সোনা বনু

সোনা বনু

পরিচয়টা ‘হৃদয়ে সৈয়দপুর’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ম্যাসেন্জার গ্রুপে। প্রায় প্রতিদিনেই তাকে আমি আপু বলে সম্মোধন করতাম। সেও আমাকে ছোট ভাই বলে ডাকতো। বেশ ভালো একটা ভাই বোনের সম্পর্ক আমাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিদিন সে কারো খবর নেউক বা না নেউক আমার খবর ঠিকে নিতো। কারণ আমি যে তার ছোট ভাই। আমিও আপুর সবসময় খবর নিতাম। যখন আপু আমায় বলতো আসিফ কেমন আছিস তখন কেন জানি মনে হতো সে যেন আমার কলিজার আপন বোন৷ আপুকে বেশিরভাগই আমি সোনা বনু বলে ডাকতাম।

আপুর সাথে সামনা সামনি দেখা ন হলেও ফেসবুকে আপুর ফটো দেখেছিলাম। প্রোফাইল ফটোটা ছিল অনেক দূর থেকে তোলা। তাই ভালো মত আপুর ফেসটা বোঝা যাচ্ছিলোনা। ধীরে ধীরে আপুর আর আমার ভাই বোনের সম্পর্কটা গভির হতে লাগলো। আপু আমায় নিজের ভাইয়ের মত মানতো আর আমিও আপুকে নিজের বোনের মত মানতাম। হ্যা সত্যিই আপু আমার নিজের বোনের মত ছিল।

বয়সে ও পড়াশোনায় আপু আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র। মানে আমি একাদশ শ্রেণিতে আর আপু দ্বাদশ শ্রেণিতে যদিও আপুর বাসা আমাদের প্রিয় সৈয়দপুরে কিন্তু আপু পড়ালেখা করতো ঢাকার মোহাম্মদ পুরের একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিনেই আমি আপুকে টেক্সট করে বলতাম আপু তুমি বাড়ি কবে আসবা? আপু উত্তরে বলতো ভাই আগে পরিক্ষাটা দেই তারপর বাড়ি যাব ইনশাআল্লাহ। আপুকে এই প্রশ্নটা করার কারণ হচ্ছে আপুকে দেখার আগ্রহ ছিলো অনেক। কারণ আপু ছিল আমার নিজের বোনের চেয়েও অনেক বেশি আপন।

কারণ শুধুমাত্র ফেসবুকে পরিচয় হয়েও আপু যে আমার কেয়ার করতো সেটার অনুভূতি টাই অন্যরকম। আপুর সাথে মাঝে মাঝে আমার খুনসুটি হতো। আপুকে আমি মাঝে মধ্যেই অনেক রকম সয়তানি করতাম। আর আপু একটুতেই রাগ হয়ে যেত। তখন আপু বলতাম সোনা বনুটা কি রাগ করেছে। তখন আপু হেসে ফেলত। বলতে গেলে খুব সুন্দর একটি মিষ্টি ভাই বোনের সম্পর্কে আপু আর আমি আবদ্ধ হয়েছিলাম।

আমি মাঝে মধ্যেই আপুকে নিয়ে ফানি ট্রল ফেসবুকে পোষ্ট করতাম আর সেই পোস্টে আপুকে মেনশন দিতাম অনেকবারেই আপু রাগ হতো কিন্তু পরে আবার হেসে ফেলত। এভাবেই বেশ ভালো ভাবে অনেকগুলো দিন কেটে গেলো।

আপুর ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হলো। বেশ ভালোমতই আপু পরিক্ষা দিচ্ছিলো। একদিন রাতে দেখতেছি আপু ফেসবুকে একটিভ ছিলো আর পরের দিন আপুর পরিক্ষা ছিলো। আমি একটিভ দেখা মাত্রই আপুকে টেক্সট করলাম আপু কাল যে তোর এক্সাম আছে, পড়া না পড়ে ফেসবুক চালাচ্ছো। আপু উত্তর দিলো ভালো লাগতেছেনা রে, পড়া পরেছি। আমি বুঝতে পারছিলাম আপু কোন কারণে আপসেট ছিলো, তখন আমি ডাটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরিক্ষা শেষ হলো, এখন ফলাফলের পালা। দেখতে দেখতে ফলাফলের দিনটি চলে আসলো। দুইটার সময় ফলাফল প্রকাশ হলো। আমি তারাতারি ফেসবুকে গিয়ে আপুকে টেক্সট করলাম আপু কত পয়েন্ট পেয়েছো, আপু সাথে তার রেজাল্টের কথা বললো, বেশ ভালোই ফলাফল করেছিল আপু। আমি তখন আপুকে অভিনন্দন জানালাম আপু আমাকে ধন্যবাদ জানালো৷

পরিক্ষার ফল বেড়িয়েছে এবার আপুর বাড়ি আসার পালা। আপুকে বললাম আপু বাড়ি কবে আসবা? আপু বললো ২৪ তারিখে আসবো আর আমার মিষ্টি ভাইটার সাথে দেখা করব। আমি বললাম ঠিক আছে আপু দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

তখন কেন জানি আমার সময় টা ভালো যাচ্ছিলোনা। প্রায় প্রতিদিনই আমি আপসেট ছিলাম। আপু ২৩ তারিখ রাতে গাড়িতে চরে ২৪ তারিখ সকালে বাড়ি আসলো। ঠিক সেইদিনেই আমি এমন একটা কাজ করে ফেলে যেটা কেউ ভাবতে পারেনি, হ্যা আমি কোন এক কারণে সুইসাইড এটেন্ট করেছিলাম। আমাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায় আর আমাকে ওয়াশ করে চার তলার পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের ১৪নং বেডে রাখে। আমি সুইসাইড এটেন্ড করেছি সেটা কি করে যে আপু আর গ্রুপের সবাই শুনতে পায় সেটা জানিনা, আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাইতিলাম আর কাঁদতেছিলাম ঠিক তখনি আমার প্রিয় সংগঠন ‘হৃদয়ে সৈয়দপুর’র সবাই আমাকে দেখতে আসলো সাথে ছিলো আমার মিষ্টি আপুটা। প্রায় অনেক্ষন ওরা সবাই আমার পাশে বসেছিলো আর আমাকে বকা দিচ্ছিলো। আর আমার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়তেছিলো৷

আপু আমার কাছে এসে বললো, আসিফ তুমি এমন করবা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি, তোকে মাইর দিতে ইচ্ছে করছে। অামি আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর ভাবলাম আপুর সাথে এমনভাবে দেখা হবে সেটা কখনোই ভাবিনি। প্রায় চারদিন হাসপাতালে থাকার পর খোদার দোয়ায় সুস্থ হয়ে বাড়ি আসি। তারপরের দিন আমি ফেসবুকে লগইন করি, কিছুক্ষণ পর আমার সেই মিষ্টি আপুটার টেক্সট আসলো আসিফ এখন কেমন আছিস? আমি বললাম ভালো আছি আপু বলো আর এসব পাগলামি করবি না, এগুলো কেউ করে? আমি বললাম ঠিকআছে সোনা বনু করবনা। তারপর আরো অনেক কিছু বলেছিলো।

দেখতে দেখতে আরো কয়েকদিন চলে গেলো, আমার সোনা বনুটা আবার ঢাকায় চলে গেলো। আপুর সাথে দেখা করার ইচ্ছেটা ছিলো অনেক কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আপুর সাথে শুধু কিছু সময়ের জন্যই দেখতে পেয়েছিলাম অসুস্থ অবস্থায়। তবে সেটা আমার নিজের জন্যই হয়েছিলো সেটা আমি মানি।

গল্পের পাঠক হয়ত ভাবতেছে লেখক বারবার আপু, সোনা বনু বলতেছে, কিন্তু আপুটা কে আর তার নামই বা কি? হ্যা বলতেছি আমার সোনা বনুটার নাম হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদৌস জিন্নাত। সে আমার নিজের বোন না হলেও আমার অনো অনেক আপন ছিলো। সে যেন আমার কলিজার আপন বোন৷

পৃথিবীতে চলার পথে এমন অনেক সম্পর্ক তৈরী হয় যেটা আপন জনের চেয়েও আপন হয়। তেমনি আমার আর জান্নাতুল বনুর সম্পর্কটা। বনুর সাথে এখনও প্রতিদিন কথা হয় প্রতিদিন খুনসুটিও হয় তবুও আমাদের সম্পর্কটা অটুট থাকে। আর আমি এটা আশা করি আমাদের ভাইবোনের সম্পর্কটা এভাবেই সারাজীবন অটুট বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে।

গল্পের বিষয়:
জীবনের গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত