হেদায়েতের পথে

হেদায়েতের পথে

সকালে নটায় ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে তৈরি হচ্ছে রুপা। কালো রঙের টপস আর জিন্স প্যান্টের সাথে গলায় একটা স্কার্ফ ঝুলিয়েছে। মুখে ক্রিম, চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে পারফিউম মাখছে। রুমে ঢুকে পারফিউম এর চড়া গন্ধে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে নিপা। নিপা রুপার বড় বোন। বয়সে চার বছরের বড় নিপা। নাস্তা করতে ডাকতে এসে বোনের এই অবস্থা দেখলো নিপা। নিপা বোনের এই বেপর্দায় বেপরোয়া চলাফেরা মোটেও পছন্দ করে না।

মা হারা দুই বোন বৃদ্ধ বাবা কে নিয়ে শহরে তাদের নিজেদের একতলা বাড়িতেই থাকে। একতলা বাড়িতেই দুইটা ফ্ল্যাট। একটা ফ্ল্যাটে রুপারা থাকে আর অন্যটা ভাড়া দেওয়া। ওদের বাবা আফজাল হোসেন এর পেনশনের টাকা, বাড়ি ভাড়া আর নিপার টিউশনির টাকায় ওদের সংসার চলে। বড় বোন মায়ের মত হওয়ায় নিপা রুপাকে বকাবকি করে না। কিন্তু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে। নিপা দেখে রুপা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিপা বললো, যেখানেই যাস না কেনো খেয়ে যা আর বোন প্লিজ এভাবে বেপর্দায় বাইরে যাস না গুনাহ হবে। তোকে কতবার বলবো যে মুসলিম মেয়েদের এভাবে চলাফেরা করতে নেই। রুপা উত্তর দিল-উফ আপু, এভাবে নয় তো কি তোমার মত কালো বোরকা, নেকাব, হাতে মোজা, পায়ে মোজা পরে খালাআম্মা সেজে যাবো? আর তাছাড়া আমি কলেজে যাচ্ছি। ওখানে তোমার মত বুড়ি সেজে গেলে সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।

নিপা বোনকে বোঝানোর চেষ্টা করলো-পর্দা তো তখনই হবে যখন কেউ বয়স বুঝতে পারবে না আর এভাবে বলছিস কেনো? পর্দা করাটা তো চতুর্থ বিষয় নয়, যে তোর ইচ্ছে হলে করবি, আর ইচ্ছে না হলে করবি না। পর্দা প্রতিটা মুসলিম নারীর জন্য অবশ্য পালনীয়। এটা তো ফরয আর উদ্দেশ্য যদি থাকে আল্লাহ তায়ালা কে সন্তুষ্ট করা, তাহলে কে কি বললো তাতে তোর কি যায় আসে? আপু তোমাকে দেখেই আমার শরম লাগে। আর ওসব আমাকে পরতে বলছো? আমি পারবো না। প্লিজ জোর করো না। (প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে রুপা কথাটা বললো )

তোর মনে আছে কয়দিন আগে মোম জ্বালাতে গিয়ে ম্যাচের আগুন তোর হাতে লেগেছিল আর তুই চিৎকার করে বাড়ি গরম করেছিলি। সামান্য ম্যাচের কাঠির আগুনই ২-৩ সেকেন্ড সহ্য করতে পারিসনি, আর এই দুনিয়ার আগুন তো জাহান্নামের আগুনের মাত্র এক ভাগ। তোর কি ভয় লাগে না? এমনভাবে পোশাক পরা উচিত যাতে অঙ্গ প্রতঙ্গ বোঝা না যায়। কিন্তু তুই বোরকা তো পরিসই না, বরং টাইট ফিটিং ড্রেস পরিস। রুপা এবার প্রচন্ড রেগে বলে উঠলো, আপু তুমি কি চুপ করবে? প্রতিদিন সকালে শুরু হয়ে যায় তোমার ভাষণ। তোমার এসব কথা আমার একদম ভালো লাগে না। আমি তো তোমার ব্যাপারে নাক গলাই না, তবে তুমি কেনো আমার সব কথায় কাজে নাক গলাও। দয়া করে আমাকে আমার মত থাকতে দাও।

নিপা বললো, কিভাবে চুপ করি বল তো? শোন কুরআনে আছে, আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর। প্রাচীন জাহিলিয়াতের যুগের নারীদের মত নিজেদের প্রদর্শন করো না।’ (সূরা আহযাব-৩৩) উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন, আমি এবং মাইমুনা রা. রাসুল সা এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাখতুম রা. সেখানে আসতে লাগলেন। তখন রাসুল সা. বললেন তোমরা তার থেকে পর্দা করো, আড়ালে চলে যাও। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি তো অন্ধ। তিনি তো আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না। তখন রাসুল সা. বললেন, ‘তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না? (আবু দাউদ ২/৫৬৮) সুগন্ধি নারী-পুরুষকে একে অপরের প্রতি আকর্ষণের এমন একটি মাধ্যম যা অনেকসময় প্রকৃত দ্বীনদার ব্যাক্তিকেও আকৃষ্ট করে। সুতরাং কতটা সতর্ক থাকা দরকার বুঝতেছিস?

হাদীসে আছে, রাসুল সা. বলেন, ‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনার প্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে। (তিরমিযী, হাদীস:২৭৮৬) রুপা নিপা কে রেগে চেঁচিয়ে বললো, উফ আপু! প্রতিদিন সকাল সকাল তোমার এসব লেকচার শুনতে একদম ভালো লাগে না আমার। দিনটাই মাটি করে দাও তুমি। থাকো তুমি এসব নিয়ে আমি চললাম। রুপা না খেয়েই চলে যায়। নিপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর আল্লাহর নিকট বোনের হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করে। কুরআনে আছে – ‘আর আল্লাহ যাকে হেদায়েত করতে চান, তার অন্তরকে তিনি ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন।’ (সূরা আল আন’আম, আয়াত ১২৫) কলেজে গিয়ে ক্লাস শুরুর আগে রুপা তার ছেলে ও মেয়ে বন্ধুদের সাথে বসে গল্প করছে। মাঝে মাঝে ওর ছেলে বন্ধুরা ওর প্রশংসাও করছে। আর তা শুনে রুপা যেন আকাশে উড়ছে। রুপা অতি চঞ্চল একটা মেয়ে। তার হাবভাব আর অহংকারই অন্য লেভেলের।

কিন্তু কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসার সামনের গলি তে রুপা হাঁটছিলো। সেই গলিটা একটু নির্জন। লোকজন গলিতে খুব কম চলাচল করছিলো। রুপা হেলে দুলে হেঁটে যাচ্ছিলো। রুপা একদল বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়ে। আজকাল তো গলি, রাস্তার মোড়, চা এর দোকান বখাটের আড্ডাখানা হয়ে গেছে। চার পাঁচটা ছেলে রুপাকে ঘিরে ধরে। হঠাৎ করে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ে রুপা ভয় পেয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো মেয়েই ভয় পেয়ে যাবে। রুপা ছেলেগুলোকে জিজ্ঞেস করলো, কে আপনারা? আমার পথ আটকিয়েছেন কেনো? ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে বললো, তুমি একা যাচ্ছো। তাই তোমাকে সঙ্গ দিতে আমরা চলে এলাম সুন্দরী। অন্য ছেলেরা হাসতে লাগলো। রুপা ভয়ে ভয়ে বললো, আমার কাউকে সাথে লাগবে না। আপনারা যেতে পারেন। অন্য আরেকটি ছেলে বলে ওঠে, তা কি করে হয় সুন্দরী। আমরা নিজেদের ইচ্ছায় তোমার কাছে এসেছি, নিজেদের ইচ্ছাতেই চলে যাবো। আসো একটু মজা করি। হাহাহাহা। ছেলেগুলো কথা বলছে আর হাসছে।

রুপা অনেকটা ভয় পেয়ে ছেলেগুলোকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়াতে লাগলে একটা ছেলে ওর হাত টেনে ধরে আটকায়, একজন গাল টেনে দেয়, একজন স্কার্ফ ধরে টানে। রুপা ভয়ে কেঁদেই দেয় আর বলে তাকে ছেড়ে দিতে। রুপা যতই সাহসী আর অহংকারী হোক না কেনো এমন একটা সময়ে তার নিজেকে সবচেয়ে অসহায় বলে মনে হচ্ছে।
সেই সময় একজন মুরুব্বি সেই রাস্তায় আসে আর এমন অবস্থা দেখে ছেলেদের ধমক দিয়ে, বকাবকি করে লোকটি রুপাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায়। যাওয়ার সময় লোকটি শুধু বলে, মা, পূর্ণাঙ্গ পর্দায় থাকলে এমন ভাবে হেনস্তা হতে হত না তোমায়। আল্লাহ তোমাকে হেদায়েত দান করুন

লোকটি চলে যায়। রুপা বাড়িতে ঢুকে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকে। একটু আগের ঘটনাটার কারণে রুপার হাত পা এখনো কাঁপছে। কি হতে যাচ্ছিলো। এমন ভয় সে কখনোই পায় নি। নিপা বোনকে দরজা লাগাতে দেখে বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর ডেকেই চলেছে। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রুপা দরজা খুলে বেরিয়ে নিপাকে জড়িয়ে খুব কান্না করতে থাকে। নিপা বুঝতে পারে না রুপা কেনো এত কাঁদছে। নিপা কারণটা জিজ্ঞেস করলেও রুপা মুখ খুলে না। নিপা রুপাকে জিজ্ঞেস করে, রুপা, বোন আমার। কি হয়েছে? বল আমাকে। রুপা সে তো সেই থেকে কেঁদেই চলেছে। আর নিপা তাকে বুঝিয়েই চলেছে। কি হয়েছে তা বলার জন্য জিজ্ঞেস করেই চলেছে। প্রায় আধা ঘন্টা পর রুপা চুপ করে আর আজকের সব ঘটনা নিপাকে খুলে বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।

নিপা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। ঘটনাটা আর না ঘাটিয়ে রুপাকে ধীরে সুস্থে বোঝানোর কথা ভাবে। তাই রুপাকে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিলো নিজের হাতে। তারপর বিকেলের দিকে রুপাকে নিয়ে বারান্দায় বসে কিছু কথা বলার জন্য। রুপা তো বাড়িতে আসার পর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেছে। নিপা বলা শুরু করলো, রুপা, আমি কিছু কথা বলছি। মনোযোগ দিয়ে শোন। রুপা কিছু বলে না শুধু বোনের দিকে মুখ তুলে তাকায়।

নিপা আবার বলতে শুরু করে, বোন, খোলা খাবারে যেমন মাছি বসবেই ঠিক তেমনি খোলামেলা পোশাকে চলাফেরা করলে, বেপর্দা হয়ে চললে মানুষ তাকাবেই, হেনস্তা করবেই। দুইজন মেয়ের একজন যদি পর্দানশীল হয় আর অন্যজন যদি বেপর্দায় থাকে, আর ওরা একসাথে বাইরে গেলে মানুষ বেপর্দায় যে থাকে তাকেই দেখে আর শয়তান তো রয়েছেই মানুষকে প্রতিনিয়ত পথভ্রষ্ট করতে। পর্দার সাথে থাকলেও যদি তোকে হেনস্তা হতে হয় তবে বুঝবি যারা তোকে হেনস্তা করবে তারা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। অবশ্য মানুষ বললে ভুল হবে। ওরা জন্মসূত্রে মানুষের আকৃতি পেয়েছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি। আমরাই তো মানুষকে সুযোগ করে দেই যাতে মানুষ আমাদের হেনস্তা করে তাই নয় কি? যদি তা না হত তবে প্রতিটা মেয়েই পর্দার গুরুত্ব বুঝতো পর্দা করতে ভালো লাগে না আবার মানুষের হেনস্তাও সহ্য করবে না তা কিভাবে হয়?

মেয়েদের জান্নাত লাভের জন্য পর্দা করা যেমন ফরজ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি নিজেদের সুরক্ষিত রাখতেও এটা একটা মাধ্যম। আর মেয়েদের সৌন্দর্য তার স্বামীর জন্য যা মেয়েদের নিকট আমানত স্বরূপ কিন্তু আমরা কি করি? সেই আমানতের খিয়ানত করি। পরপুরুষকে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেই আমরা মনে করি ইসলামি বিষয়াবলি মেনে চলা খুবই কঠিন। আসলে তা নয়। আমরা সবাই জানি, মহান আল্লাহ তায়ালা জ্বীন ও মানুষ জাতিকে তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন আমরাও তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতেই তাঁর হুকুম আহকাম মেনে চলি বা মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় সবকিছু আসলে আমাদের ভালোর জন্যই। এই যেমন-

১. আজকাল কোমর, ঘাড়, হাঁটুর ব্যাথার জন্য ডাক্তাররা এক্সারসাইজ করতে বলে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দাঁড়িয়ে পড়লে আলাদা করে এক্সারসাইজ করার দরকার আছে কি?

২. এই যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য মদ বা অ্যালকোহল, নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম করেছেন। কেনো করেছেন? কারণ এসব গ্রহণ করলে মানুষের ক্ষতি হয়। এ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সার হচ্ছে ধূমপানের কারণে। মদ্যপানের কারণে লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৩. সুদ হারাম। ধনীরা চড়া সুদে গরিবকে ধার দেয়। এতে ধনীরা সুদ নিয়ে আরও ধনী হয়, আর গরিবরা না পারতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ঋণ শোধ করতে গিয়ে আরও গরিব হয়।

৪. ঘুষের কথা আর কিইবা বলবো। ঘুষের ভয়াবহতা সবাই জানে। তাহলে পুরো সিস্টেমটা কি এই হারাম জিনিস গুলোর জন্যই নষ্ট হচ্ছে না? পর্দা করলে কারো ক্ষতি হয় না বরং উপকারই হয়। ১. ফরজ কাজ হয়ে যায় ২. সুরক্ষা

৩. ধুলাবালি থেকে রক্ষা।

তেমনি ডাক্তাররা আজকাল ডায়েট করতে বলে সুস্বাস্থ্যের জন্য মানুষ না খেয়ে কখনো মরে না, খেয়েই মরে। সাওম পালন করলে একদিকে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, অনাহারীর দুঃখ বোঝা যায়, ঠিক তেমনি শরীর সুস্থও থাকে পৃথিবী সৃষ্টির হাজার হাজার বছর পর বিজ্ঞানীরা যা আবিষ্কার করে মানুষের জন্য নিষিদ্ধ করছে তা মহান আল্লাহ অনেক আগেই মানুষের জন্য হারাম করেছেন। মানুষ অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তারের কথা শুনে। কিন্তু একটাবার যদি আল্লাহর বিধিনিষেধ এবং হালাল হারাম চিন্তা করতো তবে তো অসুস্থই হত না। যদিও সুস্থতা অসুস্থতা আল্লাহর দান এবং আমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ ঘড়ির প্রতিটা টিক টিক শব্দ মনে করিয়ে দিচ্ছে একটা একটা করে সেকেন্ড আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যতই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ততই আমরা মৃত্যুর নিকটবর্তী হচ্ছি। বোন, তোর জীবনে বিশটা বছরে অনেকগুলো দিন, ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড চলে গেছে। আর সময় নষ্ট করিস না এখনো সুযোগ আছে তওবা করে দ্বীনের পথে চলার রুপার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। এ পানি অনুতাপের, অনুশোচনার।

রুপা বোনকে জিজ্ঞেস করে, কিন্তু আপু আমি হঠাৎ করে পর্দা করা শুরু করলে লোকে কি বলবে? নিপা বোনকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, একসাথে কখনোই সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না। একজন কে সন্তুষ্ট করতে গেলে অন্যজন অসন্তুষ্ট হবেই। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সাধারণ মানুষের সন্তুষ্টির কথা ভেবে আল্লাহকেই অসন্তুষ্ট করে ফেলি। কোনো কাজ করতে গেলে আগে একটা কথাই মাথায় আসে। আর সেটা হল-মানুষ কি ভাববে? একবারও মাথায় আসে না আল্লাহ কি ভাববেন? মহান আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আশেপাশের মানুষের অসন্তুষ্টির কথা চিন্তা না করাই ভালো।

আমাদের যেকোনো কাজ মানুষের ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু সবসময় একটি কথা মনে রাখা উচিত যে আমাদের সকল কাজ আমাদের সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য যিনি আমাদের এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কেউ আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হলে আমরা কষ্ট পাই। কিন্তু সেখানে জেনে না জেনে আল্লাহ কে কতবারই না অসন্তুষ্ট করে ফেলি। আমাদের সৌভাগ্য তিনি আমাদের সাথে সাথেই অন্যায়ের সাজা দেন না। তওবা করার সুযোগ দেন, শুধরানোর সুযোগ দেন। আমাদের সেই সুযোগ টা কাজে লাগানো উচিত। আল্লাহর পথে চলতে গেলে বাঁধা আসবেই। আর সেটা এক প্রকার ইমানী পরীক্ষাও বটে প্রকৃত ইমানদাররা সেই বাঁধা অতিক্রম করে দ্বীনের পথে অবিচল থাকে।

রুপা চোখের পানি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে বললো, ইনশাআল্লাহ আপু আজ এই মুহূর্ত থেকেই আমি প্রকৃত ইমানদার হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাবো। তুমি সাথে থেকো আমার। আর ভুলগুলো ধরিয়ে দিও এতদিন বুঝিনি কিন্তু আজ বুঝে সময় নষ্ট করতে চাই না। নিপা বোনের কথা শুনে খুশি হয়ে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তোকে হেদায়েত দান করেছেন এবং তোর অন্তরকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করেছেন।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত