জুলকারনাইন কে

জুলকারনাইন কে

জুলকারনাইন কুরআনে উল্লিখিত একজন ব্যক্তি। কুরআনের সূরা কাহাফ্ এ জুলকারনাইন নামটি উল্লিখিত আছে। কুরআনের তাফসিরকারীদের কারো কারো মতে তিনি একজন নবী ছিলেন। অন্যপক্ষে ইসলামী পণ্ডিতদের কেউ কেউ মনে করেন কুরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন হলেন আলেকজান্ডার।

স্মর্তব্য কুরআনে আলেকজান্ডার নামটি সরাসরি উল্লিখিত নেই। প্রাচীনকালে আরব উপদ্বীপে জুলকারনাইন নামটি পরিচিত ছিল অল্প বয়সী উচ্চ ক্ষমতাধর একজন শাসক হিসেবে। জুলকারনইন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল দুই শিং বিশিষ্ট।কুরআন শরীফের সূরা কাহাফের আয়াত নম্বর ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। নবী হিসেবে জুলকারনাইনের নাম উল্লেখ নেই যদিও কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না এমনটিও বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে আল্লাহ তাকে সকল বিষয়ে পথনির্দেশ বা দিকনির্দেশ কার্যপোকরণ দিয়েছেন। তিনি দুটি পথ অনুসরণ করেন। তার মধ্যে এক পথে গিয়ে তিনি ইয়াজুজ মাজুজের হাতে অত্যাচারিত এক জাতির দেখা পান। তিনি তাদের জন্য গলিত তামার তৈরি একটি প্রাচীর বানিয়ে দেন। সূরা কাহাফ ৮৩-৮৬ নম্বর আয়াতে নিম্নরূপ বর্ণিত আছেঃ

তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তার কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।”
জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে।

সূরা কাহাফের ৯৩ হতে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের উল্লেখ আছে। ধারণা করা হয় এই জাতি ধাতুর ব্যবহার জানতো। তারা হাপর বা ফুঁক নল দ্বারা বায়ু প্রবাহ চালনা করে ধাতুকে উত্তপ্ত করে গলাতে পারতো এবং তারা লোহার পিন্ড ও গলিত সীসাও তৈরি করতে পারতো। পরবর্তী আয়াতের বিভিন্ন বাংলা অনুবাদে গলিত তামার উল্লেখ আছে; ইংরেজি অনুবাদে তামার স্থলে সীসার উল্লেখ আছে। জুলকারনাইন তাদের প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি করার জন্য উপাদান ও শ্রম সরবরাহ করতে বললেন। তারা নিজেরাই জুলইয়াজুজ মাজুজ জাতি কে বাইবেলে গগ ম্যাগগ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।কারনাইনের আদেশ মত দুই পর্বতের মাঝে শক্ত লোহার প্রাচীর বা দ্বার তৈরি করলো।আধুনিক যুগের গবেষক ও পন্ডিতদের মতে কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ৩ টি চরিত্র নির্দেশ করা হতে পারে , যারা হলেনঃ

১।মহামতি আলেকজান্ডার
২।সাইরাস দি গ্রেট
৩।হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক।

আল কাহফ মুসলীম ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১৮ নম্বর সূরা এর আয়াত সংখ্যা ১১০ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১১ টি। আল কাহফ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় কোরাইশদের তিনটি প্রশ্নের কথা এবং প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। এই সূরায় হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত খিযির (আঃ) এর ঘটনাটিও বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী এবং মুসনাদে আহমদে হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি সূরা কাহ্‌ফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করে সে দাজ্জালের ফেৎনা থেকে নিরাপদ থাকবে। মুসনাদে আহমদে হযরত সাহ্‌ল ইবনে মু’আযের রেওয়ায়েতে আছে যে রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম এবং শেষ আয়াতগুলো পাঠ করে তার জন্যে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ সূরা পাঠ করে তার জন্যে যমীন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়।

রূহুল-মা’আনীতে হযরত আনাস (রাঃ) -এর বর্ণিত রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেনঃ সূরা কাহফ সম্পূর্ণটুকু এক সময় নাযিল হয়েছে এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা এর সঙ্গে আগমন করেছেন। এতে এর মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়। ইমাম ইবনে জরীর তাবারী হযরত ইবনে-আব্বাসের রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেনঃ যখন মক্কায় রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) -এর নবুওয়তের চর্চা শুরু হয় এবং কোরাইশরা তাতে বিব্রত বোধ করতে থাকে, তখন তারা নযর ইবনে হারেস ও ওকবা ইবনে আবী মুয়ী’তকে মদীনার ইহুদী পন্ডিতদের কাছে প্রেরণ করে। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) সম্পর্কে তারা কি বলে, জানার জন্যে। ইহুদী পন্ডিতরা তাদেরকে বলে দেয় যে, তোমরা তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করো। তিনি এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে বুঝে নেবে যে, তিনি আল্লাহ্‌র রসূল। অন্যথায় বোঝবে, তিনি একজন বাগাড়ম্বরকারীরসূল নন।(১) তাঁকে ঐসব যুবকের অবস্থা জিজ্ঞাস কর, যারা প্রাচীনকালে শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাদের ঘটনা কি? কেননা, এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা।

(২) তাঁকে সে ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞেস কর, যে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফর করেছিল। তার ঘটনা কি?

(৩) তাঁকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন কর যে, এটা কি ? উভয় কোরাইশী মক্কায় ফিরে এসে ভ্রাতৃসমাজকে বললঃ আমরা একটি চূড়ান্ত ফয়সালার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফিরে এসেছি। অতঃপর তারা তাদেরকে ইহুদী আলেমদের কাহিনী শুনিয়ে দিল। কোরাইশরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) -এর কাছে এ প্রশ্নগুলো নিয়ে হাযির হল। তিনি শুনে বললেনঃ আগামীকাল উত্তর দেব। কিন্তু তিনি ইনশাআল্লাহ্‌ বলতে ভুলে গেলেন। কোরাইশরা ফিরে গেল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ওহীর আলোকে জওয়াব দেবার জন্যে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে ওহী আসার অপেহ্মায় রইলেন। কিন্তু ওয়াদা অনুয়াযী পর দিবস পর্যন্ত ওহী আগমন করল না; বরং পনের দিন এ অবস্থায় কেটে গেল। ইতিমধ্যে জিবরাঈলও এলেন না এবং কোন ওহীও নাযিল হল না। অবস্থাদৃষ্টে কোরাইশরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ আরম্ভ করে দিল। এতে রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) খুবই দুঃখিত ও চিন্তিত হলেন। পনের দিন পর জিবরাঈল সূরা কাহফ নিয়ে অবতর করলেন। এতে ওহীর বিলম্বের কারণও বর্ণনা করে দেয়া হল যে, ভবিষ্যতে কোন কাজ করার ওয়াদা করা হলে ইনশাআল্লাহ্‌ বলা উচিত।

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِশুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ عَلَى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَل لَّهُ عِوَجَا
01
সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি।
قَيِّمًا لِّيُنذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِن لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا
02
একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মুমিনদেরকে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করে-তাদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে।
مَاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا
03
তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।
وَيُنذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا
04
এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করার জন্যে যারা বলে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে।
مَّا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ إِن يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا
05
এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও নেই। কত কঠিন তাদের মুখের কথা। তারা যা বলে তা তো সবই মিথ্যা।
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا
06
যদি তারা এই বিষয়বস্তুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবতঃ আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।
إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
07
আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।
وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا
08
এবং তার উপর যাকিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।
أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
09
আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল ?
إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
10
যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।
فَضَرَبْنَا عَلَى آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا
11
তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই।
ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَى لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا
12
অতঃপর আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি, একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে।
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُم بِالْحَقِّ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
13
আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
وَرَبَطْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَن نَّدْعُوَ مِن دُونِهِ إِلَهًا لَقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا
14
আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে।
هَؤُلَاء قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً لَّوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِم بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا
15
এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে?
وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنشُرْ لَكُمْ رَبُّكُم مِّن رَّحمته ويُهَيِّئْ لَكُم مِّنْ أَمْرِكُم مِّرْفَقًا
16
তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।
وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَاوَرُ عَن كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِّنْهُ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
17
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَهُمْ رُقُودٌ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ وَكَلْبُهُم بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيدِ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
18
তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।
وَكَذَلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَاءلُوا بَيْنَهُمْ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ قَالُوا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ فَابْعَثُوا أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمْ هَذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنظُرْ أَيُّهَا أَزْكَى طَعَامًا فَلْيَأْتِكُم بِرِزْقٍ مِّنْهُ وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا
19
আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।
إِنَّهُمْ إِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَن تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا
20
তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।
وَكَذَلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِم بُنْيَانًا رَّبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِم مَّسْجِدًا
21
এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব।
سَيَقُولُونَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْ وَيَقُولُونَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا بِالْغَيْبِ وَيَقُولُونَ سَبْعَةٌ وَثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْ قُل رَّبِّي أَعْلَمُ بِعِدَّتِهِم مَّا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ فَلَا تُمَارِ فِيهِمْ إِلَّا مِرَاء ظَاهِرًا وَلَا تَسْتَفْتِ فِيهِم مِّنْهُمْ أَحَدًا
22
অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।
وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا
23
আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব।
إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَى أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَذَا رَشَدًا
24
‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।
وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا
25
তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে।
قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا
26
বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।
وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا
27
আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
28
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।
وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ فَمَن شَاء فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاء فَلْيَكْفُرْ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاء كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءتْ مُرْتَفَقًا
29
বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا
30
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না।
أُوْلَئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا
31
তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এমতাবস্থায় যে, তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়।
وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا
32
আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দু’টিকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দু এর মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র।
كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِمْ مِنْهُ شَيْئًا وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا
33
উভয় বাগানই ফলদান করে এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নহর প্রবাহিত করেছি।
وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ فَقَالَ لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَنَا أَكْثَرُ مِنكَ مَالًا وَأَعَزُّ نَفَرًا
34
সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।
وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَن تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا
35
নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বললঃ আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।
وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِن رُّدِدتُّ إِلَى رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنقَلَبًا
36
এবং আমি মনে করি না যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেয়া হয়, তবে সেখানে এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব।
قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا
37
তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?
لَّكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا
38
কিন্তু আমি তো একথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরিক মানি না।
وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ إِن تُرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا
39
যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।
فَعَسَى رَبِّي أَن يُؤْتِيَنِ خَيْرًا مِّن جَنَّتِكَ وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاء فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا
40
আশাকরি আমার পালকর্তা আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তার (তোমার বাগানের) উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ করবেন। অতঃপর সকাল বেলায় তা পরিষ্কার ময়দান হয়ে যাবে।
أَوْ يُصْبِحَ مَاؤُهَا غَوْرًا فَلَن تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا
41
অথবা সকালে তার পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তুমি তা তালাশ করে আনতে পারবে না।
وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَى مَا أَنفَقَ فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا
42
অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।
وَلَمْ تَكُن لَّهُ فِئَةٌ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مُنتَصِرًا
43
আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোক হল না এবং সে নিজেও প্রতিকার করতে পারল না।
هُنَالِكَ الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ هُوَ خَيْرٌ ثَوَابًا وَخَيْرٌ عُقْبًا
44
এরূপ ক্ষেত্রে সব অধিকার সত্য আল্লাহর। তারই পুরস্কার উত্তম এবং তারই প্রদত্ত প্রতিদান শ্রেষ্ঠ।
وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا
45
তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا
46
ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।
وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا
47
যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।
وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا لَّقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّن نَّجْعَلَ لَكُم مَّوْعِدًا
48
তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না।
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
49
আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاء مِن دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا
50
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।
مَا أَشْهَدتُّهُمْ خَلْقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنفُسِهِمْ وَمَا كُنتُ مُتَّخِذَ الْمُضِلِّينَ عَضُدًا
51
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সৃজনকালে আমি তাদেরকে সাক্ষ্য রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃজনকালেও না। এবং আমি এমনও নই যে, বিভ্রান্ত কারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।
وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُم مَّوْبِقًا
52
যেদিন তিনি বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে আমার শরিক মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা তখন তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা এ আহবানে সাড়া দেবে না। আমি তাদের মধ্যস্থলে রেখে দেব একটি মৃত্যু গহবর।
وَرَأَى الْمُجْرِمُونَ النَّارَ فَظَنُّوا أَنَّهُم مُّوَاقِعُوهَا وَلَمْ يَجِدُوا عَنْهَا مَصْرِفًا
53
অপরাধীরা আগুন দেখে বোঝে নেবে যে, তাদেরকে তাতে পতিত হতে হবে এবং তারা তা থেকে রাস্তা পরিবর্তন করতে পারবে না।
وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ مِن كُلِّ مَثَلٍ وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا
54
নিশ্চয় আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى وَيَسْتَغْفِرُوا رَبَّهُمْ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلًا
55
হেদায়েত আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বিরত রাখে যে, কখন আসবে তাদের কাছে পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অথবা কখন আসবে তাদের কাছেআযাব সামনাসামনি।
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَيُجَادِلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَمَا أُنذِرُوا هُزُوًا
56
আমি রাসূলগনকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শন কারীরূপেই প্রেরণ করি এবং কাফেররাই মিথ্যা অবলম্বনে বিতর্ক করে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার উদ্দেশে এবং তারা আমার নিদর্শনাবলীও যদ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছে।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا وَإِن تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَى فَلَن يَهْتَدُوا إِذًا أَبَدًا
57
তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।
وَرَبُّكَ الْغَفُورُ ذُو الرَّحْمَةِ لَوْ يُؤَاخِذُهُم بِمَا كَسَبُوا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَ بَل لَّهُم مَّوْعِدٌ لَّن يَجِدُوا مِن دُونِهِ مَوْئِلًا
58
আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু, যদি তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে পাকড়াও করেন তবে তাদের শাস্তি ত্বরাম্বিত করতেন, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে একটি প্রতিশ্রুত সময়, যা থেকে তারা সরে যাওয়ার জায়গা পাবে না।
وَتِلْكَ الْقُرَى أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِم مَّوْعِدًا
59
এসব জনপদও তাদেরকে আমি ধংস করে দিয়েছি, যখন তারা জালেম হয়ে গিয়েছিল এবং আমি তাদের ধ্বংসের জন্যে একটি প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করেছিলাম।
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا
60
যখন মূসা তাঁর যুবক (সঙ্গী) কে বললেনঃ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌছা পর্যন্ত আমি আসব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।
فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ سَرَبًا
61
অতঃপর যখন তাঁরা দুই সুমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌছালেন, তখন তাঁরা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। অতঃপর মাছটি সমুদ্রে সুড়ঙ্গ পথ সৃষ্টি করে নেমে গেল।
فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ آتِنَا غَدَاءنَا لَقَدْ لَقِينَا مِن سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا
62
যখন তাঁরা সে স্থানটি অতিক্রম করে গেলেন, মূসা সঙ্গী কে বললেনঃ আমাদের নাশতা আন। আমরা এই সফরে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছি।
قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنسَانِيهُ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا
63
সে বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন প্রস্তর খন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই আমাকে একথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্য জনক ভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিয়েছে।
قَالَ ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا
64
মূসা বললেনঃ আমরা তো এ স্থানটিই খুঁজছিলাম। অতঃপর তাঁরা নিজেদের চিহ্ন ধরে ফিরে চললেন।
فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا
65
অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।
قَالَ لَهُ مُوسَى هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
66
মূসা তাঁকে বললেনঃ আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন?
قَالَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا
67
তিনি বললেনঃ আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্যধারণ করে থাকতে পারবেন না।
وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَى مَا لَمْ تُحِطْ بِهِ خُبْرًا
68
যে বিষয় বোঝা আপনার আয়ত্তাধীন নয়, তা দেখে আপনি ধৈর্য্যধারণ করবেন কেমন করে?
قَالَ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ صَابِرًا وَلَا أَعْصِي لَكَ أَمْرًا
69
মূসা বললেনঃ আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না।
قَالَ فَإِنِ اتَّبَعْتَنِي فَلَا تَسْأَلْنِي عَن شَيْءٍ حَتَّى أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا
70
তিনি বললেনঃ যদি আপনি আমার অনুসরণ করেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলি।
فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا رَكِبَا فِي السَّفِينَةِ خَرَقَهَا قَالَ أَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا إِمْرًا
71
অতঃপর তারা চলতে লাগলঃ অবশেষে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল, তখন তিনি তাতে ছিদ্র করে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি কি এর আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে এতে ছিদ্র করে দিলেন? নিশ্চয়ই আপনি একটি গুরুতর মন্দ কাজ করলেন।
قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا
72
তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না ?
قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلَا تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا
73
মূসা বললেনঃ আমাকে আমার ভুলের জন্যে অপরাধী করবেন না এবং আমার কাজে আমার উপর কঠোরতা আরোপ করবেন না।
فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهُ قَالَ أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَّقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُّكْرًا
74
অতঃপর তারা চলতে লাগল। অবশেষে যখন একটি বালকের সাক্ষাত পেলেন, তখন তিনি তাকে হত্যা করলেন। মূসা বললেন? আপনি কি একটি নিস্পাপ জীবন শেষ করে দিলেন প্রাণের বিনিময় ছাড়াই? নিশ্চয়ই আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।
قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِي صَبْرًا
75
তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না।
قَالَ إِن سَأَلْتُكَ عَن شَيْءٍ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِي قَدْ بَلَغْتَ مِن لَّدُنِّي عُذْرًا
76
মূসা বললেনঃ এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে সাথে রাখবেন না। আপনি আমার পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত হয়ে গেছেন।
فَانطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنقَضَّ فَأَقَامَهُ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا
77
অতঃপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা তাদের অতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, সেটি তিনি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন।
قَالَ هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
78
তিনি বললেনঃ এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
أَمَّا السَّفِينَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِينَ يَعْمَلُونَ فِي الْبَحْرِ فَأَرَدتُّ أَنْ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَاءهُم مَّلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصْبًا
79
নৌকাটির ব্যাপারে-সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত করে দেই। তাদের অপরদিকে ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা ছিনিয়ে নিত।
وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَن يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا
80
বালকটির ব্যাপার তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে।
فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا
81
অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক।
وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنزٌ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَنْ يَبْلُغَا أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنزَهُمَا رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِي ذَلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا
82
প্রাচীরের ব্যাপার-সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা।
وَيَسْأَلُونَكَ عَن ذِي الْقَرْنَيْنِ قُلْ سَأَتْلُو عَلَيْكُم مِّنْهُ ذِكْرًا
83
তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
إِنَّا مَكَّنَّا لَهُ فِي الْأَرْضِ وَآتَيْنَاهُ مِن كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا
84
আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম।
فَأَتْبَعَ سَبَبًا
85
অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।
حَتَّى إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِندَهَا قَوْمًا قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَن تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَن تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا
86
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।
قَالَ أَمَّا مَن ظَلَمَ فَسَوْفَ نُعَذِّبُهُ ثُمَّ يُرَدُّ إِلَى رَبِّهِ فَيُعَذِّبُهُ عَذَابًا نُّكْرًا
87
তিনি বললেনঃ যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন।
وَأَمَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُ جَزَاء الْحُسْنَى وَسَنَقُولُ لَهُ مِنْ أَمْرِنَا يُسْرًا
88
এবং যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেব।
ثُمَّ أَتْبَعَ سَبَبًا
89
অতঃপর তিনি এক উপায় অবলম্বন করলেন।
حَتَّى إِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلَى قَوْمٍ لَّمْ نَجْعَل لَّهُم مِّن دُونِهَا سِتْرًا
90
অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্নরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।
كَذَلِكَ وَقَدْ أَحَطْنَا بِمَا لَدَيْهِ خُبْرًا
91
প্রকৃত ঘটনা এমনিই। তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।
ثُمَّ أَتْبَعَ سَبَبًا
92
আবার তিনি এক পথ ধরলেন।
حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِن دُونِهِمَا قَوْمًا لَّا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلًا
93
অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না।
قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا
94
তারা বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।
قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا
95
তিনি বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থø দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব।
آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا
96
তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।
فَمَا اسْطَاعُوا أَن يَظْهَرُوهُ وَمَا اسْتَطَاعُوا لَهُ نَقْبًا
97
অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না।
قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي فَإِذَا جَاء وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكَّاء وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا
98
যুলকারনাইন বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا
99
আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।
وَعَرَضْنَا جَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لِّلْكَافِرِينَ عَرْضًا
100
সেদিন আমি কাফেরদের কাছে জাহান্নামকে প্রত্যক্ষ ভাবে উপস্থিত করব।
الَّذِينَ كَانَتْ أَعْيُنُهُمْ فِي غِطَاء عَن ذِكْرِي وَكَانُوا لَا يَسْتَطِيعُونَ سَمْعًا
101
যাদের চক্ষুসমূহের উপর পর্দা ছিল আমার স্মরণ থেকে এবং যারা শুনতেও সক্ষম ছিল না।
أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِن دُونِي أَوْلِيَاء إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا
102
কাফেররা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি।
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا
103
বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।
الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
104
তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।
أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
105
তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না।
ذَلِكَ جَزَاؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا
106
জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল; কারণ, তারা কাফের হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
107
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।
خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا
108
সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।
قُل لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
109
বলুনঃ আমার পালনকর্তার কথা, লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
110
বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।

প্রশ্ন এবং এর উত্তর প্রথম প্রশ্নটি ছিল যুবদের সম্পর্কে। এ সূরায় যুবকদের ঘটনাও পুরোপুরি বর্ণনা করা হয়েছে। তাদেরকে “আসহাবে কাহফ” বা গুহাবাসী বলা হয়। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সারা বিশ্ব সফরকারী ব্যক্তির সম্পর্কে। এ সূরায় পূর্ব ও পশ্চিমে সফরকারী যুলকারনাইনের ঘটনাও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন শরীফের সূরা কাহাফের আয়াত নম্বর ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। নবী হিসেবে জুলকারনাইনের নাম উল্লেখ নেই যদিও কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না এমনটিও বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁকে সকল বিষয়ে পথনির্দেশ বা দিকনির্দেশ এবং কার্যপোকরণ দিয়েছেন। তিনি এরপর দুটি পথ অনুসরণ করেন। এর মধ্যে এক পথে গিয়ে তিনি ইয়াজুজ মাজুজের হাতে অত্যাচারিত এক জাতির দেখা পান। তিনি তাদের জন্য গলিত তামার তৈরি একটি প্রাচীর বানিয়ে দেন। সূরা কাহাফ ৮৩-৮৬ নম্বর আয়াতে নিম্নরূপ বর্ণিত আছেঃ “তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।”

জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। সূরা কাহাফের ৯৩ হতে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের উল্লেখ আছে। পরবর্তী আয়াতের বিভিন্ন বাংলা অনুবাদে গলিত তামার উল্লেখ আছে; ইংরেজি অনুবাদে তামার স্থলে সীসার উল্লেখ আছে। জুলকারনাইন তাদের প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি করার জন্য উপাদান ও শ্রম সরবরাহ করতে বললেন। তারা নিজেরাই জুলকারনাইনের আদেশ মত দুই পর্বতের মাঝে শক্ত লোহার প্রাচীর বা দ্বার তৈরি করে।এবং তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল “রূহু” সম্পর্কে। তারও জওবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রূহু সম্পর্কিত প্রশ্নের জওবাব সংহ্মেপে দেয়াই সমীচীন ছিল। তাই সূরা বনী-ইসরাঈলের শেষে আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ কারণেই সূরা কাহফকে সূরা বনী-ইসরাঈলের পরে স্থান দেয়া হয়েছে।

এই প্রাচীরটির সঠিক অবস্থান নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। এ সম্পর্কে নানা মতবাদ প্রচলিত। একটি মতবাদ অনুসারে, কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাসপিয়ান সাগর উপকূলে। ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত যে এ দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার। যা তৈরি করতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে একটি তোরণ রয়েছে যেটি ‘কাসপিয়ান গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত। দারিয়াল এবং দারবেন্ত নামে দুটি শহরে এর ব্যপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত। দারবেন্ত রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাসপিয়ান সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে নির্মীত এ দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয় পৃথিবীর উঠান। আলেকজান্ডার নির্মীত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩ মিটার (১০ ফুট) পুরু।

বি.দ্র:

—-জুলকারনাইন- মহান এই ব্যক্তি সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য নেই প্রাচীন ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থ গুলিতে। গুটিকয় ইহুদি পন্ডিত তাকে জানতেন। মুহম্মদ যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন মক্কার কুরাইশরা ভীষণ বিব্রত বোধ করছিল, কারণ তিনি তাদের দেবদেবীগুলিকে অগ্রাহ্য ও অসার প্রতিপন্ন করছিলেন। তখন তারা মুহম্মদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকজন কুরাইশকে মদিনায় ইহুদি পন্ডিতদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা তখন মুহম্মদ সত্য নবী কিনা তা পরীক্ষার জন্যে কয়েকটি প্রশ্ন মুহম্মদের নিকট রাখতে বলে।

এই প্রশ্নগুলির একটির উত্তরে কোরআন জুলকারনাইন সম্পর্কে কিছু আয়াত নাযিল করে। যতদূর জানা যায় হযরত ইব্রাহিমের সময় ইনি রাজত্ব করেছিলেন। তবে তার রাজ্য শাসন ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। তিনি ছিলেন একজন পূণ্যবান ঈমাম। দামেস্কের নিকট বন্দী লুত ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার শেষে, ফেরার পথে বাদশা জুলকারনাইনের সাথে দেখা করেছিলেন ইব্রাহিম। জুলকারনাইন পূর্বেই ইব্রাহিম সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। সাক্ষাতে তাই তিনি তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন-‘আপনার প্রতি শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক। সকল প্রশংসার অধিকারী তিনি, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, যিনি শত্রুদেরকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন।’ পূণ্যবান ব্যক্তিকে উপহার দেবার প্রথা প্রচলিত ছিল। ইব্রাহিম তাই তার সম্পদের এক দশমাংশ তাকে উপহার দেবার প্রতিশ্রুতি দেন।

—-মহামতি আলেকজান্ডার (Alexander the great) (জন্ম – জুলাই খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ , মৃত্যু জুন ১১, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩)পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার

বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রীসের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। তার পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি পরিচিত পৃথিবীর বেশির ভাগ জয় ( টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী) করেছিলেন। আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল

ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি পারস্যে অভিশপ্ত আলেকজান্ডার নামেও পরিচিত, কারণ তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং এর রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি ফারসি ভাষায় “ইস্কান্দর , মধ্য পশ্চিমা স্থানে যুল-কারনাইন, আরবে আল-ইস্কান্দার আল কাবের”, উর্দুতে সিকান্দার-এ-আজম, পস্তুতে স্কান্দর , হিব্রুতে “আলেকজান্ডার মোকদন , আরমেনিয়ানয়ে ট্রে-কারনাইয়া”। তার এজাতীয় কিছু নামের অর্থ “দুই শিং বিশিষ্ট” (যুল-কারনাইন, ট্রে-কারনাইয়া), আবার উর্দু ও হিন্দিতে সিকান্দার যার অর্থ পারদর্শি” বা অত্যন্ত পারদর্শি।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত