এক লোকের দুই ছেলের ছিল দুই বউ।বড় বউয়ের নাম ওমা, আর ছোট বউয়ের নাম তমা।ওমার ছিল বেশ অহংকার কারণ তার স্বামি ছিল প্রবাসী। বিদেশ থেকে বড় অংকের টাকা দিত। আর তমার নাহি ছিল অহংকার নাহি ছিল টাকা। তার স্বামী একটি ছোট হোটেলের মালিক ছিলেন। প্রতিদিন পাঁচশত, চারশত,দুইশত কামাই হতো।কিন্তু তমা যেভাবে চলাফেরা করতো তাতে লাগতো না সে কষ্টে জীবনযাপন করছে বলে। সে ভোরে উঠে অনেক কাজকর্ম করে…. প্রথমে উঠান ঝাড়ু দেয়,গরুর গোয়ালা পরিষ্কার করে,গরুর খাদ্য দেয়,খাবার রান্না করে তারপর স্বামির হোটেলে খাবার জন্য টিফিন প্যাক করে, মেয়ে সুমাইয়া ও সুরাইয়ার জন্য টিফিন রেডি করে তাদের স্কুলে পাঠায়।মেয়ে দুটা এবার কলেজে উঠেছে। অনেক টাকা লেগেছে তাদের ভর্তি করার জন্য। মেয়েরা পড়ালেখায় ছিল খুবই ভালো ও মেধাবী। এস.এস.সি পরীক্ষায় দুই বোনই জি.পি.এ ফাইভ পেয়েছে। তাই তাদের বাবাও তাদের পড়ালেখা করাতে একটু ইচ্ছুক। তিনি তাদের মাকে বলতেন….
রহমত আলী(তমার স্বামি)ঃ-এই যে, তমার মা,, কই কি যে মাইয়া দুটার পড়ালেখা বাদ দেওয়াইয়া দাও !.. তুমার কাজে সাহায্য হইবো।কি কও??
তমাঃ-ভুলেও এরকম কথা কইও না। জান দিয়াও ও ওদের পড়ালেখা করাইমো হু!…
রহমত আলীঃ-তো আর কি করার??পড়ালেখা চালাই যাইতে দেও
তমাঃ-হুম।ওগো কালতো রোযা!… ভোরে তো সেহরী খাহন লাগবো,,,, তো কি দিয়া খামো??..:)
রহমত আলীঃ-তা আল্লাহ জানে!..আমি স্পেসাল কিছু আনতে পারমু না। এই ডাল আর শুটকি দিয়াই সেহরী খামো।
তমাঃ-আ আ আচ্ছা!. 🙁
সুরাইয়া ও সুমাইয়া লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখছিল
তারা বাবার এসব কথা শুনে দুঃখ পায়।তারা তাদের জন্মদিনে পাওয়া উপহার দুটি তাদের এক বান্ধবীর দেওয়া তা তারা বিক্রি করে দেয় আর একহাজার টাকা পায়। এতে তারা খুশি হল না কারণ পরের সব রোযা তারা কি খেয়ে কাটাবে তা ভেবে।তখন তারা তাদের প্রবাসী চাচার দেওয়া বহু বছর আগের দুটি কামিজ বিক্রি করে দে তাতে তারা দুটি কামিজ বিক্রি করে তাদের এক প্রতিবেশীরর কাছে। তারা টাকা পায় দুইহাজার। তারা একহাজার টাকা পাচকেজি গরুর মাংস।তেল, মরিচ,অন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে। তারপরও একহাজার টাকা থেকে যায়। তারা এ টাকাগুলা ব্যাংক রেখে দেয় যাতে ঈদেও মা-বাবাকে উপহার দেওয়া যায়।তারপর তারা খুশিতে বাড়ী চলে আসে। এদিকে ওমা তার মেয়ে কলি ও পলিকে নিয়ে মার্কেট এ যাচ্ছে রোযায় কাপড় পরার জন্য নতুন কাপড়।তো তমা এসব দেখে কাদছে কারণ এতটা বছর ধরে মেয়েদের একটা কাপড় দিতে পারিনি সে,,,,,মেয়েরা রাতে পাশের বাড়ীর করিমার বাড়ীতে গিয়ে সব রান্না করে রাখে মা-বাবাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।মা ডাল আর শুটকি রান্না করে রাখে যখন সেহরীর সময় হয় মা কুরআন শরিফ পবিএ স্থানে রেখে সেহরী খাবার জন্য ডাল ও শুটকি টেবিল রেখে প্লেট ধুতে যায় ডাল ও শুটকি রেখে রহমত আলীকে ডাকতে যায় এসময় সুমাইয়া ও সুরাইয়া নানান রকম রান্না খাবার টেবিলে সাজিয়ে দেয়। তমা রহমত আলীকে নিয়ে এসে দেখে মেয়েরা তো.. কামাল করে দিছে তিনি মেয়েদের জিজ্ঞেস করেন….
তমাঃ-মামুনিরা তুমরা এসব খাবার কোথায় পেয়েছ?
সুমাইয়াঃ-এগুলা আমরা আমাদের টাকা দিয়া কিনিয়া আনছি।
রহমতঃ-কি?? তোরা টাকা কই পাইলি??
সুরাইয়াঃ-আরে বাবা আগে খাও তারপর সব বলতাছি সেহরীর সময় নষ্ট হইতাছে হুম।
তমাঃ-(খাবার মুখে নিয়ে)ওওও কি মজা!…
রহমতঃ-হ কিযে মজা!..
সুরাইয়াঃ-বাবা আমরা আমাগো চাচার দেওয়া কামিজ বিক্রি করে দুই হাজার টাকা পাইছি আর এইযে আমার আর সুমাইয়ার জন্মদিনে আমাদের এক বান্ধবী উপহার দেয়য় তা বিক্রি করে পাই একহাজার। তা দিয়া এসব আনছি আর আমরা করিমা আন্টি ঘরে গিয়া এসব রান্না করছি তোমাগো সারপ্রাইজ দেয়নের জন্য।লও আরো লও খুব মজার তরকারি :):)
তমাঃ-কি কি??…তুরা এরকম করলি কেন??:(
সুমাইয়াঃ-আল্লাহ!.. এখন খাও এসব ভেবো না।
তারপর তারা ভালো খাবার খেয়েই সব রোযা রাখল। ঈদে একহাজার দিয়ে মা শাড়ী আর বাবাকে লুঙ্গি কিনে দিল তারা।কয়েকদিন পর কয়েকজন লোক আসল সুমাইয়া ও সুরাইয়া দেখতে ওদের ছেলের জন্য। এক ছেলে ডাক্তার এক ছেলে বড় এক কম্পানির মালিক!… আর সুমাইয়াকে চয়েজ করলো ডাক্তার আর সুরাইয়া চয়েজ করল কোম্পানির মালিক।কিন্তু বিয়েতে অনেক টাকা লাগবে তাই বাবা আগ থেকে বেশি পরিশ্রম করতে লাগলো। তাদের বিয়ের ঠিক হলো জুলাই মাসের দশ তারিখ (তখন চলছিল জুন মাসোর পাচ তারিখ)…তমা গরুর দুধ বিক্রি করে, আর কয়েকটা কবুতর ছিল তা বিক্রি করে দেয় তো দিন কাছে আসতে শুরু করলো.
গল্পের বিষয়:
জীবনের গল্প