হাসিব আর তনয়ার সম্পর্ক বছর ছয়েক হতে চলল। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ হাসিব তনয়াকে চিনতে পারছে না। সামনে তনয়ার বিয়ে তাই সবার ধারনা হাসিব ইচ্ছে করেই তনয়াকে চিনতে পারছে না।
তনয়াঃ তুমি কি আমায় চিনতে পারছ না, নাকি না চেনার ভান করছ?
হাসিবঃ সত্যি আমি আপনাকে চিনতে পারছি না।
তনয়াঃ ওহ, বুঝেছি। এখন তো আমাকে চিনতেই পারবে না। আমি পুরনো হয়ে গেছি কিনা! এখন নতুন আরেকটা দরকার!
হাসিবঃ কি আজেবাজে সব কথা বলছেন? আমি ভদ্র মানুষ বলে আপনার এসব আজেবাজে কথা শুনেছি। অন্যকেউ হলে আপনাকে…
তনয়া হাসিবকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ওর খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিল। এই চড় খেলে যে কারো ভুলে যাওয়া স্মৃতিশক্তি ফিরে আসতে পারে কিন্তু হাসিবের এল না। বোধহয় তনয়ার হাতের জোরের চেয়ে ওর গাল অনেক বেশি শক্ত। তাই আরও দু চারটার প্রয়োজন। কিন্তু তনয়া সেটা না করে ছিঃ শব্দটা উচ্চারন করে রাগি মুখটা কাঁদো কাঁদো করে চলে গেল।
না ঠিক যেটা ভাবছেন সেটা নয়। হাসিব এখন আলঝেইমারের প্রাথমিক স্টেজে আছে তাই বলা চলে সে তনয়াকে ঠিকি চিনতে পেরেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সব ভুলে যাবে। তাই সময় থাকতেই সব শেষ করে দিল।
হাসিব তার হাতে থাকা একটা খাম থেকে কয়েকটা কাগজ বের করে। খামটা সে কোথায় পেয়েছে মনে করতে পারছে না। তাতে ইংরেজিতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা রোগির নামঃ হাসিবুর রহমান রোগের নাম দেয়া আছে ডিমেনশিয়া। তাতে দুটো মস্তিষ্কের ছবি দেয়া দুটোই বিকৃত হয়ে গেছে। যেহেতু মেয়েটি তাকে হাসিব দেখেছে তাই তার ধারনা ওর নিজের নামই হাসিব।
ডিমেনশিয়া একটি রোগ যার প্রচলিত নাম হচ্ছে আলঝেইমার। এই রোগের আক্রমন ঘটলে রুগির মস্তিষ্ক অনিয়মিত ভাবে বিকৃত হতে থাকে আর রোগী ধীরে ধীরে অথবা দ্রুতই সব ভুলে যেতে থাকে।
বছর পাচেক পর
রেল স্টেশন। তনয়া ও তার স্বামী সন্তান সহ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। হাঠাৎ তনয়ার চোখ গেল এক পাগলের দিকে। স্টেশনের আশেপাশে এরকম অনেক পাগল থাকে কিন্তু লোকটিকে তার খুব চেনা চেনা লাগছে। লোকটার মাথা ভর্তি ভর্তি উশখো খুসকো চুল আর মুখ ভর্তি দাঁড়ি। তনয়া লোকটিকে চিনতে পারে। লোকটির কাছে গিয়ে তনয়া হাসিব হাসিব বলে ডাকতে থাকে। হাসিব মাথা চুলকতে চুলকতে উত্তর দেয় আচ্ছা আমাদের আগে কি কোথাও দেখা হয়েছিল? বলে চলতে শুরু করে তারপর আবার ফিরে এসে বলে আমিতো স্টেশনের কাউকে চিনি না এই চিঠিটা এই ঠিকানায় পৌঁছে দেবে? তনয়া জলসিক্ত চোখে উত্তর দেয় হ্যা…। খামটা অনেক পুরনো হয়ে গেছে এতো বেশি পুরনো যে লেখা পর্যন্ত মুছে যাওয়ার মত অবস্থা। প্রেরকের ঠিকানায় শুধু একটি নাম লেখা তনয়া।
হাসিব চলে যায় মাথা চুলকাতে চুলকাতে। তনয়া খাম থেকে একটা কাগজ বের করে তাতে লেখা ছিল
‘’তোমার উৎসুক চোখ খুজে ফেরে, হয়তো কোন বাদামি চোখের মানুষ, দেখা হবে, হয়তো আবারো কোথাও”