কিং অফ পপ মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন

কিং অফ পপ মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন

আগেকার কথা! সেসময় মাইকেল জ্যাকসনের বাবা জোসেফ জ্যাকসন একটি কারখানায় চাকরি করতেন। এর পাশাপাশি ভাই লুথারকে নিয়ে ‘দি ফ্যালকন’ নামের একটি ব্যান্ড দল বানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় তিনি গান গেয়ে বেড়ান। বলা যায় শ্রমিকের কাজ করলেও গানের প্রতি তার বেশ দুর্বলতা ছিলো, এবং এই দুর্বলতা তার ছেলে-মেয়েদের উপরেও বেশ প্রভাব ফেলেছিলো, বিশেষ করে তার নয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সপ্তম ছেলেটির উপরে, যার নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। আমরা সবাই যাকে ‘কিং অফ পপ’ নামেই জানি!

১৯৫৮ সালের ১৯ আগস্ট জ্যাকসনের জন্ম। তখনও দুনিয়া টের পায়নি, পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটেছে এক অসাধারণ গাইয়ে তারকার, যার আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। ঠিক তেমনি কেউ জানতো না, তার জীবন প্রদীপ নিভে যাবে এতো তাড়াতাড়ি, মাত্র ৫০ বছর বয়সেই!

বিখ্যাত এই পপ গায়ক ‘কিং অফ পপ’ খ্যাত মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যুবরণ করেছেন এই জুনের ২৫ তারিখে।
গায়ক হিসেবে জ্যাকসনের উত্থান কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই। আগেই তো বলেছি, তার বাবাও ছিলেন গায়ক। এছাড়া তার অন্য ভাই-বোনেরাও গান-বাজনার চর্চা করতেন।

জ্যাকসনের সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়- সেটা হচ্ছে খোদ তার বাবা। সমস্যা আছে, জ্যাকসনের বাবা জোসেফ তার ছেলে-মেয়েদের খুব মারধর করতেন। বিশেষ করে ছোট্ট জ্যাকসনকে তিনি কারণে-অকারণে প্রায়ই মারতেন। জ্যাকসনের ভাই মারলন এ ব্যাপারে বলেছিলেন, “বাবা সবাইকেই মারতো, তবে জ্যাকসনটাই বোধহয় মারটা বেশি খেত। বাবা প্রায়ই তাকে পা ধরে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেদম পেটাতেন, আমরা অন্য ভাই-বোনরা কিছুই বলতাম না। কারণ বাবা আমাদেরকেও মারতেন, আমরা বড় ছিলাম বলে উল্টো করতে পারতেন না, তবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতেন নয়তো দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে রাখতেন। জ্যাকসন নিজেও এই কথা স্বীকার করেছেন। তিনি কিন্তু আরো বলেছিলেন, “বাবা মারধর করলেও তার নিয়মানুবর্তিতার তুলনা ছিল না, আমার সফলতার পেছনে যে ডিসিপ্লিন, এটা আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।”

তা হোক, কিন্তু তাই বলে এভাবে তো বাচ্চাদের মারা উচিত নয়। তিনি শুধু যে মারতেন, তাই নয়- মানসিক নির্যাতনও করতেন। জোসেফ সবসময় বলতেন ঘরের জানলা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে। ছোট্ট জ্যাকসন কোনদিন ভুলে জানলা খোলা রেখে ঘুমালে জোসেফ এসে একটা ভয়ংকর মুখোস পরে তাকে ভয় দেখাতেন। জ্যাকসন তো সেই বিকট চেহারা দেখে ভয়েই আধমরা। শৈশবের অনেক রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গে গেছে- তিনি স্বপ্নে দেখতেন কে জানি এসে তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছ।

১৯৯৩ সালের এক টিভি অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে এসে তিনি বলেন- প্রায়ই তিনি একাকী বোধ করতেন। নিঃশব্দে কাঁদতেন, জোরে কাঁদার সাহস পেতেন না- যদি বাবা শুনে ফেলে আবার মার-ধোর শুরু করেন! কেননা পাশের রুমেই বাবা হাতে একটা বেল্ট নিয়ে বসে থাকতেন, আর শুধুই সবাইকে শাসাতেন। এসব কথা বলতে বলতে জ্যাকসন সেই অনুষ্ঠানে দুই হাতে মুখ চেপে হুহু করে কেঁদে ফেলেছিলেন। তার শৈশবের সেই যন্ত্রণা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে সারাটা জীবন। তবু দেখ আজ সেই কষ্ট করে বেড়ে ওঠা জ্যাকসন কিভাবে যুদ্ধ করে করে পৃথিবীর সকল মানুষের ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ গায়ক হয়েছেন!

বাবার কাছ থেকে যতই অনাদর পান না কেন, জ্যাকসনদের ভাই-বোনগুলোর মধ্যে কিন্তু ছিল বেশ মিল। তাদের সহায়তায় জ্যাকসনের গানের চর্চাটা ভালোই চলছিল। ছোটকাল থেকেই জ্যাকসন বন্ধুদের মাঝে গায়ক হিসেবে বেশ আদরণীয় ছিলেন। যখন একটি স্থানীয় ক্রিসমাস পার্টিতে তিনি গান গেয়ে সবার নজর কাড়েন- তখন তার বয়স কতো! মাত্র পাঁচ। জ্যাকসনের বড় তিন ভাই জ্যাকি, টিটো এবং জারমিনি মিলে একটা ব্যান্ড চালাতো, নাম ‘জ্যাকসন ব্রাদার্স’। ১৯৬৪ সালে জ্যাকসন আর তার আরেক ভাই মারলন সেই ব্যান্ডে যোগ দেয়। ধীরে ধীরে জ্যাকসন তার প্রতিভার জোরে ব্যান্ডের অন্যতম গায়কে প্রমাণিত হয়। তখন তার বয়স মাত্র আট বছর। তখন ব্যান্ডের নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় ‘জ্যাকসন ফাইভ’। তারা পাঁচ ভাই মিলে ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত অনেক জায়গায় গান গেয়ে বেশ সুনাম পায়। তবে ১৯৬৬ সালে একটি স্থানীয় প্রতিযোগিতায় ‘জ্যাকসন ফাইভ’ জয়লাভ করে। সেখানে তৎকালীন বিখ্যাত গান ‘আই ফিল গুড’ গানটি গায় মাইকেল জ্যাকসন।

তারপর জ্যাকসনকে নিয়ে বেশ হৈ চৈ পড়ে যায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাকে বিস্ময়বালক হিসেবে ডাকা হয়। তার গান এবং নাচে সবাই মুগ্ধ, প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে তার বাচ্চা-বাচ্চা কন্ঠ, কিন্তু সেই সঙ্গে বড়দের মত দ্রুত এবং সাবলীল নাচ- এই মিশ্রণটাই মুগ্ধতার বড় কারণ।

তো, এই হচ্ছে মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী হয়ে ওঠার সংক্ষিপ্ত কাহিনী। তোমরা আরো একটু বড় হলে আরো অনেক কিছুই জানতে পারবে তার সম্পর্কে। সেই ছোটবেলা থেকেই তার প্রতিভার বিচ্ছুরণ সবাই টের পেয়েছিলেন। বাবার শত নির্যাতন সয়েও তিনি ঠিকই গান গেয়ে সবার মন জয় করেছেন। গানই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। মাঝখানে তিনি গান থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিলেও আবার ফিরে আসার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার ছেলে-বুড়ো সকল ভক্তকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেলেন। জ্যাকসন চলে গেছেন কিন্তু সবার হৃদয়ে তিনি যে আসনটি পেয়েছেন, সেখানে চিরকালই তিনি বেঁচে থাকবেন- কারণ তিনিই যে ‘কিং অফ পপ’।

গল্পের বিষয়:
জীবনের গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত