তোমাকে আমার লাগবেই। তোমাকে আমার সবচেয়ে বেশি লাগবে বৃদ্ধ বয়সে।
যৌবনে আমরা প্রচুর ঝগড়া করবো। ঝগড়া করে প্রায় রাতেই না খেয়ে ঘুমাবো। বিছানার দুই দিকে দুজনে মুখ করে শুয়ে থাকবো। কেউ কারও দিকে তাকাবো না। কথাও বলবো না। তুমি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে কাঁদবে। বাইরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করবে। ঠান্ডাতে আমি কাঁপতে থাকবো। আমি ঘুমিয়েছি ভেবে তুমি চুপি চুপি আমার গায়ের উপর কাঁথা দিতে আসলেই ধরে ফেলবে তোমার হাত…
একদিন বাজার থেকে পাঁচটা হলুদ গোলাপ কিনে বাসায় ফিরবো। হলুদ গোলাপ দেখে তুমি ভীষণ রেগে যাবে। রেগে গিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলবে তুমি। আমি তখন বুক পকেটের কোণা থেকে লাল টকটকে একটি গোলাপ বের করে তোমার হাতে দিবো। তুমি আচমকাই হেসে ফেলবে সেদিন…
একদিন এক্সিডেন্ট করে বাসায় ফিরবো। আমার কপালে রক্ত দেখে তুমি কেঁদে ফেলবে খুউব। রাত জেগে জেগে আমার বিছানার পাশে বসে থাকবে তুমি। তোমাকে টেনে বুকের উপর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো সেদিন…
একদিন আমার মোবাইলে রং নাম্বারে ফোন আসবে। তুমি ফোনটা রিসিভ করে একটি মেয়ের কন্ঠ শুনে মন খারাপ করে বসে থাকবে। অভিমানে সারাদিন আমার সাথে কথা বলবে না। আমি ছাদে গিয়ে সিগারেট খাবো। তুমি যখন বুঝবে নাম্বারটা সত্যিই রং ছিল তখন দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দিবে। তোমাকে জড়িয়ে ভালবাসি বলবো সেদিন…
যৌবনে তোমাকে ভালবাসার চাইতে ঝগড়া ই বেশি করবো। ঝগড়া করতে করতেই একদিন যৌবন থেকে বৃদ্ধাতে গিয়ে ঠেকবো। তোমার রক্ত জবার মতো মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যাবে। আমার মাথার কালো চুলগুলো সাদা হয়ে যাবে। চোখে ছানি পড়ে যাবে। চশমার আড়াল থেকে সেদিনও ঝাপসা চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো…
বিশ্বাস করো, রক্তের জোরে কোনো না কোনো ভাবে আমার যৌবন ঠিকই কেটে যাবে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কাছে যখন বোঝা হয়ে যাবো, বৃদ্ধা বয়সে সন্তানরা যখন বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে চাইবে, সেদিন তোমাকে আমার লাগবেই। সেদিন এক হাতে লাঠিতে ভর করে, আরেক হাতে তোমাকে ধরে কাঁপতে কাঁপতে বৃদ্ধাশ্রমে যাবো…
একদিন রাতে বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে বসে দুজনে আকাশের চাঁদ দেখবো। পান খেতে খেতে দুজনে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করে খুব হাসবো। বিশ্বাস করো, বৃদ্ধ বয়সে মায়া করার জন্য একজন বুড়ির খুব দরকার আমার। একজন সাদা চুলের বুড়ির দিকে তাকিয়ে আমার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়ে দিবো। তুমি কি সেই দিনটাতেও আমার পাশে রবে? তুমি কি বেঁচে থাকার প্রার্থনাতে বুড়ি হবে এই বুড়োর সাথে?