আর একটু খেয়ে নে বাবা : আর কত খাব মা! পরে তো আমার পেট ব্রাস্ট হয়ে যাবে..!!
– হল এ কি খাস না খাস কে জানে..! বাইরের খাবার ঠিকমত খেতে পারিস না তা আমার জানা আছে…
~হুম ঠিকই বলেছ.. না খেয়ে খেয়ে শরীরের কি হাল হয়েছে…বাবা ও সাথে যোগ দিল।
: তাই বলে আর কত খাওয়াবে আমাকে.. অনেক দিন পর কালকে ফাহিম বাড়িতে এসেছে ।
কিন্ত আজকেই চলে যাবে। যাওয়ার আগে বাবা মা’র সাথে একসাথে খেতে বসেছে। আর খেতে বসলেই এরকম টর্চার শুরু হয়। খাওয়া নিয়ে এমন জোড়াজুড়ি ফাহিমের একদম পছন্দ না। তাই এটাকে টর্চারই মনে হয় ওর..।
– কাল এসে আজকেই চলে যেতে হবে? আর দুটো দিন থেকে গেলে হয় না? (মনটা খুব খারাপ করে মা জিগ্গেস করল)
: না মা আজকে যেতেই হবে। ফাহিমের সাফ জবাব শুনে মা’র চোখ দুটো জলে টলমল করতে লাগলো।
কিছু না বলে একদম চুপ হয়ে রইলেন।
: বাবা দেখো মা’র চোখে মনে হচ্ছে 1988 সালের বন্যা শুরু হয়েছে। এই পানিতে পড়ে গেলে যে কেউ ডুবে মারা যাবে। কথাটা বলে ফিক করে হেসে ওঠে ফাহিম। সাথে বাবা আর মা ও হেসে ফেলে। ফাহিম ছোটবেলা থেকেই দুষ্টু। এমন সিরিয়াস মুহুর্তেও দুষ্টুমি না করে পারে না। কিন্তু এখন সে যদি দুষ্টুমি করে কথাটা না বলতো তাহলে মা এর মুখে হাসি টা দেখতে পারতো না।
কিন্ত একটু হাসলেই কি হবে, অন্য রুমে গিয়ে মা যে একা একা কাঁদবে ফাহিম এটা ঠিকই জানে।
ও চলে যাওয়ার পর আরো কাঁদবে। মা যে কেন এত ইমোশনাল!! সব মা’রা মনে হয় এমন এমনই হয়।
ফাহিম আর কোন ভাইবোন নেই। ফাহিম ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বাসায় বাবা মা একাই থাকেন। তাই ফাহিম বাসায় আসলে মা বাবা যেমন খুশি হয় চলে যাওয়ার পর ততটাই কষ্ট পায়। এবার আরো কষ্ট হচ্ছে কারন এবার ফাহিম মাত্র একদিন থেকেছে। এত করে বলার পরও কেন থাকলো না কে জানে..। বড় হয়েছে এখন কোন কথাই শুনতে চায় না।
আর দুটো দিন থেকে গেলে কি এমন হয়ে যেত! যাওয়ার সময় হয়ে এলো।
:মা, বাবা আসি।
-আচ্ছা। নিজের খেয়াল রাখিস।
ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবি কিন্ত। মন দিয়ে পড়ালেখা করবি। আর ছুটি পেলেই চলে আসিস।
ফাহিম খেয়াল করল কথা গুলো বলতে বলতে মা’র চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল যে পরে গেল মা বুঝতেই পারলো না। ফাহিম আরো দেখলো বাবা টাও চোখ গুলো লুকাতে চেষ্টা করছে। ফাহিম শুধু ভাবে মা বাবা সন্তান কে এতটা কেন ভালবাসে… বাবা মা তাকিয়ে ছেলেটার চলে যাওয়া দেখছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় তাকিয়ে দেখছেন তারা.. আস্তে আস্তে দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে ছেলেটা। আর দেখা যাচ্ছে না।
রাত 12 টা বেজে গেছে। ক্যালেন্ডারে ডেট টা 27 ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল আজ। ফাহিমের বাবা মা বসে তাদের বাইশ বছর আগের স্মৃতি গুলো মনে করছেন। বাইশ বছর আগে এই দিনে তাদের বিয়ে হয়েছিল। কিভাবে বাইশটি বছর কেটে গেল। আসলে সময় যে কখন কিভাবে কেটে যায় বোঝা যায় না। বাইশ বছর আগের এই দিনটি কত উৎসব মুখর আর কত হৈচৈ ছিল। কিন্ত আজ কেমন জানি নিসঃঙ্গ লাগছে তাদের।
একমাত্র ছেলেটিও পাশে নেই। তাদের ইচ্ছা ছিল আজকের দিনটা তাদের ছেলে ফাহিম কে নিয়ে কাটাবেন।
কিছু আত্মীয় স্বজনও দাওয়াত করবেন। কিন্ত ছেলেটা চলে গেছে। এত করে বলার পরেও থাকলো না। একটা দিন থেকে গেলে কি এমন হয়ে যেত! অবশ্য ফাহিমের তো মনে নেই হয়ত আজকে যে তার মা বাবার একটি বিশেষ দিন। মা বাবা তাকে বলেনি। ছেলেটা হয়তো কোন জরুরী কাজের জন্য চলে গিয়েছে। এই কথা শুনলে পরে যদি সেই জরুরী কাজে আর না যায়। অথবা গেলেও বাসায় না থাকতে পারার কারনে যদি মন খারাপ হয়.। তাই আর ফাহিমকে বলা হয়নি। মন খারাপ করে বসে আছেন তারা। মা’র মন টা একটু বেশী খারাপ। হওয়াটাই স্বাভাবিক। মা’র মন বলে কথা..
হঠাৎ করে দরজায় কে যেন নক করল।এত রাতে কে আসবে! বাবা মা দুজনই গেলেন দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই শুনলেন একটা পরিচিত কন্ঠ বলছে -“Happy marriage day মা, বাবা। অনেক ভালবাসি তোমাদের” মা আর বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। : তুই কোথা থেকে????? তুই না আজ চলে গেলি। বললি জরুরী কাজ আছে।
– আমি আসলে যাইনি। আজকে তোমাদের বিশেষ দিন। তোমাদেরকে
সারপ্রাইজ দিব বলে ঐ অভিনয় টুকু করেছিলাম। জানি, আমি না থাকলে তোমরা কত কষ্ট পাবে।
আর কিভাবে আমি পারবো আমার বাবা মা কে কষ্ট দিতে! আমার নিজের চেয়ে যে আমি তোমাদের কে বেশী ভালবাসি।ছেলের মুখে এমন কথা শুনে খুশিতে মা’র চোখে জল এসে যায়। বাবা ও থেমে নেই। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
– হয়েছে আর কাঁদবা না। চলো কেক কাটি। আমি কেক নিয়ে এসেছি। আর আগে তোমরা রেডী হয়ে আসো। এই নাও মা তোমার জন্য শাড়ি আর বাবা তোমার জন্য পান্জাবি।
:এসব আবার আনতে গেলি কেন?
– যা বলছি তাই করো তো। মা বাবা’ র শুধু বলতে ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে নিয়ে তারা খুব সুখী…..