-রোহান তুমি আজ এত তারাতারি,
-কেন?
-নাহ্ প্রতিদিন আমি আগে এসে বসে থাকি, আজ তুমি আগে থেকে বসে আছ তাই।
-নাহ্ এমনিতেই,
-আচ্ছা বাদ দেও, তোমার চাকরির কি খবর বল?
-কোনটা?
-ঐ যে ইকবাল ভাই একটা চাকরির কথা বলছিলেন।
-ওহ, সেটার খবর নেওয়ার জন্যই ইকবাল ভাইয়ে দোকানে গেছিলাম। তার পর একটা ঘটনা ঘঠে গেল।
-কি হইছে?
-নাহ্ তেমন কিছু না। ইকবাল ভাইয়ের দোকানে যেতেই তিনি আমাকে বসিয়ে কোথায় চলে গেলেন, তার পর দুই তিনটা ছেলে এসে তার কথা জানতে চাইলে আমি বললাম সে ত দোকানে নাই, কি লাগবে আমাকে বলুন।
তার পর আমার আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কিল ঘুষি শুরু করল।।।।।।
-হা হা হা, এত দিন ইকবাল ভাইয়ের কথা শুনেছিলাম, আর আজ তার দোলাইটা তোমার ওপর দিয়ে গেল।
-আরে না তেমন কিছু করেনি,
-হুম সেটা ত দেখতেই পাচ্ছি, শার্টের বোতামটা ছিড়ে গেছে,
-দৌড় দেওয়ার সময় হয়ত কলারে ধরছিল, তাই।
-আচ্ছা চল এখন তোমার শার্টের বোতাম ঠিক করতে হবে, তার পর কোনো রেষ্টুরেন্টে বসে নাস্তা করব।
-না, আজ না। আসলে আজ ত আমার কাছে টাকা নাই।
-তোমার কাছে নাই ত কি হইছে, আমার কাছে ত আছে, চল ত আমার সাথে।।।।।
( ওহ এখনো মেয়েটির সম্পর্কে ত কিছুই বলিনি, মেয়েটির নাম বিথী, ধনি পরিবারের এক মাত্র মেয়ে। আর রোহান মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে তার ছোট আরও একটা ভাই ও বোন আছে) নাস্তা শেষে,
-(বিথী) রোহান, তুমি কি আন্টির কাছে আমার কথা বলেছ?
-আম্মা ত তোমার কথা জানেন,
-দেখ রোহান আমি আর পারতেছি না, আমি তোমার কাছে চলে আসতে চাই,
-দেখ বিথী এখন পাগলামির সময় না, তুমি আর কিছু দিন সময় দেও আমাকে।
-ধ্যাথ,,,,,,,
-বিথী দাড়াও, আমার কথাটা শুন প্লিজ,,,,,, (এভাবেই কিছুদিন পর পর রাগ করে চলে যায় বিথী)
-(মা) কেমন আছিস বাবা?
-ভালো মা, তোমারা সবাই ভালো আছ ত?
-হ বাবা ভালোই আছি,
-মা কিছু বলবা মনে হয়,
-বলতে ত চাইছিলামি কিন্তু কিভাবে বলব বল বাবা, তুইও ত কোনো চাকরি করিস না,,,
-যদি নাই বলবা তাহলে কল দিছ কেন???
-রাগ করিস কেন বাবা, আসলে তর ছোট ভাইটা কয়দিন পর পর এটা সেটা চায়, তুই ত জানস তর বাবা এখন আর কিছু করতে পারেনা, কিভাবে তার এত ইচ্ছে পূরন করব বল?
-আচ্ছা মা তুমি চিন্তা কর না আমি ওর সাথে কথা বলব,
-আচ্ছা বাবা, (এর মধ্যে বার বার বিথীর কল আসতে থাকে)
-আচ্ছা মা এখন রাখি পরে কথা হবে
-আচ্ছা বাবা। (বিথীর কল রিসিব করে)
-কি হইছে তোমার, বুঝতেছ কথা বলতেছি তার পরেও কেন বার বার কল দিতেছ?
-গত দুই দিন আমার কল রিসিভ করনি কেন?
-অনেক বড় ঝামেলার মধ্যে আছি তাই।
-আশা করি আমার থেকে বেশি না
-বিথী কি হইছে তোমার?
-বললেও বুঝার চেষ্টা করবা না তুমি, তাই তোমাকে আর বলতে চাই না। কালকে আমি দেখা করতে চাই তোমার সাথে।
-আচ্ছা ঠিক আছে,,, (পর দিন)
-কেমন আছ রোহান?
-এই ত, তুমি?
-রোহান তুমি মনে হয় কিছু বলতে চাইতেছ,,,,,
-আরে না ,
-দেখ তোমাকে আমি ৪টি বছর ধরে চিনি, তোমার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসলে তা আমি বুঝতে পারি। এখন বল কি বলতে চাইতেছ।
-না মানে, বিথী আমার একটা চাকরি হইছে,,,
-এটাত খুশির কথা, কিসের চাকরি?
-এত খুশি না হওয়াই ভালো, আর চাকরিটার কথা বলে আমি তোমাকে হতাশ করতে চাই না।
-আর না, তুমি বল।
-আমি একটা বাসার কেয়ারটেকারের কাজ পেয়েছি,,,,
-ওহ,,,,,, বেতন কত?
-বেতন ১২০০০ থাকা মালিকের খাওয়া নিজের, সারা দিন বাসা দেখাশুনা করাই কাজ, সাথে একটা দারোয়ান আছে।
-চলবে আমার,
-চলবে মানে?
-হুম আমার এতেই চলবে, বিয়ের পর আমি ত বসে থাকব না, আমিও কিছু একটা করব। দুজনের টা দিয়ে ঠিকই সংসার চালিয়ে যেতে পারব। সংসারটা ত আমাদের দুজনেরি।
-পাগলি কর না বিথী,
-আমি বাবার সাথে কথা বলব, তুমি শুধু একটু কষ্ট করে কেয়ারটেকার না বলে বলবা পার্শনাল সেকরেটারি হিসেবে আছ, তাহলেই হবে।
-দেখ বিথী, আমার শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে হবে না, আমার ছোট একটা ভাই আছে, একটা বোন আছে। আমাকে তাদের কথা ভাবতে হবে, আমাকে ভাবতে হবে আমার পরিবারটার কথা, এখন এসব পাগলামি করা ঠিক হবে না।
-রোহান তুমি কি চাও আমি তোমার জিবন থেকে হারিয়ে যাই?
-জানি না, তবে এখন এই অবস্থাতে আমি তোমাকে কি করে গ্রহন করব বল?
-ওকে তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না ,,,,,,,,
-বিথী দাড়াও, , ,,, আমার কথাটা শুন প্লিজ।।।।।।
(পর দিন সকালে, রুমে বসে আছে রোহান, কোনো কিছুই ভালো লাগতেছেনা তার, কি করবে সে? এমন সময় রুমে বিথীর উপস্থতি)
-বিথী তুমি এখানে?
-কেন অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি?
-আরে না, তুমি বাসার ঠিকানা ফেলে কোথায়?
-প্রয়োজন হলে সবই পাওয়া যায়, প্রয়োজন ছিল তাই ইকবাল ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছি।
-ওহ, এত দূর গিয়ে ছিলে তুমি,
-হ্যা, আর আমি বাসা থেকে চলে এসেছি, আমি আর বাসায় যাব না, আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারব না রোহান,,,,,
-দেখ বিথী এসব পাগলামির সময় এখন না , আমাকে আমার পরিবার নিয়েও ভাবতে হয়। আর এই মুহূর্তে তোমাকে আমি কিভাবে গ্রহন করব বল?
-আমি কিচ্ছু চাই না, আমি শুধু তোমাকে চাই রোহান, শুধু তোমাকে।।।।
-এটা সম্ভব না, তুমি চলে যাও, আমাকে একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে দাও প্লিজ,,, বিথী আমার ব্যবহারে বাসায় চলে যেতে বাধ্য হলো, (বাসার ছাদের ওপর দারিয়ে আছে রোহান, দারোয়ান, তার কাছে এসে জানতে চাইল).
-কি হইছে স্যার? আপনি সেই কাল সন্ধা থেকে ছাদে দাড়িয়ে আছেন,,,,,
-নাহ্ কিছু না,,,,
-স্যার আমাকে বলতে পারেন, আমি আপরার ভাইয়ের মতন,,,
-আজ বিথীর বিয়ে,
-বলেন কি স্যার, তাহলে আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন, যান ম্যাডামকে নিয়ে আসে। পরে যা করার লাগে আমি করব ,মালিক কে বুঝিয়ে বললে তিনি বুঝবেন।
-যাও তুমি,
-স্যার একবার ভেবে দেখেন
-যাও বলতেছি,,,,,, (দারোয়ান গেইটে আসতেই, বিথীর প্রশ্ন)
-রোহান কোথায়?
-স্যার ছাদেই আছেন, আপনি যান, ,,,,
-রোহান,,,,,,,(বিথী)
-তুমি? তোমার না আজ বিয়ে,
-হ্যা, আমি পার্লার থেকে পালিয়ে এসেছি, আমি তোমাকে ছাড়া বাচব না রোহান।
-কি বলতেছ এইসব,
-হ্যা, হয় আজ তুমি আমাকে গ্রহন করবা, না হয় আমি আত্নহত্যা করব।।।।
-স্যার আর কিছু ভাবতে হবে না, এবার আর ম্যাডামাকে ফিরিয়ে দিয়েন না, আপনার পরিবারের দায়িত্বটা ম্যাডাকেও পালন করতে দিন, মেনে নিন এবার, মেনে নিন।।।।।।