কদরের রাতের সন্ধানে

কদরের রাতের সন্ধানে

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর, যে নামেই বলি , এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের জন্য এক বিশেষ উপহার। বরকতময় এ রাতের ইবাদত হাজার মাস ক্রমাগত ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। কুরআনের ভাষায়,

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

অর্থ: কদরের রাত হলো হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (সূরা কদর, আয়াত: ১)

কিন্তু কোন রাতটি কদরের রাত, নিশ্চিত করে তা বলে দেওয়া হয়নি। সঠিক কোনো তারিখের সন্ধান দেওয়ার পরিবর্তে রাসূল (সা.) কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশকে খুঁজে নিতে বলেছেন।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “রমজানের শেষ দশ রাতে কদরের রাতের সন্ধান করো।” (বুখারী)

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে রাসূল (সা.) এ হিসাবকে আরো সহজ করে দিয়েছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন,

“রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাতের সন্ধান করো।” (বুখারী)

তবে এ রাতগুলো বেজোড় তারিখের রাত হবে তা নয়। চাঁদের গণনাভিত্তিক হিজরী ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর নতুন তারিখ গণনা করা হয়। সেই হিসেবে, ২০ রমজান দিনের পর যে রাতটি আসে সেটি ২১ রমজানের রাত। অর্থাৎ জোড় তারিখের দিনের পর যে রাতটি আসবে, সেটিই বেজোড় তারিখের রাত।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,

“কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতে খুঁজে নাও; সে রাতগুলোতে যখন নয় বা সাত বা পাঁচ রাত রমজানের শেষ দশ রাত বাকি থাকে।” (বুখারী)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় অবশ্য ইমাম তাকিউদ্দীন আহমদ ইবনে তাইমিয়া বলেছেন, এ বেজোড় হিসাব রমজানের শেষ দশকের রাত বাকি থাকা সাপেক্ষে।

অর্থাৎ ২১ রমজান পার হওয়ার পর যে রাত পরে অর্থাৎ ২২ রমজানের রাত, তা ৯ম বাকি থাকা রাত। এভাবে করে ২৩ রমজান পর হওয়ার পর ২৪ রমজানের রাত ৭ম বাকি থাকা রাত, ২৬ রমজানের রাত ৫ম বাকি থাকা রাত, ২৮ রমজানের রাত ৩য় বাকি থাকা রাত এবং ৩০ রমজানের রাত শেষ বাকি থাকা রাত।

আবার চাঁদের হিসেবে মাস যেহেতু ২৯ দিনেরও হতে পারে, সে হিসেবে ২০ রমজান পার হওয়ার পর ২১ রমজানের রাত ৯ম বাকি থাকা রাত, ২৩ রমজানের রাত ৭ম বাকি থাকা রাত, ২৫ রমজানের রাত ৫ম বাকি থাকা রাত, ২৭ রমজানের রাত ৩য় বাকি থাকা রাত এবং ২৯ রমজানের রাত শেষ বাকি থাকা রাত।

এই বাকি থাকা রাত গুলোতেই কদরের রাতের সন্ধান করার মতামতও রয়েছে।

হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে এক বর্ণনাও এ মতামতকে সমর্থন করেছে।

তিনি বলেছেন,

“যখন ২১ তারিখ পার হয় এবং ২২ তারিখ আসে, সেটিই হলো ৯ম রাত। একইসঙ্গে ২৩ পার হলে ৭ম রাত আসে এবং ২৫ পার হলে ৫ম রাত আসে।”

সুতরাং, এসকল মতামতকে যদি একপাশে সরিয়ে আমরা কদরের রাতের সন্ধান করতে চাই, তবে আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশকের সবগুলো রাতেই তার সন্ধান করে যথাসাধ্য ইবাদতে সময় কাটানো।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কদরের রাতের লাভের সৌভাগ্য দান করুন এবং এ রাতে যথাসাধ্য ইবাদত-বন্দেগীর তৌফিক দিন।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত