ইতেকাফকারী দুনিয়ার সকল মায়াজাল ছিন্ন করে ইতেকাফে বসবেন। ইতেকাফের আভিধানিক অর্থ- কোন জিনিস আঁকড়ে ধরা এবং তাতে আবদ্ধ থাকা। মহান আল্লাহর সংস্পর্শে একান্তভাবে সময় কাটানোর নিমিত্তে ইতেকাফ। নিরবচ্ছিন্নভাবে শেষ দশ দিন আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থেকে বহু আকাঙ্খিত শবে কদর লাভের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়ে থাকে এ সময় । মাহে রমজানের ২য় দশকের পর থেকে শুরু হয় ইতেকাফের মর্যাদাপূর্ণ দিনগুলো। শেষ দশকের এই ইতেকাফকে সুন্নত ইতেকাফ বলা হয়। এছাড়া নফল, ওয়াজিব ইতেকাফও রয়েছে যেগুলো এ সময়ে অথবা অন্যান্য সময়ে আদায় করা যায়। ইতেকাফ বড়ই পুণ্যের কাজ। হাদিস শরীফে এর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
ইতেকাফকারীর দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি কারো দরবারে গিয়ে বললো, আমার দরখাস্ত কবুল না হওয়া পর্যন্ত আমি দরবার থেকে যাবো না। প্রকৃতপক্ষে এ অবস্থা হলে কোন নিষ্ঠুর হৃদয় পর্যন্ত না গলে পারে না। ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো, রূহ ও অন্তরকে আল্লাহর সাথে মিলানো। সমস্ত ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য ব্যস্ত হওয়া। পার্থিব সকল সংশ্রব ত্যাগ করে আল্লাহর পথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা। ইতেকাফ আমাদের সবকিছু উপেক্ষা করে, অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে মহান আল্লাহর সংস্পর্শে একান্তভাবে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয় এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে শেষ ১০দিন আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকার কারণে বহু আকাঙ্খিত শবে কদর লাভের সম্ভাবনাও থাকে।
ইতেকাফ যদি আন্তরিকতার সাথে হয়, তবে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। ইহার গুণাবলী বর্ণনাতীত। কারণ, এতে দুনিয়ার সমস্ত মায়াজালকে ছিন্ন করে মনকে আল্লাহর ধ্যানেই মগ্ন করা হয়। আপন সত্ত্বাকে মনিবের হাতে সোপর্দ করে শয়নে-স্বপনে সব সময় আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকা ও তার নৈকট্য অর্জন করাই ইতেকাফের মুখ্য উদ্দেশ্য। আল্লাহ পাক বলেন- বান্দা যদি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর করে আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ’তেকাফ করতেন। এর ফযিলত সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেন, ইতেকাফকারী সকল পাপ হতে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এতবেশি নেকি লেখা হয় যেন স্বয়ং সে সর্বপ্রকার সৎকাজ করেছে। (মিশকাত শরীফ)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজান শরীফের শেষ দশ দিনে ইতেকাফে বসবে তার আমল নামায় দুটি ওমরার সওয়াব লেখা হবে। অন্য এক হাদিসে এসেছে-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি কেউ একদিন ইতেকাফে বসে, আল্লাহ তা’য়ালা উক্ত ব্যক্তি ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দকের দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন, যার প্রতিটির প্রশস্ত হবে পাঁচশত বছরের রাস্তার সমান। আলোচ্য হাদিস সমূহের ফজিলত ঐ সময়েই লাভ হবে যখন কোন ব্যক্তি ইতেকাফ অবস্থায় নিম্ন লিখিত বিধি-বিধান সমূহ পালন করবে-
ইতেকাফে করণীয়-
১) বেশি বেশি আল্লাহর জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা।
২) দরুদ শরীফ পাঠ করা।
৩) নফল নামাজ আদায় করা।
৪) কোরআন তিলাওয়াত করা।
৫) দ্বীনি ওয়াজ নছিয়ত শুনা।
৬) ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থাবলী পাঠ করা।
ইতেকাফে বর্জনীয়-
১) ইতেকাফ অবস্থায় বিনা ওজরে মসজিদের বাহিরে যাওয়া।
২) দুনিয়াবি আলোচনায় মগ্ন হওয়া।
৩) কোন জিনিস বেচা কেনা করা।
৪) ব্যবসা -বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ করা।
৫) ওজরবশতঃ বাহিরে গিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত বিলম্ব করা।
৬) স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়া।
উপরোল্লেখিত কার্যাবলীর দ্বারা ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালার নিকট ফরিয়াদ, আমরা প্রত্যেকে যেন জীবনে একবার হলেও মাহে রমজানের সুন্নত ইতেকাফ করতে পারি।