সালাতের গুরুত্ব

সালাতের গুরুত্ব

নামিরাহ ইদানিং ভাইয়ের হাবভাব মোটেও বুঝতে পারে না। খুব অদ্ভুত ভাবে পাল্টে গেছে যাকী। কিছুদিন আগেও যে দ্বীনের ব্যাপারে অনেক গাফেল ছিল সে কিনা আজ দ্বীনের ব্যাপারে খুবই তৎপর। নামিরাহর কয়েকদিন আগের ডোজটা হয়তো কাজে দিয়েছে। যাকী ইদানীং অবসর সময়গুলো তে উপন্যাসের পরিবর্তে বেছে নিয়েছে বিভিন্ন ইসলামিক বই, কুরআন ও বিজ্ঞান সহ তাফসিরুল কুরআন। সে এখন বেশির ভাগ সময় অধ্যায়নে মনোনিবেশ করে। সকাল থেকেই যাকী কোথাও একটা যাওয়ার জন্য খুব তাড়াহুড়ো করছে। এমনকি খাবার টেবিলে ও ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করলো না। নামিরাহ ভাইকে এতো ব্যস্ত দেখে জিজ্ঞেস করলো,

-কি রে কোথাও যাবি না কি?
-উমমম, জ্যাকের সাথে দেখা করতে। নামিরাহ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
-এই জ্যাকটা আবার কে? তোর নতুন কোনো বন্ধু না কি?
-আরে নাহ ও তো পাশের বাড়ির সাফওয়ান ভাইয়ের ছোট ভাই জাকির।
-তাহলে নামের বিকৃতি করে জ্যাক বলছিস যে?
-আরে আপু আমি ওর নামের বিকৃতি করতে যাব কেন?

ওতো শহরের কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই নিজের নাম জ্যাক রেখেছে। জাকির নামটা নাকি ওর শহরে মানায় না পুরোনো পুরোনো লাগে তাই জাকির থেকে জ্যাক হয়ে গেছে। আর ওই নামেই এখন ও পরিচিত হতে চায়। তাই জ্যাক বলেই ডাকি। এখন আমি চললাম আপু। হাতে একদম সময় কম।

এই বলে যাকী ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে ছুটল। নামিরাহ এতক্ষণে থ বনে সব কথা শুনছিল।যাকীর সমস্ত কথা তার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। যাকী বাড়ির বাইরে বেরুতেই রাকিবের সাথে তার দেখা হয়ে গেল। রাকিবও যাচ্ছিল জ্যাকের সাথে দেখা করতে। তাই দুজনে একসাথেই জ্যাকের দেখা করতে চলল। জ্যাকের বাড়িতে পৌঁছেই তারা দেখতে পেল, জ্যাক তখন জীম করছে। সমস্ত সরানঞ্জামাদি কিনে সে বাড়িতেই পুরো জীম খুলে বসেছে। ছুটিতে যখন বাড়িতে আসে তখন জীম করে। যাকী এবং রাকিবকে পুরো আধা ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর জ্যাক ফ্রেশ হয়ে তাদের কাছে ফিরল। জ্যাক গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,

-তোদের দিনকাল কোমন কাটছে এখন? দেখে তো মনে হচ্ছে না তোরা জীম টিম কিছু শুরু করেছিস? অবশ্য করবিই বা কি করে এখনো তো পড়ে আছিস সেই অজপাড়া গাঁয়ে। কিন্তু তোরা চাইলে আমার জীমে আসতে পারিস?
রাকিব মনে মনে খুব ক্ষেপে গেল। যেই গায়ে সে ছোট বেলা থেকেই বড় হয়েছে তাকে সে অজপাড়া গাঁ বলছে? তাই সে তৎক্ষনাৎ যেই না প্রতুত্তর করতে যাবে ওমনি যাকী বলে উঠলো,

-চল না আজ সারাদিন আমরা একটু ঘুরি? অনেক দিন পর তো দেখা হলো আবার কবে দেখা হবে কে জানে?
জ্যাক এতে সম্মতি জানালো। পরক্ষনেই তারা গ্রামের বিশাল পুকুরটার পাড়ে এসে বসল। এটা এই গ্রামের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর স্থান। পুকুরের চারপাশের পাড়ে অনেক গাছ লাগানো। আর মাঝে মাঝে বসার জন্য কিছু জায়গা রয়েছে। এক কথায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এটা অপূর্ব। এবারে যাকী জ্যাককে উদ্দেশ্য করে বলল,

-আচ্ছা একটা কথা বল, তুই প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় জীম করিস কেন? মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে তুই তো কোনো কাজই নিয়মিত করিস না সেটা হোক পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজ। এমনকি তুই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতও আদায় করিস না শুধু বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া যেমনঃ জুমআর নামাজ, দুই ঈদের নামাজ শবেবরাতের নামাজ ইত্যাদি।
যাকীকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে জ্যাক বলতে লাগলো,

-কিসের সাথে কি মেলাচ্ছিস? আমি ফরমালিটি মেইনটেইন করার জন্য এই নামাজ গুলো পড়ি। যেহেতু ভাগ্যক্রমে আমার জন্ম ইসলাম ধর্মে তাই অন্তত পরিবারের জন্য হলেও এই নামাজটুকু নামাজ তো পড়তেই হবে। এবার আসি আমি কেন জীম নিয়মিত জীম করি? এরকম একটা প্রশ্ন যে তোর মতো একটা ছেলে করতে পারে এটা আমি কখনো ভাবতে ও পারিনি। অবশ্য তোরা গ্রামে থেকে এসবের কি বুঝবি? তাহলে শোন, আমি জীম করি শরীর এবং স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য।

প্রথমতঃ জীম করলে আমার বডি ফিটনেস ঠিক থাকে। স্বাস্থ্যটাও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

দ্বিতীয়তঃ আমার শারীরিক সুস্থতার জন্য। জীম করলে আমাদের শরীরের মাসেল গুলো নড়াচড়া হয়। এতে বিভিন্ন ভাবে শরীরের বিভিন্ন রোগ কমে যায়। কিন্তু আমরা জীম না করলে শরীরের অঙ্গ প্র তঙ্গ গুলোকে এভাবে নাড়াচাড়া করতে পারছি না। তাই যারা নিয়মিত জীম করে তাদের অসুখ টা কমই হয়। জ্যাকের কথায় যাকী মৃদু হাসলো। তারপর একটু নড়েচড়ে বসে বলতে লাগলো,

-জ্যাক তুই কখনোও পুরো কুরআন পড়ে শেষ করেছিস? জ্যাক ভ্রু কুঁচকে বলল,
-নাহ।
-তুই কি জানিস আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে কতবার সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন? জ্যাক এবারেও বিরক্ত হয়ে বলল,
-নাহ।
-আচ্ছা তাহলে শোন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা কুরআনে একবার নয়, দুইবার নয় বিরাশি বার সালাহ আদায়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

আমরা মুসলমানগণ আল্লাহর প্রশংসা আদায় করতে এবং তার সন্তুষ্টির জন্য সালাহ আদায় করি। সালাহ হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। একটা মানুষ ঈমান আনার সাথে সাথেই তার উপর সালাহ আদায় করা ফরজ হয়ে যায়।আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিদিষ্ট সময়ে ফরজ করেছেন। কিন্তু একটা বিষয় কখনো ভেবে দেখেছিস? আমাদের ইসলাম ধর্ম আমাদের যা শেখায় বর্তমান বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখেছে এতে আমাদের জন্য অনেক উপকারীতা রয়েছে। এবার আসি সালাতের ব্যাপারে, একটা মানুষ যখন সঠিক নিয়মে বা পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে খুজখুশু সহকারে সালাহ আদায় করে তখন সেই সালাতটা আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।

এই সালাতের মাধ্যমে যেমন আমরা আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ’লাকে খুশি করছি তেমনি আমাদের জন্যও রয়েছে অনেক উপকারীতা। সামাজিক আত্মিক উপকারীতার পাশাপাশি সালাত থেকে আমরা পাই বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতা। আমরা যখন রুকুতে যাই তখন শরীরের উপরের অংশে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয় মেরুদণ্ড তখন হয়ে যায় নমনীয়। মেরুদণ্ডের বিভিন্ন নার্ভ শক্তিশালী হয়। তখন মেরুদণ্ড বা পিঠের ব্যাথা দূর হয়ে যায়। এতে আরও বিভিন্ন সমস্যা দূর হতে পারে। যেমনঃ পেটফাঁপা জাতীয় সমস্যা গুলো। এরপর যখন আমরা উঠে দাঁড়াই শরীরের উপরের অংশে যে টুকু রক্ত প্রবেশ করেছে সেটার প্রবাহ তখন স্বাভাবিক হয়। শরীর তখন রিল্যাক্সড হয়।

এরপর আমরা সিজদাহ্য আমাদের কপাল মাটিতে ঠেকাই। এটা সালাতের শ্রেষ্ঠ অংশ। প্রত্যেকটি মানুষের শরীর তার চারপাশের ইলেক্ট্রস্ট্যাটিক চার্জের সংস্পর্শে আসে। এই চার্জ তারপর গিয়ে পৌঁছায় মানুষের নার্ভাস সিস্টেমে। আর সেখানেই জমা হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত ইলেক্ট্রস্ট্যাটিক চার্জ শরীর থেকে বের করে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে মাথা ব্যাথা করবে, মাংস পেশীতে টান পড়বে। যখন আমরা সিজদাহ্র জন্য মাটিতে মাথা ঠেকাই। শরীরের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অংশ হলো ব্রেইন। আর ব্রেইনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অংশ হলো ফ্রন্টাল লোব। যেটা মাটিতে ঠেকানো হয়। এসময় অতিরিক্ত ইলেক্ট্রস্ট্যাটিক চার্জ গুলো মাটিতে চলে যায়। তার মানে এই নয় যে সে সময় মাটিতে হাত রাখলে ইলেকট্রিক শর্ক খাব?

যখন আমরা ফ্রন্টাল লোব মাটিতে ঠেকাই তখন ব্রেনের যে অংশ টি চিন্তা করে সেটা মাথার উপরে থাকে না বরং সেটা থাকে ফ্রন্টাল লোবে।যখন আমরা সিজদাহ যাই তখন ব্রেনে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয়। নিউরনগুলো সক্রিয় হয় এতে ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তখন আমাদের মুখের চামড়া ও ঘাড়ে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহিত হয়। এতে আমাদের মুখমন্ডলে রক্ত প্রবাহ মাত্রা বেড়ে যায়। এটা শীতকালে আমাদের জন্য খুবই উপকারী। আমরা যখন সিজদাহ্ করি তখন সাইনোসাইটিসের সম্ভবনা কমে যায়। সারাদিন আমরা সাধারণত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আর ম্যাক্সিলারি সাইনাস এটার ড্রেনেজ থাকে শরীরের উপরের অংশে সারাদিন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে এর কোনো চলাচল হয় না। কিন্তু সিজদাহ্য গেলে ম্যাক্সিলারি সাইনাসের ড্রেনেজটা হয়। এছাড়াও এতে করে শরীরের ফ্রন্টাল সাইনাসে, এথমডিয় সাইনাসে ড্রেনেজ তৈরি হয়। ফলে সাইনোসাইটিস হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। অথবা সাইনোসাইটিস যদি থেকেও থাকে এটা তার প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

যেসব মানুষ ব্রংকাইটিস রোগে ভুগে থাকেন তাদের জন্য ও সিজদাহ্ প্রাথমিক চিকিৎসা। এর ফলে ব্রংকিলটিস দিয়ে রস নিঃসৃত হতে পারে। সিজদাহ্ র কারণে ব্রংকিলটিতে রস জমা হয়ে থাকতে পারে না। এতে করে বিভিন্ন পালমোনারি অসুখের চিকিৎসা করা যায়। যেখানে আমাদের শরীরে রস জমা হয়। আমাদের শরীরে রস ছাড়া ও ধুলাবালি ও রোগ জীবাণু জমা হতে পারে। সিজদাহর মাধ্যমে এই সব অসুখের উপকার পাওয়া যায়। আমরা যখন নিঃস্বাস নেই তখন ফুসফুসের মাত্র দুই তৃতীয়াংশ ব্যবহার করে থাকি।আর বাকী এক তৃতীয়াংশ যেখানে বাতাস থেকে যায়। মাত্র দুই তৃতীয়াংশ তাজা বাতাস আমাদের ফুসফুসে ঢোকে আর বের হয়ে যায়। যখন সিজদাহ্ করি তখন তলপেট চাপ দেয় ডায়াফ্রামে আর ডায়াফ্রাম চাপ দেয় আমাদের ফুসফুসের নিচের অংশে এতে ফুসফুসের সেই বাতাস বের হয়ে যায় এবং আরো তাজা বাতাস ফুসফুসে ঢোকে। এতে করে আমাদের ফুসফুস স্বাস্থ্যবান হয়।

তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়াও আমরা বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতা পাই। কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহর নির্ধারিত সিস্টেমটাকেই কম ফলো করে। তাই বলে আমি তোকে জীম করতে বারণ করি নি জ্যাক।
কিন্তু আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলার নির্ধারিত বিধান গুলোর মাঝে যে কতটা কল্যাণ রয়েছে সেটা তো মানতে চেষ্টা কর? তাহলে দেখবি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই সুন্দর হবে। রাকিব এবার মুখ ভরে একটা বিজয়ের হাসি দিল। মনে হচ্ছে সে যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হারাতে পেরেছে। অপরদিকে জ্যাকের মুখে একরাশ চিন্তার ছাপ বোঝা যাচ্ছে। মূহুর্তেই টগবগে চঞ্চল তরুণ টি শান্ত হয়ে গেল। পরক্ষণেই যাকী জ্যাকের পিঠ চাপকে বলল,

-চলি রে আমাকে এবার উঠতে হবে। অনেক টা সময় পেড়িয়ে গেছে। জ্যাক তার ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে বলল,
-অফকোর্স। কিন্তু একটা কথা বলার ছিল!
-একটা কেন? হাজার টা বল?
-ইয়ে মানে,, আজকের পর থেকে আর আমাকে জ্যাক বলে ডাকিস না কেমন?
-উমমম, ঠিক আছে তবে আমার একটা শর্ত আছে?
-শর্ত?
-আজ রাতে আমার বাড়িতে তিনজন একসাথে ডিনার করব। রাজী তো? রাকিব এবং জ্যাক ওরফে জাকির বলে উঠলো,
-অবশ্যই যাব।সাথে আন্টির হাতের রান্না কব্জি ডুবিয়ে খাব। এই বলে তিন জনেই হো হো করে হেসে উঠলো।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত