প্রথম কিস্তি ।
মানব জীবনে দুঃখ-কষ্ট বালা-মুসিবত অসম্ভাবী এবং এটা আল্লাহর নির্দেশেই আসে এবং একমাত্র আল্লাহ তালাই আমাদের মুসিবত থেকে উদ্ধার করতে পারেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,” সুখ-দুঃখ সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দান করলে তিনি ব্যতীত উহার মোচনকারী আর কেহ নেই আর তিনি তোমার কল্যাণ করলে তবে তিনিই তো সর্বশক্তিমান ।” সূরা আনাম, আয়াত-১৭) ।
ক্যানসার শুধু একটি দূরারোগ্য ব্যাধির নামই নয়, ভয় ও আতংকের নামও বটে । ক্যানসার শব্দটির নাম শুনলে মানুষ স্বভাবতই আঁৎকিয়ে উঠেন । এই মহামারি রোগটি যে বা যার পরিবারের কোন সদ্যস্যের জীবনে ধরা পরে,সেই ব্যক্তি বা তার পরিবারটি আর্থিক ও মানুষিক ভাবে সর্বশান্ত হয়ে যান । ক্যানসার মহামারী রোগের সাথে আমার পরিচয় বেশ পুরানো । সালটি সম্ভবত ২০০৪ । নাম তার হেলাল । সর্ম্পকে চাচাত ভাই । একটি কলেজে অধ্যাপনা করতেন । অতি কাছের মানুষ ছিলেন । ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন । চিকিৎসাও শুরু হলো । আমি সবে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতোকোত্তর শ্রেণীতে (মার্ষ্টাস) অধ্যয়নরত । বন্ধু-বান্ধব মিলে হেলাল ভায়ের জন্য কয়েক ব্যাগ ব্লাড এর ব্যাবস্থা করলাম । অনেক দৌড়াদৌড়ি করলাম । চিকিৎসাও চলতে থাকলো । কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেলেন । এভাবেই প্রথম পরিচয় ক্যানসার নামক দূরারোগ্য ব্যাধির সাথে । দ্বিতীয় পরিচয় ২০০৮ সাল । সবে মাত্র বিবাহ সম্পন্ন করেছি । আমার শাশুরের ক্যানসার সনাক্ত হলো । উনাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হলো । চার বৎসর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২৫ নভেম্বর ২০১২ সালে উনিও না ফেরার দেশে চলে গেলেন । সর্বশেষ পরিচয়, সাল ডিসেম্বর ২০১৫ । আমার মামত ভায়ের ছেলে, ওর নাম রাজু আহম্মদ । বয়স মাত্র ১৭ কি ১৮ । সবেমাত্র মেট্রিক পাশ করেছে । ব্রেইন টিউমার (ক্যান্সারে) আক্রান্ত হয়ে আমার বাসা (ঢাকা) থেকেই চিকিৎসা শেষ করে ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ বিদায় গ্রহন দেশের বাড়ীতে ফিরে যায় । উল্লেখ্য রাজুর মাও ব্রেষ্ট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল । যখন আমি লিখছি তখন রাজুর মা বেঁচে থাকলেও দু বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে রাজু আমাদের মাঝ থেকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন । (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেয়ুন ) ।
তবে সুখবর হলো ফাষ্ট ব্লাড সর্ম্পকীয় আমার পরিবারের কোন সদস্যের ক্যান্সার আক্রান্তের ইতিহাস আ্মার জানা নেই । কয়েকদিন পর…
১৬ জানুয়ারী ২০১৬ ।
দিনটি ছিল শনিবার । দুপুরের খানা সেরে সবেমাত্র অফিসের নিজ আসনে বসেছি । শুরুটা হিসকির মাধ্যমে । হঠাৎই হিসকি উঠতে লাগলো । স্বভাবতই পানি বা লবন যুক্ত পানি খেলে হিসকি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু বিধি বাম । কোন কিছুতেই ব্যাপারটির সমাধান হলো না । অফিস সময় শেষ হয়ে এলো । বাসার দিকে ছুটে চল্লাম । হিসকি উঠতেই থাকলো । বিষয়টি জেনে আমার স্ত্রী পাশ্ববর্তী একজন জেনারেল প্রাকটিশনার ডক্টর কে অবহিত করল, ডক্টর সাহেব কিছু একটা মেডিকেশন দিয়েছেন । বাসায় ফিরে রাতের খাবার শেষে ট্যাবলেট সেবন করায়, কিছু সময়ে মধ্যে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম । সম্ভবত ডক্টর ক্যাফেইন জাতীয় কোন ট্যাবলেট দিয়েছিলেন । পরবর্তী ভোড়ের সূর্যোদয় হলো । সব কিছুই স্বাভাবিক মনে হলো । রবিবার যথারীতি অফিসে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । কোন সমস্যা ছাড়ায় অফিসের কার্যাদি চলতে থাকলো । উল্লেখ্য বাসায় মেহমান আসায় একটু আগে-ভাগেই অফিস থেকে বাসায় ফিরে এলাম । মেহমান সম্পর্কে ভাইরা-ভাই । ডক্টর দেখাতে ঢাকাতে এসেছেন । উনার হার্টের সমস্যা ছিলো । ও দিন সন্ধ্যায় মেহমান সহ সবাই ডক্টর দেখাতে হাসপাতালে গেলাম । ইতিমধ্যে আমার স্ত্রী গত দিনের ঘটনা উল্লেখ পূর্বক আমাকে ডক্টরকে দেখাতে পীড়াপীড়ি করাই একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের সরনাপন্ন হলাম । কিছু চেকআপ পুর্বক ব্লাড টেষ্ট করাতে বল্লেন । আমি ব্লাড স্যাম্পল দিয়ে সবার সাথে বাসায় ফিরে আসলাম । পরবর্তী দিন রির্পোট সংগ্রহ করে ডক্টর এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম । ডক্টর মহোদয় তেমন কিছু না বলে, একজন ডক্টরের নাম চিরকুটে লিখে দ্রুত সাক্ষাতের দাগিদ দিলেন । ডক্টরের নাম মোঃ ইউনুস, হেমোটোলোজিস্ট , গ্রীন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে বসেন । হেমোটোলোজিস্ট কি তেমন কোন ধারনা ছিলো না । সে করণে বিষয়টি নিয়ে আমার শ্যালক সাথে পরামর্শ করি । ও একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কর্মরত ছিলো, এ বিষয়ে ভালো ধারনা ছিলো । শ্যালক বিষয়টি আমলে নিয়ে নিজেই ঢাকা মেডিকেলের হেমোটোলোজি বিভাগের প্রধান ডক্টর এম এ খান এর আ্যপোয়েন্টমেন্টের ব্যাবস্থা করে দিলো ।
১৯ জানুয়ারী, মঙ্গলবার আ্যপোয়েন্টমেন্ট । নিদিষ্ট সময় আ্যপোয়েন্টমেন্ট পেলাম । চেকআপ শেষে ব্লাড টেষ্ট সহ যাবতীয় টেষ্ট করিয়ে পরবর্তী আ্যপোয়েন্টমেন্টে রির্পোট দেখাতে বল্লেন ।
২১ জানুয়ারী , বৃহস্পতি বার ডক্টর রির্পোট দেখলেন, আমাকে সরাররি কিছু বলতে না চেয়ে পরিবারের অন্য কাউকে বিষয়টি বলতে চাইলেন । আমি দৃঢ়তার সাতে জানতে চাইলাম সমস্যাটা কি ? ডক্টর উত্তরে আমার লিকিউমিয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন । আমি প্রশ্ন করি লিকিউমিয়া কি ? ক্যান্সার শব্দের সাথে পরিচয় থাকলেও, লিকিউমিয়া সর্ম্পকে মোটেও কোন ধারনা ছিলো না্ । ডক্টর যা জানালেন লিকিউমিয়া এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার যা রক্ত এর অস্থি মজ্জনকে প্রভাবিত করে । চুড়ান্ত ফলাফল জানার জন্য বোন ম্যারো টেষ্ট করার কথা জানালেন ।
চলবে………..
