মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে আপনার উচিত সর্বদা জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকা। আপনার সময়কে অধিক অধ্যয়নের কাজে ব্যয় করা মুসলমান হিসেবে আপনার কর্তব্য।
বর্তমান সময়ে এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মত উচ্চ শিক্ষা হার সম্পন্ন দেশের লোকজনের মাঝেও পাঠের অভ্যাস নিতান্ত সংকীর্ণ। বর্তমান বিশ্বের মানুষ তার সময়ের খুব কম অংশই অধ্যয়নের জন্য ব্যয় করে।
কুর’আন মাজীদের সূচনাই হয়েছে পড়ার আদেশের মধ্য দিয়ে। কুর’আনের অবতীর্ণ প্রথম আয়াতটিই হচ্ছে,
পড়, তোমার প্রভুর নামে। (সূরা আলাক, আয়াত: ১)
যেখানে এই আয়াতের আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের উচিত অধিক বই পড়া এবং অধ্যয়নের দিকে মনোযোগী হওয়া, সেখানে সামগ্রিকভাবে আমাদের অধ্যয়নের চিত্র হতাশাজনক।
আমরা চাই আমাদের দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে। এটি খুব কঠিন দায়িত্ব। সূরা মুজ্জাম্মিলের পাঁচ নং আয়াতে রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ করে আল্লাহ বলছেন,
আমরা নিশ্চয়ই আপনার উপর এক ভারবহ বাণী অবতীর্ণ করেছি।
এই ভারবহ বাণী তথা দায়িত্বের জন্য প্রয়োজন জ্ঞানের। আপনি যদি চান বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে, বিশ্বকে আমূল পরিবর্তন করতে, আপনার প্রয়োজন পূর্বে আপনার নিজেকে পরিবর্তন করার, আপনার মন, আপনার বুদ্ধিমত্তাকে তৈরি করার।
আত্মবিশ্বাস
জ্ঞান অর্জনের প্রাথমিক অর্জন আপনার আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসী হন, এটিই আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীন। আল্লাহর উপরই আপনার আস্থা রেখে আত্মবিশ্বাসী হন। আত্মবিশ্বাস মানে প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়। কুর’আনের ভাষায়,
মূর্খরা তাদের সাথে যখন কথা বলতে (তর্ক) আসে, তখন তারা তাদের বলে, ‘তোমরা প্রতি সালাম’ (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৬৩)
আমার আত্মবিশ্বাস আমার আক্রমণাত্মক মনোভাবে নয়, বরং আমার আত্মবিশ্বাস আমার প্রশান্ত ও বিনয়ী মনোভাবে বিদ্যমান।
মানসিক দৃঢ়তা ও সংগতি
জ্ঞান অর্জনে আপনার দ্বিতীয় অর্জন আপনার মানসিক দৃঢ়তা ও সংগতি। এর মাধ্যমে আপনার মাঝে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস গঠিত হতে পারে। পাশাপাশি আপনি সচেতন হতে পারেন আমাদের তথা মুসলমানদের অতীত ও বর্তমান অক্ষমতা, দুর্বলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে।
আমাদের উচিত আমাদের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার। আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত এজন্য যে, কিছু মুসলমান প্রকৃতপক্ষে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ করছে না। আমাদের দৃঢ়তা ও সংগতির পাশাপাশি আমাদের সচেতনতা আগামীর পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জরুরী।
যোগাযোগের ক্ষমতা
সমাজের সাথে আপনার যোগাযোগের ক্ষমতা আপনার জ্ঞান অর্জনের অপর একটি দিক। সমাজের অংশ হিসেবে আমাদের উচিত সমাজের অন্যান্য সকলের সাথে যোগাযোগ করা, বিভিন্ন প্রকার সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমরা এই যোগ্যতা অর্জন করতে পারি।
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভূমিকা পালন
একটি নির্দিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের মুসলিম সদস্য হিসেবে আপনার একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এই নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হলে আপনার জ্ঞান অর্জনের অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সৃষ্টিশীলতা
জ্ঞান আপনার মাঝে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটাবে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতায় বিভিন্ন কল্যাণমূলক অবদান রাখতে আপনার সৃষ্টিশীলতা আপনার সহায়ক হবে। যা বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানের পর্যায়ে আপনাকে অধিষ্ঠিত করবে।
অন্যায়ের প্রতিবাদের সাহস
আপনার জ্ঞান আপনাকে আপনার চারপাশের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস যোগাবে। আপনার জ্ঞানের মাধ্যমে আপনি যে কোন অত্যাচারীকে নৈতিকভাবে আপনার সামনে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে পারেন।
দয়া ও ক্ষমাশীলতা
জ্ঞান আপনার মাঝে দয়া ও ক্ষমাশীলতার বিস্তার ঘটাবে। আপনার দয়া ও ক্ষমা করতে পারার গুণ মানুষকে আপনার দিকে আকৃষ্ট করবে এবং তা আপনার নেতৃত্ব অর্জনের জন্য সহায়ক হবে।