– আস্তে আস্তে আকাশটা আরো ঘুট ঘুটে কালো অন্ধকার হয়ে
আসছে… মাঝে মাঝে একটু বাতাস
ও উঠছে তবে তা স্থায়ী নয়।
মনটা আর ঘরের মধ্যে বসতেছে না
বাহিরের সেই আম গাছ গুলোর
দিকে ছুঁটে চলেছে…
এতক্ষনে মনে হয় সবাই সব আম
গুলো কুড়াই নিছি…
তবে মায়ের আদেশ এক পা ও ঘরের
বাহিরে যাবি না…
কিন্তুু এই দিকে যে আর মন তো মানতেছে না।
দরোজা খুলতে গিয়ে দেখি
বাহিরে থেকে লাগানো… এবার
তো আরো মনটা ছটফট করতে
লাগলো… বাহিরে ক্রমাগত বাতাস
বেড়েই চলেছে, আর ঘরের
মধ্যে আমার ছটফটানি ও বেড়ে
গেছি…
কেমনে যে বাহিরে যাবো, আর আম গুলো কুড়াবো।
জানালার কাছে আসলাম দেখি
কেউ যাচ্ছে কী না… তাহলে তার
কাছে থেকে সাহায্য নেওয়া হবে।
ওইতো রফিক আসছে তাকে
বলে দেখি।
– রফিক…. ভাই আমার দরোজাটা একটু খুলে দেনা, আমি ও বাহিরে
যাবো।
– না না দরোজা খুলা যাবে না, তোর
মায়ের নিষেধ আছে।
বলেই চলে গেলো…।
আরো দুই তিন জনকে বললাম,
সবার সেই একি কথা…
কিন্তুু কেনো… সবাই তো বাহিরে
আমার গেলে সমস্যাটা কী হবে,
আমি বুঝিনা…
কী করবো এখন মনটাকে
তো মানাতে পাড়ছি না….
অনেক বাজ পড়ার শব্দ হচ্ছে বাহিরে।
এর মধ্যেই বৃষ্টির আগমন….
গতবছর এই টাইমে কত নদীতে
লাফালাফি করছি… বৃষ্টি
মধ্যে নদীতে সবাই মিলে গোসল
করার মধ্যে যে একটা অন্য ধরেন
ভালোলাগা আছে… যা কেউ
কোন অবেগ অনুভূতি দিয়ে
বুঝাতে পাড়বে না….
বৃষ্টির দিনের দিন গুলো আসলেই
অসাধারণ , না মানে
আমার কাছে মনে হয় আর কী?
আর যদি রাতে এমন বৃষ্টি হয়.. আর
আগের মানুষ যেমন দাদা, দাদি
থাকে তাঁদের মুখে ভুতের গল্প শোনা
ওহহহহহ যা ভালো লাগে… এই
ভালো লাগাটা কোন কিছুর মধ্যেই
পাওয়া অসম্ভব…।
কিন্তুু আমাকে বাহিরে যেতে
দেই না কেন.. আগে তো
এমনটা ছিলো না.. বৃষ্টি হলেই
ফুটবল নিয়ে মাঠে দৌড় দিতাম
আর বৃষ্টি মধ্যে সবাই খেলতাম,
খেলা শেষে এক সাথে নদীতে বা পুকুরে ঝাঁপ….।
বৃষ্টির মধ্যে ও দুইটা জিনিস আলাদা
ভাবে দেখা যায়… একটা চোখের
পানি.. আর একটা হলো বৃষ্টির মধ্যে হিসি করার মুহূর্ত হি হি হি।
মাঠের মধ্যে বৃষ্টি আসলে তো দৌড়ে
কলা বাগানে ঢুকে পড়তাম…
কলার পাতা তে বৃষ্টি পড়ার শব্দ কখন ও ভুলার মতো না…
আর বৃষ্টি ছাড়ার কোন লক্ষণ
না দেখলে তো… বড়ো মান পাতা
নয়তোবা বড় কচু পাতা ছাতির
কাজ করে…
সব ঠিক আছে কিন্তুু আমাকে
সবাই এমন সব সময় ঘরের মধ্যে
আটকে রাখে কেন, তা বুঝতেই
পাড়ছি না….।
জানালার পাশে বসে আছি…
ছোট থাকতে ও এমন ভাবে বসে
থাকতাম আর বাদাম খেতাম।
আর বাদামের খোসার মধ্যে একটা
পিঁপড়ে কে তুলে দিতাম, আর
বলতাম এটাই তোর নৌকা যা বেড়িয়ে আয়….. হি হি হি।
এমন ভাবে কতো যে পিঁপড়ে
কে নৌকাই তুলে দিছি।
তখন বিদ্যুৎ আসলে ও তা বেশ
সময় স্থায়ী থাকতো না…
চব্বিশ ঘন্টাই আট ঘন্টা স্থায়ী
থাকতো….
সন্ধা হলেই হারিকেনের আলো দিয়ে
পড়তে বসতাম…
কীসের কী পড়তাম তার থেকে বেশি
পোকা মারতাম…
কোন কোন দিন আবার বাতি দিয়ে
পড়তে হতো… বাতির আগুনে যে কতো চুল পুড়ছে তা হিসেবের বাহিরে।
একটু পড় পড় তো ফুঁ দিয়ে বাতি নিভেয়ে দিতাম…. আর মাকে
সব সময় জ্বালাতাম, এর জন্য
যে কতো মাইর খাইছি।
একদিনের ঘটনা…
বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, আবার
খুব জোরে হিসি চাপছে..
ভয়ে না পাড়ছি বাহিরে যেতে
না পাড়ছি সহ্য করতে…
হারিকেনের জোরটা একটু বাড়িয়ে
দিয়ে খাটের নিচে দেখি একটা
কেরোসিনের কন্টিনিয়ার,
তার মধ্যেই হিসি করে আবার সেখানে রেখে দিলাম… পরের দিন
সকালে দাদি হারিকেনের মধ্যে কেরোসিন ভরতে ওই কন্টিনিয়ার
টা নিয়ে আসলো যেটাতে আগে রাতে
হিসি করে ছিলাম,,, অর সেই গুলোই তুললো…
আমি তো হেঁসে হেঁসে একদম শেষ।
পিছন থেকে মা বললো কীরে এত হাঁসিস কেনো ।
সব ঘটানা খুলে বলতেই মাথাই
একটা গাট্টা মারলো…
এমন শয়তান কেনো তুই।
সেদিন যা হেঁসে ছিলাম, এখন ও
মনে পড়লে হাঁসি পায়।
এসব ভাবতে ভাবতেই বৃষ্টি টা থেমে
গেলো…।
দেখলাম মা দড়োজাটা খুলে দিলো।
– মা তোমার সাথে আমার কথা আছে।
– কী বলবি তাঁরাতারি বল, আমার
অনেক কাজ আছে
– বৃষ্টি আসলেই এমন আমাকে
ঘরের মধ্যে আটকে রাখো কেন,
আগে তো এমন করতে না।
– এমনি..এবার যা ঘরে যা।
– না না না আজকে আমাকে
তোমার বলতেই হবে,
বৃষ্টির সময় বাহিরে না বের হলে আমার মন ছটফট করে।
– যা তো বিরক্ত করিস না।
– আগে বলো না হলে আমি যাচ্ছি না।
– তুই কেনো বুঝিন না, তুই আর
আগের সাহরিয়া নেই, যখন তখন
তোর একটা ক্ষতি হবে পারে আকাশের ডাকে।
– কী মরেই যাবো তো এইতো নাকি..
আমি যদি মরেই যাই আটকাতে পারবে তোমরা হুমমমমমম।
তাহলে এমন আটকে রাখার কী
দরকার।
ওমন আটকে রাখলে এমনিই তো
মৃত মনে হয়…
যে দুইদিন বেঁচে আছি আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।
এমটা করার কী দরকার, মরতে তো হবেই একদিক।
তোমাদের পরে মরতাম এখন না
হয় আগেই মরবো তাতে কী।
এই দুইটা দিন না হয় নিজে
মতোই থাকি।
– সাহরিয়া দেখ পাগলামি করিস
না।
– পাগলামি কই করলাম, আমার
ব্রেনের যে সমস্যাটা হয়েছে তা
আমি জানি, যে কোন সময় আমি মারা যেতে পারি, হ্যা এটা ঠিক যে খোলা জায়গায় আকাশের ডাকের
কারণে আরো আগে হয়তো মরবো।
তাতে কী এমন বন্দি ঘরে মরার
থেকে খোলা জায়গায় মরা ভালো।
– আমি বাহিরে গেলাম।
– দেখ আমার কথাটা শোন একবার।
– দেখ মা আমি বন্দি ঘরে মরতে
চাই না।
নদীর পারে বসে আছি….
কত যে এই নদীতে গোসল করছি,
আর হয়তো গোসল করার জন্য
আমি থাকবো না।
তাতে কোন আমার কষ্ট নেই
আল্লাহ্ সেই জন্যই হয়তো আমাকে আমার মরার সংবাদ টা অগ্রিম
দিছে…. কারণ এটা সহ্য করার ক্ষমতা ও আমাকে দিছে।
সব মানুষের এই ক্ষমতাটা হয়তো
নেই…।
সেই জন্যই হয়তো সবার অজান্তেই সকলের মৃত্যু হয়।
নদীর পানি দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না দিলাম একটা
লাফ… এর মধ্যেই
আকাশটা আবার অন্ধকার হয়ে আসলো…
আর জোরে জোরে গর্জন করতে
শুরু করলে…
মাথাটা কেমন করে উঠলো ভাবলাম
ছোট জীবনটার হতি হয়তো আজ
এখানেই এই বৃষ্টির মধ্যেই হবে।
তবে একটা আফছোস রয়েই গেল,
সু্ন্দর এই পৃথিবীটার কিছুই
দেখতে পারলাম না…
অনেক কিছু অজানাই রয়ে গেল,
কীসের কষ্ট আমার, আরো কতই না
মানুষ এমন অকালে মারা যায়,
আমি তো ধন্য যে আমার মৃত্যুটা এমন বৃষ্টি দেখতে দেখতে হচ্ছে
খোলা আকাশের নিচে আমার
কৈশরের নদীটার পারে …. এমন একদিন হয়তো আসবে যে..
সাহরিয়া নামটা হয়তো এই বৃষ্টিতেই
মুছে যাবে আজ, চিরতরে এই পৃথিবী থেকে…. তাও কেমন কান্না পাচ্ছে,
না আমি কাঁদব না…
কাঁদতে কাঁদতেই তো এই দুনিয়াতে
আসছি… এবার না হয় হাঁসতে হাঁসতেই চলে গেলাম হি হি হি।।।