আমরা দুই ভাই বোন অনেক ক্লোজ ছিলাম, আপু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। আপুর সাথে সব শেয়ার করতাম, খুনসুটি করতাম।
গল্প না করলে আমাদের দিন কাটতই না, আপুকে ছাড়া আমার চলতই না।
কিন্তু সব মেয়ের মতো আপুও যথারীতি বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো অন্যর হাত ধরে। ওইখানে গিয়ে আমাকে সময়ই দিতে পারত না, ফোন দিতাম ধরে বলত পরে ফোন দিস, পরে আর খেয়াল থাকত না। আমার অনুরোধ না রেখে হাসবেন্ডের অনুরোধ রাখত, বাড়ি তেমন আসত না। আমার এই চেইঞ্জ অব প্রায়োরিটি সহ্য হত না, শৈশব থেকে আমার যে অধিকার সেইটা ছাড়তে চাইতাম না। কিন্তু এক পর্যায়ে ইগ্নোরড হতে হতে আর এভোয়েড হতে হতে মেনে নিয়েছি।
আমার বাড়ি খুলনা, আপুর বিয়ে মতিঝিলে। প্রথমে ৯ এ পড়তাম বলে যেতে পারতাম না। বাট ডেইলি ফোন করতাম, কখনও উত্তর দিত, কখনও দিত না। বাবাকে রাজি করিয়ে ২ মাসে একবার করে চলে যেতাম। কিন্তু ওইখানে গেলেও আপু তেমন সময় দিতে পারত না। সারাক্ষণ তার হাজবেন্ডকে নিয়েই ব্যস্ত থাকত। আমার গল্প শোনার মতো সময় আপুর থাকত না, শেয়ার করার মতো লোক না পেয়ে খুব কাঁদতাম প্রথমে।
আমি এই চেঞ্জটা ১ বছর পর মেনে নিয়েছিলাম, বন্ধুবান্ধব এল জীবনে। এরপর সপ্তাহে একবার কথা হতো, এরপর বাচ্চা হওয়ার পর আস্তে আস্তে মাসে একবার হওয়া শুরু করল। এক পর্যায়ে আপুর জন্য আর কোন মায়ায় থাকলো না আমার।
আপুর বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। ৫ বছরে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে আমার আর আপুর। আমি এখন পড়ি ঢাবিতে কিন্তু ঢাকাতে থাকলেও ওর বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে না।
এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। হঠাৎ এই লকডাউনে আপু অতিরিক্ত ফোন করা শুরু করেছে, আমি ধরি মাঝেমাঝে, মাঝেমাঝে ধরি না। আপু মা কে ফোন করে বলে আমি কেন ধরি না ইত্যাদি ইত্যাদি।
সত্যি কথা বলতে আমার এখন আপুকে ভালোই লাগে না। তার মুখই দেখিনি ৩ বছর প্রায়। প্রত্যেকটা ফোন কল বিরক্ত লাগে, ধরতে ইচ্ছা করে না। আমাদের জীবনের প্রায়োরিটি চেঞ্জ হয়ে গেছে, আমি এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
সত্যি বলতে আপুকে এখন স্মৃতিতেই সুন্দর লাগে, এই নতুন মানুষটাকে আমার বড্ড অচেনা লাগে, অপরিচিত লাগে। এই মানুষটাকে দেখে আমার একবারও নিজের আপু মনে হয় না। ভালোও লাগে না।
কিছু মানুষ স্মৃতিতেই সুন্দর, হারিয়ে যাওয়াতেই সুন্দর। ফেরত আসলে বড্ড বিরক্ত লাগে।