্কুলে যেতেও শুরু করেছিল ওরা। খেলার মাঠেও আসতে শুরু করেছিল ওরা। 

বেশ কয়েক মাস ধরেই কিন্তু আমার ছোট চেম্বারে রোগীর উপস্থিতিও বেশ কমই হচ্ছিলো। প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছিলো। পাড়ার রোগীরা তখন হয় সুধীরডাক্তার বাবু বা অমিয়দা ( বাবলা)  ডাক্তারকেই দেখাতে যেত বেশী টাকা ফি দিয়ে। দুজনেরই চেম্বার ছিলো স্টেশন রোডের ওপরে স্স্টেশনের কাছে। অমিয়দা কিন্ত ভীষণ দাম্ভিক ডাক্তার ছিলেন।  দুধে সাদা ফিয়াট গাড়ি নিজে চালিয়ে চেম্বারে আসতেন। নার্সিং হোম গুলোতে এটাচড ছিলেন।  কোনো বাড়ীতে ইমারজেন্সি কল করলে যেতেনই না কখনোই। ওনার প্রিন্সিপাল ছিলো সেটা। বেশ রাফ ব্যবহার ছিলো ওনার রোগীর আত্মীয়দের সাথে। কিন্তু খুবই ভালো প্র্যাক্টিস হত ওনার যেহেতু উনি স্টেট জেনেরাল হাসপাতালেরও মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। ইমারজেন্সি ডিউটি আর আউটডোর ডিউটিও করতেন।  আমি তখন খুবই চিন্তায় থাকতাম আমার নিচের দিকে পড়তে থাকা প্রাকটিস নিয়ে।  আমার বাড়িতে তখন আমার মা ,বাবা, ছয় ভাই  এক অবিবাহিত বোনদের নিয়ে  নয়টা পেট। মায়ের জন্য অনেক ওষুধই কিনতে হতো । ফ্রি  মেডিসিনের স্যাম্পল তখন তেমন একটা পেতাম না। ব্র্যান্ড নামের কিছু ভিটামিন, ব্যথার ওষুধ, ডাইজেস্টিভ এনজাইম , জ্বর কমানোর ওসুধ,কিম্বা কাফ সিরাপ এগুলো প্রোমোট করতেই কয়েক জন রিপ্রেজেন্টেটিভ আমার চেম্বার আসতো। শুধু মেজোভাই এমএসসি পাশ করে তখন একটা চাকরী করে। সদ্য টেলিফোন ডিপার্টমেন্ট চাকরীতে যোগ দিয়েছিল সে। সেজোভাই এবং চতুর্থ ভাই বাবার পাওয়া পেনশন এর টাকায় তখনকার দিনের ৩৫০০০ টাকা দিয়ে  কুকমী আর ডাটা মসলার একটা ব্যাবসা শুরু করেছিলো কুকমীর ডিলার হিসাবে । ওর সাথে চতুর্থ ভাই তার কর্মচারী হিসাবে মাল ডেলিভারি দিত দোকানে দোকানে একটা সাইকেল ভ্যান নিয়ে। তারও সিটি কলেজের থেকে  বি কম  অ্যাকাউন্টসি নিয়ে অনার্স পড়া শেষ হয়নি তখনো । বোনও মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। এরপরেও ছিলো দশ বছরের দুই যমজ ভাই।  তখন চতুর্থ ক্লাসের স্কুলে পরে । আমার বাবা কেন্দ্রীয় সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন ১৯৮৪এর আগস্ট  মাসে  আর  পেনশন পান। চিন্তাতো হবেই আমার। আমি কিন্তু পাড়াতে প্র্যাক্টিস করছি, সরকারী চাকরীটা না করে, সম্পূর্ন ভাবেই নিজের ইচ্ছায় এবং নিজেরই ডিসিশনে। বাবা কিন্ত বারে বারেই  আমাকে অ্যাপ্লাই করতে বলেছিলেন চাকরিতে। করিনি । প্রাকটিসই করবো এটাই আমার ভিতরে ইচ্ছে ছিলো প্রথম থেকেই। এক বছরে আমার প্রাকটিসটাও কিন্ত ভালই জমে উঠেছিল।  শংকর কাকার মৃত্যুর পরে আমার প্রাকটিস কমে গেছিলো বেশ। প্রায় অর্ধেক হয়ে এসেছিলো। কি ভাবে প্র্যাক্টিসটা আবার বাড়াবো ভেবেও কুল কিনারা করতে পারছিলাম না। পাড়ার লোকেদের আমার ওপরে বিশ্বাস কমে যেতে শুরু করেছিল?  একএক দিনতো সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কোনো রোগীই থাকতো না চেম্বারে। বসেবসে মাছি তাড়াতাম। বা ডাক্তারী বই পড়তাম। MCQ সলভ করতাম।

তবে রাতে কারো কিছু ঘটলে আমারই ডাক পড়তো। আমি কখনোই না করতাম না রোগীর বাড়িতে যেতে। রোগীর বাড়িতে গেলে আমার তখন ফি ছিলো পাঁচ টাকা আর বেশি দূরে হলে ও সচ্ছল পরিবার হলে দশ টাকা। হেঁটেইতো চলে যেতাম। এর মধ্যেই  একদিন খেলার মাঠের কাছে ব্যারাকপুর কোর্টের উকিল “বলদাদুর” বাড়িতে রাতে ডাক পড়লো আমার। ওনার বড় ছেলের বউয়ের জ্বর হয়েছিলো দিন তিনেক ধরে । আমার কাছে না এসে সুধীর ডাক্তার। সুধীর ডাক্তার সেদিনই মালারিয়ার ওষুধ chloroquine দিয়েছিলেন খেতে, রক্তে মালারীয়ার জীবাণুর টেস্ট না করেই, সাথে দুটো অ্যান্টিবায়োটিকও দিয়েছিলেন কাশির ওসুধ আর আলকাসল সিরাপ।  রাতে ঘুমোতে যাবার আগে ওষুধ খেয়ে ভদ্রমহিলা অস্বাভাভিক  পাগলের মত ব্যবহার করছিলেন । ঘাড় শক্ত করে কালীঠাকুরের মত জিভ বের করে পাগলামী করছিলেন। কখনো মাথা,ওনার ঘাড় , শরীর শক্ত হয়ে বেকে যাচ্ছিলো। ওনার স্বামী ও  ওনার দেয়োর সুধীর ডাক্তারকে ডাকতেগেলে উনি না এসে আমাকে দেখাতে বলেন। আমি যখন ওনাদের বাড়ি যাই রুনু বলের স্ত্রীর শরীর শক্ত হয়ে বেকে আছে বিছানায়। গায়েও ভীষণ জ্বর। দেখেই বুঝেছিলাম সেটা “এক্সট্রাপিরামিডাল সিনড্রোম” মলারিয়ার ওষুধ লারিয়াগো থেকেই হয়েছে। কারো কারো হয়। আসলে ওনার  বোধ হয় ভাইরাল জ্বরই হয়েছিলো। সুধীর ডাক্তার একই সাথে অ্যান্টিবায়োটিক আর chloroquine  দিয়েছিলেন। যাই হোক আমি  আমার সাথে রাখা diazepam ইনজেকশন দিতেই ভদ্রমহিলা  কিছুক্ষণ পরে ঘুমিয়ে পড়েন ও ওনার এক্সট্রাপিরামিডাল সিনড্রোম এর সিম্পটমও অস্তে আস্তে চলে যায়। আমি আরো ঘন্টা খানেক থেকে দশ টাকা ফি নিয়েই রাত দুটোর সময় একাই বাড়ি ফিরে আসি।

পরদিন সকাল দশটা নাগাদ রুনু বল নিজে বাড়িতে এসে আমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে যান আমি সঠিক ভাবে চিকিৎসা করবার জন্য। ওনার স্ত্রী ভালো আছেন বলেন।আমার করা নতুন প্রেসক্রিপশন নিয়ে যান। 

আরেকটা কেস  অবশ্য আমার প্র্যাক্টিসকে আবারও কিছুটা হোলেও মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। আমার নিজের জ্যাঠামশাই এর বাড়ির ঠিক  উল্টো দিকেই পুকুরের ওপারে সরকারবাবু বলে একজন নতুন  পরিবার একতলা নতুন বাড়ি  বানিয়ে  এসেছিলেন। ওনার বয়েস ৭০ এর ওপরে ছিলো। ওনার স্ত্রী ৬৬ বয়েসে এবং ওনার দুই মেয়ের ছোটটি ডিভোর্সি ও এক ১৪ বছরের নাতি নিয়ে থাকতেন। রোজই উনি আমার চেম্বারের সামনে দিয়ে  নাতির সাথে বিকেলে বেলা বা সন্ধ্যার সময় হাঁটতে যেতেন । সেদিন রাত ১১টা নাগাদ হঠাৎ ওনার ছোট মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমি চেম্বার বন্ধ  করে কিছুক্ষণ আগেই বাড়ি ফিরেছিলাম। ভদ্রমহিলা বললেন ওনার বাবার নাকি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কিছুক্ষন ধরে। আমি দ্রুত (পায়জামা গেঞ্জি পড়া অবস্থায়)  আমার মেডিসিনের ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম ওনার মেয়ের সাথে। ওনার বাড়ি গিয়ে ভদ্রলোককে বিছানায় চুপ করে শুয়ে থাকতে দেখেছিলাম খাটে হেলান দিয়ে। ওনার সত্যি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। ইতিহাস নিয়ে জেনেছিলাম যে রাত নয়টা নাগাদ ওনার হঠাৎ করেই  পেটে ব্যাথা করে ,পায়খানা পায়, আর সেখানেই ঘাম আর বুকে প্রথম চাপ চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করেন। ওনার রক্তচাপ মেপে দেখলাম  সিস্টোলিক প্রেসার অনেকটাই কমে গেছে।  হাতের পালসও রেগুলার নেই। বুকে স্টেথোস্কোপ বসিয়ে দেখলাম থার্ড হার্ট সাউন্ড। gallop heart সাউন্ড। ফুসফুসে জল জমতে সবে শুরু হয়েছিলো। আমি প্রথমেই আমার সঙ্গে রাখা sorbitrate ট্যাবলেট ওনার জিভের নিচে রেখে দিতে বললাম আর অ্যাসপিরিন গোটা চারেক ট্ট্যাবলেটও খাইয়ে দিয়েছিলাম । সামান্য কিছুক্ষন পরে পেথিদিন ইনজেকশন দিয়ে ওনার মেয়েকে  ডেকে বলেছিলাম যে ওনার  বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং হার্ট ফেল করতেও শুরু হয়েছে এবং ওনাকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।  আরজি কর হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে। সেদিন ফি না নিয়েই বাড়ি  ফিরে এসেছিলাম । উনি আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কার্ডিওলজি বিভাগে সেদিন রাতেই। দু সপ্তাহ পরে ওনাকে আরজি কর হাসপাতালের থেকে ডিসচার্জ করে। অন্তেরো লতেরাল ওয়ালে হার্ট এ্যাটাক ও হার্ট ফেইলুরের ডায়াগনোসিস দিয়ে। ভদ্রলোক কিন্ত এরপরে আরো ১৭ বছর বেঁচে ছিলেন শুনেছিলাম। 

 

এর পর থেকেই আমার আবারও সামান্য কিছুটা নাম ডাক হতে শুরুও হয়েছিলো পাড়াতে। রোগীরাও  কিছু কিছু আবার  ফিরে আসতে শুরু করেছিল চেম্বারে। বাবা কিন্তু বারেবারেই বলছিলেন সরকারী কোনো চাকুরীতে যোগদান করতে। প্রাকটিসের ওপরে সম্পূর্ন ভাবে একদম ভরসা না করতে। চাপে পড়ে একরকম বাধ্য হয়েই ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেন্টর হেলথ ডিপার্টমেন্টে অ্যাপ্লাই করেছিলাম জেনেরাল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার পোস্টে, পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দেখে। সেটা ১৯৮৬ সালের প্রথম দিকে । তখন বামফ্রন্ট সরকারে। ডাক্তার আম্বরিস মুখুজ্জে হেলথ মিনিস্টার। রাম নারায়ণ সরকার প্রতিমন্ত্রী হেলথ ডিপার্টমেন্টের । সত্যিই ভাবিনি যে হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে ইন্টারভিউ দেবার জন্য আমার ডাক আসবে  জেনেরাল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার পোস্টের জন্য । রাইটার্স বিল্ডিং এর  “জি ব্লকে” হেলথ ডিপার্টমেন্টে  গিয়ে একদিন দিয়েও এসেছিলাম ইন্টারভিউ, অরিজিনাল কাগজ পত্র নিয়ে। প্রাকটিস করেও তখন হাতে মাসে হাজার বা বারোশ টাকা আসছে। আশা করেছিলাম আমাকে হয়তো বা সরকার বাহাদুর নিয়োগপত্র দেবে না।  কিন্তু মাস দুয়েকের মধ্যেই বাড়িতেই একদিন দুপুরে পিয়ন মারফৎ রেজিস্টার্ড পোস্টে আমার একটা সরকারী নিয়োগ পত্র চলে এসেছিলো। ব্যারাকপুর সাব ডিভিশনাল হাসপাতালের গাইনী ডিপার্টমেন্ট এর অ্যাডহক জেনেরাল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে।  অ্যাডহক মেডিক্যাল অফিসারের গুড়হ মানেটা তখন কিন্তু জানতাম না। সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ডিউটি রোজ , সোম থেকে শনি। মাসের একটা সপ্তাহের রবিবার  ইমারজেন্সি ডিউটি করতে হবে। পরিবর্তে  পরদিনটা পুরো ছুটি পাবো। তখন কিন্তু ২৪ পরগনার সি. এম. ও . এইচ এর অফিসটা ছিলো টলিগঞ্জের  বাঙ্গুর হাসপতালে। মেট্রো ছিলো না তখন কলকাতায়। বাড়ীতে সবাই জইন করতে চাপ দিয়েছিল। তেমন ইচ্ছে না থাকলেও, বাবাকে সাথে নিয়ে গিয়েই জইন করেছিলাম ,মনে আছে ১৯৮৬ সালের অক্টবরের মাসে। পরদিন আবার গিয়ে ব্যারাকপুর সাব ডিভিশনাল হাসপাতালে। ২৪ বছর বয়সে প্রথম বার চাকরীতে ঢোকা। ৬৬০ টাকা থেকে -১৬০০ টাকার পে স্কেল বেসিক গ্রেড। মাস গেলে গ্রস বেতন মোট  ৯০০ টাকা । তার থেকে আবার জি পি এফ্ , ইনকাম ট্যাক্স , প্রফেশনাল টেক্স ইত্যাদি কেটে নিয়ে হাতে পাবো মাত্র ৭০০ টাকা মাত্র। প্রাকটিস করে তো এর দ্বিগুনই পেতাম হাতে। এস ডি এম ও মাঝ বয়সী একজন লোক । উনি আমাকে জইন করিয়ে নিয়ে আমার ডিউটি , আমার আউটডোর ও marked বেডগুলো বুঝিয়ে দিলেন। ডিপার্টমেন্টও সাথে নিয়ে গিয়ে চিনিয়েও দিলেন। গাইনী ডিপার্টমেন্ট বা মেয়েদের ডিপার্টমেন্ট আমাকে নিয়ে সেখানে তখন  মাত্র দুজন জেনেরাল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার ছিলো। আর দুজনই মহিলা গাইনোকোলজিস্ট বা গাইনী স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার । গাইনীতে অন্য  জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন  ডাক্তার মহাপাত্র। উনি লন্ডন থেকে বছর খানেক আগে MRCOG ডিগ্রি করে সেখানে জইন করেছেন। আমার থেকে পাঁচ বছর সিনিয়র। ভারতবর্ষের স্বীকৃত এমডি ডিগ্রি ওনার না থাকতে উনি স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার পোস্টটা পাননি । তবে ব্যারাকপুরের প্রায় সব নার্সিং হোমগুলোতেই  এর মধ্যেই  উনি এটাচড। আমি ধাত্রীবিদ্যাতে বলতে গেলে তখন একদমই নবিশ। প্রায় কিছুই তো জানিনা। ইন্টার্নশিপ হয়ত করেছিলাম তিনমাস। তাও তো ফাঁকি দিতাম। আমার থেকে নার্সরা ভালো জানতেন হাতের কাজগুলো। নরমাল, ব্রিচ প্রেজেন্টেশন, শোল্ডার ডেলিভারি করাতে , প্রাইমিতে episiotomy দিতে, স্টিচ দিতে, সার্জনের সাথে OT Assistant হিসাবেও। অসম্ভব ভাবেই তাই কুকড়েও থাকতাম, মনে আছে বিশেষ করে ডেলিভারি রুমে কল বই দিয়ে ডাক পড়লে হঠাৎ করে। স্পেশালিস্ট গাইনী মেডিক্যাল অফিসার এর সাথে OTতে সিজার বা অন্য কোনো অপারেশনে নামতেও ঘেমে যেতাম। বুকের ভেতরে হার্টবিট বেড়ে যেত। ভগবানকে ডাকতাম । যাতে ভুলচুক না হয় তেমন। উপায়ও ছিলোনা। নিজেকে নিজেই গালাগাল দিতাম কেনো যে মরতে সরকারী চাকুরীতে জইন করেছিলাম এই ভেবে। খুবই ভয় পেতাম obstructed ডেলিভারি কেসগুলো রেফার হয়ে আসলে পি এইচ সি থেকে যখন একা থাকতাম ডিউটিতে হাসপতালে। মহাপাত্রদাকে তো সহজে আর পাওয়া যেতো না। বেশির ভাগই নার্সিং হোমে থাকতেন। উনি তো MRCOG ডিগ্রি ধারিছিলেন।  হাসপতালে একমাত্র বিলেতের থেকে পাস করা ডাক্তার বলে কথা। মহিলা দুই গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও ওনাকে বেশ সমীহ করেই চলতেন। ওনাদের তো আর MRCOG ছিলো না। তাই সপ্তাহের দুদিনই গাইনী OTতে আমাকেই যে নামতে হত ওনাদের সাথে। খুবই টেনশন হত তখন। সামান্য ভুলভাল করলেই বেশ বকাঝকাও জুটতো কপালে। আর ভুলতো হতই। নার্সরাও সবাই মুখ লুকিয়ে হাসতেন। লজ্জার মাথা খেয়েই ইনস্ট্রুমেন্ট এ নামতাম, নার্সদের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ছেড়ে দিয়ে। যাই হোক আমার পাড়ার সকালের চেম্বারটা বাধ্য হয়েই বন্ধ করতে হয়েছিল। একমাত্র রবিবার দিন খোলা রাখতাম। সন্ধ্যার সময় ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত চেম্বারে বসতাম। চেম্বার আর বাড়ীর সাইনবোর্ডে বারাকপুর সাব ডিভিশন হাসপাতালের স্ত্রী বিশেষজ্ঞ হিসাবেও নিজেকে পরিচয় দিয়ে লিখেছিলাম। প্রেসক্রিপশন প্যাডেও। এতে আমার একটু সুবিধেই হয়েছিলো। আমি হাসপাতালে দরকার হলে রোগী ভর্তি করতে পারবো, এই ধারণা নিয়েই বেশ কিছু প্রেগন্যান্ট মহিলা আবার আমার রোগী হয়েছিলেন  তাদের অ্যান্টিনতাল পিরিয়ডে। সেটা ছাড়া পাড়ায় আর আশেপাশেও একজনও গাইনীর ডাক্তার ছিলেন না। আমি প্রেগন্যান্সিটে  বা বাচ্চার কোনো ঝামেলা হতেপারে  বুঝলেই বারাকপুর হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলতাম এবং মায়ের কার্ড করিয়ে দিতাম । ওখানে মায়ের ইউ এস জিও করা যেতো বিনে পয়সায়। তবে Maternal termination of pregnancy বা  বাচ্চা নষ্ট করবার অপারেশন গুলো কখনোই করতাম না  নিজের চেম্বারে। হাসপতালে পাঠিয়ে দিতাম যদি কেউই আসতো। 

একদিন এস ডি এম ওর অফিসের বড়বাবু আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন । আমি কোথাও প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করছি কিনা সেটা জানতে। যদি প্র্যাক্টিস করি তবে একটা সরকারী অপশন ফরম লিখে সই করে দিতে হবে। নন প্র্যাক্টিসিং পে আর পাওয়া যাবে না তখন । অর্থ্যাৎ প্রায় ২০০ টাকা আরো কমে যাবে মাইনে থেকে। কি আর করা। সরকারী নিয়ম। ফরমটা ফিল আপ করে দিলাম চেম্বার এর ঠিকানা দিয়ে আর আমার প্রেসক্রিপশন প্যাড জমা দিয়ে। সাব ডিভিশনাল হাসপাতালের ডাক্তারদের মধ্যে কিন্ত 

 তখন পলিটিক্স  বেশ ভালই চলতো। বিশেষ করে যারা কোয়ার্টারে থাকতেন আর লোকাল প্র্যাক্টিস করতেন তাদের মধ্যে রোগী ধরা নিয়ে । আর চলত ডিউটি নিয়েও পলিটিক্স। সকলেই রাতের আর সন্ধ্যার ডিউটি গুলো এড়িয়ে চলতেই চাইতেন। যত কম করতে পারা যায় আর কি । কেউই নিজের চেম্বার নষ্ট করতে চাইত না। এদিকে আমি তো সন্ধ্যার পরেই চেম্বার করতাম তখন। আমার ডিউটি ছিলো তো সকাল নয় টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত । সিনিয়র জেনেরাল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার দাদারা এবং দিদিরা চাইতেন সপ্তাহে সন্ধ্যার দুটো এবং রাতের একটা ডিউটি আমি কম করে করি। আমার পক্ষে সেটা সম্ভবই ছিলো না । আমার চেম্বারটা পুরোই ভেঙ্গে যাবে তাহলে। একেই সকালে আমাকে চেম্বার বন্ধ রাখতে হয়। আমি সরাসরি  সেই প্রস্তাবে না করে দিয়েছিলাম । এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মনে আছে। আমার নামে সি . এম. ও . এইচএর কাছে আর ডিরেক্টর হেলথ সার্ভিসেস এর কাছে কমপ্লেইন লেটার লিখে পাঠিয়েছিলেন এস ডি এম ওর অফিস থেকে যে আমি সপ্তাহে দুটো সন্ধ্যে আর দুটো রাতের ডিউটি করতে অস্বীকার করেছি। 

যাই হোক আমার চেম্বারে তখন রাতের দিকেই রোগী আবারও  হতে শুরু করেছিল। বেশির ভাগ রোগীই ছিলো বয়স্কদের ব্লাড প্রেসার চেক আপ ,  আর  স্বর্দী, জ্বর ,পেরখারাপ, আমসা, পেটে ব্যাথা, বদহজম, কৃমি এগুলোই। রাতের চেম্বার বন্ধ করতে করতে রাত ১০-৩০ বা কোনোদিন ১১টা হয়ে যেতো। বাড়িতেও  আমাদের সংসারের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছিলো। আমার ফি তখনও তিন টাকাই ছিলো চেম্বারে এলে। 

এরই মধ্যে একদিন সবে হাস্পাতাল থেকে ফিরেছি ,ফিরে স্নান সেরে কিছু খেয়ে শুয়ে ছিলাম ঘরে বিশ্রাম করতে মা ঢুকে বললেন ” তোকে শংকর বাবুর বাড়ি থেকে ডাকতে এসেছে “! আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। প্রায় একবছর হতে চললো শংকর কাকার মৃত্যু হয়েছে, ওনাদের বাড়ির কেউ কোনো এর পরে কথা বলে না আমার সাথে , তবুও ডাকতে এসেছে ?? আমি মাকে বললাম “পাঠিয়ে দাও!”

মা আমার ঘরের জানালা দিয়েই  বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ওনাকে ডাকলো ” এসোগো “নমিতা”, ঘরেই এসো।  দেখো বলে ওকে ! যদি যায় সে। এইতো কিছুক্ষণ আগেই ফিরলো হাসপাতাল থেকে ছেলেটা । ” মায়ের ডাক শুনে ঘরে যিনি ঢুকলেন আমি তাকে কখনোই ভাবতেই পারিনি যে উনি নিজেই আসবেন আমাদের বাড়িতে।” শঙ্কর ককার বিধবা ,দ্বিতীয় পক্ষের, স্ত্রী। যিনি গত একবছর ধরেই  ওনার স্বামী মারা যাবার পর থেকেই,ওনাদের বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে আমার যাতায়াত করবার সময়  আমাকে অদ্ভুত এক নির্বাক  চোখে দেখতেন । গত তিন চারদিন অবশ্য ওনাকে দেখিনি  ওনাদের রান্না ঘরের দরজায়  বা ওনাদের বারন্দায় বা উঠোনে দাড়াতে। অবাকই হয়েছিলাম। 

 “নমিতা কাকী” কিন্ত এর আগে কখনোই আসেননি আমাদের বাড়িতে । অন্তত আমি থাকাকালীনতো কোনোদিনও দেখিনি ওনাকে আমাদের বাড়িতে বা আমাদের আশেপাশের  কারুর বাড়িতেই আসতে। একরকম প্রায় জড়সড় হয়েই উনি আমার ঘরে ঢুকলেন বাইরে চটি রেখে। ওনার পড়নে  আটপৌরে সাদা শাড়ী আর সাদা ব্লাউজ। আমি বিছানা থেকে উঠে বসে ওনাকে বসতে বলেছিলাম। উনি আমার পড়াশুনোরটেবিলের পাশে রাখা কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন। টেবিলের ওপর স্তুপাকৃত ডাক্তারির বই গুলো দেখেছিলেন। আমি ততক্ষনে উঠে গায়ে একটা জামা পড়ে আমার খাটে বসি একদম ওনার মুখোমুখি। সেই প্রথম ওনাকেও ভালো ভাবে দেখি। বিশেষ তেমন কিছুতো সুন্দরীতো ছিলেন না উনি। যেমন হতো তখনকার দিনের সাধারণ এক সচ্ছল পরিবারের বিবাহিতা এবং বিধবা দুই ছেলের মা । তেমনই। সামান্য একটু বেটে, সামান্য কিছুটা মোটা ধরনের ( আতপ চালের ভাত খাবার জন্য হয়তো ?), ওনার গায়ের রংটা কিন্ত ছিলো ভালোই ফর্সা, টিকলো নাক, পুরু দুটো ঠোট, টোল পড়া গাল। বড় বড় বিষণ্ণ দুইচোখ, গোল ধরনের মুখ,  মসৃণ ত্বক, সিথি সাদা, হাত খালি, বয়েস আন্দাজে ৩৬ থেকে ৩৭  এর মধ্যে হবে। জর্দা, সুপারী ,খয়ের দেওয়া পান খুব খেতেন বলে দাতগুলোতে  জর্দার লাল লাল ছোপ। উনিও আমার সাথে কথা বলতে বোধকরি অস্বস্তি বোধ করছিলেন। কিছুক্ষন পরে উনি মাথা নিচু করেই  আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন ” ডাক্তার!  তোমাকে আমি  কিন্ত তুমি করেই বলছি, রাগ করবেনা নিশ্চয়! “

-“নিশ্চয়।  নিশ্চয়। আপনিতো শঙ্কর কাকার স্ত্রী। বয়সেও বড় আমার চেয়ে , চাইলে নাম ধরেও ডাকতে পারেন কিন্ত”

– ” ন  না এই প্রথমতো তোমার সাথে কথা বলছি তাই। আগে বলিনিতো কখনো ” ওনার চোখের মধ্যে কি যেনো একটা অদ্ভুত   সম্মোহনী ছিলো? 

-“আমার বড় ছেলেটাকে তুমি দেখেছ নিশ্চয় । 

” বাপন “

আমিও সম্মতি সূচক মাথা নেড়েই বলি- ” আপনার দুই ছেলেকেইতো দেখেছি।  চিনিও আমি। খেলার মাঠেতো ওরা প্রায়ই যায় তাই “

-” ছেলেটার আজকে পাঁচ দিন ধরে খুব জ্বর।  জ্বরটা নামছেই না আর। সেনগুপ্ত ডাক্তারকেও চেম্বারে দেখিয়েছিলাম। দুদিন আগেই। ওষুধ ও দিয়েছিল উনি ।  কিন্ত কমছে না যে কিছুতেই ” ক্রসিন দিলে ঘণ্টা তিনেক জ্বর কম থাকছে তারপর আবার সেই ১০৩ ১০৪ 

-” কমে যাবে নিশ্চয়! আরো দুদিন দেখুন না কেনো? ” আমি আশ্বাস দিয়েছিলাম ওনাকে 

-” নাহ। ডাক্তার। ছেলেটাও মাথা তুলছে না যে। খাচ্ছেও না ! বমিও করেছে।  আজকে দুই বার করেছে।  একবার যাবে দেখতে ? ঠাকুরপো তোমাকেই দেখাতে বললো যে। “

-“আমি?” অবাক হয়েই বলেছিলাম 

উনি আমার দিকে করুন ভাবেই  তাকিয়েছিলেন।

– ” হ্যা তুমি। তোমার যা ফি লাগে দেবো। ছেলেটার কিছু হলে আমি বাঁচবো না যে আর। নিজের 

স্বামীটাকে খেয়েছি জানোই তো প্রায় বছর হতে চলল”

-” ওই ভাবে বলছেন কেনো? আপনার কি দোষ ছিলএতে? শঙ্করকাকা নিজেইতো নিয়ম মানতেন না। ডায়াবেটিস এর রোগী ছিলেন। অনিয়ম করতেন খুব। ঠিক আছে সন্ধ্যার ৭ টার সময় চেম্বারে নিয়ে আসুন। আমি থাকবো। আপনার ছেলেকে নিশ্চয় দেখে দেবো”:

উনি আমার চোখে চোখ তুলে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলেছিলেন ” ছেলেটা যে মাথাই তুলতে পারছে নাগো ডাক্তার । দুর্বল খুবই । গায়েও বেশ জ্বর। তোমার চেম্বারে নিয়ে যাবো কি ভাবে ? যদি  দয়া করে বাড়িতে গিয়েই দেখে দাও আজকে!  যা ফি চাইবে তুমি, দেবো !!!”

-“ঠিক আছে।  আপনি এখন বাড়ি যান , ছেলের কাছে থাকুন । আমি কিছুক্ষণের মধ্যে যাচ্ছি।”

শংকরকাকার বাসায় সেটা ছিলো আমার দ্বিতীয়বার যাওয়া ডাক্তার হিসাবে। ছেলেটাকে ভালোভাবেই পরীক্ষা করে ছিলাম। নমিতাকাকী , ওনার ছোট জা,রঞ্জিত কাকার স্ত্রী সম্পা কাকী আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেশ জ্বর গায়ে ছেলেটার । সব কিছু ভালো ভাবে দেখে মনে হয়েছিল সাধারণ ভাইরাল ফিভার এটা নয়। হয় মাল্যারীয়া নয় ডেঙ্গু। তখন ডেঙ্গু কিন্তু ভালই হত সোদপুরে। আমি বলেছিলাম “দেখুন আমার কিন্তু মনে হচ্ছে হয় ম্যালেরিয়া নয়তো ডেঙ্গু। রক্ত পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভবই নয়। আপনারা হয় ওকে কাছাকাছি একটা নার্সিং হোমে ভর্তি করুন নয় বারকপুরের হাসপাতালে। ডেঙ্গু হলে কিন্তু রোজই রক্তপরীক্ষা করতে হবে। এরপর আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন বাড়ির সবার সাথে কথা বলে। ব্যারাকপুরের হাসপাতালে ভর্তি হলে আমি রোজই ওর খোজ  খবর রাখতে পারবো।

আমার কথা শুনে নমিতাকাকী প্রায় কেঁদে ফেললেন। রঞ্জিতকাকার স্ত্রী  শম্পা কাকী ওনাকে স্বান্তনা দিয়ে বললেন “কেঁদো না তো দিদি। তোমার ঠাকুরপোকে  না হয় আসতে দাও দোকান থেকে।”

নমিতাকাকী বললেন “ওকে হাসপতালে নিয়ে গেলে ভর্তি করবে তো?”

আমি বলেছিলাম ” নিশ্চয়ই করবে। আমার দেওয়া প্রেসক্রিপশনটা দেখাবেন। ভর্তি করতে লেখা থাকবে। কেবিনও আছে ওখানে। চাইলে আপনারা কেবিনেও ভর্তি করতে পারেন। আপনাদের কেউ ওর সাথে থাকতেও পারবেন । আর কালকে সকালে আমিও মেয়েদের ডিপার্টমেন্টের আউটডোরে থাকবো। দরকার পড়লে নাহয় ডেকে নেবেন আমাকে  “

-“ভর্তি কী করতেই হবে ডাক্তার? বাড়ীতে রেখে চিকিৎসাটা করতে পারবে না তুমি ?”

-“দেখুন যদি ডেঙ্গু হয় বা খারাপ ধরনের ম্যালেরিয়া যেটাকে আমরা বলি সিভিয়ার মাল্যারিয়া , সেগুলো যদি হয় তবে  কিন্ত বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা না করাটাই ভালো। কখন রোগী যে খারাপ হবে সেটা বলা যাবে না । নার্সিং হোম বা হাসপাতালে সব সময়ই  কোনো না কোনো ডাক্তার থাকবে। কিছু হলে তারা কেয়ারতো নিতে পারবে। ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট দিতে হতেও পারে, কাউন্ট খুব কমে গেলে শরীরের ভেতরে ব্লিডিং হতে পারে। দিতে যে হবেই বা রোগী যে খারাপ হয়েই যাবে এমনটা বলছিনা। তবে ২% চান্স থাকলেও কার যে হবে বলাতো যায় না। আর এখনও তো রক্ত পরীক্ষা করা হয় নি। তাই ডেঙ্গু না মল্যারিয়া, না  ভাইরাল জ্বর বুঝতে পারছি না। আপনারা সবাই মিলে নাহয় সিদ্ধান্ত নিন। যদি রাতেই ভর্তি করেন আমি লিখে দিচ্ছি । আপনারা কেউ গিয়ে চেম্বার থেকে নিয়ে আসবেন।

রঞ্জিতকাকার স্ত্রী শম্পা কাকী এর মধ্যে আমার জন্য চা আর বিস্কুট করে নিয়ে এসেছিলেন আমি বলেছিলাম

 “এগুলো আবার কেনো? “

-“না এর আগেরবার তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। এমন অবস্থা ছিলো তোমাকে ফিটাও দেয়নি আমরা। তুমি ওনার কাজেও আসনি। ”  নমিতাকাকী ভারী গলায় বলেছিলেন।”  আচ্ছা তেমন কিছু খারাপ নয় তো তাই না ডাক্তার”

-“আপনারা কোথাও ভর্তি করে দিন  সেটাই ভালো হবে আপনাদের জন্য”

“এইটুকু ছেলে মাকে ছাড়া হাসপাতালে থাকবে কি করে?”

-” দেখুন ওর চেয়েও কমবয়সের ছেলেমেয়েরা ভর্তি থাকে  পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে ,হাসপতালে,  তাদের মায়েদের সাথে জেনেরাল বেডে। আপনারা তো কেবিন নেবেন আর আপনিই  নাহয় কেবিনেই থেকে যাবেন ওর সাথে কয়েকদিন – সেটার ব্যবস্থা আমি করে দেবো হাসপতালের সুপারিতেন্ডেনটের সাথে কথা বলে বিনে পয়সায়”

 ব্যারাকপুরের হাসপাতালের ইমার্জেন্সির  অনডিউটি মেডিক্যাল অফিসারকে আমার প্যাড এ রেফারাল চিঠিতে ছেলেটাকে ভর্তির জন্য অনুরোধ লিখে , চা বিস্কিট শেষ করে আমি উঠে পড়েছিলাম। “নমিতাকাকী” দশ টাকার একটা নোট ফি হিসাবে দিতে আমিও  কথা না বলে বুকপকেটস্থ করেছিলাম টাকাটা।

উনি বলেছিলেন ” ঠাকুরপো ফিরুক তারপর সিধ্যান্ত নেবো। ভর্তি হলে তুমি দেখতে যাবে তো ওকে ?

মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে বলেছিলাম “যাবো মাঝে মাঝে ডিউটি থাকার সময়”

ওনারা পরদিন সকালেই  ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন আমি হাসপাতালে পৌঁছাবার আগেই । ইমারজেন্সি থেকে  সরাসরি পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে।

আমি গাইনী ওয়ার্ডে মহাপাত্রদার সাথে রাউন্ডে ছিলাম। রঞ্জিতকাকা ও ওনার স্ত্রী  শম্পা কাকী আমার খোঁজ করে গাইনীওয়ার্ডে এসেছিলেন। সব শুনে আমি বলেছিলাম “আপনারা  যান, বাইরে অপেক্ষা করুন আমি কাজগুলো শেষ করেই যাচ্ছি।”  বারোটা নাগাদ পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে গেছিলাম। একটা বেডে নমিতা কাকী ওনার ছেলেকে নিয়ে দুপা গুটিয়ে শুয়ে ছিলেন। আমাকে দেখেই উঠে বসলেন । ওনার চোখে একরাশ কৃতজ্ঞতা তখন। বললেন একজন বয়স্কা মহিলা ডাক্তার এসে দেখে গেছেন ওকে, সবরকম পরীক্ষার জন্য রক্ত ও টেনে নিয়ে গেছেন, ওষুধ লিখে দিয়ে গেছেন। স্টাফনার্সকে আমি  জিজ্ঞেস করতে বললেন  ছেলেটা  ডাক্তার রীতার আন্ডারে ভর্তি হয়েছে। তিনটে কেবিনই এখন ফাঁকা আছে। রীতাদির খোজ করে ওনার সম্মতি নিয়ে শঙ্করকাকার ছেলেকে সবচেয়ে ভালো সাজানো গোছানো ভিআইপি কেবিনেই ভর্তি করা হয়েছিল। বেশ বড়ই কেবিনটা। বাড়ির লোক থাকারও সব বন্দোবস্ত ছিলো। সব কাগজপত্র ঠিককরে রোগীকে কেবিনে শিফট করতে বেলা দুটো বেজে গেছিলো। ওদের সবারই কেবিনটা পছন্দ হয়েছিলো। রীতাদীও কেবিনে এসে আমার সামনেই আবার ছেলেটাকে দেখেও গেছিলেন। উনি পেডিয়াট্রিক মেডিসিনের এমডি ছিলেন। বলেছিলেন রক্তের রিপোর্ট বিকেলে আসুক তারপরে দেখবো সন্ধ্যার সময় রাউন্ডে। আর রোগীর মাকে সারাদিনরাতে থাকার লিখিত অনুমতি ও দিয়ে গেলেন বেডহেড টিকিটের গায়ে লিখে ও সই করে। আমার ডেলিভারি রুম থেকে কলবুক আসতে আমি চলে এসেছিলাম। Obstructed labour কেস যেটা আমি ভয় পাই। সিজার করতে হবে। গাইনীর স্পেশালিস্ট সিজার করতে OT আর রোগীকে রেডী করতে বলে কোয়ার্টারে চলে গেছিলেন। সিজার শেষ হতে প্রায় পৌনে পাঁচটা। তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে রিক্সা ধরে  ব্যারাকপুরের স্টেশন। সাতটায় আবার চেম্বারে যেতে হবে।  রোগী তখন হচ্ছে মোটামুটি। চেম্বারে রঞ্জিত কাকা রাত সাড়ে দশটায়  দোকান ফেরৎ এসে খবর দিলেন ছেলেটার ডেঙ্গুর রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। তবে প্লেটলেট এখনও এক লাখের ওপরেই আছে। রীতাম্যাম ওষুধ দিয়ে গেছেন আর স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন। আমি আমার ডায়াগনোসিস ঠিক হতে মনে মনে আত্মপ্রসাদ অনুভব করেছিলাম। 

শংকরকাকার ছেলে দশদিনের মতই ভর্তি  ছিলো হাসপাতালে। না তেমন কিছু বেশি মারাত্বক প্রবলেম হয়নি তার। রোজই কিন্তু রক্তের পরিক্ষাটা হতো। প্লেটলেট কাউন্ট করতো। যাবতীয় পরীক্ষা করে দিয়েছিলেন রিতাদি ।  রিতাদিও দুবেলা করে দেখে যেতেন রাউন্ডে এসে। একদিনই প্লেটলেট কাউন্ট নেমে ৫৩,০০০ হয়েছিল। প্লেটলেট দেবে কি দেবে না কিছুটা কনফিউশন ছিলো। দেওয়া হয় নি যদিও।  ব্লাড ব্যাংকে বলে রাখা ছিলো যাতে স্টকে রাখা থাকে। 

 ভর্তি থাকার  ছয়দিনের মাথায়, ছেলেটার জ্বর কমে গেছিলো ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট। নমিতাকাকীও সারা দিনরাত কেবিনেই ছিলেন এই দশদিন। বাড়ীতে যান নি। রণজিৎকাকা, ওনার জা  শম্পা কাকী আর ছোট ছেলে ভিজিটিং  সময়ে আসতেন। আমি পাঁচটার আগেই হাসপাতাল ছেড়ে স্টেশনে চলে আসতাম রিক্সা করে। আমিও ডিউটির মাঝে মধ্যে ফাঁক পেলে  একবার  অন্তত ছেলেটাকে দেখতে যেতাম। নমিতাকাকী প্রথম দুদিনেই আমার সাথে হঠাৎ করেই কেনযেনো ফ্রি হয়েগেছিলেন। ওনার চোখে কিন্তু আমার প্রতি অদ্ভুত একটা , অব্যক্ত কিছু একটা ছিলো । আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা ছাড়াও। অন্য কিছু একটা। উনি আমি কেবিনে গেলে আমাকে কেবিনের সোফাতে বসতে বলতেন । কিছুটা দূরে  আমার পাশে বসেই কিছুক্ষন গল্পঃ করতেও চাইতেন। অবশ্যই যদি না আমার আপত্তি না থাকে  বা কাজ না থাকে ,ওনার সাথে গল্পঃ করতে কিছুটা সময়। ওনার ছেলের রিপোর্ট দেখতাম। ওনার ছেলের সামনেই, ওনার ৩৬- ৩৭বছরের জীবনের গল্পঃ বলতেন । ওনার ছেলেও  আমাদের দিকে তাকিয়ে সেগুলো শুনতো। প্রথমে তো ওনার মা বাবার গল্পঃ, ওনার  ছেলেবেলার গল্পঃ দিয়েই শুরু  করেছিলেন।  কিন্তু আমাকে ওনার জীবনের গল্পঃগুলো শোনানোর কারণটাই বুঝতাম না। রোজই কিছুটা করেই শোনাতেন। কি যে লাভ হত এতে ওনার জানিনা। 

 সেই প্রথমবার জেনেছিলাম যে ওনার বাপের বাড়ি ছিলো শান্তিনিকেতনে। উনি শান্তিনিকেতনের ব্যবসায়ী এক ধনী পরিবারের মেয়ে ছিলেন বিয়ের আগে। তিন বোন, এক বড় দাদা আর এক ভাই ওনারা। বোনদের মধ্যে  উনি হলেন মেজো। ওনার দাদা ভাই  সবাই প্রতিষ্ঠিত। আগে ওনাদের যৌথ পরিবারই ছিল। এখন সবাই প্রায় আলাদা। শুধু ছোট বোনটা মা বাবার সাথে। দাদা এবং ভাই  দুজনেরই বড় ব্যাবসা । দুজনই গ্রাজুয়েট কলকাতার গোয়েনকা কলেজ থেকে কমার্স নিয়ে। একজনের পেট্রোল ডিজেলের ডিপোর ব্যাবসা। অন্যজনের শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে বড় সোনার রুপোর গহনার  দোকান  । দোকানটা ওনার বাবার ছিলো।ছোট বোনের বিয়ে হয়নি এখনও । আমারই বয়সী নাকি । এক দুই বছরের বড় হতেও পারে । তিনি পাস করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার , শিবপুরের থেকে । সেও নাকি প্রোমোটারদের ফ্ল্যাটের নক্সা করে দেন। উনি নিজেও শান্তিনিকেতনের বিশ্ব ভারতী থেকে ফরাসী ভাষায় গ্রাজুয়েট , এটা শুনে কিন্তু আমি বেশ অবাকই হয়েছিলাম। এর পরে ওনার কলেজ জীবনের কথা। এক ফরাসীছেলের প্রেমেও নাকি পড়েছিলেন কলেজ জীবনে।কিন্তু সেই প্রেম টেকেনি  বেশিদিন। ওনার প্রেমিক দিত্বিয় বছরেই ফ্রান্সে ফেরৎ চলে গেছিলো এবং সেখানে  গিয়ে আত্মহত্যা করে ওর বাবা দিদি আর মায়ের অ্যাকসিডেন্টে মৃত্যুতে মানষিক ডিপ্রেসনে গিয়ে। 

এরপরে উনি  শংকরকাকার সাথে ওনার বিবাহ এবং বিবাহিত জীবনের কথাও  কিছুকিছু বলেন। শংকর কাকার প্রথমা স্ত্রী নাকি মেনিনজাইটিস এ মারা গেছিলো। তাদের কোনো সন্তান ছিলো না অনেক চেষ্টার পরও। ওনার শ্বশুর বাড়ী খুবই ভালো। তুলনা হয় না এমন শ্বশুর বাড়ির। শঙ্করকাকাও ওনাকে খুবই ভালোবেসেছেন বিয়ের পর থেকেই আমৃত্যু।  ডায়াবেটিস থাকা সত্বেও উনি খেতে খুবই ভালো বসতেন। নিয়ম কানুনের খুব একটা পরোয়া করতেন না। খুব আমুদে লোকও ছিলেন নাকি উনি। বিয়ের চার বছরের মাথায় ওনার বড় ছেলে আর ছয় বছরে গিয়ে মেজো ছেলে হয়। শঙ্কর কাকার হঠাৎ করেই চলে যাওয়াটা উনি এখনো মন থেকে  একেবারেই মেনে নিতেই পারেন না। সুস্থ সবল লোকটা যে দুপুরের খাবার খেয়ে  বারান্দায় কাগজ পড়তে বসেছিলেন, সে কি ভাবে এতো সহজে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে পারে? ওনার ইসিজি,TMT ,echocardiography রিপোর্ট তো নরমাল ছিলো। কোনো দোষই ছিলো না।  সুধীর ডাক্তার করিয়েছিলেন  । পিয়ারীর নার্সিং হোম থেকে। ওখানে কার্ডিওলজিস্ট আসেন সপ্তাহে একদিন। সুধীর ডাক্তারের ডায়েবেটিস আর উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসায়  উনি কিন্তু খুবই ভালোই ছিলেন। এর পরেই  আমি চেম্বার খুলে বসতে,উনি আমার কাছে চিকিৎসা করাতেন ।  বাড়ির কাছে বলে আর পাড়ার ছেলে বলেই। রাতবিরেতে সুধীর ডাক্তারতো আর আসেন না ডাকলে সেটাও একটা কারণ ছিল।  আমার করে দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধও খেতেন্। খুব বিশ্বাস ছিলো আমার চিকিত্সায়। তবুও এমন কেনো হলো? আমি কি ঠিক মত চিকিৎসা করেছিলাম ওনাকে?  এটা  শুধু ওনার নয় ওনাদের বাড়ির সকলের কাছেই একটা বড় প্রশ্ন । যতই হোক সুধীর ডাক্তার বিলেত ফেরত এম.আর.সি.পি আর অনেক বছরের অভিজ্ঞও। আমিতো সবে পাস করে আসা এমবিবিএস। আমার কাছে গিয়ে উনি ভুলই করেছিলেন হয়তো। নমিতাদেবী বলেছিলেন এটা ঠিক যে সেদিন উনি আমাকে সত্যিই মনেমনে দোষারূপ করেছিলেন ওনার স্বামীকে বাঁচাতে না পারার জন্য। উনি এটাও ভেবেছিলেন যে আমি বারেবারেই  অমন ভাবে জোরে ওনার বুকে ঘুষি মারতেই  হার্ট অ্যাটাকে উনি মারা গেছিলেন। উনি যে আমার আসার আগেই আগেই মারা গেছিলেন সেটা অবশ্য অনেক পড়েই বুঝেছিলেন। উনি বলেছিলেন ওনার  নাকি ডাক্তারদের অবশ্য খুবই ভালো লাগে। ওনারও  ছোটবেলাতে খুব ইচ্ছে হত ডাক্তার হবার। বন্ধু বান্ধবীদের খেলাতেও উনি ডাক্তার সাজতেন। কিন্তু স্কুলে ফিজিক্স আর অঙ্কের ভয়ে উনি সাইন্স নিয়ে পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা দিতে পারেন নি। তাই ওনার ডাক্তার হওয়াও হয়নি। উনি চেয়েছিলেন ওনার দাদা বা ভাই কম করে ছোট বোনটা  অন্তত ডাক্তারীটা পড়ুক। ফ্যামিলি তে একজন ভালো ডাক্তারের খুব প্রয়োজন। ডাক্তারদের উনি খুবই শ্রদ্ধা করেন আর ভীষণ লাইকও করেন। ওনার স্বামী  যিনি হইবেক তিনিও ডাক্তার হোক সেটা ওনার মনের ভেতরের ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু ভগবানও  তো সেই ইচ্ছে রাখেন নি। LIC র  অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারের সাথে ওনার বিয়ে হয়েছিল ২৪ বছর বয়েসে। তবে  শংকরকাকাদের সংসারে যৌথ পরিবারে উনি সুখী ছিলেন শংকর কাকার সাথে। ওনার দেওর ,জা, ননদ ,শ্বশুর শ্বাশুড়ির তুলনা হয় না। শংকর কাকা ওনার থেকে ১৬-১৭ বছরের বড় হলেও উনি শংকর কাকার সাথে সুখীই ছিলেন বিবাহিত জীবনে। ওনাদের দাম্পত্য জীবন ও সুখের ছিলো।

দশদিন ওনার সাথে কেবিনে বসে গল্পঃ করতে করতে আমরা দুজনেই বোধহয় দুজনের কিছুটা কাছাকাছি এসেছিলাম বয়েসের বারো /তেরো বছরের পার্থক্য থাকা সত্বেও। সেটাও উনি অনুভব করেছিলেন মনে হয় নিজের মধ্যে। আমার মধ্যে কিন্ত প্রথমের দিকে তেমন একটা বিশেষ কোনো অনুভুতিই ছিলো না  এই ব্যাপারে। না হলে উনিই  বা আমাকেই ওনার গাইনী প্রবলেম বলবেন কেনো। হয়তো বা আমি হাসপতালে গাইনী ডাক্তার বলেই বলেছিলেন। সেদিন ওনার ছেলে ঘুমাচ্ছিল।আমি আর উনি সোফাতে বসে গল্পঃ করছিলাম। সেদিন বোধ করি আমার কলেজের স্টুডেন্ট লাইফের কথা বলছিলাম ওনাকে। এর মধ্যেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন -” ডাক্তার একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমাকে? অবশ্যি যদি  তুমি কিছু মনে না কর?”

-“কি বলুন না”

-“তোমাকে বলবো বলবো ভাবছিলাম জানো বেশ কিছুদিন ধরেই অথচ এটা এমনই একটা মেয়েলি প্রবলেম,সংকোচে বলতেও পারছি না । যদিও এটা জানি তুমিও এখানকার গায়নীর ডাক্তার। “

-“বলুন না ! আপনার নিজের কোনো পার্সোনাল প্রবলেম? না  আপনার পরিচিত কারুর? “

উনি কিছুক্ষণ  আমার সামনে ওনার মাথা দু চোখ কেবিনের মেঝের দিকে নিচু করে রেখেই মৃদু গলায় বলেন -“আমাদের ওখানেও গাইনির ডাক্তারও আর কেউ নেই যে তাকে আমি দেখাবো আর জিজ্ঞেস করবো” আর এখনতো তোমার শংকরকাকাও  বেঁচে নেই যে তাকেই বোলবো “

-“আমাকেও বলতেই পারেন। আমি তো ডাক্তার । যদি  সেরকম দরকার হয় এখানেই না হয় দেখিয়ে নেবেন আউটডোরে একটা টিকেট করে।  দুজন মহিলা গাইনীর স্পেশালিস্টও আছেন  এখানে। তবে তারা শুধু DGO পাশ করা , গাইনিতে এমডি ডিগ্রি  কিন্তু নেই ওনাদের। এছাড়া মহাপাত্রদাও আছেন। বিলেতের ডিগ্রীও আছে ওনার, MRCOG। এখানকার অনেক নার্সিং হোমেই  উনি প্রাইভেটে বসেন। ওনাকে প্রাইভেটে দেখাতে পারেন তবে ওনার ফিটা অনেকটাই বেশি। ৫০ টাকা ! আর USG মেশিন ও আছে এখানে । অনেক বড় বড় অপারেশন ও হয় এখানে ।

উনি কিছুক্ষন আরো মাথা নিচু করে প্রায় ফিস ফিস্ করে বলেন ” তোমার শংকর কাকার মৃত্যুর পর জানো আমার না খুবই সাদা স্রাব হচ্ছে রোজ। আগে কিন্তু  এটা একদমই ছিলো না। শুনেছি এই বয়েসে সাদা স্রাব হলে জরায়ুর ক্যান্সার হয়। আমার ভয় হচ্ছে ক্যান্সার হয় নি তো আমার ভেতরে ? “

আমি মৃদু হেসে বলেছিলাম ” এই ব্যাপার? না না আপনার ক্যান্সার হতে যাবে কেনো। অকারণেই ভয় পাচ্ছেন। অনেক কারণেই তো হয় এই বয়েসে সাদা স্রাব। কত মহিলাই যে আসেন আউটডোর এই সমস্যা নিয়ে। প্রথমেই চিকিৎসা করলে ঠিকও হয়ে যায়। তবে একটা কথা সাদা স্রাব হলে কিন্তু একদম পুষে রাখতে নেই সেটা। গাইনীর কাউকে দেখিয়ে, কেনো সাদা স্রাব হচ্ছে সেটা পরীক্ষা করে তবেই ওষুধ খাওয়াটা উচিত। কালকে আউটডোরে আসুন। আমি না হয় আমার কাছেই আপনার টিকেট করিয়ে রাখবো। আমার কালকে আউটডোর আছে। দেখেও দেবো। দরকার হলে না হয়  মহাপাত্রদাকে দিয়েও দেখিয়ে দেব। বায়োপসি করতে হলে সেটাও করিয়ে দেবো। মোদ্দা কথা হোল পুষে রাখবেন না রোগ” আর হাইজিন মেইনটেইন করেন নিশ্চয় ।

-” ধ্যাৎ!  কি যে বলোনা তুমি!  তোমাকে আমি বাপু এসব দেখাতে পারবো না। আমার বুঝি লজ্জা করবে না? ছি!  ছি! আর কত ছোট বয়েসেও তুমি! আচ্ছা বলোনা বায়োপসি  কি করতে হবেই আমাকে? যদি বায়োপসিতে ক্যানসার বের হয় , তাড়াতাড়ি মরেও যাবো তাই না? “

-” না পরীক্ষা করে কী ভাবে বলবো বলুনতো । সবার যে বায়োপসি করতে হয় সেটাও তো নয়। তবে দরকার পড়লেতো করে নেওয়াই ভালো তাইনা? এই বয়েসে কারোকারো যে জরায়ুর মুখে ক্যান্সারযে বের হয় না সেটাও বলবো না” কারো বা আবার trichomonal প্যারাসাইট দিয়ে ইনফেকশন হবার জন্যও হয়। কারো বা জরায়ুর মুখে অন্য কোনো কারণেও ঘা হতে পারে। কারো বা cervical erosion থাকে । যোনীর ভেতরের গায়েও ঘা হতে পারে”

-” আগে কিন্তু হতো না জানো। তোমার শংকর কাকার মৃতুর কয়েক মাস পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে । আগে মাসে এক বার হত, আজকাল প্রায়ই হচ্ছে । আমার খুব ভয় হয় জানো আমার বোধহয় ওখানে সত্যিই কোনো ক্যান্সার হচ্ছে।”

“ব্লিডিং হয়েছে আগে কখনো আপনার ?”

-“তিন চার বার! গত দুদিন ধরেও অল্প করে হচ্ছে। এমনিতে কিন্তু সাদা স্রাবই হয়। কিন্তু এই দুদিন দেখছি সেখানে অল্প অল্প রক্তও মেশানো থাকছে। আমি কি ক্যান্সারে মারা যাবো ডাক্তার?  জানো আমার ছেলে দুটোকে ডাক্তার করবার যে খুব ইচ্ছে আমার।”

-“একটা কথা ডাক্তার হিসাবেই জিজ্ঞেস করছি। আপনি বয়েসেও বড়। স্রধ্যেও। কিছু মনে করবেন না কিন্তু”

-“হুমম!  বলো না ! মনে করবো কেনো? খামোখা! আমি নিজেই তো বললাম তোমাকে আমার শরীরের সমস্যা “

-” আপনার মাসিক কি ঠিক মত হয় এখন? “

 কিছুক্ষণ মেঝের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থেকে -“হ্যা সেটা অবশ্য হয়।  তবে তিন কখনো বা পাঁচদিনেরও এদিক ওদিক হচ্ছে হিসাবে আজকাল। ” এই বয়েসে এটা হতেইতো পারে তাইনা ডাক্তার? “

-“পরিমাণ আর ফ্লো ঠিক আছে”

-“সেটা কিন্তু আছে এখনও। “

“পেটের ভেতরে আপনি কোনো লাম্প বা দলা পাকানো বা ভারী কিছু অনুভব করেন বা করেছেন এই দেড় বছরে?

-“কেনো বলতো? তুমিও কি কোনো টিউমার বা ক্যান্সার ভাবছ বুঝি ?

-“আরে না না। এমনই জিজ্ঞেস করছিলাম । ঠিক আছে আপনি কালকে  না হয় আউটডোরেই আসুন। দরকার হলে USG টা কালকেই করে দেখে নেওয়া যাবে। কেমন! “

আরো কিছক্ষন দুজনে চুপ করে থাকার পরে উনি বললেন “আর একটা কথা!  তোমাকে বলা ঠিক হবে কিনা সেটাও ভাবছি।”

আমিও চুপ করে অপেক্ষা করেছিলাম উনি নিজের থেকে কি বলেন সেটা শুনতে

উনি ঘুমিয়ে থাকা ছেলের দিকে কয়েকবার তাকিয়ে , নিজের গলা খুব খাদে নামিয়ে বললেন” আমার ওটাও দিনদিন কেবলই না বেড়েই যাচ্ছে ডাক্তার । খুবই ওঠে যায় এক এক দিন । নিজে থেকেই। সহ্য করতে পারি না তখন। “

আমি আশ্চর্য্য হয়েই বলি ” কোনটা? বুঝলাম নাতো “

উনিও যেনো লজ্জাতে মাটিতে মিশে যেতে যেতেই লাল হয়ে যাওয়া ফর্সা মুখে বলেন ”  ওইটা? তুমি না গাইনীর ডাক্তার? বোঝনা? এত ভেঙে আবার বলা যায় বুঝি ? কেমন গাইনীর ডাক্তার হয়েছেগো তুমি ? “

– ” কমাবার ওষুধ নেই?  দিতে পারো ? আমাকে ? বাড়িতে গিয়ে ?? রাতেও আমার ঘুম হয়না ঠিক মত।  সবাই ঘুমিয়ে পড়ে  অথচ আমিই একমাত্র ঘুমোতে পারিনা। বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করি। কষ্টও হয় খুব।” ” যা: কিসব যে বলছি আমি তোমাকে। আমারও  না  সত্যিই মাথাটা খারাপই হয়ে গেছে। কিছু মনে করো না কিন্ত তুমি বাবা”

-“আরে না না!: ভালোইতো করেছেন বলে। ডাক্তার আর উকিলের কাছে কিছুই লুকাতে নেই সেটা জানেন তো। সেটা হলে চিকিৎসাতে ভুল হতে পারে। কালকে বরঞ্চ দেখিয়েই নিন। কেমন?  আমি উঠবো এখন। আপনার ছেলের জ্বর মনে হচ্ছে কমে যাবে কাল পরশু নাগাদ । রক্তের রিপোর্ট ও স্বাভাবিক। রিতাদির সাথেও কথা হয়েছে। দু তিন দিন আর দেখে ডিসচার্জ লিখে দেবেন কেমন “

-“তুমি ছিলে বলেই আমার ছেলেকে আমার কোলে আবার ফিরে পেলাম ডাক্তার। না হলে যে কি হত। তোমার এই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না কোনোদিনও”

-“আমি আর কি এমন করেছি? যা করেছেন রিতাদি করেছেন” উনিইতো চিকিৎসা করেছেন আপনার ছেলের”

-“তবুও!  তুমি না থাকলে হয়তো ঘরেই মারা যেতো আমার ছেলে। সুধীর ডাক্তারতো এখানকার মত চিকিৎসা করতে পারত না। নার্সিং হোমে ভর্তি করে কতো টাকা যে খরচ হতো। আমারতো সেই আগের আর্থিক ক্ষমতাও আর নেই। তোমাদের শংকরকাকা বেশ কিছু টাকা লাইফ ইন্সুরেন্স করে গেছিলেন আর কমিশন পান  তার সুদের টাকায় চলে। মাঝেমধ্যে ঠাকুরপোও দেয় দোকানের রোজগার থেকে। তোমাকে কিন্ত আমরা সত্যিই ভুল বুঝেছিলাম ডাক্তার। আমাদের পারলে ক্ষমা করে দিয়ো” 

পরদিন গাইনী আউটডোর করছি, সপ্তাহের তিনদিন যেমন করতাম । ভালই ভিড় ছিলো সেখানে । বেশীরভাগই অ্যান্টিনতাল চেকআপ , কিছু ছিলো পোষ্ট অপারেশন চেক আপ । আমি আর গাইনীর জুনিওর মহিলা স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার একটা টেবিলে অবস্ট্রেক্টিক কেসগুলো দেখছিলাম অন্য ঘরে মহাপাত্রদা গাইনীর কেসগুলো দেখছিলেন । খোদাবক্স বলে একজন গ্রুপ ডি স্টাফ আমাদের  মেডিক্যাল অফিসারদের আউটডোরে সাহায্য করত। সাড়ে দশটা নাগাদ হবে, জড়সড় পায়ে  নমিতাকাকী এসে আমার খোজ করতে, খোদাবক্স আমার কাছে ওনাকে নিয়ে এসেছিল ” স্যার উনি অনেকক্ষণ ধরেই আপনার খোজ করছিলেন”।  আমি ওনাকে আমার সামনের  চেয়ারে বসিয়ে খোদাবক্সকে একটা আউটডোরের টিকেট করে আনতে দিয়ে স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসারকে ওনার প্রবলেমটা বলেছিলাম। খোদাবক্স টিকেট করে আনলে আমি টিকিটে ওনার হিস্টোরিটা  লিখে স্পেশালিস্ট  ডাক্তারকে দিলে উনি বলেছিলেন ” তোমার পাড়ার চেনাসোনা যখন আর মহাপাত্র যখন ও পি ডিতে আজকে আছেই ওনাকেই দেখিয়ে নাও। সেটাই ভালো হবে।” আমি উঠে গিয়ে মহাপাত্রদাকে বলতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন নমিতাকাকীকে দেখতে। আমি ওনার টিকেট আর ওনাকে মহাপাত্রদার কাছে রেখে এসে আবার আমার টেবিলে জমে থাকা রোগী ছাড়তে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ খোদাবক্স এসে বলেছিল মহাপাত্র স্যার আপনাকে একবার ডাকছেন ওনার ঘরে। আমি যেতেই মহাপাত্র আমাকে নিয়ে ওনার রোগী দেখার টেবিলে আমাকে নিয়ে গেলেন।” দেখবে এস ব্রাদার” নমিতাকাকী  এক্সামিনেশন টেবিলে শুইয়ে ছিলেন। আমাকে দেখেই উঠেপড়তে গেলে মহাপাত্রদা বললেন “আরে আরে!  শুয়ে পড়ুন, শুয়ে পড়ুন আবার”  তারপর examine করবার সবুজ উইন্ড স্ক্রীনটা ভালোভাবে ঘিরে দিয়ে ওনার পড়নের কাপড় সায়াটা টেনে ওনার হাটুর  অনেকে ওপরে তুলে দিয়ে আমাকেও দেখালেন টর্চ জ্বেলে। একটা টিস্যু ফর্সেপ দিয়ে  ওনার জরায়ুর মুখটা টেনে এনে দেখালেন টর্চ জ্বালিয়ে। “দেখো ব্রাদার। এনার  cervix এর মুখে ভর্তি  tiny (খুব ছোট ছোট  বিন্দুর মতো) আলসার। বেশ কিছুতে পুঁজও জমে  আছে। কেমন লাল হয়ে আছে cervix টা দেখেছ? Vaginal walls দুদিকেই পাতলা হয়ে আসছে। প্রায় একেবারেই স্মুথ । এতেও অনেক গুলো খুবই ছোটছোট আলসার। দেখতে পাচ্ছো তো। সেখানে থেকেও পুঁজ বের হচ্ছে। সাদা স্রাব হিসেবে। নমিতাকাকী তখন লজ্জায়  চোখেমুখে শাড়ির আঁচল ঢাকা দিয়ে ওনার  ঘাড় মাথা বাঁদিকে রেখে লিথটোমি অবস্থায় ওনার ভীষণ ফর্সা  সুগঠিত দু জঙ্ঘা,  দু হাঁটু দু পা,  যথেষ্ট ভাবে স্প্রেড করে চিৎ হয়ে শুয়ে টেবিলে। ওনার vaginar মুখ দিয়ে সাদা স্রাব গড়িয়ে এসেছে ওনার বস্তিদেশে( পেরিনিয়াম) । মহাপাত্রদা ওনাকে বললেন ” মা, আপনার জরায়ু আর vaginar গা থেকে পরীক্ষার জন্য একটু মাংস চেছে নেবো। সামান্য একটু ব্যাথা লাগবে  বা হয়তো। সহ্য করে নেবেন।” এরপর উনি cervix আর vaginal লাতেরাল ফ্রণিক্স ওয়াল থেকে গ্লাসস্লাইডে smear নিলেন। পুঁজও নিলেন  । তারপর আমাকে বললেন প্যাথলজির ল্যাবএ  সেগুলো দিয়ে আসতে। cervical ও  vaginal wall cytology আর মাইক্রোবায়োলজিকাল  ফাংগাল পরীক্ষা করার জন্য। আমরা দুজনে বেরিয়ে আসবার সামান্য একটু পরেই নমিতাকাকী নিজের ড্রেস ঠিক করে আমাদের সামনে মাথা নীচু করে এসে বসলেন টুলে। আমি মহাপাত্রদাকে ওনার আলসারগুলোর কারণ জিজ্ঞেস করতে উনি গম্ভীর ভাবে বললেন ” পরেই বোলব না হয় তোমাকে ব্রাদার ,উনি কিছু মনে করতেই পারেন” তারপর নমিতাকাকীকে বললেন ” চিন্তা করবেন না মা আপনি । এখনও তেমন কিছু হয়নি বলেই মনে হয় আমার। কতদিন ধরে ব্যাবহার করছেন এইসব ? তবে ওইসব জিনিসগুলো কিন্ত বেশি ব্যবহার না করলেই ভালো এই বয়েসে। এগুলো থেকেই কিন্ত  নানারকম সেক্সুয়ালি transmitted diseases ( STD) ইনফেকশন হয়ে সেপসিস হয়ে জরায়ুর ভেতরে  পেটের ভেতরে চলে গেলে জীবন নিয়েও মুস্কিল হয়ে যেতে পারে আপনার । জরায়ুর থেকে টিউবে,  ওভারিতে টিবি ও  হতে পারে। আপনার জরায়ুর মুখে এখনই কিন্তু অনেক ছোট ছোট ঘা হয়ে আছে। পুঁজও জমে আছে সেখান। আপনার যোনীর দেওয়ালে ভেতরেও অনেক ছোটছোট ঘা হয়ে আছে। তাতেও ইনফেকশন আছে। পুঁজ জমা হয়ে আছে। আপনাকে ওষুধ লিখে দিয়েছি। ওষুধগুলো সব কিনে নেবেন । খাবার ওষুধ আর যোনীর ভেতরে লাগাবার ওষুধও দেওয়া আছে । আঙুলে নিয়ে যতোটা সম্ভব ভেতরে লাগাতে হবে কেমন । পারলে জরায়ুর মুখ পর্যন্ত গিয়ে। সারাদিনে তিনবার।  এর পরে, রিপোর্ট আসলে পরে আসল চিকিত্সা শুরু করা যাবে। কেমন ।এর মধ্যে দরকার হলে ওনাকেও দেখিয়ে নেবেন। আপনাদের পাড়াতেইতো উনি প্র্যাক্টিস করেন। 

আমি ওনার cervical smear এর  কাচের সলাইডস  গুলো  আর পুঁজে ভেজানো sterile তুলো দেওয়া stick টা হাসপাতালেরই প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট গিয়ে দিয়ে এসে দেখেছিলাম ।  নমিতাকাকী ততক্ষনে চলে গেছেন ও পি ডি ছেড়ে, নিজের ছেলের কাছে কেবিনে। আমি মহাপাত্রদাকে  নামিতা দেবীর cervix আর vaginal wall এ  এইধরনের মাল্টিপল ছোট ছোট আলসারের কারণ জিজ্ঞেস করতে এবং সেখানে cervical cancer এর পসিবিলিটি আছে কিনা জিজ্ঞেস  করতে উনি বললেন -“আরে ভাই, ভদ্র মহিলা ব্যাটারি চালিত ভাইব্রেটিং সিলিকন রাবেরর কোনো পেনিস ডিভাইস ব্যবহার করেন  অর্গাজম পেতে মাঝেমধ্যেই আর ভেতরে দিয়েই মোটামুটি ভালো রকমের স্পীডেই সেটা করেন ।” এতেই ওনার বারেবারেই ছোট ছোট cervical ইরোশন হয়েছিল আর হয়ও যখন ব্যাবহার করেন সেটা। বয়েসে তো হচ্ছে এখন । আর  মাঝেমধ্যে আলসার গুলোতে ব্যাক্টেরিয়া  বা ফাংগাল ইনফেকশন হলেই ওনার সাদাস্রাব  বা স্রাবের সাথে ব্লিডিংও হয়। নিজের চোখেইতো দেখলে গ্রানুলেশন টিস্যুও আছে ওনার ডিপ vaginal wall এ দুই একটা । Vaginal wallsvটাও ক্রমশই পাতলা হয়ে আর  মসৃণ হয়ে আসছে। ক্লিটোরিসটাতে ইনফেকসনজনিত আলসার আছে। ইংল্যান্ডে  থাকতে এইরকম আকছার দেখতাম আমি অবিবাহিত,ডিভোর্সি বা উইডো মহিলাদের মধ্যে। এমন কি সফিস্টিকেটেড ঘরের কনজারভেটিভ মহিলাদের মধ্যেও খুবই বেশি  পাওয়া যেতো এই কারণে cervical ইরসন বা chronic cervicitis। এখন cervical smear এর রিপোর্ট দেখ কি আসে। যদি dysplasias আসে তবে CIN হিসাবেই চিকিৎসা করতে হবে। CIN  এর Bethesda classification টা না হয় বই খুলে পড়ে নিও। সেইরকম দরকার হলে ওনার ইউটেরাস cervix বাদ দিতেও হতে পারে। যদি metaplasia বের হয় তবে antibiotics দিয়ে  ( মাইক্রোবিয়াল সেনসিটিভিটির ওপরে ভিত্তি করে ) clindamycin ,metronidazole  ক্লোট্রিমাজল আর স্টেরয়েড মলম দিয়ে চিকিৎসা। উনি বিধবা। ওনার হাসব্যান্ড বেঁচে থাকলে vaginal douche নিতেই লিখে দিতামযাকগে রিপোর্টতো আসুক আগে । রিপোর্টের ওপরে নির্ভর করেই চিকিৎসা করতে হবে ওনাকে। একটা salpingography আর USG করে রাখাও ভালো। ইনফেকশন কমলে না হয় এখান থেকেই করে নিতে বলো। টিকেট লিখে দিয়েছি। 

এরপরের দুদিন আমি আর ওনার ছেলের কেবিনে যাই নি। রবিবার দিন ইমার্জেন্সিতে আমার নাইট ডিউটি ছিলো। অনেক পেশেন্ট একের পর এক এসেছিলো । চেয়ারে বসতে না বসতেই। যখন একটু ফ্রী  হয়েছিলাম  তখন রাত প্রায় ১ টা বাজে। এতো রাতে ওনার ছেলের কেবিনে যাবার মানে হয়না। সোমবার আমার অফ ডে ছিলো। হাসপাতালে যাবার মানেই হয় না। পরদিন সময় করে নিয়ে প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ওনার রিপোর্টটা কালেক্ট করেছিলাম। Vaginal আর cervical Pus এর কালচার রিপোর্ট staphylococcus with very high colony count এবং অনেক গুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসটেন্স ব্যাক্টেরিয়া বেরিয়েছিল ফাংগাল stain এ ক্যান্দিদা ইস্ট ছিলো। Cervical Cytology Smear এর রিপোর্টে infected and highly dirty smear ,  squamous basal cells মেটাপ্লাসিয়া cervical গ্ল্যান্ডের মেটাপ্লাসিয়া উইথ trichomonas infections , yeast cells candida , multiple cocci ,plenty neutrophils এবং RBC chilo । রিপোর্ট সাথে নিয়েই ওনার ছেলের কেবিনে গেছিলাম। উনি সোফাতে বসে কোনো একটা বই পড়ছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে দাড়ালেন ছেলের বেডের সামনে । ওনার ছেলে শুইয়েই ছিলো। ওনার ছেলের গায়ে জ্বর আর নেই। টেম্পারেচার চার্ট এ দেখলাম । রবিবার থেকেই base লাইনে  রয়েছে । গত রবিবার থেকেই নরমাল হয়ে গেছে ওর টেম্পারেচার জানালেন। উনি বললেন রিতাদি আজকে রাউন্ডে এসে বলেগেছেন কালকের দিনটা দেখে নিয়ে, পরশু ডিসচার্জ লিখে দেবেন।

 আমি ওনাকে ওনার রিপোর্ট ওনার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলাম যাবার আগে কিন্তু মহাপাত্রদাকে  রিপোর্টটা একবার দেখিয়ে যাবেন। যদি ওষুধ চেঞ্জ করেন।

উনি রিপোর্ট হাতে নিয়ে, চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন ” রিপোর্টে খারাপ কিছু এসেছে বুঝি ? ক্যানসার?” আমি বলেছিলাম  “না তেমন কিছু খারাপ এখনো নয়।” কালকে নাহয়  মহাপাত্রদার মুখেই জেনে নেবেন কি এসেছে। উনিও মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ছিলেন” আচ্ছা”  । আমি বলেছিলাম ” ওষুধ খাচ্ছেনতো আর ওখানকার ভেতরে লাগানোর মলমটা লাগাবেন কিন্ত ঠিক করে। ওসব জিনিস বেশি ব্যবহার করা ভালো নয়।”

“বাড়ীতে গিয়েই খাবো ভেবেছি। ” উনি লাজুক চোখেই তাকিয়ে বলেছিলেন আমাকে। উনিও বুঝে গেছিলেন আমি জানি পুরোটাই কেনো ওনার সাদা স্রাব আর ব্লিডিং হয় মাঝে মধ্যেই। 

-“আচ্ছা। আমি না হয় আসি তাহলে আজকে “

-” বসবে না ? আমি কিন্ত দুদিন কারুর সাথে কথা না বলে হাফিয়ে উঠেছি এখন । রবিবারতো তোমার নাইট ডিউটি ছিলো শুনেছি। সোমবার বুঝি অফ ডে হয় নাইট ডিউটি করলে ?”

-” হ্যা  তাই। বাড়ি থেকে আপনার  আসেননি কেউ রবি আর সোম বার?”

-“হ্যা আসেতো।  রোজই । ঠাকুরপো আর আমার ছোটজা শম্পা প্রতিদিনই আসে । রবিবার আমার ছোট ছেলেও  শ্বশুর মশাই এসেছিল। ” বস না তুমি । কাজ না থাকলে এখন। কাজ থাকলে অবশ্য বসতে বলবো না”

ওয়ার্ডে বেশ কিছু কাজ পরে আছে। তবুও বসলাম। উনিও ওনার ছেলের বিছানায় পা গুটিয়ে বসলেন। অনেকক্ষণ চুপ করেই কেটে গেলো। উনি নিরবতা ভেঙে বললেন ” আমাকে  তোমার নিশ্চয় খুব খারাপ এক মহিলা মনে হচ্ছে তাই না?”

 

আমি উত্তর দিলাম “সেটা কেনো? “এটা তো সম্পূর্ন পার্সোনাল ব্যাপার। যার যার যৌণ জীবন তার নিজের পছন্দের ওপরেই নির্ভর করে।” তবে এইসব ডিভাইস বোধ করি বেশী ব্যবহার না করাই ভালো। অনেক খারাপ কিছুই হতে পারে পরে এগুলো থেকেই।

” জানতাম না। আমার স্বামী বেঁচে থাকতে তেমন কিছু দরকারও পড়তো না। ও মারা যাবার পর থেকেই শুরু। কিছুতেই যে একএক সময় নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনা । এই বয়েসে হঠাৎ করেই বিধবা জীবন যে কি কষ্টের, তোমরা পুরুষ মানুষ ,সেটা বুঝবে না আর তুমি sex life বলছ? আছে নাকি সেটা  আমার ? থাকে না। তোমার শংকর কাকার চলে যাবার পরে? কি মনে হয় তোমার?  আমিও তো রক্ত মাংসের তৈরী একজন মেয়ে তাই না ? ” আমারও তো ক্ষিদে, ইচ্ছে, অনিচ্ছে সব কিছু আছে তাইনা??

-“এসব নিয়ে না হয় পরে কথা বলবেন । আপনার ছেলের সামনে আর এগুলো ডিসকাস নাই বা করলেন। কি ভাববে ও ? তবে যত কম ব্যবহার করবেন ততই  কিন্তু ভালো। মহাপাত্রদা বলেছেন নিশ্চয় আপনাকে।”

উনি নিজের ঠোট হঠাৎ জোরে কামড়ে ধরে আমার চোখে চোখ রেখে বলেন “হ্যা বলেছেন! আমার সত্যিই কিন্তু ধারণা ছিলো না। আমার নিজের বৌদি আর বড়দিও বলেছিল ইউজ করতে ।বলেছিলো তেমন নাকি কোনো সাইড এফেক্ট নেই পরিষ্কার  করে রাখলে ব্যবহারের পরে। “

নিজেদের পাড়াতেই একেবারেই আনকোরা ও নতুন পাশ করা কোনো এক অ্যালোপ্যাথি এম.বি.বি.এস , ডি টি এম, ডাক্তারের পক্ষে চেম্বার  করে প্র্যাক্টিস করা আর সেই প্র্যাক্টিসটা জমানো যে কি কঠিন ব্যাপার, সেটা আমিও কিন্তু আস্তেআস্তে হাড়েহাড়েই টের পাচ্ছিলাম। সরকারী চাকরীতে জইন করবার কারণে, সকালে আমার চেম্বারতো বন্ধই রাখতেই হত । সন্ধ্যার ৭টার একটু পরেই চেম্বারটা খুলতাম  হাসপাতাল থেকেই ফিরে, বিকেল ৫টার পরে বাড়ি দিয়েও যেনো সপ্তাহে দুইদিন সন্ধ্যার আর দুদিন নাইটডিউটি করাতে হবে। আমি লিখিতভাবেই আমার অসুবিধে লিখে আপত্তি জানিয়েছিলাম বলে ওনারা ক্ষুব্ধ হয়ে এস ডি এম ও কে দিয়ে হেলথ ডিপার্টমেন্ট এর ডিইরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসকে চিঠি লিখেছিল কেনো আমি ওইভাবে ডিউটি করবো না। আমারও ভালো লাগতো না ওনাদের সাথে এই নিয়ে  কনফর্টেশনে, তর্ক করতে যেতে । রাতের চেম্বারে যে  রোগী রোজই হত, সেটাও নয়। একা বসেবসে তাই তখন  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. ডিতে ভর্তির জন্য জইন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য এম. সি. কিউ সলভ করতে শুরু করেছিলাম। কলেজস্ট্রিট থেকে বেশ কয়েকটা এম. সি. কিউ বই সলভ করতে কিনে এনেছিলাম। চেম্বারে ফাঁকা থাকলেই বসেবসেই সলভ করতাম। পাড়াতে আমার তো  বন্ধুও তেমন কেউ ছিলো না ছোটবেলা থেকেই। এটা বুঝেছিলাম যে এমডি না হলে প্রাকটিসের বাজারে আমি টিকতে পারবো না বেশীদিন। তাই এমডি করাটা আমার জন্যও খুবজরুরী। আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ডিতে চান্স পাওয়া আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া তখন একই ছিলো। আমার কাছে তখন পাড়ার কিছু রোগীরা আসতো যেহেতু আমার ফি সবচেয়েই কম ছিল আর রাতের বেলা ইমারজেন্সির কলে রোগীর বাড়ি যেতাম নির্দ্বিধায়। বেশীরভাগই ব্লাড প্রেসারটা দেখানোর জন্যে  বয়স্ক পাড়ার ভেতরের লোকজনই আসতেন চেম্বারে। অন্যরোগগুলো যেমন  জ্বর জ্বালা , সুগার, নিউমোনিয়া ,পেটখারাপতো  সবার বাড়িতে আর রোজরোজ হতো না যে আসবে। তাই চেম্বারে ফাঁকা বসে থাকলে এম সি কিউ গুলো সলভ করাটাই আমার সময় কাটাবার  একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছিলো আমার। এছাড়া চেম্বারের জন্য আর ইলেক্ট্রিসিটি ভাড়াও গুনতে হতো প্রতি মাসেই আমাকে। এম সি কিউ সলভ করতে করতে সিগারেটের নেশাও বাড়তে শুরু করেছিল। সিগারেটের দোকানটা উল্টোদিকের রাস্তায় ছিলো। উইলস ফ্লাকে আমার ব্র্যান্ড।১০ পয়সা দাম একটার তখন ।

 

পাড়ার ভেতরে লিডার গোছের  “স্বপন বলে”একটা লোক  ছিলো। মাঝারি বয়েসের।  ৪০ থেকে ৪৫ হবে বয়েস। পাড়াতে তখন খুব মাতব্বরি করত। সেই সময়ের কংগ্রেস পার্টির এক রকম গুন্ডাই ছিলো, বলাই ভালো। কোনো ভোটের আগের থেকে পাড়াতে তাদের অ্যাকটিভিটিও বেড়ে যেতো তার। বেশ সুন্দরী, উচ্চমধ্যবিত্তের বাড়ির এক মহিলাকে বিয়ে করেছিল সে জোর করেই  তুলে এনে নাকি। স্বপনকে সবাই এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করতো ছোটবেলা থেকেই দেখতাম। গলায় তার রুমাল বা মাফলার জড়ানো থাকত সবসময়। স্বপনের বেশ কিছু সাঙ্গোপাঙ্গোও ছিলো।প্রায় সব পাড়াতেই থাকে এইরকম কয়েকজন । আমাদের পাড়াতেও ছিলো। কংগ্রেসের MLA এর হয়ে কাজ করতো তাদের নির্দেশ অনুসারে । ঘটে এদের তেমন বিদ্যেও ছিলোনা। আমি কথা বলতাম না এদের সাথে । ছোটবেলা থেকেই আমার বন্ধু, পাড়াতে দু একজন ছাড়া কেউ ছিলো না। আমিই মিশতাম না বেশী কারুর সাথে । ওপর ওপর মুখচেনা এই আরকি। সেদিন চেম্বারে বসে ছিলাম হঠাৎ করেই স্বপনসহ কয়েকজন তার চেলাচামুণ্ডা বছর  চারেকের একটা ছেলেকে নিয়ে হুড়মুড়িয়ে আমার চেম্বারে ঢুকেছিল। ছেলেটার তখন শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। শরীরেও নীলচে একটা ভাব এসে গেছিলো আঙুল গুলোতে । সাইনোসিস শুরু হয়ে গেছিলো। স্বপন প্রায় কেঁদে ফেলে আরকি।  উত্তেজিত ভাবে বলেছিলো “ডাক্তার দেখো ছেলেটা কিন্তু  আমার আধ ঘণ্টা আগেও সুস্থ ছিলো। হঠাৎ করে কি হলো যে নিশ্বাস নিতেই পারছে না। দেখো কেমন আঙ্গুলগুলো নীল হয়ে যাচ্ছে? তুমি ওকে বাঁচাও ডাক্তার। এই স্বপন কথা দিচ্ছে তোমার দাস হয়ে থাকবে” ছেলেটার সত্যিই নিশ্বাস  নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। মুখ দিয়ে জোর করে সে নিশ্বাস নিচ্ছিল। আমার কেমন যেনো মনে হয়েছিলো কোনো ফরেন বডির কেস নয়তো? শ্বাসনলি বা খাবারনালীতে  গিয়ে  হয়তো বা আটকে গেছে কিছু । খুবই কমন এই বাচ্চা বয়েসে। চেষ্টা করে দেখবো না হাসপাতালে রেফার করবো? এখনকার হাসপাতালে নাক কান গলার কেউই নেই। পাঠাতে হলে  হয় ব্যারাকপুরের হাসপাতাল নয় আর জি কর  পথে যেতে যেতেই যদি কিছু ঘটে যায়? আমি স্বপনকে বাচ্চাছেলেটাকে দুপা উচুকরে ধরে মাথাটা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিতে বলেছিলাম। স্বপন সেটা করলে পরে বাচ্চাটার পিঠে দুম দুম করে কিল মারতে শুরু করেছিলাম। বেশ কয়েকটা কিল মরবার পরে বাচ্চাটার মুখ থেকে একটা বড় কুলের বীচি ছিটকে মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। বাচ্চাটাও শ্বাস নিয়ে এতক্ষনে কেঁদে উঠেছিল।  স্বপন আর তার চেলারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। স্বপন বলেছিলো “ডাক্তার তুমি আমার ছেলের প্রাণ বাঁচিয়েছ। সুধীর ডাক্তার জানোত আসলোই না।  হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললো। এতো দেমাক তার । হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে পথে যদি কিছু হয়ে যেতো? নেহাত পার্টির লোক। তাই কিছু বলতে পারিনা। না হলে চিনিয়ে দিতাম আজকেই স্বপন কে! তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে  আর ছোট করবো না ডাক্তার। তুমি আজকে ছিলে বলেই আমার ছেলেটা প্রাণে বেচেঁছে। তোমার কোনো কাজে আমাদের লাগলে বোলো আমাকে কেমন। শংকরদার মৃত্যুতে তোমার পসারটা খারাপ হয়ে গেছিলো। তোমার নামে বদনাম ছড়িয়েছিল। সবই খবর রাখি ডাক্তার। ছোট বেলা থেকে তোমাকে দেখে এসেছি আমরা।”  স্বপনের বাচ্চাকে বাঁচানোর খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল পাড়াতে পরদিন

 

এর পর থেকে চেম্বারে রোজই একটু একটু করে ভীড় হতে শুরু হয়েছিল। আর সেটা সুধীর ডাক্তার আর সেনগুপ্ত ডাক্তারএর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল।

 

                          দ্বিতীয় অধ্যায় 

 

শঙ্করকাকার বিধবা দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী নমিতাকাকীর সাথে একটা মানসিক ও শারীরিক অবৈধ সম্পর্কে আমি যে ক্রমশই জড়িয়ে পড়তে চলেছিলাম সেটা আমিও বোধহয় টেরপেতে শুরু করেছিলাম, ওনার প্রয়াত স্বামীর প্রথম বার্ষিকীর পরলৌকিক কাজে ওনাদের বাড়িতে যাবার পর থেকেই। সত্যি বলতে আমার নিজেরতো আগে কোনো প্রেম বা বান্ধবীই ছিলো না কখনও। ছেলেবেলা  বা কলেজে বা পাড়ায় বা ব্যারাকপুরের হাসপাতালেও হয়নি কেউই , এই ২৪ বছর বয়েসের মধ্যে। অবশ্য এইসব নিয়ে নিজের জন্য এতোদিন কোনোরকমের মাথাও ঘামাযনি। তার ওপরে ,ব্যারাকপুরের হাসপাতালের গাইনী ডিপার্টমেন্টের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কাজ করবার জন্যি মহিলাদের শরীর , তাদের জননঅঙ্গ গুলো বা তাদের সৌন্দর্য বা  তাদের মনের প্রতিও আমার তেমন আর ইন্টারেস্ট বা চাহিদা বা জানবার  ইচ্ছেও ছিলো না। তাদের সবইতো আমার জানাই ছিলো। রোজই তো দেখতে হতো আমাকে হয় ও পি ডি তে নয় লেবাররুমে। মেয়েরা আমার কাছে ছিলো যেনো আমার অনেকবারই পড়ে ফেলা একটা বই। হাসপতালের গাইনীওয়ার্ডে, ডেলিভারি রুমে, প্রায় পাঁচ মাস ধরে প্রতি সপ্তাহেই দুদিন ডিউটি করতে গিয়ে বা সিজার বা অন্যসব গাইনী অপারেশন প্রতি সপ্তাহে করতেকরতেই একজন শক্তসমর্থ্য যুবক বা পুরুষ হিসাবে আমার ভেতরের সেক্সের যাবতীয় ইচ্ছেগুলোরই অকালমৃত্যু ঘটছিলো। কোনোরকম বিন্দুমাত্র উত্তেজনাও অনুভব করতাম না কোনও নারীশরীরের প্রতিই, সে যতোই না সেক্সী হোক বা সুন্দরী হোক না কেনো। এটা কিন্তু আমি নিজেনিজেই অনুভব করতে শুরু করেছিলাম । কত সহজে যে  গাইনীর ও. পি. ডি বা লেবাররুমে মহিলাদের ইন্টারনালপরিক্ষা করতে শিখে গেছিলাম দুই আঙুল ঢুকিয়ে। যুবতী বা মাঝ বয়সী মহিলারাই বরঞ্চ  খুব লজ্জা পেতেন ইন্টারনাল পরিক্ষা করাতে গিয়ে আমাকে দিয়ে। লেবাররুমে অবশ্য মায়েদের cervical OS কতটা dilated হোল সেটা দেখার জন্য ঘন্টায় ঘন্টায় ভেতরে আঙ্গুল দিয়ে পরিক্ষা করতে হত। বাড়ীতেও মা আমার জন্য পাত্রী দেখার কথা বা বিয়ের কথা বললে তেমন একটা পাত্তাও দিতাম না। এটা বোধহয় সমস্ত গাইনীর পুরুষ ডাক্তারদের মধ্যেই হয় ।  বুঝতাম এটা আমার ভবিষ্যত বিবাহিত জীবনে প্রভাব ফেলতেই পারে। আমার যে কিছুই ছিলো না করবার। চাকরিটা  ছাড়বো কিনা সেটাও ভেবেছিলাম। এই নমিতাকাকীই কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন একদিন আমার সেক্স লাইফ। কিন্ত নমিতাকাকীতো ছিলেন অতিসাধারণই  বিশ্বভারতীর থেকে গ্রাজুয়েট হওয়া একজন বিধবা নারী,  তাও আবার দুই নাবালক ছেলের মা , এক  যৌথ সংসারের বড় গৃহবধূ , যিনি নাকি তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন  হঠাৎ করেই ওনার মাত্র ৩৬-৩৭ বছর বয়েসেই। ওনার জীবনেও তাই হঠাৎ করেই পুরুষের জায়গাটায় বিশাল এক শুন্যতা নেমে এসেছিল, যার জন্য উনি কিন্তু সামান্যতম প্রস্তুতই ছিলেন না। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও তো উনিই  রান্নাঘরের মেঝতে আসন বা পীরি পেতে ওনার স্বামীকে দুপুরের লাঞ্চ পরিবেশন করেছিলেন।  খেতে খেতে টুকটাক ওনাদের সাংসারিক কথা বা অন্য কোনো কথা হয়ত বলেছিলেন। উনি  কল্পনাতেও ভাবেনওনি  যে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে লোকটা চলে যাবে চিরকালের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। ওনার  কোনও অস্তিত্বই আর থাকবে না ওনার জীবনের সাথে। কিন্তু বৈধব্য এর সাথেসাথে একজন বিবাহিতা সধবা স্ত্রী হিসাবে উনি যেসব কিছুতে অভ্যস্ত  ছিলেন সেগুলো চলে যাবে কি ভাবে? ওনার ভেতরে একজন বিবাহিতা ৩৬ -৩৮বছর বয়সী মহিলার স্বাভাবিক ইচ্ছেগুলো তো থাকবেই। তারওপরে বেশিই থাকবে, বিধবা বলে,  কোনো পুরুষের সংসর্গ বা ভালবাসা বা সেক্স, স্বাভাবিক ভাবে অর্গ্যাজম পেতেননা বলেই ,ওনার স্বামীর মৃত্যুর পরে। তাই হয়তো আমার সানিধ্য ওনার মধ্যে আড়াই বা তিন মাসে অনেক  অনেক রাসায়নিক মানষিক পরিবর্তনও ঘটিয়েছিল। আসলে আমার প্রতি নমিতাকাকীর নীরব একটা  অদ্ভূত প্রশ্রয়ও ছিলো ওনার দুই চোখের নীরব ভাষায় ,ওনার কথাবার্তার ধরনে, ওনার ব্যবহারে। দেখতে আমাকে তেমন একটা ভালো না হলেও আমি তো তখন ২৫ বছরের তাজা যুবক ডাক্তার ছিলাম । তাও কিনা আবার মেয়েদের গাইনীর ডাক্তার। আর ডাক্তারদের প্রতিও ওনার ভালোই দুর্বলতা ছিলো ওনার একেবারই বাচ্চা বয়েসে থেকে। ওনার নিজেরও তো ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হবার । হতে পারেন নি। ওনার স্বামী ডাক্তার হবে সেটাও ওনার মনের গোপনের ইচ্ছেটা অপূর্ণই রয়ে গেছিলো। ওনার  মানসিক ও শারীরিক চাহিদাও ছিলো। বরঞ্চ সেটা সকলের চেয়ে বেশিই ছিলো। সেটা উনিতো আমাকে স্বীকারও করেছিলেন বার তিনেকই । আর সেটা ওনার বৈধব্যের পরে যে অনেক বেড়েগেছিলো। অথচ  সেটাকে মেটাবার জন্য কেউ ছিলো না ওনার সামনে। আমার কাছেও উনি ওনার ভেতরের হঠাৎ হঠাৎ করেই ওঠা সেক্স কমানোর জন্য ওষধ চেয়েছিলেন । ( এর  বেশ কিছুটা কারণ ছিলো ওনার cervical lips এর এরোশন ও মাল্টিপল tiny আলসারস ,cervical glandulars metaplasia pus formation in ulcers , ওনার vaginal দেওয়ালে লাটারাল ফ্রনিক্স এ অনেকগুলো ক্ষুদ্র আলসার, সেখানে কনস্ট্যান্ট ইরিটেশন, নানারকম ব্যাকটেরিয়াল, ফাংগাল ,প্যারাসাইট ইনফেকশন,হোয়াইট ডিসচার্জ )। এছাড়াও ওনার স্বামীর মৃত্যুর পরে একটা Persistent genital arousal disorder ( PGAD) তৈরী হয়েও গেছিলো  বলে মনে হয়েছিলো আমার। অনেক বিধবা মহিলাকে, অবিবাহিত মহিলাকে, ডিভোর্সি মহিলাদেরকে ভুগতে হয় এই PGAD অসুখে। এটা যে এদের হতেই হবেই এমনটাও কিন্ত নয়। তবে যে মহিলাদের vaginal infections হয় তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে হয়। মনে হয় ওনার vaginal দেয়াল থেকে ওনার ক্লিটোরিস এ ইনফেকশন ছড়াবার জন্য  । এই অসুখটা এমনই যে  এতে মহিলাদের খুবই শারীরিক কষ্ট হয় সেক্স স্টিমুলেশন এর জন্য। তাদের কিছুই করবার থাকে না। বিশেষ করে মাঝ বয়সী বিধবা বা ডিভোর্সি মহিলাদের।  কেউ কেউ বা আত্মহত্যার পথ ও বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সেক্সটা না মেটাতে পেরে এবং এর ফলে খারাপ ধরণের মানষিক ডিপ্রেসনে চলে গিয়ে। মহিলাদের ক্লিটোরিসের ( বাংলায় ভগাঙ্কুর) নার্ভএন্ডিং গুলোতে এই প্রবলেমটা শুরু হয়, আর্টিফিসিয়াল পেনিস বা আর্টিফিসিয়াল ডিভাইস ব্যবহার করতে করতে এক সময়। তখন তাদের সুষমাকান্ড  বা স্পাইনাল কর্ডের ক্লিটোরিসের জন্য নির্ধারত নার্ভগুলো থেকেই তাদের স্টিমুলেশনটা আসে। তাই vaginal অর্গ্যাজম না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পায় না এই রোগীরা। এটা কিন্ত কোনো রকমের মানষিক রোগ একদমই নয়। কার যে  কখন হবে বলা কঠিন । যতক্ষণ না সম্পূর্ণ ভাবে অর্গ্যাজম হচ্ছে ততক্ষন ঘুমোতে পারেননা এই মহিলারা। পুরুষের এই রোগটা হয় না যে  সেটাও বলা যাবে না । তবে সেটা বিরল থেকে বিরলতম পুরুষের ক্ষেত্রে। তবে একেবারেই যে হবে না সেটা বলা যাবে না। এখন ২০১৫ তে এর ওষুধ বের হয়েছিলো “ফ্লিবন্সেরিন।”  কিন্তু সেই সময়ে  এই ধরনের সেক্স কমাবার জন্য সেইরকম কোনো ওসুধ বাজারে পাওয়া যায় যে আমার সেটা জানা ছিলো না তখন । তাই আমি ওনাকে amitriptilin দিয়েছিলাম – যাতে ওনার মুড ভালো থাকে এবং ডিপ্রেসনে  অন্তত না যেতে হয় ওনাকে। খুব কম ডোজই দিয়েছিলাম। ফ্লিবন্সেরিন তখন কোথায় পাওয়া যেত ভারতবর্ষে? ২০১৫ সালে প্রথম  আমেরিকায় FDA approved করেছিল বাজারে আনতে।যখন নাকিy উনি মানষিক অবসাদ ও ওনার শারিরীক চাহিদার কাছে হেরে গিয়ে সম্পূর্ন ভাবেই অসহায় বোধ করতেন, তখন নাকি বাধ্য হয়েই সিলিকন রাবারের ডিভাইসটা ব্যাবহার করেই শেষ পর্যন্ত ওনার cervical আর vaginal দেওয়ালে erosion তৈরী করেছিলেন। PGAD এর শিকার হয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়েছিলো। জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও নিজেই নিজের তৈরি করেছিলেন । ওনার cervical গ্ল্যান্ডের  স্কোয়ামাস মেটাপ্লাসিয়াও হয়ে গেছিল। সেই আলসার গুলোতে  ব্যাকটেরিয়াল আর ফাংগাল ক্যান্ডিদা ইনফেকশান হয়েই ওনার সাদা স্রাব আর সাথে মেশানো  ব্লিডিং হতে শুরু করেছিল।  না জেনেবুঝেই করতেন ব্যাবহার ,ওনার বড়দি আর বড়বউদির পরামর্শে। নমিতাকাকীও কেমন যেনো একটুএকটু করেই আমার প্রতি আকর্ষিতও হচ্ছিলেন। সেটাও উনি মাস আড়াই নিজের ভেতরেই গোপন রাখবার  খুব চেষ্টাও করেছিলেন পরে জেনেছিলাম। আমাদের দুজনের বয়েসের মধ্যে প্রায়  তেরো বছরের পার্থক্য থাকা সত্বেও। আমরা দুজনেই তখন কিন্ত ভালো করেই জানতাম এবং ভালো করেই বুঝতামও যে এই সম্পর্কটা গড়ে উঠছিলো সেটা আমাদের দুজনের জীবনে কারুর জন্যি একটুও শুভ হবে না। বিশেষ করে নমিতাকাকীর জন্যতো বটেই। আমি নাহয়  একজন ছেলে, ওনার চেয়ে বয়সেও ছোট বারো তেরো বছরের।  আমি হয়তো পারপেয়ে যেতাম সমাজের কাছে। সকলে কিন্ত ওনাকেই দোষী  আর কলঙ্কিনী মহিলা হিসাবে চিহ্নিত করত। নমিতাকাকীর শ্বশুরবাড়ির কেউ যদি সামান্যতম ঘুণাক্ষরেও টেরপেতো এই সম্পর্কের তাহলে নমিতাকাকীরও আত্নহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতো না। এছাড়াও পাড়ার মহিলামহল আর লোকজনও ছিলো। তারাও তো আর ঘাসে মুখ দিয়ে চলতো না তখন । সমাজও সহজে মেনে নিত না সম্পর্কটা। তাও নাকি আবার এক বিধবা মহিলার প্রেম, বয়েসে অনেক ছোট এক ডাক্তারের সাথে? নমিতাকাকীরও এই নিয়ে নিজের ভেতরে খুবই ভয় ছিল “যদি কোনো ভাবেই কেউই জেনে যায়? “যদি কারুর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয় আমাদের মেলামেশা নিয়ে?” যদি ওনার ছেলেদের কানে যায় কোনোদিনও, ওরা বড় হলে, বুঝতে শিখলে।যদি ওনার শ্বশুর ,দেওর ,জা, ঘুণাক্ষরেও টের পেয়ে যায় কোনোদিন। অথচ উনি প্রায় রোজই নিজের মনের সাথে নিজেই অনেক যুদ্ধ করেও ওনার মনের গভীরের ভেতরে এই এক বছরের গড়ে তোলা,গোপনে লালন করে আসা ইচ্ছেটাকে তো আর গলা টিপে মারতে পারেননি শত চেষ্টা করেও। উনি নিজেও অবশ্য ভীষণই সাবধানে থাকতেন। অথচ ওনার ভেতরে একটা ইচ্ছেও ছিলো যেনো আমি সুযোগের সদ্ব্যবহারটা প্রথমে করি মাঝে মধ্যেই। আমিও ওনাকে নিয়ে কেমন যেনো কনফিউজড হয়ে ছিলাম। বয়েসে তেরো বছরের বড় হলেও খারাপ কিন্ত লাগতো না আমার ওনাকে। তার ওপরে ওনার গায়ের রংটা খুবই ফর্সা ছিলো। দেখতে 

ও মোটামুটি। শরীরের বাধনও মোটামুটি। আমি বুঝতে কিন্তু পেরেছিলাম যে উনি শুধু আমাকে মন থেকেই ভালোবেসেই নয়,  নিজের ভেতরের চেপে রাখা সেক্স এর জন্যও , ওনার মধ্যে শারিরীক চাহিদার জন্যও উনি আমার কাছে  চেম্বারে আসতে শুরু করেছিলেন  মাঝেমধ্যেই  আমার রাতেরবেলার সময়ের চেম্বারে কখনো বা নিজেকেই দেখানোর, চেক আপের অজুহাতে বা  ওনার বড় ছেলেকে দিয়ে  খবর পাঠিয়ে আমাকেই ওনাদের বাড়িতেই ডাকতেন , বাড়ির কারুর বা ওনার নিজেরই শরীর সামান্য একটু খারাপের অজুহাতে। আর উনি এটাও কনফিডেন্ট হয়ে গেছিলেন যে আমি ওনার ডাকে যাবোই । আর ওনার বাড়িতে কলে গেলে উনি এটাওটা করে খাওয়াতেন আমি না করবার সত্বেও। দশ টাকা ফীও দিতেন আমাকে। ওনার ছোট জা শম্পা কাকী নিজেই এটাওটা করে নিয়ে আসতেন। চা আর বিস্কিটতো ছিলোই। কিছুক্ষন ওনাদের সাথে গল্পঃ হত। এই ভাবেই আড়াই মাসে ঘনিষ্ঠতাও গড়ে উঠছিলো আমাদের। ওনার বাড়ির লোকেরা কিyন্তু একবারের জন্যও ঘুণাক্ষরেও টের পাননি আমাদের মধ্যে যে একটা অবৈধ সম্পর্ক আস্তে আস্তে তৈরি হতে যাচ্ছিলো। আমিও যে পারলে এর সুযোগ নিতাম না সেটাও তো নয়। ওনার বাড়িতেই বসেই আমাদের আসেপাশে কেউই  না থাকলে বা আমার চেম্বার ফাঁকা থাকলে ওনার শরীরে এখানে ওখানে  আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতে শুরু করেছিলাম । মুখে সবসময়ই প্রথমের দিকে বারেবারে না না করলেও, আর আমাকে বেশ লজ্জা পেলেও, কেউ যে হঠাৎ করে চলে আসতে পারে, আমাদের কেউ দেখেও ফেলতে পারে এইসব ভয় পেলেও, আমি ওনার শরীরের কোমল ও স্পর্শ কাতর অংশগুলোতে হাত দিতে চাইলে উনি মাথা নিচু করেই থাকতেন, একএকসময় চুপও করে যেতেন। আদর করতে চাইলে , আশেপাশে ধারেকাছে,কেউ না থাকলে বা ফাঁকা চেম্বার হলে সেটা করতেও দিতেন অল্পস্বল্প। চুপটি করে মুখ নীচু করে বসে আদর গ্রহণ করতেন। কেনো যেনো তেমন  ভাবে খুব একটা বাধাও দিতেননা। উনি ভাবতেন  ডাক্তার হিসেবে ওনার ভেতরের চেপে রাখা যৌণ চাহিদার জন্য পুরুষের শৃঙ্গার  আর ওনার অর্গাজমের  মাধ্যমে চরম তৃপ্তি আমি হয়তো অন্তত দিতে পারবো ওনাকে। আমাকে দিয়েই হয়তো বা সেটা উনি পাবেন। ( উনি পরে এটা স্বীকার করেছিলেন আমাকে) তার ওপরে কিনা গাইনী বিশেষজ্ঞ আমি। কতোটা যে পেতেন সেটা জানিনা। তবে উনি যে সত্যিসত্যিই যৌণ অতৃপ্তিতে ভুগতেন  ওনার বৈধব্য জীবনে, সেটা ওনার শরীরে আমার আঙুলের স্পর্শে ওনার ভেতর থেকেই উঠে আসা শিহরন , শরীরের ভেতরথেকে কাপুনি, গভীর কামনার দীর্ঘশ্বাসে বোঝাই যেতো। ওনার ফর্সা মুখের মধ্যে রক্তের সঞ্চালন বেড়ে যেতো তখন। উনি কিন্তু আমাকে খোলাখুলিই বলেছিলেন যে ওনার স্বামীর মৃত্যুর পরে ওনার  ভেতরের মহিলা যৌণ চাহিদাটা বেড়ে গেছিলো। যেটাকে সামলানো খুব সহজ ছিলো না ওনার পক্ষে, একবার সেটা জেগে উঠলে। ওনার সমস্ত শরীর নাকি তখন অবশ হয়ে যেতো। দুই জঙ্ঘা ,থাই বেয়ে আর স্পাইনাল কর্ড দিয়ে ইলেকট্রিক শক এর অনুভুতি হত থেকেথেকেই । গোটা পেরিনিয়ামটা ওনার অবশ হয়ে যেতো। তলপেটে চিনচিন ব্যথা উঠতো। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও থাকত না তখন। আমার কাছে সেটাকে কমাবার  যদি কোনো ওষুধ থাকলে ওনাকে দিতে বলতেন ওনার সেক্স কমাবার। ওনার নাকি রাতের বিছানায় ঘুম আসতো না ,দিনের পর দিন, মাসের পর মাস।  বাড়ীতে সবাই রাতে যখন ঘুমোতো উনি জেগেথেকে বিছানায় কেবল এপাশওপাশ করতেন। ছোটফট করতেন।  ওনার ছেলেরা পাশেই ঘুমত। একসময় বাধ্য হয়েই ওনার বড়দির কিনে দেওয়া আর্টিফিসিয়াল ডিভাইসটাকে ব্যাবহার করতে শুরু করেছিলেন। এতে অন্তত কিছুটা শান্তি হত ওনার অর্গাজমের পর। ঘুমোতে তো পারতেন কিছুক্ষণ অন্তত এরপরে। আর ওনার স্বামী বেঁচে থাকলেও সেওতো এইসব চাইতই তার কাছে। উনি সেটাও বলেছিলেন আমাকে। ওনার স্বামী ওনাকে ভালোবাসতেন খুবই এবং উনি নাকি সেক্সুয়ালি খুব অ্যাক্টিভ ও ছিলেন ওনার প্রতি। ওনাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিলো। এই বয়েসের মহিলার একজন পুরুষমানুষের খুব যে দরকার হয়, যে তাকে ভালোবাসে আর আদরও করে । বিশেষভাবে যারা PGAD তে ভুগতে শুরু করেন তাঁদের তো বটেই। তাই হয়তো বা আমাকে তেমনভাবে খুব আপত্তি করতেন না। আমি ওনার বাড়ির সামনের রাস্তাটা দিয়ে পায়ে হেঁটে হাপাতালে বা চেম্বারে যাবার বা ফেরার সময়, উনি রান্না ঘরের ভেতর থেকে দরজার সামনে এসে হেলান দিয়েই দাঁড়াতেন এবং আমাকে  সেইভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়েই দেখতেন যতদূর দেখা যায় আমাকে। চোখাচুখি ও হতো। কখনো বা বারান্দায় এসেও দাঁড়াতেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে অর্থপূর্ণ মুচকি হাসতেনও । একদিন রবিবার। ওনার বাড়িতে সবাই কোথায় যেনো গেছিলেন সকালেই। আমিও চেম্বারে ছিলাম। গোটা চোদ্দ রোগীও হয়েছিলো। বেলা দুটোর আগেই আমি চেম্বারের শাটার বন্ধ করে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলাম যেমন রোজই ফিরি ওনাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই। উনি আমাকে ওনার ঘর থেকে দেখেই  বারান্দায় এসে দাড়িয়ে ছিলেন। আমাকে ওনাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে দেখে ওনাদের বাড়ির গ্রীলের গেটের কাছে নেমে এসে ডেকেছিলেন ” এসোই না। কেউই নেই কিন্তু এখন বাড়িতে। একটু গল্পঃ করতাম”

আমি ইতস্তত করতেই উনি একরকম জোর করেই ওনার ঘরে নিয়ে এসে  সোফাকাম বেডে বসালেন।” এটাই ওনাদের সেই ঘর। এই চৌকিতে শুয়েই শংকর কাকার মৃত্য হয়েছিলো বছর দেড়েক আগে । আমি সোফাতে বসেছিলাম।  উনিও আমার সামনে চৌকিতেই ওনার দুইপা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। -“সবাই বৈদ্যবাটি গেছে আমার খুরশ্বশুরের বাড়িতে। ওনার নাতির পৈতে আছে “

-“ও ” দাদুকেও দেখছি না যে। “

-” আমার শ্বশুরও গেছেনতো। ঘরে  বসেবসে জানো খুবই একা একা লাগছিলো।  কিছুক্ষণ তাই বিবেকানন্দর বই পড়ছিলাম । তারপর ঘরদোরের কাজসেরে, স্নান করে, ঠাকুর দিয়ে, ছোট ছেলেকে নিয়ে খাওয়া দাওয়াও সারলাম । তারপর শুয়েই ছিলাম চৌকির ওপরে। ঘুমযে আসে না সহজে আমার জানোই তো। ওর কথাও মনে পড়ছিলো। তাইই তোমাকে আসতে দেখে ডাকলাম। তোমার বেশ অসুবিধে করলাম তাই না ডাক্তার?”

-” আমার মা খাবার নিয়ে কিন্তু বসে থাকবেন” আমি মৃদু গলায় বলেছিলাম। “আপনি ভালো আছেন তো এখন?” আমি ওমিট্রিপ্তিলিন দিয়েছিলাম ওনাকে খেতে। 

-“ওহ ! তোমার তো আবার লাঞ্চ খাবার হয় নি। “

একদিন না হয় আমার এখানেই ডালভাত খেলে? খাবে তো? আপত্তি আছে নাকি কিছু? ” বলে হেসেছিলেন অদ্ভুত ভাবেই।

-” কেউই নেই বাড়িতে”? শুধু আপনি ??

” নাহ । আমার ছোট ছেলেটাই আছে একমাত্র। ওর দাদুর ঘরে গিয়ে ঘুমোচ্ছে। একটু চা না হয় করি তোমার জন্য? একটা ওমলেটও করে দেই কেমন ?”

উনি চা করতে রান্নাঘরে গেলে আমার মধ্যেও যে কি হয়েছিলো জানিনা।  আমিও হঠাৎ করেই সোফা ছেড়ে  উঠে, ওনার ঘর থেকে বেড়িয়ে, লাগোয়া রান্না ঘরেই গেছিলাম। যৌথ পরিবারের রান্নার ঘর। একটু বড়ই। মাটির কয়ালা ঘুটের উনান আর কেরোসিনের জনতা স্টোভ সেখানে।  উনি পিড়িতে বসে স্টোভটা জ্বালিয়ে চায়ের জল বসাচ্ছিলেন কেটলিতে। আমাকে দেখে সামান্য একটু  ভয় পেয়েই বলেছিলেন” কি হলো ? এখানে উঠে  এলে কেনো আবার?”

আমি ওনার সামনেই মুখোমুখী হাঁটুমুড়ে বসতে বসতে ওনার চোখে চোখ রেখেই বলেছিলাম  “কেমন আছে এখন আপনার ওইটা…”?

উনি চায়ের জল বসাতে বসাতে বলেছিলেন ”  -“কোনটা গো?  ” তারপরে আমার ইঙ্গিতে বলেছিলেন “ধ্যাৎ  কী অসভ্য  ডাক্তারগো তুমি  ! তুমিও না ! কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছ তুমিও দিনদিন।  আমাকে একটু একা পেলেই হলো তাইনা? খুব সস্তা আমি তোমার কাছে তাই না? । অন্য আর কোনো কথা  বলতে নেই বুঝি  আমার সাথে? আগেতো বাপু ভাজামাছটা মুখের সামনে তুলে ধরলেও মুখটাকে অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখতে। একটা ভন্ড তপস্বী বেড়াল কোথাকার!  কেমনই বা আবার থাকবে শুনি? যেমন থাকবার কথা তেমনিইতো আছে? এই সেদিনইতো টর্চ দিয়ে, আঙ্গুল দিয়ে ভেতরটা দেখলে এতো ভালো করে তোমার চেম্বারে ” সত্যিই এতো লজ্জা করছিল তখন তোমাকে আমার! ঐ ভাবে সব দেখিয়ে শুয়ে থেকে….. হলেও বা ডাক্তার তুমি। চোখ মুখ নিচু করেই চাপা গলায় উত্তর দিয়েছিলেন।” যাও ঘরে গিয়ে  ভালো শান্ত ছেলের মত বসতো।  আমি তোমার চা  আর ওমলেট নিয়ে আসছি।”

” নিরামেসাশি বেড়ালটাকে মাছতো আপনিই খেতে শেখালেন।  তাই না? বেড়ালের কিন্তু আগে কোনো  মাছের প্রতি একটুকুও লোভ ছিলো না। আপনি তো ভাল ভাবেই জানেন সেটা”

“আহারে! আঙ্গুর ফল না টকই হয় জানো তো! থাক আর নিজেকে এত ঢেকেঢুকে রেখোনা তো।  অন্তত আমার কাছে না। মেয়েমানুষ না আমি ?  দুই ছেলেরও মা। সবই টেরপাই  গো বুঝেছ। পুরুষ মানুষের ইচ্ছে ওনিচ্ছে গুলোও বুঝি । সেদিন তোমার অ্যান্টি চেম্বারে,  ভেতরে দু আঙ্গুল দিয়ে ,পরীক্ষা করবার ছলে  অতক্ষণ ধরে ওইসব নোংরামিগুলো কে করেছিল শুনি? পরিক্ষা ছিলো না হাতি। আমাকে তুলে দিয়ে… আমি বলেছিলাম বুঝি??   Yyআমি কি একবারও বলেছিলাম বুঝি বেড়ালকে মাছ ধরতে, তাও আবার গুহার ভেতরে  ঢুকে? আমারতো তখন লজ্জায় মা ধরণীর দ্বিধা হও অবস্থা । ভদ্র বাড়ীর বউ আমি। ওই ভাবে পড়নের কাপড় সায়া গুটিয়ে তুলে,সব দেখিয়ে, দু পা ফাঁক করে শুয়েথাকা. কিছু বলতেও পারছিলাম না তোমাকে আবার কিছুই করতেও পারতাম না ।এদিকে আমাকে গাছের একবারে মগডালের ওপরে তুলে দিয়ে, বাবু নিজে ভিজে বেড়াল হয়ে মাটিতে বসে ভন্ড তপস্যা করছেন। কিছুই জানে না  কিছুই বোঝে না যেনো। পাড়ার কাকী বলে নাকি  কথা।  তাও আবার বিধবা কাকী! পাড়ায় ওনার মান সম্মান আছে না? এর পরে এই কাকী যদি ফাঁসিয়ে দেয় সেই ভয়তো আছে ভেতরে ? “

-“মলমটা ঠিক মত ভেতরে দিচ্ছেন তো? পারছেন তো নিজে নিজে? “ওষুধগুলো খাচ্ছেন তো রোজ? আমিট্রিপ্তিলিন টাও খাচ্ছেন তো?

-” কি আর করবো বল?  নিজের স্বামীটাতো আর বেঁচে নেই যে সে ঠিক মত সে ভেতরে লাগিয়ে দেবে মলম ।  খেয়ে তো নিয়েছি  তাকে এই বয়েসেই।  তাই নিজেই যতোটা পারা যায় আর কি ” “আর যা দাম গো তোমার ওষুধগুলোর আর মলমের! রোজ আর কিনে খাবো, দিনে তিন বার লাগাবো, এই সামর্থ আর এখন আছে নাকি আমার? তোমরা ডাক্তাররাতো ওষুধ লিখে দিয়েই খালাস। রোগীর কেনার সামর্থ্য আর দেখো কোথায়? 

-” সেটা বটে । যাকগে। আদর করবো নাকি একটু এখন?” চাপা গলায় বলেছিলাম

-“এইই যে ডাক্তারবাবু  ভা ভ ভালো হবে না কিন্তু । আমার যে এসবে কষ্ট হয় খুব সেটা জানতো তুমি। উঠিয়ে দিয়ে  … ননা না ডাক্তার। কষ্ট হয় যে খুব আমার । জানতো তুমি সবই। 

আমি হাত দিয়ে ওনার গাল, ঠোট স্পর্শ করে সেখানে বার কয়েক আঙ্গুল বোলাতে উনিও শিউরে উঠে করুন গলায় বলেন ” ন না ডাক্তার ছেলেটার ঘুম ভেংগে গেলে… প্লিজ”বলেই আমার হাত চেপে ধরেছিলেন ওনার ডানহাতে। আমাকে অগ্রসর হতে  অল্প কিছু বাধাও দিয়েছিলেন। সেই বাঁধা পেরোতে আমাকে কয়েক মিনিট  মাত্র সময় লেগেছিল। যেমন এর আগে একদিন হয়েছিল। সেদিনও রান্না ঘরের  মেঝতে দাড়িয়েই দুজনে একটু একটু করে নিজেদের  হারিয়ে ফেলেছিলাম । প্রথমে খুবই ছোট ছোট  চুম্বন দিয়ে শুরু পরস্পরকে গালে, ঠোটে, নাকে, এরপরে  উনি গভির চোখে আমার চোখে প্রসয়ের চোখ রেখেছিলেন। ঠোঁটে ঠোঁট বসেছিল দুজনের, মুখে মুখ, জিভে জিভ ঘর্ষণ, মুখের ভেতরে জিভ তারপর সেটা আবার গভীর থেকে গভীরতর , গভীরতম হয়েছিল। উনিও ক্রমশ অ্যাক্টিভ রোল গ্রহণ করেছিলেন আমাকে  ওনার দুই হাতের বন্ধনে তীব্র আশ্লেষে জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ন ভাবেই আমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন ।  আমার হাতও ওনার তুলোর মতো নরম ঘাড় , গলা,পিঠ, শিরদাঁড়া, তার থেকেও আরো  নিচে পেলভিসএ ঘোরা ফেরা করছিলো। চেপে ধরছিল ওনার নরম শরীরে। বেশ অনেকটাই সময় পেরিয়ে গেছিলো। ওনারও মুখে, কপালে, নাকের ওপরে ঘাম জমেছিল। উনি ওনার মুখ সরিয়ে গভীর শ্বাস নিতেনিতে বলেছিলেন ” ঘরের দরজাটা যে খোলাই রইলো ডাক্তার “

আমি বলেছিলাম ” ঘরেই চলুন না হয় “

কেনো গো?

” কেনো আবার ! আদর করবো  আপনাকে ভালোভাবে একটু”

-” অসভ্য কোথাকার! তোমার মা কিন্তু বসে থাকবেন তোমার জন্য। কি বলবে ওনাকে বাড়ি ফিরতে দেরী হচ্ছে যে ?”

-‘কিছু একটা না হয় একটl বলবো ! চলুন না “কোলেই না হয় বসবেন আমার?  “

” ইসস কি সখ  আমার ছেলের গো ! কোলে নিয়ে বসে আদর করবে আমাকে? কেনোগো?  কে আমি হই তোমার যে তোমার কোলে বসবো ? তাও আবার এই বয়েসে এসে?

-“আপনি যেনো গত মাসে আমার কোলে আগে বসেননি এমনই একটাভাব করছেন এখন ?

-“সেতো একদিনই মাত্র । তুলেতো  বাপু আমাকে তুমিই দিয়েছিলে…. আমি কিন্ত তবুও  চলেই আসছিলাম মুখ বুজেই…. কত বার না করেছিলুম মনে কর একবার…..তুমিই কিন্তু জোর খাটিয়ে আমার হাতধরে টেনে এনে …  মনে করে দেখ ….আমি কিন্তু বারে বারেই না করেছিলাম তোমাকে…. তুমিই শোননি…. আমার দোষ দিও না এখন বাপু… তারপরে যা করতে চাইছিলে…

ইস্…. সেদিনই বুঝে গেছি আমি….

 

-“কি বুঝে গেছিলেন আপনি?” আমি মৃদু গলায় বলি

 

-“তোমাকে ! একটা ভন্ড তপস্বী বেড়াল কোথাকার । এতো ভয় কিসের গো তোমার? তোমার সম্মানের ? আর আমার বুঝি  মান সম্মান নেই? ভদ্র বাড়ীর বউ না আমি? নিজে তো তুমি ডাক্তার। তাও আবার গাইনী ডাক্তার। বোঝো না একটা মহিলাকে? কি চায় সে?

 

……

-“তোমার শংকর কাকা হলে কোলে করেই তুলে নিয়ে যেতেন। সম্মতির জন্য অত অপেক্ষা করতো না সে “

– যা: আপনাকে কোলে তুলতে পারতো নাকি আপনার হাসব্যান্ড?  যেরকম ভারী ওজন আপনার? ওনার গায়েতো এতো জোরতো ছিলো না। শরীরে চর্বি জমে জমে … আর এত বড় ভুঁড়ি। কতবার করে  যে বলেছিলাম একটু এক্সারসাইজ করুন, হাঁটাটা শুরু করুন। 

-সেটা হয়তো পারতো না তবে চেষ্টা কিন্তু করতেন। উনি আমার নাক নেড়ে বললেন। “আর সেদিনের বাচ্চা ছেলে তুমি। “

-“আপনি আমাকে আবার কবে বাচ্চা ছেলে হিসাবে দেখেছিলেন? 

-‘ ওমা!;  এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পরে  দেখিনি তোমাকে বুঝি? । তুমি তখন ১০ বা ১২ বছরের। বাপনের মতই হয়তো বয়েস হবে তোমার তখন ।

-” চিনতেন বুঝি  আমাকে? আমাদের বাড়ির দিকে কখনোই জাননি তো আপনি। আমিওতো আসিনি ছেলেবেলা আপনাদের  এই বাড়ীতে । মনে পড়ে না  কিন্তু আমার যে দেখেছিলাম আপনাকে ছোটবেলাতে।

-“তুমি হয়ত দেখনি । তেমন ভাবে না চিনলেও স্কুলের ফার্স্ট হওয়া ছেলে ছিলে তুমি, তাইতো ঠিক বলছি না?  তোমার নাম করতো খুব আমার বড় ননদ লীলা । লীলাকে চিনতে পেরেছো তো?নাকি আবার বলবে কই চিনি না তো?”

-” চিনব না কেনো? তার তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাই না?”

“হ্যা  আমার বিয়ের  বছর কয়েক আগে”! তার এখন ১৫ বছরের ছেলেও আছে একটা। এতো পাজি আর খুব দুষ্ট জানোতো ছেলেটা” ও কিন্তু আবার স্কুলে ফার্স্ট ও হয়। হাওড়া জেলা স্কুলে পড়ে । দশ ক্লাস হলো ওর।”

-” তাই বুঝি ” কোথায় যেনো থাকে এখন লীলাপিসীরা?

-” বেশি দূরে নয় জাগাচা,  সাঁতরাগাছি বাস স্ট্যান্ডের কাছেই ওদের বাড়ি”। নাও এবারে একটু ছাড়োতো বাপু আমাকে । চাটাও যে  ঠান্ডা হয়ে একেবারেই জল হয়ে গেল। গরম করে দেই না হয় আরেকবার? একটা ওমলেটটা করে দেই ?খাবে? “

“না”

“কেনো না?  দুপুরের লাঞ্চ তো আর হলো না তোমার”

আমি কানে মুখ এনে বলেছিলাম ” এই তো দুপুরের লাঞ্চ ?”

উনি আমার বুকে মৃদু কিল মেরে বলেছিলেন ” ধ্যাৎ অসভ্য কোথাকার! আমি বুঝি তোমার লাঞ্চ? তবে খেয়েই নাও না বাপু, ফেলে রেখেছ কেনো এতোদিন? উঃ আর কত যে বেহায়া হতে হবে তোমার পাল্লায় পড়ে।”

…………..

উনি নিজের ঘরে এসে নিজের হাতেই দরজা বন্ধ করেছিলেন। জানালাও বন্ধ করেছিলেন ! এরপরে আমার হাতের  হ্যাঁচকা একটানে ধপাশ করেই ওনার ভারী সমস্ত শরীর নিয়ে আমার কোলের ওপরে বসেছিলেন। অনেকক্ষণ আমরা গভীরতর থেকে গভীরতম চুম্বনে ডুবে গেছিলাম। উনি নিজেই  নিজের থেকে সেইদিন  অ্যাক্টিভ রোলে ছিলেন। ওনার মুখের ভেতরে গোপাল জর্দার মিষ্টি গন্ধ ছিলো একটা , ওনার দাতগুলো, জিভ, ঠোটদুটো  পান, খয়ের আর জর্দার ছোপে লালচে। উনিও কেমন ক্রমশই ক্ষুধার্ত এক বাঘিনীর মত হয়ে উঠছিলেন। ওনার শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন থেকে ঘনতোর থেকে ঘনতম হয়ে উঠেছিলো।ওনার ব্লাউজের ভেতরে বেশ কিছুটাই নিচের দিকে ঝুলে পড়ে বন্ধনহীন ব্রেস্টদুটোও ঘন নিশ্বাসের সাথে  ভীষণ ওঠা নামা করছিল। উনি আমার মুখের ভেতর থেকে সামান্য নিজের মুখ তুলে আমার চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করেছিলেন “ভেতরে দিয়েই হাত দাও না ডাক্তার। “ভালো লাগে আমার খুব। ” আমার নিপল দুটো একটু বেশিই লম্বা তাই ? ” আমরা পরস্পরে কাপড় আর প্যান্টের উপর দিয়েই নিজেদের খোকা আর খুকিকে ধরে ছিলাম নির্দ্বিধায় চুম্বনরত অবস্থায়।  উনি নিজে সেখানে কিছুক্ষণ তাকিয়েও দেখেছিলেন। ঠিক ভাবে আমাকে হাতের মুঠোতে ধরতেও দিয়েছিলেন ওনার খুকীকে । উনিও নিজের ডান হাতের তালু আর পাঁচ আঙ্গুল ঘষছিলেন আমার প্যান্টের উপর দিয়েই,  কখনও সেটা চাপ দিয়ে জোরে দুমড়ে মুচড়েও দিচ্ছিলেন । আমি অল্প স্বল্প ব্যথাও পাচ্ছিলাম তাতে। উনি একসময়ে আমার কোলের ওপরেই উঠে, আমার প্যাণ্টের ভেতরে পূর্ন ভাবে জেগে ওঠা খোকার ওপরেই বসেছিলেন আমার মুখোমুখী সোফাতে ওনার দুই থাই,পা দুদিকে রেখে। , আমার  কপাল, দুই কানের লতি, দুই গাল , ঠোট, জিভ, মুখ, গলা ওনার ঠোট দিয়ে  ওনার পান জর্দা খাওয়া জিভ বুলিয়ে চেটে , দাত দিয়ে মৃদু  মৃদু কামড়ে ,আমার দুচোখে নিজের দু চোখ রেখেই শৃঙ্গারের আবেশে এক কামিনী আর উপোষী এক বাঘিনী যেনো হয়ে উঠছিলেন। এক সময় নিজেই স্বগোক্তি করে বলেছিলেন “উঃ ভগবান্ ! আর যে পারিনা । আমার যে কি ভীষণ উঠে যায় এইসময় ! এই হাদারাম ডাক্তারটা বোঝে না কেনো যে। এ নাকি আবার গাইনীর ডাক্তার হয়েছেন। শরীরটাও  ভেতরে কেমন কেমন করছে যে।  মাগো ! কিযে করি এখন  আমি? কি করি,?  কি করি,? কি করি এখন! এই যে ডাক্তারবাবু ভেতরে আমার কেবলই ছোট বড় ঢেউ উঠছে যে । কি করবো আমি এখন? নৌকাটা নামাবে কি আজকে অন্তত? সব লাজলজ্জার মাথা খেয়েইতো জিজ্ঞেস করছি। তাহলে না হয় বিছানাটা পেতে দেই চৌকিতে?এই বাড়িতে আজকের মত সুযোগ আসবে না কিন্তু আর।

আমি কোনোভাবে বলি -“আপনার ভেতরের ঘা গুলো শুকোয়নি কিন্তু সব এখনও ,মনে আছে কি?  তাছাড়া আপনার ছোটছেলেও পাশের ঘরে রয়েছে। সেটাও খেয়াল আছে কি? ঘুম ভেংগে চলে এসে আপনাকে দেখলে এই অবস্থায় কি ভাববে সে?”

_” চুপ কর তো ! ও খুব ছোট এখনো ডাক্তার ; ছয় বছর বয়েস সবে । বোঝে না এসবের কিছুই” আমি কিন্তু সত্যিই তোমাকে পুরোটাই পেতে চাই ডাক্তার!; তুমি যে আমার কী  সর্বনাশ করেছ ডাক্তার। কেনো করলে? সংসারের আর কেউ না জানুক তুমি  কিন্ত সেটা জানো।” আর কতবার নিজে মুখ ফুটে বলবো বলতো । আমার নিজেরও তো লাজলজ্জা বলে, নিজের কাছে নিজের মানসম্মান বলেও কিছু তো আছে নাকি?”

-“আপনি না ধৈর্য্য ধরতে শিখুন ।  আমি না হয় আঙ্গুল…..?

” থাক। কিছুই করতে হবে না তোমাকে আর । সত্যিই বাবা। পারোও বটে তুমি। তোমার মধ্যে বুঝি কোনো ইচ্ছেই আর জাগে না মেয়েদের নিয়ে তাই না? তোমরা ডাক্তাররা যে কি ধাতুতে তৈরি হও কে জানে? অন্য কোনো ছেলে হলে কবেই আমাকে….জানিনা বাপু। এখন একটু ভালো করে আদরতো কর। তাতে তোমার আপত্তি নেই তো?  তোমার জায়গাটা আমার কাছে  কিন্ত এখন তোমার শংকর কাকার । আমাকে এরপরে উত্তেজিত করবার কিছুটা চেষ্টাও করেছিলেন।  উনি তখন কামিনী আর কামার্ত এক মহিলা ।উনি নিজেই আমার কোল থেকে উঠে ,চৌকিতে বিছানা পেতে নিয়ে ,ঘরের  সব দরজা জানালা বন্ধ করে, টিউব লাইট জ্বালিয়ে ,বিছানায় এসে শুয়েছিলেন। আমি পাশের ঘরে গিয়ে ওনার ছোটছেলে যে ঘুমোচ্ছে সেটা দেখে এসেছিলাম। চাপা গলায় উনি বলেছিলেন , মাঝের দরজা টেনে দিতে, তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি  লুঙ্গী পড়তে চাই কিনা। তাহলে উনি ওনার স্বামীর ধোপা থেকে কেছে আনা লুঙ্গী বার করে দেবেন আলমিরা থেকে। আমি মাথা নেড়ে ওনার সামনে একটা কাঠের চেয়ার টেনে নিয়ে এসে বসেছিলাম। উনিও আমার কাছে নিজেই  সরে এসেছিলেন। 

ওনার দুই জঙ্ঘা, পা,  অনাবৃত করতে নজরে পড়েছিল ওনার অসম্ভব ফর্সা বড়সরো পেরিনিয়াম দেশে ওনার  vulva দিয়ে vaginar ভেতরে থেকে বেশ সাদা স্রাব গড়িয়ে পড়ছে। একটা কেমন  গন্ধ সেই স্রাবে। আমি তো জানতামই ওনার staphylococcus ব্যাক্টেরিয়া আর ক্যান্দীদা ফাংগাল ইনফেকশন ছিলো ভেতরে। ক্যান্দীদা ফাংগাল ইনফেকশনটা যেতে অনেকটা সময় নেয়।  এই ফাঙ্গাস ইস্ট ওনার vaginal irritability কারণ । উনি তখনও আমার দিকে  নিশব্দে নিস্পলক দুই চোখে তাকিয়ে ছিলেন অনেক আশা নিয়ে।  অপেক্ষা করছিলেন আমি কি করি। আমি ওনার ভেতরে দুটোআঙ্গুল দিতেই ,উনি নিজের পিঠ ঘষতে ঘসতে আমার আরো কাছে সরে এলে আমি ওনার মুখের ওপরে মুখ রাখলে উনি দুই হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন” এমন ভাবে কোনো মহিলা নিজের থেকে যেচে নিজেকে দেবেনা তোমায় ডাক্তার আমি ছাড়া। ” তারপর বলেছিলেন ” জানো, আমার না ভেতরে ভীষণ কষ্ট হয় এইসময়টা “। তোমরাতো পুরুষ মানুষ। তাই তোমরা  সেটা বুঝবে না কোখনই।” আমি বলেছিলাম ” আপনি ,আমি দুজনেই জানি  যে আমরা যেটা করছি সেটা কিন্তু  আমাদের জন্য একদমই ঠিক নয়” এটা  পাপ। আমাদের এই সম্পর্কেরও কোনো পরিণতি নেই। সবাই আপনাকেই ছি ছি করবে জানতে পারলে। বয়সেও তেরো বছরের বড় আপনি আমার থেকে।  তবুও আপনি সব আমাকে খুলে বলেছিলেন বলে, ডাক্তার হিসেবে যতোটা সম্ভব আমি চেষ্টা করি আপনার কষ্টটা যাতে কম হয়।  ওষুধ গুলো ঠিকঠাকমত খান। তবে না কমে যাবে ” উনিও  কামনার বড় ধরনের দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন “সবই তো জানিগো ডাক্তার। তুমিই বলো না কি করা উচিত আমার?  মেয়েমানুষেরই শরীরতো আমার। এই  শরীরেরও তো একটা চাহিদা আছে , এরও ক্ষিদে পায়। সেটা আর কে এখন মেটায়? দু দুটো নাবালক ছেলেও আছে আমার । আর আসল মানুষটাতো চলেই গেল তোমার হাতেই। এলোমেলো জীবনটা  যে হয়ে গেলো আমার ! ” “আবার যে একটা বিয়ে করবো কাউকে সেটাও যে সম্ভব নয় আর।  ধরেও যদি নেই তেমন কোনো বৃদ্ধ আর একলা কোনো মানুষ নিজের দেখভালের জন্য আমাকে বিয়ে করতে রাজিও হয় ,যে আমাকে বিয়ে করবে সে কি কখনো আমার দুই ছেলেকে মেনে নিয়ে আমাকে বিয়ে করবে কখনও? না গো করবে না। এই সমাজটা বড় নিষ্ঠুর যে ডাক্তার। এমন কেউই নেই … আর এই বাড়ি ছেড়ে আমি অন্য কোথাও গিয়েই  বা বাঁচবো কি করে বলোতো ? এখানেই যে আমার মৃত স্বামীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আছে ১৪ বছরের বিবাহিত জীবনের  আর ভালোবাসার স্মৃতি। এ ছাড়া বৃদ্ধ শ্বশুর মশাই, আমার ছোট জা শম্পা, দেওর এরাও তো কম নয় গো আমার কাছে। এদের ছেড়ে যাবো কোথায় বিয়ে যদিও করি ? আস্তে একটু আস্তে । জ্বালা করে যে এখনও ভেতরে। কবে ঠিক হবে ডাক্তারবাবু? 

” মলম গুলো ঠিক মত লাগাচ্ছেন নাতো? ওষুধওতো খাচ্ছেন না  । আড়াই মাস হয়ে গেলো ? এখনও কিন্ত  গন্ধ আর সাদা স্রাব হচ্ছে ।

” যতোটা পারি আঙ্গুলে নিয়ে দেই তো ভেতরে । তবে দিনে  তিন বার হয় না । দাম খুব বেশি। তোমাদের ফ্রী sample পেলে দিও না আমাকে। 

“ডিভাইসটা  ব্যবহার করছেন মনে হয় আবার??†

“তিন মাস হলো।  তুমি বলার পরে একদিনও করিনি বিশ্বাস কর। আলমারিতেই পরে আছে সেটা। তোমাকে ছুঁয়ে বলছি”

 

                          অধ্যায় তিন

                          আমি নমিতা

আমি নমিতা।  আমার বয়েস ৩৭ বছর এখন। বছর দেড়েক আগে প্সোদপুরের  প্রয়াত শংকর সমাজদারের  দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আমি। আমার স্বামীর প্রথমা স্ত্রী রীতা ব্রেইনের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে মারা গেছিলেন আমার বিয়ের বছর চারেক আগে। ওনাদের কোনো সন্তানও ছিলো না। তাই আমার স্বামীকে ওনার পরিবার থেকে আমার সাথে  আবারও বিবাহ দেওয়া হয়েছিল ।  যদিও উনি বয়েসে আমার থেকে কিন্ত ১৭ বছরের বড় ছিলেন। আমার জন্ম হয়েছিল বোলপুরের শান্তিনিকেতনের সবচেয়ে বড়  নামকরা এক নার্সিং হোমে। জন্মের পর থেকেই ছোটবেলায় বোলপুরে বেড়ে উঠেছিলাম। আমার বাবার কাকাদের বোলপুরের  স্টেশন রোডে বড় বড় দু তিনটে ব্যবসা ছিলো।  সোনা ও রুপোর গহনার  দোকান। পেট্রোল ডিজেলের ডিলারের পাম্প স্টেশন। এখনও অবশ্য সেই দোকানটা আর পেট্রোল পাম্প আছে। আমার বড় দাদা মেজো দাদা মিলে  এখন  ব্দোকানটা আর পেট্রোল পাম্প চালায়। দোকানটা এখন আরো বড় হয়েছে। ব্যবসাটাও বেড়েছে। আমাদের বাড়িতে ছোটবেলায় দেখেছিলাম  আমাদের যৌথ পরিবার ছিলো।বাবা কাকা, জ্যাঠা ,মা ,কাকী  আমার ভাই খুড়তুতো ভাই বোন সবাই  ছিলো এই যৌথ সংসারে।  যৌথ সংসারেই আমি বড়ো হয়ে উঠেছিলাম। আমার জন্মের পরে আমার ছোট বোন জন্ম নেয় প্রায়  ৭-৮ বছর পরে। আমাদের বাড়িটা খুবই সচ্ছল পরিবারের বাড়ি ছিল। তিন তিনটে গাড়িও ছিলো আমাদের। তাই আমার তেমন খুব একটা বান্ধবী বা বন্ধু হয় নি ছোটবেলা বা কিশোরী বয়েসে। আমাদের পাড়ার সবাই কেমন তির্যক চোখে তাকিয়ে দেখত আমাদের ভাইবোনেদের।  সোসাইটির বড়ঘরের দুই একজন অবশ্য আমার বান্ধবী ছিল।তবে এদের সাথে তেমন ভাবে তো আর বন্ধুত্ব হয় না। ওপর ওপর একটা বন্ধুত্ব। ছোটবেলা থেকেই আমার সব বোনরা এবং ভাইরা শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর  স্কুলে পড়তাম। রবীন্দ্রনাথের বাড়ীর ঠিক উল্টো দিকে আম্রপল্লীতে গাছের নিচেই আমাদের স্কুলের ক্লাস হতো। বিশ্বভারতীর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সবসময়ই কেমন যেন আঁতেল ধরণের হয়ে থাকে। ছেলেদের মধ্যেও মেয়েলি মেয়েলি কেমন যেন একটা ভাব চলে আসে । এখনকার পরিবেশই সেটা করে তোলে তাদের। আমার এইসব ছেলেদের ভালো লাগতো না খুব একটা। ছেলেদের মেয়েদের মত আচার আচরণ করা বা  কথা বলার ঢং আমার দু চোখের বিষ ছিলো। আমার বড়দি স্কুল শেষ করার পর আর পড়াশুনোটা করেনি। যেমন হয় আরকি বড়োলোকদের পরিবারে। ওর নাকি পড়াশুনো করতেই ভালো লাগতো না। পরিশ্রমের কাজ ছিলো সেটা ওর কাছে। বড়দি  কিন্ত প্রেমে পড়েছিল ওর স্কুল জীবনেই। আমার বড় জামাইবাবু ও ব্যবসায়ী পরিবারের থেকেই উঠে আসা লোক। বড়ো জামাইবাবু অবশ্য পরে চাটার্ড পাস করেছিলো B.com হনোর্স করবার পরে। ওদের টিভি ফ্রিজের এবং অনেক রকম ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা ও পৈতৃক দোকান। দোকানের মালিকও বড় জামাইবাবুই ছিলেন,  আমার দুই দাদা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে দুজনই কলকাতার গোয়েনকা কলেজ থেকে বি কম হোনর্স নিয়ে পাস করে। ওরা কলেজ স্ট্রিট এর একটা হোস্টেলে থাকতো সেই সময়টা। বাড়ি আসতো ছুটিতে বা সপ্তাহশেষে শনিবার । সোমবার আবার ফিরে যেতো কলকাতায়। । গ্রাজুয়েট হবার পরপরই ওরা  আমাদের পৈতৃক বিজনেসে ঢোকে। বাবা জোর করেই ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। বড়দা পেট্রোল পাম্প আর মেজদা  আমাদের গহনার দোকানে । আমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে কোনো ভাবে পাস করে  কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতেই। ফরাসি সাহিত্য নিয়ে।  যদিও  আমার ডাক্তার হবার  জন্য ভেতরে ভেতরে প্রবল ইচ্ছে ছিলো ছোটবেলাতে,কিন্তু বিজ্ঞান আর অঙ্কে আমি  বড্ড কাঁচা ছিলাম খুব। তাই বিজ্ঞান ছেড়ে হিউম্যানিটিস নিয়েই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। বিস্বভারতীর ফ্রেঞ্চ ক্লাসেই আমার সাথে ফ্রান্সের মিলানের পরিচয় হয় । আমিই নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়ে ওর সাথে পরিচয় করেছিলাম। মিলান ফ্রান্সের এক সুন্দর গ্রাম কান্দিস সেন্ট মার্টিন থেকে এসেছিল ফরাসী সাহিত্য নিয়েই এখানে পড়তে বিশ্বভারতীর নাম ও ডাক শুনে। ওখানকার  সেন্ট মার্টিনের  সমস্ত বাড়ি ঘরগুলো নাকি লাইমস্টোন মার্বেল দিয়ে তৈরি , মিলান বলেছিল। ওপরে টালির ছাদ। মিলানদের গ্রামের পাশ দিয়ে লোরীনদী বয়ে যেতো। ওদের গ্রামে প্রায় ৩০০০ পরিবারের বাস ছিলো । আর সবাই সচ্ছল পরিবার ছিলো। মিলানদের একটা  লিমুজিন গাড়ি ছিলো। ফরাসী ছেলেরা যেমন হয় মিলানও সেইরকমই দেখতে ছিলো । একটু লম্বা, পান পাতার মত লম্বাটে মুখ, চাপ দাড়ি মুখে। ঘনকালো কোঁকড়ানো এক মাথা চুল পেছনে ছোট একটা ঝুঁটি করে বাঁধা। , ঘন নীল চোখের মণি   রোমান্টিক কথাবার্তায় খুব ইন্টেলিজেন্ট ধরনের ২১ বছরের ছেলে তখন সে । মিলানের প্রেমে আমিই পড়েছিলাম  বড়োলোক বাড়ির ১৯ বছরের যুবতী মেয়ে নমিতা।

বছর দুয়েকের প্রেম। মিলান খুব সেক্সী আর মুসকুলার ছেলে ছিলো। প্রেমের  একদেড় বছরের  মাথায় আমার সাথে মিলান শারিরীক সম্পর্ক করতে উৎসুক হয়ে উঠেছিল। বারে বারেই সে চাইতো। বোঝাতো শারীরিক সম্পর্কে প্রেমের বন্ধন নাকি স্থায়ীত্ব লাভ করে। ছেলেদের যৌনতা সম্পর্কেও আমারও তখন কৌতহল আর আগ্রহও বেশ ছিলো। যদিও ভয়ও পেতাম খুব । আর সেটা আরো বেড়েছিল একদিন গভীররাতে আমাদের গর্ভধরিনি মাতৃদেবিকেই আমাদের পিসতুতো ভাইয়ের সাথে ,গভীর রাতে ঘুম ভেংগে যেতে ,যা নিজের কানে শুনেছিলাম তাতেই। আমি  কল্পনাও করতে পারিনি যে আমাদের মায়ের সাথেও আমাদেরই পিসতুতো ভাইয়ের এই রকম একটা অবৈধ সম্পর্ক  থাকতে পারে। ওরা মেঝেতে শুয়ে চাপা গলায় ফিসফিস করেই কথা বলছিল। ওরা নিজেদের নিয়ে এতটাই মশগুল ছিলো যে আমি যে ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে পারি সেটা ধারনাই করতে পারেনি। অন্ধকারে মশারির ভেতর দিয়ে দুটো অবয়ব অস্পষ্ট ভাবে দেখা গেলেও ওদের ফিসফিস করে কথা আমি শুনতে পাচ্ছিলাম বিছানায় শুয়ে।  আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম সে রাতে । আমার মাতৃদেবি আমার পিসতুতো ভাইকে খুবই আদর করছিলেন। এই কথা আমি আজ পর্যন্ত কাউকেই বলিনি। 

 

যাই হোক।  মিলানের কাছে আমি কিন্ত ধরা দিয়েছিলাম একরকম বাধ্য হয়েই একদিন দুপুরে ওর চাহিদার জন্য। মিলানের গ্লসি ফর্সা চামড়ার নগ্ন শরীরটা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছিল। একজন যুবক পুরুষের নগ্নতাও যে এত সুন্দর হয় ভাবিনি আগে কখনো । মিলানও প্রথম পূর্ন নারীশরীর নাকি আমার কাছেই দেখেছিল। আমার সত্যিই খুবই লজ্জা করেছিল মিলানের কোলে সম্পূর্ন ভাবে নগ্না অবস্থায় উঠে। আমি একদমই উঠতে চাইনি। মিলান নিজেই আমাকে দুই হাত দিয়ে ওর কোলে তুলে নিয়েছিল সামান্য জোর করেই। যা পেশীবহুল শরীর মিলানের ছিলো। ওর কাছে যেনো বাচ্চা একটা মেয়ে আমি। মিলান আমাকে ওর কোলে নিয়েই হেঁটে গিয়ে ওর রুমের আলমিরার সাথে লাগানো আয়নার সামনে দাড়িয়েছিল। আমি আমাদের দুজনের প্রতিবিম্ব এক ঝলক দেখেই লজ্জায় মিলানের চওড়া কাধে মাথা মুখ গুঁজে রেখেছিলাম দু চোখ বন্ধ করে। কিছুতেই দেখতে চাইছিলাম না আয়নায় আমাদের দুজনের নগ্ন প্রতিবিম্ব। মিলান সামান্য জোর খাটিয়েই আমার গুঁজে রাখা মুখটা ওর কাঁধ থেকে তুলে ধরে দেখতে বাধ্য করেছিলো। দেখবনা দেখবনা করেও দেখেছিলাম একজন ২০ বছরের ডাগর পূর্ণযুবতী সম্পূর্ন নগ্না অবস্থায় একজন ২২ বছরের ফরাসী পূর্ণ নগ্ন যুবকের কোলে, তার লম্বা লম্বা দুই পা দিয়ে শক্ত করে কোমড় আর দুই হাত দিয়ে ছেলেটির গলা জড়িয়ে ধরে । অদ্ভুত একটা নেশা লেগেছিল আমাদের সেই প্রতিবিম্ব দেখে। এরকমটা আমার কল্পনাতেও ছিলো না। এরপরে প্রায়  দেড় ঘন্টা যে কোথাদিয়ে কখন যে কেটে গেছিলো কে জানে। না মিলান আমার কথা রেখে সঙ্গম করা থেকেই শুধু বিরত ছিল। তবে আমি সেদিন প্রথম মেয়েদের এগারো রকমের অর্গ্যাজম এরই স্বাদ পেয়েছিলাম। সেটা একটা অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি আর সত্যিই স্বর্গসুখ। বলে বোঝানো সম্ভব নয়। একমাত্র মহিলারাই জানে। তবে মিলানের উত্তেজিত অবস্থায়ও ছোটই ছিলো সেইটা। এতে আমি একটু আশ্চর্যও হয়েছিলাম। ফরাসী ছেলেদের সম্বন্ধে মেয়েদের যে ধারণা থাকে সেটা কিন্ত মিলান ছিলো না। মিলান বলেছিল ছোটবেলা থেকেই নাকি সে এই রকমই। মিলানের সাথে আমার প্রেম দ্বিতীয় বছরের মাঝের দিকেই শেষ হয়ে যায়। মিলানের ফ্রান্সের বাড়ি থেকে একটা জরুরী  তারবার্তা বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটির অফিসে আসে যে মিলানের মা বাবা এবং একমাত্র বোনের ফ্রান্সের একটা জনবহুল রোডে গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে হয়েছে এবং তাতে মিলানের বাবা আর বড়ো বোন স্পট ডেড । দ্রুত মিলানকে ফিরতে বলা হয়েছে ফ্রান্সে। মিলানের পরিবারের ওনাদের ফুনেরাল ( অন্তিম যাত্রা) তার ফ্রান্সে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে। মিলনের মাও হাসপতালে ভর্তি রয়েছেন। ক্রিটিক্যাল অবস্থা ওনারও। মিলান শোকে খুবই ভেঙে পড়েছিল সংবাদটা পেয়ে। কোনো রকমে বিধ্বস্ত এক অবস্থায় মিলান ফ্রান্সে যাত্রা করেছিল কোলকাতার বিমান ধরে। বিশ্বভারতীর কর্তীপক্ষই ব্যবস্থা করেছিল মিলানের ফ্রান্সে ফেরার সব কিছুই। সেটাই ছিল আমার মিলানের সাথে শেষ দেখা। কেনো জানিনা মিলান আর কেনোদিন ফিরে আসেনি শান্তিনিকেতনের ওর ভাড়া করা সিঙ্গেল রুমে। ফোন করলেও সে ফোন ধরতো না। হয় রিং হয়ে যেত নয় ও রিংটা কেটে দিত। ওকে অভিমানের চিঠি অনেক গুলোই লিখেছিলাম । তার  উত্তরও দিত না। এর পরে অনেক গুলো মাস কেটে গেছিলো।  মিলানের দূরসম্পর্কের এক জন আমাকে ছোট একটা চিঠি লিখে জানিয়েছিল মিলান শেষ পর্যন্ত মানসিক ডিপ্রেসন গিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। নিজের কপালে নিজেদের লাইসেন্সের রিভলভার থেকেই গুলি করেছিল সে ,একটা সুইসাইড নোট লিখে রেখে। মিলানের ডায়েরীতে  আমার নাম ঠিকানা দেখে সংবাদ সে আমাকে জানাচ্ছে। কোনো নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু যে কি ভাবে একজন যুবকের মধ্যেও ডিপ্রেসন তৈরি করে আর তার পরিণামও যে কি ভয়ঙ্কর হয় মিলানকে দিয়েই আমার সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।

 

বিশ্বভারতী থেকে ফরাসী সাহিত্যে গ্রাজুয়েট হয়ে বেরোবার পরে আমার পরিবার থেকে আমার বিয়ের জন্য তোরজোড় শুরু হয়ে গেছিলো। মিলানের ব্যাপারটা  কেউই জানতোনা  আমার পরিবারের। ইচ্ছে করেই কাউকেই জানাইনি আমি। কিই বা হতো জানিয়ে? মিলানতো  ফ্রান্সে গিয়েই আত্মহত্যা করেছিলো। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছিলাম। আমার তখন ২২ বছর। আমার মনের ইচ্ছে ছিলো কোনো  সুদর্শন ডাক্তারকে বা ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করবো। বাড়ীর লোকজনকে আমার  সেই মনের ইচ্ছাটা জানিয়েছিলামও। কিন্তু জন্ম মৃত্যু আর বিবাহ নাকি বিধাতার হাতেই থাকে। জন্মের সময়ই বিধাতা  নাকি সেটা কপালে লিখে দেন।   অনেকরকম  আলাপ এলেও কোনো ইন্জিনিয়ার বা কোনো ডাক্তার পাত্রের আলাপ জোটেনি আমার কপালে। যদিও কাগজের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিলো যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বা  সরকারী অফিসারের প্রাধান্য থাকবে । যদি একজনও আসতো আমার জন্যে আমি হয়তো তার সাথেই বিয়ে করব বলে জেদ ধরে থাকতাম। আমারই ভাগ্য। সোদপূরের এই বাড়িতেই বিয়ে  হতে হলো আমার। প্রথমে  অবশ্য বেকে বসেছিলাম এই পাত্রকে বিয়ে করতে। পাত্র আমার চেয়ে ১৭ বছরের বড় আমার থেকে আর বিপত্নীক। বছর চারেক আগে তার স্ত্রী মারা গেছিলেন ব্রেইনে ইনফেকশন হয়ে। কোনো সন্তান ছিলো না তাদের। যৌথ পরিবার। একটি বড় ননদ। তারও বিয়ে হয়ে গেছিলো । এক বছরের ছোট একটা ছেলে ননদের। বাড়ীতে শুধু একজন দেওর  আর শ্বশুর শ্বাশুড়ি। উনি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে ভালো উচু পদেই চাকুরী করতেন ।  দেওরের সোদপুরে বড় কাপড়ের দোকান। বেশ সচ্ছল পরিবার। আর সেই সময়ে মেয়েদের মতামতকে তেমন গুরুত্ব দেয়াও হতো না। পরিবারের সর্বসম্মত মতই গুরুত্ব পেত। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো। আমাদের দুজনের কুষ্ঠি মেলানো হয়েছিলো আমাদের পরিবারের এবং আমাদের গহনার দোকানের বহুদিনের জ্যোতিষীকে দিয়েই। রাজযোটক ছিলাম নাকি আমরা । 

….

 

আমার স্বামীর হঠাৎ করেই মাত্র ৫২ বছর বয়েসে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াটা,আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়াটা আমি সত্যি সত্যিই মনের থেকে যে একবারেই মেনে নিতে পারিনি। অমন জলজ্যান্ত মানুষটা, যে নাকি রোজকার মত আমারই পরিবেশন করা দুপুরের খাবার খেয়ে, বারান্দায় কাগজ পড়তেপড়তে  ওনার শরীর সামান্য একটু খারাপ লাগছে বলে চৌকিতে এসে শুয়ে, হঠাৎ করেই যে একেবারেই আমাদের সকলের জীবন থেকে চলে যাবে, এটা কি খুব সহজে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলো আমার পক্ষে? একদমই ছিলো না। আমি সদ্য ডাক্তারি পাস করা রাকেশ ডাক্তারকেই এর জন্য দোষী সাজিয়েছিলাম নিজের মনে। বাড়ীর সকলেও সেটাই বলেছিলো যে ওর চিকিৎসাতে নিশ্চয় কোনো ভুল ভ্রান্তি ছিলো। সেদিনের বাচ্চা ছেলে। সেদিন সবে ডাক্তারী পাশ করে চেম্বার খুলে বসেছে। তার ওপরে আমার স্বামির পুরোটা  ভরসা করা একদমই উচিৎ হয় নি। এতো দিনের সুধীর ডাক্তারের দেওয়া ওষুধও চেঞ্জ করে রাকেশ ডাক্তার ওনাকে নতুন ওষুধ দিয়েছিল সে ডায়েবেটিস আর ব্লাড প্রেসার এর জন্য। আমার সাথে আগে রাকেশ ডাক্তারের পরিচয় তেমন একটা ছিলো না। পাড়ায়  কানাঘুষোতে শুনেছিলাম যে  পাড়াতেই রাকেশ, ডাক্তার হয়ে এসে একটা নতুন চেম্বার করেছে আর আমার স্বামী দেবতাটিও ওর কাছে চিকিৎসা করাচ্ছেন এতদিনের সুধীর ডাক্তারকে ছেড়ে দিয়ে। জানতে পারে না করেছিলাম ওনাকে ।  শোনেননি উনি। 

বিবাহিত জীবনে আমি কিন্ত সত্যিই খুবই সুখী এক গৃহবধু ছিলাম। আমাদের দাম্পত্য জীবনও বড় সুখের ছিলো।  যদিও আমার স্বামী আমার চেয়ে ১৭ বছরের বড় ছিলেন , আমি দুই সন্তানের মা হয়েছিলাম তবুও আমাদের বিবাহিত যৌণজীবনও কিন্তু স্বাভাবিক ছিলো। সপ্তাহে দুই থেকে চার দিন আমরা মিলিত হতামই । উনিও আমাকে খুবই ভালোবাসতেন এবং আমাকে সুখী রাখার চেষ্টা করতেন। আমার শরীর ও মন দুয়ের চাহিদার  উনি খেয়াল রাখতেন। আমার ভেতরে মিলন বা শৃঙ্গারের ইচ্ছেটা  আমার বয়সী সাধারণ মহিলাদের থেকে একটু বেশীই  যে ছিলো সেটাও উনি বুঝতেন এবং  মেনেও নিয়েছিলেন সেটা । তাই গভীর রাতে আমাদের দুই ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে উনি সেটাকে মেটানোর চেষ্টাও করতেন  আমাকে নানা রকম শৃঙ্গার করে, আমাকে আদর করে, পরে রমন করে।  আমাদের সংসারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও বেশ  ভালো ছিলো । এছাড়াও প্রতি বছরে দুই থেকে তিনবার আমাকে আর ছেলেদের নিয়ে উনি কোলকাতার বাইরে ঘুরতেও নিয়ে যেতেন। আমার বাপের বাড়িতে আমার ইচ্ছে মতন যাওয়া আসাও ছিলো। আমার স্বামী খুব আমুদে মানুষও ছিলেন। নানা রকম পদে সাজিয়ে খেতেও ভালোবাসতেন। আমাকে ভালোও বাসতেন খুবই। আমার শ্বশুড়, দেওর, জা এরাও আমাকে ভালোবাসতেন।  এখনও খুবই ভালো বাসেন ওরা। আমার দুই ছেলেকেও ওনারা ভালোবাসেন। ওদের প্রাণ আমার ছেলে দুটো । আমার দেওর, জা শম্পা আমাকে শ্রধ্যাও করে।  আমার শ্বাশুড়ি যতদিন বেঁচে ছিলেন উনি  আমাকে একেবারেই নিজের মেয়ের মতই দেখতেন। আমার বাপের বাড়ির সাথে ও আমার স্বামী আর এই পরিবারের সকলের সাথে ভালবাসা আর হৃদ্যতা রয়েছে।  আমার বাপের বাড়ির লোকজন ও আমাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই যাতায়াত ছিলো। সেটাও কিন্ত আমার স্বামীর জন্যি হয়েছিলো। এই রকম শ্বশুরবাড়ি আর স্বামী পাওয়া যে কোনো মহিলার জন্য তখনকার দিনে সৌভাগ্যেরই ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমার স্বামী সোহাগিনি বেশীদিন হবার ভাগ্যই ছিলো না বোধ করি। কি যে  ছাই আমাদের দোকানের বহুদিনের জ্যোতিষী দাদু , আমাদের দুই জনের কুষ্ঠী মিলিয়ে দেখেছিলেন একমাত্র তিনিই জানেন। 

ওনার মৃত্যুরপর  থেকেই জীবনটা আমার কাছে বিশাল এক শূন্যতায় ভরে গেছিলো। তবুও যে মানুষগুলো থেকে যায় তাদেরকে তো বাঁচতেই হয়। তাকে সবকিছু ভুলে রোজকার সংসারের যাবতীয় কাজে নামতেও হয়।  বেঁচে থাকতে গেলে বাজারহাট  দোকান করতে হয়, খেতে হয়, বাথরুম ,পায়খানা, স্নান ও করতে হয়। মেয়েদেরকে, স্ত্রীদের সংসারও সামলাতে হয়। ছেলেমেয়েকে একার হাতেই মানুষ করবার দায়দায়িত্ব তুলে নিতে হয়।  টাকাপয়সার রোজগারের ব্যবস্থা করতে হয় বা বুঝে নিতে হয়। পরলৌকিক কাজকর্ম  শেষহবার আগে আর যত দিন বাপের আর শ্বশুড় বাড়ির আত্মীয়স্বজনরা ছিলো ততদিন ওনার অনুপস্থিতি আমাদের সংসারে তেমন ভাবে টের পাই নি। শুধু  দেওয়ালে ওনার ছবিতে রোজ সকালে ফুলের মালা আর চন্দনের ফোঁটা পোড়ানোর সময় মনের ভেতরে হু হূ করে উঠতো। উনি যে আর নেই সেটা অনুভব করতে পারতাম। চোখের কোনায় জল আসতো। সেটাও গোপন করতে হত নাবালক ছেলেদুটোর কথা ভেবে। কিন্তু টের পাইনি মেয়েদের  বিধবা জীবনটা কেমন  হতে পারে এই বয়সে । সাদা থানের  ব্লাউজ, কাপড়,  শাখা পলা চুড়ি হীন শূন্য দুই হাত, মাথায় সিঁদুর ছাড়া, মাছ, ডিম পেঁয়াজ, রসুন ছাড়া রান্না, আতপ চালের ভাত খাওয়া এগুলো না হয় আস্তে আস্তে সয়ে যাচ্ছিলো। অভ্যস্তও হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু রাতে ঘুমোতে এসে বিছানায় আমার পাশের জায়গাটা যে  একবারেই শুন্য হয়ে গেছিলো। সে এক বিশাল রকমের শুন্যতা। বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ছেলে দুটো ঘুমিয়ে পড়লে আমার দুইহাত একটা লোককে খুঁজে পেতে চাইতো যার হাতের টানে, তার বুকে মাথা রেখে, আদর খেতে অভ্যস্ত ছিল আমার এই ৩৬ -৩৭ বছরের শরীরটা। ঘুমোবার আগে, দুজনেরই ভালো লাগার, তৃপ্তির মিলিত মৃদু চুম্বনের শব্দ ওঠার পরে আপনা আপনিই চোখে ঘুম লেগে আসতো আমার । উনিও মৃদু হেসে মাঝে মধ্যে বলতেন ” নমিতা তুমি না আবারও মা হয়ে যাও”! আমি বলতাম “ক্ষতি কিগো। এবারে যদি একটা মেয়ে হয় আমাদের?” “আমি ওকে ঠিক ডাক্তার করবো জানতো” উনি হাসতেন…বলতেন রঞ্জিতএর এখনও কিছু হলো না। ….পাঁচ বছর হয়ে গেলো। …ডাক্তারও দেখায় না কেনো যে ওরা…..। 

আমার ভেতরে যত দিন,মাস পার হতে লাগলো রাতেরবেলায় যৌণ স্টিমুলেশন হতে শুরু করত। আমার শরীরটা উন্মুখ হয়ে উঠত একজন পুরুষের হাতের নিষ্পেষণ পেতে। দাতে দাঁত চেপে নিজেকে কন্ট্রোল করবার চেষ্টা করতাম। অনেকক্ষণ ধরে কৃষ্ণ নাম জপ করতাম যদি একটু ঘুম আসে। পাশেই দুই ছেলে ঘুমোয়। আমি বিছানায় কেবল এপাশ আর ওপাশ করতাম। কত চেষ্টা  যে করতাম যদি বা একটু ঘুম আসে। কি যে কষ্ট হত বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ভোর রাতের দিকে চোখে ঘুমটা লেগে আসতো। দিনের পর দিন রাতে ঠিক মত ঘুম না হলে শরীরটা কেমন যেনো খারাপ লাগে, মেজাজ ভালো থাকে না, শরীরও চলতে চায় না। দুপুরে অবশ্য ঘুমিয়ে পড়তাম চৌকিতে দুপুরের খাবার পরে। শরীরটা পুষিয়ে নিত রাতের অনিদ্রা। 

আর এর সুযোগটাই নিয়েছিল এক রাতে আমার বড় ননদের ( লিলাদীর ) ১৫ বছরের ছেলেটা । আমার ননদের একটাই ছেলে ।  ডাক নাম তার ঋষি। অসম্ভব ভাবেই পাজি, দুষ্টু , আর ফাজিল 

স্বভাবের ছেলে ছিলো এই ঋষি । হাওড়ার জেলা স্কুলে পডত সে। প্রতিবারই ক্লাসে প্রথম হয়ে পরের ক্লাসে ওঠে। এর জন্য ওর মা বাবা( আমার ননদ ,নন্দাই,) ,মামা মামী ( আমার স্বামী, দেওর, জা ,) দাদুর ( আমার শ্বশুড়) সবার  নাকি  খুবগর্ব হয় ওকে নিয়ে । প্রায়সময়ই  সে সকলের সাথেই  নানারকম ইয়ারকী আর ফাজলামি মারে ,এমন কি আমার সাথেও  সময় সময় ইয়ার্কি মারত । আর সকলের আদর আর অস্কারাতে  সে একটা বাদরও তৈরী হচ্ছিলো দিনদিন। কিন্ত তাকে কিছুই বলবার উপায় ছিলো না কারুর। 

এর জন্য যে কে সত্যিই দায়ী আমি সেটা বলতে পারবো না। আপনারাই না হয় বিচার করবেন। আপনাদের ওপরেই না হয় ছেড়ে দিলাম বিচারের ভারটা। আমার স্বামীর হঠাৎ করেই মৃত্যুর পর, তখন চার পাঁচ মাস কেটে গেছিলো আমার বৈধব্য জীবনের । আমি তখন সিলিকন রাবারের ব্যাটারি চালিত ভাইব্রেটর ডিভাইসটা ব্যবহার করতে শুরু করেই দিয়েছিলাম ,আমার নিজের বড়দি আর মেজো বৌদির উপদেশে অনুসারেই। আমি আমার শরীরের মধ্যে চাহিদা যে বেড়ে যাচ্ছিলো, এতে আমার শারীরিক  যে অসুবিধে হচ্ছিলো , অনিদ্রা ও মানসিক প্রবলেমগুলো  আমার মেজো বৌদির সাথে একদিন বাধ্য হয়েই শেয়ার করেছিলাম ,বোলপুরে গেলে। মেজোবৌদি  সেটা আবার আমার বড়দিকেও বলেছিলো। তারাই আমাকে বলেছিলো এই ভাইব্রেটর এর ব্যাপারে। আমি ভাইব্রেটর ব্যাপারে  আগে তেমন কিছুই একটা জানতাম না।  সত্যিই বলছি প্রথমে প্রথমে খুবই সংকোচ হতো এটাকে ব্যাবহার করতে । কিন্তু যখন আমি  আমার মানষিক অবসাদ, যৌণ চাহিদার ও আমার শারিরীক চাহিদার কাছে  মানষিক যুদ্ধে হেরে গিয়ে সম্পূর্ন ভাবেই অসহায় বোধ করতাম, কিছুতেই  রাতে ঘুমোতে পারতাম না, আমার ছেলে দুটো ঘুমিয়ে পড়লে, মশারির বাইরে বেড়িয়ে এসে ,অন্ধকারেই মেঝেতে নেমে আধশোয়া  হয়ে ব্যাবহার করতাম । এতে আমার যে  কি অসম্ভব আর তীব্র সুখ হতো আর  বড় অর্গ্যাজমটা বার কয়েক  হয়ে গেলে পরে সেই সুখ আর ক্লান্তিতে খুব ভালো ঘুমও হতো। ভাইব্রেটরটা কিন্তু আমার মেজবৌদিই আমাকে কিনে গোপনে উপহার দিয়েছিল আমার প্রবলেম,অসহায়তার কথা, অনিদ্রার কথা শুনে। আমার বড়দিও শুনেছিল আমার সেই অসহায় অবস্থার কথা এবং সেও বলেছিল ভাইব্রেটর নাকি আজকাল সিঙ্গেল মহিলারা প্রায়ই ব্যবহার করেন পৃথিবীশুদ্ধ এবং এটা নাকি  খুবই সেফ। এর কোনো রকম সাইড এফেক্ট নেই, ব্যবহারের পরে পরিষ্কার করে রাখলে। আর রোজ ব্যাবহার না করতে। যখন আর কিছুতেই পারবো না একমাত্র তখনই যেনো ব্যবহার করি। আমি  তো সেটাই  করতাম। ব্যবহারের পর, লুকিয়ে বাথরুমে গিয়ে , সাবান দিয়েই ধুয়ে এনে  নিজের আলমারিতে শাড়ির ভাজের  ভেতরে লুকিয়ে রাখতাম যাতে বাড়ির কেউই টের না পায়। বাড়ির কেউই  তাই জানতোও না সেটা।

আমার বড় ননদ লীলাদিদি আমাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই ঋষিকে নিয়েই আসত  বা সাথে কখনো আমার ননদাই ও আসতেন ।  ননদাই রাতে না থাকলেও দিদি আর ঋষি দু, তিন, চার দিন কাটিয়ে যেতো মামার বাড়িতে। সেবার ও ঋষি এসেছিল।  ঋষিকে আমার ঘরের বিছানায় শুতে তার মা বলেছিল আমার সামনেই । আমারও তো আপত্তির কিছুই ছিলো না। আগেও ছোট থাকতে, আমার স্বামী বেঁচে থাকতে, ঋষি মামার বাড়িতে এলে আমাদের ঘরে বড় চৌকির বিছানাতে  ওর মামাতো ভাইদের সাথেও মাঝে মধ্যে ঘুমোতো। আমার স্বামী সেদিন মেঝেতে বিছানা করে  শুতেন।  বেশির ভাগ সময়ই সে তার দাদুর সাথে, আমার শ্বশুড়মশাই এর ঘরে ঘুমোতে পছন্দ করত।  ঋষি বড় হয়েছে এখন। কিশোর থেকে যৌবনের দরজায় তখন । যাই হোক সেদিন  রাতে সকলের খাবার হয়ে গেলে, নিজের খাবার শেষ করে,  রান্নাঘরের সব কাজকর্ম সেরে, কলঘরে স্নান সেরে, কাপড়চোপড় চেঞ্জ করে , যখন আমি আমার ঘরে  শুতে এসেছিলাম তখন চৌকির বিছানায় মশারির ভেতরে আমার দুই ছেলে আর ঋষি  ঘুমিয়ে পড়েছে । আমি দরজায় খিল তুলে, মাঝের দরজায় সিতকানি তুলে, ঘরের আলোটা  নিভিয়ে ঋষির পাশের বালিশে শুয়েছিলাম। খোলা জানালা দিয়ে, বাইরের ল্যাম্প পোস্টের আলো ঘরে আসছিলো। ঘুমোবার জন্য চেষ্টা রোজ যেমন করি সেটাই  করছিলাম। কিছুক্ষণ কৃষ্ণ নাম জপ করি রোজ চোখ বুজে। তারপরে ব্যাক কাউন্ট ১০০০ থেকে।  কিন্তু চোখে  ঘুম আসছিল না। খালি এপাশ আর ওপাশ করছিলাম । মাঝে মধ্যেই ঋষি তার ঘুমের মধ্যেই আমার দিকে পাস ফিরে শুলে আমার শরীরের ওপরে তার হাত এসে পড়ছিলো। আমাকে  ওর হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতেও চাইছিল কখনও কখনও । আমিও  ঘুমন্ত ঋষির হাত  আমার শরীরের থেকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম বারে বারেই। কিছুক্ষণ শান্ত ভাবে ঘুমের মধ্যেই আবারও আমার ব্লাউজের ওপরে আলগোছে ওর  হাত পড়ছিলো । আমি নিজেই  বুঝতে পারছিলাম আমার উপোষী শরীরের ভেতরে স্টিমুলেশন শুরু হচ্ছে। প্রায় পাঁচ মাস পরে একজন কিশোর বা সদ্য যৌবনে পা দিতে চলেছে একজন পুরুষ আমার উপোষী শরীরের পাশে শুয়ে।  আমার  স্টিমুলেশন  হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল নাকি ? আর আমার ভেতরের  ইচ্ছেটাকে আমি তো ভালো ভাবেই চিনতাম । আমি নিজেই নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিয়েছিলাম ” কি সব আজে বাজে  আমি চিন্তা করছি?  তাও কিনা  ঋষিকে নিয়ে? যাকে আমি আমার বিয়ের সময় এক  দেড় বছরের একটা শিশু হিসাবে দেখেছি। তাকে কোলে নিয়েছি। ” আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো? আমি কিন্ত  তখনও ভাবতেই পারিনি যে ঋষি ইচ্ছে করেই গভীর ঘুমের ভান করেই এইসব কান্ডগুলো  করছিলো। একসময় আমার ভেতরে  আমার সুস্মামাকান্ড বেয়ে অসম্ভব ভাবে স্টিমুলেশন উঠতে শুরু করেছিল আমার ব্রেনের ভেতরে। আমার ব্রেইন থেকেও সেক্স স্টিমুলেশন হরমোন নিঃসৃত হতে শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতিটা আমার হাতের বাইরে চলে যেতেই পারে ভেবে ভয়ও পেয়েছিলাম। আমার ভেতরে মৃদু ঢেউ উঠতে শুরু হতেই আমি  খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম । আমি  চাপা মৃদু গলায় ঋষি কে ধমক দিয়েছিলাম  “ঠিক করে শুয়ে ঘুমো ঋষি। সরে শো? কি হচ্ছে এসব?  ” 

 বিশ্বাস করুন আপনারা  ঋষির সাথে এইসব হোক আমি  কিন্তু একটুও চাই নি।  ঋষি কিন্তু নাছোড়বান্দার মতো  আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করেছিল। আমার শরীরের ইতিউতি হাত দিয়ে আদর করতেও লাগল। আমার গালে, ঠোঁটে, মুখে  , চোখের পাতায় মৃদু চমু দিতেও শুরু করেছিল। আমি  নিজেকে ঋষির হাত থেকে ছাড়াবার যথেষ্ট চেষ্টা করেও বারে বারেই ব্যর্থ হয়েছিলাম। একসময় দুজনেই চৌকির বিছানায় মশারির ভেতরে মুখোমুখি উঠে বসে আলোঅন্ধকারেই দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষ্মণ। আমি তখন রীতিমত হাপাচ্ছিলাম। ঘন ঘন নিশ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছিলাম। ঋষি আমাকে আমার হাতধরে টেনে ওর কোলের  ওপরে বসাতে চাইছিলো।  এতে আমি ঋষির গালে  কষে কষে দু চারটে থাপ্পরও ঠাসঠাস করে মেরেছিলাম। আমার তখন  ভীষণ ভয় হচ্ছিল যদি আমার ছেলে দুটো হঠাৎ জেগে যায় এইসবে?  আমার গলা পেয়ে যদি পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা শ্বশুরমশাই ঘুম থেকে জেগে যান?  যদি আমার ননদ জানতে পারে এর একবিন্দুও ? যদি ঋষি নিজেই সব কিছু বলে দেয় আমার ননদকে?  কি জবাব দেবো তখন আমি ? আমি তো জানতাম ,কেউই কিন্তু ঋষিকে  কোনো দোষই দেবে না। সব দোষই তখন আমারই হবে। সদ্য বিধবা মেয়ে মানুষ না আমি!  এদিকে আমার হাতে নিজের গালে থাপ্পর খেয়ে ঋষি  যেনো আরো মারাত্বক হয়ে উঠেছিল। আমার শরীরের কোমল আর স্পর্শকাতর অংশে বারে বারে হাত দিতে চাইছিলো। আমার গালে নিশব্দে চুমু খাচ্ছিল। আমাকে আদর করছিলো।  আমার কোনোরকম বাধাই সে মানছিল না। আমার ভেতরে ও ঘুমিয়ে থাকা পাঁচমাসের উপোষী, ক্ষুধার্ত, এক  বাঘিনীকে জাগিয়ে তুলেছিল। একসময় জোর করেই আমার ঠোটে ওর ঠোঁট  দিয়ে চেপে ধরেছিল। ১৫ বছরের ছেলের গায়ে সেকি প্রচন্ড শক্তি। আমি নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারিনি। আমি কোনো রকমই শব্দ করতে পারছিলাম না। আমি নিশ্বাস নিতেও পারছিলাম না।  আমার সমস্ত শক্তি ঋষি সুষে নিচ্ছিলো যেনো। ও আমার পড়নের কাপড়চোপড়  আমার জঙ্ঘার কাছে বারে বারেই টেনে তুলে আনছিল। আমিও বারে বারে চেষ্টা করেও নিজেকে আবৃত করে  ধরে রাখতে পারিনি। তবুও আমি চাপা গলায় কাতর ভাবে ওকে নিষেধ করেছিলাম। অবাকই হয়েছিলাম , ১৫ বছরের ছেলেটা রতিশৃঙ্গারে এমনভাবে পটু হয়েছিলো কি ভাবে? কে শেখালো তাকে এইসব? তবে কি ঋষি আগেও…..? কি করে সম্ভব সেটা….?। স্কুলের ফার্স্ট হওয়া ছেলে… মাত্র ১৫ বছর বয়েস ওর…. এরই মধ্যে..…আমি আর  সত্যিই  ঋষির সাথে পেরে উঠছিলাম না। কাকেই  বা ডাকব? সবাই তো ঘুমোচ্ছে। এদিকে আমার  উপোষী শরীরটাও যে জেগে উঠেছিলো ততোক্ষণে টের পাচ্ছিলাম। ও যখন ওর দু হাতে আমার দুই হাঁটু চিরে, জঙ্ঘা ফাঁক করে  সেখানে ওর নাক মুখ  ঘষতে শুরু করেছিলো আমার পাঁচ মাসের  উপোষী শরীরটা কেমন যেনো হঠাৎই হাল্কা হয়ে গেছিলো। আমি আমার  দু হাতের দশ আঙুলে ওর মাথার চুল খামচে ধরে ওকে  সেখান থেকে টেনে তুলে ঠেলে সরাতে চেয়েও পারিনি। পারিনি না পারতে চাই নি? সেটা সত্যিই বলতে পারবো না। আমার মুখের থেকে উদ্গাত শীৎকার আমার মাথার বালিশ চাপা দিয়ে কোনো ভাবে আটকেছিলাম। আমার সমস্ত শরীরটা ধনুকের ছিলার মত বেকে যাচ্ছিলো বারে বারেই।  ও যেনো কি সব করছিল আমার  সেখানে? যা কিনা আমার স্বামী বেঁচে থাকতে করত? আমার শরীরটা নিচের দিকে একসময় সম্পুর্ন ভাবে অবশ হয়ে গেছিলো। নিচের দিকে ,কোমর থেকে পাএর  পাতা পর্যন্ত নাড়ানোর ক্ষমতা আর ছিলো না। এতো ভারী হয়ে উঠেছিল। মাঝে মধ্যে শুধু  নিজের ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছিলাম আমার ছেলে দুটো ঠিকমত ঘুমিয়ে আছে তো? আমার পাঁচ মাসের উপোষী শরীরটাও  যেনো তৈরী হয়ে উঠছিল একটু একটু করে।  ভেতরে তখন আমার ছোট ছোট ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। একের পরে এক  ঢেউ উঠছিলো তারপরে বড় বড় ঢেউ। জরায়ুটা তলপেটে কেমন যেনো মোচড় দিতে শুরু করেছিল। পেটের ভেতরের চিনচিনে ব্যথাটা টের পেয়েছিলাম। আলোঅন্ধকারে ঋষিকেই হঠাৎ করেই যেনো আমার মৃত স্বামী মনে হয়েছিল? কেনো?  আমার শরীরের ওপরে ওর শরীরটার ভেতর দিয়ে যেনো আমার স্বামীর অশরীরী আত্মা আমার সাথে রমনে যেনো মিলিত হতে চাইছে। এমনটাই মনে হচ্ছিলো। কি ভাবেই  আর বাধা দিতাম তাকে? আমি আমার  ঘুমন্ত ছেলেদুটোকে দেখে নিয়ে মৃদু চাপা গলায় বলেছিলাম ” ঠিক ভাবেই শোও না” 

ঋষি  আমার শরীরের ওপরে । আমি নিজেই আমার দুই জঙ্ঘা ছড়িয়ে দিয়ে ওর মুখের ভেতর আমার পান জর্দা খয়ের খাওয়া  জিভটাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। এরপরে আমি আমার স্বামীর সাথে , ও বেঁচে থাকতে ,ঠিক যে ভাবে শৃঙ্গারে  নিজেকে এবং  ওনাকে আপ্লুত করতাম ,ঋষির সাথেও একই ভাবে শৃঙ্গারে, রতিক্রিয়ায় মেতে উঠেছিলাম। আমি বা ঋষি দুজনেই ভুলেই গিয়েছিলাম আমাদের  বাইরের সামাজিক এবং পারিবারিক সম্পর্কটা । আমাদের বয়েসের পার্থক্য। আমার কাছে যেনো ঋষি তখন  মৃত্যুলোক থেকে ফিরে আসা আমার স্বামীর অশরীরী  আত্মা। ঋষির শরীরটা সেখানে শুধুই একটা মাধ্যম  , যেটাকে আমার মৃত স্বামীর অশরীরী আত্মা ব্যবহার করছেন আমার সাথে মিলিত হতে। ঋষি একসময় আমার তলপেটে  উঠে বসে  বের করে এনেছিলো।  আমার চোখের সামনে সেটা আলো অন্ধকারে ধরেছিল। আমিও তাকিয়ে দেখেছিলাম । আমার গালে , ঠোঁটে, গলায়,  স্পর্শ করিয়েছিল।  ঠিক যেমনটা নাকি আমার স্বামীও করতেন আমাকে শৃঙ্গারের সময়। পূর্ণবয়স্ক এক যুবকের মতই সেটা ।  আমার বিশ্বাস আরো দৃরো হয়েছিল যে ঋষির শরীরের ভেতরেই আমার স্বামীর অশরীরী আত্মা প্রবেশ করেছে তখন।  আমার কষ্ট দেখে হয়ত বা ফিরে এসেছেন ঋষির মাধ্যমে আমার কাছে। অশরীরী আত্মাদের তো একটা কোনো মাধ্যম লাগে পৃথিবীতে ফিরে আসতে। আর ঋষি হচ্ছে সেই  শারিরীক মাধ্যম। আমি হঠাৎ করেই একেবারেই শান্ত হয়ে গেছিলাম। একেবারে শান্ত। ওকে শৃঙ্গার করতে দিয়েছিলাম আমার শরীরকে। ও সঠীক দরজাটা আলো অন্ধকারে আর খুঁজেই পাচ্ছিল না কিছুতেই। আমার স্বামীও  মাঝে মধ্যেই পেতেন না। বারেবারেই ভুল জায়গায় ঢূ মারছিল আর পড়ে যাচ্ছিল স্লিপ করে।  আমার দুই পা একসময় ওর দু কাঁধে তুলে দিয়েছিলাম ঠিক যেমন আমার স্বামীর কাধে তুলে দিতাম। হঠাৎ ওকে দুই হাতে  সজোরে জাপটে ধরে ফিসফিসিয়ে বলেছিলাম ” কি যে করছো না তুমি তখন থেকে,!  ছেলে দুটো উঠে যাবে যে, নিচে যাবে তো চল?”

ঋষি মশারী তুলে মেঝেতে নামলে আমিও উঠে বসে প্রথমেই আমার দুই ছেলের ঘুম পরীক্ষা করেছিলাম ঠেলা দিয়ে । আমারও যে গলা পর্যন্ত তখন সেক্স । ঋষিরও বোধ হয় তর সইছিল না যেনো। দুহাতে আমাকে ধরেই নিচে নামাল। মশারী গুজে দুজনে মুখোমুখি। কয়েকটা সেকেন্ড। এতো জোরে আমি আগে কাউকেই যৌণ আলিঙ্গন করিনি। ঋষি ও আমাকে সজোরেই চেপে ধরেছিলো ওর বুকের সাথে। আমি ঋষির মুখের ওপরে  আমার মুখ চেপে ধরে ততক্ষনে ওর দু ঠোট কামড়ে ধরেছি আমার দু ঠোট দিয়ে। আমার ভেতরের মেয়েলি উত্তেজনা তখন একেবারে তুঙ্গে। ঋষি আমার ডান হাত ওর কোমরের কাছে টেনে নিলে জোরেই চেপে ধরে অস্ফুস্টে বলেছিলাম ” এতোদিন আসনি কেন তুমি? আমার কষ্ট হত যে বুঝতেনা তুমি? জানোনা তোমার আদর না পেলে ঘুম আসেনা আমার? কত দিন রাতে দু চোখের পাতা এক করিনি সেটা কি জানো? ! চলে গেলে কেনো তুমি এভাবে আমাদের ছেড়ে ? কেমন আছো গো সেখানে তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে? তোমার ছেলেদের ও বুঝি তোমার দেখতে ইচ্ছে করে না?  ভীষণ স্বার্থপর গো তুমি ”  আমি তখন প্রায় নিশ্চিত ঋষির শরীরের মধ্যেই আমার স্বামীর  অশরীরী আত্মার প্রবেশ ঘটেছে। বেশ কিছুক্ষন পরে, দুজনে কামনার বড় বড় কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বলেছিলাম “বাথরুম পেলে জানালা দিয়েই না হয় করে নাও। এখন আর বাথরুম যেতে হবে না” 

খালি মেঝেতেই বালিশ পেতে শুয়েছিলাম। ঋষি পাশে এসে শুয়ে আমাকে টেনে ওর বুকের ওপরে তুলে নিয়েছিল। আর কোনো সন্দেহই যে থাকলো না আমার। আমার মৃত স্বামীও যে এটাই করতেন প্রায়ই।

অনেকগুলো মাস পরে আমার সত্যিকারের চরম তৃপ্তি এলো। ফিমেল অর্গ্যাজম । একবার নয়। বার কয়েক। শেষ হতে খুব ঘুম পাচ্ছিল। আমি বাথরুমে নিজেকে পরিষ্কার করে, ঘরে এসে দেখেছিলাম ঋষি মশারির ভেতরে বিছানায় ফের  উঠে শুয়েছে। আমি মেঝেতে শুয়েই অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। গভীর ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছিলাম। 

পরের দিন  সকাল থেকেই আমি খুবই সংকোচ আর মনে মনে ভীষণ ভাবে ভয়েভয়েই সিটিয়ে ছিলাম যদি হঠাৎ ঋষি বাড়ির কাউকে গতকাল রাতের কথা বলে দেয়? যদি কেউ সামান্যতম টের পেয়ে থাকে? কিন্ত অদ্ভুত ভাবেই ঋষির ব্যবহার সকলের সাথে প্রতিদিনের মতই একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। যেনো আগের দিন রাতে কোন রকমই  অস্বভিক  ঘটনাই ঘটেনি আমাদের মধ্যে। আমার ধারে কাছেও সে খুব একটা ঘেঁষেনি সারাদিনে। সকলের মাঝে আমার সাথে দেখা হলেও চুপ করেই থেকেছিলো । বরঞ্চ আমারই ওকে ভীষণই লজ্জা করেছিল আগেররাতে ওর সাথে আমার ব্যবহারের কথা মনে করে। কি করে যে আমি পেরেছিলাম ওইসব কান্ড করতে ওর সাথে কে জানে? কি করে যে  নিজেই গ্রহণ করেছিলাম শেষ পর্যন্ত ১৫ বছরের কিশোর এক ছেলেকে?  গত কাল রাতে ওকে হঠাৎই বা কেনো আমার প্রয়াত স্বামীর অশরীরী আত্মার আমার সাথে মিলিত হতে, মনুষ্যদেহের  এক প্রকাশ মাধ্যম বলে মনে হয়েছিলো? এইসব আমি কি  সত্যিই বিশ্বাস করতাম , অন্য কারুর ক্ষেত্রে ঘটলে ? মানুষ একবার মরে গেলে পৃথীবিতে তার অস্তিত্ব আর না থাকলেও তার আত্মা অমর  কিন্তু। আত্মার নাকি মৃত্যু হয়না। অন্য কোনো  অজানা লোকে, অজানা গ্রহে সেই আত্মা  চলে যায় । মাঝে মধ্যে সেই আত্মা নাকি পরিজনদের মধ্যে ফিরেও আসে।  আত্মাকে প্ল্যানচেট করে নামানো যায় সেটাও জানতাম। প্ল্যানচেট কোনো মানুষের মাধ্যমের মধ্যে সেই আত্মা কথাও বলেছে  নানা রকম প্রশ্নের উত্তর ও নাকি দেয় শুনেছিলাম। সয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর মৃতা কন্যার আত্মা নাকি প্ল্যানচেট করে নামিয়ে কথা বলতেন। প্ল্যানচেট করে মৃত ব্যক্তির  আত্মা নামানোর কথা আরো অনেকের মুখে শুনেছিলাম। সত্যিই কি তাহলে আমার প্রয়াত স্বামীর আত্মা গতকাল রাতে ঋষির শরীরের মধ্যে প্রবেশ করেছিল? কি জানি? ঋষির কি  তাহলে গত কাল রাতের কথা কিছুই মনে নেই সকালে ঘুম ভেংগে জেগে উঠে? সারাদিনের  ঋষিকে দেখেতো তাই মনে হয়েছিল আমার। গতকাল রাতের কোনো কিছু প্রভাব পরেনি ওর ওপরে। নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। 

 

                          অধ্যায় চার

         বদলী এবং জাগুলিয়া প্রাইমারী হেলথ সেন্টার

বারাকপুর হাসপাতালে আমার সন্ধ্যে বেলার এবং রাতের ডিউটি করতে মৌখিক ভাবে অস্বীকার করা নিয়ে অনেক সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারদের মধ্যে ক্ষোভের জন্য হাসপাতালের সুপারিতেন্ডেন্ট ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেসকে চিঠি লেখাতে ঠিক দুর্গা পুজোর আগে হেলথ ডিপার্টমেন্ট থকে , আমার নামে বদলির অর্ডার আসে একটা প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে। জায়গাটার নাম ছিল জাগুলিয়া। এটা উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত জেলার ভেতরে অবস্থিত একটা প্রত্যন্ত গ্রামছিল। সিনেমার নায়ক ছবি বিশ্বাসের  পৈতৃক বাড়ী ছিলো সেখানে। এখনকার জগুলিয়া আর তখনকার জাগুলিয়ার মধ্যে অনেক আকাশ পাতাল পার্থক্য। যেতগেলে সোদপুর থেকে ট্রেনে করে প্রথমে দমদম তারপরে সেখান থেকে আবার  বনগা লাইনের ট্রেন করে বামনগাছি বলে একটা স্টেশন আর তারপর সেখান থেকে প্রায় আধঘন্টা রিক্সা করে তবেই হেলথ সেন্টার। ২৫ বেডের হাসপাতাল ছিলো এটা। সেই সময়ে  বামফ্রন্টের রাজত্ব চলছে পশ্চিমবঙ্গে। হেলথ ডিপার্টমেন্টের মন্ত্রীও তখন একজন ডাক্তার।  ওপর মহলে কয়েক দিন দৌড়াদৌড়ি করেও কোনো লাভই হলো না আমার । কে আর পাত্তা দেয় একজন পাতি মেডিক্যাল অফিসারকে , ঘুষ ছাড়া। আর ঘুষের পরিমাণটাও কম ছিলোনা।  দশ থেকে বিশ  হাজার টাকা। তখন বিশ হাজার টাকা মানে আজকের দিনে প্রায় ৫ লাখ টাকার মত। এতো টাকা পাবো কোথায়? আর ঘুষযে কি ভাবে দিতে হবে বা কাকেই  বা দিতে হবে, কোথায়ই  বা দিতে হবে এগুলোও জানাই ছিলো না। বাবার কথা ছিলো চাকরী যখন তুমি করছো তখন তোমার ট্রান্সফারতো হতেই পারে আর সেটা মেনে নিতেও হবে আমাকে। আর ট্রান্সফারটাতো বাড়ির কাছেই হয়েছে। কয়েক ঘন্টা লাগবে  যেতে আসতে। চাকরীটা ছেড়ে দিতে তাই বাবার বা বাড়ির কারো মত ছিলো না। এর কারন ও ছিলো। আমার প্রাকটিসের ওপরে বাড়ির কেউই ভরসা করতে পারতো না।

তাই একদিন নিজেই গেছিলাম  প্রাইমারী হেলথ সেন্টেরটা  কেমন , কোথায়, সেটা চাক্ষুষ দেখতে জাগুলিয়াতে। সকাল নয়টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে  জাগুলিয়া  হেলথসেন্টার পৌঁছতে পৌনে একটা বাজলো। জগুলিয়ার একটা প্রান্তে ফাঁকা মাঠের মধ্যে হেলথ সেন্টার । একটু দূরেই হাসনাবাদ যাবার ডাবল রেল লাইন।  এর পরে নদী। আর নদীর ওপারেই বাংলাদেশে। দিনে রাতে মিলে  মোট চারটে কয়লার ইঞ্জিনেটানা ট্রেন চলে সেই লাইন দিয়ে। প্রথমেই হাসপাতালের একজন কেরানীবাবু   আমাকে মেডিক্যাল অফিসার ইনচার্জ ডাক্তার লাহার কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার লাহা পুরনোদিনের এলএমএফ ডাক্তার। এই হেলথসেন্টারে প্রায় বারোবছর ধরে নাকি কাজ করছিলেন। ওনার বাড়ি ছিলো দমদমে নাগেরবাজার এর কাছে। উনি আমাকে  যে এখানে  সরকারবাহাদুর পাঠিয়েছেন , আগেই সেই সংবাদটা পেয়ে গেছিলেন উচ্চ মহল থেকে এবং আমার সম্বন্ধে  দেখেছিলাম  উনি ওয়াকিবহাল মোটামুটি। ওনার বয়েস  তখন ৫৫ এর ধারেকাছে। এখানে উনি ওনার স্ত্রীর সাথে সপ্তাহে তিনদিন থাকেন। বাকি তিন দিন কম্পাউন্ডার  বাবুর হাতেই হাসপাতাল ছেড়ে দিয়ে উনি দমদমে চলে যান। উনি আমাকে আলাপ পরিচয়ের পরে প্রথমেই আমার কোয়ার্টার দেখালেন। প্রায় খোলস ছড়ানো তিনটে ঘরের সরকারী কোয়ার্টার। দেখলেই বোঝা যায় অনেকবছর কেউ এই কোয়ার্টারে বসবাস করেনি। উনি বললেন যদি আমি এখানে  সত্যিই জইন করি তাহলে উনি কোয়ার্টারটা চিফ মেডিক্যাল অফিসারকে বলে  মেরামত করে দেবেন। তবে কিছুটা সময়ও লাগবে। আমার বিয়ে হয়েছে কিনা বা আমি  বাড়ির কোনো ফ্যামিলি মেম্বার নিয়ে থাকবো কিনা, আমার সাথে আর কে কে থাকবে সবই জেনে নিলেন। আমাকে জইন করতেই হবে জেনে উনি বলেছিলেন তাহলে একবারে ভাইফোঁটা শেষ করেই যেনো জইন করি। এর মাঝে  উনি আমার কোয়ার্টারটা মোটামুটি ঠিক করে চুনকাম করে রাখবেন। আমাকে নিয়ে উনি প্রথমেই কোয়ার্টারে গেলেন। বিশাল বড় কোয়ার্টারটা । তিন তিনটে বড়ো ঘর, রান্নাঘর, দুটো বাথরুম , সামনে ও পেছনে বারান্দা। উনি বললেন পেছনের বারান্দাতে না যেতে এবং সেদিকের দরজাটা সব সময়ে বন্ধই রাখতে । এখানে নাকি বিষাক্ত কিছু গোসাপ আছে। মাঝে মধ্যে ওনারা কোয়ার্টারে  নাকি ঢুকে পড়তেও পারেন । কোয়ার্টারের  ঘরের রান্নার ঘরের দেওয়ালে অনেক ফাটল ছিলো। কিছু সুইচও খারাপ ছিলো। অনেক পুরনো দিনের লোহার বেড একটা করে প্রতি ঘরে । উনি আশ্বাস দিয়েছিলেন এগুলো সবই চেঞ্জ হয়ে যাবে আমি জইন করলেই। নতুন সব ফার্নিচার এনে দেওয়া হবে স্টোর থেকে। ওনারসাথে  আমার কথা হয়েছিলো যে  প্রতি সপ্তাহের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার আউটডোর করে  দুপুরেই চাইলে আমি বাড়ি চলে যেতে পারি। আবার সোমবারে দুপুরের মধ্যেই হাসপাতালে এলেই চলবে। বৃহস্পতিবার  অবশ্য ডাক্তার লাহা দুপুর বারোটার মধ্যেই হাসপতালে চলে আসেন আর রবিবার বিকেলে চলে যাবেন। তবে মাঝে মধ্যে নাকি চিফ মেডিক্যাল অফিসার সারপ্রাইজ ভিজিট করেন। সেদিনগুলোতে উনি আসবার আগেই চলে আসতে হবে বা থেকে যেতেই হবে সেখানে।  এর পরে উনি আমাকে নিয়ে হাসপাতাল দেখাতে গেলেন। এর মধ্যে অনেকের কাছেই খবর চলে গেছিলো যে নতুন ডাক্তার জইন করতে এসেছে। গ্রামের লোকজন ভিড় করে দেখতে এসেছিলো ডাক্তারকে। আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। যাইহোক হাসপাতালে  দুটো ওয়ার্ড ছিলো। একটা গাইনীর আর ডেলিভারী ওয়ার্ড আর একটা জেনেরাল ওয়ার্ড। অনেকটা দূরে  একটা ঘরে  দুটো বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড।  একটা মর্গ এর ছোট ঘর। একটা মাইনর OT আর লেবার রুম আর একটা বড়  ও পি ডি রুম যেখানে সকালে নয়টা থেকে আউটডোর শুরু হতো চলতো  বেলা দুটো পর্যন্ত আবার বিকেলে ৪ টে থেকে শুরু করে  চলত সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। কোনো প্যাথলজি , বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রো বায়োলজি, USG মেশিন  বা x ray মেশিন ছিলো না , ছিলোনা ইসিজি মেশিন ও। সেগুলোর দরকার হলে হয় প্রাইভেট থেকে নয় বারসাতের ডিস্ট্রিক্ট হাস্পাতাল থেকেই করতে হত রেফার করিয়ে এখানে গাইনী ওয়ার্ডে মোটামুটি ডেলিভারির জন্যি মায়েরা ভর্তি হয় আর মেয়েদের বন্ধত্যার জন্য ligation অপারেশন করবার জন্য । চিফ মেডিক্যাল অফিসারএর অফিস থেকে প্রতি তিন মাসে একটা টার্গেট করে দেওয়া হতো যে বন্ধত্যার জন্য অপারেশন কতগুলো করতে হবে । একটা মাইনর অপারেশন থিয়েটারও আছে। ইথার অ্যানাসথেসিয়া দিয়ে ligation operation করা হয়। শুনেই আমার তো পিলে চমকে উঠেছিল। general বা  spinal  anaesthesia ছাড়াই পেট খোলা হচ্ছে শুনে আমারতো মাথা ঘোরার অবস্থা। আরকি।  কোনো একজন নার্স বা জেনেরাল ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট( GDA ) বা কম্পাউন্ডারবাবু  নাকি নাকে ইথার ঢেলে অজ্ঞান করে । আর ডাক্তার অপারেশন করে । নার্স  নামে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ডাক্তারের সেই অপারেশনে। গাইনী ওয়ার্ডের ১০ টা বেড আর জেনেরাল ওয়ার্ডে ১৫ টা বেড। যাই হোক বিকেল তিনটে নাগাদ হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে বাড়ি পৌঁছেছিলাম সন্ধ্যে ছয়টা নাগাদ। সাতটায়  আবার চেম্বার খোলার তাড়া ছিলো।  রাতে বাড়ির সবাইকে বলতে সবাই রাজি হয়ে গেলো যে পালা করে প্রতি সপ্তাহের তিন দিন আমার সাথে থেকে আসবে  যদি  আমাকে সেখানে জইন করতেই হয় শেষ পর্যন্ত। তবে মেজো ভাই, তৃতীয় ভাই আর চতুর্থ ভাইরা আর বোন পারবে না। কেনোনা তাদের চাকরি  বা  কুকমি মসলার ব্যাবসা বা স্কুল বা কলেজে এগুলো আছে। রইলো মা, বাবা, দশ বছরের ছোট ভাই দুটো ।

যাই হোক ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই ব্যারাকপুরের সাব ডিভিশনাল হাসপাতাল থেকে আমাকে ডিউটি থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছিলো। মহাপাত্রদা ছাড়া আরও দু একজন ডাক্তার ও গাইনী ওয়ার্ডের সবাই এসেছিলেন আমাকে বিদায় জানাতে। সার্ভিস বুক ,রিলিজ অর্ডার আর লাস্ট পে সার্টিফিকেট ইত্যাদি নিয়ে আমি জইন করেছিলাম। সঙ্গে আমার বাবা গেছিলেন আমাকে রেখে আসতে। একটা বড় ভিআইপি গোলাপি সুটকেসে আমার জামা কাপড় , হ্যারিসন এর মেডিসিন বই আর এমসিকু বই নিয়ে গেছিলাম। এখানে জইন করবার দিনই  ক্লার্ক এর কাছে জেনেছিলাম যে আমার লাস্ট পে সার্টিফিকেট যে স্যালারি দেওয়া আছে এর সাথে আবার যোগ হবে রুরাল পে, এবং নন প্র্যাক্টিসিং পে ( যেহেতু প্রাইমারী হেলথ সেন্টার ডাক্তারদের  জন্য নন প্র্যাক্টিসিং জোন) কিন্তু কাটা যাবে হাউস রেন্ট ( কোয়ার্টারের জন্য) যেটা আগে পেতাম। এতে আমার প্রায় ৫০০টাকা  মোট মাইনে বেড়ে যাবে। 

 আমার বাবার জাগুলিয়া জায়গাটা কিন্তু মোটামুটি ভালই লেগেছিল নির্জন আর নিরিবিলি বলে।  গাছ গাছরায় ভর্তি বলে। সেই সপ্তাহে ডাক্তার লাহা নাগেরবাজারের বাড়িতে আর ফেরৎ জানিনি আমি জইন করবো বলে আর আমাকে  হাসপতালের সব ডিউটি বুঝিয়ে দেবেন বলে আমার কাগপত্রগুলো সই সাবুদ ও ছিলো। উনি বাবার সাথেও পরিচয় করলেন। জইন করেই সার্ভিস বই, লাস্ট পে সার্টিফিকেট ওনাদের অফিস ক্লার্কের হাতে তুলে দিয়ে জেরিক্স করা কপিতে রিসিভ করিয়ে নিয়ে , জইনিং লেটারে “allowed to জইন as 2nd Medical officer  ” লিখিয়ে নিয়ে, কোয়ার্টার এর চাবি নিয়ে ঘরে ঢুকেছিলাম। এর মধ্যে কোয়ার্টারের চেহারায় অনেক পরিবর্তন এসেছিল প্রথম দিন এসে যা দেখেছিলাম । নতুন করে প্লাস্তেরিং, চুনকাম করা থেকে, জানালা দরজায় গ্রিলে গেটে ,পাঁচিলে নতুন করে রং করা হয়েছিল। মেঝে, বাথরুমে কমোট ,  ঝকঝকে করে তোলা, বাথরুমের পাইপ গুলো ,শোয়ার , কল সব নতুন ভাবে ফিট করা,  প্রতি তিনটে ঘরেই নতুন করে লোহার কট , হাসপাতালের ম্যাট্রেস, বালিশ,  সবুজ চাদর , জানালাগুলো তে সবুজ পর্দা , সিলিং ফ্যান,  তিন ঘরে তিনটে টেবিল চেয়ার এগুলো লাগানো হয়েছিলো।  ড্রইং রুমে বড় একটা টেবিল, কয়েকটা বসবার কাঠের চেয়ার, এবং একটা সোফা কাম বেড । রান্নাঘরে হাসপাতাল থেকেই HP গ্যাস সিলিন্ডার আর ওভেন ও ছিলো। একটা স্টোভ, কেরোসিন কয়েকটা থালা বাসন বাটি  চামচ হারি করাই সবই ছিলো। সেদিন  আমি আর বাবা ডাক্তার লাহার কোয়ার্টারে ডিনারএর নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। Mrs লাহার বয়েস ৪৫ এর মত হবে। শ্যমলা কালো গায়ের রং। বিকেল আমাকে নিয়ে ডাক্তার লাহা প্রথমে আউটডোর তারপর সন্ধ্যে ৭ টে নাগাদ ওয়ার্ডে রাউন্ডে গিয়ে সব রোগী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। অন ডিউটি নার্সদের সাথেও পরিচয় করিয়েছিলেন। ওনারা সবাই এখানের কোয়ার্টারে থাকেন শুনেছিলাম। জেনেরাল বেডে বেশির ভাগ রোগীই ছিলো হয় হাপানির, নয় বেশ কিছুদিনের জ্বর সারছে না, নয় ক্রনিক পেট খারাপ নিয়ে,  নয় পেটে জল জমেছে , নয় সাপে কেটেছে, কিম্বা বিষ খেয়ে ভর্তি হয়েছে। ,একটা বাচ্চা ছেলের কিডনীর অসুখ নেফ্রাইটিস নিয়ে ভর্তি ছিলো আর একজন প্রায় ৭৬ বছরের বৃধ্যা ব্রেইন স্ট্রোক নিয়ে ভর্তি ছিলো। আইসোলেসন ওয়ার্ডে  দুজন  মহিলা রোগী টিবি ব্যাক্টেরিয়া পজেটিভ Tuberculosis এর রোগী বুকে জমা জল তাদের। রাউন্ড শেষ করে উনি আমাকে আর বাবাকে নিজের কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে অনেক ক্ষন সামনের বারান্দায়  বসে গল্পঃ করেছিলেন। ওনার দুটোই ছেলে। দুজনেই ইঞ্জিনিয়ার হয়ে চাকরী করছে। একজন ব্যাঙ্গালোরে থাকেন ।তার বিয়েও হয়ে গেছ পাঁচ ছয় বছর আগে। বাচ্চা হয় নি তাদের। বৈদ্যনাথ চক্রবর্তীকে ওনারা দেখাচ্ছেন। অন্য জন তাদের সাথেই থাকে। আমার বয়সী প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করে। দুজনই শিবপুরের ছাত্র। 

উনি বললেন হেঁটে ১৫ মিনিটের মধ্যেই  ছোট একটা বাজার আছে।  সপ্তাহে রবিবার  জাগুলিয়াতে হাট বসে। তখন মোটা মুটি সবই পাওয়া যায়। তবে আমি তো রবিবার থাকবো না। তাই হাসপাতালের একজন GDA কে টাকা পয়সা দিলে সেইই নাকি বাজার করে দিয়ে যাবে। তবে লোকটা দু তিন পয়সা এদিক ওদিক করবে ওর হাতে বাজারের ভার ছেড়ে দিলে। ইচ্ছে হলে আমরা নিজেরাও গিয়েও বাজার করে আনতেই পারি। পুকুরের ধরা মাছ নিয়ে দুজন লোক সাইকেল করে কোয়ার্টারের সামনেই আসে। তাদের দাম অবশ্য বাজারথেকে একটু বেশী হলেও, টাটকা মাছটা পাওয়া যায়। হাসপতালের সামনেই দু তিনটে মুদির দোকানও আছে হাসপাতালের বাইরে। সেখানে ভোরে ছাগলের আর গরুর দূধ, মুড়ি, চিরে এগুলো ( বলে রাখলে ওরা চাল আর রটি করার জন্য আটা ময়দা কিনে পৌঁছে দিয়ে যাবে  টাকা নিয়ে) আর টুকিটাকি জিনিষ পত্র কিনতে পাওয়া যায়। আর রান্না করবার জন্য একজন  মহিলা আছে। সে ওনাদের ওখানে  রান্না করা, ঘর গোছানো, বাসনপত্র মাজা মাজি করা, ঘর মোছা সবই করে দেয়। যদি আমরা চাই কালকে সকালেই  উনি পাঠিয়ে দেবেন  কথা বলতে আমাদের সাথে। Mrs লাহাও বলেছিলেন মেয়েটির বয়স ২৯- ৩০এর মত। বাংলাদেশ থেকে রেফুজি হয়ে এসেছিল। বিয়েও হয়েছিলো এখানকারি একজন মোটামুটি সম্পন্ন চাষীর ঘরে। দুটো মেয়েও হয়েছে তার। কিন্ত স্বামী তাকে আর গ্রহণ করে না বছর তিনেক  হয়েছে। মেয়েটি কিন্তু ভদ্র ঘরের মেয়ে। এখন  বুড়ো বাপের সাথে থাকে। দু কাঠা জমি পেয়েছিল  ওরা সরকারের থেকে। সেখানেই একটা টালির ঘর বানিয়ে ওরা থাকে। জগতে এই বাপ আর দুটো মেয়ে ছাড়া কেউই নেই সংসারে মহিলার । তাই রান্নার কাজ করে গ্রসাচ্ছাদান করে। তবে খুবই বিশ্বাসী মেয়ে সে। চোখ বুজে কোয়ার্টারের চাবি ওর হাতে ওনারা তুলে দিয়ে যান। 

পরদিন সকালেই ঘুম থেকে উঠে বাপ ব্যাটা দুজনেই বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে এনেছিলাম। কিছু বাজারও করে এনেছিলাম। কোয়ার্টারে ফ্রিজ ছিলো না। তাই অল্প করেই বাজার করেছিলাম। পথে আমাকে দেখে অনেকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমিই কি  এই প্রাইমারী সাস্থ্য কেন্দ্রে নতুন ডাক্তার হয়ে এসেছি নাকি? বাজারেই পরিচিত হয়েছিলাম লোকাল ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসারের সাথে। উনি এখানে চার বছর হয়ে গেছে আছেন। স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে বাবা মাকে নিয়েই ছিলেন । টালিগঞ্জে বাড়ী  ওনাদের। একদিন নিমন্ত্রনও করলেন যেতে ওনার অফিসে। আমরা বাজার থেকে ফেরার পরে Mrs লাহা রান্নার মেয়েটিকে পাঠিয়েছিলেন বাবা কে জিগ্যেস করে। আমি তখন বাথরুমে ছিলাম। বেড়িয়ে দেখি বাবা মহিলাটির সাথে কথা বলছে। এতো সুন্দরী যে কোনো মহিলা হতে পারে আর গায়ের রং এতো যে ফর্সা হতে পারে আমি আগে দেখিনি কোনদিন। কাঁচা সোনার মত গায়ের রং ছিল। নাম বলেছিলো রেবেকা। সবাই নাকি তাকে রেবা বলেই ডাকে।বাবার সাথেই ওনার কথা হচ্ছিলো। তখন কার দিনের ১০০ টাকা মাসে নেবে মাইনে হিসাবে সপ্তাহে তিন দিন রান্নাবান্না থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ করে দেবে। সকালে এসে ১২ টার মধ্যে চলে যাবে। আমি আউটডোরে নটার থেকে  বসতে হবে বলে ড্রেস করে রেডী হচ্ছিলাম। এর মধ্যেই আমার জন্য চা আর দুটি ময়দার পরোটা আর আলুভাজা করে দিয়ে গেলো মহিলা। বাবা সোফাতে বসে কিনে আনা খবরের কাগজ পড়ছিলেন।

আউটডোরে প্রায় , একশ লোকের ভিড়। সবই গ্রামের মহিলা তাদের কোলে বাচ্চা নিয়ে বা ছেলে মেয়ে নিয়ে লাইনে দাড়িয়েছে। গ্রামের মহিলারা যেমন হয় তেমনি তাদের চেহারা। পড়নে ময়লা  ছেড়া শাড়ি অনেকের। ব্লাউজ পড়ে না বেশির ভাগ মহিলারাই একটু বয়েস বেশী হয়ে গেলে এনারা। সারা গায়ে হয় ঘামাচি নয় দাদে ভর্তি । দারিদ্রতার ছাপ চেহারায় সর্বত্র। ত্রিশ পেরোলেই বুড়ি বেশিরভাগ মহিলার। অনেক বিধবা সাদা থান পরে নাতি নাতনিদের নিয়ে । ছেলেমেয়েগুলোর ও তথৈবচ অবস্থা। কারুর বা পেট বড়ো, হাতপা রোগাটে। সবারই প্রায় খালি গা বা ময়লা গেঞ্জি পরে । পড়নে সস্তার হাফ প্যান্ট। অনেকের নাক দিয়ে স্বরদি গড়িয়ে পড়ছে মুখে। সেটা আবার টেনে খেয়ে নিচ্ছে। দেখে নিজেরই গা গুলিয়ে ওঠে।  একজন GDA আউটডোরের গেটে দাঁড়িয়ে পুলিশের মত লাঠি হাতে লাইন কন্ট্রোল করেছে আউটডোরে গিয়ে বসতেই সেই GDA টি একগাদা টিকেট টেবিলে রাখলো। টিকেটগুলোর ও তথৈবচ অবস্থা। তখন লাল রঙের মোটা কাগজের টিকিট হতো। আমি শুরু করতে করতেই ডাক্তার লাহা এসে যোগ দিলেন আমার সাথে। এই হাসপাতালে কী কী ওষুধ আউটডোরে পাওয়া যায় জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন সব রকম অ্যান্টিবায়োটিক, কিছু অ্যান্টি ফাংগাল আর মোটা মুটি সব ধরনেরই ওষুধ পাওয়া যায়। তবে সাবধানে লিখতে বলেছিলেন খুব প্রয়োজন না হলে দামী অ্যান্টিবায়োটিক যেনো না লিখি। তখন দামী অ্যান্টিবায়োটিক বলতে roxithromycin, Azithromycin, cephalexin, Amoxicillin clavulanic acid er fixed combination cephexin tinidazole এইসব। উনি বলেছিলেন কয়দিন আউটডোরে বসলেই সব নাকি  আমি বুঝে যাবো। এরা লাইন ভীড় করে কিন্ত  শুধু মাত্র ওষুধ তোলার জন্য আর সেগুলো নিয়েগিয়ে ওষুধের দোকানে বেঁচে দেয়। ব্র্যান্ডেড cough syrup দিলেও সেগুলো বিক্রি হয়েই যায়। ওষুধ গুলো বিক্রি করবার জন্য এখানে কিছু নির্দিষ্ট মেডিসিনের দোকান আছে। এতে রোজ কিছু গরীব মানুষের হাতে কিছু কাঁচা পয়সা আসে। বেশীর ভাগ লোক এই গ্রামে হয় চাষী বা নয় বা দিন মজুর। তাই বেশির ভাগ সময় Sulphadiazine ( (SDZ)ট্যাবলেট আর জ্বর থাকলে paracetamol ট্যাবলেট লেখাই ভালো। আর পেট গুড়গুড় বললে মিক্স কার্মিনেটিভ।  আমাশয় হলে  enteroquin tablet  এগুলো কোনো মেডিসিনের দোকানই নেয়না বিক্রি হয় না বলে। প্রথমের  দিকে এই লোক গুলোর কথা বুঝতেই আমার দম বেরিয়ে যেতো। বেশির ভাগ রোগীই এখানে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা লোক। এরা বাংলাদেশী গ্রাম্য ভাষায় কি যে বলতে চাইছে সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। আর ব্যারাকপুরের হাসপাতালের আউটডোরে যেমন ভাবে রোগী দেখতে আমি অভ্যস্ত হয়েছিলাম সেইরকম ভাবে রোগী দেখতেগিয়েই  প্রথম হোচট খেয়েছিলাম । ডাক্তার লাহা বলেছিলেন যে এইভাবে রোগী দেখলে  সন্ধ্যা পার হয়ে যাবে। রোগী  আর শেষ করে উঠতে পারবো না। দেখছিলাম আমি একটা টিকিট ছাড়লে উনি ততক্ষনে পাঁচটা রোগী ছেড়ে দিচ্ছেন। কারো বুকে স্টেথোস্কোপ ছুঁইয়েই ওষুধ লিখতে শুরু করে দিচ্ছিলেন। বেশির ভাগ মহিলার আর বাচ্চার প্রবলেম ছিলো রক্ত শূন্যতা । পেটে রাউন্ড ওয়ার্ম কৃমি রয়েছে। কৃমির ওষুধ লিখে দিলেও কৃমি আর সাড়ে না। আয়রন ট্যাবলেট বা ব্র্যান্ডেড syrup দিলেও রক্ত শুন্যতা যায় না। ওষুধ গুলো এদের মা/ দিদিমা / ঠাকুমা নিয়ে গিয়ে দোকানে বেঁচে দেয়। তেমনি ভাবেই এদের দাদ বা চুলকানিও সারে না। যাই হোক আউটডোর শেষ করে ডাক্তার লাহার সাথে ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে কোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতে বেলা প্রায় দুটো বাজলো।  রান্নার মহিলাটি আমাদের দুজনের জন্য দুবেলার রান্না করে বাড়ি চলে গেছিলো। আমি আর বাবা স্নান সেরে ,খেয়ে নিয়ে থালা বাসন ধুয়ে, বিশ্রাম করতে গিয়ে  আমরা দুজনই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভেংগে সাড়ে চারটে নাগাদ আবার সান্ধ্য কালীন আউটডোরে গিয়ে বসেছিলাম। আউটডোরে কম্পাউনডার বাবু  রোগী দেখছিলেন। বললেন একটু পরেই ডাক্তার লাহা এসে পড়বেন।  জনা  কুড়ি রুগী এসেছিল , উনি ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। উনি ওনার বাড়ির গল্পঃ করতে শুরু করেছিলেন রুগীদের ছাড়তে ছাড়তে। এই হেলথ সেন্টারে উনি গত পচিশ বছর ধরেই আছেন। ওনার স্ত্রী এই হাসপাতালেই নার্স। পরিচয়ও হয়ে যাবে আমার সাথে কিছুদিনের মধ্যেই। ওনার একটি মেয়ে ফাইনাল ইয়ারে হোমিওপ্যাথি পড়ছে কলকাতার ডি এন দে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে, কলকাতার রাজাবাজার এলাকায় একটি মেয়েদের মেসে থেকে। প্রতি সপ্তাহে শনীবার বাড়ী আসে। মেয়ের বয়স ২২ বছর।  অন্য দুটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। জামাইরাও  ডাক্তার দুজনেই। উনি  ছোট মেয়ের জন্য একটা ভালো পাত্রের সন্ধানে আছেন। ডাক্তার পাত্র পেলে খুবই ভালো। উনি একজন GDA ডেকে বললেন বাইরের কোথা থেকে  যেনো চা আর বিস্কুট আনতে। এর মধ্যে আরো কয়েকজন রোগী এলে উনি রোগীর অসুবিধা শুনে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন আমার সামনেই। ফার্মেসি থেকে ওষুধও দিয়ে এলেন তাদের। আমাকে বললেন ডাক্তার লাহা সপ্তাহে যে তিনদিন ওনার বাড়ি যান সেইদিনগুলো উনিই কিন্তু হাসপাতালের আউটডোর আর ইনডোর দুটিই সামলান। আগামীকাল সকাল থেকেই ligation ক্যাম্প আছে। উনিই  ফাঁকা থাকলে ইথার অ্যানাসথেসিয়াও দেন ligationer জন্য।  ওনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বি এস সি, পাস কোর্সে গ্রাজুয়েট। ওনার নাকি ফার্মেসিতে liscence আছে। উনি গ্রামের মধ্যেই ওষুধের দোকানে দোকানে বসে ডাক্তারী প্রাকটিসও করেন। এইসব আলাপ আলোচনা করতে করতেই ডাক্তার লাহাও এলেন। চা বিস্কুট ও এসেছিল আমাদের জন্য । সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আউটডোরে রোগী এসেছিলো। দেখেছিলাম কম্পাউনডারবাবুই বেশির ভাগ রোগীই ছেড়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যেই ইমারজেন্সিতে  দু তিনটে  হাত পা  কপাল কেটে যাওয়া রোগী আসতে কম্পাউনডারবাবুই উঠে গিয়ে স্টিচ করে ওষুধ পত্র দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমাদেরকে কিছুই করতে হলো না। ডাক্তার লাহা বলেছিলেন বিকেলের আউটডোর আর টুকটাক ইমারজেন্সি উনিই সামলান যাতে ওনার গ্রামে প্র্যাক্টিসটা বজায় থাকে।  গ্রামের গরীব লোকজন তাই ওনাকেই ডাক্তার হিসেবে চেনেন। সাড়ে ছ়টায় উনি বিদায় নিলেন প্রাক্টিস করতে যাবেন বলে। উনি বিদায় নেবার পরে আমরা ইভনিং রাউন্ড দিতে গেছিলাম। আর সেইসময় লোডশেডিং হয়েছিলো। ডাক্তার লাহা বলেছিলেন এখানে লোডশেডিং খুবই বেশী হয়। কখনো একঘন্টা কখনো বা দুই ঘণ্টা থাকে। হ্যারিকেন জ্বালিয়েই  আমাদের ইভনিং রাউন্ড সেদিনের মত শেষ হলো। আইসোলেশন ওয়ার্ডে দুজন মহিলা ভর্তি ছিলেন। হাড়গোড় বেরোনো চেহারা তাদের। ডাক্তার লাহা x ray প্লেট দেখাতে দেখেছিলাম একজনের দুটো lungs আর অন্য জনের প্লুরাল এফফিউশন। ওদের অ্যান্টি টিবি ওষুধ চলছে। গত একমাস যাবৎ তারা ভর্তি। বাড়ির লোক মাঝে সাজে খোজ নিয়ে যায়। এদের জন্য স্পেশাল ডায়েট দেওয়া আছে। রাতের রাউন্ড শেষ করে লোডশেডিং এর মধ্যেই ঘরে ফিরে এসে দেখেছিলাম, বাবা বাইরের বারান্দায় অন্ধকারেই বসে ছিলেন। হ্যারিকেন তো ছিলনা। কেরোসিন তেলও নেই, মোমবাতিও কিনে আনা ছিলো না। কিই বা আর করা যেতো। আলো এলো রাত এগারোটার পরে। বিদ্যুৎ আসলে পরে বাপবেটা মিলে সকালের করা রান্না খেয়ে নিলাম। শীত কাল বলে টাটকাই ছিলো সবকিছু। পরেরদিন  বাজারে গিয়ে হ্যারিকেন, কেরোসিন তেল, কিনে আনতে হবে আর জানালা গুলোতে মশার জাল কিনেও লাগাতে হবে আর একটা ফ্রিজ, একটা  টিভিও কিনতে হবে এরই মধ্যে বাবা বললেন। ভীষণ পোকা আসে ঘরে অন্ধকার হলে। সাথে তো মশা তো আছেই। রান্নাঘরের বাথরুমের জানালাগুলোতেও নেট  লাগাতে বললেন। খোলা রাখলে যদি সাপখোপ উঠে আসে। তারওপর এখানে  বিষাক্ত গোসাপ আছে। 

পরের দিন ভোরে উঠে আমি নিজেই বাজারে গেছিলাম। জিনিস গুলো সব কিনে রিক্সা নিয়ে কোয়ার্টারে ফিরতে ,প্রায় সকাল আটটা। চাল, আটা, ময়দা, ডাল, সর্ষের তেল, রুটি, পরোটা করবার চাকতি, বেলনা, খুন্তি, হাতা ,চামচ, নুন, হলুদ লঙ্কার গুঁড়ো , কিছু আনাজ সবজি, দুটো হ্যারিকেন কেরোসিন তেল, সাবান, সার্ফ, এগুলো একটু একটু করে কিনে এনেছিলাম একসপ্তাহের জন্য।  বাবা সামনের দোকান থেকে টাটকা গরুর দুধ , বিস্কুট ,মুড়ি, চিরে এগুলোও কিনে এনেছিল। বাজার থেকে এসে দেখেছিলাম রান্না ঘরে রেবা কাজ করছে। আমাদের এখানে সেরেই ডাক্তার লাহার কোয়ার্টারে যাবে সে। Mrs লাহাকে বলেই এসেছে সে। মাথায় ছোটো একটা ঘোমটা টেনেই কাজ করছে রান্নার ঘরে। এতো সুন্দরী মহিলা তিরিশ বছর বয়সে আর এতো যে ফর্সা গায়ের রং, সুন্দর ফিগার , যে হতে পারে আমার সত্যিই ধারণার বাইরে ছিলো। ওর চোখ মুখ যেনো দেবী প্রতিমার মত আঁকা। পটে আঁকা দুর্গা মুর্তি যেনো। তারও যে বিয়ে হয়েছিলো , দুটি মেয়ে হয়েছে , দেখে বোঝাই যায় না।  রেবার পড়নে খুবই সস্তার পুরনো একটা সূতির শাড়ী আর ব্লাউজ , যেটা সে বোধহয় রোজ পড়েই কাজে আসে । সিনেমার বা টিভি সিরিয়ালের নায়িকা হতেই পারতো সে মধ্যবিত্ত বা বড়োলোকের ঘরের মেয়ে বা বউ হলে তার এই সৌন্দর্য আর ফিগার দিয়ে । এই  মহিলার  ভাগ্যটাকে ভগবান্ যেমন গড়েছেন তেমনই তো হবে মনে মনে ভেবেছিলাম। ওনার সম্পন্ন ঘরের চাষী স্বামী যে কেনো ওনাকে ত্যাগ করেছিলো সেটাই বুঝতে পারিনি যতদিন না রেবা আমাকে নিজেথেকেই বলেছিলো । যাই হোক রেবা আমাদের টিফিনে  ঝটপট তিনটে আটার রুটি আর বাটিতে দুধ এনে সার্ভ করেছিলো। চাটা টিফিনের পরে খাবো কিনা সেটা জিজ্ঞেস করলো। বাবা কে চা করে দিয়েছে সেটাও বললো।চিনি আনতে আমরা দুজনেই ভুলে গেছিলাম। এনে রাখতে বললো বাবাকে। আমি নয়টা নাগাদ  গিয়ে আউটডোরে বসলাম। সেদিন আবার নাকি ligation ক্যাম্প হবে। ডাক্তার লাহা এসে বলেছিলেন “তুমি  কিছুক্ষন দেখে কম্পাউন্ডারবাবুকে ডেকে আউটডোরটা  ওনাকেই সামলাতে দাও। রাউন্ড দিয়ে আমরা OT তে ঢুকবো। ১১টা থেকে ligation গুলো শুরু করবো। আমি তিনজন সাপে কাটা রোগীকে ডিসচার্জ করেদিচ্ছি। পাঁচদিন হয়ে গেল,এখন এরা ভালো আছে।  যদি মনে হয় কোনো কেস জেনেরাল ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে করে দিতে পারো। তবে আমি সাধারণত তিনটে করে বেড  দুটো ওয়ার্ডেই সবসময়ই খালি রাখি ইমারজেন্সি রোগির জন্য। এখানে পারিবারিক জমি নিয়ে, চাষবাসের হিস্যা নিয়ে মারামারি, হাসুয়ার কোপ খেয়ে আসা ,রাজনৈতিক মারামারিতো লেগেই থাকে। তার ওপরে কে যে কখন কিটপতঙ্গ  মারার organo phosphorus,  তুতে, ইদুর মারার বিষ খেয়ে কখন আসবে, বলা যায় না আর ধান কাটার সময় তো সাপে কামড় লেগেই থাকে। তবে বেশির ভাগ নন পইসনাস সাপ। হ্যা তোমাকে বলা হয়নি এখানে দুটো টেলিফোন আছে। একটা ইমারজেন্সি ঘরে। অন্যটা অফিসে আমার ঘরে। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারো। বিশেষ করে লোকাল পুলিশ স্টেশন বা বি ডি ও বা চিফ মেডিক্যাল অফিসারের অফিসে যোগাযোগ করতে হলে। বাড়িতেও রোজ ফোন করতে পারো  ইমারজেন্সি ঘরের থেকেই। এটাতে হট লাইন কানেকশন থাকে। বৃষ্টি ঝড় কোনো সময়ই এই টেলিফোনটা ডেড হয়নি এখনো। অফিসের টেলিফোনটা মাঝে মধ্যে বিগড়ে যায় অবশ্য। 

মাঝপথে আউটডোরটা কম্পাউন্ডার বাবুর হাতে তুলে দিয়ে আমি আর ডাক্তার লাহা মাইনর ও টিতে ঢুকেছিলাম সোয়া এগারোটা নগদ। চারটে গ্রামের মহিলা ligation আর tubectomy র জন্য নির্ধারিত ছিল। এই অপারেশনগুলো আমারকাছে  কিন্তু জলভাত ছিলো। বারাকপুর হাসপাতালে গাইনীর অপারেশন করতে করতে আট নয় মাসে আমার হাতে অপারেশনগুলো জলভাত হয়ে গেছিলো তবে সেগুলো করা হতো জেনেরাল অ্যানাসথেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করে  বা spinalঅ্যানাসথেসিয়া দিয়ে কোমরের থেকে নিচের অংশ অবশ করে। বোতল থেকে ইথার  গজপিস নাকের ওপরে রেখে নাকে  ইথার ঢেলে রোগী কে অজ্ঞানকরে তারপর  আবার আম্বুব্যাগ টিপে টিপে  অজ্ঞান রোগীর কৃতিম শ্বাস প্রশ্বাস চালিয়েরেখে অপারেশন করা সেই প্রথম দেখেছিলাম এই হেলথ সেন্টারে। রমেশ বলে একজন জেনেরাল ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেখানে ইথার অ্যানাসথেসিয়া দিচ্ছে। যাইহোক প্রথম কেসটা ডাক্তার লাহা করবার পরে আর তিনটেকেস আমিই করেছিলাম। ডাক্তার লাহা বলেছিলেন “বাহ তোমার  হাত তো খুবই ফাস্ট দেখছি । খুব ভালো, খুব ভালো এরপরে যে তিনদিন তুমি এখানে থাকবে সেদিন্ গুলোর একদিন তুমিও ligation ক্যাম্প করো।”  আমি বলেছিলাম ” এই ভাবে অ্যানাসথেসিয়া দিয়ে যদি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে যদি একটা ক্যাজুয়ালটি হয় তবে ডাক্তারকে উদোম মার থেকে কে সামলাবে? আপনিই তো বলেছেন জায়গাটা পলিটিক্যালি খুব খারাপ, হাসুয়া চলে নাকি কথায় কথায়। ” ডাক্তার লাহা বলেছিলেন ” সেটা ঠিকই তবে আমাদের জন্য বেধে দেওয়া টার্গেটতো পুরন করতেই হয়। না হলে ওপর মহল থেকে শোকস চিঠি ধরায় কেনো পূরণ হলো না টার্গেট। বইলস এপারেটাস এখানে একটা আছে বটে । সেটা স্টোরেই পরে আছে। একা হাতেতো অনস্থেটিস্ট আর সার্জন দুটোই হওয়া যায় না। আর কোনো অনস্থেস্টিস্ট তো আর প্রাইমারী হেলথ সেন্টারে আসে না। তাই ইথার আর অ্যাম্বু ব্যাগটাই ভরসা। ১২ বছর কাটিয়ে দিলাম এই ভাবেই। রমেশ ও এক্সপার্ট হয়ে উঠেছে। কম্পাউন্ডার বাবুও আরো এক্সপার্ট।  তবে ক্যাজুয়ালটি যে  একেবারে হয় নি সেটা বলবো না। হয়। সেটা জেনেও কাজ করতে হয়। আর খুব প্রবলেম দেখলে বারাসাতে রেফার করে দেবে। পরিতোষ বাবু আছেন। অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে যাবে। যদি মনে করো কোনো কেস এখানে ট্যাকল করতে পারবে না সেটা যাই হোক না কেনো সরাসরি বারাসাত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবে। কোনো হুজ্জাতি হলে থানাতে ফোন করে দেবে।.. শিখে যাবে খুব তাড়াতাড়ি শিখে যাবে কি ভাবে ট্যাকল করতে হবে।”

সেদিন ligation ক্যাম্প শেষ করে কোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতে বেলা একটা হয়েছিলো। বাবা অপেক্ষা করছিলো। আর একটা দিন কাটিয়ে আমরা বাড়ি যেতে পারবো। ডাক্তার লাহা রবিবার বিকেলে বাড়ি যাবেন। আমি সোমবার দুপুরের মধ্যে হেলথ সেন্টারে ঢুকে পড়ব।  

*সেদিন ভোর রাতে হঠাৎ  করেই আমার কোয়ার্টারের কলিং বেল বেজে উঠেছিলো। সদ্য কাচা ঘুমটা ভেংগে দুই চোখ কচলে, বারান্দায় এসে দেখেছিলাম একজন ওয়ার্ডবয়  গেটের সামনে দাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। আমি বের হতেই বলেছিলো “ডাগদার বাবু ! নার্স দিদিমনি আপনারে  যে কল বুক দিছেন  এখুনি লেবার রুমে যাইতে হইবো আপনারে।” বাবা ঘুমোচ্ছিলেন। বাবা কে ঘুম থেকে তুলেই প্যান্ট জামা গলিয়ে ,লেবার রুমে গিয়ে দেখেছিলাম একজন প্রাইমিগ্রভিদা ( প্রথম বার মা হচ্ছে সে) মা লেবার টেবিলে শুয়ে lithotomy অবস্থায়। শোল্ডার প্রেজেন্ট নাকি বেবির । ভেতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে  আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠেছিল। পুরো cervix dialated  বেবির একটা কাধ বেড়িয়ে এসে আটকে গেছে। ব্যারাকপুরের হাসপতালে শোল্ডার প্রেজেন্ট নিয়ে কোনো মায়ের ডেলিভারি আগে করিনি। খুবই কঠিন কাজ সেটা। এই অবস্থায় যে মাকে বারাসাত হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স করে পাঠাবো সেটাও সম্ভব  ছিলো না। এদিকে  নার্সের কাছে আমার প্রেস্টিজ ও রাখতে হবে। সবাই জেনেছে যে আগের হাসপাতালে আমি গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করছিলাম। নার্স দিদি ও বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন । উনি বললেন ”  স্যার episiotomy করে বার করে আনি? একবার চেস্টা করি?  ডাক্তার লাহা তো এইসব কেসে episiotomy দিয়েই করেন । ব্লিডিং হয় কিছুটা বটে। ওর স্বামী বাইরে দাঁড়িয়ে আছে । ” আমি দ্বিধানিত্ত গলায় বলেছিলাম “বেরোবে তো”?  নাকি একবার রোটেশন করিয়ে দেখবো?”  নার্সদিদি বলেছিলেন “লাভহবে না স্যার। হেড  তো পেলভিসে এনগেজড হয়ে গেছে। episiotomy দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে টেনে বার করে আনতে হবে। 

আমি নিজেই episiotomy টা দিয়েছিলাম । মেয়েটা সেই মুহূর্তে চিল চিৎকার করে উঠেছিল episiotomy র ব্যথায়। “ও মাগো। ডাগদার বাবু মুইরে মাইরা ফেললো গো ! ও মাগো তুই কোথায় রে মাগো? ওগো ডাগদার  আমারে ছাইরা দে তোর পায়ে পড়ি মুই ডাগদার”

 নার্স দিদি মেয়েটার ডান থাইতে,  নিরাভরণ পাছায় ,জোরে জোরে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর মেরে তার থেকেও জোরে বলেছিকেন ” চুপ কর তুই! একদমই চুপ কর! গলা দিয়ে যেনো একটাও আওয়াজ না বের হয় তোর! গলা চিপে একবারে মেরে ফেলব বেশী নাটক করলে!  মজা লোটার সময়তো একবারও মনে থাকে না তোদের ? খুব সুখ পাস তখন তাই না মরদের আদর খেতে? এখন সহ্য করতেই হবে ” এই  মাইনর অপারেশনতে  মেয়েদের পুরো ভালভা, যোনির ল্যাবিয়ামেজর আর ল্যাবিয়া মাইনরকে ,পেরিনিয়াম সহ , কাচি চালিয়ে কেটে দিতে হয় এবং সেটা করা হয় কোনো রকম  লোকাল অ্যানাসথেসিয়া ছাড়াই (লেবারের ব্যাথা ওঠার ঠিক সেই মুহূর্তে। ) । ভীষণই যন্ত্রণাদায়ক আর কষ্টকর  অবস্থা এটা একটা মায়ের জন্য। Episiotomy  দিতেদিতেই অভ্যস্ত হয়েছিলাম বারাকপুর হাসপাতালের লেবাররুমেই। প্রথমেই  pudendal ধমনীর কোনো একটা ব্র্যাঞ্চথেকে  বেরোনো রক্তে ভেসেগেল লেবার টেবিলটার অনেকটা অয়েল ক্লথ।  গজ আর আর্টারি ফরশেপ দিয়ে  চেপেধরে ব্লিডিংটা কিছুটা কমলে পরে  কাটাটা আরোও বাড়িয়ে দিয়ে ছিলাম। আবারো চিল চিৎকার মেয়েটার । ,  জমাট বাধা রক্তের দলাগুলো পরিষ্কার করে , নার্সদিদি  গ্লাভসপরা হাত  ঢুকিয়ে দিয়ে প্রথমে বেবির একটা হাত বার করেন, তারপরে একটা কাধ বার করে এনে বাকিটা  দুই হাতে পুরো ডেলিভারিটা শেষ করেছিলেন। ঘাম দিয়ে যেনো জ্বর ছেড়ে ছিলো আমাদের দুজনেরই সেই ভোর রাতে। । বেবীকে কাদিয়ে,   বেবীর আর মায়ের দিকের উম্বেলিকাল কর্ড বেধে, কেটে, হাত ধুয়ে  আমরা  দুজনই ডক্টরস রুমে এসেছিলাম। নার্সদিদি নিজেই  চাকরে বিস্কিট দিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।  কিছুক্ষন ওনার সাথে দুধচা আর বিস্কিট খেতেখেতে গল্পঃ করেছিলাম। নার্স দিদি এখানেই থাকেন, তিনজন নার্স মিলে একটা কোয়ার্টারে। ওনার শ্বশুড়বাড়ি বেহালা চৌরাস্তাতে। ওনার সাত বছর বিয়ে হয়েছে। এখনও কোনো সন্তান হয়নি তাদের। ডাক্তার দেখাচ্ছেন ওনারা। এরপরে  কিছুক্ষণ পরে আমরা  ভেতরে গেলে নার্সদিদি প্লাসেন্টাও বের করে এনেছিলেন। Episiotomy এর স্টিচ দিতে দিতে আমাদের ভোর সাড়ে ছয়টার মতো বেজেছিল।  সেটাও এখানে নাকি লোকাল অবশ না করেই স্টিচ  দেওয়া হয়। আমি জাইলোকানে ইঞ্জেকশন চাইতে উনি বললেন  এই ভোর রাতে কোথায় পাবেন ওইসব স্যার। স্টোরে যদিও বা থাকে , কম্পাউন্ডার বাবু না আসলে তো পাওয়া যাবে না। আর সামান্য এই কারণে ডেকে পাঠাবেন ওনাকে ওর ভোরের ঘুম ভাঙিয়ে ?  আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম “লেবার রুমে ইমারজেন্সি ওষুধ রাখেন না আপনারা? ” উনি মৃদু হেসে বলেছিলেন ” এটা প্রাইমারী হেলথ সেন্টার স্যার” সাব ডিভিশনাল বা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নয় স্যার। আমি  নার্সদিদিকে পোস্ট ডেলিভারী  ইনস্ট্রাকশনস দিয়ে  আর সদ্য হওয়া মায়ের ব্লাড প্রেশার, পালস রেট আর vaginal ব্লিডিং হচ্ছে কিনা আর প্যাডে দেখে  রোগিনীকে বেডে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম । এই জন্যই  সত্যিই আমার গাইনী বিষয়টা একদমই ভালো লাগতো না।  বিশেষ করে ব্রিচ বা শোল্ডার বা হ্যান্ড প্রলাপসে বা লেগ প্রলাপস নিয়ে প্রেজেন্ট করলে আমি খুবই ভয় পেতাম ডেলিভারি করাতে। বারাকপুর হাসপাতালে তবুতো অন্য কোনো গাইনী বিশেষজ্ঞ থাকতেন কোয়ার্টারে। ডাকলেই চলে আসতেন। আমার ওপরে অবশ্যি চোটপাট একটু করতেন যে আমি কবে  নিজে থেকে কনফিডেন্ট হবো এইসব ডেলিভারি করতে? কিন্তু ওনারা নিজেরা হাততো লাগাতেন। দরকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই ও টি রেডী করে সিজার অপারেশন করে বাচ্চা বার করতেন।  আর এখানে  তো আমি একা আর  সাথে নার্স। obstructed ডেলিভারি , শোল্ডার বা হ্যান্ড প্রলাপসে বা লেগ প্রলাপসে কি করবো আমি এখানে ? যদি আমার হাতে বাচ্চা কোনো ভাবে  ডেলিভারি করতে গিয়ে মারা যায় বা মায়ের কিছু  অঘটন ঘটে যায় তাহলে এখানকার  গ্রামের লোকজনতো  আমাকে  আর ছেড়ে দেবে না। কথায় কথায় নাকি এরা হাসুয়া, পাইপগান,  বন্দুক,  ছুরি চালায় এখানে। কি দরকার বাবা ? সেদিনের  ভোরেই তাই ঠিক করেছিলাম এখানে কাজ করতে হলে আমাকে ভীষণ ভাবেই এলার্ট থাকতে হবে যেনো নরমাল হেড প্রেজেন্ট ছাড়া অন্য কিছু দেখলেই আগেই রেফার করে দিতে হবে সময় থাকতে  থাকতে বারাসাত হাসপাতালে। আমি নিজের থেকে কোনো রিস্ক নেবো না বিশেষ করে প্রাইমিগ্রভিদা মায়েদের জন্যতো বটেই। তাই যে কয়দিন এখানে থেকে  একা ডিউটি করবো, রোজ প্রথমেই গাইনী ওয়ার্ডে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে বিকেলের মধ্যেই, সামান্যতম কিছু প্রবলেম হচ্ছে বুঝলেই বারাসাতে রেফার করে দেবো। কিন্ত এতেও যে আবার আমার প্রবলেম হবে ভবিস্বতে,  সি এম ও এইচ অফিস থেকে একটা  শো কজ চিঠি ধরাবে আমাকে সেটা বুঝিনি। জাগুলীয়া হেলথসেন্টারে মায়েদের ডেলিভারি করানোর সংখ্যা অনেক কম হয়েছিলো কেনো তার শো কজ নোটিশ আমার নামে এসেছিলো। কারণ  হাসপতালের রেকর্ড বলেছিলো যে আমিই সবচেয়ে বেশী ডেলিভারি কেস রেফার করেছিলাম এই হেলথ সেন্টার থেকে বারাসাত হাসপাতালে। কেনো করেছিলাম সেটার কারণ দর্শাতে হয়েছিলো। স্বাস্থ্য কর্তাদের আর কি? তারা তো আর পরিস্থিতির মুখোমুখি  কখনোই হন না। পার্টির রোষেও পড়েন না। ঠাণ্ডা ঘর থেকে শুধু অর্ডার ইস্যু করেন। তারা কি করে বুঝবেন কোন পরিস্থিতিতে ডাক্তারকে রেফার করতে হয় শুধু নিজেকে মার খাবার হাত থেকে বাঁচাতে। ডাক্তার আর সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলো পাবলিকের সফট টার্গেট হুলোগাইসম করবার। 

যাই হোক বৃহস্পতিবার দুপুরে, সকালের আউটডোরটা কোনো মতে তাড়াতাড়ি সামলে, ডাক্তার লাহার অনুমতি নিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে,আমি আর বাবা বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছিলাম বেলা একটায় । বাবা তৈরি হয়েই বসে ছিলেন কোয়ার্টারে। রিক্সাকে তো বলাই ছিলো। কোয়ার্টারের গেটের আর রান্না ঘরের চাবিটা রেবার হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে সোমবার  সকালে এসে  সে দুজনের মত রান্না করে রাখে । মাছ তরকারি কেনার টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডাক্তার লাহাও  ও Mrs লাহা রবিবার সকালেই  দমদমের বাড়ি ফিরবেন আর ওনারা হাসপাতালে ঢুকবেন বৃহস্পতিবার। আমি সোমবার ফিরে আসবো সকাল ১১ টার মধ্যেই। মাঝখানের সময়টা কম্পাউন্ডার বাবু থাকবেন এবং হাসপাতাল সামলাবেন। সোদপূরের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যে হয়েছিলো। গত চারদিন চেম্বার খোলা হয় নি। পরোটা আর আলুভাজা দিয়ে টিফিন করেই, সাতটার মধ্যে চেম্বার খুলতে হবে। প্রাকটিসটা অন্তত টিকিয়ে রাখা জরুরি। চেম্বারে গিয়ে বসতে , সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের পথে কয়েজন বয়স্ক  মানুষ (আমার রোগী ছিলেন এরা)  জিজ্ঞেস করেছিলেন ” কিহে ছোকরা ডাক্তার, তিন চারদিন চেম্বার বন্ধ ছিলো দেখলাম? কোথাও বেড়াতে গেছিলে নাকি ? শরীর টরির ঠিক আছে তো বাপু ? ”  আমি উত্তর দিয়েছিলাম   ” হ্যা  মেসো একজায়গায় যেতে হয়েছিলো। এখনথেকে শুধু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেথেকে রবিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত চেম্বার খোলা থাকবে দুবেলাই”  কেউকেউ আবার খুব কৌতুহলী হয়েই জিজ্ঞেস করেছিল ” কি ব্যাপার হে বলতো ডাক্তার?”  “তুমি তিন দিন একেবারেই যে ডুমুরের ফুল হয়ে গেছিলে? ” সত্যি কথাই বলতে হয়েছিলো এনাদের। শুনে সকলেই দুঃখ পেয়েছিলেন বা দুঃখ দুঃখ মুখটা করেছিলেন অন্তত ।  কেউ কেউ বলেছিলেন “ব্যারাকপুরে ম্যানেজ করতে পারলে না  বুঝি থেকে যেতে?  সেই জাগুলিয়ার অজ গ্রামে যেতেই হলো? জায়গাটাতো পলিটিক্যালি  শুনেছি খুবই  নাকি খারাপ। রাজনৈতীক খুনখামারি নাকি  সবসময় লেগেই থাকে ওখানে। “

কেউ বলেছিলেন – “রাতে বিরেতে তুমি তবু এখনকার একটু ভরসা ছিলে হে ডাক্তার । সেটা আর গরিবদের সরকারের সহ্য হলো না বুঝি? তোমার প্র্যাক্টিসটা সবে তৈরি হচ্ছিলো এখানে” । 

একজন  বলেছিলেন “আমাদের এম এল এ গোপাল ভট্টাচার্যকে বললে না কেনো তোমার ট্রান্সফারটা আটকাতে? তোমার বাবাও তো  সি পি এম পার্টির মেম্বার।  গোপালদার সাথে ভালই তো তোমাদের পরিচয়। তোমাদের বাড়িতেও উনি মাঝে মধ্যে আসেন” । “তিনকড়িরতো শুনেছিলাম রাইটার্স এ খুবই যাতায়াত আছে। স্বাস্থ্য  প্রতিমন্ত্রী রামনারাযনের ঘরেও যায় সে। এখানকার পানিহাটি হাসপাতালটি স্টেট জেনেরাল হাসপতালে উন্নত করছে নাকি সে। বললে তোমাকে এখানেও তো ট্রান্সফার করতে পারতো।”

আরও একজনের বক্তব্য-” তাও ভালো যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রবিবার তুমি থাকবে পাড়াতে। এই পাড়ায় ডাক্তারের যে কি অভাব রাতে  তোমাকে কি আর বলবো?   সবই তুমি তো জানো।”

খবরটা রাষ্ট্রহতে বেশি সময় নেয়নি যে আমার

 জাগুলিয়াতে বদলী হয়ে গেছে। রাতে বাড়ি ফিরে মা জিজ্ঞেস করলেন যে ওখানে আমার মন  আদৌ বসবে কিনা,। বাবার কাছ থেকে  সবাই  সব কিছুই পুঙ্খানপুঙ্খভাবে ততক্ষনে শুনে নিয়েছিল। মা বলেছিলেন সোম বার মা যাবে আমার সাথে।  আমি অবাক হয়েই বলেছিলাম _”তুমি গেলে এখানে কে সামলাবে মা। রান্না বান্না ঘর বাড়ি?”

– ” কেনো ? শেফালীই তো আছে।(তিন দিন ও সামলে দিতে পারবে” 

শেফালী আমাদের বাড়িতে তখন একই সঙ্গে কাজের এবং রান্নারও মহিলা ।  আমার মায়ের বয়সী হবে বা একটু বেশী। গত ছয় সাত বছর ধরে আমাদের বাড়িতেই কাজ করে সে। সকাল আটটার পরে এসে সন্ধ্যার  ছয়টার পরে ফিরে যায়  বঙ্কিমপল্লীর ভেতরের দিকে নিজের বেড়া আর টালির ঘরে! শেফালির চার চারটে সন্তান। ওর  স্বামী রিক্সা ভ্যান চালায়।  তখন সোদপুরে ভ্যানরিক্সার বেশি চল ছিলো। এমনি রিক্সা বা অটো রিক্সা  বা অটো ছিলো না। বাংলাদেশর ১৯৭২ সালের উদ্বাস্তু পরিবার শেফালির। বাংলাদেশে ওদের অবস্থা মোটামুটি ছিলো। ধানী জমি কয়েক একর ছিলো ।  বসত বাড়ি 

ও ছিলো। সব ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে হয়েছিল পরিবার টাকে এখানে আর প্রথমে ট্রিপালের টেন্ট ব্রজেন সমাজদারদের জলা জমিতে তারপরে মিউনিসিপ্যালিটির কাছ থেকে দুই কাঠা জমি পেয়ে  বাঁশের বেড়া আর টালির ছাদের ঘর” । বাংলাদেশি রিফিউজিদের বেশ কিছু লোক ভ্যানরিক্সা চালানোটা তাদের জীবিকা হিসাবে বেছে নিয়েছিল তখন। CPM শাসিত মিউনিসিপ্যালিটি তাদের রিক্সা কেনার টাকা দিয়েছিল। পরিবর্তে ভোটটা পড়বে ফ্রন্টের বাক্সে। এটাই শর্ত ছিলো। গরীব গুর্বো মানুষের আবার বাঁচ বিচার কিসের গো? যেখানে যাকে বলবো ভোট দিতে সেইখানে ভোটটা দেবে। 

 

??????????????????????????

সেই সপ্তাহে নমিতাকাকী বোধহয় ওনার দুই ছেলে সহ বোলপুরের  ওনাদের বাপের বাড়ি গেছিলেন বলেই ,আমার ট্রান্সফার হবার খবরটা এবং জাগুলিয়ার প্রাইমারী হেলথ সেন্টারে জইন করবার কথাটা জানতে পারেন নি। বেশ কয়েক সপ্তাহ পরেই জেনেছিলেন  উনি কানাঘুসোতে আর জেনেছিলেন  আমার চেম্বারে রাত সাতটর সময় নিজে এলে, নিজেকেই দেখাতে এসে।  সেদিন আমার ওপরে খুবই অভিমান হয়েছিলো ওনার । আমি ওনাকে এখনও একদমই আপন বলে একটুকুও মনে করি না বলে। শুধুই রোগিনীর চোখে দেখি বলে। একবারও মুখ ফুটে বলিনি  যে আমার ট্রান্সফার হয়ে গেছে বারাকপুর হাসপাতাল থেকে।  অথচ উনি আমাকে নাকি সত্যি সত্যিই মানসিক দিক থেকে ভালোবেসে ফেলেছেন। আর মানসিক  দিক থেকেই, ওনার সব কিছুই আমাকে দিতেও উনি প্রস্তুত ।আমিই তো মুখ ফিরিয়ে ছিলাম ওনার থেকে। নিতে চাইছিলাম না।  অথচ উনি  কিন্ত আমাকে সম্পূর্ন ভাবেই পেতে চান। উনি আর কত বারে বেহায়া হতে পারেন আমার কাছে? ওনার দু চোখ বেশ ছল ছল করছিল। ওনার মান অভিমান ভাঙাতে শেষমেশ আমার  ফাঁকা হয়ে যাওয়া চেম্বারের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে এসে নিজের চেয়ারে বসে ওনার ডান হাত ধরে টেনে কোলে বসাতে চাইলে উনি বেশ কিছুক্ষন মাথা নীচু করে গোঁজ মেরে আমার টেবিলের উলটো দিকের চেয়ারে বসে ছিলেন । এর পরে নিজেই একসময়ে উঠে এসে আমার কোলের  ওপরে বসেছিলেন  দুপা ঝুলিয়ে বাচ্চা মেয়েদের মত। বেশ কিছুটা সময় নিয়েই ওনাকে আদর আর চুমু খেলে উনি সাড়াও দিয়েছিলেন। ওনার অভিমান ভেঙেছিল এরপরে। আমাকেও আদর করতে করতেই উনিই প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন ” আমি যদি ওনার ছোট বোনকে বিয়ে করি তবে উনি কৃতজ্ঞ থাকবেন আমার কাছে সারা জীবন।  আমি রাজি থাকলে উনি এবং ওনার বাপের বাড়ির লোক আমার মা বাবার সাথে কথা বলতে যাবেন একদিন।” ওনার ছোট বোনকে অবশ্য আগে আমি চাক্ষুষ দেখিনি আগে। আমার চেয়ে নাকি বছর দুয়েকে বা তিনেকের বড়ই  হবেন বয়েসে। (হাওড়ার শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিিয়ারিং কলেজ থেকে ওনার ছোট বোন যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আগেইতো সেটা জেনেছিলাম)  তাতে ওনাদের দিক থেকে অসুবিধে নেই যদি আমার মত থাকে। ওনার ছোট বোনও নাকি রাজী আছেন এই প্রস্তাবে। ওনার ছোট বোনের ছবি বাড়িতে গেলে উনি দেখবেন” উনি বলেছলেন ” আমার থেকেও সুন্দরী, স্মার্ট আর  বেশ ভালো রোজগার করে, ওর নিজের ফার্ম করেছে  বোলপুরের ” আমাকে সুখী করতে পারবেন ওনার বোন আমি বিয়ে করলে তাকে। 

 আমি বলেছিলাম _” আপনার ছোট বোন কি  কখনো  অজ  জাগুলিয়া গ্রামের  প্রাইমারী হেলথ সেন্টারের কোয়ার্টারে  গিয়ে থাকবেন নাকি বোলপুরের শহর ছেড়ে ? পাগল হয়েছেন  নাকি উনি, না মাথা খারাপ হয়েছে ওনার যে নিজের এতদিনের কষ্টে গড়ে তোলা বিজনেস ছেড়ে,  নিজের একটা ভালো রোজগার ছেড়ে কেউ গ্রামে গিয়ে থাকে নাকি স্বামীর ওপরে নির্ভরশীল হয়ে?”

_” কেনো?  থাকে না বুঝি?  আমি বুঝি ছেড়ে আসিনি ? আমাদের বাড়ির অমন প্প্রাচুজ্যের জীবন ছেড়ে  দিয়ে ২৪ বছর বয়েসে, সোদপুরের একতলা চারঘরের আমার স্বামীর যৌথ সংসারে ? আমাদের বাড়ি একবার গেলে বুঝতে গো  তুমি ডাক্তার কত বড় বিজনেস বাড়ির মেয়ে ছিলাম আমি। এক ডাকে বোলপুর শান্তিনিকেতনের সবাই চেনে আমাদের। পড়াশুনো ও আমার বিশ্বভারতীথেকেই ,ফরাসী সাহিত্যে। আমার স্বামীতো আবার দোজবরে ছিলেন। যদিও সতীনের সন্তান কেউ ছিলো না। আমার চেয়ে আবার ১৬ বছরের বড় বয়েসে। আমাকে তবুও তো তার সাথেই বিয়ের পিঁড়িতে আমাকে বসতে হয়েছিলো। বলেছিতো  তোমাকে ডাক্তার ইঞ্জনিয়ার স্বামি হবে আমার  খুব সখ ছিলো। সব সখ আর সূখ কী পূর্ণ হয় গো ডাক্তার মানুষের ? হয় না!  আমি পারলে  আমার বোন কেনো পারবে না গো?  আর আমার দিদি অন্য খুড়তুতো মামাতো জ্যাঠতুত দিদি বোনদের সব বড়োলোক বাড়ির  বিজনেস বাড়ির ছেলের সাথেই বিয়ে হয়েছে। কজন সুখী হয়েছে তারা বিবাহিত জীবনে? আমি তো জানি সব। আর বিবাহিত জীবনে আমিতো কম সুখী ছিলাম না এখানে এসে । আমার স্বামী আমাকে চোখে হারাতেন। আমার কোনো সাধ অপূর্ন  রাখতেন না। বাড়ির সবাই স্বীকার করে জামাই হিসাবে আমার স্বামীটি সব চেয়ে ভালো হয়েছিলো। সবই তো জানো তুমি। কিছুই  তো লুকাইনি তোমাকে!”  অকাট্য যুক্তি ওনার। আমি বলেছিলাম 

-” বিয়ের পরে যদি আপনার ছোটবোন, আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী ,আমার আর আপনার এই  গোপন সম্পর্কটা কোনো ভাবেই যদি  জানতে বা বুঝতে পারেন কি হবে তখন?  ” মেনে নেবেন বুঝি? “

 উনি আমার নাক টিপে, গাল  খামচে দিয়ে ঠোটে মৃদু চুমু খেয়ে বলেছিলেন 

_ ” নিশ্চিন্তে থাকো ডাক্তার জীবনে কোনোদিনও সে আমার থেকে অন্তত বিন্দুবিস্বর্গ  আমাদের এই সম্পর্কের কথা জানতেও পারবে না, যদি না তুমি নিজে কখনো  বল তাকে। আর শুধু আমার বোন কেনোগো, এই পৃথিবীর কেউই সেটা জানতে পারবে না আমার দিক থেকে । তোমার সেই ভয় নেই গো ডাক্তার কথা দিচ্ছি তোমাকে। আগেও কথা দিয়েছি তোমাকে। শুধু তুমি আর আমিই জানবো আমাদের দুজনের সম্পর্ক”

-”  সে না হয় পৃথিবীর কেউই জানতে পারবে না আপনার আর আমার থেকে , কিন্তু আপনার হাজব্যান্ড কিন্ত ওপর থেকে সবই দেখছেন এই যে আপনি আমারই কোলে বসেই এখন আমাকে আদর করছেন! উনি রাগ করবেন না বুঝি এতে ?” কষ্ট পাবেন না এতে??

উনি মুচকি হেসে  আমার কানের  কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলেছিলেন ” ইসস । কোলে কে আমাকে হাত ধরে টেনে এনে  বসালো শুনি? আমি ? না তুমি?” আর যদি সে দেখেও ওপর থেকে দেখুগে।  বয়েই গেছে  তাতে আমার !।ডাং ডাং করে  দিব্যি ওপরে চলে যাবার সময় এতটুক মনে ছিলো না  আমাদের কথা তার? একবারও তো বললো না সে  আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ? তাও এতো তাড়াহুরো করে ? একদম হঠাৎ করেই?  এই ছিলো বুঝি তার ভালবাসা? একবারও ভাবলো নাগো নিজের নাবালক ছেলে দুটোর কথা।  কত বয়েস বলো ওদের । ১০ আর ৬! ওরাও তো বাবার মর্ম ঠিকমত বুঝলই না। ওরা কি করবে বাবা ছাড়া? কী ভীষণ সার্থপর ছিলো উনি।  আর আমিই  বা কি করবো ওনাকে ছাড়া? ভাবে নি তো? কতই বা  বয়েস এখন আমার। ৩৭-৩৮ । এই বয়েসে একটা মেয়ের বিধবা হবার মানে বোঝো তুমি? বুঝবেই  বা কি করে  তুমি?  হলেও বা  না হয় ডাক্তার? পুরুষ মানুষ তো। আর ডাক্তারদের মনটন বলে কিছু আর থাকে না মনে হয় তোমাকে অন্তত দেখলে তাই মনে হয় আমার। আমার অবশ্য অন্য রকম ধারণাই ছিলো ডাক্তারদের নিয়ে। ভুল ভাবতাম আমি। 

-” তাই বুঝি ডাক্তারদের কারুর মন বলে কিছু থাকে না বুঝি? তাদের বউ ছেলে মেয়েদের  বাবা মা ভাই বোনদের ভালোবাসে না বুঝি মনে হয় আপনার ?একটা সত্যি কথা বলবো তোমাকে? কিছু মনে করবে না তো?

বলুন না অনেক কথাই তো হলো বলা?

উনি কিছুক্ষন আমার চোখেরদিকে একেবারেই পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে  চাপা ফিস্ ফিস্ করে বলেছিলেন  ” আমি না সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিগো ডাক্তার। পাপ আর পুন্যের কথা আমি জানিনা। ভাবিও না আজকাল।  তুমি ডাক্তার হয়েও মানো পাপ পুন্যের, ভগবানের কথা? আমি এটাও  জানি যে  আমি তোমার চেয়ে ১৩ বছরের বড় বয়েসে। আমি  বিধবা এক মেয়ে মানুষ। আমার দু দুটো নাবালক ছেলেও আছে। তাদের প্রতি আমার কর্তব্য আছে মা হিসেবে। সেটাই আমার এখন প্রথম কর্তব্য।  আমার শ্বশুড়, দেওর, জা এদের প্রতিও আমার দায় দায়িত্ব কর্তব্য ভালোবাসা আছে। আমার এখনকার সংসারের প্রতিও ভালবাসা রয়েছে। এটাও খুবই বুঝি আমার তোমার সাথে  আমার এই অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াটা  একদম ঠিক নয়। তোমারও তো বড় একটা ভবিষ্যত পড়ে আছে সামনে। তোমারও তো মা ,বাবা, বোন,  ছয় ভাই পরিবার আছে । সমাজ আছে । পাড়ার লোকজন আছে , আমাদের দুজনেরই আত্মীয় স্বজন আছে। এটাও জানি তারাও এই সম্পর্কটা মেনে নেবেন না। আমাদের নামে কলঙ্ক রটবে। এর পরিণাম খুবই খারাপ হবে। কিন্ত আমিই বা কী করবো তুমিই বলো । নিজেকেই নিজে কতবার বুঝিয়েছি। রাতের পর রাত নিজের মনের সাথে  নিজে ঝগড়া করেছি। নিজেকেই নিজে চাবুক মেরেছি। বিশ্বাস কর ডাক্তার হেরে গেছি নিজের কাছে নিজেই।  মানুষের মনের চিন্তা ভাবনার ওপরে আর তার তো আর হাত থাকে না। তাই না ডাক্তার? তোমাকে আমার নিজের করে পেতে খুব ইচ্ছে করে । তাই এই প্রস্তাবটা আমার বাপের বাড়িতে নিজেই তুলেছিলাম বাবা দাদা বৌদিদের কাছে। আমার বোনও ছিলো। বাড়িতে কারুর আপত্তি নেই। আমার বোনও রাজি। এখন তোমার যদি মত থাকে তবে আমার দাদা বউদি তোমার মা বাবার সাথে কথা বলতে যাবে। 

ক্রমশ হিসেবে চলবে

  

গল্পের বিষয়:
জীবনের গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত