আপনি কিভাবে জান্নাত লাভ করবেন?

আপনি কিভাবে জান্নাত লাভ করবেন?

সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জান্নাতের ওয়াদা করেছেন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করলো সে মহা সফলতা অর্জন করলো আবারো ঐ আল্লাহ পাকের প্রশংসা যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথে আহবান করছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু বলেন: ﴿ ﻭَﭐﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺪۡﻋُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔِ ﻭَﭐﻟۡﻤَﻐۡﻔِﺮَﺓِ ﺑِﺈِﺫۡﻧِﻪِۦۖ﴾ ‏[ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ﻣﻦ ﺍﻵﻳﺔ 221‏] . ‘‘আল্লাহ তাঁর অনুমতিক্রমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করছেন’’। [সূরা আল বাক্বারাহ: ২২১]

তিনি জান্নাতের বর্ণনা দিয়েছেন যে, জান্নাতে আছে সুমিষ্ট পানির নহর, দুধের ঝর্ণাধারা যার স্বাদের কোন পরিবর্তন নাই, শরাবের নহর যা পানকারীদের জন্য উপাদেয় এবং খাঁটি মধুর স্রোতস্বিনী। এর তলদেশ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার নদী নালা প্রবাহিত। এখানে বাসনা অনুযায়ী, চোখজুড়ানো সকল চাহিদা পূর্ণ হবে। প্রত্যেক মু’মিন তার ঈমানদার সন্তানাদি, সৎকর্মশীল ব্যক্তি এবং শহীদগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। আর সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ ও শহীদগণ কতই না উত্তম বন্ধু! বরং মু’মিন ব্যক্তি এর চেয়ে আরো উত্তম বস্তু লাভ করবে। আর তা হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ এবং তাঁর হাওযের পাশে অবস্থান। অধিকন্তু সেখানে সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট নেয়ামত প্রাপ্তির যে ওয়াদা আল্লাহ করেছেন তা পূর্ণ হবে যখন মু’মিন ব্যক্তি তার প্রভুকে কোন পর্দা ছাড়াই সরাসরি দেখতে পাবে।

হ্যাঁ, এ হচ্ছে জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণেই মানুষ তাদের রবের একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ কারণেই তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করে। এ জান্নাত লাভের আশায় মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বায়‘আত নিয়েছে। এ জান্নাতই শেষ গন্তব্য বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু যার ইন্তেযার করছেন, যেদিন বেলালকে উত্তপ্ত বালুর উপর চিৎ করে শুইয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দেয়া হয়েছিল এবং তিনি মুশরিকদের দেয়া এ কষ্টে ধৈর্য্যধারণ করেছিলেন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাসজিদে আযান দেয়া অব্যাহত রেখেছিলেন। এ জান্নাতই হচ্ছে সে বিশাল গনীমত আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহু যার জন্য অপেক্ষা করেছেন, যে দিন তাকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল, তার পিতা মাতাকে হত্যা করা হয়েছিল – যারা ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ।

এ জান্নাত পাওয়ার আশাই উমাইর ইবন হামামকে অহুদ যুদ্ধের দিন কয়েকটি খেজুর খাওয়া থেকে বিরত রেখেছিল; যেহেতু তিনি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পাগলপারা হয়ে উঠেছিলেন। আল্লাহও প্রতিদানে তাকে দ্রুত শাহাদাত নসীব করেছেন। এ জান্নাতের আশা-ভরসায় আল্লাহর ভয়ে প্রত্যেক আবেদের চোখ থেকে পানি ঝরে। প্রত্যেক মুজাহিদ আল্লাহর জন্য নিজের জান বিক্রি করে দেয়। প্রত্যেক আলেম স্বীয় ইলম অনুযায়ী আমল করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়। এ কারণেই ঈমানদার ব্যক্তি সালাত ও অন্যান্য ফরযসমূহ আদায় করে, আর মানুষ তার ঈমানের সাক্ষ্য দেয়। সে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে। তার অন্তর দ্বীন, মাসজিদ এবং আল্লাহর প্রতিদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ, এ জান্নাত পাওয়ার কতিপয় কারণ রয়েছে। আর প্রত্যেকে একটি উপায় অবলম্বন করবে যাতে সে জান্নাতের যে কোন একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং কোন মু’মিন তার সালাতের কারণে জান্নাতে যাবে, কেউবা রোযা বা যাকাত বা হজ্জ কিংবা উত্তম চরিত্র, কেনাবেচা ও জিহাদের কারণে জান্নাতে যাবে। বরং আল্লাহর রহমাত ও অনুগ্রহ এত প্রশস্ত যে, কোন কোন বান্দাকে তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাত দান করবেন শুধু এ কারণে যে, সে ব্যক্তি দুনিয়াতে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিয়ে মানুষকে কষ্টমুক্ত করেছে, তৃষ্ণার্ত পা্রণীকে পানি পান করিয়েছে এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে। সুতরাং জান্নাতে প্রবেশের উপায় যদি চয়ন করতে চান, তাহলে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সুললিত ও সুরভিত বাণী আপনার সমীপে পেশ করা হচ্ছে।

সাধ্যানুযায়ী উপায় আপনি চয়ন করুন। হতে পারে এ কারণে আপনি একাধিক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ লাভ করতে পারবেন। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এমন সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

জান্নাত লাভের উপায়সমূহ

১. জান্নাতে প্রবেশের প্রথম উপায় হলো: শাহাদাত অর্থাৎ একথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর সত্য কোন ইলাহ নেই, যিনি একক, যার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামের এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, এর যাবতীয় আরকান পালন করবে, আর এক অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন: ‏«ﻣﻦ ﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ، ﻭﺃﻥ ﻋﻴﺴﻰ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﻛﻠﻤﺘﻪ ﺃﻟﻘﺎﻫﺎ ﺇﻟﻰ ﻣﺮﻳﻢ ﻭﺭﻭﺡ ﻣﻨﻪ ، ﻭﺍﻟﺠﻨﺔ ﺣﻖ ﻭﺍﻟﻨﺎﺭ ﺣﻖ ﺃﺩﺧﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻤﻞ ‏» ‏(ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ‏) . ‘‘যে ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, ‘এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং আল্লাহর কালেমা যাকে তিনি মারিয়ামের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রূহ, আর জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য’। আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]

আল্লাহ বলেন: ﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺭَﺑُّﻨَﺎ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﺛُﻢَّ ﭐﺳۡﺘَﻘَٰﻤُﻮﺍْ ﻓَﻠَﺎ ﺧَﻮۡﻑٌ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﻭَﻟَﺎ ﻫُﻢۡ ﻳَﺤۡﺰَﻧُﻮﻥَ ١٣ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﺃَﺻۡﺤَٰﺐُ ﭐﻟۡﺠَﻨَّﺔِ ﺧَٰﻠِﺪِﻳﻦَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺟَﺰَﺁﺀَۢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ١٤ َ ﴾ ‏[ ﺍﻷﺣﻘﺎﻑ : 14-13‏] ‘‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এ কথার উপর সুদৃঢ় থাকে। তাদের কোন ভয় ভীতি নেই, তাদের কোন চিন্তা নেই। তারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ জান্নাত তারা তাদের কৃত কর্মের ফল স্বরূপ লাভ করবে। [সূরা আল আহক্বাফ: ১৩-১৪]

আয়াতে উল্লেখিত ﺍﻻﺳﺘﻘﺎﻣﺔ শব্দটির অর্থ হল: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏« ﻛﻞ ﺃﻣﺘﻲ ﻳﺪﺧﻠﻮﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺃﺑﻰ، ﻓﻘﺎﻟﻮﺍ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﻦ ﺃﺑﻰ؟ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﻃﺎﻋﻨﻲ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻣﻦ ﻋﺼﺎﻧﻲ ﻓﻘﺪ ﺃﺑﻰ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ‏) . ‘‘জান্নাত পেতে আগ্রহী নয় এমন ব্যক্তি ছাড়া আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে এমন ব্যক্তি আছে যে জান্নাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে’’। [বুখারী ]

২. আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ মুখস্থ করা এবং এ নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা জান্নাতে প্রবেশের একটি উপায়। আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏« ﺇﻥ ﻟﻠﻪ ﺗﺴﻌﺔ ﻭﺗﺴﻌﻴﻦ ﺍﺳﻤﺎ، ﻣﺎﺋﺔ ﺇﻻ ﻭﺍﺣﺪﺍ، ﻣَﻦ ﺃﺣﺼﺎﻫﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» . ‘‘আল্লাহর নিরানববইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো গণনা করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [বুখারী ও মুসলিম]

৩. আল কুরআনের অনুসারীগণ, যারা আল্লাহর আহল ও তাঁর খাস বান্দা, কুরআন তাদের জান্নাতে প্রবেশের উপায় হবে। আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻳﻘﺎﻝ ﻟﺼﺎﺣﺐ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ : ﺍﻗﺮﺃ ﻭﺍﺭﺗﻖ، ﻭﺭﺗﻞ ﻛﻤﺎ ﻛﻨﺖ ﺗﺮﺗﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ، ﻓﺈﻥ ﻣﻨﺰﻟﺘﻚ ﻋﻨﺪ ﺁﺧﺮ ﺁﻳﺔ ﺗﻘﺮﺃ ﺑﻬﺎ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ‏) . ‘‘আলকুরআনের সঙ্গীকে বলা হবে: কুরআন পাঠ কর, আর মর্যাদার উচ্চশিখরে আরোহণ কর। আর তেলাওয়াত করতে থাক। যেমন দুনিয়াতে তেলাওয়াত করছিলে; কেননা তোমার মর্যাদা হলো কুরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করবে’’। [তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো প্রমাণিত রয়েছে যে, কতিপয় সূরা ও আয়াত জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। আবু উমামা থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﻗﺮﺃ ﺁﻳﺔ ﺍﻟﻜﺮﺳﻲ ﻓﻲ ﺩﺑﺮ ﻛﻞ ﺻﻼﺓ ﻣﻜﺘﻮﺑﺔ ﻟﻢ ﻳﻤﻨﻌﻪ ﻣﻦ ﺩﺧﻮﻝ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺇﻻ ﺃﻥ ﻳﻤﻮﺕ‏» . ‘‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে’’। [নাসায়ী, তাবারানী, ইবনে হিববান এটি বর্ণনা করেছেন ও আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏« ﺳﻮﺭﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻣﺎ ﻫﻲ ﺇﻻ ﺛﻼﺛﻮﻥ ﺁﻳﺔ ﺧﺎﺻﻤﺖ ﻋﻦ ﺻﺎﺣﺒﻬﺎ ﺣﺘﻰ ﺃﺩﺧﻠﺘﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻫﻲ ﺗﺒﺎﺭﻙ ‏» . ‘‘৩০ আয়াত বিশিষ্ট কুরআনের একটি সূরা, এর পাঠকের জন্য জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত সুপারিশ করতেই থাকবে। সূরাটি হল তাবারাকা’’ (তথা সূরা মূলক)। [তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী বিশুদ্ধ বলেছেন]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি মাসজিদে কোবায় আনসার সাহাবীদের ইমামতি করতেন। তিনি প্রতি রাকাতেই ﻗﻞ ﻫﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﺪ সূরাটি পাঠ করতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কোন কারণে প্রতি রাকাতে এ সূরাটি পাঠ কর? উত্তরে সে সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ সূরাটি খুব পছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, এ সূরাটি পছন্দ করার কারণেই তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ইমাম বুখারী হাদীসটি সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী ও আলবানী হাদীসটিকে উত্তম ও সহীহ বলেছেন]

৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﺳﻠﻚ ﻃﺮﻳﻘﺎ ﻳﻠﺘﻤﺲ ﻓﻴﻪ ﻋﻠﻤﺎ ﺳﻬﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﺑﻪ ﻃﺮﻳﻘﺎ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» ‏( ﻣﺴﻠﻢ‏) . ‘‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন’’। [মুসলিম]

৫. আল্লাহ তা’লার যিক্র: আল্লাহর তাসবীহ (স্তুতি), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাকবীরের ফযীলত সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏« ﻟﻘﻴﺖُ ﻟﻴﻠﺔ ﺃﺳﺮﻱ ﺑﻲ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢَ، ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ، ﺃﻗﺮﺉ ﺃﻣﺘﻚ ﻣﻨﻲ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺃﺧﺒﺮﻫﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻃﻴﺒﺔ ﺍﻟﺘﺮﺑﺔ، ﻋﺬﺑﺔ ﺍﻟﻤﺎﺀ، ﻭﺃﻧﻬﺎ ﻗﻴﻌﺎﻥ ﻭﺃﻥ ﻏﺮﺍﺳﻬﺎ ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ‏» . ‘‘মেরাজের রাতে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতকে আমার সালাম বলো এবং তাদেরকে এ সংবাদ দাও যে, জান্নাতের মাটি সুন্দর, পানি মিষ্টি, আর জান্নাত সমতল এবং এর বৃক্ষরাজি সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’’। [তিরমিযী এটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী তাকে উত্তম বলেছেন]

৬. জান্নাতে প্রবেশের উপায়সমূহের মধ্যে আরো একটি হল প্রতি সালাতের পর আল্লাহর যিক্র পাঠ: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, গরীব মুহাজিরগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন. ধনী ও বিত্তবান লোকেরা তো আল্লাহর নিকট সুউচ্চ মর্যাদা এবং নানাবিধ নেয়ামত লাভে ধন্য হয়ে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কীভাবে? তারা জবাব দিলেন যে, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও সালাত আদায় করে। আমরা যেমন রোযা পালন করি তারাও রোযা পালন করে। কিন্তু তারা দান সদকা করে আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম আযাদ করে আমরা তা করি না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেব, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমকক্ষ হবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হবে? আর তোমাদের চেয়ে উত্তম কেউ হবে না, সে ব্যক্তি ছাড়া যে তোমাদের মতই এ কাজগুলো করবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে সে কাজ শিক্ষা দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার, আর ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে’’। [মুসলিম]

৭. অনুরূপভাবে অযুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠও জান্নাতে যাওয়ার উপায়। উকবাহ ইবন আমের বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ সুন্দর করে অযু করার পর যদি বলে: ‏« ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺣﺪﻩ ﻻ ﺷﺮﻳﻚ ﻟﻪ ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ‏» . তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসলিম]

৮. ﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ এ দো‘আ হল জান্নাতের ভান্ডার: আবু মুসা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডার সমূহের একটি ভান্ডার সম্পর্কে অবহিত করব? আমি বললাম: হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন, বলো: ﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ অর্থ্যাৎ: ‘‘আল্লাহর আশ্রয় ও শক্তি ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা নাই’’। [বুখারী, মুসলিম]

৯. আল্লাহর নিকট জান্নাত চেয়ে দো‘আ করলে জান্নাত তখন আমীন আমীন বলে সমর্থন করে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি ৩ বার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে: হে আল্লাহ্! ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দো‘আ করে, জাহান্নাম বলে: হে আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও। [তিরমিযি, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ এটি বর্ণনা করেছেন, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।

১০. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগফেরাত কামনার দো‘আকে সাইয়্যেদুল্ ইসস্তিগফার বা গুনাহ মাফ চাওয়ার প্রধান দো‘আ বলে অভিহিত করেছেন এবং জান্নাতে প্রবেশের কারণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং প্রিয় পাঠক! দো‘আটি মুখস্থ করুন এবং সকাল সন্ধ্যা পাঠ করুন। শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন তিনি বলেন, ইস্তেগফারের প্রধান দো‘আ হলো: ‏« ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺃﻧﺖ ﺭﺑﻲ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺧﻠﻘﺘﻨﻲ ﻭﺃﻧﺎ ﻋﺒﺪﻙ ﻭﺃﻧﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪﻙ ﻭﻭﻋﺪﻙ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﻌﺖ، ﺃﻋﻮﺫ ﺑﻚ ﻣﻦ ﺷﺮ ﻣﺎ ﺻﻨﻌﺖ، ﺃﺑﻮﺀ ﻟﻚ ﺑﻨﻌﻤﺘﻚ ﻋﻠﻲَّ ﻭﺃﺑﻮﺀ ﻟﻚ ﺑﺬﻧﺒﻲ ﻓﺎﻏﻔﺮ ﻟﻲ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻳﻐﻔﺮ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ‏» . ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া আর কোন সত্য মা’বুদ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা। আমি তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকারের উপর সাধ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। আমি অনিষ্টকর যা কিছু করেছি তা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর তোমার যে নেয়ামত আছে তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। তোমার নিকট আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও; কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না’’। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে দিনে এ দো‘আ পাঠ করে, সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, সে জান্নাতবাসী হয়’’। [বুখারী]

১১. সালাত হলো দ্বীনের খূঁটি। আল্লাহ আমাদের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। আল্লাহর নিকট প্রিয় ইবাদাত হলো তাঁর ফরয কাজসমূহ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফরয কাজসমূহ আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ওবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতসমূহের হকে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না করে সঠিকভাবে সেগুলো আদায় করে, তার জন্য আল্লাহর এ অঙ্গিকার যে, তিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে এগুলোর ব্যাপারে কমতি ও তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবে, তার প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ক্ষমাও করতে পারেন’’। [হাদীসটি মোয়াত্তায়ে মালিক, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে। আর আলবানী একে সহীহ বলেছেন]। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর ও আসরের দু’ ওয়াক্ত সালাতের পৃথক মর্যাদা দিয়ে এগুলোর নাম দিয়েছেন ‘বারাদাইন’ অর্থাৎ দু’টি শীতল ওয়াক্তের সালাত। আবু মূসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﺒﺮﺩﻳﻦ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ‏» অর্থাৎ ‘‘যে ব্যক্তি শীতল ওয়াক্তের দুই সালাত (ফজর -আসর) আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [বুখারী ও মুসলিম]

১২. কতিপয় সুন্নাত ও নিয়মিত সালাত আছে যেগুলো দ্বারা ফরয সালাতগুলোর কমতি পূরণ করা হয় এবং এগুলোর পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। সুতরাং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হোন, তাহলে আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করবেন। উম্মে হাবীবা রাদি আল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‘‘যে মুসলিম ব্যক্তিই ফরযের অতিরিক্ত প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাত সালাত আল্লাহর জন্য আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’। [মুসলিম]

এ সুন্নাত সালাতগুলোর বর্ণনা এভাবে এসেছে: ‘‘যোহরের পূর্বে ৪ রাকাআত, পরে ২ রাকাআত, মাগরিবের পরে ২ রাকাআত, ইশার পর ২ রাকাআত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাকাআত’’।

১৩. কোন ব্যক্তি যখন অযু করে, তখন তার জন্য ২ রাকাআত সালাত আদায় করা সুন্নাত। এ সালাত যখন সে নিষ্ঠার সাথে ও একাগ্রচিত্তে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আদায় করে, তখন তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে যায়। উকবাহ ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﺎ ﻣﻦ ﺃﺣﺪ ﻳﺘﻮﺿﺄ ﻓﻴﺤﺴﻦ ﺍﻟﻮﺿﻮﺀ ﻭﻳﺼﻠﻲ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﻳﻘﺒﻞ ﺑﻘﻠﺒﻪ ﻭﻭﺟﻬﻪ ﻋﻠﻴﻬﻤﺎ ﺇﻻ ﻭﺟﺒﺖ ﻟﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ‏) . ‘‘ যে ব্যক্তিই সুন্দর করে অযু করে উপস্থিত মন নিয়ে ও একাগ্রচিত্তে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’’। [মুসলিম]

১৪. দ্বীন ইসলামের উত্তম দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে: সালামের প্রসার করা, খাদ্য দান করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আর সত্যবাদীদের গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে তারা হল রাতের নফল সালাত আদায়কারী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ﴿ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻗَﻠِﻴﻠٗﺎ ﻣِّﻦَ ﭐﻟَّﻴۡﻞِ ﻣَﺎ ﻳَﻬۡﺠَﻌُﻮﻥَ ١٧ ﻭَﺑِﭑﻟۡﺄَﺳۡﺤَﺎﺭِ ﻫُﻢۡ ﻳَﺴۡﺘَﻐۡﻔِﺮُﻭﻥَ ١٨ َ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺬﺍﺭﻳﺎﺕ : 18-17‏] ‘‘তারা রাতের কম অংশই নিদ্রায় মগ্ন থাকে। আর শেষ রাতে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে’’। [সূরা আযযারিয়াত: ১৭-১৮]

যারা উপরোক্ত কাজগুলো করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‏«ﻳﺎ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺃﻓﺸﻮﺍ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺃﻃﻌﻤﻮﺍ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭﺻﻠﻮﺍ ﺍﻷﺭﺣﺎﻡ ﻭﺻﻠﻮﺍ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﻧﻴﺎﻡ ﺗﺪﺧﻠﻮﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺴﻼﻡ ‏» . ‘‘ হে মানব সকল! সালামের প্রসার কর। খাদ্য দান কর। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। লোকেরা ঘুমিয়ে গেলে রাতে নফল সালাত আদায় কর। তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।

১৫. ফজরের সালাতসহ অন্যান্য সালাতের উদ্দেশ্যে মাসজিদে গমন করার কারণে আল্লাহ তা’লা আপনার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏«ﻣﻦ ﻏﺪﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺃﻭ ﺭﺍﺡ ﺃﻋﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻧﺰﻻ ﻛﻠﻤﺎ ﻏﺪﺍ ﺃﻭ ﺭﺍﺡ ‏» . ‘‘যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা মাসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ সকাল বিকাল যখনই সে গমন করে জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]

১৬. সালাতের কাতারে মুসল্লীদের মাঝে যে ফাঁক দেখা যায় তা আপনি পূরণ করলে আপনার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﺳﺪ ﻓﺮﺟﺔ ﻓﻲ ﺻﻒ ﺭﻓﻌﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻬﺎ ﺩﺭﺟﺔ ﻭﺑﻨﻰ ﻟﻪ ﺑﻴﺘًﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» . ‘‘যে ব্যক্তি সালাতের কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করলো, এর দরূন আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’। [তাবারানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]।

১৭. আপনি যদি মাসজিদ নির্মাণ করেন অথবা মাসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‏«ﻣﻦ ﺑﻨﻰ ﻣﺴﺠﺪﺍ ﻟﻠﻪ ﺑﻨﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻣﺜﻠﻪ ‏» ‏(ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ‏) . ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরী করলো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]

১৮. দিনরাতে পাঁচবার মুয়াযযিনের আযানের জবাব দেয়া জান্নাতে প্রবেশের আরো একটি কারণ। উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘মুয়াযযিন যখন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (২বার) বলে, তখন তার উত্তরে কেউ যদি অনুরূপ বলে; অতঃপর মুয়াযযিন ( ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) বললে সে তার মতো ( ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ) বলে। মুয়াযযিন যখন ( ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ) বলে, সেও তাই বলে। তারপর ( ﺣﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ) বললে সে (ﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ ) বলে এবং ( ﺣﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻔﻼﺡ) বললেও সে ( ﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ ) বলে। তারপর মুয়াযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বললে সেও আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে। এরপর মুয়াযযিন যখন বলে ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) তখন সেও ( ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ) আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে বললে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [মুসলিম]

১৯. প্রিয় পাঠক! আপনি যদি আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে মেনে নেন, তাহলে আপনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘ হে আবু সাইদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে গ্রহণ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে’’। [মুসলিম]

২০. রোযাদারদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম ‘রাইয়ান’, রোযাদার ছাড়া এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘জান্নাতের ভেতর ‘রাইয়ান’ নামে একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এখান দিয়ে রোযাদারগণ ঢুকবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার পাবে না। বলা হবে: কোথায় রোযাদারগণ? তখন তারা সেখান দিয়ে ঢুকবে। তারা ছাড়া সেখান দিয়ে আর কেউ ঢুকবে না। তারা প্রবেশ করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর আর কেউ ঢুকতে পারবে না’’। [বুখারী ও মুসলিম]

২১. ইসলামের পঞ্চম রুকন হল আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা। এ হজ্জের প্রতিদান হলো জান্নাত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏« ﺍﻟﻌﻤﺮﺓ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻌﻤﺮﺓ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻤﺎ ﺑﻴﻨﻬﻤﺎ، ﻭﺍﻟﺤﺞ ﺍﻟﻤﺒﺮﻭﺭ ﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺟﺰﺍﺀ ﺇﻻ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» . ‘‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। আর পূণ্যময় হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’’। [বুখারী ও মুসলিম]

২২. যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’লা দ্বীন ইসলামকে বুলন্দ এবং সুউচ্চ করেছেন তা হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জিহাদ করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর কথাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। অথবা তাকে জিহাদের সাওয়াব ও গণীমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনেন’’। [বুখারী ও মুসলিম]

২৩. আল্লাহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে এ বলে আখ্যায়িত করেছেন যে, তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করে, এর দরূন তাকে জান্নাতে দেয়া হবে’’। [আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

২৪. যে সকল মহান কাজ মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায় তন্মধ্যে একটি হল: কোন ব্যক্তিকে অর্থ ঋণ দিয়ে তাকে তা স্বচ্ছলতার সাথে আদায় করার সুযোগ করে দেয়া। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন: ‘‘এক ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পর জান্নাতে প্রবেশ করলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো: তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে লোকটি বললো: আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা করতাম। বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দিতাম এবং কিছু টাকা পয়সা মাফ করে দিতাম। ফলে আল্লাহ তাকেও মাফ করে দিয়েছেন’’। [মুসলিম]

যে সকল সহজ আমল জান্নাতে প্রবেশের কারণ উপায়, তন্মধ্যে রয়েছে:

১. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেয়া, জন্তু জানোয়ারের প্রতি করুণা করা, উত্তম চরিত্র, কথা ও কাজে সততা, ক্রোধ সংবরণ করা এবং রাগ না করা, রোগী দেখতে যাওয়া ও সেবা করা, মুসলিম ভাইদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা, বেচাকেনার ক্ষেত্রে উদার হওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির মানদন্ডে কথা বলা।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‏«ﻟﻘﺪ ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺟﻼ ﻳﺘﻘﻠﺐ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻲ ﺷﺠﺮﺓ ﻗﻄﻌﻬﺎ ﻣﻦ ﻇﻬﺮ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﺫﻱ ﺍﻟﻨﺎﺱ‏» . ‘‘আমি একজন লোককে জান্নাতে এপাশ ওপাশ করতে দেখেছি রাস্তার উপর থেকে একটি গাছ কেটে ফেলার কারণে যার দরূন মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হতো’’। [মুসলিম]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন: ‏« ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺭﺃﻯ ﻛﻠﺒﺎ ﻳﺄﻛﻞ ﺍﻟﺜﺮﻯ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻄﺲ، ﻓﺄﺧﺬ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺧﻔﻪ ﻓﺠﻌﻞ ﻳﻐﺮﻑ ﻟﻪ ﺑﻪ ﺣﺘﻰ ﺃﺭﻭﺍﻩ، ﻓﺸﻜﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻓﺄﺩﺧﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ‏» . ‘‘এক ব্যক্তি একটি কুকুরকে পিপাসায় মাটি চাটতে দেখে। অতঃপর লোকটি নিজের মোজার সাহায্যে কুকুরটিকে পানি পান করালো। ফলে আল্লাহ তাকে প্রতিদান দিলেন এবং জান্নাত দান করলেন’’। [বুখারী]

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আমি জান্নাতের আঙ্গিনায় এমন একটি ঘরের গ্যারান্টিদাতা, যে ঘরটি ঐ ব্যক্তির জন্য হবে, হকদার হওয়া সত্ত্বেও যে ঝগড়া করে না। অনুরূপভাবে আমি জান্নাতের মাঝে ঐ ঘরেরও গ্যারান্টিদাতা, যে ঘরটি ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। তদুপরি জান্নাতের উপরিভাগের ঐ ঘরেরও আমি জামিনদার, যে ঘরটি হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য’’। [আবু দাউদ এ হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‏« ﺇﻥ ﺍﻟﺼﺪﻕ ﻳﻬﺪﻱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺒﺮ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﺒﺮ ﻳﻬﺪﻱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﺼﺪﻕ ﺣﺘﻰ ﻳﻜﻮﻥ ﺻﺪﻳﻘﺎ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻳﻬﺪﻱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻔﺠﻮﺭ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻔﺠﻮﺭ ﻳﻬﺪﻱ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﻭﺇﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻜﺬﺏ ﺣﺘﻰ ﻳﻜﺘﺐ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺬﺍﺑﺎ ‏» . ‘‘নিঃসন্দেহে সততা পূণ্যের দিকে পথ দেখায়। আর পূণ্য জান্নাতের দিশা দেয়। একজন ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে সত্যবাদী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যা কথা খারাপ ও গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়। আর গুনাহ ও পাপ দোযখের দিকে নিয়ে যায়। একজন ব্যক্তি মিথ্যা বলতে থাকে। এভাবে সে আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়’’। [বুখারী ও মুসলিম]

আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন: ‏« ﺩُﻟَّﻨِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻤَﻞٍ ﻳُﺪْﺧِﻠُﻨِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ، ﻗَﺎﻝَ ”: ﻻ ﺗَﻐْﻀَﺐْ، ﻭَﻟَﻚَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔ ‏» ‘‘আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ক্রোধান্বিত হয়ো না, তাহলে জান্নাতে যাবে।’’ [তাবারানী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻣَﺮِﻳﻀًﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻓِﻰ ﺧُﺮْﻓَﺔِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺮْﺟِﻊَ ‏» ‘‘যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল কুড়ানো অবস্থায় থাকে’’। [মুসলিম]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏«ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻣَﺮِﻳﻀًﺎ ﺃَﻭْ ﺯَﺍﺭَ ﺃَﺧًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻧَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ : ﻃِﺒْﺖَ ، ﻭَﻃَﺎﺏَ ﻣَﻤْﺸَﺎﻙَ ، ﻭَﺗَﺒَﻮَّﺃْﺕَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻣَﻨْﺰِﻻً ‏» ‘‘যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল অথবা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোন ভাইকে দেখতে গেল, তখন একজন আহবানকারী তাকে ডেকে বলে: তোমার ও তোমার চলার পথ কল্যাণময় হোক, সুন্দর হোক। তুমি জান্নাতে তোমার বাসস্থান করে নিয়েছ’’। [ইবনে মাজাহ, তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী অন্যান্য হাদীসের সমর্থনে একে সহীহ বলেছেন]

উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏«ﺃﺩﺧﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭ ﺟﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺭﺟﻼ ﻛﺎﻥ ﺳﻬﻼ ﻣﺸﺘﺮﻳﺎ ﻭﺑﺎﺋﻌﺎ ﻭﻗﺎﺿﻴﺎ ﻭﻣﻘﺘﻀﻴﺎ ‏» ‘‘আল্লাহ তা’লা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে বেচাকেনায়, বিচার ফয়সালা করায় এবং বিচার চাওয়ায় সরলতা অবলম্বন করেছে’’। [ইমাম আহমাদ ও নাসায়ী হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে উত্তম বলেছেন। আর আহমাদ শাকির এর সনদকে সহীহ বলেছেন]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘যে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির মানদন্ডে কথা বলে, এ ব্যাপারে কোন ভ্রূক্ষেপ করে না। একথার দরূন আল্লাহ তার মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। অন্যদিকে যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে অথচ এ ব্যাপারে ভ্রূক্ষেপও করে না, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন’’। [বুখারী]

২. জান্নাতের মধ্যে মুসলিম ব্যক্তির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও সুন্দর স্থান হলো যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী হবে। আর কন্যাদের সঠিক শিক্ষাদান ও লালন পালন করা এবং ইয়াতীমের দায়িত্ব গ্রহণ করা জান্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্য পাওয়া ও তাঁর প্রতিবেশী হওয়ার সুনিশ্চিত কারণ। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏«ﻣﻦ ﻋﺎﻝ ﺟﺎﺭﻳﺘﻴﻦ ﺣﺘﻰ ﺗﺒﻠﻐﺎ ﺟﺎﺀ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺃﻧﺎ ﻭﻫﻮ، ﻭﺿﻢ ﺃﺻﺎﺑﻌﻪ ‏» . ‘‘ যে ব্যক্তি দু’ কন্যাকে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করে, কিয়ামতের দিন আমি ও সে একত্রে থাকব’’ , এই বলে তিনি তাঁর দু’ আঙ্গুলকে একত্র করে দেখালেন। [মুসলিম]

সহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏«ﺃَﻧَﺎ ﻭَﻛَﺎﻓِﻞُ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻢِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺎﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻮُﺳْﻄَﻰ ﻭَﻓَﺮَّﺝَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﺷَﻴْﺌًﺎ ‏» ‘‘আমি এবং ইয়াতিমের অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকব’’। এ কথা বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টোকে একত্রে মিলিয়ে দু’টোর মাঝে একটু ফাঁক রাখলেন’’। [বুখারী]

৩. পিতামাতা উভয়ের প্রতি অথবা যে কোন একজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করাও জান্নাতে যাওয়ার উপায়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‏« ﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺛُﻢَّ ﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ ﺛُﻢَّ ﺭَﻏِﻢَ ﺃَﻧْﻒُ . ﻗِﻴﻞَ ﻣَﻦْ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺃَﺑَﻮَﻳْﻪِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮِ ﺃَﺣَﺪَﻫُﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻛِﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻞِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ‏» ‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলো মলিন হোক (৩ বার) অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক। প্রশ্ন করা হলো: হে আললাহর রাসূল! কোন ব্যক্তির? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা

ল্লাম) জবাব দিলেন: ‘‘যে ব্যক্তি পিতামাতাকে অথবা তাদের যে কোন একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল, তারপরও জান্নাতে যেতে পারলো না’’। [মুসলিম]

আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘পিতা হলো জান্নাতের মাঝের দরজা। তুমি চাইলে এ দরজার হেফাযত করতে পার অথবা হারাতে পার’’। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও আহমাদ এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তার মা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলো। লোকটি বললো: জী, আমার মা আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি সার্বক্ষণিক তার দেখাশুনা কর, কেননা তার পায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে’’। [আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ এ হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে উত্তম ও সহীহ বলেছেন]

৪. মানুষের সবচেয়ে বড় কাজ হল তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করা। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দু’টো হেফাযতের দায়িত্ব নিবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জান্নাতের ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন। সহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﻳﻀﻤﻦ ﻟﻲ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﻟﺤﻴﻴﻪ ﻭﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺭﺟﻠﻴﻪ ﺃﺿﻤﻦ ﻟﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» . ‘‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহবা) এবং দু’ পায়ের মধ্যখানের (লজ্জাস্থান) হেফাযতের গ্যারান্টি দিবে, আমি তার জান্নাতের ব্যাপারে গ্যারান্টি দেব’’। [বুখারী]

৫. মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষীস্বরূপ। সুতরাং মানুষ যার পক্ষে ভাল সাক্ষ্য দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা একটি লাশের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার ভাল প্রশংসা করা হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘‘ওয়াজিব হলো, ওয়াজিব হলো, ওয়াজিব হলো’’। অনুরূপভাবে আরো একটি লাশের পাশ দিয়ে অতিক্রম করা হল। এটি সম্পর্কে খারাপ বর্ণনা করা হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, ‘‘ওয়াজিব হলো’’ (৩ বার)। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: ‘‘তোমরা যার ভাল প্রশংসা কর, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে যায়। আর তোমরা যার খারাপ বর্ণনা কর, তার জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে যায়। তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী’’ (৩ বার বললেন)। [বুখারী ও মুসলিম]

৬. আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন: ﴿ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺟۡﺮَﻫُﻢ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏٖ ١٠﴾ ‏[ ﺍﻟﺰﻣﺮ 10:‏] ‘‘নিশ্চয় সবরকারীগণকে বেহিসাবী প্রতিদান দেয়া হয়’’। [সূরা আযযুমার: ১০] তাই সবর হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার ঈমান এবং তাঁর নৈকট্যের আলামতসমূহের একটি আলামত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রিয়জন যথা: সন্তান, ভাই-বেরাদার ইত্যাদির মৃত্যুতে ধৈর্য্য ধারণ করে, সে জান্নাতী। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‏«ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻣَﺎ ﻟِﻌَﺒْﺪِﻱ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﺟَﺰَﺍﺀٌ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺒَﻀْﺖُ ﺻَﻔِﻴَّﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺛُﻢَّ ﺍﺣْﺘَﺴَﺒَﻪُ ﺇِﻻَّ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔ ‏» ‘‘আল্লাহ তা’লা বলেন, আমার মু’মিন বান্দার নিকট থেকে যখন তার অতি প্রিয়জনের জান কবয করা হয়, আর সে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করে ধৈর্য্যধারণ করে, তার প্রতিদান আমার নিকট জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’’। [বুখারী]

আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাঁর ফেরেস্তাদের জিজ্ঞাসা করেন: তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছো? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ বলেন, তোমরা কি তার কলিজার টুকরার জান কবজ করেছো? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ আবার বলেন, আমার বান্দা কি বললো? ফেরেস্তারা জবাব দেন, সে আল্লাহর প্রশংসা করেছে এবং বলেছে: ( ﺇﻧﺎ ﻟﻠﻪ ﻭﺇﻧﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺭﺍﺟﻌﻮﻥ ) ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে’। আল্লাহ তখন বলেন: তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং এ ঘরটির নাম দাও ‘বায়তুল হামদ’ বা প্রশংসার ঘর’’। [তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী উত্তম বলেছেন]

৭. যে ব্যক্তি অন্ধ হয়েও ধৈর্য্যধারণ করে সে জান্নাতে যাবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘আল্লাহ তা’লা বলেন, ‘আমার বান্দাকে তার দু’টি প্রিয় বস্তু (অর্থাৎ চোখ) কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করি। অতঃপর সে ধৈর্য্যধারণ করে। আমি এ দু’টোর পরিবর্তে তাকে জান্নাত দান করি’’। [বুখারী]

৮. যে মুসলিম নারী সৎ কাজে তার স্বামীর আনুগত্য করে এবং আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করে, সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যদি কোন মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযানের রোযা পালন করে, লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে’’। [ইবনু হিববান এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

৯. মুসলিম মহিলা প্রসবের সময় মারা গেলে তার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তার প্রসব বেদনা তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। রাশেদ ইবন হুবাইশ থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তি শহীদ, প্লেগরোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ, ডুবে মরে যাওয়া ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ, অসুস্থ অবস্থায় মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং সন্তান প্রসবের পর নেফাস অবস্থায় মৃত মহিলা, তার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার কারণে সে জান্নাতে চলে যায়’’। [আহমাদ হাদীসটি বর্ননা করেছেন, আলবানী একে উত্তম বলেছেন]

১০. যে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকলো আল্লাহর রাসূল তাকে জান্নাতে নেয়ার জামিন হলো। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﺗﻜﻔﻞ ﻟﻲ ﺃﻥ ﻻ ﻳﺴﺄﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺷﻴﺌﺎ ﺃﺗﻜﻔﻞ ﻟﻪ ﺑﺎﻟﺠﻨﺔ ‏» . ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের নিকট হাত না পাতার দায়িত্ব নিবে, আমি তাকে জান্নাতে নেয়ার দায়িত্ব নেব’’। [আহমাদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

১১. যে ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সেও জান্নাতী। আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‏«ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﻣﺎﻟﻪ ﻣﻈﻠﻮﻣﺎ ﻓﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ‏» . ‘‘যে ব্যক্তি সম্পদ রক্ষার নিমিত্তে নিপীড়িত হয়ে মারা যায়, তার জন্য রয়েছে জান্নাত’’। [নাসায়ী এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১২. প্রিয় পাঠক! আপনার জন্য রয়েছে জান্নাত, যদি আপনি সালাম প্রচার করেন, অন্যকে খাদ্য দান করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং রাতের বেলা মানুষ ঘুমিয়ে গেলে সালাত আদায় করেন। আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার কর, খাদ্য প্রদান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং মানুষ ঘুমিয়ে গেলে রাতের সালাত আদায় কর। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে’’। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ ও হাকেম হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন] শুরাইহ ইবন হানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন বিষয়ে অবহিত করুন যা আমার জান্নাতে যাওয়াকে নিশ্চিত করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন:তুমি সর্বদা উত্তম কথা বলবে এবং খাদ্য দান করবে’’। [বুখারী আদাবুল মুফরাদে এবং হাকেম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৩. যে ব্যক্তি অহংকার, ঋণ ও যুদ্ধে লব্ধ গণীমতের মালের খেয়ানত থেকে মুক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকার, গণীমতের সম্পদে খেয়ানত করা এবং ঋণ থেকে মুক্ত অবস্থায় মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করলো’’। [তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ এটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৪. আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকে অবলম্বন করে যারা মুসলিম জামায়াতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে, তারা জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে প্রবেশ করবে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘তোমাদের জন্য ইসলামী জামায়াতকে আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য। আর বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বেঁচে থাক। কেননা একা একা থাকলে শয়তান তার সঙ্গী হয়। আর জামায়াতবদ্ধ দু’ ব্যক্তি থেকে শয়তান অনেক দূরে অবস্থান করে। যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থান পাওয়ার আশা করে, সে যেন অবশ্যই ইসলামী জামায়াতকে আঁকড়ে ধরে’’। [তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৫. ন্যায়পরায়ণ শাসক, কোমল হৃদয়ের অধিকারী দয়ালু ব্যক্তি এবং চরিত্রবান ও সুরুচিপূর্ণ পরিবার প্রধান জান্নাতবাসীদের অন্তর্গত। ইয়ায ইবন হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘তিনশ্রেণীর লোকেরা জান্নাতবাসী হবে। এক: ন্যায়পরায়ণ, দাতা ও আল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত শাসক, দুই: দয়ালু ব্যক্তি যার অন্তর প্রতিটি আত্মীয় ও মুসলিমের জন্য কোমল, এবং তিন: সুরুচিপূর্ণ চরিত্রবান পরিবার প্রধান’’। [মুসলিম]

১৬. যে বিচারক ন্যায় ও ইনসাফের সাথে মানুষের বিচার ফয়সালা করে, সে জান্নাতী। বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: ‘‘বিচারকগণ তিন প্রকার। দুই শ্রেণীর বিচারক হবে জাহান্নামী আর এক শ্রেণীর বিচারক হবে জান্নাতী। যে ব্যক্তি সত্য জেনে সে অনুযায়ী ফয়সালা করলো, সে জান্নাতী। অন্য দিকে যে ব্যক্তি না জেনে মূর্খতাবশতঃ ফয়সালা দেয়, সে জাহান্নামী। আর যে ব্যক্তি সত্য জানার পরও যুল্ম করলো, সে জাহান্নামী’’। [আবু দাউদ, তিরমিযী,নাসায়ী, ইবনে মাজাহ ও হাকেম হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৭. সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা হল যারা কারো নিকট ঝাড়ফুঁক চায়নি, পাখি দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করেনি এবং কারো নিকট বিশেষ চিকিৎসা চায়নি। ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে ৭০ হাজার হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তারা হলো যারা কারো নিকট ঝাড়ফুঁক চায়না, পাখির সাহায্যে ভাগ্য নির্ধারণ করে না, কারো নিকট বিশেষ চিকিৎসার জন্য যায় না। বস্তুতঃ তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’’। [বোখারী ও মুসলিম] লক্ষ্যণীয় যে, শরীয়তসম্মত ঝাড়ফুঁক এবং বিশেষ চিকিৎসা করা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করা উত্তম।

১৮. কতগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্য কোন মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে অর্জিত হলে এগুলোর কারণে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে ৬টি গুণ অর্জনের জামিন হও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হবো। এক: কথা বলার সময় সত্য বলবে, দুই: ওয়াদা করে তা পূরণ করবে, তিন: তোমাদের নিকট আমানাত রাখা হলে সে আমানাত আদায় করবে, চার: লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে, পাঁচ: দৃষ্টিকে সংযত রাখবে, ছয়: তোমদের হাতকে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখবে’’। [আহমাদ, ইবনু হিববান ও হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে আজ কে রোযা রেখেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের মধ্যে আজ কে জানাযার অনুসরণ করেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের কে আজ মিসকীনকে খাদ্য দান করেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বললেন: তোমাদের মধ্যে কে আজ রুগীর সেবা করেছো? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি। অতঃপর রাসূল সাল্ল­ ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: উপরোক্ত গুণাবলী যে ব্যক্তির মধ্যে একত্রিত হবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [বুখারী ও মুসলিম]

প্রিয় পাঠক! পরিশেষে আপনাকে তাওবার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। বস্তুতঃ গুনাহ থেকে তাওবাকারী নিষ্পাপ, যার কোন গুনাহ নেই। আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহ তা’লা বলেন: ﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﺗُﻮﺑُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮۡﺑَﺔٗ ﻧَّﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰٰ ﺭَﺑُّﻜُﻢۡ ﺃَﻥ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨﻜُﻢۡ ﺳَﻴَِّٔﺎﺗِﻜُﻢۡ ﻭَﻳُﺪۡﺧِﻠَﻜُﻢۡ ﺟَﻨَّٰﺖٖ ﺗَﺠۡﺮِﻱ ﻣِﻦ ﺗَﺤۡﺘِﻬَﺎ ﭐﻟۡﺄَﻧۡﻬَٰﺮُ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ 8: ‏] ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠাপূর্ণ খাঁটি তাওবা কর। আশা করা যায় তোমাদের প্রতিপালক তোমদের সকল ত্রুটি বিচ্যুতি মিটিয়ে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত’’। [সূরা আত তাহরীম: ৮]

প্রিয় পাঠক! আপনি আপনার নিজের ভেতরে ঈমানে পরিপূর্ণ একটি মন আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আকাংখায় ভরপুর একটি আত্মার অধিকারী। আপনার সুখ ও আনন্দ হলো – নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে আপনি নবী, সত্যবাদী শহীদ এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণের সঙ্গী হতে চান, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। বস্তুতঃ জান্নাত প্রস্তুত ও নিকটবর্তী। দয়ালু ও করুণাময় আল্লাহই এর দিকে আহবান করছেন। আপনার প্রিয় নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে আপনাকে ডাকছেন – ‘হে মু’মিন! আস, জান্নাতবাসী হও’। অতএব জান্নাত আপনার জন্য দুনিয়ার জীবনে, মৃত্যুর সময় এবং হিসাব- নিকাশের সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ।

মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের ফল এবং এর অসংখ্য নেয়ামত দ্রুত অর্জনের জন্য আদেশ করছেন। আর আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। মহান প্রতিপালক জান্নাতের অতি সুন্দর ও উত্তম বর্ণনা দিয়েছেন এবং একে মানুষের কল্পনাতীত বস্তু দিয়ে সুসজ্জিত করেছেন। যাতে আপনি সেখানে চিরস্থায়ী সুখ ও ভোগের সাথে জীবন যাপন করতে পারেন। সুতরাং আপনি জান্নাতে প্রবেশের জন্য অগ্রসর হোন। আপনার প্রতি আল্লাহ তা’লার ভালবাসা ও খুশীর বহিঃপ্রকাশ এটাই। এসব কিছুই প্রতিফলিত হবে স্বল্প আমল করার মাধ্যমে, যে আমল করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ আমলগুলো করার পর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত আপনার জন্য প্রশস্ত হবে। সুতরাং আসুন এবং এ দিকে অগ্রসর হোন। মহান আল্লাহর ঘোষণা: ﴿ﻭَﺳَﺎﺭِﻋُﻮٓﺍْ ﺇِﻟَﻰٰ ﻣَﻐۡﻔِﺮَﺓٖ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻜُﻢۡ ﻭَﺟَﻨَّﺔٍ ﻋَﺮۡﺿُﻬَﺎ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕُ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽُ ﺃُﻋِﺪَّﺕۡ ﻟِﻠۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ١٣٣ ﴾ ‏[ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ 133:‏] ‘‘তোমার রবের মাগফিরাত এবং ঐ জান্নাতের দিকে ধাবিত হও যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে’’। [সূরা আল ইমরান: ১৩৩]

বন্ধুগণ! মুত্তাকীরাই হলো আল্লাহর অলী ও বন্ধু। তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের সুসংবাদের হকদার। তাদের আমলই গ্রহণযোগ্য। তারাই জান্নাতে আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। আর মুত্তাকীগণ এ তত্ত্বগুলো ভাল করেই জানে। কেননা তারা আল্লাহ তা’লার একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাঁর সাথে কোন কিছুকে তারা শরীক করেনি। তারা আল্লাহ সুবহানাহু ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উপর অন্য কারো কথাকে প্রধান্য দেয় না। তারা সকল আমলকে কুরআন কারীম ও সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বাদ দিয়ে তারা কোন অলী, শায়খ কিংবা আলেম উলামার কথাকে গুরুত্ব দেয় না। অহী থেকে প্রাপ্ত কুরআন ও সুন্নাহই হলো সত্য – এটা গ্রহণ করাই তাদের স্বভাব। এছাড়া অন্য কিছুকে তারা মানে না। মুত্তাকীগণ আল্লাহর মর্যাদার হকদার।

কেননা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিষ্ঠার সাথে সকল কাজ সম্পন্ন করে। এর দ্বারা মানুষের কোন প্রশংসা, স্তুতি ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশা তারা করে না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তিই তাদের লক্ষ্য। মুত্তাকীরাই জান্নাতী। কেননা তারা সরল সঠিক মনের অধিকারী। তাদের পাকস্থলীতে হালাল খাদ্য রয়েছে। তাছাড়াও তারা সর্বদা তাদের মাওলা ও মনিবের নিকট তাদের আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্য কাতরভাবে দো‘আ করে। মুত্তাকীগণই তাদের রবের জান্নাত, তাঁর সন্তুষ্টি, সম্মান ও মর্যাদা লাভে ধন্য হবে। তাদেরকেই ফেরেস্তাগণ জান্নাতের দিকে দলে দলে নিয়ে যাবে। ফেরেস্তাগণ তাদেরকে স্বাগতম জানাবে, সালাম বলবে। তাদের প্রতিপালক তাদের আনন্দ ও স্বচ্ছন্দের জন্য তাদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎ দেবেন। বন্ধুগণ! এ হলো জান্নাত। উপরোক্ত আমলগুলো হলো জান্নাতীদের আমল। সুতরাং উক্ত আমলগুলো করুন এবং জান্নাতের খোশখবরী গ্রহণ করুন। আর নিরাশ হবেন না। কেননা আল্লাহর রহমত নেককারদের অতি নিকটে। ওয়াস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত