শ্রীপুর থানার ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের একজন মি. নাঈম খান। নিজ পরিশ্রমে উপার্জিত সকল পয়সা যত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পয়সা রোজগার হয় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে। একজন লোকের জমি সেটা যদি তিনি আরেকজনের থেকে টাকা নিয়ে তার নাম বলে সাক্ষ্য দেন তবে সেটা তারই হবে। প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় নিরবে সহ্য করে যাওয়া ছাড়া কারো সাধ্য নেই প্রতিবাদ করার। ইসলামি নিয়মকানুন তার কাছে অপশনাল ব্যাপার। ইচ্ছা হলে মানবেন নয়ত না। এবার সবার দেখাদেখি একমাত্র ছেলে হাসানকে নিয়ে রওয়ানা হলেন গরুর মাঠে। ভাবলেন আমাকে বাজারের সবচেয়ে বড় গরুটাই কিনতে হবে। নয়ত লোকে কি বলবে! টাকা গেলে যাক, আমরাই তো ফ্রীজে রেখে মাসখানেক খেতে পারব। তাই বাজারের সেরা গরুটি নিয়েই বাড়ি ফিরলেন। আসসালাতু খইরুম মিনান নাউম আসসালাতু খইরুম মিনান নাউম।
মুয়াজ্জিনের আজানে ঘুম ভেঙে গেল হাসানের। উফ! দেরি করে ফেললাম না তো? একে তো কুরবানীর ঈদ, ঈদগাহ মাঠে নামাজ, বন্ধুদের সাথে দেখা হবে কত সময়ের ব্যাপার আর কিছু না ভেবে দ্রুত উঠে পড়ল। বাবা, মা তোমরা কোথায় দেখোনা সময় কত? কারো সাড়া না পেয়ে সোজা গোয়ালঘরে গেল কুরবানির গরুর খোঁজ নিতে। কিন্তু হায় গরু যে মরে পড়ে আছে! কি হবে এখন! বাবার সব পরিকল্পনা কি তবে ভেস্তে যাবে? কি করব এখন আমি? বন্ধু-বান্ধবকে তো দাওয়াত দিয়ে ফেলেছি। এবার বুঝি অপমানে মাথা নিচু হয়ে যায় আমার! মি. নাঈম খান ও তার স্ত্রী মিসেস রোজা দৌড়ে এলেন হাসানের বিলাপ শুনে। তারা একটু আগেও ভাবেননি এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে। লজ্জায় আর সেবার ঈদগাহ মাঠে যাওয়া হলো না।
হাসান মনে মনে যা ভয় করছিল তাই হলো। হাসানের বন্ধুরা ঈদগাহ মাঠে না পেয়ে সোজা বাসায় চলে আসল। রায়হান হাসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নয়। ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী জীবনযাপন করাতে রায়হানের সঙ্গে কথা হয়না হাসানের। হাসানের অবস্থা দেখে সবাই মুখ ভেঙচিয়ে এটা ওটা বলছে দেখে রায়হান হাসানের কাঁধে হাত রেখে বললো, বন্ধু! কিসের ভয় করছো তুমি? হঠাৎ পুরো পরিকল্পনা পালটে গেলো বলে? কোন ভয় নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী।
এবার হাসানের বিরক্তি লাগলেও সাহস হচ্ছে না মুখ ফুটে কিছু বলার। রায়হান আবার বলতে শুরু করল, আসলে আমরা লৌকিকতার গন্ডিতে গা ভাসিয়ে কোরবানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলে গিয়েছি৷ কুরবানির গোশত কিংবা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছায় কেবল আমাদের ত্যাগ। এবার হাসান বলেই উঠল জানিস রায়হান কত স্বপ্ন দেখেছিল বাবা! কয়েক টা দিন ঘুরে ঘুরে বাজারের সেরা গরুটাই নিয়ে আসল। কিন্তুকোন কিন্তু নয়। আল্লাহ যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে কিন্তু আমাদের বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করা। পাশ থেকে সব শুনে মিঃ নাঈম বললেন, তুমি সত্যি বলেছো রায়হান। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি তার মুল কারণ হচ্ছে যদি আমরা কুরবানি দিতে পারতাম তাহলে এই অনুধাবন টা এত সহজে আমার অন্তরে আসত না। এবার রায়হান সহমত জানিয়ে বললো জী আংকেল।
আল্লাহ চান আমরা তার হেদায়াত যেন পাই। কিন্তু আমরা মানুষরাই বড় বেঈমানী করে বেড়াই। এবার আর হলো না মিঃ নাঈম খানের কুরবানি দেওয়া কিন্তু অর্জন হলো একটা বড় শিক্ষা। তাই তিনি ঈদের যে বোনাস গুলো ছিল তা দিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোতে ঈদের দিন একটু ভালো খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। তাদের তৃপ্তির হাসি দেখে অনুভব করলেন একরাশ প্রশান্তি। এই প্রশান্তি কেবল ত্যাগের মাঝেই নিহিত। এখন আর নাঈম খানের গর্ব হয়না গ্রামের সেরা ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে। এখন গর্ব হয় নিজের ত্যাগের মাধ্যমে হাসি ফুটাতে পেরেছেন একদল জীবন্মৃত লোকদের।