পাড়া-পড়শী অনেকের বাড়িতেই মেয়ে-জামাই
বেড়াতে এসেছে দেখে, গোপালের স্ত্রী
একদিন গোপালকে বলল, তুমি কি গা! জামাই আনার নাম
পর্যন্ত কর না। দু’বছর হয়ে গেল, একবারটি জামাইকে
আনলে না?
স্ত্রীর কথা শুনে গোপাল বলল, জামাই আনা কি
চাট্টিখানি কথা! কত খরচ বলতো?
গোপালের কথা শুনে গোপালের স্ত্রী বলল,
তুমি দেখছি হাড় কেপ্পন হয়ে গেলে গো।
রাজবাড়ি থেকে এত টাকা-পয়সা আনছো সে টাকা-
পয়সায় ছাতা পড়ে গেল। আমি কোনো কথা শুনতে
চাইনে। আজকালের মধ্যে জামাই না আনলে আমি
বাপের বাড়ি চলে যাব।
গোপাল ভাবল, এবার আর জামাই না এনে উপায় নেই,
তাই সে বিকেল বেলায় জামাই নিয়ে ফিরল।
জামাই আসবার পরও প্রায় একমাস হতে চলল কিন্তু জামাই
শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নড়তে চায় না। বসে বসে এমন
চর্ব্য-চূষ্য-লেহ্য-পেয় পাবে কোথায়?
জামাই শাশুড়িকে বলল, মা, এখানে এসে আমার
শরীরটা বেশ ভালো হয়েছে। ভাবছি আরও কিছুদিন
থাকব।
জামাইয়ের কথা শুনে শাশুড়ি বলল, তা তোমার যতদিন
ইচ্ছা থাক না। তোমার শ্বশুর তো এখন দু’হাতে টাকা
আনছে। যতদিন ইচ্ছে থাক।
শাশুড়ি ও জামাইয়ের কথোপকথন শুনে গোপাল
মনে মনে প্রমাদ গুনল। না, আর নয়। যেভাবেই
হোক, বুদ্ধি করে জামাই বাবাজীকে তাড়াতেই
হবে, নইলে যে জমানো টাকা ভাঙতে হবে। জামাই
পোষা না হাতি পোষা!
মনে মনে ফন্দি এঁটে সে জামাইকে বলল,
বাবাজী, এ পাড়ায় ভীষণ ছিঁচকে চোরের উৎপাত।
এই যে দেখছ লেবুগাছটা, এতে হাজার হাজার লেবু
এলেও আমি সময়মতো দেখতে পাই না,
বেচলেও বেশ পয়সা হতো। তুমি বাপু একটু লেবু
গাছটার দিকে নজর রেখো।
সব সময় নজর রাখতে হবে না, বিশেষ করে
সন্ধ্যের পরে একটু নজর রেখো। বাতি নিভিয়ে
দু’চারদিন গাছের দিকে নজর রাখলে নিশ্চয় চোর
ধরতে পারবে।
শ্বশুরের কথা শুনে জামাই বলল, আপনি কিছু ভাববেন
না, চোর আমি ধরবই।
সেদিন সন্ধ্যেবেলা গোপাল রাজবাড়ি থেকে
ফিরে বাড়ির ভেতর গিয়ে বলল, ওগো, পেটটা
ভালো নেই। কী রকম ভুটভুট করছে। গাছ
থেকে দুটো লেবু এনে একটু লেবুর সরবত
করে দাও তো।
ঘরে আর অন্য কোনো বাতি না থাকায় গোপালের
স্ত্রী অন্ধকারেই লেবু আনতে গেল। জামাই
চোর ধরার অপেক্ষায় আগে থেকেই ওৎ
পেতে বসেছিল। চোর ভেবে জামাই শাশুড়িকে
জাপটে ধরল।
চীৎকার চেঁচামেচি শুনে গোপাল সঙ্গে সঙ্গে
বাতি নিয়ে ছুটে গেল। তখনও জামাই শাশুড়িকে
জড়িয়ে ধরে আছে।
গোপাল তাই দেখে বলল, তাই তো বলি, শাশুড়ির এত
জামাই আনার ধূম কেন?
গোপালের স্ত্রী ভীষণ লজ্জা পেয়ে
রান্নাঘরে চলে গেল, জামাইও ভীষণ লজ্জা
পেয়ে রাতের অন্ধকারে শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করল।
গোপাল মনের সুখে বারান্দায় বসে তামাক টানতে
লাগল