কথা ছিল, বর্ষার প্রথম দিনে অর্পিতার জন্য ২৩টা কদম হাতে নিয়ে দাঁড়াবে শিমুল। ওই দিন অর্পিতা ২৩-এর কোঠায় পা দেবে, তাই এই আবদার। শিমুল এই আবদার রক্ষা করবে, তার জন্য এটা খুব কঠিন নয়। শিমুল অর্পিতাকে সেদিনই শুনিয়ে দেয়, নীল পদ্ম তো আর চাওনি, এই কয়টা কদমই তো চেয়েছ? ব্যাপার না।
গত বর্ষার প্রথম দিনে ২২টা গোলাপ নিয়ে শিমুল অর্পিতার সামনে হাজির হলে অর্পিতা হেসে শিমুলকে বলে, ইশ! খালি গোলাপ আর গোলাপ! আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন জানো না! একটা কদম আনলেও তো পারতে। তখন থেকেই শিমুল প্রতীক্ষার প্রহর গোনে, কখন আসবে ফের পয়লা আষাঢ়, কখন ফুটবে আবার সাদাভ হলুদ কদম।
কালের ঘড়িতে আজ ঢং ঢং আওয়াজ তোলে হাজির হয়েছে ঘন ঘোর বর্ষা। আগের রাতে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে খুব। বৃষ্টিভেজা রাতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছিল শিমুল। মায়ের গলার আওয়াজে তার ঘুম ভাঙে, অ্যাই শিমুল, অ্যাই…আর কত ঘুমাবি? বেলা ১১টা বাজে! ওঠ বলছি, ওঠ…।
ঘুম থেকে উঠেই শিমুল বসার ঘরে যায়, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকায় চোখ রাখে। পত্রিকার প্রথম পাতায় একগুচ্ছ কদমের বিশাল ছবি, নিচে ক্যাপশন ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান—আজ পয়লা আষাঢ়, বর্ষার প্রথম…’ এটুকুই পড়তে পারে সে। হঠাৎ করেই তার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, ঝাপসা একটা ছবি ভেসে ওঠে মনের আয়নায়, ‘…একটা কদম আনলেও তো পারতে।’
শিমুল শোয়ার ঘরের জানালার গ্রিল ধরে বাইরে তাকায়। দূর দৃষ্টিতে কদমের গাছ খুঁজতে থাকে। এই বেরসিক শহরে কদমগাছ লাগাবে এমন মানুষ কই! পরক্ষণেই মনে পড়ে তার, এবারের বর্ষা বড্ড দেরি করে এসেছে। বর্ষা আসার আগেই ভিনদেশের এক বাসিন্দার হাতে হঠাৎ করেই অর্পিতা চুরি যায়। সেদিন শিমুল খুব করে চাইছিল যে অর্পিতা চুরি হয়ে যাওয়ার আগেই বর্ষা আসুক, বাদল নামুক অথবা গাছে কদম ফুটুক…তা আর হয়ে ওঠেনি।