খাবার টেবিলে বসে আব্বু জিজ্ঞেস করল,মৈত্রী ও মর্ম’র মধ্যে কাকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি নেই?
প্রশ্ন শুনে আমি এতটাই অবাক হলাম যে,এক বিষমেই নাক মুখ দিয়ে ভাত বেড়িয়ে আসলো!
আজীবন শুনে এসেছি বাবারা জিজ্ঞেস করেন,অমুক কে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি নেইতো? আর আমার আব্বু চমৎকার অপশন তৈরী করে দিয়েছেন। তাও আবার দুভাই!
আমি আচমকা বলে ফেললাম,একজন কেও বিয়ে করতে আমার আপত্তি নাই।তুমি চাইলে দুভাই কেই বিয়ে করতে রাজি।
আব্বুর মুখে হাসি ও বিস্ময় উভয়ের রেখা একইসাথে ফুটে উঠল। তারপর বলল,মানে!
– মৈত্রী তো আমার চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের বড়।তারমানে আমার চেয়ে ১৩ বছর আগে উনি মারা যাবেন। তখন আবার মর্মকে বিয়ে করবো।
আব্বু রেগে বলল,সবসময় ফাজলামির মুডে থাকিনা আমি।আর বাপের সাথে এরকম ফান করার আগে বত্রিশ টা দাত পূর্ণ হওয়া উচিৎ।
আমি ফিক করে হেসে বললাম, সেটা পূর্ণ হয়েই গেছে।তোমার সাথে ফান করবো নাতো অন্যের বাপের সাথে ফান করবো?
– ইটস ওকে। আমি জানতাম ওদের কে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি থাকবে না।
– তারমানে দুজনের সাথেই আমার বিয়ে?
আব্বু একটু ভ্রু কুচকালো।আমি লজ্জা পেয়ে বললাম,আসলে আমরা মেয়েরা তো তরল পদার্থের মত।যে পাত্রে রাখবা,সে পাত্রেই আকার ধারণ করবো। তাছাড়া আব্বু আমিতো কখনো ই তোমাদের অবাধ্য হইনি।তোমরা যা চাও,আমি তাইই করবো।
একথা বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে আসলাম।আমি সত্যিই ভীষণ বিস্মিত!
.
ছোট বেলা থেকেই এই মানুষ দুটোর সাথে আমি বেশ ঘনিষ্ঠ। ওরা আমার সেরা অতিথি! শৈশব- কৈশোর সবেতেই ওদের সাথে হেসে খেলে বড় হলাম।এমনকি আমার বড় বড় অর্জন গুলোর পেছনেও মৈত্রী ভাইয়ার অবদান স্বীকার করার মত।কিন্তু তাই বলে এমন প্রস্তাব? একসাথে দুভাই কেই বিয়ে করার কথা! উফ ভাবতে পাচ্ছিনা।
.
পাত্র হিসেবে কাজী মৈত্রী অত্যন্ত সুপাত্র।দেখতে ভোম্বল অর্থাৎ পেট টা সাম্নের দিকে ফাঁপা, গায়ে গতরে গোশত বেশি,নাদুসনুদুস,আর একদম বিড়ালের মত ফর্সা! মানুষ হিসেবেও চমৎকার।কোনোকিছু তেই তার রাগ হয়না,তাকে ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়ে বের করে আবার ঢুকিয়ে জমের কাচা কেচে রোদে শুকাতে দিলেও বোধহয় তার রাগ হবেনা।সবসময় ই তার মুখে লাজুক হাসি।নরম স্বভাবের এই ছেলেটাকে বিয়ে করাই যায়!
.
আবার কাজী মর্ম ও অনেক সুপাত্র।এ আবার একেবারে বিড়ালের মত ফর্সা নয়।তবে ফর্সা।গায়ে গোশতের চেয়ে হাড়- হাড্ডিই বেশি।মৈত্রীর মত নাদুসনুদুস নয়।স্বভাবেও মৈত্রীর একদম বিপরীত।একে কিছু বললেই তুমুল ঝগড়া লেগে যায়।বান্দর টাইপের ছেলে।দুষ্টুমি তে যেমন পটু,ঝগড়াটে তেও তেমন। ওর সাথে এ অব্দি যতবার বাক্য আদান-প্রদান হয়েছে,তন্মধ্যে ঝগড়ার সংখ্যাই বেশি।কিন্তু ছেলে হিসেবে খ্রাপ না।পাজি ছেলেকে বিয়ে করাতেও আনন্দ আছে।
.
দুটাই তো সুপাত্র।তবে কাকে বিয়ে করা যায়?
কিন্তু আব্বু হঠাৎ এদের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন কেন? তবে যে কারণেই চান,প্রস্তাব টাতে আমি দারুণ উত্তেজিত!
.
মোবাইল নিয়ে কাজী মৈত্রী কে কল দিলাম।
– হ্যালো কাজী সাহেব,
– জি..
– শুনলাম আমার নাকি বিয়া?
– হতে পারে।পাত্র কে?
– আপনি।
এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা।তারপর আবার জিজ্ঞেস করলাম, কাজী সাহেব শুনছেন? কিন্তু কোনো শব্দ নেই।এবার বললাম, হ্যালো ওয়ান টু থ্রি হ্যালো..
– হ্যা শুনতে পাচ্ছি বলো।
– কথাটা কি সত্যি কাজী সাহেব?
– হতে পারে।
– হতে পারে! আপনি এক্সাইটেড নন?
– হ্যা।
– এক্সাইটেড হলে বুঝি এভাবে কথা বলতে হয়? এক্সাইটেড হলে লাফাতে হয়।তিড়িংতিড়িং করে লাফাতে হয়।
– তুমি লাফাচ্ছো?
– বলে কি! রীতিমত লুঙ্গী ড্যান্স দিচ্ছি।
– লুঙ্গী আছে তোমার?
– নাহ নেই।
– তাহলে?
– আপনি তো জানেন আমি এত খাটো যে শার্ট পড়লে আর লুঙ্গী পড়তে হয়না।
মোবাইল এর ওপাশ থেকে উচ্চাঙ্গ হাসির শব্দ- হিহিহিহ হা… হিহিহিহ হা..
আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি।এটা আমার হতে পারে বরের হাসি! বাহ কি সুন্দর!
মৈত্রী বলল,আমিও এক্সাইটেড।
– আপনি সত্যিই একটা নির্জীব, নিরীহ প্রাণী।
– আমাকে তোমার প্রাণী মনে হয়?
– আপনার কি নিজেকে উদ্ভিদ মনে হয়?
– হিহিহিহ হি.. হিহিহিহ হি..
– হাসি গুলো জমিয়ে রাইখেন।সুন্দর হাসির ধরণ।মিউজিক টায় বিক্রি করা যাবে।
– হাসি বেচবা?
– হ্যা।আপনার হাসি প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বেচবো। এবার বলেন তো আপনি কত পারসেন্ট শিওর আমার সাথে আপনার বিয়ে?
– ১০০%.
– কে বলেছে এটা?
– তুমিই প্রথম বললা।
– তাতেই ১০০% শিওর হলেন? আমিতো ভুজংভাজাং ও মারতে পারি।
– আমি তোমার সব কথাই কান বন্ধ করে বিশ্বাস করি।
– আচ্ছা আচ্ছা।তাহলে রাখি,পরে ফোন দিবো।
.
কল কেটে দিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। লোকটার ব্যক্তিত্ব অসম্ভব রকমের ভাল্লাগে আমার।কি সুন্দর ঠাণ্ডা মেজাজ,শান্ত,ভদ্র,নিরীহ!
এসব ভাবতে ভাবতে মর্ম কে কল দিলাম।
দুবার রিং হলো,রিসিভ করলো না।তৃতীয়বার কল দিতেই রিসিভ করে ডায়ালগ ছাড়তে লাগলো,
– হোয়াট দা.. মিশু আই এম বিজি নাউ।একবার কল দিয়ে রিসিভ না হলে কিচ্ছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করে আবার কল দিতে হয়।
– হু।খুব ইম্পরট্যান্ট কথা তাই।
– ইম্পরট্যান্ট কথা তাও আবার তোমার মুখে! তোমার মিরাক্কেলে যোগ দেয়ার মত টাইম এখন আমার হাতে নাই।
– আমি মোটেও মিরাক্কেল করছিনা।আই এম সিরিয়াস।
– বাট আই এম বিজি।আমার টাইম নাই।
– টাইম নাই মানে! আপনার সময় ফুরিয়ে এসেছে? মরে যাবেন বুঝি?
– মিশুর বাচ্চা মিশু।থাপ্পড়ে কাচ্চা বানাইয়া দিবো। ডোন্ট ট্রাই টু মেইক ফান।
– ওকে।আগে বলো কাচ্চা কি জিনিস?
– তোর মাথা হ্রামি।মেজাজ খ্রাপ করবি না।ফোন রাখ।
– ইম্পরট্যান্ট কথা টাতো বলাই হল না।
– বল তাড়াতাড়ি।
– আব্বু বলল তোমার সাথে নাকি আমার বিয়ে?
মর্ম চেঁচিয়ে বলল,কিহ!
– কিছুনা।এভাবে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয়ে যাবে।তুমি তো বিজি,আমি তাহলে পরে কল দিবো।
– না সেরকম বিজি না।নেট থেকে গান ডাউনলোড করতেছিলাম।
– হায় আল্লাহ! মর্ম এই সামান্য কারণে তুমি আমার সাথে এরকম বিহ্যাভ করলা?
– সরি,বাদ দাও।কি যেন বললা? তোমার সাথে কার বিয়ে?
– মৈত্রী’র। আমার সাথে কাজী মৈত্রী’র বিয়ে।
– তুমিনা একটু আগে বললা আমার সাথে?
– হ্যা।তবে ব্যস্ত মানুষের কি আর বিয়ে করার সময় আছে? এদের আজীবন এটা সেটা ডাউনলোড করতেই চলে যায়।
– একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?
– দা কাউ ইজ এ ডামস্টিক এনিম্যাল।
– কিহ! আমাকে বললা?
– হ্যা।তবে তোমার ভাইকে নির্দেশ করেছি।ওনার মত নিরীহ প্রাণীটিকেই আমি বিয়ে করবো।
– ব্যাপার টা একটু ক্লিয়ার করোতো…
– টুট টুট টুট…
.
কল কেটে দিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কোনটাকে বিয়ে করা ভালো হবে?
মৈত্রী আমার চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের বড়।আর মর্ম ৪ বছরের বড়।তফাৎ টা বুঝি এখানেই।বয়স বাড়লে স্বভাব বদলায়।নাকি কারো কারো স্বভাব আজীবন একই থাকে? বয়সের চেয়ে বেশি বড় হলে বোঝাপড়া টা ভালো হয়,আর কম হলে ঝগড়া টা ভালো হয়।তবে কি মৈত্রীকেই হ্যা বলে দিবো? কিন্তু ও আমার অনেক আগেই বুড়া হয়ে যাবে।তাহলে?
এটা না হয় পাঠক রাই ঠিক করুক