মাশরাফি

মাশরাফি

একটি নাম! একটি স্পন্দন! একটি শিরোনাম!

হাস্যজ্বল মাশরাফি বিন মুর্তজা

শিহরণ জাগানো একজন উন্মাদ কবি ঘাম জড়াচ্ছে অবিরাম। শেষ থেকে শুরুর কারিগর মাশরাফি শব্দ যেন এক উন্মাদনা, আবেগ, অনুপ্রেরণা, মন-প্রাণ উছলে উঠা ভালবাসা। মাশরাফি এক অদ্ভুত মুগ্ধতা! কৃষ্ণ গহ্বরের অতল রহস্যের মতো এই মুগ্ধতার যেন শেষ নেই, কোন সীমা-পরিসীমা নেই। শুধু আমার কি’বা আপনার কাছে কেন, এদেশের লক্ষকোটি ক্রিকেটামোদীদের কাছেই তিনি এমন। মনে হয় তাঁর কাছে আশ্চর্য্য এক জাদুর কাঠি আছে, যা দিয়ে তিনি অনায়াসে মানব-হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন। দূর্বোধ্য তাঁর ব্যাক্তিত্ব, দূর্বোধ্য তাঁর সম্মোহন! মাশরাফির জীবন-দর্শন, চলন-বলন, বচন-বাঁচন তাঁর সব-সবকিছু যেন ভাললাগার দিনলিপি। তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা, নিপাট-নিস্কলুষ চরিত্র-বলে সর্বজন গ্রহনযোগ্য হয়েছে, আসন নিয়েছে আপামর জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায়।

তাঁর সম্পর্কে এই যে এতকিছু, আমাদের এত উচ্ছ্বাস তা কি বড্ড বাড়াবাড়ি? এর কি আসলেই কোন যৌক্তিকতা আছে? ‘মাশরাফি’ কি বাংলাদেশীদের চিরন্তন হুজুগের কোন একটি? তাকে নিয়ে বই লেখা হয়েছে, লিখেছেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। যিনি মাশরাফিকে আখ্যায়িত করেছেন ‘আচার্য্য মাশরাফি, আশ্চর্য্য মাশরাফি’ বলে। মাশরাফি কেন আশ্চর্য্য? কেন আচার্য্য?

ব্যাক্তিগত জীবন ও মাশরাফি 

সময়টা ১৯৮৩ সনের ৫ অক্টোবর! মা হামিদা মুর্তজার কোলে বাবা গোলাম মুর্তজার ঘর আলোকিত করে আসেন ছোট্ট শিশু কৌশিক ওরফে মাশরাফি বিন মুর্তজা। কৌশিক থেকে মাশরাফি কিংবা নড়াইল এক্সপ্রেস বা ম্যাশ হওয়ার গল্পটা পরিচিত হলেও অপরিচিতভাবে বার বার আলিঙ্গন করে ক্রিকেটামোদীদের।

সময়ের স্রোতে সবাই গাঁ ভাসিয়ে দিলেও মুর্তজা এখন সেই শৈশবের কৌশিক রয়ে গেছেন। সময় পেলই মাশরাফিকে রেখে কৌশিকে ফিরে যান। সময় পেলেই বাইকপ্রিয় মুর্তাজা বাইক নিয়ে চিত্রা নদী ব্রিজের ওপরে ভাসিয়ে দেয় শৈশবের মোহনায়।

প্রণয়, প্রেম, বিবাহ, সংসার আর আজ মেয়ে হুমায়রা মুর্তাজা, ছেলে সালেহ মুর্তাজা এবং স্ত্রী সুমনা হক সুমিকে নিয়ে সুখী সংসার বেঁধেছে মাশরাফি বিন মুর্তজা

পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় নড়াইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।২০০১ সালে নড়াইল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে পাশ করে মুর্তাজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে অর্নাস করেন কিন্তু ক্রিকেটের ব্যস্ততার জন্য বিদায় জানাতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে।

ভিক্টোরিয়া কলেজে ম্যাশের সাথে পরিচয় হয় সুমনা হক সুমির সাথে নোট আদান-প্রদান এর সূত্রে সেখান থেকে প্রণয়,প্রেম এবং পরবর্তী ২০০৬ সালে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয় ম্যাশ। পরবর্তীতে মেয়ে হুমায়রা মুর্তজা ও ছেলে সালেহ মুর্তজা নিয়ে সাংসারিক জীবনের শুভযাত্রা হয়।

ক্রিকেট বনাম মাশরাফি

তিনি শেন বন্ড, শোয়েব আক্তার কিংবা ব্রেট লি’র মত গতি তারকা ছিলেন না। ছিলেন না তাদের মত বিধ্বংসী কেউ। স্বাভাবিকভাবেই শারীরিক দিক থেকেও তাদের মত শক্তিশালী ছিলেন না। তিনি নিজের স্বপ্নকে ১৩ বার ছুরি-কাঁচির নিচে পেতে দিলেও সেটাকে হারাতে দেন নি। এতকিছুর পরও এখনো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন ক্রিকেটের সেই বাইশ গজকে নিয়েই। আক্রমণাত্মক, গতিময় বোলিং দিয়ে অনূর্ধ্ব -১৯ দলে থাকতেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার ও তখনকার বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু!

ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা এক আবেগের প্রতিশব্দ!

বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে একটিমাত্র ম্যাচ খেলেই সুযোগ পায় জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার। দিনটা ৮ নভেম্বর ২০০১! বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। চিত্রা পাড়ের সেই দুরন্ত কৌশিক পরিচিতি পায় ম্যাশ কিংবা নড়াইল এক্সপ্রেস নামক রূপক নামে। সেই ম্যাচেই অভিষেক হয় খালেদ মাহমুদের। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। মজার ব্যাপার হল, মাশরাফির প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচও ছিল এটি। তিনি এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ৩১তম খেলোয়াড় এবং ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয়। একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সাথে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সাথে বোলিং ওপেন করে ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২টি উইকেট।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে হাঁটুর ইনজুরি দু’বছর ছিটকে রেখেছে মাঠের বাহিরে

সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্টে বোলিং এর মাঝে হাঁটুতে আঘাত পেয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়েন মাঠে এরপর প্রায় দু’বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলায় তিনি সফলতা পান। ৬০ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর আবারও ইনজুরি তাকে মাঠ থেকে বিতাড়িত করে।

২০০৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় রাহুল দ্রাবিড়কে অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে আউট করে তিনি স্বরুপে ফেরার ঘোষণা দেন। সেই সিরিজে ধারাবাহিকভাবে বোলিং করেন এবং টেন্ডুলকার ও গাঙ্গুলীকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন। তবে ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনি উইকেট পাননি। এই সিরিজের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয়ের নায়ক ছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

এ’যেন এক অনুপ্রেরণার ডাকবাক্স, যন্ত্রনাকাতর পেসার মাশরাফি

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে ভালো পেস বোলারের ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশে মোহাম্মদ রফিকের মত আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোন পেস বোলার ছিল না। মাশরাফি বিন মুর্তাজা বাংলাদেশের সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন।

২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তিনি এ সময় ৪৯টি উইকেট নিয়েছেন। ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে মর্তুজার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ৩৮ রানে ৪ উইকেট দখল করে এবং বিশ্বকাপের প্রস্তুতি খেলায় নিউজিল্যান্ডের সাথে বিজয়েও মাশরাফির ভূমিকা আকাশচুম্বী।

মাশরাফি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন যা কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ইনজুরি যেন অর্ধাঙ্গিনীর মত জড়িয়ে ধরে রেখেছিল ম্যাশ খ্যাত মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। যার ফলে দূর্ভাগ্যকে আলিঙ্গন করে ত্যাগ করতে হয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটির বিশ্বকাপ। একবার কিংবা দু’বার-তিনবার নয় এগারো বার ইনজুরিতে পড়ে ১৩টা অস্ত্রোপচার করেও তিনি এখনো লাল সবুজের জার্সি গাঁয়ে মাঠ বেড়ান এই ভাবে। তাই তো তখন থেকেই ক্রিকেট প্রেমিরা তার অবসরের দিন গুণতে থাকলেও মাশরাফি আবারো ফিরে আসেন নেতা হয়েই ২০১৪ সালে। ২০১৪ সালের একটা নড়বড়ে দলকে তিনি তুলে এনেছেন বিশ্বমানের কাঁতারে। তার এই সময়ে পাল্টে গেছে ক্রিকেটীয় কালচার। অন্যদিকে, তিনি নাকি অধিনায়কের কোটায় খেলেন, অনেক সময় এই প্রশ্ন টা ওঠে, কিন্তু একজন লিডারের গুরুত্ব শুধু মাত্র তারাই তো বলতে পারবে যারা এসবের মাঝে একটা দিনও ছিল। ৬ বছরের মেয়েকে কোল থেকে সরিয়ে কি়ংবা এভাবে বেপরোয়া হয়ে ক্রিকেট খেললে পঙ্গু হতে পারেন জেনেও তিনি বারবার পথ ধরেছেন দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে।

২০১৬ সালের রকেট বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় খেলায় ২ উইকেট সংগ্রহের মাধ্যমে মোট ২১৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী হিসাবে তুলে ধরেন নিজেকে। শরীরের তেজ জমাট বাঁধিয়ে তরুণদের জন্য মানুষের ভালবাসার অনুপ্রেরণা ২০১৭ সালের ৬ই এপ্রিল বাংলাদেশ শ্রীলংকা সিরিজের শেষ টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ খেলা থেকে অবসর নেন মাঠে ম্যাশ নামে পরিচিত মাশরাফি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার যে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় অবসর নেয়।

ঘরোয়া দলের তথ্যঃ

বছর                          দল

২০০২–বর্তমান       খুলনা ডিভিশন

২০০৯                      কলকাতা নাইট রাইডার্স

২০১২-২০১৩           ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স

২০১৫-২০১৬           কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

২০১৭–২০১৮           রংপুর রাইডার্স

২০১৯–বর্তমান        ঢাকা প্লাটুন

আন্তর্জাতিক ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে হাস্যোজ্জ্বল ভংগিমায় ট্রফি হাতে ম্যাশ  

আন্তর্জাতিক তথ্যঃ

টেস্ট অভিষেক: ৮ নভেম্বর ২০০১ বনাম জিম্বাবুয়ে (ক্যাপ ১৯)

শেষ টেস্ট: ৯ জুলাই ২০০৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওডিআই অভিষেক:  ২৩ নভেম্বর ২০০১ বনাম জিম্বাবুয়ে (ক্যাপ ৫৪)

শেষ ওডিআই: ৬ মার্চ ২০২০ বনাম জিম্বাবুয়ে

টি২০আই অভিষেক:  ২৮ নভেম্বর ২০০৬ বনাম জিম্বাবুয়ে (ক্যাপ ৪)

শেষ টি২০আই: ৬ এপ্রিল ২০১৭ বনাম শ্রীলঙ্কা

 

 অধিনায়কত্ব ও মাশরাফি

অধরা এক স্বপ্ন ও আক্ষেপের সামনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা

২০০৯ সালের শুরুতে মাশরাফি বিন মুর্তজা অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের সহকারী ছিলেন। পরবর্তীতে ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি মোহাম্মদ আশরাফুলের স্থলাভিষিক্ত হন এবং তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে নিজের প্রথম ম্যাচেই হাঁটুতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাশ। ঐ খেলায় বাংলাদেশ জয়লাভ করে কিন্তু মাশরাফি এই চোটের কারণে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠের বাইরে ছিলেন। উক্ত ম্যাচসহ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেন সাকিব আল হাসান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের সাথে হোম সিরিজে পুনরায় অধিনায়কত্ব পান নড়াইল এক্সপ্রেস। তবে এ বার তিনি শুধু একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য দায়িত্ব পান এবং এবারও তার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের ৬ মার্চ সফররত জিম্বাবুয়ের সাথে তৃতীয় ওডিআই ম্যাচের পর ওডিআই দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে যান। শেষ ওডিআইয়ে জয় নিয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়লেও খেলা চালিয়ে যাবেন এমনটা তিনি নিশ্চিত করেন ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে। সতীর্থদের ভালবাসায় সিক্ত ৩৬ বছর বয়সী এই দল নেতা ৮৮টি ওয়ানডে খেলায় নেতৃত্ব দিয়ে ৫০টিতে জয় লাভ করে (জয়ের হার: ৫৬.৮)।

রাজনীতি বনাম মাশরাফি

আওয়ামীলীগের মনোনীতপ্রার্থী মাশরাফি মুর্তাজা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা

১১ নভেম্বর, ২০১৮ আওয়ামী লীগ ব্যানারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, মাশরাফি নড়াইল-২ আসনের হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১৮ অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে ২৭৪০০০ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কোন দেশের যে কোন খেলার জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকাবস্থায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং বিজয়ী হওয়ার ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম। যদিও পেশাদার খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থাতেই সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার উদাহরণ বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নতুন নয়। ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগেই শ্রীলঙ্কার ২০১০ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ঐ নির্বাচনে বিজয়ীও হন।

নড়াইল-২ আসনের নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ায় ফুলের মালা দিয়ে বরণ করছে নড়াইলবাসী

শৈশব থেকেই মানুষ নিবেদিত প্রাণ মাশরাফি। নিজের জেলা নড়াইলকে সাজানোর ভালবাসা থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ যা নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হলেও পরবর্তী মাশরাফি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে বির্তকের অবসান ঘটায়। জনগণের সেবা করতে গিয়ে নড়াইল এক্সপ্রেস গত ১৯ জুন ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে সুস্থ হন।

ছেলে সম্পর্কে বাবা গোলাম মুর্তজার বক্তব্য এরকম

বাবা গোলাম মুর্তজা বুকে জড়িয়ে নিয়েছে সন্তান মাশরাফি বিন মুর্তজাকে

 ও যেন মানুষের উপকার করলেই স্বস্তি পায়। অর্থকড়ির দিকে ওর মন নেই বললেই চলে। ও যে ব্যাংকে টাকা রাখে, সেখান থেকে সুদ নেয় না। ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ বলেই ও ওটা এড়িয়ে যায়। আপনি শুনলে অবাক হবেন, আমার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। শুধু পাঁচ ওয়াক্তই নয়। ও নিয়মিত তাহাজ্জুতের নামাজও পড়েন। শুধু নিজেই পড়েন তা নয়। বন্ধুবান্ধবদেরও নামাজে তাগিদ দেন সব সময়। একটা ঘটনার কথা বলি- আইসিএলে যখন বাংলাদেশ দলের বিশাল একটা গ্রুপ গেল। মাশরাফির কাছে ১৬ কোটি টাকার অফার এসেছিল। বলেছিল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে টাকা। আমার ছেলে কী বলেছিল শুনবেন। ‘আমি পতাকার জন্য খেলি। টাকার জন্য না’।

মা হামিদা মুর্তজা বলেছেন

ওর তো কোনো দিনই কোনো চাহিদা ছিল না। শীতকালে যদি সোয়েটার না থাকত, ও পাঁচ–ছয়টা শার্ট একবারে পরে নিত। লুঙ্গি ছিঁড়ে গেলেও কাউকে কিছু বলত না। বরং মজা করে আমাকে বলত, আম্মা, বলো তো কয়টা শার্ট গায়ে দিয়েছি? আর জানেন, কোনো ম্যাচে জিতলে আমাকে ফোন করে বলবে, আম্মা তুমি খুশি? আর জিততে না পারলে ঘরে বসে থাকবে একা একা। কারও সঙ্গে কথা বলবে না। বউ বাচ্চার সঙ্গেও কথা বলবে না। ও নিজের কষ্টটা কাউকে জানতে দিতে চায় না। ও কোনো দিন কারও কাছে কিছু চায়নি।

শেষ বাক্যাংশে আক্ষেপ

এই যে মানুষের ভালোবাসা, আমি টের পাই প্রবলভাবে। আজকে শপিংয়ে বের হয়েছিলাম, ঝাঁকে ঝাঁকে সবাই এসে বলা শুরু করলো,  গুরু, সেলফি! এখন কয়জনের সাথে ছবি তুলব বলেন? পরে শেষ পর্যন্ত চলে আসতে হলো। আমার খারাপ লাগলো খুব। সবাই কতো আশা নিয়ে আসে ছবি তোলার জন্য! কিন্তু অবাক করা ব্যাপার কী জানেন? অধিকাংশই শুধু সেলফি তুলতে আসেন, তারপর সেলফি তুলেই চলে যান! কেউ জিজ্ঞেসও করেন না, ‘‘ভাই কেমন আছেন?’’ অথচ আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমিও নিশ্চয়ই তার সাথে কুশলাদি বিনিময় করতাম। সবাই কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। আমিই হয়তো ব্যাকডেটেড হয়ে গেছি !

ইএসপিএন কর্তৃক পরিচালিত “ওয়ার্ল্ড ফেইম ১০০ এ বিশ্বের সেরা ১০০ জন মধ্যে অন্যতম ম্যাশ। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০টি উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তিনি ৫ম বোলার। কেন তিনি অধিনায়কদেরও অধিনায়ক, ক্যাপ্টেন কিং, মানবতা-মনুষত্ব্যের মূর্ত প্রতীক, মহৎ থেকে হয়েছেন মহোত্তর এইসব বচনই তা প্রমাণ করে। তাই সাকিবের মতোই বলি, মাশরাফি কোন মিথ নন, হতে পারেন না। তিনি চিরন্তন, তিনি শিখা অনির্বাণের মতো জ্বালিয়ে রেখেছেন অনুপ্রেরণা ও মানবতার মহোত্তম দ্বীপশিখা। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ সন্তান। ক্রিকেট-অমৃতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুত্র। যে কিনা ভক্তের দ্বারে “প্রিন্স অব হার্টস।

গল্পের বিষয়:
জীবনের গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত