ইউসুফ আ. এর সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা

ইউসুফ আ. এর সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা
দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর হযরত ইউসুফ আ. এমন সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে রাজকার্য পরিচালনা করলেন যে, কারো কোনো অভিযোগ রইল না। গোটা দেশ তাঁর প্রশংসা মুখর হয়ে উঠলো এবং সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা ও স্বাচ্ছন্দ্য বিরাজ করতে লাগল।
রাষ্ট্রের দায়িত্বপালনে ইউসুফ আ. কোনোরূপ বাধা-বিপত্তি কিংবা কষ্টের সম্মুখীন হননি। সুষ্ঠুভাবে রাজ্য পরিচালনার পাশাপাশি তিনি দীন প্রতিষ্ঠার কাজ আঞ্জাম দেন। বিশিষ্ট তাফসীরবিদ আল্লামা মুজাহিদ রহ. বলেন, এসব প্রভাব-প্রতিপত্তি ও রাজক্ষমতা দিয়ে ইউসুফ আ. এর একমাত্র লক্ষ্য ছিল আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধিবিধান জারী করা এবং তাঁর দীন প্রতিষ্ঠিত করা। তাই তিনি সর্বদা এ ব্যাপারে সজাগ ছিলেন এবং এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জনগণের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার জন্য ইউসুফ আ. এমন কাজ করেন, যার নজীর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্বপ্নের ব্যাখ্যানুযায়ী সুখ-শান্তির সাত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ইউসুফ আ. পেট ভরে খাওয়া ছেড়ে দেন।
সবাই বললো, মিসর সম্রাজ্যের যাবতীয় ধন-সম্পদ আপনার কবজায়, অথচ আপনি ক্ষুধার্ত থাকেন, এ কেমন কথা? তিনি বললেন, সাধারণ মানুষের ক্ষুধার অনুভূতি যাতে আমার অন্তর থেকে উধাও হয়ে না যায়, সে জন্য এটা করি। সেই সাথে তিনি শাহী বাবুর্চিদেরকে নির্দেশ দেন, দিনে মাত্র একবার দুপুরের খাদ্য রান্না করবে, যাতে রাজপরিবারের সদস্যবর্গও জনসাধারণের ক্ষুধায় কিছুটা অংশগ্রহণ করতে পারে। ইউসুফ আ. যেহেতু পূর্ব থেকেই অবগত ছিলেন যে, দুর্ভিক্ষ সাত বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, তাই দুর্ভিক্ষের প্রথম বছরে তিনি দেশের মজুদ শস্য-ভাণ্ডার খুব সাবধানে সঞ্চিত ও সংরক্ষিত রাখলেন। মিসরের অধিবাসীদের কাছে তাদের প্রয়োজন পরিমাণে খাদ্যশস্য পূর্ব থেকে সঞ্চিত করানো হলো।
দেখতে দেখতে দুর্ভিক্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লো এবং চতুর্দিক থেকে বুভুক্ষু জনসাধারণ মিসরে আগমন করতে লাগলো। তাদেরকে ইউসুফ আ. একটি বিশেষ পরিমাণে খাদ্যশস্য দিতেন; এর বেশী দিতেন না। ইমাম কুরতুবী রহ. এর পরিমাণ এক ওয়াসাক অর্থাৎ ষাট সা‘ লিখেছেন, যা আমাদের দেশীয় ওজন অনুযায়ী দুইশ দশ সের (পাঁচ মনের কিছু বেশী হয় বা প্রায় ১৯৫ কেজি হয়)। তিনি এ কাজটিতে এত গুরুত্ব দেন যে, বিক্রয় কার্যের তদারকি নিজেই করতেন। আর তখন শুধু মিসরেই দুর্ভিক্ষ সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং দূর-দূরান্ত অঞ্চলও এর করালগ্রাসে পতিত হয়েছিল।
হযরত ইয়াকূব আ. এর জন্মভূমি কেনান ছিল ফিলিস্তীনের একটি অংশ। অদ্যাবধি তা ‘খলীল’ নামে একটি সমৃদ্ধ শহরের আকারে বিদ্যমান রয়েছে। এখানে হযরত ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব ও ইউসুফ আ. এর সমাধি অবস্থিত। এ এলাকাটিও দুর্ভিক্ষের করালগ্রাস থেকে মুক্ত ছিল না। ফলে ইয়াকূব আ. এর পরিবারেও অনটন দেখা দেয়। সে সময় মিসরের এ সুখ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে যে, সেখানে স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে অনেক খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। তখন হযরত ইয়াকূব আ. এর কানে এ সংবাদ পৌঁছে যে, মিসরের বাদশাহ অত্যন্ত সৎ ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি নিজেই স্বয়ং জনসাধারণের মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণ করেন। তাই তিনি পুত্রদেরকে বললেন, তোমরাও যাও এবং মিসর থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে এসো।
এ কথাও জানাজানি হয়ে গিয়েছিল যে, একজনকে এক উটের বোঝার চাইতে বেশী খাদ্যশস্য দেওয়া হয় না। তাই তিনি সব পুত্রকেই পাঠানোর মনস্থ করলেন। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র বিনয়ামীন ছিলেন ইউসুফ আ. এর সহোদর ভাই। ইউসুফ আ. নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ইয়াকূব আ. এর স্নেহ ও ভালোবাসা তার প্রতিই কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। তাই সান্ত্বনা ও দেখাশোনার জন্য তাকে নিজের কাছে রেখে দিলেন। খাদ্যশস্য আনার জন্য তাকে পাঠালেন না।
গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত